নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছায়া নয়, আলো ...

আরমান আরজু

সত্য ও অসীমের পথে

আরমান আরজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুন্নী, ওয়াহাবী, শিয়া, তাবলীগি, জামায়াতী, তালেবানী, আইএসআইএস ইত্যাদি আসলে কী?

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:২৭

”হে ঈমানদারেরা, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া কর, খাঁটি তাকওয়া এবং মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করিও না” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২)।
ভাল করে আয়াতটি লক্ষ্য করুন, ঈমানদারদের উদ্দেশ্য করে মহান আল্লাহ বলছেন তারা যেন আল্লাহর খাঁটি তাকওয়া করে এবং অবশ্যই যেন মুসলমান হয়ে মৃত্যুবরণ করে। কোরআনে যাবতীয় আদেশ-উপদেশ (যেমন সালাত, সাওম, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি) সবই ঈমানদারদের উদ্দেশ্য করে। সাধারণ মানুষদের প্রতি একটিই নির্দেশ- তারা যেন আগে ’ইনসান’ কিংবা ’ঈমানদার’ হয়। কারণ যতক্ষণ একটি মানুষ ’ইনসান’ কিংবা ’ঈমানদার’ হতে পারছে না ততক্ষণ তার দ্বারা কোরআন কিংবা কোরআনের নির্দেশ মানা সম্ভব হবে না। অর্থাৎ তার দ্বারা নামায-রোযা কিছুই হবে না। যদিও আমরা দেখি বর্তমানে মসজিদে নামাযী বেড়েছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে অধিকাংশই সুদ কিংবা অন্যান্য অপকর্মে নিজেদের আকণ্ঠ নিমজ্জিত রেখেছে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে লেখা আছে ’যতদিন ঔষধ সেবন করিবেন ততদিন গরুর গোস্ত, চিংড়ি মাছ খাওয়া নিষেধ।’ এখন আপনি খেতে বসে গরুর গোস্ত, চিংড়ি মাছকে যদি উপেক্ষা করতে না পারেন আপনার রোগ কি ভাল হবে? কোরআনে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামায পড়া তো দূরের কথা নামাযের ধারে-কাছে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। এখন আপনি সুদের নেশা, ঘুষের নেশা, নারীর নেশা, টাকার নেশা ইত্যাদি নেশায় আক্রান্ত হয়ে নামাযে দাঁড়ালে কস্মিনকালেও ’ইনসান’ কিংবা ’ঈমানদার’ হতে পারবেন না। আর ’ঈমানদার’ হতে না পারলে ’মুসলমান’ হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। অথচ আমাদের সেই আদ্যিকালের ধারণা (কুসংস্কার) এই যে মুসলমান নামধারীর ঘরে জন্মগ্রহণ করতে পারলেই কেল্লাফতে, আমিও মুসলমান! এসব ফালতু চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে ’সাধারণ মানুষদের’ কোরআন কী বলে সম্বোধন করেছে। কোরআন ’সাধারণ মানুষদের’ বিভিন্ন নামে সম্বোধন করেছে। নামগুলো যদি এক এক করে বলতে যাই আপনারা থমকে যাবেন। হক এবং সত্য কথনে মহান আল্লাহ অত্যন্ত স্পষ্ট। এতে কে খুশি হচ্ছে আর কে বেজাড় হচ্ছে তাতে তাঁর বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। নামগুলো ইচ্ছে করেই এ লেখাতে বলছি না। এক একটি নাম নিয়ে এক একটি পর্ব লেখার ইচ্ছে আছে ইনশাআল্লাহ।
কোরআন ’তেলাওয়াত’ (পড়া), অনুবাদ, তাফসীর কিংবা জানার জন্য আসেনি, এসেছে মানার জন্য। আপনি অত্যন্ত শুদ্ধ করে সুমধুর সুরে কোরআন পড়তে পারেন এতে আহামরি হওয়ার কিছু নেই। আরবের লোকেরা আপনার চেয়ে ঢের বিশুদ্ধ করে কোরআন পড়তে পারে অথচ তাঁরা বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছে খ্রিস্টান আর ইহুদীদেরকে যা কোরআনের চিন্তাধারার সম্পূর্ণ বিপরীত। আপনি খুব কোরআন জানেন, অনুবাদ কিংবা তাফসীর করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছেন এতেও আহামরি হওয়ার মতো কিছু নেই। গিরিশ চন্দ্র সেনও কোরআন অনুবাদ করেছেন কিন্তু মানতে পারেননি বলেই ’যে লাউ সে কদুই’ রয়ে গেলেন। আর আমরা সেই একটি মাত্র কোরআন পড়ে ভাগ হয়ে গেলাম সুন্নী, ওয়াহাবী, শিয়া, তাবলীগি, জামায়াতী, তালেবানী, আইএসআইএস ইত্যাদি মধুর মধুর নামে!
উপরোক্ত আয়াতটির প্রতি আবার আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বলা হয়েছে, মুসলমান হয়েই আমরা যেন মৃত্যুবরণ করি। বলা হয়নি সুন্নী, ওয়াহাবী, শিয়া, তাবলীগি, জামায়াতী, তালেবানী, আইএসআইএস ইত্যাদি হয়ে মৃত্যুবরণ করতে। আমরা এখন ধর্ম হিসেবে লিখি ’ইসলাম’ আর বর্ণ হিসেবে কেউ লেখে সুন্নী, কেউ শিয়া কেউ অমুক কেউ তমুক। কিন্তু কেন? ’ইসলাম’-এ তো কোন বর্ণপ্রথা নেই, কখনো ছিল না। তাহলে এগুলো কোত্থেকে এলো? কারা, কেন সৃষ্টি করল?
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নতের উপর আমলকারীকেই সুন্নী বলা হয়। নবীর সুন্নত মানে নবী যা করেছেন তা যথাসাধ্য চেষ্টা করে অনুসরণ করা। কেন নবীকে অনুসরণ করব? সুন্নতের ছোওয়াব অর্জনের জন্য? মোটেই না। একমাত্র আল্লাহকে পাওয়ার জন্য। কারণ নবী ব্যতীরেকে আল্লাহকে খুঁজতে যাওয়া বোকামি বৈ আর কিছু নয়। ’আল্লাহ’ বলে যে একজন সত্তা আছেন তা আমরা জেনেছি নবীদের নিকট থেকে। আর তাই আল্লাহকে পেতে গেলে আমাদের সবাইকে সুন্নী হতে হবে। এখন কেউ যদি সুন্নীর দোহাই দিয়ে দল বানিয়ে নিজেদের ’আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’-এর একমাত্র প্রতিনিধি দাবী করে রাতদিন ওয়াহাবীদের গালি দিয়ে, নবী নূর না মাটি বিষয়ে তর্ক করে গলা ফাটিয়ে পকেট ভারী করার জন্য নিজের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে চায় তারা কীভাবে সুন্নী হতে পারে? একজন সুন্নীর কাজ হল ঈমান অর্জন করার পর কীভাবে মুসলমান হওয়া যায় সেই চেষ্টায় নিরন্তর সচেষ্ট থাকা। যারা নবীকে নবীর মর্যাদা দেয় না, কোরআনের অপব্যাখ্যা করে নবীকে আমার-তোমার মত মানুষ বানিয়ে দেয় তারা তো ইসলাম থেকে বিছিন্ন। তাদেরকে ওয়াহাবী, সালাফি, আহলে হাদীস, লা-মাযহাবী বলে দলে রাখার দরকার কী? মাতামাতি করারই বা কী দরকার? আগে নিজে নবী সম্পর্কিত বাস্তব জ্ঞান অর্জন করুন। তারপর তাদের সামনে তুলে ধরুন। মানলে ভাল না মানলে আল্লাহর উপর ছেড়ে দিন। তাদের জ্ঞান কোন পর্যায়ের একটি উদাহরণ দিলে আশা করি বুঝতে পারবেন। ’কাদিয়ানী’ নামক এক নতুন মালের যখন এদেশে আগমন হল তখন তারা ঢাকার রাজপথে গলা ফাটিয়ে সমস্বরে আওয়াজ তুলল ”কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করা হোক”। আমার প্রশ্ন হল কাদিয়ানীরা মুসলিম ছিল কবে যে তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে? নিজেরই ঠিক নেই যে ’মুসলমান’ হতে পেরেছে কিনা আবার আসে আরেকজনকে অমুসলিম ঘোষণা করতে! গাধাও হাসবে!
সম্মানিত সাহাবাদেরকে আল্লাহর নবী আকাশের তারকার সাথে তুলনা করে বলেছেন তাঁদের যে কাউকেও অনুসরণ করবে হেদায়েত পাবে। অথচ কেউ কেউ (শিয়া অনুসারী) হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ছাড়া প্রধান তিনজন সাহাবাকে (হযরত আবু বকর, হযরত উমর এবং হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) গুরুত্বই দেয় না! বাকীদের কথা না-ই বা বললাম। কী সাংঘাতিক! দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি আধ্যাত্মিক সাহিত্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমার প্রিয় ইরান নামক একটি দেশে এ মতবাদটির অনুসারীরা সংখ্যাগুরু যে দেশটি নিজেকে পরিচয় দেয় ’ইসলামী প্রজাতন্ত্রী ইরান’ বলে অথচ ইসলামের মূলেই তারা কুঠারাঘাত করেছে! সাহাবারা নিজের জান-মাল দিয়ে নবীকে ভালবেসেছেন আমৃত্যু আর আমরা তাঁদের এ ত্যাগকে অনুসরণ না করে নেমে গেলাম বিভেদ তৈরীর কাজে। এ কথা সত্য যে অধ্যাত্মজ্ঞান জগতে হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর গুরুত্ব অদ্বিতীয় কারণ মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ”আমি হলাম জ্ঞানের শহর আর আলী (হযরত আলী রা.) হল সেই (জ্ঞানের) শহরের প্রবেশদ্বার”। কোন জ্ঞান? যে জ্ঞান দ্বারা মহান আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছা যায়। আমি আগেই বলেছি আল্লাহকে পেতে হলে আগে নবীকে পেতে হবে আর নবীকে পেতে হলে আলীকে লাগবেই। ”নাহজুল বালাঘা” নামক একটি গ্রন্থকে তারা খুব শ্রদ্ধা করে কারণ তাদের বিশ্বাস গ্রন্থটি হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর বক্তৃতা, পত্র আর উক্তির সংকলন। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হল যিনি অধ্যাত্মজগতের চরম স্তরে বিরাজ করছেন তাঁর গ্রন্থ বলে চালানো বইটিতে অধ্যাত্মজ্ঞান সম্পর্কিত একটিও বক্তৃতা, পত্র আর উক্তি নেই! ’মুতা বিবাহ’ নামক একটি জঘন্য প্রথা সেই কবে ইসলামে নিষিদ্ধ হয়েছে অথচ শিয়ারা আজো এ ’মুতা বিবাহ’ তাদের জন্য জায়েজ করে রেখেছে! বাস্তবতাকে অস্বীকার করে তারাও ’ইসলাম’কে ওয়াহাবী, সালাফি, আহলে হাদীস, লা-মাযহাবীদের মতো কিছু প্রথা আর গ্রন্থে আবদ্ধ করে ফেলেছে। যেখানে বাস্তবতা নেই সেখানে কখনো সত্য অবস্থান করতে পারে না।
