নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জড়তার কাব্য শুনি, ক্লীব লিঙ্গ বলিয়া কিছু নাই

অ রণ্য

পুলকে পুলক আর সাদা দুধ, সাদা ঘর, মেঘের দোসরযে তুমি ঘুমিয়ে আছো, যেন ঘর ছেড়ে উড়ে গেছোআরব সাগর আর যাদু-কাঠি-ঘ্রাণগাগল, পাগল আমি রাত-দিন বসে টানিযাদুর ঝালর

অ রণ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

The Hunt- 2012, Thomas Vinterberg

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৩

ফরেন ল্যাংগুয়েজ ফিল্ম সবসময়-ই আমাকে ভীষণভাবে টানে, এবং গতানুগতিক ধারার হলিউডি সিনেমার চিরচেনা স্বাদ থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করে দারুণভাবে, এবং অধিকাংশ সময়-ই এইসব ফিল্মগুলো মেকিংয়ের প্রায় সবদিক দিয়েই তাদের উৎকর্ষতা ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে, আর দর্শকরাও গ্রহণ করেছে সানন্দে। হয়ত বিশ্ব-সিনেমায় একচ্ছত্রভাবে আধিপত্য করা হলিউডি ঘরানাকে ছাপিয়ে নিজেদের জন্য আলাদাভাবে জায়গা করে নেবার ও বিশ্ব-সিনেমায় নিজেদের সুপরিচিত করে তোলার বিশেষ তাগিদেই এইসব ফিল্মগুলো একদিকে যেমন উঠে এসেছে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা ও বিকাশ নিয়ে, তেমনি তারা নিজেরাও করে নিয়েছে নিজস্ব ঘরানা, সাম্পতিক সময়ে যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে ইরানী, কোরিয়ান অথবা তুর্কিস চলচ্চিত্র। ঠিক তেমন-ই একটি ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম ‘দ্য হান্ট’। ২০১২ সালে ডেনমার্কে মুক্তি পাওয়া এই মুভিটি দেখার পর থেকেই এটি নিয়ে লেখার তীব্র এক তাড়না অনুভব করছিলাম, কেন না ছবিটি আমাকে সাইকোলজিক্যালি এতটাই চমকে দিয়েছে যে, এমন একটি ফিল্ম আমাদের অবশ্যই দেখা উচিতে, যেখানে আমাদের চিরাচরিত বিশ্বাসের দরজায় নতুন করে আঘাত পড়ে, এবং কিছু তীব্র আলো বিরূপ বাস্তবতা থেকে ছিটকে এসে এমনভাবে চমকে দেয় যে, আমাদের আরেকবার ভাবতে বাধ্য করে, আর বিশ্বাসের যে চিরন্তন অনুষঙ্গগুলো মানুষের মনে ভঙ্গুর, তাকে একদিকে যেমন সুসংহত করে, তেমনি করে তোলে সংযত ও সচেতন। আলোচ্য চলচ্চিত্রটি তেমনই এক রুঢ় বাস্তবতার ভেতরে দিয়ে এগিয়েছে, যা নিয়ে আমরা আগে এভাবে ভাবতে পারিনি, এবং এটি দেখার পর দর্শকমাত্রই নতুন করে ভাবতে বাধ্য হবে, এবং আপনা-আপনি যেন নিজেকে করে তুলবে সচেতেন, আর এ জন্য সর্বাগ্রে যারা বিশেষ প্রশংসার দাবী রাখেন, তারা হলেন চলচ্চিত্রটির কাহিনীকার, ‘টোবিয়স লিন্ডহোলম’ ও ‘থমাস ভিটেনবার্গ’, যিনি আবার চলচ্চিত্রটি পরিচালনাও করেছেন, এবং ১৯৯৮ সাথে ‘দ্য সেলিব্রেশন’ চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে নিজেকে চিনিয়েছেন বিশ্ব পরিসরে। চিত্রনাট্যের মুন্সিয়ানা ও স্ব¦কীয়তা যেন ভিটেনবার্গের সহজাত, এবং দ্যহান্ট চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে তিনি আরেকবার তা প্রমাণ করলেন। একটি সাধারণ কাহিনীকে তিনি এমন এক অসাধারণ মাত্রা দিয়েছেন যে, তা বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠার জন্য ছিল সহজতর, অথচ স্বাভাবিক বাস্তবতার সমান্তরালে কাহিনী এমনভাবে এগিয়েছে যে, আমরা ভেতরে ভেতরে অসহায় ও অস্থির হয়ে উঠলেও সিনেমাটির কোনো ঘটনা বা বাস্তবতাকেই অতিরিক্ত ভাবতে ব্যর্থ হই, এবং পরিবর্তিত বিরূপ পরিস্থিতি বা বাস্তবতায় একাধারে যেমন কেন্দ্রীয় চরিত্রটির সাথে একাত্ম বোধ করি, তেমনি, বিপরীত অবস্থানে থাকা বালিকাটি, যে কিনা কাহিনীকে ছোট্ট একটি মিথ্যা দিয়ে ভিন্ন মাত্রায় উত্তীর্ণ করে, তাকেও ঘৃণা করতে পারি না, বরং তার জন্যও রয়ে যায় আমাদের সমান সহমর্মিতা। যদিও পুরো চলচ্চিত্রটি লুকাস চরিত্রে অভিনয় করা ‘ম্যাডস মিকেলসন’ একাই যেন টেনে নিয়ে গেছেন ১১৫মিনিট ধরে, তরাপরও ক্লারা নামের পাঁচ বছরের বালিকার চরিত্রে অভিনয় করা ‘এ্যানিকা ওয়েডারকপ’-এর ভূয়সী প্রশংসা না করে পারা যায় না, কেন না অতটুকু শিশু যে দক্ষতার সাথে তার চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছে তার জন্য আপন-আপনিই প্রশংসায় বরাদ্দ হয়ে যায়।



