নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জড়তার কাব্য শুনি, ক্লীব লিঙ্গ বলিয়া কিছু নাই

অ রণ্য

পুলকে পুলক আর সাদা দুধ, সাদা ঘর, মেঘের দোসরযে তুমি ঘুমিয়ে আছো, যেন ঘর ছেড়ে উড়ে গেছোআরব সাগর আর যাদু-কাঠি-ঘ্রাণগাগল, পাগল আমি রাত-দিন বসে টানিযাদুর ঝালর

অ রণ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি নির্মম পরাজয়, সমর্থকদের হৃদয়বৃত্তিক অবস্থান এবং আমার উপলব্ধি

০৯ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৭

বিশ্বকাপ শুরুর পর থেকেই যেন আমি এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম, কেন না আমি কিছু লিখতে চাইছিলাম। তাছাড়া এবারের বিশ্বকাপ শুরুর প্রথম দিকেই এক বন্ধুকে কথা প্রসঙ্গে জানিয়েছিলাম, ‘আমার মনে হচ্ছে না এবার ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার কেউ বিশ্বকাপ জিততে পারবে’। জানি না পরবর্তী সেমিফাইনালে বাস্তবিক কী ঘটবে, হয়ত আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠে যাবে এবং বিশ্বকাপও জিতে নেবে, অথবা তাদেরও করুণ পরিণতি ঘটবে ব্রাজিলের মতোই। সে যাই ঘটুক না কেন, তাতে আমার কিছু ভাবান্তর ঘটবে না, কারণ খেলা দেখার সময় আমি কেবল খেলোয়াড়ীসুলভ নৈপূণ্য দেখি এবং যে দল ভাল করে, তাকেই সমর্থন করি (অবশ্য বাংলাদেশ দল হলে ভিন্ন কথা)।



তবে ফলাফল যাই আসুক না কেন, এবং আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিল সমর্থকদের পরিণতি যাই ঘটুক না কেন, আমার সুতীব্র ক্ষোভ ও আক্ষেপ তখনও একই রয়ে যাবে এ দেশের সেইসব সমর্থন উন্মাদনায় মত্ত মানুষদের জন্য, যারা বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার সমর্থনে এতটাই দিশেহারা ও আপ্লুত হয়ে পড়ে যে, রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, ঘর-বাড়ি থেকে শুরু করে সর্বত্র, এমন কী পরনের কাপড় অব্দি নিজেদের সমর্থনবাদের রঙে রাঙিয়ে তোলে, আর চারিদিকে মাসেরও অধিক সময় ধরে সদর্পে উড়তে থাকা সুবিশাল সব ভিনদেশী পতাকা আমাকে একই সাথে মর্মাহত ও দারুণ শংকীত করে তোলে এই ভাবনায়, ‘এই জাতি কি সত্যিই কোনোদিনও শিখবে কীভাবে নিজেকে যথাযথ সম্মান করার মাধ্যমে নিজের সুদৃঢ় অবস্থান সবার সামনে তুলে ধরতে হয়? তারা কি কখনও এভাবে ভাবতে সমর্থ হবে, তাদের যে সন্তানটি সবেমাত্র যুবক বা যুবতী হলো, তারা কীভাবে ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার এমন অন্ধ সমর্থক হয়ে উঠলো তাদেরই মতো, যখন তারা যেমন সত্যিকার অর্থেই দু’তিনটির বেশি বিশ্বকাপ দেখেনি, তেমনি এই দুই দলের খোলোয়াড়ী নৈপূণ্যতার স্বর্গযুগের মধ্যে দিয়েও আসেনি, তাহলে কীভাবে তারা অপরাপর প্রবীণদের মতো এই দুই দলের এমন অন্ধ সমর্থক হয়ে উঠে? যখন এই দুই দল ছাড়াও অনেক মানসম্পন্ন ফুটবল ইটালী, জার্মানী , স্পেন এর মতো দল আমাদের বহুবার উপহার দিয়েছে।



