নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জড়তার কাব্য শুনি, ক্লীব লিঙ্গ বলিয়া কিছু নাই

অ রণ্য

পুলকে পুলক আর সাদা দুধ, সাদা ঘর, মেঘের দোসরযে তুমি ঘুমিয়ে আছো, যেন ঘর ছেড়ে উড়ে গেছোআরব সাগর আর যাদু-কাঠি-ঘ্রাণগাগল, পাগল আমি রাত-দিন বসে টানিযাদুর ঝালর

অ রণ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

My Father and My Son (2005) ।। Cagan Irmak

১৭ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩৫



কিছু কিছু সিনেমার রিভিউ লেখার শুরুতেই মনে হয় লিখি,‘অবশ্যই দেখার মতো একটি সিনেমা’, অথচ এখানে আমি তা না করে বলতে চাই,‘যদি ইতিমধ্যেই আপনার তুর্কি সিনেমার সাথে পরিচয় না ঘটে থাকে, তবে এই সিনেমাটি দিয়েই শুরু করতে পারেন’, এবং নিশ্চিত করছি দেখার পর, তুর্কি শিল্প-সংস্কৃতি ও জীবন-যাত্রার প্রতি আপনার এমন এক ভাললাগা জন্মাবে, যা আপনাকে বাধ্য করবে তাদের প্রতি অধিক আকৃষ্ট হতে, আর সিনেমাটি দেখা শেষ হবার পর, মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ভাববেন, এত চমৎকার একটি সিনেমা আগে কেন দেখেননি, আর তখন আপনিও হয়ত আরও অনেকের সাথে একমত হবেন যে, এটাই সম্ভবত তুরস্কের সেরা সিনেমা।

তুর্কি সিনেমার সাথে আমার পরিচয় ঘটে ‘ইলমায গুনের’ ১৯৮২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইয়োল’ সিনেমাটির মাধ্যমে, যা পরবর্তীতে আমাকে ‘ফাতিহ আকিনের’ প্রতি আকৃষ্ট করে, এবং ‘নূরী বিলগে ছেলানের’ অন্ধ ভক্ত করে তোলে, ফলস্বরুপ, তুর্কি পরিচালকরা আমার সমীহ আদায় করে নেয় যথাযথভাবে। ‘মাই ফাদার এ্যান্ড মাই সন’ সিনেমাটিও তেমন একটি নির্মাণ, যেখানে লেখক ও পরিচালক ‘কাগান ইরমাক’ আমাকে তার অন্যান্য কাজগুলো দেখার জন্য কেবল বাধ্যই করেননি, বরং তার গুণমুগ্ধ দর্শকে পরিণত করেছেন। ১৯৭০ সালে তুর্কির সেফারিহিশারে জন্ম নেয়া এই পরিচালক শুধু সিনেমা নয়, বরং টিভি সিরিজ পরিচালনার জন্যও বেশ জনপ্রিয়, এবং তার অন্যান্য সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘আর ইউ ওকে (২০১৩)’, ‘এ্যালোন (২০০৮)’, ‘এভরিথিং এ্যাবউট মোস্তফা (২০০৪)’, ‘মাই গ্র্যান্ড ফাদারস পিওপিলস (২০১১)’ উল্লেখযোগ্য। তবে এই সিনেমাটি তাকে কেবল তুরস্কেই ব্যাপক জনপ্রিয় করে তোলেনি, বরং সারা বিশ্ব জুড়ে হয়েছেন প্রশংসিত ও দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন সফলভাবে। সত্যি বলতে, সিনেমাটি নিয়ে বেশি কিছু লেখার নেই, কিংবা বলা যেতে পারে, এই সিনেমাটি নিয়ে এত কিছু লেখার আছে যে, একটি সার্থক সিনেমা হিসেবে এর সবগুলো দিক নিয়ে কথা বলতে গেলে এই রিভিউটি হয়ে উঠবে রীতিমতো একটি বড় গল্প।

