নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছায়া নয়, আলো ...

আরমান আরজু

সত্য ও অসীমের পথে

আরমান আরজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সালাত (নামায) জাহান্নামেরও চাবি – শেষ পর্ব

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:০৩

”এবং সালাত কায়েম কর এবং যাকাত দাও এবং রসূলের অনুসরণ কর যাতে তোমরা রহমত পেতে পার” (সূরা নূর, আয়াত: ৫৬)।

ইসলামের অনুসারীরা বর্তমানে সালাত তথা নামায এবং জান্নাত বিষয়ে এতই উৎসাহী হয়ে গেছে যে তারা বুঝতেই চেষ্টা করে না যে কেন তারা নামায পড়ছে এবং স্বাদের লাউ তথা জান্নাত আসলে কী। মসজিদের ইমাম হতে শুরু করে তথাকথিত আলেম-ওলামা এবং পীর ছাহেবরা, তাবলীগ-জাকির নায়েক-বিলাল ফিলিপসরা, নব্য যুক্ত হওয়া মিডিয়ার ’ইসলামী অনুষ্ঠান’ ওয়ালারা, এমনকি আমাদের দেশে যানবাহনের পেছনের অংশ সবাই শুধু একটি কথাই প্রচার করছে- নামায পড়রে জান্নাত চলরে! ’সালাত (নামায) জাহান্নামেরও চাবি’ ধারাবাহিকটির ছয়টি পর্বে আমি সংক্ষেপে বুঝাতে চেষ্টা করেছি সালাত আসলে কী, জান্নাত আসলে কী। যারা বুঝবে তাদের জন্য অল্প ইশারাই যথেষ্ট আর যারা বুঝবে না তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে জ্ঞানের শুভ বোধোদয় কামনা করছি।

