নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আঁধারে তামাশায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূণ্যতা থেকে শূণ্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙ্গলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।

আমি আঁধারে তামাশায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূন্যতা থেকে শূন্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙ্গলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।

কান্ডারি অথর্ব

আমার মৃত্যুর পর তোমরা আমাকে খুজোনা আমার মৃত্যু ভূমির ‘পর। সেখানে তোমরা আমাকে পাবেনা খুঁজে; আমি লুকিয়ে রবো লোক চক্ষুর অন্তরালে; কিছু না পাওয়ার ব্যথাতুর বেদনার, শকুনেরা আমাকে ছিঁড়ে খাবে; রক্ত আর ভস্মীভূত দহনের জ্বালায়; সীমাহীন এক যন্ত্রণার আঁধার, আমি হতে রবো কাতর।

কান্ডারি অথর্ব › বিস্তারিত পোস্টঃ

অহমের মায়াজালে

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৮





[১]

মনের অন্তরীক্ষে জার্মান শেফার্ড তুমি হেসেছো ঈদের চাঁদ হয়ে,
বাতাসে তোমার বাদামী চুলের ঘ্রাণ ছড়িয়ে;
কার্তিকের এই শুভ্র সকালের রোদে,
আমাকে ভেলায় ভাসাতে চাইছো লক্ষ্মীন্দরের মতো বুড়িগঙ্গার জলে,
আমি কালের পরিক্রমায় ক্লান্ত যাত্রী তোমার,
আমাকে তোমার নৌকার ছইয়ের মতো শরীরে একটু ঠাই দাও।

জামিল ভাই কবিতাটি পড়া শেষ করেই একটা সিগারেট ধরালেন। মুখের অভিব্যাক্তি ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। অবশ্য তিনি সব সময় এই রকমই। গম্ভীর মুখ করে বসে থাকেন। রাজ প্রাসাদের প্রহরীদের মতো রোবট প্রকৃতির। কোন প্রকার আবেগ তাদেরকে স্পর্শ করেনা। চোখের সামনে হাসা-হাসি, কান্না-কাটি, প্রেম-ভালোবাসা, কাম-অভিসার, জন্ম-মৃত্যু যাই ঘটুক না কেন তারা মূর্তির মতো ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। জামিল ভাই অবশেষে তার নীরবতা ভাঙলেন।

জিনিয়াস ! এইরকম কবিতা বাংলা সাহিত্যে এই প্রথম তুমি লিখলে। কুকুরের প্রতি মানুষের ভালোবাসা। জীব দয়া অর্থাৎ জীবের প্রতি মানুষের ভালোবাসা পরম ধর্ম। ঈশ্বর এতে প্রচ্ছন্ন হন। মেটাফোর হিসেবে কুকুরটিকে এক অনিন্দ্য সুন্দরী নারীরূপে আঁকাটা কবিতাটিকে অভিনব শৈল্পিকতা দিয়েছে। ম্যাডামের কবিতার বইতো সুপার হিট হবে শুধুমাত্র এই কবিতাটির জন্যই।

ম্যাডাম মানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী কুসুম কুমারীর দীর্ঘদিনের ইচ্ছা তিনি কবিতার বই বের করবেন। কবি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তার অদ্ভুত সব শখের মধ্যে একটি। কিন্তু তিনি নিজে কবিতা লিখতে পারেন না। জামিল ভাইয়ের সাথে পূর্ব পরিচয়ের কারণে নেত্রীর কাব্যগ্রন্থের জন্য কবিতা লেখার কাজটি আমিই পেয়েছি। এইসব জিনিস খুব গোপনে হয়। আর জামিল ভাই অত্যন্ত বিচক্ষণ ভাবে পুরো ব্যাপারটার চমৎকার গোপনীয় একটা সমাধান করেছেন আমাকে কবিতা লেখার কাজে নিযুক্ত করার মধ্য দিয়ে। সস্তায় কবিতা লিখে দেয়ার জন্য আমার চেয়ে ভাল বিশ্বস্ত কাউকে অবশ্য তিনি আর পানওনি। জামিল ভাই নেত্রীর খাস পিএস। আমার সাথে কখনও নেত্রীর সাক্ষাৎ হয়নি। জামিল ভাইয়ের মাধ্যমেই সব লেনদেন হয়। জামিল ভাই একশত টাকার নোটের একটা বান্ডিল হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন এই নাও গোলাপ ভাই এটা তোমার এডভান্স। যাও কবিতা লিখতে থাকো গিয়ে। বই বের হলে বাকি টাকা এসে নিয়ে যেও।

আমি টাকাটা নিয়ে নেত্রীর অফিস থেকে বের হয়ে এলাম। পকেটে জার্মান শেফার্ডের হাতে লিখে দেয়া মোবাইল নাম্বারের চিরকুটটি আছে। তাকে একটা ফোন দেয়া যেতে পারে। তাকে ফোন দিয়ে জানানো দরকার, হে অনিন্দ্য সুন্দরী জার্মান নারী; তোমার আমি নাম দিয়েছি জার্মান শেফার্ড। কুকুরের নামে নাম দিয়েছি বলে আবার মনে কিছু করোনা। আসলে জার্মানের আর কিছু সম্পর্কে আমার তেমন কোন কিছুই জানা নেই। এক হিটলার সম্পর্কে জানি আর জানি জার্মান শেফার্ড নামের এক জাতের কুকুর আছে। অবশ্য জার্মান শেফার্ড সম্পর্কেও তেমন কিছুই জানিনা। আর এক আছে জানি জার্মান পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট সম্পর্কে। কিন্তু হিটলার আর ইনস্টিটিউট নামে ডাকার মাঝে কোন নান্দনিক সৌন্দর্যতা নেই। তাই আর কিছু না পেয়ে শেষে জার্মান শেফার্ড নামটিই মাথায় এলো। এটা অবশ্য আমারই দোষ। আমারই উচিত ছিলো তোমার নামটি জিজ্ঞাসা করে নেয়া। কিন্তু আমি সেটা করিনি। মানুষের মস্তিষ্ক ঘোরের মধ্যে থাকলে তার স্বভাব সুলভ অতি সাধারণ কাজটি করতেও তাৎক্ষণিক ভাবে ভুলে যায়। আমিও সেদিন তোমার রুপের মোহে ঘোরের মধ্যে ছিলাম।

জার্মান শেফার্ডকে মোবাইলে পাওয়া গেলো। (গল্পের সুবিধার্থে সকল কথোপকথন বাংলায় লেখা হলো)

হ্যালো !

শুভ দুপুর। আমি গোলাপ ভাই বলছি। সেদিন আহসান মঞ্জিলে আপনার সাথে কথা হয়েছিলো। আপনি আমাকে আপনার মোবাইল নাম্বার লিখে দিয়েছিলেন। আপনার একজন গাইড দরকার। আপনি আমাকে গাইড হিসেবে নিয়োগ দিবেন বলে বলেছিলেন।

ওহ ! হ্যাঁ। মিঃ গোলাপ আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। আজকে কি আপনার সময় হবে ?

আজকেতো সময় হবে না। আজকে আমার হাতে অনেক কাজ আছে।

তাহলে আপনি যখন সময় করতে পারবেন আমাকে একটা ফোন করে হোটেলে চলে আসবেন। আমি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে উঠেছি। রুম নাম্বার ৩০৬। আমি ম্যানেজারকে বলে রাখছি যেন আপনি এসে আপনার পরিচয় দিলেই সরাসরি রুমে আসতে দেয়।

বিদায় নিয়ে ফোনের লাইন কাটতেই খেয়াল হলো আজকেও তার নাম জানা হলোনা। এই মেয়েটি যেমন রূপসী তেমনি তার কণ্ঠ। ঘোর লাগা অদ্ভুত যাদুকরী কণ্ঠ। ঘোরের কারণে আজকেও তার নাম জিজ্ঞাসা করতে পারলাম না। সামনা সামনির চেয়ে কোন নারীর কণ্ঠ ফোনে অনেক বেশি সুন্দর শোনা যায়। বিশেষ আকর্ষণ কাজ করে। তখন ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে কাটিয়ে দেয়া যায়। এই কারণেই রাতের পর রাত, দিনের পর দিন প্রেমিক তার প্রেমিকার সাথে ফোনে কথা বলে প্রেম করতে পারে। প্রেমের কথার চেয়ে তখন প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কথা আদান প্রদান হতে থাকে। একসময় কথা মোড় নেয় যৌনতায়; যাকে আজকের সমাজ খুব সুন্দর একটা নাম দিয়েছে, ফোন সেক্স। প্রেমের সাথে যৌনতার একটা সম্পর্ক অবশ্যই আছে। তাই ফোনে কথা বলাও এর ব্যতিক্রম নয়। এটাও জীবনেরই একটা অংশ।

[২]

