নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনোয়ার ভাইয়ের কথার কথা

আনোয়ার ভাই

কিছু একটা করি

আনোয়ার ভাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

চলে গেলেন সুরস্রষ্টা খন্দকার নুরুল আলম

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৪


দর্শন এর ছাত্র ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে থাকতেন ফজলুল হক হলে। সেখানে তার এক বছরের সিনিয়র ছিলেন গীতিকবি ড. মনিরুজ্জামান। তাকে তিনি বললেন আপনিতো কবিতা লিখেন, গান লিখেননি। তিনি বললেন লিখি। ওনার কয়েকটা গানে সুর দিলেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটকের গানে সুর দেয়া। পরে ১৯৬৭ সালে উর্দু ছবি উজান এর মাধ্যমে সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ। এরপর কয়েক যুগ ধরে বাংলা গানের ভুবনে দাপটের সাথে বিচরণ করেছেন তিনি। গড়েছেন ইতিহাস। সেই তিনি হলেন খন্দকার নুরুল আলম।

১৯৩৬ সালে ১৭ আগস্ট ভারতের আসামে জন্ম নেন খন্দকার নুরুল আলম। মাত্র ১২ বছর বয়সে তার মা মারা যান। এক সময় তার পরিবার বাংলাদেশে চলে আসেন। ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি।

তার প্রথম ছবি উজান এর বিখ্যাত উর্দু গান হামছে ওয়াফা কার দাে - দারুন জনপ্রিয় হয়। ১৯৭০ সালে তিনি প্রথম বাংলা ছবিতে সুর দেন। ছবির নাম অন্তরঙ , পরিচালক ছিলেন সৈয়দ আউয়াল। এ ছবির কাহিনি লিখেছিলেন সাংবাদিক ওবায়দুল হক। তিনি ছবির স্ক্রীপ্টে কয়েকটি গানের লাইন লিখেছিলেন,বলেছিলেন এমন হবে গানগুলো। পরিচালক সুরকার খন্দকার নুরুলকে এটা জানালে তিনি উত্তর দিলেন- কেন হবে না। উনিতো ভাল লিখেছেন। ওই ছবির একটি গান খুব জনপ্রিয় হয়। গানটি হল - ভুল যদি হয় মধুর এমন-----হউকনা-----।
এরপর থেকে সাংবাদিক ওবায়দুল হক তাকে যেখানে দেখতেন বলতেন আমাকে আপনি গীতিকার বানিয়ে দিলেন।

মো. রফিকুজ্জামানের লেখা গানে সুর দিলেন খন্দকাল নুরুল আলম। গাইলেনও নিজে। এরপর এক স্মৃতিময় সৃষ্টির ইতিহাস। জনপ্রিয় সেই গানটি - আমি চাদকে বলেছি আজ রাতে, জােছনা লুকাতে।

তার কন্ঠের জাদুকরি আরেকবার ধরা পড়ল ১৯৭০ সালে মুক্তি পাওয়া যে আগুনে পুড়ি ছবিতে। আমির হোসেন পরিচালিত এই ছবিতে সুর দেয়ার পাশাপাশি একটি গান গাইলেন তিনি। যে গান আজো মানুষের মুখে মুখে - চােখ যে মনের কথা বলে, চােখে চােখ রাখা শুধু নয়।

অনেক ছবিতে সুরকার হিসেবে কাজ করেছেন খন্দকার নুরুল আলম। ১৯৭১ সালে মুক্তি পায় জল, ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ছবি ওরা এগারজন, ১৯৭৩ সালে জীবন তৃষ্ণা। এ ছবির বিখ্যাত গান- এ আধার কখনো যাবে না মুছে।

১৯৭৪ সালে আধারের আলো ও চােখের জলে সুর দেন তিনি। চােখের জলে ছবিতে সাবিনা ইয়াসমীনের সাথে একটি গানে কন্ঠ দেন তিনি।
১৯৭৪ সালে সংগ্রাম ছবিতে কাজ করেন । এ ছবির একটি গান- বিচারপতি তােমার বিচার কে করবে। ওই বছরই আরো একটি ছবি মুক্তি পায়। স্মাগলার সিনেমার একটি গান মানুষের মুখে মুখে ফিরে। গানটি- সাথী আমার হল না তাে কেউ, সাথীহারা এই জীবনে।

খন্দকার নুরুল আলম গানে বিদেশী ঢঙ পছন্দ করতেন না। তাকে একজন বলেছিলেন আপনি বিরহ সুরের গানই পারবেন। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললেন আধঘন্টা সময় দাও তােমার মত গান তুলে দিচ্ছি। ১৯৭৭ সালে পিঞ্জর ছবিতে সেই গানটি দিলেন- তােমারই উপহার আমি চিরদিন রেখে দিব। গানটি দর্শক লুফে †নয়।
সেই ব্যক্তিকে খন্দকার নুরুল আলম বললেন, সব স্টাইলের গানই পারি। তবে †দেশকে প্রাধন্য দিয়ে গান করব। গানে তার দেশপ্রেমের টান ১৯৮২ সালে মুক্তি পাওয়া দেবদাস ছবিতেও পাওয়া যায়। ওই ছবির প্রযোজক সব গান কোলকাতায় গিয়ে রেকর্ড করতে বলেছিলেন। জবাবে না বলেছিলেন খন্দকার নুুরুল। প্রযোজক তার কথাই মেনে নিয়েছিলেন।

১৯৮২ সালে কাজল লতা ছবিতে তার সুরে ঐ চাঁদ ডাকে ঐ রাত জাগে আজ তুমি কােথায় দারুন জনপ্রিয় হয়। তার সুর করা দেবদাস, চন্দ্রনাথ, শুভ দা’, বিরাজ বউ বোদ্ধামহলে সুনাম কাড়ে। তিনি পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার।
তার আরো কয়েকটি চলচ্চিত্রের নাম বিরহ ব্যথা, পদ্মা মেঘনা যমুনা, শঙ্খনীল কারাগার, আজকের প্রতিবাদ। ২০০৪ সালে রবী ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে শাস্তি ছিল তার সব শেষ ছবি। এরপর অনেকটা আড়ালে চলে যান তিনি। মিডিয়াতে তার তেমন উপস্থিতি ছিল না।

৮০ বছর বয়সে আসি না বলেই তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ২২ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুরে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।

এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় কেউ সঙ্গী হয় না। শিল্পীর সেই বিখ্যাত গানের কথার মতই - সাথী আমার হল না তো কেউ-----

তবে সুরস্রষ্টা খন্দকার নুরুল আলমের অমর সৃষ্টি তাকে বাচিয়ে রাখবে। বাঙলা গানের কথা উঠলে ভেসে উঠবে তার মুখ। তাকে মনে করেই কেউ গাইবে----- তোমার এই উপহার আমি চিরদিন রেখে দিব।


মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১৭

প্রামানিক বলেছেন: তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৯

আনোয়ার ভাই বলেছেন: সবার তাই করা উচিত প্রামনিক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.