নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছায়া নয়, আলো ...

আরমান আরজু

সত্য ও অসীমের পথে

আরমান আরজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

’হজ্ব’ না ধনীদের ভ্রমণ?

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৪:২৯

এবারের হজ্বে অনেক ইসলামের অনুসারীর (আমি হাজী বলতে পারছি না) মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। আরো দুঃখজনক হলো অনেকে না বুঝে তাঁদের শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। নামায-রোযা যেরকম ফরয তথা আবশ্যিক ইবাদত তেমনি হজ্বও। এখন হজ্ব করা অবস্থায় কেউ মারা গেলে যদি ’শহীদ’ হয় তবে নামায-রোযা অবস্থায় মারা গেলে কেন হবে না? অনেক কষ্টে টাকা-পয়সা যোগাড় করে হজ্বে গেছেন, গিয়ে মারা গেছেন, তাই তিনি শহীদ! নামায-রোযা করতে তো আর টাকা লাগে না, তাই মারা গেলে শহীদও হওয়া যায় না! অথচ হাদীসে এসেছে, ”যখন তুমি নামাযে দন্ডায়মান হবে, তখন এমনভাবে নামায আদায় কর, যেন এটিই তোমার জীবনের শেষ নামায” (ইবনে মাজাহ; মিশকাত)। হজ্বও এমনভাবে আদায় করতে হবে যেন এটিই জীবনের শেষ হজ্ব। ইসলামে শহীদ অনেক উঁচু দরজার একটি পদবী। নবী এবং সিদ্দিকগণের পরে শহীদগণের স্থান। একটা লোক মারা গেছে বলা সহজ কিন্তু ’শহীদ’ বলতে খুবই সাবধান হতে হবে।
কথা হলো ’হজ্ব’ আসলে কাদের জন্য? পয়সাওয়ালাদের জন্য না ঈমানদারদের জন্য? যদি বলা হয় যাদের টাকা আছে তারাই শুধু হজ্ব করতে পারবে তাহলে আমি বলব ইসলাম ধর্ম এখানে চরম বৈষম্য করেছে। নামাযে যদি ধনী-গরীব ব্যবধান না থাকে তবে হজ্বে কেন থাকবে? ভুলটি কি আসলে ইসলাম ধর্মের না আমাদের? নামের আগে ডক্টর, মাওলানা, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ লাগালেই ’আলেম’ হওয়া যায় না, হওয়া যায় (ধর্ম) ব্যবসায়ী। এই ব্যবসায়ীরা আমাদের শেখায়, কোনরকমে একবার হজ্ব করতে পারলে আপনার জন্য জান্নাত অবধারিত! আর করতে গিয়ে মারা গেলে আপনি তো শহীদ! হাজরে আসওয়াদে একবার চুমু খেতে পারলেই আপনি একেবারে নিষ্পাপ! সাথে সাথে জমতে শুরু করল মুয়াল্লিম ব্যবসা, ট্রাভেল এজেন্সী ব্যবসা। অথচ ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.) হজ্ব পালনকালে হাজরে আসওয়াদ পাথরটিকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ”কোন সন্দেহ নেই তুমি একটি পাথর, না পারো কারো উপকার করতে না পারো ক্ষতি। যদি আমার রসূল (সা.) তোমাকে চুমু না করতেন আমি কখনো তোমাকে চুমু করতাম না” (বুখারী শরীফ, হজ্ব অধ্যায়)। চিন্তা করুন উমর (রা.) কাকে গুরুত্ব দিলেন। আরো দেখার বিষয় চুমু কে কাকে খেয়েছে- রসূল (সা.) হাজরে আসওয়াদকে চুমু খেয়েছেন না হাজরে আসওয়াদই রসূল (সা.) কে চুমু খেয়েছে? তাফসীরে মাযহারীতে সূরা নূর-এর তাফসীরে এসেছে, ”রসূল (সা.) এর দুধমাতা হযরত হালীমা সাদিয়া (রা.) যখন নবীকে (আমি ’শিশু নবীকে’ বলতে পারছি না কারণ নবী সা. নিজেই বলেছেন, আমি তখনো নবী যখন আদম মাটি ও পানির সাথে মিশ্রিত ছিলো) নিয়ে হাজরে আসওয়াদ পাথরটির কাছাকাছি হলেন তখন দেখলেন এক আশ্চর্য ঘটনা, পাথরটি নিজের স্থান হতে এগিয়ে এসে নবীকে চুমু খেল।” হাজরে আসওয়াদ তো একটি পাথরই এদিকে কা’বা শরীফও পাথরের। এখন হজ্ব করবেন পাথরের না কা’বার? আসুন কোরআন কী বলে দেখি-
