নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছায়া নয়, আলো ...

আরমান আরজু

সত্য ও অসীমের পথে

আরমান আরজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম এবং সকল মানবজাতির প্রতি – ৪র্থ পর্ব

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:৪৪

বিজ্ঞানীরা একটি আনুমানিক হিসাব দিলেও আমরা আসলেই জানি না এ বিশাল ব্রহ্মান্ডের প্রারম্ভ কবে থেকে। বিশ্বজগতের প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনাকালে আমরা কেউ পশ্চিমে আর কেউ ঊর্ধ্বমুখী থাকি অথচ আমরা জানি না আসলেই এ মহাজগতে কোন দিক (উত্তর-দক্ষিন-পূর্ব-পশ্চিম) কিংবা ঊর্ধ্ব-অধঃ বলে কিছু আছে কিনা। তবে অনেক কোরআন ব্যাখ্যাকারগণ কয়েকটি আয়াতের উদাহরণ দিয়ে পবিত্র কোরআনে পূর্ব-পশ্চিম আবিষ্কার করে ফেলেন! যেমন নিম্নের আয়াতগুলো,
”আমি শপথ করে বলছি যে অগণিত উদয়াচল এবং অগণিত অস্তাচল সমূহের রব” (সূরা মা’আরিজ, আয়াত: ৪০),
”দু’টি উদয়াচলের রব এবং দু’টি অস্তাচলের রব” (সূরা আর-রাহমান, আয়াত: ১৭),
”উদয়াচল এবং অস্তাচল আল্লাহরই জন্য” (সূরা বাকারা, আয়াত: ১১৫)।
আরবী ’মাশরিক’ এবং ’মাগরিব’ কে প্রায় তাফসীরকারক ’পূর্ব’ এবং ’পশ্চিম’ অনুবাদ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে মহাজগতের মতো পৃথিবীরও কোন দিক নেই। পৃথিবীতে বসবাস এবং চলাচলের সুবিধার্থে আমরা বিভিন্ন দিক তথা উত্তর-দক্ষিন-পূর্ব-পশ্চিম বানিয়ে নিয়েছি। একটু খেয়াল করুন, আসলে আমাকে নিয়েই উত্তর-দক্ষিন-পূর্ব-পশ্চিম। আমি স্থান পরিবর্তন করলে আমার দিকও পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। অতীতে জ্ঞান-বিজ্ঞান আজকের মত এত উন্নত ছিল না তাই এ তিনটি আয়াতের ব্যাখ্যায় কোরআন ব্যাখ্যাকারগণ জগাখিচুড়ি মার্কা ধারণা দিয়ে দায় সেরেছেন। যেহেতু পবিত্র কোরআন একই সাথে জাগতিক, আধ্যাত্মিক এবং অসীমের জ্ঞানে ভরপুর একটি পবিত্র গ্রন্থ তাই জাগতিক ভাবে মেনে নিতে হচ্ছে উদয়াচল (অর্থাৎ যেদিক হতে সূর্য উদয় হয়) হল পূর্ব দিক এবং অস্তাচল (অর্থাৎ যেদিকে সূর্য অস্ত যায়) হল পশ্চিম দিক। এখন প্রশ্ন আসতে পারে অগণিত/দু’টি/একটি উদয়াচল এবং অগণিত/দু’টি/একটি অস্তাচলের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা কী? আমি ওদিকে আর যাচ্ছি না কারণ বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে হলে আরেকটি লেখার প্রয়োজন হবে এবং বিষয়টি উচ্চস্তরের আধ্যাত্মিক ব্যাপার যা বলতে গেলে শরীয়তের গন্ডির বাইরে যেতে হবে যা এখানে বলা শোভন মনে করছি না।
এত বড় বড় গ্রহ-নক্ষত্র গুলো মহাশূন্যে ভেসে আছে হাজার হাজার বছর, কেউ একটুও এদিক-ওদিক হচ্ছে না। আর তাই বিশ্বজগতের প্রতিপালকের অপর নাম ’ভাসমান’ (’সুবহানআল্লাহ’-এর ’সুবহান’ অর্থ ভাসমান)। একটু গভীরভাবে চিন্তা করুন দেখবেন আমরা সবাই আসলে ভাসমান। শূন্য থেকে ভেসে ভেসে এ ভবে এসেছি আবার শূন্যেই ভেসে যাবো। অথচ আমাদের কত প্রচেষ্টা নিজেকে মূর্ত করে রাখার জন্য! বিমূর্ত থেকে মূর্তে এসেই আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি মূর্তির আরাধনায়! কেউ পাথর দিয়ে বানিয়ে আর কেউ নিজের ভেতরেই অসংখ্য মূর্তি যেমন-কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য্য, হিংসা, বিদ্বেষ ইত্যাদি পালন করে! নামে ধর্ম পালন আসলে ভন্ডামি। একবারও চিন্তা করলেন না যে এ পাথরের