নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছায়া নয়, আলো ...

আরমান আরজু

সত্য ও অসীমের পথে

আরমান আরজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘জ্ঞান: কী? কেন? কীভাবে?’ (৬ষ্ঠ কিস্তি)

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৫

বর্তমান (যেহেতু আমরা এখন একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক পৃথিবীতে আছি) জগতে আমরা এখন নানা প্রকার জ্ঞানের সমাহার দেখতে পাচ্ছি। যেমন- চাকুরি কিংবা ব্যবসা করার জ্ঞান (এ সম্পর্কিত যাবতীয় অধ্যয়ন), রাষ্ট্র পরিচালনার জ্ঞান (বাংলাদেশের নাম নাও থাকতে পারে!), মহাকাশ গবেষণার জ্ঞান (আমরা না করলেও উন্নত বিশ্ব অনেক দূর চলে গিয়েছে), জ্যোতির্বিদ্যার জ্ঞান (রাশিফল কিংবা তোতাপাখি দিয়ে ভাগ্য গণনা ভেবে ভুল করবেন না), তুলনামূলক সাহিত্যের জ্ঞান (সাহিত্য এখন কল্যাণের জন্য নয়; সম্মানের জন্য, খ্যাতির জন্য, অর্থের জন্যই এখন সাহিত্য সাধনা) ইত্যাদি। এগুলো সব পার্থিব এ জগতে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে কারণ মৃত্যুবরণ করলে এসবের জ্ঞান কোন কাজে আসবে না। তবে এসবের বাইরে আরও একটি জ্ঞান আছে যা কি জীবন কি মরণ প্রত্যেক স্থানেই আপনার কাজে আসবে। আপনার সাথে থাকবে, ছেড়ে যাবে না। ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রা.) কুমাইল বিন যিয়াদ নখয়ী নামে তাঁর একজন সঙ্গীকে বলেছিলেন, ”হে কুমাইল! জ্ঞান হলো ধন-সম্পদের চেয়ে উত্তম। কারণ জ্ঞান তোমার পাহারাদার, আর সম্পদ পাহারা দিতে হয়। সম্পদ থেকে দান করার ফলে তা হ্রাস পায় কিন্তু জ্ঞান দান করার ফলে আরো বৃদ্ধি পায়। তাই যে সম্মান বা মর্যাদা সম্পদের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে, সম্পদ চলে গেলে সেই সম্মান ও মর্যাদাও হারিয়ে যাবে কিন্তু জ্ঞান থেকে যাবে অনন্তকাল” [বাগ্মীতার শিখর (Peak of Eloquence)-নাহজুল বালাগা: হযরত আলী (রা.) এর বক্তৃতা এবং পত্রের সংকলন, অধ্যায় ৮১ (১৪৬ নং বক্তৃতা), ২য় খ- (পৃ.১৬৬), মূল: শরীফ আল রাযী, ইংরেজি অনুবাদ: আসকারি জাফরি, ইসলামিক সেমিনারি পাবলিকেশান্স, পাকিস্তান]। বুঝা গেল জ্ঞান আমাদের পাহারাদারও। তবে কথা আছে, পার্থিব অর্থাৎ ইহজাগতিক জ্ঞান হয়ত আপনাকে এ জগতে আগলে রাখবে, সম্মান এবং আর্থিক সচ্ছলতা এনে দেবে, আরাম-আয়েশে পৃথিবীতে থাকার সুযোগ করে দেবে কিন্তু মারা গেলে? যেহেতেু আপনি ’ইসলাম’ নামক একটি সুমহান ধর্মের অনুসারী [কারণ মহান আল্লাহ বলছেন,
”নিঃসন্দেহে (মানুষের) জীবন বিধান হিসেবে আল্লাহ তায়ালার কাছে ইসলামই একমাত্র (গ্রহণযোগ্য) ব্যবস্থা”, সুরা আল ইমরান; আয়াত: ১৯,
”যদি কেউ ইসলাম ছাড়া (নিজের জন্য) অন্য কোন জীবন বিধান (ধর্ম) অনুসন্ধান করে তবে তার কাছ থেকে সে (উদ্ভাবিত) ব্যবস্থা কখনো গ্রহণ করা হবে না, পরকালে সে চরম ব্যর্থ হবে”, সুরা আল ইমরান; আয়াত: ৮৫,
”আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার (প্রতিশ্রুত) নেয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম”, সুরা মায়েদা; আয়াত: ৩।]
এবং এ ধর্মের বিধান মতে আপনাকে এ বিশ্বাসও রাখতে হবে যে মৃত্যুর পরও আরেকটি জীবন আছে, মরে গেলেই সবকিছু শেষ হয়ে যায় না। সে মতে মহান আল্লাহ বলছেন,
”সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ ফেরাবে, বরং বড় সৎকাজ হল, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর” [সুরা বাক্বারা, আয়াত: ১৭৭],
”যখন (দ্বিতীয় বার) শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, তখনই মানুষগুলো সব নিজেদের কবর থেকে বেরিয়ে তাদের পালনকর্তার দিকে ছুটে চলবে” [সুরা ইয়াসীন, আয়াত: ৫১],
”কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদের অবশ্যই জড়ো করবেন, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই” [সুরা আনআম, আয়াত: ১২],
”ঐ দিনকে ভয় কর, যে দিন তোমরা আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। অতঃপর প্রত্যেকেই তার কর্মের ফল পুরোপুরি পাবে এবং তাদের প্রতি কোন রূপ অবিচার করা হবে না” [সুরা বাক্বারা, আয়াত: ২৮১],
”(তোমাদের) এ দুনিয়ার জীবন (কয়েকটি দিনের) উপভোগের বস্তু মাত্র, স্থায়ী নিবাস তো হচ্ছে আখেরাত” [সুরা মু’মিন, আয়াত: ৩৯]।
ঈমান কী প্রশ্নে নবী করিম (সা.) বলেছিলেন, ”ঈমান এই যে, তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুল, তাঁর (প্রেরিত) গ্রন্থ, (পরকালে) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ, তাঁর রসূলগণের প্রতি ঈমান রাখবে এবং (মৃত্যুর পর) পুনরুত্থান দিবসের উপরও ঈমান আনবে” [হাদীস ক্রম ০৫, অনুচ্ছেদ ০২, সহীহ মুসলিম -১ম খন্ড (পৃ. ৮৭), মূল: ইমাম আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (রহ.), অনুবাদ: মাওলানা আফলাতুন কায়সার, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ঢাকা]। কিয়ামতের জ্ঞান আল্লাহ কাউকে দেননি [তবে মহানবী (সা.) কিয়ামতের কিছু পূর্বাভাষ আমাদের দিয়ে গেছেন, যথাস্থানে সেগুলো বর্ণিত হবে]। মহান আল্লাহ বলছেন,
”মানুষরা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, আপনি তাদের বলে দিন এর (কিয়ামতের) জ্ঞান তো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছেই রয়েছে” [সুরা আহযাব, আয়াত: ৬৩]।
সুতরাং কখন এ মহাপ্রলয় ঘটবে কেউ জানে না। ততদিন পর্যন্ত আপনাকে কবর জগতেই থাকতে হবে। একা। তখন এ জ্ঞান কবরে আপনার সাথী হয়ে থাকবে। কিন্তু এ কোন জ্ঞান যা আপনাকে কি জীবিত কি মৃত সর্বাবস্থায় পাহারা দেবে? এ জ্ঞানের দ্বারা আপনি যেমন অনেক কিছু জানতে ও বুঝতে পারবেন তেমনি নিজের ভেতর এক ধরনের শক্তিও অনুভব করতে পারবেন। আল কোরআনে আছে,
”আর আল্লাহ যাকে চান নিজের সাহায্যের মাধ্যমে শক্তি দান করেন, এরই মধ্যে শিক্ষনীয় রয়েছে দৃষ্টি সম্পন্নদের জন্য” [সুরা আল ইমরান; আয়াত: ১৩]।
হাদীসে আছে, ”আল্লাহ বলছেন, কোন বান্দা যখন অতিরিক্ত অর্থাৎ নফল প্রার্থনার দ্বারা আমার নৈকট্য লাভে উন্নতি করতঃ আমার প্রিয় পাত্র (আউলিয়া) হয়ে যায় তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দ্বারা সে শ্রবণ করে, তার চোখ হয়ে যাই যা দ্বারা সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দ্বারা সে ধরে, তার পা হয়ে যাই যা দ্বারা সে চলে এবং সে আমার কাছে কিছু কামনা করলে অবশ্যই আমি তাকে তা দিয়ে থাকি। আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আমি