নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জড়তার কাব্য শুনি, ক্লীব লিঙ্গ বলিয়া কিছু নাই

অ রণ্য

পুলকে পুলক আর সাদা দুধ, সাদা ঘর, মেঘের দোসরযে তুমি ঘুমিয়ে আছো, যেন ঘর ছেড়ে উড়ে গেছোআরব সাগর আর যাদু-কাঠি-ঘ্রাণগাগল, পাগল আমি রাত-দিন বসে টানিযাদুর ঝালর

অ রণ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

।। জন্মোমুখ প্রাণ অথবা রাক্ষস ।।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৭

।। জন্মোমুখ প্রাণ অথবা রাক্ষস ।।

‘আমার জন্মই ঘটেনি’-বস্তুত, এমন প্রহেলিকাময় অবাস্তব সিদ্ধান্তের জন্য প্রস্তুত হতে হতেই আমার পৃথিবী মাতৃগর্ভের ন্যায় হয়ে উঠেছে, ক্রমশঃ, এবং একটি জন্মোমুখ প্রাণের মতো একটু একটু করে আমি নিজের গর্ভ-কোটরেই বেড়ে উঠেছি, এতকাল!

এমন পরিস্থিতির জন্য আমার ক্ষোভ বা আক্ষেপ দুটোই সমপর্যায়ের, পক্ষান্তরে, শান্তি নামক চিরকাঙ্খিত যে বিষয়টির সাথে বসবাস করার সুতীব্র ইচ্ছা নিয়ে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছি এতকাল, সেইসব বিগত সময় আমাকে যতদূর টেনে আনতে সক্ষম হয়েছে, সেখান থেকে পৃথিবীর মুখ দেখার পর আমার প্রাথমিক-স্বর কান্নার পরিবর্তে হাস্যকর হয়ে উঠেছে অধিক, কেননা জন্ম বিষয়ক ভ্রান্তি অপরাপর সবার মধ্যে প্রবল হয়ে উঠলেও আমি ছিলাম নিস্পৃহ, এবং এই নিস্পৃহতাই আমাকে এই ধারণায় ধীরে ধীরে বদ্ধমূল করে তুলেছে যে, ‘আমার জন্মই ঘটেনি, কখনও’!

মানুষ সুদীর্ঘ সময় নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারে না যেমন, তেমনি পারেনা নিজেকে নিজেরই বোধ দিয়ে বোঝাতে। ‘বোধ’-যা কিনা সময়জাত উপলব্ধি মাত্র, তাকে সময়ই পরিবর্তিত করে, আর এমন পরিবর্তনের সাথে মানুষ নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পারলে যে ভিন্ন বোধ তৈরী হয়, তা তাকে ভারী করে তোলে অধিক, আর এই নতুন ভার পূর্বের বোধের সাথে সমন্বয় সাধন করে ‘স্থবিরতা’ নামক চরম এক সংকট প্রবল করে তোলে! সুতরাং, আমি বরং যে কোনো সিদ্ধান্ত বা বোধের বাইরে বেরিয়ে আসার প্রয়াসেই লিপ্ত থেকেছি সবসময়, যেখানে জন্মোমুখ প্রাণ প্রতিনিয়ত নিঃশেষ হয়ে যাবার ভয়ে ভীত হয়ে উঠলেও শেষ অব্দি সাহসীকতার সাথেই টিকে থেকেছে, এতকাল।