প্রার্থনালয়গুলোতে গিয়ে আপনার কী উপকারটা হচ্ছে? পৃথিবীর আদিতে কয়টা মন্দির-বিহার-গির্জা-মসজিদ ছিল এবং বর্তমানে এগুলোর সংখ্যা কতগুলো। অবশ্যই বেড়েছে কিন্তু পাপাচার, অন্যায়-অত্যাচার ইত্যাদি কি কমেছে? মনে করবেন না আমি আবার প্রার্থনালয়ের বিরুদ্ধে বলে এগুলোতে কর্মরতদের ভাত মারার চেষ্টায় আছি। সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে বাস করতে হলে প্রার্থনালয়ের প্রয়োজন আছে। তবে তার আগে নিজেকে একবার আয়নায় দেখুন তো। আপনার ভেতরে যে অসংখ্য মূর্তি (যেমন-কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, হিংসা, বিদ্বেষ, ঈর্ষা ইত্যাদি) বিরাজ করছে সেগুলো কি দেখা যায়? যায় না। যায় না বলেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ’কাবা’ নামক প্রার্থনালয়ে ধ্যান না করে করতে গেলেন জাবালে নূর পর্বতের ৮৫০ ফুট উঁচুতে হেরা নামক নির্জন গুহায় আমাদের শিক্ষা দিতে যে নিজেকে অর্থাৎ নিজের ভেতরকে চিনতে কিংবা জানতে হলে লোকালয় বা কোলাহল মার্কা প্রার্থনালয়ে না যেয়ে আগে যেতে হবে নির্জনে। আবার মহান আল্লাহ কোরআন পাঠালেন সেই হেরা গুহাতেই, ’কাবা’তে নয়। এই যে ধ্যান সাধনা এটি কিন্তু নতুন নয়। যুগ যুগ ধরেই বিশ্বজগতের প্রতিপালকের নিকট হতে আগমন করা সকল অবতারগণ, রসূলগণ এই ধ্যান শিক্ষা আমাদের দিয়ে গেছেন। মহাদেব, বুদ্ধ, মুসা, ঈসা সবাই ধ্যান সাধনা করেছেন। বর্তমানে আমরা ধ্যান সাধনা বাদ দিয়ে লোক দেখানো ’যোগ দিবস’ কিংবা কোয়ান্টাম মেথডের ’মেডিটেশন’ পালন করে কৃত্রিম শান্তি অন্বেষায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।
আমি আগেই বলেছি যা আপনাকে সৃষ্টিতে আবদ্ধ রাখে তাই ধর্ম। এ সূত্রে এ পৃথিবীতে সবাই আমরা ধার্মিক, নাস্তিকরা সহ। বিশ্বজগতের প্রতিপালক এ ধরণীতে আগে মানুষ পাঠিয়েছেন, ধর্ম নয়। তাঁর প্রথম সৃষ্টিও কিন্তু ’ধর্ম’ নয়। তবে কেন ধর্ম নিয়ে এত বাড়াবাড়ি, এত সংঘাত, এত সংশয়? ধর্ম মানুষই চেয়েছে নিজের প্রয়োজনে নইলে এ পৃথিবীতে বসবাসের বিচারে তার সাথে একটি চতুষ্পাদ প্রাণীর কোন পার্থক্য নেই। আবার এ পৃথিবীতে ধর্মের বিধি-বিধানও প্রচার হয়েছে মানুষের মাধ্যমে, অলৌকিক ভাবে আসমান থেকে কোন বিধানপত্র নাযিল হয়নি। পবিত্র কোরআনে আছে,
”এবং আমরা পাঠিয়েছি আপনার আগে (রসূল হিসেবে) একমাত্র মানুষ(ই)” (সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৭)।
সুতরাং মানুষ নিয়েই সবকিছু। মানুষ নেই ধর্মও নেই। তাই ধর্ম বুঝতে কিংবা ধর্মের বিধি-বিধান মানতেও মানুষের কাছেই যেতে হবে, বই কিংবা গ্রন্থের কাছে নয়। আবার যে-সে মানুষের কাছে গেলে হবে না। ধোকায় পড়ে নিজে তো বিপদে পড়বেনই আরেকজনকেও বিপদে ফেলবেন। এখন বড় প্রশ্ন হল কার কাছে কিংবা কোন ধর্মের কাছে যাবেন? সবাই তো সুন্দর সুন্দর কথা বলে। দল ভারী করার জন্য হরেক রকমের টোপ ফেলে নিজের আখের গুছিয়ে সহজ-সরল মানুষগুলোকে কানাগলিতে পাঠিয়ে দেয়, যেমন- স্বর্গের আরাম নরকের ভয়, ছোওয়াব কিংবা ফায়দার রমরমা ব্যবসা, পাপমুক্তির কথা বলে নর ভক্তদের পকেট কাটা আর নারী ভক্তদের ইজ্জত লুট, আলেম কিংবা বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ কিংবা গুরুজী-সাইজী কিংবা ঠাকুর-বাবা সেজে মানুষের মন যোগানো কথাবার্তা বলে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি, আদার ব্যাপারীর ’ফাদার’ সেজে ঈশ্বরপুত্র আবিষ্কার, কঠিন চীবরের নামে লালসালুতে নিজেকে আবদ্ধ করে মধ্যযুগে ফিরে যাওয়া ইত্যাদি।
