নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জড়তার কাব্য শুনি, ক্লীব লিঙ্গ বলিয়া কিছু নাই

অ রণ্য

পুলকে পুলক আর সাদা দুধ, সাদা ঘর, মেঘের দোসরযে তুমি ঘুমিয়ে আছো, যেন ঘর ছেড়ে উড়ে গেছোআরব সাগর আর যাদু-কাঠি-ঘ্রাণগাগল, পাগল আমি রাত-দিন বসে টানিযাদুর ঝালর

অ রণ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

বোধনের ডায়েরী-ইউরিডাইসের অন্তর্ধান ও উজ্জ্বল লন্ঠন

০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫৯

।। বোধনের ডায়েরী - ইউরিডাইসের অন্তর্ধান ও উজ্জ্বল লন্ঠন ।।
(কবিবন্ধু আল-ইমরান সিদ্দিকী ও হিজল জোবায়ের স্মরণে)


একটি সুন্দর স্মৃতিচারণ গত দুই বছর ধরে আমাকে সময়ে-অসময়ে প্রায় সব-সময়ই ব্যস্ত রেখেছে, আর এই স্মরণ বইমেলা এগিয়ে আসতে থাকলেই তীব্র থেকে তীব্রতর হতে শুরু করে! এমন সময় অনিবার্যভাবেই কবি-বন্ধু ‘আল ইমরান সিদ্দিকী’ ও ‘হিজল জোবায়ের’-এর কথা মনে পড়ে। বছর দুয়েক আগে, বইমেলায় কবি আল-ইমরানের সাথে দেখা, এবং খুব হৃদ্যতার সাথেই তিনি আমাকে গ্রহণ করেছিলেন। অনেকটাই অগোছালো ধরণের সুদীর্ঘ আকৃতির এই কবির মুখের মধ্যে একটা জিনিস খুব সহজেই ধরা পড়ে, তা হলো বিনয়'', আর যখন তিনি একনাগাড়ে কথা বলেন, তখন কিছু স্বাদু মুদ্রাদোষ আমাকে যেমন আহ্লাদিত করতে সক্ষম হয়েছিল সেদিন, তেমনি এখনও। এক সময় তিনি আমাকে টেনে নিয়ে ঢুকলেন বাংলা একাডেমির স্টলে। হয়ত সম্পূর্ণ না জেনেই সেদিন তিনি এমন কাজ করে বসেছিলেন, যার দরুণ স্মৃতির মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন তীব্রভাবে। সেদিন তিনি আমাকে কয়েকটি বই কিনে দিয়েছিলেন, আর বইগুলো হাতে বাড়ি ফিরতে ফিরতে তাকে মনে মনে জানিয়েছিলাম, ‘কবি, আপনি হয়ত জানেন না, এই পৃথিবীতে আর কোনো বস্তুই নেই এমন, আমাকে এতটা সুখি ও আনন্দিত করতে পারে, যা একটি ভাল বই পারে, আর আপনি আমার জীবনের হাতে গোনা সেই দু-তিনজন মানুষের একজন, যারা আমাকে ভাল কিছু বই উপহার দিয়েছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ মঁশিয়ে!

সেদিন আরও একটি ঘটনা ঘটেছিল। বইগুলো কিনে যখন আমরা পুনরায় লিটল ম্যাগ চত্বরে ফিরলাম, তখন সেখানে কবি-বন্ধু হিজল জোবায়ের আবির্ভূত হলেন। যদিও জানতাম হিজল ও ইমরান হরিহর আত্মা, এবং সেই সূত্রে হিজল রীতিমতো বহুদিনের পুরোনো ইয়ার-দোস্তের মতোই আমাকে গ্রহণ করলেন, আর তার সেই গ্রহণ আজও সমানভাবে বর্তমান, এবং তার সান্নিধ্যে একটি ব্যাপার খুব সহজেই টের পাওয়া যায় যে, এই তরুণ কবি কেবল বয়সেই নয়, হৃদয়গতভাবেও দারুণ তরুণ ও প্রাণোচ্ছল। পাশে বসলে সে আপনাকে বুঝতেও দেবে না, তার ও আপনার মাঝের দূরত্ব, বরং, খবু সহজেই সে আপনাকে তার নিজস্ব সীমারেখার মধ্যে সাদর আমন্ত্রণ জানাবে, যেখানে ঢুকে আপনার অন্তত অস্বস্তি বোধ হবে না (যা অনেক কবির সান্নিধ্যে আমি ভয়াবহ রকমভাবে টের পেয়েছি)।

