নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছায়া নয়, আলো ...

আরমান আরজু

সত্য ও অসীমের পথে

আরমান আরজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানুষ মরণশীল নয়

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৪১

মনে করবেন না উল্টা-পাল্টা কথা বলে মানুষের দৃষ্টি আর্কষণের চেষ্টা করছি। বাস্তব এবং সত্য কথন গুলোই মানুষদের অবগত করে যেতে চাই (সত্য গোপন বা না জানানোর দায়ে মহান আল্লাহর দরবারে অপরাধী হতে চাই না)। আসুন জানতে চেষ্টা করি কেন মানুষ অমর।
”কুল্লু নাফসিন যা-য়িক্বাতুল মাওত” (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ১৮৫; সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩৫; সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৫৭)। অর্থ: ”প্রত্যেক নফসকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে”।
অথচ অনেক কোরআন ব্যাখ্যাবিদ আয়াতটির অনুবাদ করেছেন ”প্রত্যেক জীব বা প্রাণীকেই মৃত্যুবরণ করতে হবে”। কোথায় ’নফস’ আর কোথায় ’জীব বা প্রাণী’! নফস একটি লতিফার নাম। লক্ষ্যণীয়, ’মৃত্যুবরণ করা’ আর ’মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করা’ কিন্তু এক জিনিস নয়। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে নফসের মৃত্যু নেই, মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে মাত্র। নইলে বলা হত প্রত্যেক নফস ধ্বংস হয়ে যাবে। নফস দুনিয়া এবং এর জাঁক-জমক ও আরাম-আয়েস নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চায় আর চায় আখেরাতকে ভুলে থাকতে কারণ শয়তানের অবস্থান এখানেই। নফস থেকে শয়তানকে বিতাড়িত করতে পারলেই মাটির মানুষ হয়ে যায় মহামানব। কোরআনে তিন প্রকার নফসের উল্লেখ দেখা যায়। প্রথমটি হচ্ছে ’নফসে আম্মারা’ অর্থাৎ মন্দকর্ম প্রবণ নফস। ”নিশ্চয়ই মানুষের নফস মন্দকর্ম প্রবণ” (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৫৩)। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ’নফসে লাওয়্যামাহ’ তথা তিরস্কারকারী নফস। ”শপথ করছি তিরস্কারকারী নফসের” (সুরা ক্বিয়ামাহ, আয়াত: ২)। এবং তৃতীয়টি হচ্ছে ’নফসে মুত্বমাইন্নাহ’ তথা প্রশান্ত নফস। ”হে প্রশান্ত নফস, তুমি তোমার রবের কাছে ফিরে আসো” (সুরা ফাজ্বর, আয়াত: ২৭)। আরো লক্ষ্যণীয়, অনেকে আবার রূহ ও নফসকে এক করে ফেলেন কিন্তু কোরআনের কোথাও লেখা নেই যে রূহকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। এবার চিন্তার বিষয় আপনি কি রূহের মাগফেরাত কামনা করবেন না নফসের। রূহও একটি লতিফার নাম। পৃথিবীতে প্রতিটি জীবের নফস থাকলেও রূহ আছে শুধু মানুষ আর জ্বীন জাতির। এমনকি ফেরেশতাদেরও রূহ নেই আবার তাঁদের নফসও নেই (তাই তাঁদের পাপ-পুণ্যের প্রশ্নও নেই)।
”তারা রূহ সম্বন্ধে আপনাকে প্রশ্ন করে; বলুন, রূহ আমার রবের নির্দেশ (বা আদেশ) মাত্র” (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৮৫)।
’প্রভুর নির্দেশ’ কী? যাঁরা প্রভুর নির্দেশ সম্পর্কে অবগত তাঁরা অবশ্যই রূহ সম্পর্কেও অবগত আছেন। তবে রূহ একটি রহস্যময় জিনিস। কেন?
”এবং আমি ফুৎকার দিই (আদম) এর মধ্যে আমার রূহ হতে” (সুরা সা’দ, আয়াত: ৭২),
”সুতরাং আমরা ফুৎকার দিই (মরিয়ম) এর মধ্যে আমাদের রূহ হতে” (সুরা তাহরিম, আয়াত: ১২)
”এবং ফুৎকার করেছেন তার (মানুষের) মধ্যে তাঁর (আল্লাহর) রূহ” (সুরা সাজদা, আয়াত: ৯),
”সেদিন রূহ ও ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে” (সুরা নাবা, আয়াত: ৩৮),
”এবং এভাবে আমরা ওহি পাঠিয়েছি আপনার দিকে রূহ আমাদের আদেশ হতে” (সুরা আশ শুরা, আয়াত: ৫২),
”এবং আমরা তার (মানুষের) শাহী রগের চেয়েও অনেক কাছে (অবস্থান করি)” (সুরা ক্বাফ, আয়াত: ১৬)।