তাকে আশ্রয় দিই” (হাদীসটি পড়ে অনেকে বলতে পারেন, আল্লাহ তো নিরাকার, তাঁর হাত-পা কোত্থেকে এল? খুব সোজা। এখানে চোখ-কান ইত্যাদি রূপকার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন আমরা বলে থাকি, মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তির পেছনে আমেরিকার হাত আছে। আমেরিকার কি আসলে হাত-পা আছে? ’হাত আছে’ বলতে এখানে সম্পৃক্তা বুঝানো হয়েছে। মহান আল্লাহ হচ্ছেন মহাশক্তির আধার যার ’পরে আর কোন শক্তি নেই। তিনি যদি কারো হাত হয়ে যান তখন সেই ’হাত’ কতটা শক্তিশালী হবে তা আমাদের কল্পনারও অতীত।) [হাদীস ক্রম ২৪৬৩, বুখারী শরীফ-৭ম খন্ড (পৃ. ৩২), মূল: ইমাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইব্ন ইসমাঈল বুখারী (রহ.), অনুবাদ: শায়খুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক, হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ, ঢাকা এবং এহইয়াউ উলুমিদ্দীন-৫ম খ-, পৃষ্ঠা: ৮৬, মূল: হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী (রহ.), অনুবাদ: মাওলানা মুহিউদ্দিন খান, মদীনা পাবলিকেশান্স, ঢাকা]।
পার্থিব জ্ঞান আপনি যতই অর্জন করুন ইহজাগতিক কিছু সম্পদ আর বায়বীয় শক্তি ছাড়া আপনার আর কিছুই অর্জিত হবে না এবং সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে এগুলো ক্ষণস্থায়ী। এখন দীর্ঘস্থায়ী সে জ্ঞানটি কী? আল কোরআনে মহান আল্লাহ বলছেন,
”(আল্লাহকে) যারা (দৃঢ়ভাবে) বিশ্বাস করে (জানে) আমি তাদের জন্য আমার নিদর্শন সমূহ সুস্পষ্ট করে পেশ করে দিয়েছি” [সুরা বাক্বারা, আয়াত: ১১৮],
”অচিরেই আমি আমার (কুদরতের) নিদর্শনসমূহ বিশ্বজগতে এবং তাদের নিজেদের (অন্তরের) মধ্যে দেখিয়ে দেব যতক্ষণ না তাদের কাছে পরিষ্কার হয় যে এ (ইসলাম ধর্ম-ই মূলত) সত্য” [সুরা হা-মীম আস সাজদা, আয়াত: ৫৩]।
সে জ্ঞানটি হল মহান আল্লাহকে চেনা ও জানার জ্ঞান। আল্লাহকে জানার জ্ঞান যাদের আছে তাদের কাছে এ জ্ঞানের সুস্পষ্ট প্রমাণ সহ আছে নইলে আল্লাহ বলতেন না ”আমার নিদর্শন সমূহ সুস্পষ্ট করে পেশ করে দিয়েছি”। আমার নিদর্শন অর্থাৎ আল্লাহর নিদর্শন (যা সুস্পষ্ট করে পেশ করে দিয়েছেন) কী? এ পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই আল্লাহর নিদর্শন (গাছপালা, পশুপাখি, মানুষ, আকাশ, মাটি ইত্যাদি) এবং এসব নিদর্শন সবাই দেখতে পায়, আল্লাহকে জানুক বা না জানুক। সবাই দেখতে পায় ঠিক কিন্তু কী দেখতে পায়? দেখে শুধু উপরের অংশটুকু আর তাই মূর্খের মত বলে বসে এসব এমনি এমনি সৃজন হয়েছে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলছে, কোন চালক তথা স্রষ্টা এখানে নেই! আবার কিছু নিদর্শন আছে যা খালি চোখে দেখা যায় না, এদের দেখতে শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্র দরকার। যেমন- ভাইরাস (এক প্রকার অতিক্ষুদ্র অণুজীব যারা জীবিত কোষের ভেতরেই মাত্র বংশবৃদ্ধি করতে পারে)। খালি চোখে দেখা না গেলেও আমরা কিন্তু ভাইরাসকে অস্বীকার করতে পারি না। কারণ এ ব্যাপারে জীববিজ্ঞানীদের হাজার হাজার প্রমাণ আছে। আছে আল কোরআনেও,
