নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছায়া নয়, আলো ...

আরমান আরজু

সত্য ও অসীমের পথে

আরমান আরজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘জ্ঞান: কী? কেন? কীভাবে?’ (১০ম কিস্তি)

১৯ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৫৫

মনে করবেন না আমি আবার নবীদের মাঝে পার্থক্য করছি। মহান আল্লাহ কোরআনে আমাদের নিষেধ করেছেন আমরা যেন নবীদের মাঝে কোন প্রকার পার্থক্য না করি।
”বলো, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর সাথে এবং যা আমাদের দিকে নাযিল হয় এবং যা নাযিল করা হয়েছে ইবরাহীমের দিকে এবং ইসমাঈলের এবং ইসহাকের এবং ইয়াকুবের এবং বংশধরদের এবং যা দেয়া হয়েছে মুসাকে এবং ঈসাকে এবং যা দেয়া হয়েছে নবীগণকে তাদের রব হতে। আমরা পার্থক্য করি না কারো মাঝে তাদের মধ্য হতে” [সুরা বাক্বারা, আয়াত: ১৩৬]।
’আমরা পার্থক্য করি না কারো মাঝে তাদের মধ্য হতে’, বুঝা যাচ্ছে নবীদের মাঝে কোন পার্থক্য আল্লাহ করেন না এবং পার্থক্য করার কোন মানসিকতা যেন আমাদের মাঝে উঁকি না মারে তারই জন্য কিছু সংখ্যক নবীদের নামও আয়াতটিতে উল্লেখ হয়েছে। নবী-রসূলগণ সত্যের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেন। এবং প্রত্যেক নবী-রসূল নূরে মুহাম্মদী (সা.) এ উদ্ভাসিত অর্থাৎ একই নূর হতে প্রকাশিত ও বিকশিত। দেহগঠনের মাঝে বিভিন্নতা আসলেও নূরের প্রশ্নে কোন ভিন্নতা নেই। সুতরাং পার্থক্য করার কোন প্রশ্নই আসে না। অথচ একই সুরার অন্যত্র মহান আল্লাহ নিজেই বলছেন তিনি রসূলগণের মধ্যে ফযিলত তথা মর্যাদার প্রশ্নে কিছুটা কমবেশি করেছেন।
”ওই রসূলগণ, আমরা ফযল (বা মর্যাদা) দান করেছি তাদের কারো কে কারো উপর” [সুরা বাক্বারা, আয়াত: ২৫৩]।
আয়াতটিতে একটি অতি সূক্ষ্ণ বিষয় আছে যা আমি এখানে বলতে অপারগতা প্রকাশ করছি। শুধু এটুকু বলছি, যেহেতু এ ফযল তথা মর্যাদার বিভাজনটি রসূলগণের মধ্যে আল্লাহ-ই করেছেন সেহেতু কোনো কিছু বলা কিংবা অভিযোগ করা মোটেই সমীচীন নয়। অথচ আমাদেরকে নবীগণের মধ্যে ছোট-বড় করতে মানা করে দিয়েছেন। কারণ যদিও দেখতে নবী-রসূলগণ দেহাবয়বে আমাদেরই মতো অথচ নবী-রসূলগণ মোটেও আমাদের মতো নন। যেহেতু নবী-রসূলগণ আমাদের মতো নন সেহেতু আল্লাহ আমাদেরকে পার্থক্য করতে মানা করে দিয়েছেন। ইসলাম হতে বিছিন্ন একদল আছে যারা বলে নবী-রসূলগণ আমাদের মতো মানুষ! তাদের এ যুক্তি কতটা যে হাস্যকর এবং গর্দভসুলভ- এ বিষয়ে কিছু না বললে নয় যদিও এ নিয়ে বহু বিতর্ক হয়ে গেছে এবং বিতার্কিকদের উভয় পক্ষই অন্ধকারে রয়ে গেছে এখনো। আগে একটি হাদীস বলি- ”উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি আমাদের নিকট হাজির হলেন। তাঁর পরনের পোশাক ছিল ধব ধবে সাদা এবং মাথার চুল ছিল কুচকুচে কালো। তাঁর মধ্যে ভ্রমণের কোন আলামত দেখা যাচ্ছিল না এবং আমাদের মধ্যে কেউ তাঁকে চিনতেও পারছিল না। তিনি এসেই রসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বসলেন এবং নিজের দু’হাঁটু তাঁর দু’হাঁটুর সাথে মিলিয়ে এবং তাঁর দু’হাত নিজের দু’উরুর উপর রেখে বললেন, হে মুহাম্মদ (সা.), আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন।
মহানবী (সা.) বললেন, ইসলাম হচ্ছে তুমি সাক্ষ্য দেবে যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রসূল, সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে, রমজান মাসের সাওম পালন করবে এবং হজ্জে যাওয়ার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ করবে।
আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিক বলেছেন।
(উমার রা. বলেন) তাঁর এ আচরণে আমরা বিস্মিত হলাম, তিনি তাঁর কাছে প্রশ্ন করছেন আবার তাঁর জবাব সত্যায়ন করছেন।