১৮৮৮ সাল। লর্ড ডাফরিন ও লেডী ডাফরিন কোলকাতা থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় এসেছেন নবাব আবদুল গনি সাহেবকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কেসিএসআই খেতাব দেয়ার জন্য। তাদের সৌজন্যে সুরমা উপত্যকা থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আমাকে ঘোড়সওয়ার হিসেবে এনে বিশেষ প্রহরী করে নিয়োগ দেওয়া হলো। তাদের সম্মানে নবাব আবদুল গনি সাহেব ব্যাপক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। বল নাচের আয়োজন করা হয়েছে। তাদের আপ্যায়নের জন্য স্পেশাল অর্ডার দিয়ে সাত হাজার টাকা খরচ করে নবাব সাহেব কোলকাতার উইলসন হোটেল থেকে রাজকীয় খাবারদাবার আনিয়েছেন। সে এক নজিরবিহীন ঘটনা। তাদের সম্মানে মণিপুরি পলো খেলার আয়োজন করা হয়েছে। আনা হয়েছে ২৬টি বড় বড় হাতি। হাতিগুলো সব নানা রকম ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করাতে সর্বক্ষণ ব্যাস্ত। লর্ড ডাফরিন ও লেডী ডাফরিনের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য নবাব সাহেব হাসপাতাল ও হোস্টেল নির্মাণের পরিকল্পনা করে ফেললেন। সে জন্য তিনি একাই ৫০ হাজার টাকা দান করলেন। নবাব সাহেব লর্ডের প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রদর্শনের জন্য কোন প্রকার ত্রুটি রাখতে চান না। একজন গোলাম তার প্রভুর আস্থা ভাজনে প্রয়োজনে নগ্ন হতেও প্রস্তুত থাকে। আর সেখানে নবাব সাহেব হলেন ব্রিটিশ লর্ডদের খাস আস্থা ভাজন। এমনি এমনিতো আর লর্ড সাহেব তাকে খেতাব দিতে স্বয়ং নিজে আসেননি। তার কাজে কর্মে পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট হয়েই তারা এসেছেন। গোলামের ঘরে প্রভু স্বয়ং এসেছেন। কোন দূতও পাঠাননি। অতএব প্রভুর জন্য অর্চনার কোন কমতি তিনি রাখলেন না।

১২ হাজার মোমবাতি জ্বালিয়ে আহসান মঞ্জিল ও তার প্রাঙ্গণের বাগান আলোকসজ্জিত করা হয়েছে। অসংখ্য মোমবাতি-শোভিত প্রাসাদটি দেখে মনে হচ্ছে যেন এক আলোর বাগান। আমি রুপকথার গল্পের নায়ক আর আমার ঘোড়ার গাড়িতে সওয়ার হয়েছে সিন্ডারেলা। এখনই তার পায়ে নিজ হাতে জুতা পরিয়ে দিব। কারন তার জুতা জোড়ার একটি আমার কাছেই রয়েছে। জুতা পরিয়ে দিতেই চিরদিনের জন্য সিন্ডারেলা আমার হয়ে যাবে।

প্রাসাদের মূল ফটকের সামনে এসে আমার ঘোড়ার গাড়ি থেমেছে। গাড়ির দরজার সামনে কুর্ণিশ করার ভঙ্গিতে বসে দুই হাত পেতে দিয়েছি। প্রথমে ডাফরিন সাহেব নামলেন আমার হাতের তালুর উপর ভর দিয়ে। তারপর নেমে এলেন লেডী ডাফরিন। বিশাল আলখেল্লার মতো লেইসের কারুকার্য শোভিত রেশমি কাপড়ের গোলাপি রঙের গাউন; গোলাপি রঙের সাথে মিল রেখে হাতে নেটের গ্লাবস, পায়ে উঁচু হিলের জুতা, মাথায় লম্বা হ্যাট। হ্যাটের সামনে দিয়ে মুখের কাছে ছোট করে নেট লাগানো। সেই নেটের ছোট ছোট ফাঁকা দিয়ে লেডী ডাফরিনের গোলাপি ঠোঁটের মিষ্টি হাসি চোখে পড়লো। মনে হচ্ছে যেন আকাশে জাল পেতে পূর্ণিমার চাঁদ ধরা হয়েছে। এই চাঁদকে কিছুতেই হারাতে দেয়া যাবেনা। লেডী ডাফরিন লাল গালিচা মোড়ানো সিঁড়ি দিয়ে প্রাসাদে উঠে যাচ্ছে। আমি তার হেটে যাওয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। তার সরু কোমর বেয়ে নেমে আসা শৈল্পিক শারীরিক গঠন হাটার ছন্দে মাতাল।

অদ্ভুত সুন্দর !

হঠাৎ চৈতন্য ফিরে পেলাম। তাকিয়ে দেখি আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে লেডী ডাফরিন।

জলসা ঘরের পুরো দেয়াল জুড়ে হাতে আঁকা ছবিটির দিকে তাকিয়ে রয়েছি দুজনে। পুরো মেঝে কাঠের, চারদিকের দেয়ালে বিশাল বিশাল আয়না লাগানো, উপর থেকে বিশাল এক ঝাড় বাতি ঝুলছে। ছবির একপাশে বসে আছেন নবাব সাহেব ও তার নায়েব এবং পুত্র নবাব আহসানউল্লাহ সাহেব। এছাড়াও চারদিকে মেঝে ঘেঁষা ছোট ছোট সোফায় বসে আছেন অন্যান্য দেশী-বিদেশী অতিথিবৃন্দ। নবাব পরিবারের নারী-পুরুষরাও বসেছেন সৌজন্যতা মূলক। সবার দৃষ্টি লর্ড ডাফরিন ও লেডী ডাফরিনের নাচের দিকে। তাদেরকে সঙ্গ দিয়ে নাচছে আরও দুই ব্রিটিশ দম্পতী। লর্ড ডাফরিনের হাত লেডী ডাফরিনের সরু কোমরে রাখা আর লেডী ডাফরিনের এক হাত লর্ডের কাঁধে রাখা।

দেখেছেন কি অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য ?

দেখছি। কিন্তু এর মধ্যে আমি কোন সৌন্দর্য খুঁজে পাচ্ছিনা। এইটাতো হাতে আঁকা ছবি। ছবিটাও ভাল করে আঁকতে পারে নাই। লেডী ডাফরিনের রূপ সম্পর্কে মনে হয় চিত্রশিল্পীর কোন ধারনাই নেই। ব্যাটা যার কোন ধারনাই নেই, তাকে দিয়ে কেন ছবি আঁকাবি। তাও লেডী ডাফরিনের মতো একজন অনিন্দ্য সুন্দরীর। শুধু ছবি আঁকতে পারলেই হয় না। ছবির মূল তাৎপর্যটাই হলো পুরো ক্যানভাস জুড়ে ছবির চরিত্রটাকে জীবন্ত রূপ দান করা। এই জন্য দরকার ছবি আঁকার আগে ছবির চরিত্র নিয়ে ভাল করে স্টাডি করা।

বাহ ! দারুণ বলেছেনতো।

এইসব প্রাসাদের ছবি দেখার চেয়ে চলুন আপনাকে আসল সৌন্দর্য দেখাই। প্রাসাদের শেষ প্রান্তে এসে সিঁড়ির উপর দুজনে দাঁড়িয়ে আছি। ঐ দেখেন বুড়িগঙ্গা নদী দেখা যাচ্ছে। নদীর তীরে কিছু লঞ্চ দাঁড়িয়ে আছে, কিছু নৌকা চলাচল করছে। কিন্তু এসবের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য হলো নদীর পানির রঙটা। এখন কোন চিত্রশিল্পীকে যদি ডাক দিয়ে বলা হয় এই ছবিটা এঁকে দেয়ার জন্য। আর সে যদি নদীর রঙ হিসেবে নীল রঙ ব্যবহার করে তাহলে হবেনা। ভাল করে তাকিয়ে দেখুন। বুড়িগঙ্গার নদীর পানি কি নীল রঙের, না কালো রঙের ? ছবিতে যদি নদীর পানি কালো রঙে আঁকা হয় তাহলেই কেবল ছবিটা জীবন্ত রূপ লাভ করবে। যে কোন ছবিকেই হতে হবে জীবন্ত রূপের। তবেই একটা ছবি আঁকা সার্থক। যে ছবিতে কোন প্রাণ নেই, সে ছবি জীবনের ছবি নয়।

চমৎকার বলেছেন ! আপনি কি ছবি আঁকেন ?

না, আমি ছবি আঁকি না। তবে মিন্টু খুব ভাল ছবি আঁকে। মিন্টুর আঁকা ছবিগুলো দেখলে মনে হয় এক একটা ছবিকে সে জীবন্ত রূপ দান করেছে।

আমাকে কি উনার কাছে নিয়ে যাওয়া যাবে ? আমি আমার একটা পোট্রেট আঁকাবো উনাকে দিয়ে।

অবশ্যই নিয়ে যাওয়া যাবে। তবে মিন্টুর কিন্তু ছবি আঁকার উপরে কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। সে হচ্ছে একজন রিক্সা পেইন্টার, বাংলা সিনেমার পোস্টার আঁকাতেও সে সমান পারদর্শী।

ইন্টারেস্টিং !

শুধু তাই না, কেউ চাইলে পুরো শরীরের নগ্ন পোট্রেটও সে এঁকে দেয়। তবে এই ক্ষেত্রে লোকে সাধারনত নগ্ন মেয়েদের ছবিই তাকে দিয়ে আঁকিয়ে নেয়। এই ক্ষেত্রে তাকে কিছু বাড়তি পেমেন্ট দেয়া লাগে। প্রচুর সময় নিয়ে আঁকতে হয় বলেই মিন্টু এই কাজে বাড়তি পেমেন্ট নেয়। স্বয়ং পিকাসো মিন্টুর ছবি আঁকার কাছে নস্যি।

আমাদের জার্মানিতে আমার এক পরিচিত চিত্রশিল্পী আছে। তাকে দিয়ে একবার আমার একটা পোট্রেট আঁকিয়ে ছিলাম। কিন্তু সেটা মনের মতো হয়নি। পোট্রেটটা দেখে মনে হচ্ছিলো যেন একটা পুরুষ মানুষ হাতে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে। আমি সাথে সাথে ছবিটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে তার মুখের উপর ছুঁড়ে ফেলি।

আমি দৃশ্যটা কল্পনা করার চেষ্টা করছি। একজন পুরুষ মানুষ একগুচ্ছ ফুল হাতে রেশমি কাপড়ের গোলাপি রঙের স্লীভলেস গাউন পরে দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে। পুরুষ মানুষের জন্য এইরকম রোম্যান্টিকতা করার কোন নিয়ম নেই। পুরুষ মানুষ মুখে চুরুট নিয়ে বসে থাকবে। মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের হতে থাকবে। আর দোলনায় দোল খাওয়ার অধিকার শুধু নারীদেরই।

এই হলো জার্মান শেফার্ড এর সাথে আমার প্রাথমিক পরিচয় পর্ব।

[৩]

মানুষের মৃত্যুর পর নাকি শরীর থেকে আত্না বেরিয়ে যাওয়ার পর ৪০ দিন পর্যন্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায়; যেখানে যেখানে সে ভ্রমণ করেছে সেসব জায়গায়। তারপর ফিরে যায় আল্লাহর কাছে। আল্লাহ যদি এভাবে আত্মার ঘুরাঘুরির জন্য নির্ধারিত সময় বেঁধে না দিয়ে অনন্ত কালের জন্য আত্নাকে মুক্ত করে দিত তাহলে কেমন হতো ?

