নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছায়া নয়, আলো ...

আরমান আরজু

সত্য ও অসীমের পথে

আরমান আরজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কলেমা তাইয়্যেবা পাঠ করলেই ঈমানদার হওয়া যায় না

১৬ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:০৪

মোবাইলের সীমে (SIM Card) টাকা ভরার জন্য দোকানদার থেকে আমরা যে রিচার্জ কার্ডটি কিনি কার্ডটিতে টাকার পরিবর্তে থাকে কিছু গোপন নাম্বার যেগুলো বিশেষ প্রক্রিয়ায় মোবাইলে প্রবেশ করালে মোবাইলের সীম লোড হয়, তারপর আমরা আরামসে কথা বলতে পারি। রিচার্জ হয়ে গেলে রিচার্জ কার্ডটি আমরা আর সংরক্ষণ করি না কারণ ওটার আর প্রয়োজন নেই। কেউ রাস্তায় কুড়িয়ে পেলেও উন্মুক্ত সংখ্যা গুলো আর কাজে আসে না। একটু গভীর ভাবে চিন্তা করুন। দোকানদারকে আমরা দিচ্ছি টাকা আর বিক্রেতা আমাদের দিচ্ছে কিছু গোপন সংখ্যা। টাকাগুলো কিন্তু ওই সংখ্যার ভেতরেই লুকোনো আছে। সংখ্যাগুলো আজীবন মুখে আওড়িয়ে মোবাইলে যতই ফু-টু দেন না কেন কস্মিনকালেও টাকা লোড হবে না। একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবেই। ঠিক ”কলেমা তাইয়্যেবা” ’লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)’ কিছু আরবী অক্ষরের সমাহার মনে হলেও অক্ষর গুলোর ভেতর কিন্তু ঈমানী শক্তি লুক্কায়িত আছে। বাজারী বই থেকে কিংবা বাজারী হুজুরদের থেকে এ ”কলেমা তাইয়্যেবা” আত্মস্থ করে যতই আওড়ান না কেন তা হবে ঐ রিচার্জ কার্ডটির মতো যা ব্যবহৃত হয়ে এখন উন্মুক্ত। দামী রত্ন স্বর্ণ কিন্তু যে-সে বাজারে পাবেন না, স্বর্ণ ক্রয়ের পর আপনি কিন্তু যেখানে-সেখানে রেখেও দেন না, সংরক্ষণ করেন সুরক্ষিত স্থানে, দামী বলে। তদ্রুপ ঈমানী কলেমা সংগ্রহেরও একটি নির্দিষ্ট স্থান আছে, সংগ্রহের পর তিনটি অপশক্তি (মানুষ শয়তান, জ্বীন শয়তান ও নফস শয়তান) আপনার পেছনে ২৪ ঘন্টা লেগে থাকবে এ মূল্যবান জিনিসটি আপনার নিকট হতে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য, সুরক্ষিত স্থানে রাখতে ব্যর্থ হলে আপনার দশা হবে মক্কার সেই সব লোকদের মতো যারা বাহিরে ইসলামের পাক্কা অনুসারী মনে হলেও ভেতরে মুনাফিক। ঈমানী কলেমা আল্লাহ প্রেমের ছাই রঙা আবরণে ঢাকা থাকে। এ ঈমানী কলেমা পেতে হলে আপনাকে দিতে হবে প্রেম। যেভাবে সীম কার্ড কেনার জন্য দোকানদারকে দিতে হয় টাকা। আবার ধরুন আপনি বাংলালিংক-এর গ্রাহক। এখন আপনার সীমে টাকা দরকার। বাংলালিংক কর্তৃপক্ষ রিচার্জ কার্ডগুলো তাদের কাছে রেখে দেয়নি। তারা সারাদেশে তাদের ডিলারদের কাছে সব কার্ড বিক্রি করে দিয়েছে। এখন আপনি চাইলেও বাংলালিংকের হেড অফিস থেকে রিচার্জ কার্ড কিনতে পারবেন না। তারা তাদের ডিলারের কাছে যেতে বলবে। রহমত করবেন আল্লাহ কিন্তু এ ’রহমত’ও তিনি নিজের কাছে রেখে দেননি। দিয়ে দিয়েছেন তাঁর প্রতিনিধিদের কাছে যাঁদেরকে আমরা ’আওলিয়া আল্লাহ’ হিসেবে চিনি। ”আল্লাহর রহমত (তাঁর) মুহসীন বান্দাদের অতি নিকটে” (সুরা আ’রাফ, আয়াত ৫৬)। সুতরাং আজীবন আল্লাহকে ডাকতে পারেন কিন্তু রহমত ও ঈমান পেতে হলে যেতে হবে সেই সব মুহসীন বান্দাদের কাছে যারা এই আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত দান করেন প্রেম, সাধনা ও বিনয়ের বিনিময়ে।