আগন্তুক ব্যক্তিটি আবার বললেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন।
মহানবী (সা.) বললেন, ঈমান হল আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর আসমানী কিতাব সমূহের প্রতি, তাঁর রসূলগণের প্রতি, পরকালের প্রতি এবং তকদীরের ভালমন্দের প্রতি তোমার বিশ্বাস স্থাপন করা।
আগন্তুক বললেন, আপনি সত্যই বলেছেন।
আগন্তুক ব্যক্তিটি আবার বললেন, আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন।
মহানবী (সা.) বললেন, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত কর যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও তবে মনে কর যে তিনি তোমাকে দেখছেন।
আগন্তুক আবার বললেন, আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন।
মহানবী (সা.) বললেন, এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাকারীর চাইতে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি বেশি জানেন না।
আগন্তুক বললেন, তাহলে আমাকে এর লক্ষণ সম্পর্কে বলুন।
মহানবী (সা.) বললেন, ক্রীতদাসীরা তাদের মনিবকে প্রসব করবে এবং তুমি খালি পা ও নগ্নদেহ গরীব মেষ রাখালদেরকে সুউচ্চ দালানকোঠা নির্মাণ করতে দেখবে এবং তা নিয়ে গর্ব করতে দেখবে।
উমর (রা.) বলেন, তারপর আগন্তুক চলে গেলেন এবং আমি অবাক হয়ে অনেকক্ষণ সেখানে কাটালাম।
অতঃপর মহানবী (সা.) আমাকে বললেন, হে উমর, তুমি কি জান, প্রশ্নকারী কে?
আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সা.)- ই অধিক জানেন।
তিনি বললেন, তিনি ছিলেন জিবরাঈল (আ.), তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্য তিনি এসেছিলেন” [হাদীস ক্রম ৯৩, অনুচ্ছেদ ১ (ঈমান অধ্যায়), সহীহ মুসলিম -১ম খন্ড (পৃ. ৯২-৯৫), মূল: ইমাম আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (রহ.), অনুবাদ: নাসিরউদ্দিন আল খাত্তাব (কানাডা), দারুসসালাম প্রকাশনা, সৌদি আরব এবং হাদীস ক্রম ৫০ (ঈমান অধ্যায়), শাহী আল বুখারী-১ম খন্ড (পৃ. ৮১), মূল: ইমাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইব্ন ইসমাঈল বুখারী (রহ.), ইংরেজি অনুবাদ: ড. মুহাম্মদ মুহসীন খান, দারুসসালাম প্রকাশনা, সৌদি আরব]।
হাদীসটি ইমাম বুখারী এবং ইমাম মুসলিম ঈমান অধ্যায়ের প্রারম্ভেই বর্ণনা করেছেন। সুতরাং এর গুরুত্ব কতটুকু আশা করি আর বুঝিয়ে বলতে হবে না। হাদীসটির ব্যাখ্যায় আমি যাবো না, গেলে আরেকটি নিবন্ধ হয়ে যাবে (ঈমান অধ্যায়ে আলোচনার আশা রাখি)। যদিও হাদীসটি অনেক গুরুত্ববহ একটি হাদীস কিন্তু আমার উদ্দেশ্য আরেকটি। প্রথমেই আসি জিবরাঈল (আ.) তথা ফেরেশতা প্রসঙ্গে। ফেরেশতারা যতই শক্তিশালী এবং সম্মানিত হোন না কেন তাঁরা কিন্তু সৃষ্টির সেরা নয়। অনেকে আছেন ফেরেশতাদের নাম শুনলে একেবারে গদগদ হয়ে যান যেন ফেরেশতারা বিশাল একটা ব্যাপার! আসলে ফেরেশতারা নূরের রোবট অনেকটা যেমনে চালায় তেমনে চলি। তাঁদের কোন স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি নেই, নেই তাঁদের মধ্যে কোন পাপ কিংবা পুণ্যের বিষয় যেহেতু তাঁদের মধ্যে কোন লিঙ্গের ব্যাপারও নেই। তাই বলে তাঁদের আবার তুচ্ছ জ্ঞান করলেও চলবে না। মানুষ তথা মুসলমান (ভিন্ন ধর্মাবলম্বী তো আছেই, ইসলামের অনুসারীদেরও মুসলমান হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে কারণ, অনুসারী হওয়া এক জিনিস আর মুসলমান হওয়া আরেক জিনিস। আমার কথা নয়, কোরআনের সুরা আল ইমরানের ১০২ নং আয়াতেই আছে, ”এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করিও না”।) না হয়ে যদি আপনি এ ভবলীলা সাঙ্গ করেন তবে ফেরেশতা কত প্রকার ও কী কী তা আপনাকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেয়া