শাকিলের মাথার ভেতর হঠাৎ করে ঢুকেছে সে আসলে মানুষ নয়। সে মারা গেছে। তার আত্মা এখন চায়ের দোকানদার হয়ে মানুষকে চা বানিয়ে খাওয়ায়। মৃত্যুর আগে সে ছিলো বাংলার নবাব পরিবারের একজন নবাব। এখন তার আত্মার নাম হয়েছে শাকিল। তার আশেপাশের মানুষগুলোও সব আত্মা। আমাকেও এখন সে আত্মা মনে করছে।

শাকিল আমাকে এক কাপ চা খাওয়াতে পারিস ?

শাকিল প্রচন্ড রকম ক্ষোভ নিয়ে চায়ের কাপ এগিয়ে দিতে দিতে বলছে, নেন একসময়কার নবাব; এক ঘোড়সওয়ারকে চা বানিয়ে খাওয়াচ্ছে। নিয়তির সেকি অদ্ভুত লীলাখেলা ! এক সময়কার চাকর-বাকরগুলো এখন নবাব সেজেছে আর নবাব হয়েছে চা ওয়ালা।

নবাব সাহেব চলেন আজকে তাহলে আমরা দুই আত্মা মিলে পুরো আত্মার নগরীতে ঘুরে বেড়াবো। যেখানে কোন মানুষ থাকবেনা। শুধু আত্মার ভূমিতে আমাদের বিচরণ হবে।

শাকিলের কপালে কিঞ্চিত চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে। আমি সেই রেখার ভাষা পড়ে বোঝার চেষ্টা করছি। মানুষের নিয়তি নাকি তার কপালে লেখা থাকে। এই মুহূর্তে শাকিলের কপাল তার ভাগ্য সম্পর্কে কি বলছে সেটা জানা দরকার। কপালের রেখা যদি সমান্তরাল ভাবে তিন ভাঁজে ভাঁজ হয়ে ফুটে উঠে তাহলে ভাল। ত্রিভূবন গঠিত হয়েছে জল, স্থল আর শূণ্য দিয়ে। আবার কোরআনে তিনটি বর্ণের কসম খেয়ে পুরো এক সূরা নাযিল হয়েছে। আলিফ, লাম, মীম। কিন্তু শাকিলের কপাল ভাল কিছুর প্রকাশ করছেনা। তার কপালে কেবল মাত্র দুটি রেখাই ভাঁজ খেলছে তাও সেটা ভাঙা ভাঙা।

শাকিল এর মধ্যেই দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতী নিয়ে ফেলেছে। আমি আর শাকিল অর্থাৎ নবাব সাহেব আর ঘোড়সওয়ারের আত্মা বের হয়ে পড়েছি আত্মার ভূমিতে বিচরণ করার উদ্দেশ্যে।

সোহ্রাওয়ার্দি উদ্যানের ভেতর ছোট খাটো একটা জটলা দেখা যাচ্ছে। গুটিকয়েক আত্মা ঘীরে রেখেছে একজন আত্মাকে। দেখে মনে হচ্ছে সে এই আত্মাদের নেতা টেতা হবে কেউ। উপস্থিত আত্মাদের সে নানারকম কৌতুক বলে হাসানোর চেষ্টা করছে।

দুইটা কৌতুকের নমুনা;

বুঝলা তোমরা, আমি তোমাদের চিরমুক্তির জন্য রক্ত দিতেও প্রস্তুত ছিলাম। তোমরা সবাই যুদ্ধ করে রক্তের বিনিময় আত্মা হয়েছো। কিন্তু আমি যুদ্ধের সময় তোমাদের সাথে রক্তের বিনিময় আত্মা হতে না পারলেও পরে কিন্তু ঠিকই রক্ত দিয়ে আত্মা হয়েছি।

এই কৌতুক শুনে উপস্থিত আত্মারা সবাই অট্টহাসি দিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে শুরু করল এক একজন।

এবার সেই নেতার আত্মা তার দ্বিতীয় কৌতুক বলতে শুরু করেছে,

বুঝলা তোমরা, আত্মা হয়েছিতো কি হয়েছে। আমার অনেক স্বপ্ন আছে। আমার মাঝে মাঝে খুব চুরুট খেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু আত্মা হয়েছি বলে চুরুট খাওয়া আর হয়না।

এবারও উপস্থিত আত্মারা সবাই অট্টহাসি দিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া শুরু করলো। আমি আর নবাব সাহেব সেখান থেকে চলে এলাম। ফুটপাথের উপর দিয়ে হাটছি। একটা মা ফুটপাথের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। পাশে বসে একটা ন্যাংটা বাচ্চা কাঁদছে। নাক দিয়ে সর্দি ঝরছে বাচ্চাটার। সামনে এমন আরও কয়েকটি পরিবার ফুটপাথের উপর বসে আছে।

দেখছেন নবাব সাহেব, কি অবিচার ! আত্মা হয়েছে বলে কি হয়েছে ? এরাতো একসময় মানুষই ছিলো। মানুষ যদি তার ঘর বাড়িতে থাকতে পারে, তাহলে আত্মারা নয় কেন ?

চলো, বিষ্ণু সামনে এগিয়ে দেখি।

সামনে এগুতেই নবাব সাহেব বিচলিত হয়ে উঠলেন। তার মনের ভেতর গভীর উদ্বেক দেখা দিয়েছে। কি সর্বনাশ ! তার হেরেম খানার হুরেরা সব দাঁড়িয়ে আছে। এক একজন আত্মা আসছে আর এক একজন হুর আত্মা তাদের সাথে চলে যাচ্ছে। যেসব আত্মা আসছে এরা সবাই নবাবের গোলাম আর প্রজা ছিলো একসময়।

নবাব সাহেবের সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো। তাই সে দ্রুত হেটে সেখান থেকে চলে এলো। নবাব সাহেবের পেছন পেছন আমিও হাটছি। আমার হাতে সিগারেট। নবাবের সামনে সিগারেট খাওয়া বেয়াদবি কিন্তু নবাবের আত্মার সামনে নয়। আত্মার ভূবনে সবাই সমান। এখানে নবাব-গোলাম কোন ভেদাভেদ নেই।

আমরা হাটতে হাটতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এসে উপস্থিত হয়েছি। হোটেলের ম্যানেজার ভীষণ স্মার্ট একজন মানুষ। একজন স্মার্ট মানুষের সাথে আমরা দুই আত্মা কথা বলছি। ম্যানেজার একদম স্যূটেট ব্যূটেট হয়ে ডেস্কে দাঁড়িয়ে আছে। ইনাদের বসার জন্য চেয়ার থাকলেও ইনারা কদাচিৎ চেয়ারে বসেন। ইনাদের কাজই হলো ঘোড়ার মতো দাঁড়িয়ে থাকা। ইনারা আবার ইংরেজি ছাড়া কথা বলেন না। ইনাদের চাকরী দেয়া হয় মূলত ইংরেজীতে কথা বলার জন্যই। ইনারা ইংরেজিটা বলেনও এমন ভঙ্গিতে যেন ইংরেজি না হিব্রু ভাষায় কথা বলছে।

গুড ইভেনিং স্যার, মে আই হেল্প ইউ ?

কি আশ্চর্য ! আপনি আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন ?

সরি স্যার !

মানে বলছি আমরা হোলাম গিয়ে আত্মা। আত্মাদেরতো দেখতে পাওয়ার কথা না। কিন্তু আপনি আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন। আপনি কি ভাই কোন ওঝা নাকি ?

ম্যানেজার সাহেব হাসছেন। ফাইভ স্টার হোটেলের ম্যানেজার হওয়ার প্রধান শর্তই হলো কাস্টমার ইজ অলওয়েজ রাইট, এই বেধ বাক্যে বিশ্বাসী হওয়া। কাস্টমার যদি গালিও দেয় তবুও হাসি মুখে তাকে সার্ভিস দেয়া। এইটা জ্ঞান মনে হয় ম্যানেজার সাহেব ভালই রপ্ত করতে পেরেছেন।

আচ্ছা ভাই, আপনি কি আত্মা দূর করার কোন মন্ত্র জানেন নাকি ? জানলেতো বিপদ আছে। শেষে মন্ত্র পড়ে আমাদের তাড়িয়ে দেবেন।

ম্যানেজার সাহেব একই রকম ভাবে তার ঠোঁট বাকিয়ে হাসছেন। বুঝলাম এই মানুষ সহজে বিচলিত হওয়ার পাত্র নন।

শুনুন ভাই আমরা হোলাম আত্মা। হাসবেন না। চাইলেই কিন্তু আমরা আপনার সর্বনাশ করে দিতে পারি। এইযে উনাকে দেখছেন। উনি হলেন বাংলার নবাবের আত্মা। উনি আত্মা হওয়ার পর এখন মানুষের মাথার চুল খান। এখন নবাব সাহেব আপনার মাথার চুল খাবেন।

ম্যানেজার সাহেব যথারীতি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললেন স্যার, ডু ইউ নিড সিঙ্গেল রুম অর ডাবল বেড রুম। উই হ্যাভ বোথ এসি এন্ড নন এসি রুম।

আমরা আত্মা তার হাসির কাছে পরাজিত হোলাম। বুঝতে পারছি এই মানুষ কঠিন শিক্ষা নিয়েই তার দায়িত্বে বসেছে। আমরা হোলাম আপনাদের হোটেলের ৩০৬ নাম্বার রুমে জার্মান যে ভদ্রমহিলা উঠেছেন তার গেস্ট।

স্যার, কাইন্ডলি ইউর নেম প্লীজ ?