কয়েকটি বই আর ’বহুত ফায়দা’, ’বহুত ছোওয়াব’, ’কোন কোন আমল করলে বেহেশত নিশ্চিত’ এসব টোপ ফেলে আমাদের মাঝে বহু পূর্ব হতে একটি দল তাদের মনগড়া মতবাদ প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যার নাম ’তাবলীগ জামাত’। এবং তারা বলতে গেলে সফল নইলে ’বিশ্ব ইজতিমা’ নামক ছোওয়াবের মরিচিকাময় খনিতে কেন এভাবে দলে দলে লোক গিয়ে কষ্ট করে! শুনেছি প্রতিবছর ’বিশ্ব ইজতিমায়’ লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম হয়। আমার প্রশ্ন যদি কমপক্ষে এক লাখ করে মানুষ প্রতি বছর হেদায়েত হত তবে তো বাংলাদেশ ইসলামিক রাষ্ট্র হয়ে যাওয়ার কথা। সমস্যা হল ইজতিমায় যারা বয়ান করেন তারা হলেন তাবলীগি বইয়ের পণ্ডিত আর যারা যান তারা দেখেন, শুনেন, মুনাজাত করেন তারপর চলে আসেন এবং স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন যে আমি তো বেহেশতের পথে আছি! একবার তাবলীগ জামাতের এক আমীর (স্থান, কাল, পাত্র গোপন রাখা হল কারণ ব্যক্তি আক্রমণ আমার উদ্দেশ্য নয়) আমাকে দাওয়াত দিলেন আছরের নামাযের পর বসার জন্য। আমি বসার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দিলেন ঈমান বিষয়ে বয়ান হবে। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম যে, ঈমান কী। তিনি পুস্তকের কথা ধার করে ইনিয়ে বিনিয়ে যা বললেন তার সার সংক্ষেপ হল ঈমান মানে বিশ্বাস স্থাপন আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে তিনি কত বছর তাবলীগে আছেন। বললেন প্রায় নাকি পাঁচ বছর হবে। এবার আমি তাকে বললাম, পাঁচ বছর তো অনেক সময়। এ সময়ের মধ্যে আপনার তো বুঝার কথা যে ঈমান মানে হল শক্তি, ঈমানের ওজন আছে এবং মানবদেহে যখন ঈমান প্রবেশ করে তা জায়গাও দখল করে। আপনি যে ঈমানদার অর্থাৎ ঈমানওয়ালা এর কোন প্রমাণ কি আপনি পেয়েছেন নিজের মধ্যে? তিনি আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন যে আমি কীসের ভিত্তিতে এসব কথা বলছি। আমি তার উত্তর না দিয়ে আমার করা প্রশ্নের উত্তরটি চাইলে তিনি কথা না বাড়িয়ে বিনয়ের সাথে আমাকে সালাম দিয়ে পরে কথা হবে বলে সরে গেলেন!
সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী যিনি ’মাওলানা মওদুদী’ নামেও পরিচিত, ছিলেন একজন গবেষক, লেখক, গ্রন্থকার, কোরআন অনুবাদক ও তাফসীরকারক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা ও বিংশ শতাব্দীর একজন গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবিদ ও দার্শনিক। তিনি তাঁর নিজ দেশ পাকিস্তানের একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও ছিলেন। তিনি ’জামায়াতে ইসলামী’ নামক একটি রাজনৈতিক দলেরও প্রতিষ্ঠাতা যে দলটির প্রভাব আমাদের দেশেও কোন অংশে কম না। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী পণ্ডিতদের মধ্যে একজন। যেকোন গবেষকের প্রতি আমার আজীবন শ্রদ্ধার কথা আমি আগেও বলেছি কারণ জ্ঞানের পৃথিবীতে যদি কোন মৌলিক ও কঠিন কর্ম থেকে থাকে তা হল গবেষণা করা। সে হিসেবে গবেষক সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তাঁর দর্শনের সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করছি। কারণ তিনি ইসলামের মূলধারা থেকে বের হয়ে একটি বৈপ্লবিক ধারার প্রবর্তন করেছেন যেখানে নৈতিকতা এবং সুমহান আদর্শের কিছুই নেই। মাওলানা মওদুদীর জনপ্রিয়তা যেমন ছিল তেমনি সমালোচনাও কম ছিল না। সমস্যা হল সমালোচনাকারী এবং যার সমালোচনা করা হয়েছে উভয়েই সত্যের ধারেকাছেও নেই। যুগে যুগে ইসলাম এসেছে প্রত্যেক মানব মনে সত্য, ন্যায় এবং নৈতিকতার বিপ্লব ঘটাতে। ইসলামের নামে দল বানিয়ে মানবে মানবে দেশে দেশে বিভেদ তৈরীর জন্য ইসলাম আসেনি। ইতিহাস অনেক বিকৃত তথ্য দিতে পারে তবে জেনে রাখা উচিত আল্লাহর নবী এবং মহান সাহাবারা কখনো গায়ের জোরে ইসলাম প্রচার করেননি এবং আগ বাড়িয়ে কোন যুদ্ধও বাধাননি তবে অন্যায়ের প্রতিরোধ করেছেন। কোরআন মতে সমাজ এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ভার মু’মীনগণের উপরই ন্যস্ত করা উচিত। মু’মীন কারা? মু’মীন তিনি যিনি নবীকে নিজের প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন, যিনি নবীর গুণে গুণান্বিত এবং যিনি মহান আল্লাহর জ্ঞানে জ্ঞানী। যাঁর মধ্যে এ তিনটি গুণ থাকবে তাঁকে পৃথিবীর তাবৎ সৃষ্টি ভয় করবে। এ কারণেই হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর শাসনামলে মুসলমানরা বিনা রক্তপাতে জেরুজালেম জয় করেছিল। আর বর্তমানে আমরা অস্থায়ী ’গদির’ জন্য চতুষ্পাদ প্রাণীদের মত হানাহানিতে লিপ্ত হয়েছি! ’জামায়াতে ইসলামী’ দলের প্রতি (ইসলামের প্রতি নয়) নিবেদিত প্রাণ কর্মী ছাড়া এ পর্যন্ত একজন মু’মীন আমাদের উপহার দিতে পারেনি। ’তাফহীমুল কুরআন’ মাওলানা মওদুদীর বিখ্যাত একটি কোরআন তাফসীর গ্রন্থ তবে আমার কাছে বাজারের আর দশটা তাফসীরকারকদের অন্ধের হস্তী দর্শন মার্কা কোরআন তাফসীর বলেই মনে হয়েছে। উদাহরণ না দিলে আবার আমার সমালোচনা হতে পারে তাই দুটি আয়াতের উল্লেখ করব। মাওলানা মওদুদী সূরা ফাতিহার ২য় আয়াতের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে-
অনুবাদ: ”যিনি পরম দয়ালু ও করুণাময়”
ব্যাখ্যা: ”মানুষের দৃষ্টিতে কোন জিনিস খুব বেশী বলে প্রতীয়মান হলে সেজন্য সে এমন শব্দ ব্যবহার করে যার মাধ্যমে আধিক্যের প্রকাশ ঘটে। আর একটি আধিক্যবোধক শব্দ বলার পর যখন সে অনুভব করে যে ঐ শব্দটির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জিনিসটির আধিক্যের প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি তখন সে সেই একই অর্থে আর একটি শব্দ ব্যবহার করে। এভাবে শব্দটির অন্তর্নিহিত গুণের আধিক্য প্রকাশের ব্যাপারে যে কমতি রয়েছে বলে সে মনে করছে তা পূরণ করে। আল্লাহর প্রশংসায় ’রহমান’ শব্দের পরে আবার ’রহীম’ বলার মধ্যেও এই একই নিগূঢ় তত্ত্ব নিহিত রয়েছে। আরবী ভাষায় ’রহমান’ একটি বিপুল আধিক্যবোধক শব্দ। কিন্তু সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর রহমত ও মেহেরবানী এত বেশী ও ব্যাপক এবং এত সীমাসংখ্যাহীন যে, তা বয়ান করার জন্য সবচেয়ে বেশী ও বড় আধিক্যবোধক শব্দ ব্যবহার করার পরও মন ভরে না। তাই তার আধিক্য প্রকাশের হক আদায় করার জন্য আবার ’রহীম’ শব্দটিও বলা হয়েছে। এর দৃষ্টান্ত এভাবে দেয়া যেতে পারে, যেমন আমরা কোন ব্যক্তির দানশীলতার গুণ বর্ণনা করার জন্য ’দাতা’ বলার পরও যখন অতৃপ্তি অনুভব করি তখন এর সাথে ’দানবীর’ শব্দটিও লাগিয়ে দেই। রঙের প্রশংসায় ’সাদা’ শব্দটি বলার পর আবার ’দুধের মতো সাদা’ বলে থাকি।” [তাফহীমুল কুরআন]