২০০৫ সালের শেষভাগে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটির জন্য পরিচালক কাগান ইরমাক তুর্কি সিনেমায় জায়গা করে নিয়েছেন চিরস্থায়ীভাবে, কেননা অভিনয় থেকে শুরু করে, কাহিনী, সংলাপ, নাটকীয়তা, রসবোধ, সংগীত সবকিছুই সিনেমাটিকে এমন উৎকর্ষতার দিকে নিয়ে গেছে যে, দর্শক হিসেবে মন্ত্রমুগ্ধ না হয়ে থাকতে পারিনি। বিশেষ করে এতে অভিনয় করা প্রতিটি চরিত্র এতটাই স্বতন্ত্র ও সাবলীল, এবং যার যার নিজস্ব ক্ষেত্রে এত সুচারু ও দক্ষভাবে তা ফুটিয়ে তুলেছে যে, প্রধান চরিত্র থেকে শুরু করে বাড়ির ভৃত্য পর্যন্ত, যারই অভিনয় সম্পর্কে বলা হোক না কেন, কোথাও মনে হবে না যে কেউ তাদের অভিনয় দক্ষতা থেকে বিন্দুমাত্র সরে এসেছে। আর চরিত্রগুলোকে সিনেমার কাহিনীর সাথে এমনভাবে বিন্যাস্ত করা হয়েছে যে, তারা সকলেই হয়ে উঠেছে অপরিহার্য। তবে শিশু চরিত্রে অভিনয় করা ‘এগে তানমানের’ অভিনয় রীতমতো প্রশংসার উর্ধ্বে, আর এই শিশু চরিত্রটিকে বিশেষ উৎকর্ষতা দিতেই বোধ করি ইরমাক তার কাহিনীর মধ্যে একটি বালকের যে মনোজাগতিক কল্পনা তাকে সুচারুভাবে ঢুকিয়ে দিয়েই কেবল ক্ষ্রান্ত হননি, বরং তাকে এত সুন্দরভাবে চিত্রায়ণ করেছেন যে, একই সাথে আমরা যেমন প্রাপ্ত বয়স্কদের পৃথিবীতে বিচরণ করি, তেমনি হুটহাট আনমনে, আচমকা ঢুকে পড়ি বালকের কল্পনার সুন্দর জগতে, যা প্রতিটি বালকই নিজের মধ্যে ধারণ করে, এবং তার সাথেই একটু একটু করে বড়দের পৃথিবীতে ঢুকে পড়ার জন্য বেড়ে উঠতে থাকে, এগিয়ে যেতে থাকে।

পিতা-পুত্রের আদর্শগত দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে সিনেমাটি ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে কেবল একটি পরিবারের সদস্যদের আবেগ-অনুভূতি, স্নেহ-মমতা, ভালবাসা, টানা-পোড়েন ইত্যাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি,বরং আমাদের সকলের জন্যই বিষয়গুলো হয়ে উঠেছে অনেক বেশি সার্বিক, আর একটি সিনেমা যখন তার নিজস্ব পরিমন্ডল থেকে বেরিয়ে সার্বজনিন হয়ে উঠে, তখন তার সাথে সম্পৃক্ত হতে আমাদের দেরি লাগেনা,এবং শিল্পের সাথে মানুষের এমন একাত্ম হয়ে উঠার ফলেই হয়ত তা হয়ে উঠে কালজয়ী। বস্তুত, সিনেমাটি পারিবারিক সম্পর্ক, টানা-পোড়েন ও জীবনের বিস্তারিত দলিল, যেখানে জীবন-যাপনের অনেক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুষঙ্গগুলো বর্ণিল ও সুচারুভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

সিনেমাটি শুরুই হয় চমকে দেয়া ট্রাজেডি দিয়ে, যেখানে ১৯৮০ সালের তুর্কির সেনা অভ্যূত্থানের রাত থেকে কাহিনী শুরু হয়। সারা শহরে কার্ফিউয়ের ফলে প্রসব বেদনায় জর্জরিত স্ত্রীকে হাতপাতালে নিতে ব্যর্থ কিংকর্তব্যবিমূঢ় স্বামী বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে রাস্তার পাশেই শুইয়ে দেয়, এবং একটি কালো রাত যখন ভোরের আলো দেখে তখন সিনেমার মূল চরিত্র সাদিকের কোলে দেখি রক্তাক্ত কাপড়ে মোড়া নবজাতক ও পাশে স্ত্রীর লাশ, যা সত্যিকার অর্থেই আমাদের নির্বাক করে তোলে, আর তা আরও অধিক নির্মমতা নিয়ে জেকে বসে যখন পুলিশ ঐ অবস্থাতেই তাকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর পিতা-মাতাহীন একটি শিশুর বেড়ে উঠা ও জেল থেকে ফেরত পিতা কোনো উপায় না দেখে নিজের জন্মস্থানে সন্তানসহ ফিরে যাবার পর থেকেই শুরু হয় মূল পারিবারিক ড্রামা। বাবা, মা, খালা, ভাই, ভাবী, এমনকি পুরোনো প্রেমিকা ও বন্ধু-বান্ধব এক এক করে উঠে আসতে থাকে কাহিনীর পরিমন্ডলে, যেখানে মূল কাহিনীকে কেন্দ্রীভূত রাখা হয় একটিমাত্র স্থানে, যা পিতা-পুত্র-নাতি এই তিন চরিত্রের মাধ্যমে তিনটি জেনারেশনের সার্বিক বোধ,আদর্শ ও বিকাশের এক সেতুবন্ধন তৈরী করা হয়েছে। পিতা-পুত্রের আদর্শগত দ্বন্দের কারণে সন্তান বাড়ি ছেড়ে চলে যায় এবং নিজে বাবা হলে যখন সে সন্তানসহ ফিরে আসে, তখনই সে টের পায় নিজের শেকড়। যদিও বাবার সাথে তার আদর্শগত দ্বন্দ্ব রয়েই যায়, তারপরও সে নিজে বাবা হয়ে গভীরভাবে অনুভব করে মানুষের শেকড়ের টান কতটা গভীর, মর্মে প্রোথিত, এবং প্রতিটি মানুষেরই বোধ করি এমন একটি নিজস্ব শেকড় থাকা ভীষণ জরুরী, যেখানে সে ফিরে আসতে পারে, আর সেজন্যই সাদিক তার বাবাকে অনুরোধ করে, যেন তিনি তার নাতিকে অন্তত এমন একটি শেকড় বা জায়গা উপহার দেয়।