বিষ্ণু। ম্যাডামকে বলুন আমি উনার ঘোড়সওয়ার। সাথে নবাব সাহেবও এসেছেন বলে দিন।

এবার ম্যানেজার তার হাসি থামিয়ে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকিয়ে তাকিয়ে একবার চোখ নামিয়ে নিয়ে ইন্টারকমের বাটন চাপতে লাগলেন। ম্যানেজারকে দেখে নবাব সাহেব বেশ একটা শক খেলেন। একসময়কার লর্ড সাহেবের আত্মা এখন হোটেলের ম্যানেজারি করছে ! ম্যানেজার সাহেব ইন্টারকমে যোগাযোগ করে আমাদের ম্যাডামের রুমে যাওয়ার অনুমতি দিলেন।

ফাইভ স্টার হোটেলের রুম বলতে যেমন হওয়ার কথা এই রুমটা ঠিক তেমন নয়। সাধারণ মধ্যবিত্তের ঘর যেমন হয় হোটেলের এই রুমটাও ঠিক তেমনই বলা যেতে পারে। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে রুমের চারপাশটা দেখছি। আসলে এই মুহূর্তে জার্মান শেফার্ডের দিকে তাকাতে ভীষণ লজ্জা লাগছে। এত্তবড় একটা মেয়ে তাও আবার হাফপ্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরে আছে। সাদা চামড়ার মানুষ দূর থেকে দেখতেই সুন্দর লাগে। কাছ থেকে সাদা চামড়ার মানুষের শরীর দেখতে ভাল লাগেনা। সাদার সাথে লালচে লালচে রঙ মিশে থাকে। অনেকটা দেখতে মেশিনে সদ্য ড্রেসিং করা হাঁসের চামড়ার মতো মনে হয়।

তো বিষ্ণু আপনি কি এখন পুরোপুরি ফ্রি আছেন।

জী আমি এখন আত্মা হয়েছি। আর আত্মারা মুক্ত। সেই হিসেবে আমি এখন ফ্রিই বলতে পারেন।

আত্মা হয়েছেন মানে কি ?

খুব সহজ। মানুষ মরে গেলে তার আত্মা ৪০ দিন পর্যন্ত মুক্তি পায় ঈশ্বরের কাছে যাওয়ার আগে। এই প্রথমবারের মতো নবাব সাহেবের অনুরোধে ঈশ্বর অনন্তকালের জন্য আত্মাকে মুক্তি দান করেছেন।

নবাব সাহেবটা আবার কে ? বিষ্ণু আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।

বুঝতে না পারার কিছুই নেই। আপনার মস্তিষ্ক কোন কারণে এই মুহূর্তে খুব ইত্তেজিত হয়ে আছে। এই কারণেই খুব সহজ বিষয়গুলো আপনার মস্তিষ্কে ধরা দিচ্ছেনা।

হুম তা হতে পারে ! কিন্তু আপনি মারা গেছেন, আপনার আত্মা ঘুরাঘুরি করছে এই ধরণের হেয়ালি কথাবার্তা আমার সাথে করবেন না।

আমি মোটেও আপনার সাথে কোন প্রকার হেয়ালি কথাবার্তা বলছিনা। আপনিও এখন আত্মা হয়ে আছেন। আপনি হলেন লেডী ডাফরিনের আত্মা। নতুবা আমাকে আপনি বিষ্ণু বলে চিনতেন না। আমার আত্মার নাম গোলাপ ভাই কিন্তু আপনি যেহেতু বিষ্ণু নামেই চিনছেন; অতএব আপনি অবশ্যই লেডী ডাফরিনের আত্মা। আর আমার সাথে যিনি এসেছেন, ইনি হলেন নবাব সাহেবের আত্মা। নবাব সাহেব আপনি কিছু বলুন।

গোলাপ অথবা বিষ্ণু, আপনি যেই হোন না কেন প্লীজ অযথা আমার সাথে হেয়ালি করবেন না। আমি বুঝতে পেরেছি আমার মন খারাপ এই কারণে আপনি আমার মন ভোলানোর জন্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোন লাভ হবে না তাতে।

নবাব সাহেব এতক্ষণে তার মুখ খুললেন, লেডী ডাফরিন আসুন নাচি। আপনার মনে আছে আমরা যখন জীবিত ছিলাম আমি আর আপনি অল্প কিছু সময়ের জন্য দুজনে একসাথে নেচেছিলাম। চলুন আজকে দুজনের আত্মা মিলে প্রাণ ভরে নাচি।

বলতে বলতে নবাব সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে লেডী ডাফরিনের সরু কোমরে হাত রেখে নাচার আমন্ত্রণ জানালেন। লেডী ডাফরিন কোন আপত্তি করতে পারলেন না। সেও নবাব সাহেবের কাঁধে হাত রেখে নাচতে শুরু করে দিলেন। আত্মার জগতে সব কিছু নিয়ম নীতির ঊর্ধে। এখানে কোন কিছুই কোন বাঁধা মানেনা। লেডী ডাফরিন এই মুহূর্তে দিব্যি ভুলে গেছেন তার মনের সব দুঃখের কথা।

বিছানায় রাখা একটা ফটোস্ট্যান্ড এর উপর চোখ পড়লো। ছবিটা হাতে আঁকা। একজন পুরুষ মানুষ একগুচ্ছ ফুল হাতে রেশমি কাপড়ের গোলাপি রঙের স্লীভলেস গাউন পরে দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে। ছবির উপরে লাল রঙের সাইন পেনে বড় করে ইংরেজীতে লেখা, আই হেইট ইউ এলেক্স। ছবিটার এক কোণায় একটি ছেলের ছবি লাগানো। ছেলেটার চেহারা অবিকল হাতে আঁকা ছবিটার পুরুষ চেহারার মেয়েটির মতোই দেখতে। খুব সম্ভবত এই ছেলেটার নামই এলেক্স। যদি ছেলেদের চেহারার রূপের উপর পৃথিবীতে কোন প্রতিযোগিতা হতো মিঃ ওয়ার্ল্ড কিংবা মিঃ ইউনিভার্স টাইপ কিছু; তাহলে এই ছেলেটা অবশ্যই প্রথম হতো।

নবাব সাহেব আপনার নাচানাচি শেষ হলে এবার চলুন তাহলে যাওয়া যাক।

হ্যাঁ, চলো।

জার্মান শেফার্ডের চোখের কোণে পানি জমতে শুরু করেছে। এখন রুম থেকে আমাদের যত দ্রুত সম্ভব বের হয়ে আসা উচিত। আমরা বের হয়ে এলেই দুচোখ বেয়ে কান্নার ঢল নামবে। আমরা দুটি আত্মা সেই ঢলের জন্য এখন একমাত্র বাঁধা হয়ে আছি।

[৪]

ঘরে বসে কবিতা লিখছি।

তুমি চিরকাল অধরাই থেকে যাবে,
তবু মনে বড় সাধ জাগে;
তোমার চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু হয়ে ঝরে পড়তে,
তোমার সাদা চামড়ার গাল বেয়ে শিশিরের মতো করে;
বিন্দু বিন্দু কণা হয়ে ঘাসের পাতায় রোদেলা জ্যোতি ছড়াতে,
মনে বড় সাধ জাগে;
জানি তবু তুমি চিরকাল অধরাই থেকে যাবে।

গোলাপ ভাই ভেতরে আসতে পারি ?

আরে জামিল ভাই যে ! আসুন ভাই। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে মারাত্মক কিছু হয়েছে।

হুম ! মারাত্মকই বলতে পারো।

বসুন জামিল ভাই। একটু ঠাণ্ডা হয়ে নিন। তারপর বলুন কি হয়েছে।

গোলাপ ভাই বসার সময় নেই। ম্যাডামের বাসার জন্য একটা কাজের মেয়ে লাগবে। কাজের মেয়ের বয়স অবশ্যই নয় দশ বছরের বেশি হওয়া যাবেনা। এর কম হলে আরও ভাল হয়। কাজের মেয়ের ব্যবস্থা করতে না পারলে আমার চাকরী শেষ।

কাজের মেয়ে লাগবে ভাল কথা। এইজন্য আমি কি করতে পারি। আমি কি কাজের মেয়ের ব্যবসা করি নাকি ?

শোন গোলাপ ভাই। আমি তোমাকে একটা ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি। তুমি সেই ঠিকানায় গিয়ে আমার কথা বললে ওরা তোমাকে মেয়ের ব্যবস্থা করে দেবে।

তাহলে ভাই আপনিইতো যেতে পারেন। আমাকে কেন পাঠাতে চাইছেন ? আপনার কি ধারনা আমি কাজের মেয়ে সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান রাখি। যে ফল কেনার মতো গায়ে টিপ দিয়ে বলে দিতে পারবো কোন মেয়ে কাজের জন্য ভাল অথবা কোন মেয়ে কাজের মেয়ে হওয়ার জন্য এখনও পাকেনি। নাকি শরীরের ঘ্রাণ নিয়ে বলে দিতে পারবো এই মেয়ের বয়স নয় দশ বছরের কম।

গোলাপ একদম ফাইজলামি করবানা। তোমাকে যা বলছি করে দাও। আমিই যেতাম কিন্তু আমার স্ত্রীর শরীর খুব খারাপ। তার যে কোন মুহূর্তে ব্যথা উঠতে পারে। আমার প্রথম বাচ্চা বোঝইতো কোন প্রকার রিস্ক নিতে চাচ্ছিনা। আর এই সময় আমার স্ত্রীর পাশে থাকাটাও খুব জরুরী।

হুম !