হবে। যেভাবে অন্যায় করলে বড় বড় পদবীধারীও কোতোয়ালের হাত থেকে রেহাই পায় না যদিও পদবীধারীদের করের টাকায় কোতোয়ালদের পোষা হয়। মনে রাখা ভাল একদা কিন্তু ফেরেশতারা আপনাকে সেজদা করেছিলো সুতরাং সেই একই ফেরেশতাদের কাছে যদি আপনি হেনস্তা হন তবে অপমানের আর কোন কিছুই বাকি থাকে না এবং সে অপমানের দহন তখন নরকের অগ্নির চেয়েও ভয়াবহ আকার নেবে। অথচ সেই ফেরেশতাকে এত বড় বড় সাহাবারা চিনতে পর্যন্ত পারলেন না মহানবী (সা.) না বলা পর্যন্ত! কথা হল ফেরেশতা এসেছিলেন মানুষের বেশে তাদের দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার জন্য। এখানে আবার আরেকটি প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়ে যায় আর তা হল যেখানে শিক্ষকদের শিক্ষক মহানবী (সা.) উপস্থিত সেখানে ফেরেশতা শিক্ষা দিতে আসার কে। যদিও প্রশ্নকারী ছিলেন ফেরেশতা আর উত্তর দিচ্ছিলেন স্বয়ং মহানবী (সা.)। মর্যাদা কার বেশি- যিনি প্রশ্নকারী তার না যিনি উত্তরদানকারী? অবশ্যই উত্তরদানকারীর। দ্বীন শিক্ষা তাহলে কে দিল? আসলে জিবরাঈল (আ.) দ্বীন শিক্ষা দিতে আসেননি, এসেছিলেন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য যে, তোমরা একজন ফেরেশতাকে মানুষের বেশ ধারণ করার কারণে চিনতে পারোনি তবে মহানবী (সা.) এর মতো একজন সর্বশ্রেষ্ঠ নবীকে কীভাবে চিনবে আবার কোন মুখে দাবী করো যে নবীরা আমাদের মতো। আরো লক্ষ্যণীয় বিষয় হল নূরের ফেরেশতা মানুষের আকৃতি ধারণ করলেও কেউ কিন্তু কখনো বলেনি যে ফেরেশতারা আমাদের মতো অথচ যিনি নবীদের নবী [এ সম্পর্কিত তিনটি হাদীস হল- ১. ”কিয়ামতের দিন সকল নবী আমার ঝাণ্ডার নিচে অবস্থান করবেন”। সূত্র: হাদীস ক্রম ৩১৪৮, অধ্যায় ৪৪ (কোরআন তাফসীর), জামি’ আত-তিরমিযী-৫ম খন্ড (পৃ.৪৫০), মূল: ইমাম হাফিয আবু ঈসা মুহাম্মদ ইবনে ঈসা আত-তিরমিযী (রহ.), ইংরেজি অনুবাদ: আবু খলিল (আমেরিকা), দারুসসালাম প্রকাশনা, সৌদি আরব, ২. ”আমার যুগে নবী মুসাও যদি জীবিত থাকতেন, তবে আমার অনুসারী হওয়া ভিন্ন তাঁর কোন উপায় থাকতো না”। সূত্র: তাফসীরে মাযহারী, ৭ম খ-, পৃষ্ঠা ৩১৭, মূল: হযরত মাওলানা কাযী ছানাউল্লাহ্ পানিপথী (রহ.), সম্পাদনা-মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদীয়া, ভুঁইগড়, নারায়ণগঞ্জ এবং ৩. ”হযরত ঈসা (আ.) আবার যখন পৃথিবীতে অবতরণ করবেন তখন তিনিও হবেন উম্মতে মুহাম্মদী (সা.) এর অন্তর্ভুক্ত”। সূত্র: হাদীস ক্রম ৩৯৪-৩৯৫, অনুচ্ছেদ ৭১ (ঈমান অধ্যায়), সহীহ মুসলিম -১ম খন্ড (পৃ. ২৪৭), মূল: ইমাম আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (রহ.), অনুবাদ: নাসিরউদ্দিন আল খাত্তাব (কানাডা), দারুসসালাম প্রকাশনা, সৌদি আরব], মহান আল্লাহর পরে যাঁর অবস্থান [প্রমাণ- কলেমা তাইয়্যেবা ’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (সা.)’], যাঁর নূর মোবারক থেকে সকল কিছুর সৃষ্টি [এ সম্পর্কিত হাদীসটি হল- ”আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন এবং আমার নূর থেকে বাকি সবকিছু সৃজন করেছেন”। সূত্র: হাদীস নং ১৮, ১ম খ-, আল মুসান্নাফ-আবদুর রাজ্জাক (রহ.) এবং মাদারেজুন নবুওয়াত-২য় খ- পৃষ্ঠা ২৬, মূল: শায়েখ আবদুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহ.), অনুবাদ: মাওলানা মুমিনুল হক, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া, ভুঁইগড়, নারায়ণগঞ্জ] তাঁকে কিনা বলা হল তিনি আমাদের মতো মানুষ! এ কোন বেকুবদের বাজারে এসে পড়লাম রে! এসব মূর্খতা সুলভ বক্তৃতা (ওয়ায বা হালের লেকচার) কিংবা লেখনী আর কত আমাদের দেখতে হবে?
(চলবে)
৯ম কিস্তিঃ Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.