উপরোক্ত আয়াতটিতে বলা হচ্ছে সালাত কায়েম করতে, যাকাত আদায় করতে এবং রসূলের অনুসরণ করতে। করলে আমাদের লাভ? আমরা মহান আল্লাহর রহমত পাবো। আয়াতটি থেকে চারটি বিষয় পেলাম- সালাত, যাকাত, রসূল ও রহমত। সালাত সম্পর্কে বিগত ছয়টি পর্বে বলে এসেছি। বাকি তিনটি বিষয়ে আমি আলোচনা করব সালাতের আলোকে।
প্রথমে আসি যাকাত বিষয়ে। যাকাত কী? আমরা জানি পুরো বছরের উদ্ধৃত সম্পত্তির শতকরা আড়াই ভাগ যারা যাকাত পাবার হকদার তাদের মাঝে বন্টন করে দেয়া। ভাল কথা। বলা হয় যাকাত নাকি যার সম্পদ আছে অর্থাৎ ধনীরাই দেবে যেভাবে হজ্ব নাকি শুধু ধনীদের জন্য! তবে কি ইসলামের কিছু ইবাদত শুধু ধনীদের জন্য? সেখানে গরীবের কোন প্রবেশাধিকার নেই? যাকাত কিংবা হজ্ব নামক ইবাদত থেকে গরীবরা কি তবে বাদ পড়ে যাবে? মোটেই না। আমাদের জ্ঞানহীন কর্মকা-ের দ্বারা আমরাই ইসলামকে ধনী-গরীবে ভাগাভাগি করে ফেলেছি। ভারসাম্যের জন্য পৃথিবীতে ধনী-গরীব থাকতে পারে যেভাবে ভাল-মন্দ আছে। ধনীর ধনে গরীবের হক আছে এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। গরীব আছে বলেই ধনীর এত সৌন্দর্য, এত বাহাদুরী। কিন্তু ইসলামে কোন ধনী-গরীব নেই। এখানে মাথার ঘাম পায়ে ফেলা পরিশ্রমী কুলি হতে শুরু করে উচু তলার সাহেব সবার জন্য ইবাদত সমান। কুলি বা রিকশাওয়ালা সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে সেজন্য তার দু’ওয়াক্ত নামায পড়লে হয়ে যাবে এরকম কোন বিধান ইসলামে নেই। আয়াতটিতে ’যাকাত দাও’ বলতে কি শুধু ধনীদেরকে যাকাত দিতে বলা হয়েছে না সবার জন্যই যাকাত? ’সালাত কায়েম কর এবং যাকাত দাও’ এরকম কথা কোরআনে অনেক স্থানে বলা হয়েছে। কোথাও তো একবারের জন্যও বলা হয়নি যে ’সালাত কায়েম কর এবং যাকাত দাও ধনীরা’। আসলে আমরা ’যাকাত’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে কিংবা যাকাত কে দেবে সেটিই জানি না। আমি আমার আগের অনেক লেখায় বলেছি যে সালাত, যাকাত, রোযা, হজ্ব এগুলো শুধুমাত্র ঈমানদারদের জন্য, ইসলামের অনুসারী কিংবা মানুষদের জন্য নয়। ঈমানদার ধনী কি গরীব সেটা বিবেচ্য নয়, ঈমানের অধিকারী হলেই তাঁকে সালাত, যাকাত, রোযা, হজ্ব এগুলো অবশ্যই করতে হবে। এখন একজন ’গরীব’ ঈমানদার যাকাত কীভাবে দেবে যার নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা! আমি ’গরীব’ শব্দটিকে গুরুত্ব দিয়েছি কারণ ধনী-গরীব এগুলো ঈমানদারের বিশেষণ নয়। ঈমান তথা ঐশী শক্তিই একজন ঈমানদারের মূলধন এবং এ ঈমানের বলে একজন ঈমানদার কী কী করতে পারেন তার ফিরিস্তি দিতে গেলে এ লেখা আর শেষ করা যাবে না। ঈমানদারের যাকাত হল সে তার অন্তর থেকে যাবতীয় বস্তুমোহ এবং মানবীয় আমিত্ব উৎসর্গ তথা যাকাত করে দিয়ে মনের মধ্যে মহাশূন্যভাব জাগিয়ে তোলা। ষড়রিপু (ছয় রিপু যথা: কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য্য) থেকে মনকে পবিত্র করার নামই যাকাত। উদ্ধৃত সম্পত্তি থেকে শতকরা আড়াই ভাগ দেয়ার যাকাত খুবই সোজা কিন্তু মন থেকে ষড়রিপু দূর করার যাকাত খুবই কঠিন। বুঝা যাচ্ছে সালাত যার কায়েম হয়ে যাবে তার জন্য যাকাত তখন আর কোন কষ্টের হবে না। মহান আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হতে গেলে যাকাত দিতেই হবে, আর যাকাত দেয়া হয়ে গেলে জান্নাত তাকে সাদর আমন্ত্রণ জানাবে। নইলে জাহান্নাম অবধারিত।
এবার আসি রসূল প্রসঙ্গে। এ প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে মহান আল্লাহর দরবারে সেজদাবনত হয়ে আমার বিনীত প্রার্থনা আমি যেন সর্বপ্রকার ভুল থেকে মুক্ত থাকতে পারি কারণ মহান আল্লাহর পরেই নবী-রসূলের স্থান এবং নবী-রসূলের মাধ্যমেই আমি (’আমরা’ বলিনি) মহান আল্লাহ ও ইসলামের পরিচয় পেয়েছি। প্রথমেই বলে রাখি নবী-রসূলের কোন মৃত্যু নেই। কোরআনে কোথাও বলা হয়নি নবী-রসূলদের মৃত্যু হয়েছে। মুহাম্মদের মৃত্যু হতে পারে কিন্তু নবীর মৃত্যু নেই। রসূলরা এসেছিলেন, আসছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত আসবেন। কিন্তু নবী আর আসবেন না। কোরআনে কোথাও ’খাতামার রসূল’ তথা ’শেষ রসূল’ বলা হয়নি, বলা হয়েছে ’খাতামান নবী’ তথা ’শেষ নবী’। এখন আমাকে বুঝতে হবে ’রসূল’ শব্দের অর্থ কী। ’রসূল’ অর্থ প্রতিনিধি। প্রতিনিধি অর্থ যিনি কারোও প্রতিনিধিত্ব করেন। কোরআন মতে রসূলরা মহান আল্লাহর প্রতিনিধি অথবা কোনও নবীর মনোনীত প্রতিনিধি। ’নবীর প্রতিনিধি’! অবাক হচ্ছেন? হাদীসে আছে, ”নিশ্চয়ই জ্ঞানীগণ নবীর নায়েব তথা উত্তরাধিকারী তথা প্রতিনিধি”। খেয়াল করুন, আমি বলেছি ’জ্ঞানীগণ’, তথাকথিত মাদ্রাসা কিংবা আরবী পাস ’আলেমগণ’ নন। প্রত্যেক নবী একজন রসূল কিন্তু প্রত্যেক রসূল নবী নন। মানুষরা পৃথিবীতে মহান আল্লাহর পরিচয় পেয়েছিল নবীদের মাধ্যমে আর এখন পাচ্ছেন কিংবা পাবেন রসূলদের মাধ্যমে। দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, রসূলের পরিচয় যারা পায়নি তাদের সাথে চতুষ্পাদ প্রাণীর কোন পার্থক্য নেই। কারণ মহান আল্লাহ চতুষ্পাদ প্রাণীদের জন্য রসূল পাঠাননি, পাঠিয়েছেন মানুষদের জন্য আর সেই মানুষরা যদি রসূল না চিনে তবে এর চেয়ে দুঃখজনক পৃথিবীতে আর কিছু নেই। প্রশ্ন হল ’রসূল’ কারা? রসূল তাঁরাই যাঁরা আপনাকে মহান আল্লাহর বাস্তব পরিচয় দিতে পারেন এবং আল্লাহর রাস্তা তথা পথ চিনিয়ে দিতে পারেন। আমি আগেই বলেছি নবী-রসূলের কোন মৃত্যু নেই। কীভাবে? আয়াতটি পড়ুন,
”এবং মনে করিও না তারা মৃত, যারা আল্লাহর পথে কতল হয়। বরং তারা জীবিত রবের নিকট, রেজেকপ্রাপ্ত” (সূরা আল ইমরান, আয়াত: ১৬৯)।
বলা হচ্ছে, আল্লাহর পথে যাঁরা মারা যায় তাঁরা জীবিত, শুধু জীবিত নয় তাঁরা সেখানে রিজিকও পায়। গালগল্প মনে হচ্ছে? মাটির তৈরী একটি ইটকে আগুনে পুড়িয়ে খাঁটি করার পর সেটা হাজার বছর মাটিতে পুঁতে রাখলেও মাটির সাথে যেভাবে মিশে যায় না ঠিক মানুষও তাই তবে তাকে মহান আল্লাহর নূরে আলোকিত হতে হবে। কথা হল ’আল্লাহর পথে’ যে মারা যাবে ’আল্লাহর পথ’ কোনটি? কে চেনাবে আল্লাহর পথ? কারণ পথ যে আরেকটি আছে আর তা হল শয়তানের পথ। আল্লাহর পথের পরিচয় দিতে পারেন একমাত্র রসূলরা। রসূলদের নিকট থেকে আল্লাহর পথের পরিচয় পেয়ে সে পথে অটল থেকে মারা গেলে কোরআন মতে যদি কাউকে মৃত বলা না যায় তবে রসূলদের ক্ষেত্রে কী বলবেন? বর্তমানে রসূল কারা সেটা জানতে হলে আরেকটু ধৈর্য্য ধরতে হবে আমার আরেকটা লেখার জন্য যার বিষয়বস্তু হবে রসূল। সোজা কথা হল, রসূলের পরিচয় যারা পাবে না তাদের দ্বারা সালাতও হবে না আর তারা জান্নাতও চিনবে না। বাংলা বর্ণমালা কোন শতাব্দীতে কে আবিষ্কার করে বাংলা ব্যাকরণ বানিয়েছেন আমরা জানলেও বর্তমানে বাংলা বর্ণমালা জানতে কিংবা বুঝতে একটি শিশুকে বই ধরিয়ে দিলেই কি সে আপনা-আপনি শিখে ফেলবে না তার জন্য শিক্ষকের প্রয়োজন হবে? আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে হলে আগে আপনাকে আল্লাহর পথের পরিচয় পেতে হবে যা দিতে পারেন একমাত্র রসূলগণ। কোরআন-হাদীস-ইজমা-কিয়াস পড়ে পন্ডিত হওয়া যায় কিন্তু আল্লাহর পথের পরিচয় পাওয়া যায় না। যায় না বলেই শত শত পথ ও মতের সৃষ্টি এক ইসলাম নিয়ে।
শেষ বিষয় হল রহমত। যেহেতু আয়াতটিতে বলা হয়েছে ’রহমত পেতে পার’ বুঝা যাচ্ছে ’রহমত’ কোন অলৌকিক বিষয় নয়। প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে আমরা আল্লাহর রহমত স্বরূপ পাচ্ছি বিভিন্ন কিছু যেমন-বৃষ্টি, পানি, খাদ্য, বায়ু ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। এগুলো ’সাধারণ রহমত’ যা একটা শূকর কুকুর হতে শুরু করে ধর্মী-বিধর্মী আমি আপনি সবাই পাচ্ছি সালাত-যাকাত না করা সত্ত্বেও। তবে ’বিশেষ রহমত’ কোনটি? উত্তরটি পেতে হলে আপনাকে অনুরোধ করছি আবার একটু পড়ার জন্য ’বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ অর্থাৎ ’আল্লাহর আর রহমান আর রহিম নামের সাথে’। ’রহমান’ রূপে তিনি সবাইকে (নাস্তিকদেরও) রহমত করে যাচ্ছেন কিন্তু ’রহিম’ রূপে তিনি সবার জন্য নন। মহান আল্লাহকে ’রহিম’ রূপে পাবে শুধু তাঁরাই যাঁদের সালাত কায়েম হয়ে গেছে, যাকাত আদায় হয়ে গেছে এবং যাঁরা রসূলের পরিচয় পেয়েছে। ’রহিম’ রূপে পূর্বে তিনি দশজনকে সহ আরো অনেককে পৃথিবীতে থাকতে জান্নাত দিয়ে ফেলেছেন, সেখানে আমি-আপনি জান্নাত জান্নাত করে মাথা ফাটিয়ে কোন লাভ নেই। ’রহিম’ রূপে রহমত পেলে আপনিও জান্নাত পেয়ে যাবেন, পৃথিবীতেই।