শোন আমি তোমাকে সাথে একটি গাড়ি দিয়ে দিচ্ছি। টাকা পয়সা নিয়েও কোন চিন্তা করার দরকার নেই। জামিল ভাই আমাকে একটা খামে ভরা টাকার বান্ডিল হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন এই নাও এটা রাখো। এখানে দশ হাজার টাকা আছে। যা লাগে তুমি খরচ করবে। বাকি টাকা তুমি রেখে দিও। এখনই বের হয়ে পরো। বাইরে আমার গাড়িটা দাঁড় করানোই আছে। তুমি এটা নিয়েই বের হয়ে যাও।

গাড়িতে উঠেই প্রথমে ড্রাইভারকে বললাম ড্রাইভার সাহেব হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের দিকে চলুন। এই গাড়ির মালিক আপাতত আমি। এখন আমি যাই বলবো, যেখানেই যেতে বলবো ড্রাইভার বাধ্য। পথে শাকিলকে দোকান থেকে উঠিয়ে নিলাম। তার মাথা থেকে এখনও আত্মার ভূত নামেনি।

নবাব সাহেব কি ভাবছেন ?

কিছুনা।

কিছুতো অবশ্যই ভাবছেন। আপনি এখন লেডী ডাফরিনের কথা ভাবছেন। চিন্তার কোন কারণ নেই। তিনিও আমাদের সঙ্গে যাচ্ছেন। এই কথায় শাকিল কিছুটা লজ্জাই পেলো। যেন এই কথাটাই সে জানতে চাইছিলো। আত্মা হয়েছেতো কি ! আত্মারাও লজ্জা পেতে পারে।
হোটেল থেকে জার্মান শেফার্ডকেও সাথে করে নিয়ে নিলাম।

জার্মান শেফার্ড গাড়িতে উঠেই জানতে চাইলেন আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি ?

আমরা এখন প্রথমে যাবো মিন্টু ভাইয়ের বাসায়। সেখানে আপনি আপনার পোট্রেট আঁকাবেন। তারপর সেখান থেকে আমরা চলে যাবো ময়মনসিংহের চালাক চর গ্রামে।

ওখানে গিয়ে আমরা কি দেখবো ?

ওখানে গিয়ে আমরা কিছুই দেখবো না। মন্ত্রী সাহেবার বাসার জন্য কাজের মেয়ে খুঁজে বের করবো। আচ্ছা আপনি কি ভাল কাজের মেয়ে চিনেন ?

গোলাপ আমি আপনার কথার কোন মানেই বুঝতে পারিনা। তবে আপনি লোকটা খুব ইন্টারেস্টিং। আপনাকে বেশ এনজয় করছি। নতুবা আপনার এমন হেয়ালিপনায় যে কেউ আপনার গালে চড় মেরেও বসতে পারে।

আপনার যদি আমাকে চড় মারতে খুব ইচ্ছা করে, তাহলে আপনি মারতে পারেন। মনের ইচ্ছাগুলো মনের ভেতর চেপে রাখতে নেই। এতে বয়স হওয়ার সাথে সাথে স্মৃতি শক্তি লোপ পেতে শুরু করে। এই নিন আমি গাল পেতে দিচ্ছি আপনি চড় মারুন।
মেয়েটা হাসছে। অপরূপ এই হাসিকে বলা যেতে পারে বাদামী হাসি। বাদামী চুলের আড়ালে মুখ লুকিয়ে হাসির জন্য এর নাম বাদামী হাসি।

নবাব সাহেবের আত্মা হা করে লেডী ডাফরিনের সেই হাসির দিকে তাকিয়ে আছেন।

আমরা এখন এসেছি মিন্টু ভাইয়ের বাড়িতে। এইটা উনার কয়েক পুরুষের বাড়ি। বাড়ির বর্তমান অবস্থা পানাম নগরীর মতোই যেন এক ধ্বংসাবশেষ। বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশাই মিন্টু ভাই ধরে রেখেছেন। তিনি এখনও বিয়ে করেন নি। এই পরিত্যাক্ত বাড়িটিতে তিনি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন প্রাণী বাস করেনা। মিন্টু ভাই ঘরে বসে বিড়ি ফুঁকছেন।

মিন্টু ভাই ?

আরে গোলাপ ভাই যে, আসুন ভাই। তা কি মনে করে এতদিন পর ?

মিন্টু ভাই একটা কাজ নিয়ে এসেছি। যে মহিলাটি আমার সাথে এসেছেন তিনি সুদূর জার্মান থেকে এসেছেন শুধু আপনার কাছে তার একটা পোট্রেট আঁকানোর জন্য। আপনাকে পেমেন্ট নিয়ে ভাবা লাগবেনা।

কিযে বলেন না গোলাপ ভাই ! আপনি কাস্টমার নিয়ে আসছেন, আর আমি পেমেন্ট নিয়া ভাবব এইটা বলে আপনি আমারে লজ্জাই দিলেন ভাই।

জার্মান শেফার্ড বাংলা বলতে পারেন না। আর মিন্টু ভাই ইংরেজি বুঝেন না। তাই আমাকে দোভাষীর ভূমিকা নিতে হলো।

উনি কি শুধু এমনিতেই উনার পোট্রেট আঁকাবেন নাকি ন্যাংটা হয়ে পোট্রেট আঁকাবেন ?

মিন্টু ভাই জানতে চাইছেন আপনি কি কাপড় পরা অবস্থাতেই পোট্রেট আঁকাবেন নাকি কাপড় খুলে আঁকাবেন ?

বলুন কাপড় খুলে।

মহিলা কাপড় খুলে তার পোট্রেট আঁকাবেন।

আচ্ছা অসুবিধা নাই কোন। উনাকে বলেন পেমেন্ট তিন হাজার টাকা দেয়া লাগবে। যেহেতু আপনার সাথে এসেছে। অতএব পাঁচশত টাকা ছাড় দিলাম। তিন হাজার থেকে পাঁচশত টাকা কম দিলেই হবে। আর এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট দেয়া লাগবে। ছবি আঁকার সময় প্রচুর সিগারেট না হলে আমার ছবি আঁকায় আবার জোশ ! আসেনা।

সিগারেট নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবেনা। আমি সিগারেট সাথে করে নিয়েই এসেছি।

কি বললেন উনি ?

মিন্টু ভাই বলেছেন তিন হাজার থেকে পাঁচশত টাকা কম টাকার পেমেন্ট তাকে দেয়া লাগবে। নতুবা তিনি ছবি আঁকবেন না।

এত কম ? অদ্ভুত ! উনাকে বলে দিন ছবি আঁকা ভাল হোক, অথবা না হোক পুরো পেমেন্টই আমি করে দিবো।

মহিলা রাজী আছেন। আপনি ছবি আঁকা শুরু করে দিতে পারেন।

উনাকে তাহলে বলুন কাপড় খুলে বসে যেতে।

আমি বলতে বলতেই জার্মান শেফার্ড তার গায়ের পরনের কাপড় খুলে ফেলল।

মিন্টু ভাই তাকে সাপের মতো ভঙ্গী করে শুয়ে পড়তে বলে ব্লেড দিয়ে পেন্সিলের মাথা সরু করে নিলেন। মুখে সিগারেট নিয়ে তিনি তার ক্যানভাসে পেন্সিলের খোঁচায় নগ্ন নারীর শরীর আঁকতে শুরু করেছেন।

নবাব সাহেবের আত্মা যেন হুট করে মানুষে পরিণত হয়ে গেলো। শাকিলের পক্ষে এই দৃশ্য হজম করা সম্ভব হলো না। নবাব হবার মোহ তার ভেতর থেকে এখন পুরো মাত্রাতেই কেটে গেছে। সে হুড়মুড় করে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। শাকিল এখন সোজা গিয়ে তার চায়ের দোকানে বসে চা বানাতে থাকবে। এখন সে আর নবাবের আত্মা নয়। এখন সে পুরোদস্তুর একজন মানুষ। যার নাম শাকিল।

আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে বসে আছি। লেডী ডাফরিন তার নগ্ন শরীরের পোট্রেট আঁকাচ্ছেন। পোট্রেট আঁকানো শেষ হতেই আবার গায়ের পরনের জামা সাথে সাথে পরে ফেললেন। ছবিটা হাতে নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তিনি তাকিয়ে আছেন তার নগ্ন শরীরের পোট্রেটের দিকে। বুঝলাম তিনি পুরোপুরি মুগ্ধ হয়েছেন। তার চোখের কোণে আবারও অশ্রু জমতে শুরু করেছে। এখনই অশ্রুর ঢল নামবে। আমরা মিন্টু ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ময়মনসিংহের চালাক চর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হোলাম।

[৫]

চালাক চর গ্রামে এসে পৌঁছানোর পর জামিল ভাইয়ের দেয়া ঠিকানা খুঁজে পেতে বেশ কষ্টই করতে হলো। আমার সাথে সাথে জার্মান শেফার্ডও ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। একেতো প্রচন্ড রোদ তার উপর আমরা মাইলের পর মাইল হেটে হেটে সোনা গাজীর বাড়ি খুঁজছি।

একটা চায়ের দোকান পেয়ে গলাটা একটু ভিজিয়ে নেয়ার জন্য চা খেতে বসেছি। চা বলতে চিনি আর লবন দিয়ে রং চা বানানো হয়েছে। চিনির চেয়ে লবনের পরিমাণটাই বেশি। চা পর্ব শেষ। চায়ের দোকানীর কাছে জানতে চাইলাম সোনা গাজীর বাড়ি সে চেনে কিনা ?

