নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছায়া নয়, আলো ...

আরমান আরজু

সত্য ও অসীমের পথে

আরমান আরজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘জ্ঞান: কী? কেন? কীভাবে?’ (৯ম কিস্তি)

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩০

’বরখ আমাকে দিনে তিনবার হাসায়’ বুঝা যাচ্ছে আল্লাহ তাহলে হাসেনও। ঘটনাটি ইমাম গাযযালী (রহ.) উল্লেখ করেছেন তাঁর বিখ্যাত ’এহইয়াউ উলুমিদ্দীন’ গ্রন্থে আর তিনি এমন কোন কিছু লিপিবদ্ধ করেননি যা ভবিষ্যতে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে যদিও অনেক আধুনিক চিন্তাবিদ (!) তাঁর এ বইটিরও সমালোচনা করতে ছাড়েননি। এমনকি তাঁকে ’কাফের’ ফতোয়া পর্যন্ত দেয়া হয়েছে! ইমাম গাযযালী (রহ.) কোন পর্যায়ের জ্ঞানী তার একটু উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (রহ.) রচিত তাফসীরে রুহুল বয়ান তৃতীয় পারার ২৪৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ হয়েছে, ”মি’রায শরীফের রাত্রিতে মহানবী (সা.) মুসা (আ.) এর মুখ ভার দেখে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তরে মুসা (আ.) নবীজি (সা.) এর কাছে একটি হাদীসের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিলেন। হাদীসটি হল, ’আমার উম্মতের আলেমগণ বনি ইসরাঈলের নবীগণের মত’ [হাদীস ক্রম ৬৪, কাশফ আল খাফা’ ওয়ামুযিল আল-ইলবাস ’আম্মা ইসতাহারা মিন আল-হাদীস ’আলা আল-সিনাতিল নাস-২য় খন্ড, মূল: ইমাম ইসমাঈল বিন মুহাম্মদ আল-আজলুনী আল জাররাহি (রহ.) এবং রিসালে-ই নূর-রশ্মি পর্ব, ৪র্থ খন্ড পৃষ্ঠা ১২১, মূল: বদিউজ্জামান সাঈদ নূরসী, তুর্কী থেকে ইংরেজি অনুবাদ: সুকরান ভাহিদি, সোওজলার পাবলিকেশান্স, ইস্তাম্বুল, তুর্কী]। তখন নবী করিম (সা.) রূহানী জগত থেকে ইমাম গাযযালী (রহ.) কে মুসা (আ.) এর সামনে হাজির করলেন। মুসা (আ.) গাযযালী (রহ.) এর নাম জিজ্ঞেস করলে উত্তরে গাযযালী (রহ.) নিজের নাম, পিতার নাম, দাদার নাম, পরদাদার নামসহ ছয় পুরুষের নাম বললেন। মুসা (আ.) বললেন, ’আমি শুধু আপনার নাম জিজ্ঞেস করেছি। আপনি এত দীর্ঘ তালিকা পেশ করলেন কেন?’ ইমাম গাযযালী (রহ.) বিনয়ের সাথে জবাব দিলেন, ’আড়াই হাজার বৎসর পূর্বে যখন মহান আল্লাহ আপনাকে প্রশ্ন করেছিলেন যে আপনার হাতে ওটা কী আর উত্তরে আপনি বলেছিলেন, এটি আমার লাঠি; আমি এর উপরে ভর দিই আর এ দিয়ে আমার মেষপালের জন্য আমি গাছের পাতা পেড়ে থাকি এবং আমার জন্য এতে অন্যান্য কাজও হয় [দ্রষ্টব্য: সুরা ত্বা হা, আয়াত ১৭-১৮]। অথচ আপনি বলতে পারতেন এটি আমার লাঠি।’ ইমাম গাযযালী (রহ.) এর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দেখে মুসা (আ.) ভাবতে লাগলেন, এ ব্যক্তি রূহের জগতে থাকতে এ অবস্থা আর পৃথিবীতে গেলে কী না করবে! এরপর তিনি মহানবী (সা.) এর হাদীসটির তাৎপর্য স্বীকার করে নেন।” নিজের ’এহইয়াউ উলুমিদ্দীন’ গ্রন্থটি সম্পর্কে একবার ইমাম গাযযালী (রহ.) বিরাট জনতাকে সম্বোধন করে বলেছিলেন, ”আমার হাতে কোন গ্রন্থ আপনারা জানেন কি? এটা এহইয়াউ উলুমিদ্দীন। গ্রন্থটিকে অবজ্ঞা করার কারণে আমার বিরুদ্ধে মহানবী (সা.) এর দরবারে অভিযোগ করা হয়। স্বপ্নযোগে দেখলাম, বিচারে আমার পিঠে চাবুক মারা হয়েছে। এই দেখ, আমার পৃষ্ঠে চাবুকের চিহ্ন বিদ্যমান” [ইমাম গাযযালী (রহ.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী- আবদুল খালেক অনুদিত গাযযালী (রহ.) এর ’কিমিয়ায়ে সা’দাত’ গ্রন্থ থেকে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা]।