ভিটেনবার্গের নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে এটিই সর্বাধিক প্রশংসিত, যা কিনা ইতিমধ্যেই দ্য সেলিব্রেশনের মতো টপ-২৫০-এর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে, এবং বলা যেতে পারে এখন অব্দি তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ। সিনেমাটি ইতিমধ্যেই বাফটা এ্যাওয়ার্ড নমিনেশনসহ, কানস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ইউরোপিয়ান ফিল্ম এ্যাওয়ার্ড, লন্ডন ক্রিটিক সার্কেল ফিল্ম এ্যাওয়ার্ড ইত্যাদিসহ জিতে নিয়েছে অন্যান্য ১১টি পুরস্কার ও অন্যান্য নমিনেশন। সিনেমাটির কাহিনী শুরু হয় ডেনমার্কের ছোট্ট একটি শহরে লুকাস নামের সদ্য ডিভোর্সড একজন কিন্ডারগার্ডেন স্কুল শিক্ষকের জীবনী দিয়ে, যে কিনা ব্যক্তিগত জীবনে নিঃসঙ্গ, এবং তার স্ত্রীর সাথে সন্তানের তত্ত্বাবধান নিয়ে চলমান বিবাদে দিন কাটাচ্ছে। চলচ্চিত্রটির প্রেক্ষাপটও নিবার্চন করা হয়েছে শরতের শেষ দিকে, যেখানে ঝরা পাতা ও তুষারপাতের আবহের মধ্যে এমন বিষাদময় বাস্তবতা যেন অধিক বিষাদময় হয়ে ধরা দিয়েছে দর্শকদের কাছে। প্রকৃতির ইফেক্ট সবসময়ই মানুষের মনে দারুণ প্রভাব বিস্তার করে, আর তা যদি কাহিনীর প্রয়োজনে হয়ে পড়ে যথার্থ, তখন প্রকৃতি বা দৃশ্যর এমন আবহ আরও বাঙময় করে তোলে চিত্রনাট্য, আর এখানেও পরিচালক যেন উঠে এসেছেন তার মুন্সিয়ানা নিয়ে।