এবার বিশ্লেষণে আসি। বস্তুত ’রহমান’ এবং ’রহীম’ মহান আল্লাহর দুটি গুণবাচক নাম তাই এ পবিত্র নাম দুটোর অনুবাদে পরম দয়ালু কিংবা করুণাময় কিংবা অন্য আরো কিছু উল্লেখ না করে ’আর রহমান’ এবং ’আর রহীম’ উল্লেখ করাই শ্রেয়। কেন শ্রেয় এর কারণ জানতে হলে আমাদেরকে আরো গভীরে যেতে হবে। জানতে হবে ’রহমান’ কী এবং ’রহীম’ কী। ’রহমান’ তিনি যিনি,
”আর রহমান। শিক্ষা দেন আল কোরআন। রূপান্তর করেন ইনসান। শিক্ষা দেন বয়ান।” (সূরা আর রহমান, আয়াত: ১-৪)
’রহীম’ তিনি যিনি,
”এটি শক্তিশালী রহীম হতে নাযেল।” (সূরা ইয়া-সিন, আয়াত: ৫)
পাঠক গভীরভাবে লক্ষ্য করুন, ’রহমান’ কোরআন শিক্ষা দেন আবার বয়ানও শিক্ষা দেন আর ’রহীম’ কোরআন নাযিল করেন। কোরআন শিক্ষা আর কোরআন নাযিল এক বিষয় নয়। কোরআন শিক্ষা দেয়া সহজ কিন্তু কোরআন নাযিল অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। আর তাই ’রহীমের’ আগে ’শক্তিশালী’ বিশেষণ আছে যা রহমানের আগে নেই। আরো অনেক গুপ্তভেদ আছে যা সাধারণ্যে প্রকাশযোগ্য নয়।
সূরা মুহাম্মদ-এর ১৯নং আয়াত মাওলানা মওদুদী অনুবাদ করেছেন এভাবে-
”অতএব, হে নবী! ভাল করে জেনে নাও, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ইবাদাতের যোগ্য নয়। নিজের ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো।”
আপনি যদি আরবী না জানেন তবে কোন আরবী জানা লোকের সাহায্য নিয়ে আয়াতটি একবার আরবীতে পড়ে দেখুন, দেখবেন আয়াতটির শুরু কিংবা শেষ কোথাও নবী বা রসূল শব্দটি নেই। নবীর উপর কোরআন নাযিল হয়েছিল আমাদের হেদায়েতের জন্য, নবীর হেদায়েতের জন্য নয়। আয়াতটিতে আমাদেরকেই বলা হচ্ছে যে, নেই কোন ইলাহ আল্লাহ ব্যতীত এবং নিজের অপরাধের জন্য ক্ষমা চাও। যিনি জেনে শুনেই পৃথিবীতে প্রচার করতে আসলেন যে, ’আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই’ তাঁকেই কিনা আবার বলা হচ্ছে যে, ’ভাল করে জেনে নাও, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ইবাদাতের যোগ্য নয়’! আরো উদাহরণ দেয়া যেত পাছে আবার ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যায়! অনুবাদের যদি এই হাল হয় তো তাঁর বাকি কর্মের কী হাল হবে তা সহজেই অনুমেয়। শুনেছি তাঁর গায়েবানা জানাজার নামায পবিত্র কাবাতে পড়া হয়েছিল। পবিত্র কাবা আরবে অবস্থিত আর আরবের লোকদের বর্তমান অবস্থা আগেই উল্লেখ করেছি। এবার বুঝে নিন মাওলানা মওদুদী আসলে কোন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।

জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও ’ইসলাম’ নামটিকে পুঁজি করে আরো অনেক দল এদেশে আছে তাদের মধ্যে কেউ নেমেছে ইসলামকে হেফাজত করতে (কোরআন বলেছে ইসলামে প্রবেশ করে নিজেকে হেফাজত করতে), কেউ নেমেছে ইসলামি শাসনতন্ত্র কায়েম করতে, কেউ নেমেছে খেলাফত কায়েম করতে ইত্যাদি। সবাই আছে ইসলাম বাঁচানো আর ইসলাম কায়েমের তালে কিন্তু নিজেকে যে আগে বাঁচাতে হবে যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি, নষ্টামি আর লোভ-লালসা হতে এ শিক্ষা কারো মাঝে নেই। থাকলে তারা নিজেদের মাঝে হানাহানিতে লিপ্ত হতো না, লিপ্ত হতো না সামান্য গদির লোভে নারীর আঁচলের নীচে নিজেদের সঁপে দিতে।

সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর যুগে মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য খ্রিস্টানরা তাদের নিজেদের দলের লোকদের আরবী শিক্ষায় শিক্ষিত করে মুসলমানদের মসজিদে ইমাম হিসেবে পাঠাত। চিন্তা করুন, মসজিদের ইমামতি করছে অথচ আদতে খ্রিস্টান। এবার দৃষ্টি দিন বর্তমানকার তালেবান, আল কায়েদা কিংবা আইএসআইএসদের দিকে। মনে হবে যেন ইসলাম কায়েম করে ফেলছে অথচ আদতে ইহুদী-খ্রিস্টানদের পোষ্যপুত্র। অমুক মসজিদের ইমাম, বিখ্যাত আলেমেদ্বীন, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কোরআন ইত্যকার বিশেষণ শুনে এত উৎসাহিত হওয়ার কিছু নেই। আগে যাচাই করে দেখুন আদতে তারা কোন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করছে।

ইসলাম পূর্ব যুগে ’আবু জেহেল’ (অর্থ মূর্খের বাবা)-এর নাম ছিল ’আবু হাকাম’ অর্থাৎ জ্ঞানের বাবা (তার আসল নাম আমর ইবনে হিশাম)। ইসলামের নবী সত্য প্রচারে নেমে সত্যটিকে অর্থাৎ ঈমান ও ইসলামের বাস্তবতা প্রমাণ সহকারে দেখিয়ে দিলেন তখন কথিত ’জ্ঞানের বাবার’ জ্ঞান যখন ধরা খেয়ে তার এতদিনের ’আবু হাকাম’ গদি যায় যায় অবস্থা ওই সময় থেকেই ’আবু হাকাম’ ইসলাম বিরোধীতায় নেমে গেল সত্য জানার পরও। মনে রাখা উচিত জ্ঞান সত্যের অনুগামী, সত্য যেখানে জ্ঞানও সেখানে। ’জ্ঞানের বাবা’ সত্যের বিরোধীতা করলে তাকে তো তখন মূর্খের বাবা নামেই ডাকতে হয়। কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য একটাই আর তা হল বিজ্ঞান যেরূপ প্রমাণে বিশ্বাসী তদ্রুপ ’ইসলাম’ও। যারা ’ইসলামকে’ আউল-ফাউলদের মত কতগুলো অন্ধবিশ্বাসের যপতপ মার্কা সৈনিকদের মত পাঁচ ওয়াক্ত লেফট-রাইট ধর্ম বলে প্রচার করতে চায় এখনো সময় আছে তাদের উচিত নিজেকে শোধরিয়ে আগে ঈমান অর্জন করা।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৪৭