আদম (আঃ) এর বেলায় আল্লাহ বলছেন একবচনে ’আমি ফুৎকার দিই’ আবার মরিয়ম (আঃ) এর বেলায় সেই তিনিই বলছেন বহুবচনে ’আমরা ফুৎকার দিই’। আল্লাহ তো এক তাহলে ’আমরা’ কেন বললেন? আল্লাহ কোথাও ’আমি’ আবার কোথাও ’আমরা’ বললেও পুরো কোরআনে রূহের উল্লেখ কিন্তু একবচনে। ’সেদিন রূহ ও ফেরেশতারা’ আয়াতে ফেরেশতারা বহুবচন কিন্তু রূহ একবচন। এই রূহ আসলে কী? অনেক তাফসীরকারক রূহকে জীবরাঈল ফেরেশতা বলে উল্লেখ করেছেন যা তাঁদের জ্ঞানের দৈন্যই প্রকাশ করে। ফেরেশতারা যত শক্তিশালীই হোক না কেন তাঁদের যাতায়াত সৃষ্টির শেষ সীমানা তথা সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত। আর রূহের অধিকারী মানুষ যোগ্যতাবলে চলে যেতে পারে মহান আল্লাহর আরশে আযীম পর্যন্ত। যেহেতু এ জ্ঞান প্রকাশযোগ্য নয় তাই আমি মৌনাবলম্বনকেই শ্রেয় মনে করলাম। শরীয়তকেই আমি প্রাধান্য দিচ্ছি। মারেফত গোপন জিনিস। গোপন জিনিস গোপনই থাক। আল্লাহও বলছেন, ”(অতএব) তোমরা (নফস থেকে শয়তানকে বিতাড়িত করে একাকী হয়ে) বিনয়ের সাথে এবং চুপিসারে শুধু তোমাদের রবকেই ডাকো” (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৫৫)। অথচ হতভাগা মানুষেরা ডাকছে শুধু দুনিয়াকে, টাকাকে, নারীকে, বাড়ীকে, গাড়ীকে ইত্যাদি।
রহস্য আরো আছে। কোরআনের অন্যত্র আল্লাহ বলছেন, ”সেদিন তো (কারো) ধন সম্পদ কাজে আসবে না, না সন্তান-সন্ততি (কারো কাজে আসবে), অবশ্য যে আল্লাহর কাছে একটি বিশুদ্ধ কল্বব (অন্তর) নিয়ে উপস্থিত হবে (তার কথা আলাদা)” (সুরা শুআরা, আয়াত: ৮৮-৮৯)। নফসও বলা হয়নি, রূহও বলা হয়নি। বলা হয়েছে কল্বব-এর কথা। কল্ববও একটি লতিফার নাম। ঈমান এবং আল্লাহর জিকির এখানেই ধারণ করতে হয়। ”কোন সন্দেহ নেই, একমাত্র আল্লাহর জিকিরই অন্তরসমূহকে প্রশান্ত করে” (সুরা রা’দ, আয়াত: ২৮)। বলা হয়নি প্রত্যেক নফসকে প্রশান্ত করে কিংবা রূহকে প্রশান্ত করে। আরো দেখার বিষয়, বলা হয়েছে ’অন্তরসমূহকে প্রশান্ত করে’। অন্তরসমূহ বহুবচন। কিন্তু পুরো কোরআনে রূহ একবচন।
আমি তিনটি রহস্যময় জিনিসের উল্লেখ করলাম এবং বলেছি এগুলো লতিফা। এখন লতিফা কী? কোরআনে আছে, ”তোমাদের কাছে তোমাদের রবের নিকট হতে সত্য (সুক্ষ্ম দৃষ্টিসম্পন্ন জ্ঞান) দর্শনের উপায়সমূহ (অন্তরের চোখ) এসেছে, এখন যে (ব্যক্তি) নিজের গভীর দৃষ্টিতে অবলোকন করবে, (সে তার) নফসেরই (কল্যাণের) জন্য, আর যে অন্ধ থাকবে (সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে) নিজের জন্যই” (সুরা আনআম, আয়াত: ১০৪)। বুঝা যাচ্ছে লতিফা হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব শরীরের অভ্যন্তরে দেয়া কতিপয় ঐশী বা কুদরতি চোখ যেখানে ঈমানের নূর প্রবেশ করলে ঐ কুদরতি চোখসমূহ অনুভূতি সম্পন্ন হয়ে উঠে আর তখনই বুঝা যায় শরীরের কোন কোন স্থানে সেগুলোর অবস্থান এবং প্রতিভাত হয় অদেখা ও অজানা বিষয় আর তাঁর কাছে উন্মুক্ত হয়ে যায় ঐশী জ্ঞানের ভাণ্ডার। তখন ”তিনি উঠে যান ভয় ও চিন্তার উর্ধ্বে কি ইহজগতে আর কি পরজগতে” (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৬২)। আর যারা ঈমানের নূর সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হবে তারা চোখ থেকেও অন্ধ এবং ভীত ও চিন্তিত থাকবে কি ইহজগতে আর কি পরজগতে। মহান আল্লাহ এজন্যই সতর্কবাণী দিয়ে রেখেছেন, ”এবং যে আমার জিকির (স্মরণ) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন হয়ে পড়বে সংকীর্ণ এবং কেয়ামতের দিন তাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করা হবে। সে বলবে, হে আমার রব, আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন, আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম। (আল্লাহ) বলবেন, এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল এবং তুমি সেগুলো (উদাসীন হয়ে) ভুলে ছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল” (সুরা ত্বোয়া-হা, আয়াত: ১২৪-১২৬)।
মৃত্যুর পর সব শেষ আর কিছু নেই যারা এ ধারণায় বিশ্বাসী তাদের ললাটে নিশ্চয় ভাজ পড়েছে!