”এবং যখন আমরা (আল্লাহ এখানে বহুবচনে বলছেন) ঘরটিকে মানুষদের জন্য মিলনকেন্দ্র (রূপে) নির্বাচন করলাম এবং নিরাপত্তার (স্থান হিসেবে) এবং গ্রহণ করো মাকামে ইব্রাহীম হতে প্রার্থনার স্থান এবং আমরা প্রতিশ্রুতি রাখলাম ইব্রাহীম এবং ইসমাঈলের দিকে যেন পবিত্র করে আমার ঘরকে তওয়াফকারীদের জন্য এবং আশ্রয়গ্রহণকারীদের জন্য এবং রুকুকারী সেজদাকারীদের (জন্য)” (সূরা বাক্বারা, আয়াত ১২৫)।
বলা হয়েছে, ঘরটিকে, কোন ঘর? অধিকাংশ তাফসীরকারক বলেছেন কা’বাঘর। কা’বাঘর হলে এরপরে বলা হল ’মানুষদের জন্য মিলনকেন্দ্র’, মানুষ বলতে তো এখানে সব ধর্মের সব জাতির মানুষই বুঝাচ্ছে। যদি বলা হতো ইসলামের অনুসারীদের জন্য মিলনকেন্দ্র কিংবা ঈমানদারদের জন্য মিলনকেন্দ্র কিংবা মুসলমানদের জন্য মিলনকেন্দ্র তবে না হয় বুঝতাম কা’বাঘর। কা’বায় তো বিধর্মীরা যেতে পারে না। তো এ কোন ঘর যা মহান আল্লাহ মানুষদের জন্য মিলনকেন্দ্ররূপে নির্বাচন করলেন? এটি সেই ঘর যার নেই কোন ছাদ, দেয়াল কিংবা আকার। এটি মহান আল্লাহর ঘর। এ ঘর আকাশেও নয় পাতালেও নয়। এ ঘর আমার-আপনার মাঝেই। ঘরটির নাম ক্বলব তথা হৃদয়। ”আল্লাহ অবস্থান গ্রহণ করেন মানুষ এবং ক্বলবের মধ্যবর্তী স্থানে” (সূরা আনফাল, আয়াত ২৪)। এক হাদীসে কুদসীতে আছে, ”মুমিন বান্দার ক্বলবই আল্লাহর আরশ বা ঘর”। এ ঘরেই আগে মিলন তথা সাক্ষাৎ হতে হবে মওলার সাথে, হজ্ব আগে এখানেই, এ ঘরের হজ্ব করতে লাগে না কোন টাকা-পয়সা, লাগে শুধু প্রেম আর বিনয়, এ ঘর সব ধর্ম সব জাতির জন্য উন্মুক্ত কিন্তু প্রবেশ করতে হবে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (প্রক্রিয়াটির উল্লেখ এখানে করছি না, পরিসর বড় হয়ে যাবে)। এরপর বলা হয়েছে, ঘরটি মানুষদের জন্য একটি নিরাপত্তার স্থানও। কোন ঘর? মক্কা শরীফ? সেখানে তো বন্যা হতো, ক্রেন ভেঙ্গে, পদদলিত হয়ে মানুষ মারা যায়, পকেটও কাটা যায়, তো নিরাপত্তার স্থান কীভাবে হল? বুঝতে হবে নিরাপত্তা বলতে এখানে কী বুঝানো হয়েছে। এটি হচ্ছে মানবদেহের অভ্যন্তরস্থ ক্বলবের নিরাপত্তা। এ ক্বলবে যখন আল্লাহর নূর প্রবেশ করে তখন একে নিরাপত্তা দেয় ফেরেশতারা অশুভ শক্তি তথা শয়তানের প্ররোচনায় সেটি যাতে আবার কলুষিত হয়ে না পড়ে। এরপর গ্রহণ করতে বলা হয়েছে ’মাকামে ইব্রাহীম হতে প্রার্থনার স্থান’। অনেক বড় বড় তাফসীরকারক এখানে অনুবাদ করেছেন, ’তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর স্থানটিকে নামাযের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো’। অর্থ কী দাঁড়ালো? ইব্রাহীম (আ.) যেখানে দাঁড়িয়ে নামায পড়েছেন সেখানে নামায পড়তে হবে। কী আর বলব! গ্রহণ করো মাকাম অর্থাৎ ইব্রাহীম (আ.) এর মর্যাদার স্তর হতে নামাযের অনুশীলন গ্রহণ করার আদেশ দেয়া হচ্ছে। আরো কিছু বলার ছিল কিন্তু বলব না। ভোগবাদী দুনিয়া তালগোল পাকিয়ে ফেলবে।
নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত এ সমস্ত ইবাদত শুধুমাত্র ঈমানদারদের জন্য, ইসলামের অনুসারীদের জন্য নয়। প্রশ্ন আসতে পারে ঈমানদার এবং ইসলামের অনুসারীর মাঝে আবার পার্থক্য কী? আছে, অনেক পার্থক্য আছে। এক এর পরে চারটি শূন্য দিলে হয় দশ হাজার, যদি এক সংখ্যাটি কেটে দিই তবে শূন্য গুলোর আর কোন মূল্য থাকে না। ঈমানই নাই অথচ নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাতে আমলনামা ভারী, কোন লাভ নেই এগুলোর। এখন ঈমান কী? ’আল্লাহ রাব্বী মুহাম্মদ (সা.) নবী’ যতই উচ্চারণ করুন ঈমানদার হওয়া যাবে না। খুঁজতে থাকুন ঈমান কী? কোথায় গেলে ঈমান পাওয়া যায়? কার কাছে?