৬ষ্ঠ পর্বঃ Click This Link

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:১৮

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: খুবই গুরুত্বপুর্ণ পোস্ট দিয়েছেন । এ জায়গাটা এটকটু পরিস্কার করে বুঝিয়ে দিলে খুশী হব
’রহিম’ রূপে পূর্বে তিনি দশজনকে সহ আরো অনেককে পৃথিবীতে থাকতে জান্নাত দিয়ে ফেলেছেন, সেখানে আমি-আপনি জান্নাত জান্নাত করে মাথা ফাটিয়ে কোন লাভ নেই।
শুভেচ্ছা রইল

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪৩

আরমান আরজু বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। আশরায়ে মুবাশশেরা বা পৃথিবীতে থাকতে যে দশজন সাহাবী জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন এবং বদরের যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের সবাইকে যে মহান আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন আমি সেদিকেই ইংগিত করেছি।

২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৫

আআলী বলেছেন: এ ধরনের লেখা মোজাদ্দেদ তরিকার অনুসারী ছাড়া লেখা কঠিন। ছালাম রইলো আপনার প্রতি।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:০৪

আরমান আরজু বলেছেন: উপমহাদেশে যে কজন আওলিয়ার জন্য ইসলামের বিজয় সম্ভব হয়েছে তন্মধ্যে হযরত মুজাদ্দিদ আলফেসানি রহ. এর নাম উল্লেখ করতে হবেই। তাঁর পবিত্র কদম মোবারকে আমার সালাম। তবে আমি কাদেরিয়া তরিকার অনুসারী।

৩| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২১

সাহরাব বলেছেন: মাশাআল্লাহ !! এক কথায় "অনবদ্য"

৪| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: সালাত যারা বেশি পালন করে তারা মনে হয় পায় বেশী দেয় কম !!! :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.