একটি রক্ত-মাংসের অস্তিত্ব হিসেবে ক্রিয়াশীল মস্তিস্ক আমাকে পীড়ার অধিক কিছুই দিতে সক্ষম হয়নি কখনও, কারণ অন্যান্য সব বোধের সাথে সাথে সে আমাকে তুলনামূলক এক বোধ সবসময়ই সরবরাহ করেছে, যা আমার জন্মোমুখ প্রাণ ও বাস্তবিক অবস্থানের মধ্যে এমন দূরত্ব তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে, যাকে এড়িয়ে যাবার সাধ্য আমার নেই। হয়ত কল্পিত অনেক কিছুই আমাকে এসব থেকে রক্ষা করতে পারত, কিংবা পারত পৃথিবী নামক এক গ্রহে আবির্ভূত হয়ে শত-সহস্র অপরাপর জীবের সাথে তাদেরই অনুকরণে বেঁচে থাকার দারুণ প্রয়াসে লিপ্ত হতে। যদিও ‘বেঁচে থাকা’-এই বোধটিও আমাকে মাঝে মাঝে চমকে দেয় ভীষণ, কারণ, জীবন বলতে আমি যা বুঝি, তা কখনও কখনও মৃতের সাথেও দারুণ সামঞ্জস্যপূর্ণ, আর তখন নিজেকে খুব প্রবলভাবেই মনে হয় সেই অস্তিত্ব হিসেবে, যে নিজের মধ্যে নিজেই আটকা পড়েছে, কিংবা নিজেই নিজেকে গর্ভে ধারণ করে চলেছে নিজেরই অজান্তে! বস্তুত, নিজ গর্ভে বেড়ে উঠা নিজ অস্তিত্বটিই আমার প্রকৃত রূপের একটি, যাকে কোনোদিন সম্পূর্ণরূপে দেখতে সক্ষম হয়নি কখনও, অথচ তার পরিপূর্ণ রূপের আকাঙ্খা আমার মধ্যে তীব্র থেকে সুতীব্রতর হয়ে উঠেছে, ক্রমশঃ। কিংবা, এও বলা যেতে পারে, তাকে হঠাৎ কখনও বাস্তব রূপে দেখে ফেলার যে সমূহ ভয়, তা থেকে নিজেকে বাঁচাতে নিজেকে আবৃত রেখেছি নিজেরই গর্ভে, সবসময়।

মাঝে মাঝে যখন অদ্ভুত স্বপ্ন দেখি, তখন মনে হয়, আমি হয়ত নিজের মাংস খাবার লোভে লোভী হয়ে উঠছি ভীষণ, এবং এই লোভ শিশুদের শোনানো নরমাংসভোজী নিষ্ঠুর রাক্ষসদের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন, নিরীহ ও সরল। মানুষ যদি সত্যি সত্যিই এমন করতে সক্ষম হতো, তবে জীবনের যে কোনো মুহূর্ত বা পরিস্থিতিতে সে নিজেই নিজেকে আপাদমস্তক খেয়ে তৃপ্ত হতো, শান্তি ও স্বস্তি পেতো, এবং আজীবন ধরে যে মাংস-ঘ্রাণ তাকে অজান্তেই তাড়িয়ে ফেরে, সেই ঘ্রাণ প্রিয়তর এক ঘ্রাণে রূপান্তরিত হবার অবকাশ পেতো।

দু’টো হাত, যাদের আমি মাঝে মধ্যেই খর্বাকৃতির হয়ে উঠতে দেখি; কিংবা পাগুলো, যারা শরীরের চেয়ে দীর্ঘতর হতে হতে বিশালাকার ও সুদীর্ঘ হয়ে উঠে, তাদের থেকে নিজেকে বিছিন্ন করার কোনো উপায় খুঁজে না পাবার কারণে নিজেকে কুন্ডলাকৃতির করতে শুরু করেছি, যা একটি নির্দিষ্ট আকার দিয়ে শুরু হলেও শেষ অব্দি সূক্ষ্ণতর বিন্দুতে গিয়ে আটকে রয়েছে, এবং আমার নিরাকার হয়ে উঠার সমূহ সম্ভাবনা নিষ্প্রভ প্রদীপের ন্যায় চুপচাপ ঝুলে থাকে। আহা, ‘অস্তিত্বহীনতা’-বিধাতার অধিক এই স্বাদ আর কাহারও কখনও ছিলনা মহাবিশ্বে, আর নেই বলেই হয়ত অস্তিত্ব তার যাবতীয় ভার নিয়ে চেপে বসে, আজীবন। মানুষ নিজে হয়ত কোনোদিনই জানবে না যে, সে নিজের ভার বহনে পারঙ্গম ছিলনা কখনোই! মূলত, সে এক ছায়াকেই বহন করে চলে আজীবন, যার দিকে সে একটিবার ঠিকঠাক ফিরে তাকাবারও ফুরসত পায় না। এমন পরিস্থিতিতে আমি বাইরে উঁকি দেবার প্রয়োজনবোধটুকুও হারিয়ে ফেলি, কারণ নিজের থেকে আমার দূরত্ব খুব বেশি, ফলে আগ্রহজনিত যে ভিন্ন স্বত্ত্বা আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারত, তার সমস্ত দুঃশ্চিন্তা থেকে আমি সম্পূর্ণরূপে মুক্ত!