একটি মিথ্যা যা হয়ে উঠতে পারে ভয়াবহ, যখন তা বলা হয় পাঁচ বছরের একটি শিশু দ্বারা, যে কিনা তার বাবার সবচেয়ে কাছের বন্ধু এবং স্কুল শিক্ষক লুকাসের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ে পড়ে এবং তাকে ভালবেসে ফেলে, এবং এক পর্যায়ে স্কুলে লুকাসের ঠোঁটে আচমকা চুমু খেয়ে বসে। লুকাস ব্যাপারটি অনুধাবণ করলে সচেতন শিক্ষক হিসেবে খুব স্বাভাবিকভাবে এড়িয়ে যায়, আর ক্লারা অমন একটি কাজের পরও তার থেকে বিশেষ কোনো গুরুত্ব না পেয়ে মনে মনে ক্রোধান্বিত হয়ে উঠে, এবং স্কুল প্রধানের কাছে লুকাসের নামে তাকে নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ করে। ব্যাপারটি স্কুল প্রধানের জন্য হয়ে উঠে বিব্রতকর। একদিকে স্কুলের সুনাম, অপরদিকে স্কুলের অপরাপর শিশু ও অভিভাবকগণের কথা ভেবে তিনি তা লুকিয়ে রাখতে চাইলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে খুব শীঘ্রই তা সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে, এবং ক্রমশঃ লুকাসের জীবন চরমভাবে দুর্বিষহ হয়ে উঠে। একে তো ক্লারা মাত্র পাঁচ বছরের বালিকা, আবার বন্ধু কন্যা, লুকাস যেন উভয় সংকটে পড়ে যায়, এবং আত্মপক্ষ সমর্থন করার আগেই সে দ্রুত সবার কাছে অপরাধী হিসেবে স্বীকৃত হয়ে পড়ে। ক্লারার বলা মিথ্যা সবাই খুব সহজেই বিশ্বাস করে, কেন না অতটুকু বালিকা মিথ্যা বলবে তা কারও মাথাতেই আসে না, তাও এমন একটি বিষয়ে, যা কেবল বয়োপ্রাপ্ত হলেই বোধে আসা সম্ভব, তাছাড়া আমরা সবাই সাধারণত এমনটাই বিশ্বাস করি যে, শিশুরা মিথ্যা বলে না। অথচ এমন একটি নিরীহ মিথ্যা খুব দ্রুত তার রূঢ় বাস্তবতা নিয়ে কেবল লুকাসের জীবন নয়, বরং তার সন্তান যে কিনা বাবার কাছে আসার জন্য অপেক্ষা করছিল, তার জীবনসহ, ক্লারার পরিবার, স্কুলের অন্যান্য শিশুদের পিতা-মাতার পরিবারসহ পুরো কমিউনিটি, এমন কী লুকাসের পরিচিত বন্ধু-বান্ধবদের জীবনেও বিরূপতা ডেকে আনে, যেখানে এমন একটি বাস্তবতা গ্রহণে সবাই অস্বস্তি বোধ করে, আবার লুকাসকেও তারা নির্দোষ ভাবতে ব্যর্থ হয়, কারণ মিথ্যাটি এসেছে একটি শিশুর মুখ থেকে, যা সত্য রূপেই ধরা দিয়েছে সবার কাছে। পুরো কমিউনিটিতে খুব জলদি লুকাস হয়ে উঠে ঘৃণ্য শয়তানের মতো, এবং তাকে প্রায় সবখানেই অপমানিত হতে হয়, এমন কী তাকে প্রহারও করা হয়। একজন মানুষের জীবনে অকস্মাৎ নেমে আসা বাস্তবতার বিরূপতা এই চলচ্চিত্রের পরতে পরতে এতটাই চমৎকারভাবে বিকশিত হয়েছে যে, কেবল একটিমাত্র শব্দ বেরিয়ে আসে মুখ থেকে, ‘অসাধারণ’।