এ মুহসীন বান্দারা ঈমানী কলেমা একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় যখন আপনার ক্বলব তথা অন্তরে প্রবেশ করিয়ে দেবেন তখন থেকেই শুরু হবে আপনার মধ্যে পরিবর্তন কারণ এটি একটি শক্তি। এ শক্তি দুনিয়াবী বিষয় থেকে আপনার মনকে ঘুরিয়ে দেবে আখেরাতের দিকে। আল্লাহর রসূল (সা.) এ শক্তি বড় বড় পাপীদের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন বলেই তাঁদের কেউ কেউ পৃথিবীতে থাকতেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। এ ঈমানী কলেমা বারবার মনে করিয়ে দেবে পূর্বের সব পাপ, এমনকি পাপ করার ইচ্ছা পোষণ করলেই আপনাকে সতর্ক করে দেবে। নামাযের মধ্যে যে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় তা বুঝা যাবে এ ঈমানী কলেমা থাকলে। যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁরা যে তাঁদের মাজারে আত্মিকভাবে জীবিত সেটাও অনুধাবন করা যাবে এ ঈমানী কলেমার মাধ্যমে। আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের ফল্গুধারা এ ঈমানী কলেমাধারীর অন্তরে মুহূর্তে মুহূর্তে প্রকাশিত হবে যার প্রভাবে সে চুপ করে থাকতে পারবে না। মানুষদের কষ্ট দেয়া তো দূরের কথা বিনা কারণে সে একটা গাছের পাতাও ছিঁড়তে পারবে না। অন্তরে স্বয়ংক্রিয় ও অবিরাম আল্লাহর জিকিরের প্রভাবে এ ঈমানী কলেমাধারীর শরীরে সদাসর্বদা একটি সূক্ষ্ম কম্পন অনুভূত হবে যার প্রভাবে বিছানায় ঘুমালে বিছানা পর্যন্ত কাঁপতে থাকবে, মৃত্যুবরণ করলে কবরে অক্ষত থাকবে অনন্তকাল। আরো অনেক লক্ষণ ও গুপ্তভেদ আছে যা সাধারণ্যে বলা নিষেধ, তাই আমি এখানেই ক্ষান্ত দিচ্ছি।

সুতরাং আজীবন কলেমা পড়তে পারেন কিন্তু ’ঈমানদার’ সেটা অন্য বিষয়। ’ঈমানদার’ অর্থ ঈমানী কলেমা আছে যার। ’ঈমানদার’ সে-ই যে বাহ্যিক বেশভূষার চেয়ে ভেতরের বেশভূষাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। গভীর ভাবে কোরআন অধ্যয়ন করে দেখুন- নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত শুধুমাত্র অন্তরে ঈমানধারীদের জন্য, মুখে কলেমা পাঠকারীদের জন্য নয়। মুখে কলেমা পাঠকারীরা নামায পড়বে, রোযা রাখবে, হজ্ব করবে, যাকাত দেবে আবার সুদ-ঘুষও খাবে, ক্রিকেট-ফুটবলের মতো অহেতুক কার্যকলাপে মজে থাকবে, দুনিয়া মস্ত বড় খাও-দাও ফুর্তি করোর ধান্ধায় থাকবে, কোরআন-হাদীসের মনগড়া লেকচার (!) দিয়ে পকেট ভরবে, সুন্নী-ওয়াহাবী-দেওবন্দী-তাবলীগী-জামায়াতী-সালাফি-আহলে হাদীস-তালিবান-আইএসআইএস-বোকো হারাম ইত্যাদি লোকদেখানো ধর্ম দলের আড়ালে মানুষদের মাঝে ফিৎনা সৃষ্টি করবে, মরে গেলে পচে-গলে মাটির সাথে মিশে যাবে। তারা নামাযে মুখে হয়ত বলবে ’সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ কিন্তু তাদের মন পড়বে ’আমার চেয়ে কে বা আছে ভালা’!

