নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনোয়ার ভাইয়ের কথার কথা

আনোয়ার ভাই

কিছু একটা করি

আনোয়ার ভাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধুতির কাচা দিতে গিয়ে ভারি হত কোচা

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৮





বর্ষা শেষে ভাদ্রে ভর করে আসে শরৎ ঋতু। চারদিকে শুভ্র কাশফুলের সটান দাঁড়িয়ে থাকা, শিউলী ফুলের মৌ মৌ ঘ্রান নিয়ে শুরু হত পূজোর প্রস্তুতি। সবেমাত্র পা দিয়েছি কৈশোরে। তাই বলে দায়িত্ব কম ছিল না আয়োজনে। দুই তিন মাইল হেটে প্রতীমা তৈরীর মাটি আনার মধ্যে দিয়ে শুরু। ফুল তোলা, মন্ডপ সাজাতেও ব্যস্ত থাকতাম। রঙীন কাগজ কেটে নকশা (ঝালট), নিশান তৈরী কত কি কাজ। সব সারতাম মহা আনন্দে। মনে তখন একটাই ঢোল বাজতো ‘ দুর্গা পূজা আসছে’- কথাগুলো একটানে বললেন সাংবাদিক ও শিক্ষক রনজিৎ মোদক। বললেন, সে সময়ে পূজা উৎসব ছিল এক রকম এখন আরেক রকম। যদি সম্ভব হত তবে স্মৃতি জড়ানো সুখময় সেই দিনে ফিরে যেতেও রাজি এ কবি।



রনজিৎ মোদকের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী থানাধীন নারান্দিয়া গ্রামে। এখানে তাদের ও তার পিসীর বাড়িতে দুগা পূজা হত। তখন পূজোতে আজকের মত জ্বলমলে লাইটিং ছিল না, ছিল না বড় স্পীকারে বাজানো কড়া সাউন্ডের গান বাজনা। তাই বলে কমতি ছিল না আনন্দের। সারা বাড়ি আচ্ছাদন থাকত লাল, সবুজ,হলুদ, নীল,রঙ্গে। রাঙা কাগজ কেটে তৈরী হত ঝালট, নিশান। যা আঠা লাগিয়ে রশিতে আটকে দেয়া হত। রাতের অন্ধকার ভেদ করতে যোগাড় করা হত হ্যাজেক লাইট আর মোমবাতি লাগানো কাঁচের ঝাড়বাতি। পূজোয় ফুল তোলার দায়িত্বটা পুরোপুরি ছিল কিশোরদের উপর। এর পরিবর্তে আমরা পেতাম বাড়তি প্রসাদ।



পূজোর আনন্দ বাড়িয়ে দিত নতুন জামা কাপড়। বাজার থেকে কাপড় কিনে রামলাল দর্জির দোকানে তৈরী করতে দেয়া হত পূজার ১৫/২০ দিন আগে। এরপর থেকে প্রতিদিন গিয়ে একবার খবর নিতাম দর্জির দোকানে। পোশাক হল ? দর্জি আজ না কাল দিব বলে পূজো পর্যন্ত ঠেকিয়ে দিত। বড্ড রাগ হত দর্জির উপর, তাকে শায়েস্তা করতে কত কুটবুদ্ধি আঁটটাম। যখন নতুন জামা হাতে পেতাম তখন সব ভুলে যেতাম। সামান্য টাকায় তৈরী করা ওই জামা আপনাআপনি নিয়ে যেত আনন্দ ভূবনে। এতে মিশানো ছিল বাবা-মা’য়ের স্নেহ জড়ানো আর্শীবাদ। এখন ছোটরা অনেক টাকায় কেনা জামায় সেই আনন্দ পায় না।

আমাদের পাশের গ্রাম দৌলতপুর তালুকদার বাড়ি ছিল আমার বড় বোন যোগমায়া দিদির শশুর বাড়ি। পূজায় ওই বাড়িতে মহিষবলি হত। আমরা পাঁচ ভাই দিদি-জামাই বাবুর কাছ থেকে উপঢোকন হিসেবে পেতাম নতুন জামা কাপড়। একবার দিদির বাড়ি থেকে আমাদের কে ধুতি আর পাঞ্জাবী দেয়। ছোট বয়সে ধুতি পরা কি কঠিন কর্ম তা হাড়ে হাড়ে টের পাই। ধুতির কাচা দিতে গিয়ে দেখি কোচা বড় হয়ে গেছে।