আবু আফিয়া বলেছেন: ইসলামে বিভিন্ন দল,মত থাকবে, যা রসূলে করীম (স.) বলেছেন, [‘বনি ইসরাইলী ৭২ ফেরকায় বিভক্ত হয়েছিল, আমার উম্মত ৭৩ ফেরকায় বিভক্ত হবে। তাদের প্রত্যেকেই জাহান্নামে যাবে কেবল মাত্র একটি ফেরকা ছাড়া। সাহাবারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেই একটি ফেরকা কোনটি? তিনি (সা.) বললেন, আমি এবং আমার সাহাবারা যে পথে আছি, সেই পথে যেই ফেরকা থাকবে।’ (তিরমিযি, কিতাবুল ইমান)।] আর আল্লাহ চাইলে সবাইকে একই করে সৃষ্টি করতেন কিন্তু তা তিনি করেন নি। নিচের লেখাটুকু পড়লে হয়তো আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। আসলে কারা সঠিক।
কে মুসলমান আর কে মুসলমান নয় এ নিয়ে দেখা যায় এক ধরনের আলেম-ওলামা বিভিন্ন স্থানে মহাসম্মেলনের আহ্বান করেন আর শেষে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে দ্বিধা করেন না তারা। প্রকৃত মুসলমান হিসেবে সবাই নিজেকে দাবি করেন আর যে দলের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত, সেই ফেরকাকেই একমাত্র মুক্তিপ্রাপ্ত বলে বিশ্বাস করেন। আমরা দেখতে পাই, মুসলমানদের ভেতরই অনেক ফেরকা রয়েছে, তারা সবাই নিজদের শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করে থাকেন। সবাই শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রকৃত উম্মত হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করেন। অথচ যে শিক্ষা নিয়ে বিশ্বনবী রাহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মোহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে এসেছিলেন, সেই শিক্ষার অনুসরণ করে থাকেন এমন কোনো ফেরকা রয়েছে? মহানবী (সা.) কর্তৃক প্রদত্ত শিক্ষা মোতাবেক যদি কোনো ফেরকা তাদের কার্যক্রম চালায়, তাহলে তাদেরই প্রকৃত মুসলমান বলা যেতে পারে। শতধাবিভক্ত মুসলমান ফেরকাগুলোর মধ্যে আজ আমরা দেখতে পাই শুধু নামেই মুসলমান, কার্যত মুসলমানের কোনো লক্ষণ তাদের মধ্যে প্রকাশিত হয় না। এমন কি অপকর্ম বাদ আছে, যা তাদের মাধ্যমে সংঘটিত হচ্ছে না? মুসলমান হয়ে সব ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে, কোরআন-হাদিসের শিক্ষা ভুলে গিয়ে যা ইচ্ছে তা-ই করছে।

অথচ ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম আর এ শান্তির ধর্মের অনুসারী হয়েও সমাজে কতই না অশান্তি সৃষ্টি করছে। শত ফেরকার মধ্যে একটি মাত্র ফেরকা জান্নাতি বা মুক্তিপ্রাপ্ত হবে ঠিকই, এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই দলটি কারা? এই মুক্তিপ্রাপ্ত দল কি তারা, যারা মানুষকে কষ্ট দেয়? রাষ্ট্রীয়ভাবে কাউকে অমুসলমানের দাবি জানিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে? যারা অপর দলের মসজিদ ও সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে নেয় তারা? না যারা বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে, তারা মুক্তিপ্রাপ্ত? মোটেও এরা মুক্তিপ্রাপ্ত হতে পারে না। কেননা মুক্তিপ্রাপ্ত ফেরকা সম্পর্কে হজরত রাসুল করিম (সা.) বলেছেন, ‘বনি ইসরাইলী ৭২ ফেরকায় বিভক্ত হয়েছিল, আমার উম্মত ৭৩ ফেরকায় বিভক্ত হবে। তাদের প্রত্যেকেই জাহান্নামে যাবে কেবল মাত্র একটি ফেরকা ছাড়া। সাহাবারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেই একটি ফেরকা কোনটি? তিনি (সা.) বললেন, আমি এবং আমার সাহাবারা যে পথে আছি, সেই পথে যেই ফেরকা থাকবে।’ (তিরমিযি, কিতাবুল ইমান)। হজরত রাসুল করিম (সা.)-এর মুখনিঃসৃত বাণী আজ অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হয়েছে। ইসলাম আজ অনেক দলে বিভক্ত হয়েছে আর প্রত্যেক দলের দাবি তারাই কেবল জান্নাতি এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দল। আর প্রত্যেক দলই অন্য দলকে মিথ্যা মনে করে কাফের আখ্যা দিয়ে রেখেছে। এভাবে দেখা যায় সব দলই কাফের হয়ে বসে আছে। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, সবাই যদি কাফের হয়ে থাকে, তাহলে মুসলমান কে? ইতিহাস পাঠে জানা যায়, শাহ ওয়ালিউল্লাহ মোহাদ্দেছ দেহলবি এ দেশে সর্বপ্রথম ফার্সিতে কোরআন অনুবাদ করে তৎকালীন মৌলবাদ কর্তৃক কুফরি ফতোয়ায় ভূষিত হয়েছিলেন। আমরা এখন দেখব কোন দল কাকে কাফের বা অমুসলমান বলে আখ্যা দিয়ে রেখেছেন, তার কয়েকটি নমুনা।

বেরেলভি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দেওবন্দির ফতোয়া : যে ব্যক্তি আল্লাহ জাল্লা শানুহু ছাড়া অন্য কাউকে আলেমুল গায়েব বলে সাব্যস্ত করে আর আল্লাহর সমপর্যায়ে অন্য কারো জ্ঞান আছে বলে বিশ্বাস করে, সে নিঃসন্দেহে কাফের। তার ইমামতি, তার সঙ্গে মেলামেশা, তার প্রতি সৌহার্দ্য প্রকাশ সব হারাম। (আল্লামা রশিদ আহমদ গাঙ্গোহি প্রণিত ফতোয়ায়ে রশিদিয়া কামেল : পৃষ্ঠা ৩২, প্রকাশক মুহাম্মদ সাইদ, ১৮৪৩-১৮৮৪)

শিয়াদের বিরুদ্ধে দেওবন্দি আলেমদের ফতোয়া : শিয়ারা কেবল মুরতাদ, কাফের আর ইসলামবহির্ভূতই নয় বরং তারা ইসলাম এবং মুসলমানদের এমন শত্রু, যা অন্যান্য সম্প্রদায়ে কম পাওয়া যাবে। মুসলমানদের এ ধরনের লোকদের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছেদ করা উচিত। বিশেষ করে বিয়েশাদির ব্যাপারে। (মৌলানা মুহাম্মদ আবদুশ শাকুর লাক্ষেèৗ থেকে প্রকাশিত ফতোয়া ১৩৪৮ হিজরি সন)

আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ফতোয়া : সত্তরজন দেওবন্দি আলেম কর্তৃক স্বাক্ষরিত ফতোয়া জারি করে তাতে আহলে হাদিস সম্প্রদায়কে কাফের ফতোয়া দেয় এবং বলে যে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা, তাদের মসজিদে প্রবেশ করতে দেওয়া শরিয়ত অনুযায়ী নিষিদ্ধ এবং ধর্মের জন্য ফেতনা ও ভয়ের কারণ। (বিজ্ঞাপন, আবু আলাই ইলেকট্রিক প্রেস, আগ্রা থেকে প্রকাশিত)।

জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে ফতোয়া : মওদুদীর লেখা বইপুস্তকের উদ্ধৃতি দেখে প্রতীয়মান হয়, সমস্ত ইমাম এবং সম্মানিত সব নবীর শান ও মর্যাদার বিরুদ্ধে ধৃষ্টতা ও অবমাননায় ভরপুর। তিনি যে নিজে পথভ্রষ্ট ও অপরকে পথভ্রষ্টকারী এতে কোনো সন্দেহ নেই। হুজুর (সা.) বলেছেন, প্রকৃত দাজ্জালের আগমনের আগে আরো ৩০ জন দাজ্জাল জন্ম নেবে। যারা আসল দাজ্জালের পথ সুগম করবে। আমার জ্ঞান ও ধারণা মতে সেই ৩০ দাজ্জালের মধ্যে একজন হলো মওদুদী। (মৌলানা মুহাম্মদ সাদেক, মোহতামিম, মাদরাসা মাজহারুল উলুম, করাচি প্রদত্ব ফতোয়া, ২৮ জিলহজ ১৩৭১ হিজরি)।