হযরত মুসা (আ.) এবং বরখে আসওয়াদ (রহ.) এর ঘটনাটিকে শুধু কাহিনীতে সীমাবদ্ধ রাখলে আমরা অনেক কিছু অনুধাবন থেকে বঞ্চিত হয়ে যাব। আমাদের মনে অনেক গুলো প্রশ্নের জন্ম দেয় ঘটনাটি। আমরা জানি হযরত মুসা (আ.) একজন জলিল কদর নবী। তা সত্ত্বেও কেন মহান আল্লাহ বৃষ্টির দোয়ার জন্য একজন নবীকে নির্দেশ দিলেন তাঁর (আল্লাহর) একজন প্রিয় বান্দার কাছে যেতে? এতে করে নবীর মর্যাদা কি খাটো করা হলো না? কোরআনে সুরা কাহাফে আমরা দেখি নবী মুসা (আ.) সত্যপথের জ্ঞান আহরণের উদ্দেশে ছুটছেন এমন একজন ব্যক্তির নিকট যিনি নবী নন। কেন? নবী হিসেবে মুসা (আ.) এর কোন ঘাটতি ছিল কি? মুসা (আ.)-এর মতো জাঁদরেল নবী, যিনি আল্লাহর সঙ্গে ওহীর মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছেন, যাঁর নাম কোরআনে সম্ভবত একশত পঁচিশ বারের উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, হাতের তালুতে নূরের চমক, লাঠি সর্পে পরিণত হওয়া, মহান আল্লাহর সাথে বাক্যালাপ ইত্যাদি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হয়েও কেন বিশেষ জ্ঞান অর্জনের জন্য তাঁকে আবদানের কাছে যেতে হল? কোরআনে আছে,
”সুতরাং তারা (মুসা এবং তাঁর সঙ্গী) আমাদের বান্দাগণের মধ্য হতে একজন বান্দাকে পেলেন- যাকে আমরা দান করেছি রহমত আমাদের নিকট হতে এবং আমরা তাকে দিয়েছি আমাদের নিকট হতে জ্ঞান” [সুরা কাহাফ, আয়াত: ৬৫]।
অনেক তাফসীরকারক উল্লেখিত আয়াতে বান্দা তথা আবদানকে ’খিযির আ.’ বলে উল্লেখ করলেও কোরআনে কোথাও তাঁকে খিযির বলা হয়নি। খিযির অর্থ চিরসবুজ বা চিরঞ্জীব। যদি কোরআন এ বিশেষ বান্দাটির নাম উল্লেখ করে দিত অথবা খিযির নামটি থাকত তা হলে অনেকেই এ বিশেষ জ্ঞানটি যা আল্লাহ কর্তৃক বিশেষ রহমতরূপে দান করা হয়ে থাকে তা খিযির নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ত। কারণ আয়াতটিতে লক্ষ্যণীয় বিষয় হল ’আমাদের বান্দাগণের মধ্য হতে একজন বান্দাকে পেলেন’। বুঝা যাচ্ছে এ রকম বান্দা আরো অনেকে আছেন তার মধ্যে মাত্র একজনের সাথে মুসা (আ.) এর সাক্ষাৎ হয়েছিল। আরো রহস্যের বিষয় হল একক এবং অদ্বিতীয় আল্লাহ বলছেন, ’আমাদের বান্দাগণের মধ্য হতে’ কিংবা ’যাকে আমরা দান করেছি রহমত’। এই ’আমরা’ কারা? প্রায় তাফসীরকারকগণ ’আমরা’ অনুবাদে সর্বত্র ’আমি’ অনুবাদ করেছেন। সম্ভবত এ ভয়ে যে ’আমরা’ অনুবাদ করলে তো আল্লাহ বহুবচন হয়ে যাচ্ছেন অথচ আল্লাহ তো একবচন। নাকি না জানার কারণে ইচ্ছাকৃত নাকি জেনেও রহস্যময় কারণে চুপ থাকা? শুধু এ আয়াতে নয় কোরআনে আল্লাহ আরো অনেক স্থানে ’আমরা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। কোরআনের দ্বিতীয় সুরা সুরা বাক্বারা’র তৃতীয় আয়াত দিয়েই আল্লাহ ’আমরা’ রূপে নিজেকে প্রকাশ করলেন,
”(তারাই মুত্তাকী) যারা গায়েবের সাথে ঈমানের কাজ করে, সালাত কায়েম করে এবং আমরা যে রিযিক দিই তা হতে ব্যয় করে”।
কেন এই ’আমরা’? আল্লাহ তো এক। তিনি তো ’আমি’ বলতে পারতেন। কেন ’আমরা’ বলে আমাদের রহস্যের মধ্যে ফেলে দিলেন? আবার একটু পরে একই সুরার ত্রিশতম আয়াতে বলছেন,
”নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীর মধ্যে খলিফা নির্বাচন করব”।
এখানে আবার আল্লাহ ’আমি’ বলে নিজেকে প্রকাশ করলেন। কেন এই আমি কিংবা আমরা? ’আমি’ পর্যন্ত ঠিক আছে কারণ সবাই জানে আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় কিন্তু কেন এই ’আমরা’। ’আমরা’ শব্দটি বহুবচন। অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অন্য কেউ আছেন! এটি কীভাবে সম্ভব? তাহলে তো এতদিনের সব পড়া সব মিথ ওলট-পালট হয়ে যায়। ’আমরা’ শব্দটির ব্যাখ্যা এতই সূক্ষ্ম ও সাংঘাতিক যে অনেকে পড়ে হয়ত হজম করতে পারবেন না। আর লেখাটির আমি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। আবার লেখাটি অনেক সাধারণ পাঠকও (আমি কাউকে ছোট করছি না, দয়া করে আমাকে ভুল বুঝবেন না। সবার জ্ঞান একই পর্যায়ের নয়। একই পর্যায়ের হলে পৃথিবীতে এত বৈচিত্র্য থাকত না।) পড়ছেন। পুকুরে ডুব দিয়ে সমুদ্রের গভীরতা মাপা যায় না। সমুদ্রের গভীরতা জানতে হলে আগে সমুদ্রে ডুব দিতে হবে। ডুব দেন আর না দেন আমি চেষ্টা করছি আপনাদের সমুদ্রের কাছাকাছি নিয়ে যেতে। কারণ বিশিষ্ট চিন্তাবিদেরা আপনাদের পুকুর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখতে চান। রাখতে পারলে তাদের লাভ। কেন লাভ আশা করি আর বুঝিয়ে বলতে হবে না। সুতরাং আগে সমুদ্রের কাছে আসুন তারপর বুঝতে পারবেন সূক্ষ্ম ও সাংঘাতিক জ্ঞানসমূহ।
আবদান শব্দটির মাধ্যমে বেলায়েতের ধারাটি যে চিরকাল চলতে থাকবে এবং কোনো সীমাবদ্ধতার রেখাটি টানা যাবে না সেটাই কোরআন আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে। আল্লাহর জ্ঞান অসীম এবং আল্লাহও অসীম। তদ্রুপ বেলায়েতও অসীম তাই সীমাবদ্ধতার দেয়ালটি দাঁড় করানো যায় না। খিযির (আ.) এর নামটি উল্লেখ করা হলে এ রকম রহস্যপূর্ণ জ্ঞানের বিষয়টি কোনো ব্যক্তিবিশেষের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে কিন্তু বেলায়েত সর্বজনীন। বেলায়েত খতম তথা শেষ হবার কথাটি বলা হয়নি কিন্তু নবুয়ত মহানবী (সা.) এর মাঝে এসে শেষ হয়ে গেছে। মহানবী (সা.) এজন্যই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী কারণ তিনি রেসালাত, নবুয়ত, বেলায়েত এবং আবদিয়াত – এ চারটি বিষয়ের একত্রিত গুণে গুণান্বিত। আর তাই আমরা দেখি নবী মুসা (আ.) কে দোয়ার জন্য কিংবা রহস্যপূর্ণ জ্ঞান আহরণের জন্য অন্য আরেক জনের কাছে যেতে বলা হলেও মহানবী (সা.) এর পবিত্র জীবনে উঁনাকে কাউকে অনুসরণ করতে বলা হয়নি। বরঞ্চ বলা হয়েছে,
”তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবাসো, তবে আমার অনুসরণ করো, (তাহলে) আল্লাহ তায়ালাও তোমাদের ভালোবাসবেন” [সুরা আল ইমরান, আয়াত: ৩১]।