”দৃশ্য-অদৃশ্যের অণুও তোমার প্রতিপালকের (দৃষ্টি) থেকে গোপন নয় বরং পর-পরমাণু থেকে বৃহত্তর বিষয়াদিও স্পষ্ট গ্রন্থে বর্নিত আছে” [সুরা ইউনুস, আয়াত: ৬১],
”নভোমন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে তাঁর আগোচরে নয় অণু পরিমাণ কিছু, না তদপেক্ষা ক্ষুদ্র এবং না বৃহৎ, সমস্তই আছে সুস্পষ্ট কিতাবে” [সুরা সাবা, আয়াত: ৩]।
(চিন্তার বিষয়, ভাইরাস আবিস্কার হয়েছে ১৩০০ থেকে ১৮০০ শতকে আর কোরআন এসেছে ৬০০ শতকে যখন অণুবীক্ষণ যন্ত্র দূরের কথা বিবর্ধক কাচ (magnifying glass) পর্যন্ত আবিস্কার হয়নি অথচ মহান আল্লাহ সে সময়ে বলছেন ’দৃশ্য-অদৃশ্যের অণুও’ তাঁর গোচরে। সামান্য জ্ঞানও যদি কারো থাকে সে কখনো বলবে না এ কোরআন মানব রচিত)
আবার ভাইরাস জনিত রোগে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের দেহে ভাইরাস আক্রমণ করেছে। এখন শয়তান নামে যে অশুভ শক্তিটি যুগ যুগ ধরে মানবজাতিকে মহান আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার কাজে বিরামহীন লেগে আছে তার সতর্কবাণী নবী-রসূলগণ বহু পূর্বেই দিয়ে রেখেছেন কারণ তাঁরা শয়তানের স্বরূপ জানতেন ও বুঝতেন। আল কোরআনের বহু স্থানে
”শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু” [সুরা বাক্বারা, আয়াত: ১৬৮, ২০৮, সুরা মা’য়িদা, আয়াত: ৯১, সুরা আনআম, আয়াত: ১৪২ ইত্যাদি]
বলে মহান আল্লাহ মানবজাতিকে বারবার সতর্ক করেছেন। হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত হাদীসে আছে, ”একদা রসূল (সা.) ভাষণ দিলেন-তাঁর সেই ভাষণের ন্যায় ভাষণ আর কখনও শুনিনি। হযরত (সা.) সেই ভাষণে বলেছিলেন, আমি যা জানি যদি তোমরা তা জানতে তবে হাসতে কম কাঁদতে বেশি। আনাস (রা.) বলেন, উক্ত ভাষণ শ্রবণে সাহাবীগণ নিজ নিজ মুখম-ল কাপড়ের আড়ালে নিয়ে কাঁদতে লাগলেন” [হাদীস ক্রম ২৪৫৪, বুখারী শরীফ-৭ম খন্ড (পৃ. ২৮), মূল: ইমাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইব্ন ইসমাঈল বুখারী (রহ.), অনুবাদ: শায়খুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক, হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ, ঢাকা]। হাদীসে ’আমি যা জানি’ বলতে এমন গুপ্তভেদ (অদৃশ্য জিনিসের বাস্তব স্বরূপ) বুঝায় যা মহান আল্লাহ তাঁর রসূল (সা.) কে জানিয়েছিলেন। শয়তানের কুমন্ত্রণায় মানুষ পাপাচারে ডুবে আছে অথচ কোন ব্যবস্থা (চিকিৎসা) নেয় না কারণ সে শয়তানের অস্তিত্বকেই আসলে বিশ্বাস করতে চায় না প্রকাশ্য শত্রু হওয়া সত্ত্বেও (শয়তানের স্বরূপ নিজে দেখেনি বলে)। ভাইরাসকে নিজ চোখে না দেখেও শুধু চিকিৎসকের কথায় বিশ্বাস করে মানুষ ভাইরাস জনিত রোগের চিকিৎসা করায় অথচ আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সা.) শয়তান সম্বন্ধে মানুষকে বারবার সতর্ক করে তার কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকতে বলার পরও মানুষ শুধু না দেখার কারণে বিপথে চলে যাচ্ছে। কেন? শয়তান সম্বন্ধে মানুষের জ্ঞান নেই বলে। এখন ভেতরের অংশটুকু কী? যারা আল্লাহকে জানে তারা তাঁর নিদর্শন সমূহের ভেতরের অংশটুকুও জানে। কিন্তু মহান আল্লাহর কী মহিমা, এ ভেতরের জ্ঞান তিনি গোপন রেখে দিয়েছেন। সহজে এ জ্ঞান পাওয়া সম্ভব নয়। বই-পুস্তকেও এ জ্ঞান নেই। তাহলে কোথায় এ জ্ঞান পাওয়া যাবে? ভাইরাসকে দেখতে যেমন আরেকটি চোখের (শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্র) প্রয়োজন (যেহেতেু আপনার চর্মচক্ষুর সে ক্ষমতা নেই) তেমনি মহান আল্লাহকে জানতে ও দেখতে হলেও (এবং তাঁর নিদর্শন সমূহের ভেতরের অংশটুকু দেখতে হলেও) আরও একটি চোখের প্রয়োজন। মহান আল্লাহ বলছেন,