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৬:৫২

গোধুলী রঙ বলেছেন: পয়সা থাকলে ইমানদার হয়না কে কইলো, হ্যা তবে আমাদের এই বংগ সমাজের রীতিনীতি একটু ভিন্ন। আর ইসলাম বৈষম্য তো করে নাই। বরং বলে একটা ন্যায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক সমাজ গড়তে, এখন মানুষ যদি সেইটা না মেনে অনৈতিক পুজিভিত্তিক সমাজ বানায়, তার দায়টা কি ইসলাম কে নিতে হবে?

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:১১

আরমান আরজু বলেছেন: ভোগবাদী দুনিয়া আসলেই দেখছি তালগোল পাকাইয়া ফালাইসে! মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। পড়তে থাকুন। সত্যের সন্ধান তো পেতে হবে ...

২| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৬

আহলান বলেছেন: লেখাটা শুরু হলো এক ভাবে , মাঝে এসে হলো আরেক রকম, শেষ হলো আরো এক রকম ভাবে ....মনে হলো মুকেশ আম্বানীর ২৭ তলা বাড়ির মতো। একেক ফ্লোরে একেক ডিজাইন ..... !!

ক্বাবা ঘর তাওয়াফ কি রাসুল (সাঃ) করেন নাই? মাকামে ইব্রাহিমের পিছনে নামাজ কি রাসুল (সাঃ) আদায় করেন নাই? আর সব কথা বাদই দিলাম ..... কোরানের আয়াত বা হজ্জ্বের আরকান আহকাম কি তিনি আপনের চেয়ে কম বুঝেছিলেন?

যাক ...আপনি আপনার বুঝ নিয়া জগত দেখতে থাকেন ....

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:১২

আরমান আরজু বলেছেন: ভোগবাদী দুনিয়া আসলেই দেখছি তালগোল পাকাইয়া ফালাইসে! মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। পড়তে থাকুন। সত্যের সন্ধান তো পেতে হবে ...

৩| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:১১

নকি৬৯ বলেছেন: অল্প বিদ্যা ভয়ংকারী।

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:১২

আরমান আরজু বলেছেন: ভোগবাদী দুনিয়া আসলেই দেখছি তালগোল পাকাইয়া ফালাইসে! মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। পড়তে থাকুন। সত্যের সন্ধান তো পেতে হবে ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.