বর্তমান যুগের মুসলমানদের সম্পর্কে মওদুদীর মন্তব্য : আহলে হাদিস, হানাফি, দেওবন্দি, বেরেলবি, শিয়া সুন্নি প্রভৃতি ফেরকা জাহেলিয়াতের উৎপাদন। (খোতবা সপ্তম সংস্করণ-৭৬ পৃষ্ঠা) তিনি জন্মগত মুসলমানদের আহলে কিতাব বা ইহুদি খ্রিস্টানের অনুরূপ বলে উল্লেখ করেছেন। (সিয়ামি কশমকশ, তৃতীয় খ-, ১৩৩ পৃষ্ঠা) তিনি তার জামায়াত থেকে বের হয়ে যাওয়ার অর্থ জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া বলেছেন। (রোয়েদাদ জামায়াতে ইসলামী, প্রথম সংস্করণ, পৃষ্ঠা ৮)।

জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে সুন্নি আলেমদের ফতোয়া : মওদুদীর জামায়াত একটি গোমরাহ জামায়াত। এদের আকায়েদ আহলে সুন্নত জামায়াত ও কোরআনের এবং হাদিসের খেলাফ। (মৌলানা হোসেন আহমদ মদনি) আরো বলা হয়েছে, মওদুদীপন্থিদের পেছনে নামাজ পড়া মাকরুহ তাহরিমা। (মৌলানা মাহদী হাছান, মুফতি দেওবন্দ, এ ব্যাপরে আরো দুই হাজার আলেমের দস্তখত আছে, দেখুন মওদুদী জামায়াতের স্বরূপ পুস্তিকায়)।

মোকাল্লেদদের বিরুদ্ধে আহলে হাদিসদের ফতোয়া : চারি ইমামের অনুসারী চারি তরিকার হানাফি, মালেকি, শাফেয়ি, হাম্বলি এবং চিশতিয়া, কাদেরিয়া, নকশবন্দিয়া, মোজাদ্দেদিয়া প্রভৃতি লোক মুশরেক ও কাফের। (মজমুয়া ফতোয়া, পৃষ্ঠা ৫৪-৫৫)।

সুন্নিদের বিরুদ্ধে ফতোয়া : আহমদ রেজা খান বেরেলভি এবং তার অনুচর সবাই কাফের। যে তাদের কাফের বলবে না সেও কাফের, যে তাদের কাফের বলে সন্দেহ করে সেও কাফের। (রদ্দুত তফসির, পৃষ্ঠা ১১)। আরো উল্লেখ আছে, গয়ের মোকাল্লেদের চিহ্ন হলো জোরে আমিন বলা, রাফেইয়াদাইন করা, নামাজে বুকের ওপর হাত বাঁধা, ইমামদের পেছনে আলহামদু পড়া, এহেন ব্যক্তিরা সুন্নত জামায়াত থেকে খারিজ এবং রাফেজি প্রভৃতি গোমরাহ ফেরকার সমতুল্য। (জামেউশ শাওয়াহিদ ফি ইখরাজিল ওহাতীনা আনিল মসজিদ)।

আহমদিদের বিরুদ্ধে ফতোয়া : আল্লামা লুধিয়ানি বলেন, আহমদিয়া জামাত মুরতাদ সুতরাং তিন দিনের সুযোগ দিয়ে তাদের হত্যার অবকাশ আছে। আহমদিয়া জামাত যিন্দিক। সুতরাং কোনো সুযোগ না দিয়েই তাদের হত্যা করা যেতে পারে। (পুস্তক-কাদিয়ানি এবং অন্য কাফিরদের মধ্যে পার্থক্য)।

দেখা যায়, প্রায় সব ফেরকার বিরুদ্ধেই কুফরি ফতোয়ার সার্টিফিকেট রয়েছে। এতে স্পষ্ট হয়, বর্তমান আর কেউ প্রকৃত মুসলমান নেই, নাউজুবিল্লাহ। সবাই যদি কাফের হয়ে থাকে তাহলে কে মুসলমান এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দল কোনটি যার কথা হজরত রাসুল করিম (সা.) উল্লেখ করেছেন। যতই ফতোয়া দিক না কেন অবশ্যই প্রকৃত ইসলামের অনুসারী আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে, কারণ ইসলামই আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম (সুরা আলে ইমরান)। এখন আমাদের নিজেদের দায়িত্ব, কোন দলটি সঠিক তা বের করা। কারা পবিত্র কোরআন ও হাদিস মোতাবেক পরিচালিত, কাদের মাঝে হজরত রাসুল করিম (সা.)-এর আদর্শ আজও প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, কোন দলে তার সাহাবিদের আদর্শ পাওয়া যায়, কোন দলের মধ্যে একক ঐশী নেতা বা খলিফা বিদ্যমান রয়েছে, যারা তার কথার ওপর পরিপূর্ণ আমল করে, কোন ফেরকার মাঝে বায়তুল মাল রয়েছে, কোন ফেরকার অনুসারীরা সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে না, কারা অর্থের বিনিময়ে ওয়াজ মাহফিল করে না। অতএব অযথা কোনো ফেরকাকে অমুসলমান আখ্যায়িত করার পূর্বে আমাদের গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে তাদের মাঝে এই বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান কি না? এই বৈশিষ্ট্যগুলো যদি আজ কোন ফেরকা বা ইসলামী দলের মাঝে পাওয়া যায়, তাহলে তাদেরই প্রকৃত ইসলামী দল বলা যেতে পারে।
কে মুসলমান আর কে মুসলমান নয় এ নিয়ে দেখা যায় এক ধরনের আলেম-ওলামা বিভিন্ন স্থানে মহাসম্মেলনের আহ্বান করেন আর শেষে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে দ্বিধা করেন না তারা। প্রকৃত মুসলমান হিসেবে সবাই নিজেকে দাবি করেন আর যে দলের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত, সেই ফেরকাকেই একমাত্র মুক্তিপ্রাপ্ত বলে বিশ্বাস করেন। আমরা দেখতে পাই, মুসলমানদের ভেতরই অনেক ফেরকা রয়েছে, তারা সবাই নিজদের শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করে থাকেন। সবাই শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রকৃত উম্মত হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করেন। অথচ যে শিক্ষা নিয়ে বিশ্বনবী রাহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মোহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে এসেছিলেন, সেই শিক্ষার অনুসরণ করে থাকেন এমন কোনো ফেরকা রয়েছে? মহানবী (সা.) কর্তৃক প্রদত্ত শিক্ষা মোতাবেক যদি কোনো ফেরকা তাদের কার্যক্রম চালায়, তাহলে তাদেরই প্রকৃত মুসলমান বলা যেতে পারে। শতধাবিভক্ত মুসলমান ফেরকাগুলোর মধ্যে আজ আমরা দেখতে পাই শুধু নামেই মুসলমান, কার্যত মুসলমানের কোনো লক্ষণ তাদের মধ্যে প্রকাশিত হয় না। এমন কি অপকর্ম বাদ আছে, যা তাদের মাধ্যমে সংঘটিত হচ্ছে না? মুসলমান হয়ে সব ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে, কোরআন-হাদিসের শিক্ষা ভুলে গিয়ে যা ইচ্ছে তা-ই করছে।