আল্লাহ মানুষ এবং জ্বীন সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য (কোরআন-৫১:৫৬)। এখন ’ইবাদত’ অর্থ কী? ইবাদত অর্থ আল্লাহর স্মরণ। ’শুধুমাত্র’ বলতে অন্য কোন উদ্দেশ্য নয়। তো ২৪ ঘন্টা মুখে মুখে স্মরণ কি সম্ভব? আবার অন্যত্র বলছেন, সাত আসমান, জমিন এবং এ দু’য়ের মধ্যে যা কিছু আছে (মানুষ ও জ্বীনরা ব্যতীত) সবাই আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছে (কোরআন-১৭:৪৪)। সবাই-ই তো আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছে, অগণিত ফেরেশতারা নিরবচ্ছিন্ন ইবাদতে লিপ্ত, তবে মানুষ সৃষ্টির দরকারটাই বা কেন পড়ল? রহস্যটি কী? এসব প্রশ্ন কি আপনাকে তাড়িয়ে বেড়ায় না? তিনিই তো সেই আল্লাহ যিনি আপনাকে কত সুন্দর করে শিখিয়ে দিচ্ছেন, (বল) আমরা আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার কাছেই সাহায্য চাই। আমাদের সরল পথের সন্ধান দিন, তাঁদের পথ যাঁদের কাছে আপনার (ঈমান নামক) নেয়ামতটি রয়েছে (কোরআন-১:৪-৬)। মহান আল্লাহ পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন কোন ব্যক্তিদের কাছে যেতে হবে। আর আমরা যাচ্ছি কাদের কাছে? জগৎবিখ্যাত জ্ঞানী মাওলানা রুমীর কী দরকারটাই বা পড়েছিলো হযরত শামসেত তাবরীয (রহঃ) এর পেছনে ঘোরার? আর আমরা কামিল পাশ করে কী করছি? আইলাম-কামাই করলাম-খাইলাম-ইবাদত করলাম-চলে গেলাম এটাই কি মানবব্রত? যারা এটাতেই ঘুরপাক খাচ্ছেন তারা আসলে চরম ভুলের রাজ্যে আছেন। এ ভুল তখনই ভাঙ্গবে যখন চরম সত্যের দেশে চলে যাবেন। কিন্তু সেখানে ভুল ভেঙ্গে লাভ কী? আর তো ফেরা যাবে না। তাই এখানেই সত্যের সন্ধান নিয়ে যান সত্যবাদীদের নিকট থেকে ঈমান সংগ্রহ করে (কোরআন-৯:১১৯)।

মুসলিম তো মুসলিমই, তাকে আবার ’সত্য মুসলিম’ (True Muslim) বলতে হবে কেন? তবে কি মিথ্যা মুসলিমও আছে? মুসলিম তো কখনো মিথ্যা বা মিথ্যুক হতে পারে না। যে মিথ্যুক সে মুসলিম তো দূরের কথা ঈমানদারও নয়। ঈমানদারদেরকে বরঞ্চ বলা হয়েছে মুসলিম হয়ে তারপর মৃত্যুবরণ করতে (কোরআন-৩:১০২)। কারণ ’মুসলিম’ অনেক উচ্চস্তরের একটি পদবী। মুসলিমের জন্য ’চারদিইন্যার যেয়াফতের’ দরকার নেই, কেউ মুসলিমের কবর জেয়ারত করুক বা না করুক তাতে তাঁর কিছুই যায়-আসে না কারণ সে ’সম্পূর্ণ’।