পুরো সিনেমাটি এতটাই উপভোগ্য যে, খুব সিরিয়াস সময়েও পরিচালকের সুচারুভাবে রসবোধ সংযোজন আপনাকে যেন কাঁদতে কাঁদতেই হেসে উঠার মতো বোধে উন্নীত করবে। এছাড়া সিনেমায় ব্যবহৃত মিউজিক, ক্যামেরার মুভমেন্ট সবকিছুই মুগ্ধতা ক্রমশঃ বাড়িয়েই তুলবে। পরিশেষে সিনেমাটির আরেকটি চরিত্রের কথা উল্লেখ না করলে নিতান্তই অন্যায় হবে, তিনি হলেন সাদিকের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করা ‘হুমায়রা’। এই নারী চরিত্রটির অভিনয় দেখতে দেখতে আমি এতটাই মুগ্ধ হয়ে পড়েছিলাম যে, বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে, তিনি অভিনয় করছেন, এবং ইরমাক এই চরিত্রটিকে এই সিনেমায় জন্য এতটাই বর্ণিল, শক্তিশালী ও আকর্ষণীয় করে তুলেছেন যে, একজন মা ঠিক যেমনটি হতে পারে বা হওয়া উচিত,তারও অধিক কিছু নিয়ে নুরান চরিত্রটি আমাদের সামনে হাজির হয়েছে, আর তাকে যথাযথভাবে রূপদান করেছেন হুমায়রা, যা অবশ্যই ভূয়সী প্রশংসার দাবী রাখে।

সবকিছুর পরও সমস্ত প্রশংসা যেন পরিচালক ইরমাকের জন্যই বরাদ্দ,কেননা সিনেমাটির কাহিনীকার তিনি নিজেই, ফলে এমন একটি অনবদ্য গল্পের সাথে আমারা খুব কাছ থেকে পরিচিত হয়ে উঠি, যা অনেক বেশি আমাদের নিজেদেরও,তাই তাকে বারবার করে ধন্যবাদ দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। সিনেমাটির কাহিনী বা ঘটনা পরিক্রমা সম্পর্কে আর কিছু না বলে, আপনাদের অনুরোধ করব দেখতে, কেননা অনবদ্য এই সিনেমাটি না দেখলে তুর্কি সিনেমার বিশাল একটা দিক আপনার অজানা রয়ে যাবে।


অরণ্য
ঢাকা, বাংলাদেশ
১৭.০৬.২০১৫

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুন, ২০১৫ রাত ১:৫৩

কোলড বলেছেন: Except Fatih Akin, didn't know about other Turkish directors. I'll definitely watch it.

০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:৪০

অ রণ্য বলেছেন: দেখুন_________ভাল না লাগলে পয়সা ফেরত ।

২| ১৮ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৪২

মায়াবী রূপকথা বলেছেন: Nice review

০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:৪০

অ রণ্য বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২০ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০২

নীল বরফ বলেছেন: রিভিউ খুব ভাল হয়েছে। পড়ে তৃপ্ত একদম। বিশ্ব সিনেমা নিয়ে আপনার লেখাগুলো আমার কাছে অতুলনী লাগে। মুভিটি দেখিনি এখনো। সময় করে আজকাল দেখে ফেলবো।

৪| ২১ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:০৮

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: +, প্রিয়তে নিলাম। সিনেমাটা খুঁজে পেলে দেখব অবশ্যই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.