সেদিন আমার ও ইমরানের হাতে ভাল কিছু বই থাকার নিষ্পাপ অপরাধে আবারও ঢুকতে হয়েছিল বাংলা একাডেমীর গুদামে, আর এই ঢোকাটাই হয়ত আমার জন্য হয়েছিল আর্শীবাদ ও এত দীর্ঘ স্মৃতিচারণের মূল কারণ। সেদিন হিজল নিজেও কয়েকটা বই কিনেছিলেন, আর সেগুলোর মধ্যে ছিল ‘জ্যঁ আঁনুই’-এর ‘ইউরিডাইস’। কবি মুখে বইটির উচ্চ প্রসংশা শুনে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, বইটি কয়েকদিনের জন্য আমাকে পড়তে দেবার। কেন জানি বইটা তিনি আমাকে দিয়েছিলেন, এবং আমিও কৃতজ্ঞচিত্তে বইটি গ্রহণ করতে করতে তাকে কথা দিয়েছিলাম যে, ‘অবশ্যই তাকে ফেরত দেব’। এরপর একটি একটি করে দুটি বছর অতিবাহিত হলো, এবং গত বইমেলায় কথা না রাখতে পারার দরুন তাকে সবিনয়েই জানালাম আমার লজ্জা, সাথে এও জানালাম, আমি আজও ভুলিনি বন্ধুবর আপনার বইটির কথা, কেন না, কথা না রাখার মতো নিচুতা অন্তত এই জীবনে আমার দ্বারা ঘটেনি। কিন্তু বন্ধু, আমি আপনার বইটি কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি না। আমার সেদিনকার সেই বিনয় ও অপরাধবোধ ছিল শতভাগ সত্য, এবং বইটি অনেক খুঁজে খুঁজে না পেয়ে যখন সমস্ত আশা ছেড়ে দিয়ে কথা রাখতে না পারার চরম দায়ভার কাঁধে নিয়ে বছর অতিবাহিত করছি, এমন সময়ে কিছুদিন আগেই টের পেলাম বইটি খুঁজে না পাবার আসল কারণ। বন্ধুবর, প্রকৃত অর্থেই আমার কোনো দোষ নেই, যদি দোষ থাকে, তবে তার শতভাগ কেবল ‘জ্যাক লন্ডন’ সাহেবের ঘাড়েই বর্তায়, কারণ, যদি তিনি অমন স্বাস্থ্যপদ আকৃতির বই না লিখতেন, তবে হয়ত আমাকে এত সুদীর্ঘ সময় ধরে আপনার বইটি ফিরিয়ে না দেবার অপরাধ বোধে ভুগতে হতো না, এবং বইটি আমি আপনাকে যথাযথ সময়েই ফেরত দিতে পারতাম। সুতরাং, অবশ্যই আমি সকল গুরুভার থেকে মুক্ত।