অথচ ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম আর এ শান্তির ধর্মের অনুসারী হয়েও সমাজে কতই না অশান্তি সৃষ্টি করছে। শত ফেরকার মধ্যে একটি মাত্র ফেরকা জান্নাতি বা মুক্তিপ্রাপ্ত হবে ঠিকই, এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই দলটি কারা? এই মুক্তিপ্রাপ্ত দল কি তারা, যারা মানুষকে কষ্ট দেয়? রাষ্ট্রীয়ভাবে কাউকে অমুসলমানের দাবি জানিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে? যারা অপর দলের মসজিদ ও সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে নেয় তারা? না যারা বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে, তারা মুক্তিপ্রাপ্ত? মোটেও এরা মুক্তিপ্রাপ্ত হতে পারে না। কেননা মুক্তিপ্রাপ্ত ফেরকা সম্পর্কে হজরত রাসুল করিম (সা.) বলেছেন, ‘বনি ইসরাইলী ৭২ ফেরকায় বিভক্ত হয়েছিল, আমার উম্মত ৭৩ ফেরকায় বিভক্ত হবে। তাদের প্রত্যেকেই জাহান্নামে যাবে কেবল মাত্র একটি ফেরকা ছাড়া। সাহাবারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেই একটি ফেরকা কোনটি? তিনি (সা.) বললেন, আমি এবং আমার সাহাবারা যে পথে আছি, সেই পথে যেই ফেরকা থাকবে।’ (তিরমিযি, কিতাবুল ইমান)। হজরত রাসুল করিম (সা.)-এর মুখনিঃসৃত বাণী আজ অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হয়েছে। ইসলাম আজ অনেক দলে বিভক্ত হয়েছে আর প্রত্যেক দলের দাবি তারাই কেবল জান্নাতি এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দল। আর প্রত্যেক দলই অন্য দলকে মিথ্যা মনে করে কাফের আখ্যা দিয়ে রেখেছে। এভাবে দেখা যায় সব দলই কাফের হয়ে বসে আছে। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, সবাই যদি কাফের হয়ে থাকে, তাহলে মুসলমান কে? ইতিহাস পাঠে জানা যায়, শাহ ওয়ালিউল্লাহ মোহাদ্দেছ দেহলবি এ দেশে সর্বপ্রথম ফার্সিতে কোরআন অনুবাদ করে তৎকালীন মৌলবাদ কর্তৃক কুফরি ফতোয়ায় ভূষিত হয়েছিলেন। আমরা এখন দেখব কোন দল কাকে কাফের বা অমুসলমান বলে আখ্যা দিয়ে রেখেছেন, তার কয়েকটি নমুনা।

বেরেলভি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দেওবন্দির ফতোয়া : যে ব্যক্তি আল্লাহ জাল্লা শানুহু ছাড়া অন্য কাউকে আলেমুল গায়েব বলে সাব্যস্ত করে আর আল্লাহর সমপর্যায়ে অন্য কারো জ্ঞান আছে বলে বিশ্বাস করে, সে নিঃসন্দেহে কাফের। তার ইমামতি, তার সঙ্গে মেলামেশা, তার প্রতি সৌহার্দ্য প্রকাশ সব হারাম। (আল্লামা রশিদ আহমদ গাঙ্গোহি প্রণিত ফতোয়ায়ে রশিদিয়া কামেল : পৃষ্ঠা ৩২, প্রকাশক মুহাম্মদ সাইদ, ১৮৪৩-১৮৮৪)

শিয়াদের বিরুদ্ধে দেওবন্দি আলেমদের ফতোয়া : শিয়ারা কেবল মুরতাদ, কাফের আর ইসলামবহির্ভূতই নয় বরং তারা ইসলাম এবং মুসলমানদের এমন শত্রু, যা অন্যান্য সম্প্রদায়ে কম পাওয়া যাবে। মুসলমানদের এ ধরনের লোকদের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছেদ করা উচিত। বিশেষ করে বিয়েশাদির ব্যাপারে। (মৌলানা মুহাম্মদ আবদুশ শাকুর লাক্ষেèৗ থেকে প্রকাশিত ফতোয়া ১৩৪৮ হিজরি সন)

আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ফতোয়া : সত্তরজন দেওবন্দি আলেম কর্তৃক স্বাক্ষরিত ফতোয়া জারি করে তাতে আহলে হাদিস সম্প্রদায়কে কাফের ফতোয়া দেয় এবং বলে যে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা, তাদের মসজিদে প্রবেশ করতে দেওয়া শরিয়ত অনুযায়ী নিষিদ্ধ এবং ধর্মের জন্য ফেতনা ও ভয়ের কারণ। (বিজ্ঞাপন, আবু আলাই ইলেকট্রিক প্রেস, আগ্রা থেকে প্রকাশিত)।

জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে ফতোয়া : মওদুদীর লেখা বইপুস্তকের উদ্ধৃতি দেখে প্রতীয়মান হয়, সমস্ত ইমাম এবং সম্মানিত সব নবীর শান ও মর্যাদার বিরুদ্ধে ধৃষ্টতা ও অবমাননায় ভরপুর। তিনি যে নিজে পথভ্রষ্ট ও অপরকে পথভ্রষ্টকারী এতে কোনো সন্দেহ নেই। হুজুর (সা.) বলেছেন, প্রকৃত দাজ্জালের আগমনের আগে আরো ৩০ জন দাজ্জাল জন্ম নেবে। যারা আসল দাজ্জালের পথ সুগম করবে। আমার জ্ঞান ও ধারণা মতে সেই ৩০ দাজ্জালের মধ্যে একজন হলো মওদুদী। (মৌলানা মুহাম্মদ সাদেক, মোহতামিম, মাদরাসা মাজহারুল উলুম, করাচি প্রদত্ব ফতোয়া, ২৮ জিলহজ ১৩৭১ হিজরি)।

বর্তমান যুগের মুসলমানদের সম্পর্কে মওদুদীর মন্তব্য : আহলে হাদিস, হানাফি, দেওবন্দি, বেরেলবি, শিয়া সুন্নি প্রভৃতি ফেরকা জাহেলিয়াতের উৎপাদন। (খোতবা সপ্তম সংস্করণ-৭৬ পৃষ্ঠা) তিনি জন্মগত মুসলমানদের আহলে কিতাব বা ইহুদি খ্রিস্টানের অনুরূপ বলে উল্লেখ করেছেন। (সিয়ামি কশমকশ, তৃতীয় খ-, ১৩৩ পৃষ্ঠা) তিনি তার জামায়াত থেকে বের হয়ে যাওয়ার অর্থ জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া বলেছেন। (রোয়েদাদ জামায়াতে ইসলামী, প্রথম সংস্করণ, পৃষ্ঠা ৮)।

জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে সুন্নি আলেমদের ফতোয়া : মওদুদীর জামায়াত একটি গোমরাহ জামায়াত। এদের আকায়েদ আহলে সুন্নত জামায়াত ও কোরআনের এবং হাদিসের খেলাফ। (মৌলানা হোসেন আহমদ মদনি) আরো বলা হয়েছে, মওদুদীপন্থিদের পেছনে নামাজ পড়া মাকরুহ তাহরিমা। (মৌলানা মাহদী হাছান, মুফতি দেওবন্দ, এ ব্যাপরে আরো দুই হাজার আলেমের দস্তখত আছে, দেখুন মওদুদী জামায়াতের স্বরূপ পুস্তিকায়)।

মোকাল্লেদদের বিরুদ্ধে আহলে হাদিসদের ফতোয়া : চারি ইমামের অনুসারী চারি তরিকার হানাফি, মালেকি, শাফেয়ি, হাম্বলি এবং চিশতিয়া, কাদেরিয়া, নকশবন্দিয়া, মোজাদ্দেদিয়া প্রভৃতি লোক মুশরেক ও কাফের। (মজমুয়া ফতোয়া, পৃষ্ঠা ৫৪-৫৫)।

সুন্নিদের বিরুদ্ধে ফতোয়া : আহমদ রেজা খান বেরেলভি এবং তার অনুচর সবাই কাফের। যে তাদের কাফের বলবে না সেও কাফের, যে তাদের কাফের বলে সন্দেহ করে সেও কাফের। (রদ্দুত তফসির, পৃষ্ঠা ১১)। আরো উল্লেখ আছে, গয়ের মোকাল্লেদের চিহ্ন হলো জোরে আমিন বলা, রাফেইয়াদাইন করা, নামাজে বুকের ওপর হাত বাঁধা, ইমামদের পেছনে আলহামদু পড়া, এহেন ব্যক্তিরা সুন্নত জামায়াত থেকে খারিজ এবং রাফেজি প্রভৃতি গোমরাহ ফেরকার সমতুল্য। (জামেউশ শাওয়াহিদ ফি ইখরাজিল ওহাতীনা আনিল মসজিদ)।

আহমদিদের বিরুদ্ধে ফতোয়া : আল্লামা লুধিয়ানি বলেন, আহমদিয়া জামাত মুরতাদ সুতরাং তিন দিনের সুযোগ দিয়ে তাদের হত্যার অবকাশ আছে। আহমদিয়া জামাত যিন্দিক। সুতরাং কোনো সুযোগ না দিয়েই তাদের হত্যা করা যেতে পারে। (পুস্তক-কাদিয়ানি এবং অন্য কাফিরদের মধ্যে পার্থক্য)।