আর এই ব্যাপারটি ভাবলেই আমার হাইস্কুলের আরবী স্যারের কথা মনে পড়ে যায়, তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘আমরা তো শুনে মুসলমান! আমরা কী আর ধর্মের জীবন-যাপন করে, প্রকৃত অনুধাবনে মুসলমান? বরং বখতিয়ার খিলজী যখন বাংলা আক্রমণ করতে আসছিলেন, তখন পথে সমস্ত ভিন্ন ধর্মাম্বলীদের কচুকাটা করছিলেন, আর তাই শুনে বাংলার লোকজন যে যেখানে যা পেল তাই দিয়ে নিজের পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত ধর্মদন্ডটিকে মুসলমান বানাল, আর তারপর থেকেই আমরা খাঁটি মুসলমান’। স্যারের বলা সেই গল্পটি আমার মনে ধরেছিল, এবং এইসব উন্মত্ত সমর্থকদের উন্মাদনা ও আচরণ দেখলে স্যারের বলা গল্পটিই বারবার মনে পড়ে যায়।



বস্তুত, পাড়ার মোড়ে, চায়ের দোকানে, কিংবা মার্কেটের দেয়াল অথবা রাস্তা-ঘাটে যারা আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিলের পতাকা ঝুলিয়ে রেখে নিজেদের ঘোর সর্মথনবাদীতা জাহির করে, তাদের বেলায় আমার অভিযোগ নেই, কারণ তারা তো অমনই, তাদের কাছ থেকে বেশী আর কী আশা করা যেতে পারে? কিন্তু, যারা নিজেদের সভ্য, সুশিক্ষিত ও অভিজাত শ্রেণীর বলে দাবী করে, তারা যখন নিজেদের বাড়ির জানালা, ব্যালকনি, ছাদ, কিংবা আরেকটু এগিয়ে, বহুতল ভবনের ছাদ থেকে নিচ তলা পর্যন্ত নিলর্জ্জের মতো একেকটি সুবিশাল আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের পতাকা ঝুলিয়ে রাখে, তখন তাদের ক্ষমা করি বা নিস্কৃতি দিই কীভাবে, আর বিশ্বকাপ শুরু থেকে চলাকালীন পুরো আয়োজনেই চারিদিকের একই চিত্র দেখে বুকের মধ্যে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, মোচড় দিয়ে উঠে, কেন না পুরো বিল্ডিং ঢেকে ফেলা সেইসব সুবিশাল ভিনদেশী পতাকার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হয়, ‘আহা, লাল-সবুজের এমন বিশাল পতাকা দেখতে কেমন হবে, কারণ এই বয়সে এত কাছ থেকে নিজ দেশের অমন বিশাল পতাকা দেখার সৌভাগ্য তো আর হয়নি, অথচ চারিদিকে একেকটি ভিনদেশী পতাকার সমর্থনবাদী সর্বগ্রাসী দৈর্ঘ্য-প্রস্থ আমার সমস্ত বোধকেই বিমূঢ় করে তোলে, আর নিজেকেই প্রশ্ন করতে থাকি, কই নিজ দেশের পতাকা তো আমরা এত বিপুল ও বিশালভাবে কখনোই ঝোলাই না, কিংবা রাস্ট্রীয় কোনো আয়োজনেই তো দেশবাসী এত দীর্ঘ সময় ধরে লাল-সবুজের মেলায় নিজেদের বাড়ি-ঘর বা ছাদ ভরিয়ে তোলে না। তাহলে বাস্তবতা এই দাঁড়াচ্ছে, শুধুমাত্র নিজস্ব আবেগী সমর্থনকে জাহিরের উদ্দেশ্যে আমরা এমন এক অগ্রহণযোগ্য বাতাবরণ পরবর্তী প্রজন্মের সামনে উল্লাসে তুলে ধরছি, যেখানে ভাবী প্রজন্ম এমন এক জমকালো, বর্ণিল পরিবেশ দেখছে, যেখানে দেশবাসী নিজেদের তথাকথিত সমর্থন জাহির করার জন্য সমগ্র দেশ ভিনদেশী পতাকায় রাঙিয়ে তুলছে, অথচ প্রতি বছর রাস্ট্রীয়/ জাতীয় আয়োজন বা অনুষ্ঠানে সমগ্র দেশকে নিজস্ব পতাকায় এভাবে বর্নিল হয়ে উঠতে সে কখনোই দেখে না। অথচ এমনটি যদি বাস্তবিক ঘটত, তাহলে চারিদিকে ভিনেদেশী পতাকার পরিবর্তে স্বগৌরবে উড়তে থাকা লাল-সবুজের বিশাল-বিপুল সমারোহে তাদের সন্তানটি হয়ত তাদেরকে এই সুন্দর প্রশ্নটি করার সুযোগ পেত, ‘বাবা, চারিদিকে কেন এত বাংলাদেশী পতাকা উড়ছে? আর বাবা আলতো হেসে বেশ গর্বিতভাবেই উত্তর দিতে পারত, ‘আমরা যে বাঙ্গালী, নিজের দেশকে মায়ের মতোই ভালবাসি, যাকে রক্ষা করার জন্য আমাদের লক্ষ লক্ষ মা-ভাই-বোনেরা অকাতরে প্রাণ দিয়েছে, তাই আমরা নিজ দেশ ও সেইসব মা-ভাই-বোনদের এভাবে প্রতিনিয়ত শ্রদ্ধা জানাতেই লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছি!’