মাদ্রাসা থেকে বড় ডিগ্রি নিয়ে কিংবা বই পড়ে আমি এসব লিখছি না, আমি লিখছি ঈমানের তাগিদে। কোন প্রয়োজন নেই আমার এসব লেখালেখির। কেউ ’লাইক’ দিলো কি দিলো না তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। এমনও না যে লিখে আমি প্রচুর অর্থ অর্জন করছি। কারো সাথে বিতর্ক করার ইচ্ছেও আমার নেই তবে জ্ঞানের দৈন্য দেখলে চুপ থাকা কষ্টকর। শুধু একটিই কারণ আমার এত কষ্ট এত সাধনার। আর তা হল যে সত্যের সন্ধান আমি পেয়েছি আমি চাই সবাই সেটা অর্জন করুক। কারণ ঈমানদারদেরকেই আল্লাহ বলছেন আগে তুমি নিজে বাঁচো তারপর তোমার ধর্মের যারা অনুসারী (যেহেতু সবাই ভাই ভাই) তাদেরকেও বাঁচাও সেই ভয়ঙ্কর আগুন থেকে যার জ্বালানি হবে মানুষ (ঈমানদার নয়) আর পাথর (কোরআন-৬৬:৬)। সুতরাং সব ঈমানদাররা মানুষ কিন্তু সব মানুষরা ঈমানদার নয়। এবার বুঝে নিন কোন মানুষরা ইবাদত করবে।

আমি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম। বিজ্ঞান কার্য-কারণ বা প্রমাণে বিশ্বাসী। মহান আল্লাহও বারবার সতর্ক করে দিচ্ছেন, যে বিষয়ে আপনার জ্ঞান নেই সেখানে আন্দায-অনুমানের আশ্রয় না নিতে (কোরআন-১০:৩৬, ৫৩:২৮, ৬:১১৬, ৪৫:২৪)। বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে আমি কীভাবে প্রমাণ ব্যতীত কোন কিছু মেনে নিই? সেটা ধর্ম হোক আর যাই হোক। তাই অতীতে নামায পড়তাম ঠিক কিন্তু মনে সবসময় একটি দ্বিধা কাজ করত- ধর্মের নামে এত যে কষ্ট করছি এর ফলাফল কী? কবে মারা যাবো, বিচার হবে, কেউ স্বর্গে বা কেউ নরকে যাবে, এগুলো তো ভবিষ্যতের ব্যাপার। বর্তমানে কী? কারো অধীনে কাজ করার পর যদি শ্রমের মূল্য না পাই তবে কি তার অধীনে কাজ করার ইচ্ছা আর হবে? এত বড় দাতা আল্লাহ কি সবকিছু ভবিষ্যতের জন্য ফেলে রাখবেন? বর্তমানে কিছু দেওয়ার কি কোন ক্ষমতা তাঁর নেই? অবশ্যই আছে। ঈমান পাওয়ার পরই সেটা বুঝা যাবে। তাই আবারো জোর গলায় এবং প্রকাশ্যে বলছি, মুখে কলেমা পাঠ করার নাম ঈমান নয়। আংশিক কিংবা খণ্ডিত নয়, এ বিষয়ে আমি ধারাবাহিক ভাবে একটি পত্রিকায় লিখছি যা আমার ওয়েবসাইট (armanarju.wordpress.com) দেখলে পাবেন।

বুদ্ধিমান তারাই যারা (কোন কিছু না জানলে) চুপ থাকে (কিন্তু জানার চেষ্টা করে) আর বোকা তারাই যারা অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে। হাদীসে এসেছে, জ্ঞান অর্জন কর দোলনা থেকে কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। কারণ জ্ঞানের আলোতে যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেবে সে-ই সফলকাম হবে (কোরআন-৮৭:১৪) কিন্তু আফসোস, মানুষরা দুনিয়ার জীবনকেই আখেরাতের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকে (কোরআন-৮৭:১৬)।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:১৩

রাগীনি বলেছেন: জাজাকুমুল্লাহ, আল্লাহ আমাদের সবাই কে সঠিক দ্বীন বুঝার তৌফিক দান করুক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.