[চলবে]
৮ম কিস্তিঃ Click This Link

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:০২

চাঁদগাজী বলেছেন:


আধুনিক আরব্য উপন্যাস?

২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২০

মধুমিতা বলেছেন: "আমি/আমরা" নিয়ে কোন রহস্য নেই।

আরব অঞ্চলে দুই ধরনের বহুবচন দেখা যায়। সংখাগত বহুবচন এবং সন্মানার্থে বহুবচন। ঠিক তেমনি প্রাচীন রীতিতে সন্মানার্থে, মহিমা প্রকাশার্থে শব্দের বহুবচন ব্যবহৃত হত যেমনটা হিব্রুতে Eloh-im (আল্লাহ)।
কোরআনে যেমনটা পাই- “Indeed, it is We who sent down the Qur'an and indeed, We will be its guardian.” (15:9)

এবং খলিফা নির্বাচনের সাথে এর নূন্যতম সম্পর্ক নেই।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৪০

আরমান আরজু বলেছেন: আমি/আমরা নিয়ে রহস্য আছে বলেই আমি বিষয়টি উল্লেখ করিনি। আরবে বচন তিন প্রকার-এক বচন, দ্বি বচন ও বহুবচন। আরব অঞ্চলের ব্যাকরণ দিয়ে কোরআন জীবনেও বুঝা যাবে না। গেলে তাফসীরকারকরাই ভাল বুঝতেন, কিন্তু প্রায় তাফসীর একই ভুলে ভরা। আরব অঞ্চলের দুই ধরনের বহুবচন দিয়ে আমি/আমরা নিয়ে কোন রহস্য না পেয়ে আপনি যদি তৃপ্ত থাকেন তাহলে আমার বলার কিছু নাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.