জিনা চিনি না। আপনারা কি কাজে আসছেন ?

আমরা এসেছি একটি কাজের মেয়ের খোঁজে। আপনার কাছে কি ভাল কোন কাজের মেয়ে হবে ? এই কথা শুনে লোকটা আমাদের দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন ভীণ গ্রহের কোন প্রাণী দেখছেন।

আপনারা কি বিদেশে লোক নেন ?

না না, আমাদের একটা নয় দশ বছরের কম বয়সের কাজের মেয়ে দরকার। মন্ত্রী কুসুম কুমারীর বাসার জন্য।

লোকটার দোকানের পাশ দিয়ে যুবক বয়সের দুটি ছেলে হেটে যাচ্ছিলো। লোকটা ছেলে দুটাকে ডেকে বলল এই দেখতো উনারা কি জানতে চায় ?

কি ভাই ?

আমরা এসেছি সোনা গাজীর কাছে একটা কাজের মেয়ের জন্য। আপনারা কি সোনা গাজীর বাড়ি কোথায় বলতে পারেন ? না চিনলেও কোন সমস্যা নেই। আমাদের কি একটা নয় দশ বছরের কম বয়সের কাজের মেয়ের ব্যবস্থা করে দেয়া যাবে ? মন্ত্রী কুসুম কুমারীর বাসার জন্য একটা কাজের মেয়ে লাগবে।

সোনা গাজীরে চিনি না তবে আপনারা কি আদম বেপারী নাকি ?

জী না ভাই। আমরা আদম বেপারী না। আমরা হোলাম কাজের মেয়ে বেপারী।

দেইখাতো আপনাদের ভাল বইলাই মনে হইতাছে। তা এইডা আবার কোন নয়া ধান্দা শুরু হইলো দেশে ?
ভাই ধান্দা বলবেন না। মন্ত্রী সাহেবার কানে যদি এই কথা যায় আপনাদের থানা হাজত নিশ্চিত।

আপনারা কি উনার দলের লোক ?

জী, আমরা ম্যাডামের বাসার কাজের মেয়ে বিষয়ক সাইডটা দেখাশোনা করি।

বড় লোকের বড় কারবার ! কাজের মেয়ের দেখাশোনা করার জন্যেও আলাদা করে লোক লাগে। ছেলেদুটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে চলে গেলো।

এভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সোনা গাজীর বাসা খুঁজছি, ফাঁকে ফাঁকে খোঁজা হচ্ছে কাজের মেয়ে। যে বাড়িতেই যাই প্রথমে জিজ্ঞাসা করি সোনা গাজীর বাড়ি চেনে কিনা, না চিনলে জিজ্ঞাসা করি নয় দশ বছরের কম বয়সের ভাল একটা কাজের মেয়ে হবে কিনা ? মন্ত্রী কুসুম কুমারীর বাসার জন্য একটা ভাল কাজের মেয়ে দরকার। সবার সাথেই প্রায় একই রকম কথা।

শেষ পর্যন্ত সোনা গাজীর বাড়ি খুঁজে পাওয়া গেলো। ততক্ষণে আমাদের সাথে সাথে যেন পুরো গ্রামের মানুষ এসে সোনা গাজীর বাড়িতে ভিড় জমিয়ে ফেলেছে। মনে হচ্ছে যেন শহর থেকে সার্কাস পার্টি এসেছে সার্কাস দেখাতে। এখনই বাঘ আগুনের গোলার ভেতর দিয়ে লাফ দিবে, হাতি খেলবে ফুটবল। আমি আর আমার সাথী জার্মান শেফার্ড হলো এই সার্কাসের জোকার। আমরা যতক্ষণ এখানে আছি এই মানুষগুলোও কেউ কোথাও যাবেনা। পুরো সার্কাস না দেখে যাওয়া যাবেনা এদের ভাব ভঙ্গী দেখে তাই মনে হচ্ছে। আমরা চলে গেলেও এরা পেছন পেছন বেশ কিছু দূর আসবে বলেই মনে হচ্ছে।

এসব দেখে জার্মান শেফার্ড খুব বিস্মিত হয়েছে। তার মুখে কোন কথাই আসছেনা কিন্তু বুঝতে পারছি অসংখ্য কথা এই মুহূর্তে তার মনের ভেতর খেলা করছে। অনেক কথা যখন এক সাথে মুখ দিয়ে বের হতে চায়; আসলে তখন মানুষ আর কোন কথাই বলতে পারেনা। এটাকে কথার জ্যাম বলা যেতে পারে। সরু রাস্তা দিয়ে একসঙ্গে অনেকগুলো গাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করলে যেমন জ্যামের সৃষ্টি হয়, ঠিক তেমনই।

সোনা গাজী উঠানে বসে বিড়ি টানছে। জামিল ভাইয়ের পরিচয় দিতেই পুরো বাড়ির মানুষ আমাদের আপ্যায়নের জন্য এদিক ওদিক ছোটাছুটি আরম্ভ করে দিলো। আমাদেরকে উঠানে জলচকি এনে দেয়া হলো বসার জন্য। পাশে দাঁড়িয়ে একজন অনবরত হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে। এতক্ষণ সোনা গাজী খালি গায়েই বসা ছিলো কিন্তু এখন আমাদের দেখে একটা পাঞ্জাবী পরে বসেছে আমাদের সামনে। পাঞ্জাবীর একপাশে আলাদা কাপড় দিয়ে সেলাই করে ছোট করে পট্টি লাগানো রয়েছে।

জামিল ভাই আমাদেরকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন একটি নয় দশ বছরের কম বয়সী কাজের মেয়ে জোগাড় করে দেয়ার জন্য। মেয়ে মন্ত্রী কুসুম কুমারীর বাসায় কাজ করবে। রানীর মতো থাকতে পারবে। মন্ত্রী সাহেবা অত্যন্ত ভাল একজন মানুষ। সোনা গাজী সঙ্গে সঙ্গে উঠে চলে গেলেন। তিনি এখন কাজের মেয়ে জোগাড় করায় ব্যাস্ত রয়েছেন। কয়েকজন কে ডেকে বলেও দিলেন মেয়ে খুঁজে এনে দেয়ার জন্য।

আমাদের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। খাবার বলতে লাল মোটা চালের ভাত, ডিম ভুনা, আলু ভর্তা, লাল শাঁক আর ডাল। বুঝলাম এত ছোটাছুটি করে যেহেতু এমন খাবারের আয়োজন করা হয়েছে অতএব এটাই তাদের সর্বোচ্চ। জার্মান শেফার্ড বেশ তৃপ্তি নিয়েই খেলো। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই শুরু হলো কাজের মেয়ে প্রদর্শন পর্ব। আমি বিয়ের জন্য কণে দেখার মতো করে কাজের মেয়ে দেখছি।

এই মেয়ে তোমার নাম কি ?

রুকসানা।

তোমার বয়স কত ?

জানিনা।

না জানলে কিভাবে হবে ? সোনা গাজী পাশ থেকে বলে উঠলো স্যার এই ছেমড়ির বয়স এখনও পাঁচ বছরও হয় নাই। নিশ্চিন্তে এরে নিয়ে যেতে পারেন।

কি বলেন ! এত ছোট মেয়ে কাজ কর্ম করবে কিভাবে ?

কি যে বলেন না স্যার ! আর দুই তিন বছর পরতো এই ছেমড়ি বিবাহেরই লায়েক হইয়া যাইব। এই ছেমড়ি সব কাজ কর্ম করতে পারে। কোন চিন্তা কইরেন না স্যার আপনারা। বাপ-মা মরা

এতিম মাইয়াডারও একটা ব্যবস্থা হয় তাইলে।

এই মেয়ে তুমি নাচতে পারো, গান গাইতে জানো ?

মেয়েটা চোখে লজ্জা নিয়ে তাকিয়ে আছে। এই ছেমড়ি স্যারেরা কি জিজ্ঞাসা করে জবাব দে।

আহ ! গাজী সাহেব আপনি চুপ করুনতো।

একটু হেটে দেখাওতো।

মেয়েটি হাটা শুরু করে দিয়েছে। ব্যাস ব্যাস হয়েছে। আর হাটা লাগবেনা। দেখি তোমার হাত দুটি?

মেয়েটি তার হাত মেলে ধরলো।

আচ্ছা তুমি কি রান্না বান্না করতে পারো ?

মেয়েটি তার স্বভাব সুলভ লজ্জিত চোখে তাকিয়ে আছে। পাশ থেকে যথারীতি সোনা গাজী বলে উঠলো এই ছেমড়ি কস না ক্যারে স্যারেরা কি জিঙ্গায় ?

আহ ! থামুনতো আপনি। আমাকে বলতে দিন।

আচ্ছা তুমি একটা গান গাও দেখি ?