প্রতীমা দর্শন না করলে কি যেন মিস হয়ে যাবে এমন ধারনা থেকেই সবাই দল বেঁধে বিভিন্ন মন্ডপে যেতাম। এ সময় কার পোশাক কেমন তা নিয়ে চলত আলোচনা। বিকেলে বেড়িয়ে রাত হয়ে গেলেও তখন কোন চিন্তার ভর করেনি বাবা মায়ের মুখে। এখন প্রতীমা দর্শনে যাওয়া মানে রীতিমত মল্লযুদ্ধে অংশ নেয়া। প্রশাসন সজাগ থাকার পরেও নিরাপত্তা নিয়ে মনে একটু সংশয় থেকেই যায়। আগে পূজো মানে মেলা হবেই। দৌলতপুর গ্রামে দশমী তিথিতে মেলা বসত। লাইভ নারায়ণগঞ্জকে রনজিৎ মোদক বলেন, তিন দিনের এই মেলার স্মৃতি হাতড়েই কেটে গেছে তিন কাল। এখনো চোখে ভাসে মেলায় বিক্রি করা মিঠাইয়ের জিলাপী,খই উখরা, বাতাসার স্বাদের কথা। নাগরদোলায় চড়ে মাটি থেকে আকাশপানে ছুটে যাওয়া আবার মাটিতে ফেরা। তখন ঢাকাকে দেখতাম বাইস্কোপে। মেলা থেকে কেনা ছোট ঢোল বাজাতাম আর বেলুন লাগানো বাঁশীতে ফুঁক দিয়ে জানান দিতাম আমরা বাড়ি আসছি।



এখন পূজো মন্ডপের জায়গা কমতে কমতে এতই কমে গেছে যে মেলা আয়োজন স্বপ্নের বিষয়। বাড়ি বাড়ি নিমন্ত্রন ছিল তখন খুব সহজ বিষয়। এখন এসব উঠে গেছে বললেই চলে। তবে গ্রামে হয়তো এখনো এর রেশ আছে। পূজোর বিভিন্ন কাজে সাথে ছিল অনেক সঙ্গী। যাদের মধ্যে বিপ্র দাস তালুকদার, রফিকুল ইসলাম রতন, কালাচাঁন বুল্কু, পদ হরি, চৈতন্য, অমলেশ, ফণিভূষন, মিহির, দীলিপ, হারান, খরান, আজহারুল ইসলাম মজনু, সত্য, ব্রজ গোপাল, গুতু। এদের মধ্যে অনেকেই এখন এ ধরায় নেই।



১৯৭৮ সালে জীবন জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসা রনজিৎ মোদক এখন দক্ষিন কেরানীগঞ্জ কোন্ডার পারজোয়ার ব্রাহ্মনগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত আছেন। বর্তমানে সকাল বার্তা প্রতিদিন’র সহকারী সম্পাদক। সেই সাথে ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।ব্যক্তি জীবনে তিনি দুই কণ্যা, এক পুত্র সন্তানের জনক রনজিৎ মোদক স্বস্ত্রীক থাকেন ফতুল্লায়। লাইভ নারায়ণগঞ্জের সাথে আলাপকালে সংসার জীবনে সুখী এই মানুষটি জানান, জীবনের তেমন কোন চাওয়া পাওয়া নেই। শুধু মাঝে মধ্যে মনে হয় একবার যদি আবার কৈশোরে ফিরতে পারতাম। যদিও আবারো বাবা-মায়ের কাছে শত আব্দারের সেই বয়স পেতাম। বড় ভাই, দিদিদের আদর শাসনে মিশ্রিত সুখময় এক জীবন।

(অনুলিখন- আনোয়ার হাসান )

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৬

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: প্রসাদ আর জমকালো আচার অনুষ্ঠানের কারনেই প্রধানত যেতাম । একটা শান্তি শান্তি সম্প্রীতি ছিল , পুরনো সে দিনগুলো মনে করিয়ে দিলেন ভ্রাতা 8-|

ভালো থাকবেন :)

২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০৬

আনোয়ার ভাই বলেছেন: ধন্যবাদ । আপনিও ভাল থাকবেন।

৩| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:১০

আমায় ডেকো না বলেছেন: আজকাল অনেক মুসলমানদেরকে দেখা যায় যে তারা হিন্দুদের দুর্গা পুজা সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করে। আবার এটাকে তারা অনেক আধুনিকতা মনে করে। আসুন দেখা যাক কুরআন-সুন্নাহ্ এ সম্পর্কে কি বলে। বিস্তারিত-
Click This Link

৪| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:০৫

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: পুরানো সেইসব দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিলেন -- দারুন মায়া করে লিখেছেন

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৫

আনোয়ার ভাই বলেছেন: অন্তরে সব প্রাণীকুলের জন্য মায়ার পরিমাণ খুব বেশী, তাই হয়তো ।

ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য লাইলী আরজুমান খানম লায়লা ।

৫| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২২

ডি মুন বলেছেন: অনেক বানান ভুল হয়েছে।
বানানের দিকে আরো একটু সতর্ক দৃষ্টি দিলে লেখাটি আরো সুন্দর হতো।

লেখককে শুভেচ্ছা।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৯

আনোয়ার ভাই বলেছেন: ধন্যবাদ । কয়েকটা ভুল বানান ধরিয়ে দিলে ভাল হত ।

৬| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:১০

ডি মুন বলেছেন: ঘ্রান , হেটে , মন্ডপ , রঙ্গে , উপঢোকন

আপনি বললেন বলেই কয়েকটি উদাহরণ দিলাম।

এমন ছোট্ট এবং সুন্দর লেখায় এগুলো বেমানান লাগছিলো তাই ওমন দৃষ্টিকটু মন্তব্য করেছিলাম। বিনীত ক্ষমাপ্রার্থী।

যাহোক, আপনি আরো চমৎকার লেখা উপহার দিয়ে আমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন, এমনটাই প্রত্যাশা।

ভালো থাকা হোক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.