বৃত্তান্ত তেমন কিছুই নয়। যেহেতু আমি নির্ঝঞ্ঝাট ও স্বল্প প্রয়োজনীয় বস্তুতে অভ্যস্ত মানুষ, সেহেতু যে কোনো বাড়তি জিনিস সবসময়ই পরিহার করি, ফলে বইটি বাসায় নিয়ে আসার পর মনে হলো, বইটিকে অবশ্যই আমার একদম হাতের কাছে রাখা উচিত, যাতে যে কোনো মুহূর্তে হাত বাড়ালেই পড়তে পারি। মাঝে মাঝে অনেক সুবুদ্ধিও যে মানুষের মসিবত ঢেকে আনে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমার এই সিদ্ধান্ত। সেদিন খেয়ালই করিনি যে হাতের কাছে কেবল বই নয়, একটি যান্ত্রিক ইঁদুরও ছিল, যার অবস্থান হাতের আরও অধিক নিকটে, ফলস্বরূপ একটিমাত্র হাতের কাছে দুইটি বস্তু থাকার কারণে, তারা আমার অজান্তেই কখন যে একে-অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছিল, টেরও পাইনি! এর মধ্যে কাকরাইল মোড়ের কাছে ফুটপাতে এক বিকেলে দেখি জনাব ‘জ্যাক লন্ডন’ তার গল্প সমগ্র সমেত আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রয়েছেন। সেখান থেকে তাকে তুলে না আনার যে বিশাল দায়ভার, অন্তত আমার পক্ষে তা বয়ে বেড়ানো সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব, আর এ অপরাগতাই হয়ত ঘটনাক্রমে আমার পূর্বের দায়ভারকে লঘু প্রতিপ্রন্ন করে থাকতে পারে, অলক্ষ্যে; কেন না এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম বিশেষ কিছু ঘটেনি, এবং পূর্বের ন্যায় লন্ডন সাহেবকেও হাতের কাছে রাখতে গিয়ে কখন যে বস্তু সমূহেরা নিজেরা নিজেদের প্রয়োজন মাফিক একে অপরের মাঝে জায়গা বদল করেছিল, বুঝতেও পারিনি। তবে এজন্য হয়ত আপনার ‘ইউরিডাইস’-এর অতি রুগ্নতাকেই প্রকৃত অর্থে দায়ী, কেন না অতি স্বল্প উচ্চতায় আমার ইঁদুরটি স্বছন্দে চলাফেরা করতে পারছিল না, ফলে লন্ডনের সাহেবের যথার্থ মেদবহুলতা একদিকে যেমন ইুঁদরটিকে যথাযথ ও আরামদায়ক উচ্চতায় তুলে আনতে সক্ষম হয়েছিল, তেমনি আপনার আঁনুই সাহেবকে যথাযথভাবে চাপা দিয়ে আড়ালে নিয়ে যেতে পেরছিল ষোলআনা, যার দরুণ আমার পক্ষে তাকে প্রয়োজনীয় সময়ে খুঁজে বের করা ছিল সত্যিই অসম্ভব, আর এই অসম্ভব হয়ত সম্ভব সীমারেখার ওপারেই রয়ে যেত আজও, যদি না ল্যাপটপ বাবাজিকে তার অবস্থান থেকে সরানো হতো।

আহা, যেই লন্ডন সাহেব সরে বসলেন, অমনি আপনার লালচে রংয়ের ‘আঁনুই’ বেরিয়ে আসলেন সগর্বে! বন্ধুবর, আমি দুঃখিত, তবে এ মোটেও আমার ধৃষ্টতা নয় যে, আমি আপনার ইউরিডাইসের উপর ইঁদুর দৌড়েয়েছি, বরং হাতের কাছে রাখতে গিয়ে নিতান্তই হাতাহাতি হবার বিপর্যয় এড়িয়ে যাবার দরুণ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রয়োজন মাফিক একে অপরের অবস্থান বদলে নিয়েছে, ফলে সেদিনও যেমন তারা হাতের অতি নিকটে ছিল, আজও তেমনই রয়েছে, কেবল ফারাকটা এই, অত বিশালাকার লন্ডন সাহেবের চাপা খেয়েও আপনার আঁনুই সাহেব চিৎকার করে করে নিজের অবস্থান জানান দিয়ে বলছে, ‘আমাকে আমার মালিকের নিকট ফেরত দাও’! কবি, এই চিৎকার সত্যিকার অর্থেই আমাকে আনন্দ দিচ্ছে, কেন না আজ অব্দি কোনো দায়ভারই আমি পেছনে ফেলে আসিনি, এই একখানা না হয় আমারই থাক, বিনিময়ে আপনার ও সিদ্দিকী সাহেবের সাথে সেই সান্ধ্যকালীন মুহূর্তের স্মৃতিচারণ আমাকে না হয় আরেকটু সজাগ ও সচেতন রাখুক, সময়ে-অসময়ে, বই ও বইমেলার সুন্দর আগমনে, আজীবন!


ঢাকা, বাংলাদেশ
০২.১১.১৪

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৬

মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো লাগলো ।

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৯

পার্সিয়াস রিবর্ণ বলেছেন: ভালো লাগলো । অন্যদের স্মুতিচারণমূলক লেখাগুলো বেশ লাগে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.