আমি কোন দলে নেই আর তাই সুন্দর সুন্দর কথা বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যা সত্য, সুন্দর এবং নিজের কাছে প্রমাণিত তাই আমি এ যাবৎ বলে এসেছি, বলছি এবং ইনশাআল্লাহ বলব। বর্তমান সময়টা হচ্ছে ধর্ম প্রচারের রমরমা সময়। যে যেভাবে পারছে বুঝে কিংবা না বুঝে ধর্ম প্রচারে ব্যস্ত। ফেসবুকে, মিডিয়ায়, রাস্তায়, ছাপাখানায়, রাজনীতির ডেরায় সর্বত্র ধর্মের প্রচার। সবাই প্রচারক। এদের থামানের জন্য পবিত্র কোরআনের নিম্নের আয়াতটি আমি যথেষ্ট বলে মনে করি,
”ওহে ঈমানদারেরা, রক্ষা করো নিজেকে এবং স্বজনদের আগুন থেকে” (সূরা তাহরীম, আয়াত: ৬)।
ভাল করে আয়াতটি লক্ষ্য করুন। বলা হয়েছে আগে নিজেকে নরকের আগুন থেকে রক্ষা করতে তারপর নিজের আপনজনদের। বুকে হাত দিয়ে বলতে বলুন তো তথাকথিত ধর্ম প্রচারকদের যে কারা কারা নরকের আগুন থেকে মুক্তি পেয়েছে। দেখবেন কেউ নেই। নেই মসজিদের ইমাম কিংবা মুয়াজ্জিন, মন্দিরের পুরোহিত, বিহারের ভান্তে, গির্জার পাদ্রী। নিজেরই ঠিক নেই আবার আসে ধর্ম প্রচার করতে! আরো খেয়াল করুন, আয়াতটি ’ঈমানদারদের’ উদ্দেশ্যে করে বলা হয়েছে, মানুষদের নয়। সবাই মানুষ কিন্তু সবাই ঈমানদার নয়। আমি আগেই বলেছি কলেমা তাইয়্যেবা পাঠ করলে কিংবা অন্তঃকরণে বিশ্বাস করলেই ঈমানদার হওয়া যায় না। জমি আছে যার তাকে বলা হয় জমিদার। অপরের জমির দলিল রাত-দিন মুখস্থ করতে পারেন কিন্তু জীবনেও জমিদার হওয়া যাবে না। জমি কিনতে টাকা লাগে। আবার টাকা দিয়ে জমি কিনে বসে থাকলেও হবে না। নির্ধারিত ভূমি কার্যালয়ে যেয়ে জমির যাবতীয় কাগজ-পত্র নিজের অধীনে আনতে পারলে তবেই জমিদার। পৃথিবীর সামান্য একটুকরো জায়গা নিজের অধীনে আনতে হলে কত কী করতে হয় আর আপনি অপরের মুখ থেকে শুনে কিংবা বই থেকে কলেমা তাইয়্যেবা পাঠ করে রাতারাতি ’ঈমানদার’ হওয়ার দিবাস্বপ্ন দেখছেন? প্রিয় পাঠক এসব ভ্রান্ত চিন্তা আগে করে থাকলেও এখন মন-মগজ থেকে ঝেড়ে ফেলুন। আগুন থেকে নিজেকে বাঁচাতে হলে ’মানুষ’ পদবী থেকে উন্নীত হয়ে ’ঈমানদার’ হতে হবে। আর ঈমানের অধিকারী হতে হলে তাঁদের কাছেই আপনাকে যেতে হবে যাঁদের কাছে ঈমান সংরক্ষিত আছে। প্রশ্ন হল তাঁরা কাঁরা?

[চলবে]

৩য় পর্বঃ Click This Link

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৩:১৭

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: জটিলতা করতে গিয়ে ধর্মবিমূখতা না হয়ে যায়...

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:০৯

আরমান আরজু বলেছেন: ধর্মেই নেই আবার বলে 'ধর্মবিমূখতা'! ধর্মের নামে যা করা হচ্ছে আসলেই কি এগুলো ধর্ম?

২| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৭:৫০

চাঁদগাজী বলেছেন:


"হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম "

-এগুলো জাতি নয়, এগুলো ধর্মীয় গোষ্ঠী

৩| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৮:৩৬

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: সুন্দর হয়েছে।






ভালো থাকুন নিরন্তর। ধন্যবাদ।

৪| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৭

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন: - চিন্তার কথা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.