দেখা যায়, প্রায় সব ফেরকার বিরুদ্ধেই কুফরি ফতোয়ার সার্টিফিকেট রয়েছে। এতে স্পষ্ট হয়, বর্তমান আর কেউ প্রকৃত মুসলমান নেই, নাউজুবিল্লাহ। সবাই যদি কাফের হয়ে থাকে তাহলে কে মুসলমান এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দল কোনটি যার কথা হজরত রাসুল করিম (সা.) উল্লেখ করেছেন। যতই ফতোয়া দিক না কেন অবশ্যই প্রকৃত ইসলামের অনুসারী আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে, কারণ ইসলামই আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম (সুরা আলে ইমরান)। এখন আমাদের নিজেদের দায়িত্ব, কোন দলটি সঠিক তা বের করা। কারা পবিত্র কোরআন ও হাদিস মোতাবেক পরিচালিত, কাদের মাঝে হজরত রাসুল করিম (সা.)-এর আদর্শ আজও প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, কোন দলে তার সাহাবিদের আদর্শ পাওয়া যায়, কোন দলের মধ্যে একক ঐশী নেতা বা খলিফা বিদ্যমান রয়েছে, যারা তার কথার ওপর পরিপূর্ণ আমল করে, কোন ফেরকার মাঝে বায়তুল মাল রয়েছে, কোন ফেরকার অনুসারীরা সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে না, কারা অর্থের বিনিময়ে ওয়াজ মাহফিল করে না। অতএব অযথা কোনো ফেরকাকে অমুসলমান আখ্যায়িত করার পূর্বে আমাদের গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে তাদের মাঝে এই বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান কি না? এই বৈশিষ্ট্যগুলো যদি আজ কোন ফেরকা বা ইসলামী দলের মাঝে পাওয়া যায়, তাহলে তাদেরই প্রকৃত ইসলামী দল বলা যেতে পারে।
পরিশেষে ..
কেউ যদি কলেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ পাঠ করে তাহলে তাকে কেউ অমুসলমান আখ্যায়ীত করতে পারে না। আর মহানবী (সা) বলেছেন ‘মুসলমান সে যার হাত ও মুখ থেকে অন্যরা নিরাপদ ‘ (বুখারি ও মুসলিম) তাই যদি কেউ মুসলমান দাবি করে অন্যায় কাজ করে তাহলে সে নিজেই ইসলাম থেকে দূরে সরে যায়।
আইসিস আর যে দলই বলুন না কেন তাদের হাত ও মুখ থেকে যদি অন্যরা নিরাপদ না থাকে তাহলে সে নিজেকে যতই ইসলামের অনুসারী বলুক না কেন আল্লাহর কাছে তার কোন মূল্য নেই, সে সন্ত্রাসী।

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৩০

আরমান আরজু বলেছেন: আপনি বলেছেন, "এখন আমাদের নিজেদের দায়িত্ব, কোন দলটি সঠিক তা বের করা। কারা পবিত্র কোরআন ও হাদিস মোতাবেক পরিচালিত, কাদের মাঝে হজরত রাসুল করিম (সা.)-এর আদর্শ আজও প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, কোন দলে তার সাহাবিদের আদর্শ পাওয়া যায়, কোন দলের মধ্যে একক ঐশী নেতা বা খলিফা বিদ্যমান রয়েছে, যারা তার কথার ওপর পরিপূর্ণ আমল করে, কোন ফেরকার মাঝে বায়তুল মাল রয়েছে, কোন ফেরকার অনুসারীরা সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে না, কারা অর্থের বিনিময়ে ওয়াজ মাহফিল করে না। অতএব অযথা কোনো ফেরকাকে অমুসলমান আখ্যায়িত করার পূর্বে আমাদের গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে তাদের মাঝে এই বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান কি না? এই বৈশিষ্ট্যগুলো যদি আজ কোন ফেরকা বা ইসলামী দলের মাঝে পাওয়া যায়, তাহলে তাদেরই প্রকৃত ইসলামী দল বলা যেতে পারে।"
"প্রকৃত ইসলামী দল" এটা আবার কী! ইসলাম তো ইসলামই সেটা আবার প্রকৃত ইসলামী হতে হবে কেন? কোরআনে ইসলামের আগে পরে কোন বিশেষণ পেলাম না আর আপনি বলছেন 'প্রকৃত ইসলাম'। আবার বলছেন 'ইসলামী দল'! এটা আবার কী? রসূলের দল থাকতে পারে ইসলামের দল কীভাবে হয়? ’ইসলাম’ অর্থ আত্মসমর্পণ বা সমর্পিত হওয়া। ইসলামের আগে পরে কোন বিশেষণ যোগ করার অর্থই হল ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব। আমাদের উচিত আগে নিজেকে যাচাই করা যে মুসলমান হতে পেরেছি কিনা। কারণ নিজের কাছে আলো না থাকলে অপরকে পথ দেখানো যায় না।

২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৩০

যুক্তি না নিলে যুক্তি দাও বলেছেন: ধর্ম ব্যবসায়ীরা এই পোস্ট ভালো ভাবে নেবে না,কিছু একটা আখ্যা দিয়ে কেটে পড়বে। আচ্ছা ইসলামে যুক্তির কি কোন স্হান আছে কি নেই? জানালে প্রীত হবো।

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৮

আরমান আরজু বলেছেন: কে ভালো ভাবে নেবে কে নেবে না এতসব চিন্তা করতে গেলে সত্যের প্রচার হবে না। দেখতে হবে আগে নিজে সত্যের মধ্যে আছি কিনা। থাকলে প্রচার করতে হবে আর না থাকলে আগে সত্যকে খুঁজে নিজের ভেতর আত্মস্থ করে এরপর প্রচার। আপনি জানতে চেয়েছেন ইসলামে যুক্তির কোন স্হান আছে কিনা। কোন যুক্তি এবং কীসের যুক্তি জানালে ভাল হত।

৩| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:০৯

হাফিজ রাহমান বলেছেন: আবু আফিয়া এবং আপনার দু জনের লেখাই সময় নিয়ে পড়লাম। ভালো লাগলো বলা চলে। তবে বিনীতভাবে আপনাদের কাছে জানতে চাইবো, বর্তমানে কেই কি আছেন যে সঠিক দলে আছে ? আরেকটু পরিষ্কার করে বললে আপনাদের আদর্শের সাথে মিলে যায় এমন কেউ কি আছে আমাদের এ দেশে ? যদি জানান উপকৃত হবো।

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৫০

আরমান আরজু বলেছেন: লেখা পড়ে ভালো লাগলো জেনে আলহামদুলিল্লাহ। আরো ধন্যবাদ এজন্য যে আপনি জানতে চেয়েছেন বর্তমানে সঠিক দলে কেউ আছেন কিনা। যতদিন কোরআন আছে ততদিন সত্যও আছে। তবে পেতে হলে ঘর থেকে বের হতে হবে। ঘরের কোণে বসে ল্যাপ্টপ, স্মার্টফোনে সঠিক দল পাওয়া যায় না। যিনি আপনাকে আল্লাহ ও রসূল বাস্তবে চিনিয়ে দিতে পারবেন আপনার কল্ববে (অন্তরে) নূরের প্রবেশ ঘটিয়ে তিনিই সত্যবাদী। আর সত্য যখন আপনার অন্তরে প্রবেশ করবে তখন আপনি নিজেই বুঝবেন কোনটা পাপ আর কোনটা পুণ্য (ভেতর থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বলে দেবে)। অতএব খুঁজতে থাকুন, ইনশাআল্লাহ পেয়ে যাবেন। আর না পেলে এ অধম তো আছি।

৪| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:১৬

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: ইসলামের মূল কেন্দ্র থেকে সরে গিয়ে আমাদের আলেমসমাজ বিভিন্ন কোন্দল সৃষ্টি করছেন এবং কোরআন হাদিস নিজেদের মতো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে সাধারণ মুসলিমদের ফেসাদে জড়াতে বাধ্য করছেন।
সুন্দর আলোচনা।

৫| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:২২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুম। ভাল লাগল আলোচনা।

আহলে বায়াতকে ভুলিয়ে দিতে খিলাফত থেকে বর্তমান একই ভাবে চেষ্টা দৃশ্যমান।
চার খলিফার আহলে বাইতের সাথে দু:খজনক আচরণ যার পূর্নতা ইয়াজিদের হাতে কারবালায়!
যে ধারা আজো বহমান বহুরুপে, বহু ফিরকায়, বহু মতবাদে!