”তোমাদের কাছে তোমাদের রবের নিকট হতে সত্য (সুক্ষ্ম দৃষ্টিসম্পন্ন জ্ঞান) দর্শনের উপায়সমূহ (অন্তরের চোখ) এসেছে, এখন যে (ব্যক্তি) নিজের গভীর দৃষ্টিতে অবলোকন করবে, (সে তার) নফসেরই (কল্যাণের) জন্য, আর যে অন্ধ থাকবে (সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে) নিজের জন্যই” [সুরা আনআম, আয়াত: ১০৪],
”বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ হয় না কিন্তু বক্ষস্থিত অন্তর (এর চোখ) ই অন্ধ হয়” [সুরা হাজ্জ্ব, আয়াত: ৪৬]।
হাদীসে আছে, ”মানবদেহের মধ্যে এমন একটি অংশ আছে যে সে অংশটি যখন যথার্থরূপে ঠিক হয়ে যায় তখন মানুষের পুরো দেহই ঠিক থাকে (অর্থাৎ সম্পূর্ণ মানবদেহ তখন সঠিকভাবে পরিচালিত হতে থাকে)। পক্ষান্তরে সে অংশটি যখন খারাপ হয়ে পড়ে, তখন সমস্ত দেহই খারাপ হয়ে যায় (অর্থাৎ মানবদেহের কোন অংশই তখন সঠিকভাবে পরিচালিত হয় না)। জেনে রাখা উচিত সেই অংশটি হচ্ছে ক্বলব বা অন্তরের চোখ” [হাদীস ক্রম ৪৭, বুখারী শরীফ-১ম খন্ড (পৃ. ৯৪), মূল: ইমাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইব্ন ইসমাঈল বুখারী (রহ.), অনুবাদ: শায়খুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক, হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ, ঢাকা]। মাইক্রোপ্রসেসরকে (microprocessor-একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং প্রোগ্রামেবল এমন একটি গাণিতিক ইঞ্জিন যা নির্দেশের মাধ্যমে কম্পিউটারের যাবতীয় অপারেশন নিয়ন্ত্রণ এবং সম্পাদন করে। এই সমন্বিত চিপটি একটি ছোট, পাতলা সিলিকন যার সামান্য কয়েক বর্গমিলিমিটারে কয়েক কোটি ট্রানজিস্টার থাকে) বলা হয় কম্পিউটারের হৃদয়। পুরো কম্পিউটারের তুলনায় মাইক্রোপ্রসেসরটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র কিন্তু এই ছোট্ট জিনিসটি যদি ঠিকমতো কাজ না করে তবে পুরো কম্পিউটারে এর প্রভাব পড়ে। পুরো মানবদেহের তুলনায় ক্বলবটি অত্যন্ত ছোট কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত এর মধ্যে ঈমান প্রবেশ করছে না ততক্ষণ তা কস্মিনকালেও সাড়া দেবে না মুখে আপনি যতই ঈমানের কলেমা আওড়ান না কেন। মহান আল্লাহ এজন্যই বলছেন,
”(আরব) বেদুঈনরা বলে, আমরা তো (মুখে কলেমা পাঠ করে) ঈমান এনেছি। আপনি বলুন, না, তোমরা (সঠিক অর্থে এখনও) ঈমান আনোনি, তোমরা (বরং) বলো, আমরা (তোমাদের রাজনৈতিক) বশ্যতাই স্বীকার করেছি মাত্র, কারণ, ঈমান তো এখনো তোমাদের অন্তরে প্রবেশই করেনি” [সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১৪]।
[চলবে]

আগের কিস্তিগুলো এখানেঃ armanarju.wordpress.com

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৪৬

ইসলামের ইলম বলেছেন: মাশাআল্লাহ। অনেক কিছু জানার আছে এই লেখায়। জাযাকাল্লাহ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.