মেয়েটি ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এখনই কেঁদে ফেলবে এমন একটা অবস্থা। মেয়েটির চোখের মণি নীল রঙের। চুলগুলো বাদামী রঙের। গায়ের চামড়া সাদা ঠিক আমার পাশে বসে থাকা এই অনিন্দ্য সুন্দরী জার্মান মেয়েটির মতো। আমার খুব ইচ্ছা করছে মেয়েটিকে কাঁদাতে।

এই মেয়ে কথা কি কানে যায় না ? গান গাইতে বলেছি, গান গাওয়া শুরু কর ? কথাটা কিছুটা ধমকের সুরেই বললাম।

মেয়েটি আর কিছুতেই কান্না দমিয়ে রাখতে পারলো না। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি ঝরছে। মুখে গোঙানির কোন শব্দ নেই। একদম নীরব কান্না। মেয়েটির দেখাদেখি জার্মান শেফার্ডও কাঁদছে। তার চোখ দিয়েও নীরবে টপ টপ করে পানি ঝরছে। মানুষের হাসি কান্না হলো ছোঁয়াচে ভাইরাসের মতো। অনেকটা মসজিদে নামাযরত অবস্থায় কাশি দেয়ার মতো। কেউ হয়ত কাশি দিয়েছে অমনি একের পর এক মানুষ কাশি দেয়া শুরু করে দিয়েছে।

আমরা রুকসানাকে সাথে করে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হোলাম।

পুনশ্চঃ

ঢাকায় ফিরে রুকসানাকে মন্ত্রী কুসুম কুমারীর বাসায় কাজ করতে দেয়ার আর কোন প্রয়োজন পড়লোনা। জামিল ভাই তার চাকরীটা ছেড়ে দিয়েছে ইতিমধ্যে। তার স্ত্রীর হঠাৎ প্রশব ব্যথা উঠে। কিন্তু মন্ত্রী সাহেবার কাছ থেকে অফিসে সে ছুটি পায় না। জামিল ভাইয়ের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়েছে। কিন্তু তার স্ত্রী মারা গেলেন। জার্মান শেফার্ড রুকসানা মেয়েটিকে সাথে করে নিয়ে তার দেশে ফিরে গেছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো এত কিছুর পরেও জার্মান শেফার্ডের নামটাই আর জানা হলোনা। লেডী ডাফরিন এইদেশে এসে নবাব পরিবারের কাছ থেকে একটি হীরক খন্ড নিয়ে গিয়েছিলেন। আর এবার জার্মান শেফার্ড এসে সাথে করে নিয়ে গেলেন রুকসানা নামের এতিম মেয়েটিকে। দুটোই হীরক খন্ড।

মন্তব্য ৪৬ টি রেটিং +১১/-০

মন্তব্য (৪৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:১৩

গেম চেঞ্জার বলেছেন: এতো দীর্ঘ লেখা পড়ার সময় এখন নেই বিধায় প্রিয়তে রাখতে হচ্ছে।

নিশ্চিন্তে ১ম প্লাস দিয়ে ফেললাম। (তা যেকোন কারণেই হোক)

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৪

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


আপনার কারণের প্রতি যথাযথ সন্মান রইলো ভাই।

যদি কখনও সময় হয় পড়ে মতামত জানাবেন।

মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন।
শুভ সকাল।

২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:২৩

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: গল্পে অনেকগুলো দৃশ্যের চিত্রায়ন হলো।সাবলীল বর্ণনায় দারুণ লেখা। বিশাল লেখা, পড়েই ফেললাম।পোস্টে ২য়+++

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৬

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


কষ্ট করে গল্পটা পড়েছেন ভীষণ উৎসাহিত হোলাম।

অজস্র শুভেচ্ছা ও অগণিত ভালোবাসায় পূর্ণ কৃতজ্ঞতা জানবেন।

৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৪১

কিরমানী লিটন বলেছেন: অনবদ্য, সুখপাঠ্য ...

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৭

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা লিটন ভাই সাথে থেকে উৎসাহ দিয়ে যাওয়ার জন্য।

৪| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২৯

আহমেদ জী এস বলেছেন: কান্ডারি অথর্ব ,




এতো সকালে এতোবড় গল্প পড়ার সময় পাওয়া যাবেনা । দুঃখিত না পড়ে মন্তব্য করতে পারছিনে বলে ।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১০

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


আহমেদ জী এস ভাই, আপনার ফিরতি পাঠ ও মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম। আপনাদের উৎসাহেই আমার ব্লগিং।
শুভ সকাল।

৫| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চমৎকার গল্প|
জামিল ভাইয়ের সাথে একটু পরিচয় করিয়ে দেবেন ভাই! আমি কবিতা প্রতি ১শ নেব! আর দিনে ৩০টা পর্যন্ত মাল সাপ্লাই দিতে পারব|
আর জার্মান শেফার্ড! এত কিছু থাকতে কিনা কুকুর| পাখির নাম পেলেন না!

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩১

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


আপনে দেখি আমার ভাত মারতে চান ! নিজেই খাইতে পাইনা আবার আরেকজন আসছে হুম !!! :-0

এইটাইতো টুইস্ট আর তাছাড়া জার্মান কোন পাখির নাম জানিনা যে ভাই।

শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানবেন ভ্রাতা।

৬| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৪

মোঃ-আনারুল ইসলাম বলেছেন: সাবলীল বর্ণনায় দারুণ লেখা গল্পগুচ্ছ খুব ভালো লেগেছে, নিয়ে গেলাম দিয়ে গেলাম ++++

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৩

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


অনুপ্রেরণায় কৃতজ্ঞতা জানবেন ভ্রাতা। একগুচ্ছ গোলাপের শুভেচ্ছা রইলো।

৭| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৬

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: গভীর রাতে সময় নিয়ে পড়তে হবে। এত বড় গল্প অফিসে বইসা ফাকেতালে পড়া সম্ভব না।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৩

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


গভীর রাতের অপেক্ষায় থাকলাম কিন্তু। :)

৮| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০০

প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার লেখা। ভাল লাগল। ধন্যবাদ

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৪

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। কৃতজ্ঞতা জানবেন।

৯| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮

জুন বলেছেন: ডেইলি ডেইলি কি লিখো শুনি কান্ডারী B:-) B:-/
পরে পড়বো #:-S

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৬

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


লেখালিখি করলে একটা জগতের মধ্যে থাকা যায়। বাইরের জগতটা অসহনীয় তাই লিখছি আপাতত।

পরে পড়বেন কিন্তু অবশ্যই।

১০| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০১

আবু শাকিল বলেছেন: এক্টু সময় নিয়া আসতে দ্যান।
পড়ব অবশ্যই।
আমি আপনার লেখার ভক্ত।দারুন হাবিজাবি লিখেন।ভাল লেগে যায়।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১৭

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


এই কথা বলে দিলেন লজ্জায় ফেলে শাকিল ভাই।

আসুন কথা হবে আবারও।

১১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৭

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: দীর্ঘ হলেও সুলিখিত গল্প।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১৬

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। অনেকদিন পর আপনার সাক্ষাৎ পাওয়া গেলো। এটা অনেক বড় ব্যাপার। কেমন আছেন ?

১২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৪

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: এই গল্পটাও দুই টার্মে পড়ে শেষ করেছি । পোস্টটা কবিতার মত দেখতে এবং নামেও কবিতার ভাব দেখে ঢুকে দেখি এতো বিশাল অবস্থা !!! পড়া শুরু করলাম দীর্ঘ যাত্রায় । পরে দেখি এ তো পূর্বের গল্পের ছুটে চলা ! এভাবে পড়তে পড়তে শেষ হয়ে গেলে মনে হচ্ছিলো আরও থাকলো না কেন !!

রাজা রানীরূপে আত্মা আত্মি খেলা সাথে গোলাপ এবং আর তার চা বালক শাকিলের ঘোড়াসাওয়ারী নবাব খেলা এবং মন্ত্রী আপা ও তার এসিস্টেন্ট জামিল এবং ফরেইনার আপার সাথে ঘুরাঘুরী এবং কাজের মেয়ে সন্ধানের কাহিনী । এই সবের মিশেল বেশ পুঙ্খানোপুঙ্খ হয়েছে । পড়ার মত খুব ভাল একটা গল্প ।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১৫

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


এই যাত্রায় তাহলে বেঁচে গেলাম মনে হচ্ছে।

আপনার মনযোগী পাঠ আমার অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। সাথে থাকার জন্য আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানবেন।

শুভরাত্রি।

১৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৯

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
//কবি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তার অদ্ভুত সব শখের মধ্যে একটি।//

অদ্ভুত সখ ;)
এর বাস্তবতা আছে।



আহারে! আগে যদি জানতাম পুনশ্চ পড়লেই সব জানা যাবে.... ;)

আত্মা হয়ে যাবার প্রক্রিয়া ও তৎপরবর্তি ঘটনাগুলো বেশ মজার হয়েছে...

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১৩

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


অবশ্যই বাস্তবতা আছে। পুরো গল্পটা বাস্তবতার আলোকেই লেখা প্রিয় মইনুল ভাই।

অনেক বড় গল্প তাই পুনশ্চ দিয়েছি যেন অল্প পড়েই তুষ্ট হওয়া যায়। :D

আপনার আন্তরিক মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা সব সময়ের জন্য।

শুভরাত্রি।

১৪| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩২

গেম চেঞ্জার বলেছেন: আপনার সাবলীল ও অনবরত গল্প বলার ভঙিটা চিত্তাকর্ষক। তবে অনেকটা কৃত্রিমতার ছাপ এড়িয়ে যেতে পারেন নি। হয়তো আমার মনোযোগে সমস্যা ছিল। আফটার অল গল্পে সময় দেওয়াটা সার্থক হয়েছে।

পড়বার সময় বারবার হিমুর কথা মনে হচ্ছিল। পড়াটা সার্থক হয়েছে। আপনার শাকিল ছেলেটার চিন্তাভাবনা বেশ ইন্টারেস্টিং। পোট্রেট আঁকার সময় তাঁর বুদ্ধি খুলে যাওয়াটা একটা ছন্দপতন মনে হল। হতে পারতো এখানে সে অন্য একটা ঘটনার সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছে। যাইহোক, গল্প তো আপনার কথাই শুনবে কারণ আমি তো লিখিনি...। হাঃহাঃ :)

মন্ত্রীর কাহীনী অনেকটাই আড়ালে চলে গেল। উনি কি কবিতাগুলো ছাপিয়েছিলেন? নাকি ঐভাবেই পান্ডুলিপি আকারেই রয়ে গেল।

আগের গল্পে গোলাপ ভাইকে যেভাবে দেখেছিলাম এখানেও অনেকটা তাই পেলাম। আপনার গোলাপ ভাই'কে হিমুর বিপরীত বিম্ব বলেই মনে হল। আচ্ছা তাঁরও কি দাড়ি আছে? সেও কি ভাবলেশহীন নির্লিপ্তভাবে ঘোরাফেরা করে? সবাইকে বিভ্রান্ত করতে ভালবাসে?