যারা আল্লাহ এবং রাসূল প্রেমিক, যাদের প্রতি হেদায়াত নাজিল হয় তারাই খূঁজে পায় ইসলাম।
হতে পারে মুসলিম। চেষ্টা করে মুমিনের পথ বেয়ে সর্বোচ্চ মোকামে আরোহনের- যতটুকু আল্লাহ কবুল করেন।

চলুক সত্যাহবান।

+++++

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৪৯

আরমান আরজু বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ।

৬| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:৫৮

সনেট কবি বলেছেন: মহানবি (সাঃ) মুনাফিকদের ইসলাম থেকে আলাদা বলেছেন। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তিন দল হয়েছেন সত্য তবে তাদের কোন দল কোন দলকে ইসলাম থেকে বের করে দেননি। খারেজীদেরকে হজরত আলী (রাঃ) তাঁর দল থেকে খারিজ বলেছেন, কিন্তু ইসলাম থেকে খারিজ বলেননি। হজরত মুয়াবিয়া (রাঃ) হজরত আলীর (রাঃ) উপর অভিসম্পাতের রেওয়াজ চালু করেছেন। তবে তাঁকে ইসলাম থেকে বের করে দেননি। ইমাম হোসেন (রাঃ) ইয়াজিদকে ইসলাম থেকে বের করে দেননি। সুতরাং সেই জামানার সবাইকে একদল না মেনে উপায় নেই। সেই সব খারেজী ইসলামে নেই যারা কোন সাহাবায়ে কেরামকে (রাঃ) কাফির ফতোয়া দেয়। সেই সব শীয়াও ইসলামে নেই যারা সাহাবায়ে কেরামকে (রাঃ) কাফির ফতোয়া দেয়। মহানবি (সাঃ) ও সব সাহাবায়ে কেরাম কে (রাঃ) যারা মান্য করার ঘোষণা দেয় তারা সঠিক। যে সব তাবেঈ (রঃ) সাহাবার (রাঃ) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তারাও সঠিক, কারণ তারা সেটা করেছে কোন না কোন সাহাবাকে (রাঃ) মানতে গিয়েই। তারা সাহাবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেও তাদেরকে (রাঃ) কাফির সাব্যস্ত করেনি। এ দিকে থেকে খারেজী ও শীয়া বেকায়দা পজিশনে রয়েছে।
তখন আমিও থাকলে হয়ত হজরত আলীর (রাঃ) দলে সামিল হতাম। তবে হজরত মুয়াবিয়া (রাঃ) ও আয়েশার (রাঃ) দলকে অশোভন কথা বলতাম না। কাজেই হাদিস অনুযায়ী যারা মহানবি (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) সম্পর্কে অশোভন ধারণা পোষণ করে ইসলামে তাদের স্থান দূর্বল বলেই মনে হয়।

৭| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:২২

রাজীব নুর বলেছেন: ধর্মীয় পোষ্ট গুলো আমি এড়িয়ে যাই। এই বিষয়ে আমার খুব পড়াশোনা নেই।
কিছু একটা মন্তব্য করে বেকায়দায় পড়তে চাই না।

৮| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৪৩

ভিন্নচিন্তা ভিন্নমত ভিন্নপথ বলেছেন: @ সনেট কবি- জনাব,শিয়ারা ইসলামে নেই বলে দিলেন। Wikipedia-তথ্য অনুসারে ২০০৯ সালের হিসাবমতে সারা
বিশ্বের মুসলিম জনসংখ্যার ১০-১৩% শিয়া মুসলিম। সেই হিসাবে
শিয়াদের সংখ্যা প্রায় ২০০ মিলিয়ন=২০ কোটির কাছাকাছি। শিয়াদের সংখ্যা ইরানে ৭ কোটি ৪০ লাখ-৭ কোটি ৮০ লাখ, পাকিস্তানে ১ কোটি ৭০ লাখ-২ কোটি ৬০ লাখ, ভারতে ১ কোটি ৭০ লাখ-২ কোটি ৬০ লাখ, ইরাকে ১ কোটি ৯০ লাখ-
২ কোটি ২০ লাখ,ইয়েমেনে ৮০ লাখ-১ কোটি,তুরস্কে ৭০ লাখ-১ কোটি ১০ লাখ,আফগানিস্তানে ৫০ লাখ-৭০ লাখ,সিরিয়ায় ৩০ লাখ-৪০ লাখ, সৌদী আরবে ২০-৪০ লাখ।
এখন এইসব কোটি কোটি অ-মুসলিম শিয়াদের ব্যাপারে আপনার ফয়সালা কি ? এদের কাফির ঘোষণা করে কতল করা উচিত ? হায় রে মুসলিম মিল্লাত ! কবিরাও ফতোয়া দেয়।

৯| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৪২

আবু আফিয়া বলেছেন: লেখক জানতে চেয়েছেন ‘প্রকৃত ইসলাম’ বলতে আমি কি বুঝাতে চেয়েছি, প্রকৃত বলতে সত্য, আসল, বিশুদ্ধ ইসলাম বুঝিয়েছি। ইসলাম সত্য ধর্ম কিন্তু এখন ইসলাম এত দলে বিভক্ত হয়েছে যে, প্রকৃত ইসলামের অনুসারী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যার যার মতে ইসলামের কথা বলছে। আপনি কি দেখছেন না মুসলমান হয়ে আমরা কোথায় গিয়ে সেজদা করছি? কার কাছ থেকে পানি পোড়া এনে মুক্তির জন্য ভক্ষণ করছি, টাকার বিনিময়ে দোয়া করিয়ে জান্নাতের টিকিট নিচ্ছি, এরা কি প্রকৃত মুসলমান?

এখন আমাদেরকে দেখতে হবে প্রকৃত ইসলামের অনুসারী জান্নাতী দল কারা। একটি দল যে জান্নাতি হবে মহানবী (সা) এর এই হাদিসটি নিয়ে আমিও অনেক গবেষণা করছিলাম। অনেক আলেমের সাথে কথাও বলেছিলাম, এরই মধ্যে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের একজন মাওলানা সাবেক ভাইসপ্রিন্সিপাল, জামেয়া আহমদিয়া বাংলাদেশ, শাহ মোহাম্মদ নুরুল আমীন- এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন: এ বিষয়ে হাদীস স্পষ্ট যে, আল্লাহর রসূল বলেছেন শেষ যুগে ৭৩দল হবে, ৭২ জাহান্নামী হবে আর একটি দল জান্নাতি।’
কিন্তু ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের সংসদে কাদিয়ানীদেরকে নট মুসলিম ঘোষণা করা হয় আর এর কয়েক দিনের মধ্যেই পাকিস্তানের একটি জাতীয় দৈনিকে আলেমদের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় আমরা ৭২দলের আলেমরা সবাই মিলে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দিলাম এবং তখন তারা এটাও ঘোষণা দিয়েছিল যে, ইসলামের ১৪শ বছরের ইতিহাসে এত বড় ইজমা আর কোন বিষয়ে হয়নি’।
কাদিয়ানী আলেম এই ঘটনার উল্লেখ করে আমাকে প্রশ্ন করলেন ‘আল্লাহর রসূল বলেছেন ৭২দল জাহান্নামী আর এক দল জান্নাতি হবে’। তারা অমুসলিম ঘোষণার মাধ্যমে একটি জাহান্নামী দল সনাক্ত করল, বাকী ৭১টি কোথায়? এটা তারা সনাক্ত করছেন না, করার প্রয়জনীয়তাও বোধ করছেন না। এর মানে সহজ, ৭২দল একদিকে আর এক দল অপর দিকে। এখন আপনিই বলেন আল্লাহর রসূল বলেছেন ৭২ দল হবে জাহান্নামী আর এক দল হবে জান্নাতি (সহি তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান)। এক দিকে ৭২দল আর অপর দিকে কাদিয়ানী তাহলে এখন কোনটি জান্নাতি, ৭২ না একদল?’
কাদিয়ানী আলেমের এই প্রশ্ন শুনে আমি হতভম্ব হয়ে যাই, এখন এই প্রশ্নের উত্তরে কি বলতে হবে আমাকে যদি আপনারা একটু সাহায্য করুন।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৪৮

আরমান আরজু বলেছেন: আপনি আবারো ভুল করলেন। বলেছেন, "প্রকৃত ইসলাম বলতে আমি কি বুঝাতে চেয়েছি, প্রকৃত বলতে সত্য, আসল, বিশুদ্ধ ইসলাম বুঝিয়েছি। ইসলাম সত্য ধর্ম কিন্তু এখন ইসলাম এত দলে বিভক্ত হয়েছে যে, প্রকৃত ইসলামের অনুসারী খুঁজে পাওয়া মুশকিল"।
কথা হল- সত্য, আসল, বিশুদ্ধ ইসলাম বলতে কিছু নেই। ইসলাম ইসলামই। 'প্রকৃত ইসলামের অনুসারী' না বলে বলা উচিত 'ইসলামের প্রকৃত অনুসারী'।
কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের একজন মাওলানা বললেন '৭২দলের আলেমরা সবাই মিলে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করে' আর আপনিও মন্ত্রমুগ্ধের মত বিশ্বাস করে ফেললেন! কে জান্নাতি আর কে জাহান্নামি এসব ফালতু চিন্তা বাদ দিয়ে আগে নিজেকে নিয়ে বসুন যে নিজে কোথায় আছেন। কোরআনে বারবার আহবান করা হয়েছে আগে নিজেকে চেনো, আগে নিজেকে বাঁচাও তারপর অন্যের চিন্তা। মৃত্যুর আগেই জেনে যেতে হবে আপনার অবস্থান কোথায়-জান্নাত না জাহান্নাম। কারো তোতাপাখি মার্কা বক্তব্য শুনে কিংবা বই আর ব্লগে ডুবে থেকে আজীবন বিভ্রান্তির সাগরে শুধুই সাঁতরাতে থাকবেন কূলের ঠিকানা পাবেন না।

১০| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৮

নাঈমুর রহমান আকাশ বলেছেন: ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.