বস্তুত, এ নিতান্তই এক স্বপ্ন, এবং শেষ পর্যন্ত আমার কোনো আপত্তি বা অভিযোগ নেই তাদের উন্মাদনাময় সমর্থনে কিংবা অযথতার পাগলামীতে, কিন্তু, দোহায় চারিদিকে যথেচ্ছভাবে ভিনদেশী পতাকা উত্তোলনের আগে সাবধান হউন, ভালভাবে দেখে নিন যে, আপনি যে আকারের বা সংখ্যায় অন্য দেশের পতাকা উড়াতে যাচ্ছেন, তার চেয়ে বড় আকারের কিংবা বেশি সংখ্যায় নিজ দেশের পতাকাটি সেখানে উড়াতে সমর্থ হচ্ছেন কিনা। কিংবা আপনার বাড়ির ছাদে যদি ১০০টি ভিনদেশী পতাকা মাসের অধিক সময় ধরে উড়তে থাকে, তবে নিশ্চিত করুন সেখানে যেন তারও অধিক সময় ধরে ১০০টির বেশি বাংলাদেশী পতাকা উড়ে। এরপরও যদি আপনি আপনার আবেগ ও উন্মত্ত সমর্থনবাদকে সংবরণ করতে ব্যর্থ হোন, তবে নিজ পকেটের টাকা খরচ করে কিংবা সবাই মিলে চাঁদা তুলে যে কোনো মার্কেটের দেয়ালের এ প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত, কিংবা কোনো বহুতল ভবনের ছাদ হতে নিচতলা অব্দি আর্জেন্টিনা অথবা ব্রাজিলের সমর্থনে সুবিশাল পতাকা টাঙানোর আগে অবশ্যই অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিন, তার চেয়ে বড় আকারের লাল-সবুজ পতাকাটি কাছে-পিঠের দেয়ালে বা আশেপাশে ঝুলিয়েছেন কিনা, কিংবা আপনার সমগ্র জীবনে কাজটি পূর্বে কখনও করেছেন কিনা? দোহায়, ভিনদেশী পতাকার মাঝখানে কিংবা তাদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র আকারের লাল-সবুজ পতাকাটি অসম্মানজনকভাবে রেখে দিয়ে নিজেদের মহোত্তম দায় এড়িয়ে গিয়ে নিচু মানসিকতার এমন অগ্রাসী পরিচয় আর তুলে ধরবেন না, কারণ আপনি নিশ্চিত থাকুন, আপনার সন্তানেরা দেখছে, জানছে, শিখছে এবং বেড়ে উঠছে, এরই মধ্যে।





অরণ্য

ঢাকা, বাংলাদেশ

০৯.০৭.১৪

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:১৭

ভালোবাসার কাঙাল বলেছেন: আপনার ভাবনার সাথে একমত।
ভালোলাগা রেখে গেলাম

১০ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:২৭

অ রণ্য বলেছেন: ধন্যবাদ জানাচ্ছি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.