আজকাল মাঝে মাঝেই আমি শব্দহীন ভাষা চর্চা করি। বোবা-কালাদের এই বিষয়ে কিছুটা সুবিধা আছে, কারণ তাদের হাত ও চোখ রয়েছে, কিন্তু, আমার ক্ষেত্রে এমন কোনো সুবিধাই নেই যা আমার এই চর্চাকে ত্বরান্বিত করবে, কারণ এমন সময়ে আমি যেন সম্পূর্ণরূপেই নিরাকার হয়ে উঠি, অথচ তারপরও নিজেকে টের পাই, অনুভব করি, এবং সবচেয়ে চমকে দেবার মতো ব্যাপার এই যে, তখনও নিজেকে প্রাণী ভাবতে সক্ষম হই। এই উপলব্ধি আমার কাছে দারুণ পীড়াদায়ক ও সীমাহীন অস্বস্তির মূল কারণ, কেননা, কোনো বোধ বা উপলব্দি নয়, বরং সম্পূর্ণ শব্দহীন এক ভাষার চর্চা আমার চিরকাম্য, যা কিনা আমাকে মানুষ বা প্রাণী নয়, বরং অস্তিত্বহীন সকল অস্তিত্বের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত করে তুলবে। একটি ক্ষুদ্র পরিসর থেকে বিশালাকার, অনন্ত সীমানায় নিক্ষেপ করবে, যেখানে ‘সম্পূর্ণ’ বা ‘অসম্পূর্ণ’ বলে কিছু নেই, এবং অস্তিত্ব নিরূপণের যে কোনো বোধ সেখানে সম্পূর্ণরূপেই অনুপস্থিত। একটি সার্বিক অস্তিত্বের সাথে একাকীভূত হয়ে উঠার মানসিকতাই আমাকে ‘প্রকৃতজন্ম’-এই অকস্মিকতা থেকে সত্যিকার অর্থেই বহুদূরে ঠেলে দিয়েছে, আর নিজের মধ্যে নিজের অনাদিকালের আবদ্ধতা নিয়ে নিজেকে রোজ বলেছি, ‘তুমি জন্মোমুখ এক সংজ্ঞা মাত্র, যে প্রকৃত পৃথিবীর আলো দেখেনি কোনোদিন’!

‘প্রকৃত পৃথিবী’-তাই আমার কাছে নিদারুণ এক প্রহেলিকা মাত্র, যেখানে মানুষ জন্মায়, মৃত্যুবরণ করে এবং অস্তিত্বহীন হয়ে বিলুপ্ত হয়! চিরকালীন এই বিলুপ্তির পথে আমার গন্তব্য এতটাই বিপরীত যে, আমি যখন সব ছেড়ে-ছুঁড়ে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করি, ক্রমশঃ ক্ষুদ্রতর হয়ে উঠা আমার কুন্ডলাকৃতির বিন্দু তখন কেঁপে উঠে, আর খুব দ্রুত গতিতে আমার থেকে বহুদূরে ছিটকে যায়! মূলত, সেই বিন্দুটাকে ধরার প্রয়াসে সবকিছু ভুলে যখন মরিয়া হয়ে ছুটতে শুরু করি, তখনই আমার প্রকৃত জন্মের সমস্ত সম্ভাবনা সমূলে নষ্ট হয়, এবং এতদূর পৌঁছে যাই যে, যেখান থেকে পৃথিবী, মহাবিশ্ব, এমনকী যে কোনো ধরনের অস্তিত্ব বোধ নিয়ে ফিরে তাকানো দুষ্কর। একটি প্রকৃত শরীর হয়ত এভাবেই চিরকাল নিজেরই অস্তিত্ব আঁধারে হয়ে উঠে অবিনশ্বর, আর তখন কেউ-ই পারে না আর জন্মাতে, বরং নিজ গর্ভে নিজেরই জন্মোমুখ প্রাণ বোধে হয়ে উঠে চিরকালীন!


অরণ্য
ঢাকা, বাংলাদেশ
০১.১২.১৪

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:২৩

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো লাগলো লেখাটা ভ্রাতা +

শুভেচ্ছা ।।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৯

অ রণ্য বলেছেন: ধন্যবাদ ভায়া

২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪৫

জালাময় বলেছেন: সুন্দর

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২৬

অ রণ্য বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.