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১০

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:



গল্পটা যে পড়েছেন অবশেষে এইটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। এতটা পাওয়া এই অধমের জন্য বিরাট কিছু। এই জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন এই অধমের পক্ষ থেকে।

এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো। এই সিরিজটা পুরোটাই শ্রদ্ধেয় হুমায়ূন আহমেদ স্যারের শুধুমাত্র লেখার ফরম্যাট অনুসরণ করে লেখার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। কিন্তু এখানে তার কোন লেখা এবং কোন চরিত্র কপি করা হয়নি। হিমু আর গোলাপ ভাই চরিত্রকে তাই মিলিয়ে ফেলার কোন কারণ নেই। গোলাপ ভাই চরিত্রটি অত্যন্ত সাধারণ একজন মানুষ হিসেবেই উপস্থাপন করার প্রয়াসে তৈরি করা হয়েছে। এখানে লেখক স্বত্বার ভেতরকার মানুষটিকে উদ্ধার করার একটা প্রচেষ্টা মাঝে মাঝে চলমান থাকবে। এই সিরিজটা লেখালিখির চর্চাটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং কিছু পরীক্ষণ নিরীক্ষণের প্রতিফল ছাড়া আর কিছুই নয়। সিরিজটা মাঝে মাঝে খুব লম্বা হয়ে যেতে পারে ব্লগের গল্প হিসেবে। তবে পাঠক প্রতিক্রিয়া এই সিরিজের জন্য লেখক স্বত্বাকে লেখায় একটি শক্ত ভীত এনে দিবে নিঃসন্দেহে।

তাই আন্তরিক মন্তব্য অত্যন্ত প্রয়োজন। তবে হুমায়ূন স্যারের লেখাকে প্রাথমিক ভাবে শিক্ষণীয় হিসেবে নেয়া হলেও মূল উদ্দেশ্য লেখালিখি করার ভিত্তি মজবুত করা। নিজেকে ভেঙে আবার গড়ার মাঝেই যদি কিছু তৈরি করা সম্ভব হয় তাহলেই কেবল সার্থকতা।

এখানে শাকিলের মনে যে মোহ ছিলো সেটা বিদেশীর নির্লজ্জতায় মোহ ভঙ্গের অন্যতম কারণ হিসেবেই দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ এখনও সনাতন। একজন বিদেশীর কাছে যা খুব সাধারণ কিন্তু শাকিলের মতো চা ওয়ালার পক্ষে তা মেনে নেয়া সম্ভব না। এখানেই এটাই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র।

পুনশ্চে শেষের সমাধান দেয়া আছে। তাছাড়া মন্ত্রী এখানে এসেছে গোলাপ ভাইয়ের সাথে অপরিচিত চরিত্র হিসেবেই। গল্পে বলাই হয়েছে মন্ত্রীর সাথে গোলাপের কোন দেখা হয়নি। আর যেখানে জামিল চরিত্রের চাকরী চলে গেছে অতএব কাব্যগ্রন্থ না ছাপাবারই কথা। গল্পে সব ব্যাখ্যা করে দিলে আর গল্পের মজা কোথায়। কিছু পাঠকের ভাবনার জন্য রেখে দেয়াতেই গল্পের মজা।

শুভেচ্ছা ভাই।

১৫| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৪

গেম চেঞ্জার বলেছেন: ঢাকায় ফিরে রুকসানাকে মন্ত্রী কুসুম কুমারীর বাসায় কাজ করতে দেয়ার আর কোন প্রয়োজন পড়লোনা। জামিল ভাই তার চাকরীটা ছেড়ে দিয়েছে ইতিমধ্যে।

আর যেখানে জামিল চরিত্রের চাকরী চলে গেছে অতএব কাব্যগ্রন্থ না ছাপাবারই কথা। গল্পে সব ব্যাখ্যা করে দিলে আর গল্পের মজা কোথায়। কিছু পাঠকের ভাবনার জন্য রেখে দেয়াতেই গল্পের মজা।


জামিল চাকরি থেকে বহিস্কৃত হয়েছে সেটা বললে অবশ্যই ভেবে নেয়া যেত কাব্যগ্রন্থ না ছাপাবার কথা। আমি ঠিক এখানটায় ভ্রান্তিতে পড়েছিলাম।

আপনার আন্তরিক প্রতিমন্তব্যের জন্য ও অসাধারণ বিনয়ের প্রতি যথাযথ সম্মান জানাচ্ছি। আমি আপনার সাথে পুরোপুরি একমত যে, গল্পে সব ব্যাখ্যা করে দিলে আর গল্পের মজা কোথায়। কিছু পাঠকের ভাবনার জন্য রেখে দেয়াতেই গল্পের মজা

আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ রইল।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩২

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


ভাইয়া আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ রইলো প্রতি মন্তব্যে।

সাথে থাকবেন আশা করি। আপনাদের মূল্যবান পরামর্শ আমার লেখার জন্য প্রেরণার অণুঘটক হিসেবে কাজ করবে।

নতুবা নিজেকে ভাঙা গড়ার এই খেলাটা খেলা সম্ভব হবেনা।

অনাবিল আনন্দময় হয়ে উঠুক সময়গুলো।

১৬| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১৫

জেন রসি বলেছেন: কিছুটা মেটাফিজিক্যাল মনে হল। তবে গোলাপ ভাইয়ের গল্প অনেক উপভোগ করছি। চমৎকার হচ্ছে। চলুক।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪০

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


উৎসাহ দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন।
শুভ দুপূর।

১৭| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৪

শায়মা বলেছেন: ভাইয়া এত বড় লেখা ছোট ছোট করে দেবে । নইলে অনেক কষ্ট হয়না বুঝি!:(

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৩

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


হা হা হা হা আচ্ছা আপু, ওকে ছোট করে দিব।

মন্তব্যের জন্য আর আমাকে উৎসাহ দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা চিরদিনের জন্য।

১৮| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৭

শায়মা বলেছেন: ইউ আরে আ গুড রাইটার ভাইয়া। সবচেয়ে বড় কথা সামুর একটা পড়ন্ত সময়ে তোমার লেখাগুলো একমাত্র আলোকজ্বল ছিলো।

আলোকের এই ঝর্ণা ধারায় ছুঁইয়ে দাও.....

আপনাকে এই লুকিয়ে রাখা ধুলার ঢাকা ধুইয়ে দাও.....

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৯

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


আপু আপনার পরামর্শগুলো সব সময় মাথায় ছিলো আর সেই উৎসাহেই ফিরে আসার তাগিদ, এবং এখনকার পরামর্শ সব সময়েই প্রেরণা যোগাবে।

তবে আপনার সেইসব কবিতাগুলো খুব মিস করি। এখন আর কবিতা লেখেন না কেন ? X(

১৯| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪০

শায়মা বলেছেন: লিখিনা কে বলেছে ভাইয়ু!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

তুমি শুধু চেনোনা !!!!!!!!!!!! :P



হাহাহাহাহাহাহা .......

সেই সময় সেই সময়েই থাকে
যা চলে তা আর ফিরে আসেনা ভাইয়া.....:(


তাই


যা কিছু হারায়ে গেলো যাক না
নীল আকাশে মেলো পাখনা ......:)

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০০

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


লেখেন অথচ আমি চিনিনা
B:-) B:-)

পাখি বলে হে আকাশ তুই আমারই হয়ে শুধু থাকনা :)

২০| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২০

ঢাকাবাসী বলেছেন: একটু বড় লেখা একবারে পড়া আমার জন্য কঠিন, তবে পড়বো। ধন্যবাদ।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২১

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


অনেক ধন্যবাদ ভাই কৃতজ্ঞতা রইলো ভাই।

২১| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩১

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: পুরো লেখাটাই পড়লাম, ভালো লেগেছের। কিন্তু লেখায় পাঠক ধরে রাখার মত গতিশীলতার অভাব বোধ করেছি ভ্রাতা, ফলে ধৈর্য সহকারে পড়ে যেতে হয়েছে।

ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা রইল।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২০

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


অনেক ধন্যবাদ ভ্রাতা আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য। ভাল থাকুন সব সময়।

২২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৯

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: আপনারও মনে হয় গল্পের মধ্যে কবিতা ঢুকানোর অভ্যাস আছে। লোভ সামলাইতে পারেন না। আমিও আজ পর্যন্ত গল্প নামের কিছু কবিতা বাদ দিয়ে প্রডিউস করতে পারিনাই। ইহা একটি মানসিক সমস্যা।

গল্প ভালোই লাগছিলো পড়তে, অল্প একটূ মেদ বেশি। কিছুটা সংক্ষিপ্ত হতে পারতো। তবে সবমিলিয়ে বেশ ভালো।

শুভকামনা রইলো। :)

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২২

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


হা হা হা তাইলেতো ভাই এই দিক দিয়ে আমরা মিতা হইলাম। :)

সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

২৩| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫২

এহসান সাবির বলেছেন: আমার মত বেশির ভাগ লোক জনই পরে পড়ব বলে সরে গেছে B-))

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৯

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


মনে হয় গল্পটা বেশি ভাল হয়নাই। আরেকটু মশলা আরেকটু থ্রীল থাকা উচিত ছিলো বোধ করি। যাই হোক নেক্সট টাইম হবে বাডি...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.