সিনেমার কাহিনী শুরু হয় অনেকটাই ধীর গতিতে, এবং খুব জলদিই তা এমন এক বাস্তবতার দিকে মোড় নেয় যে, দর্শকদের বাধ্য করে বিমূঢ় হয়ে উঠতে, এবং একটি মিথ্যা যাকে আমরা স্বভাবতই ধরে নিতে বাধ্য হই সত্য হিসেবে, তখনই কাহিনীটি মোড় নেয় ভিন্ন দিকে, এবং টুকরো টুকরো বিরূপ বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে এমন এক গল্পের মধ্যে প্রবেশ করি, যেখানে আমরা খুব ভালভাবেই উপলব্ধি করতে পারি মানুষের নিজস্ব সংকট, সম্মানবোধ, বিপদে বন্ধুদের পাশে দাঁড়ানো অথবা মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, ঘৃণা, অবিশ্বাস, যন্ত্রণা, সামাজিক বঞ্চনা ইত্যাদি, এবং সমস্ত কিছুর পরেও নিজস্ব বিশ্বাসে টিকে থাকা এবং নিজেকে প্রমাণ করা।



‘দ্যা হান্ট’ এমন একটি চলচ্চিত্র, যা আমাদের মস্তিষ্কের গভীরে দারুণভাবে আঁচড় কাটে, এবং কোনোভাবেই স্বস্তি দেয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা শেষ মুহূর্তে এসে পৌঁছায়। নিঃসন্দেহে এটি তেমন-ই একটি সিনেমা, যা দেখার পর দর্শক বিমর্ষ হয়ে উঠে, স্বস্তি পায় না, অথচ একটি সার্থক সিনেমা দেখার তীব্র আনন্দে বুদ হয়ে থাকে, এবং আজীবন তা মনে রাখে। এক কথায় সিনেমাটি জীবনের নানাবিধ বিরূপ বাস্তবতায় মোড়া সাদামাটা কাহিনীর ভেতর জীবনেরই সমস্ত অনুষঙ্গ দিয়ে সাজানো সুপরিচিত এক প্রাচিন বৃক্ষ যেন, যার শীতকালীন নগ্ন ও অসহায় রূপ আমাদের সামনে ধীরে ধীরে প্রতীয়মান হয়ে উঠলেও, খুব শ্রীঘই সে ফিরে পায় তার সতেজতা, এবং তার সামনে এভাবে দাঁড়ালে জীবনের চিরকালীন রূপ যেন আরও খানিকটা প্রকট ও প্রবল হয়ে ধরা দেয় আমাদের কাছে। পরিশেষে চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে সবচেয়ে যথার্থ যে কথাটি বলা যায়, তা লেখা রয়েছে এর পোস্টারেই, “This is Cinema that sinks it’s claws into your back”.





অরণ্য

ঢাকা, বাংলাদেশ

২৪.১১.১৩

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০৯

দিশার বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে , মুভি টা দেখতে ইচ্ছা করছে। লেখার সাথে ছবি দেখার লিংক দিলে ভালো লাগত।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৩

অ রণ্য বলেছেন: দেখুন, ভাল লাগবে। আর আমি টরেন্ট দিয়ে মুভি নামাই, তাই লিংক শেয়ার করি না। ভাল থাকুন।

২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৮

বিশ্বাস করি 1971-এ বলেছেন: ভাই এই বুইড়া ধ্বজভঙ্গ নায়ক এত সুন্দর অভিনয় করসে? দেখতে হবে মুভিটা! ১৮ ভার্সন কি নাই? বা ডিরেকটরস কাট?

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪৫

অ রণ্য বলেছেন: দেখুন তারপর নিজেই বিশ্বাস করবেন। আর অভিনয় করার জন্য বয়স লাগে না, লাগে অভিনয়টা জানা ম্যাডস মিকেলসন যে অভিনয় জানেন, তা প্রমাণিত অনেক আগেই।

৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪৩

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: দেখা দরকার....

৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০০

বশর সিদ্দিকী বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। ডাউনলোড লিংক থাকলে আমরাও দেখতে পারতাম। দেখি নেট ঘেটে পাই কিনা।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৭

অ রণ্য বলেছেন: ধন্যবাদ। উত্তরটি উপরে দিয়েছি।

৫| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৯

গগণজয় বলেছেন: দেখব।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৮

অ রণ্য বলেছেন: দেখুন

৬| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫০

মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: আজকেই নামাচ্ছি :)

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১০

অ রণ্য বলেছেন: নামান। দেখুন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.