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৪৯

প্রামানিক বলেছেন: অনেক চিন্তার বিষয়। ধন্যবাদ

২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:২৮

গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: রূহের অধিকারী মানুষ যোগ্যতাবলে চলে যেতে পারে আল্লাহ্‌র আরশ পর্যন্ত , আপনি কি সুফিজম এর কথা বলছেন ? লেখার বিষয়টি ভীষণ জটিল । তবে বেশ ভালো লেগেছে ।

৩| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪১

শামছুল ইসলাম বলেছেন: নফস,রূহ,কলব-জটিল বিষয়। তবে আপনি চেষ্টা করেছেন সহজ করে লেখতে।
প্রিয়তে নিলাম, মাঝে মাঝে পড়ে দেখব।
আপনার কথা দিয়েই শেষ করছিঃ
যেহেতু এ জ্ঞান প্রকাশযোগ্য নয় তাই আমি মৌনাবলম্বনকেই শ্রেয় মনে করলাম। শরীয়তকেই আমি প্রাধান্য দিচ্ছি। মারেফত গোপন জিনিস। গোপন জিনিস গোপনই থাক। আল্লাহও বলছেন, ”(অতএব) তোমরা (নফস থেকে শয়তানকে বিতাড়িত করে একাকী হয়ে) বিনয়ের সাথে এবং চুপিসারে শুধু তোমাদের রবকেই ডাকো” (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৫৫)। অথচ হতভাগা মানুষেরা ডাকছে শুধু দুনিয়াকে, টাকাকে, নারীকে, বাড়ীকে, গাড়ীকে ইত্যাদি।

আল্লাহ আপনাকে আরও সুন্দর সুন্দর লেখার তৌফিক দান করুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.