নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জড়তার কাব্য শুনি, ক্লীব লিঙ্গ বলিয়া কিছু নাই

অ রণ্য

পুলকে পুলক আর সাদা দুধ, সাদা ঘর, মেঘের দোসরযে তুমি ঘুমিয়ে আছো, যেন ঘর ছেড়ে উড়ে গেছোআরব সাগর আর যাদু-কাঠি-ঘ্রাণগাগল, পাগল আমি রাত-দিন বসে টানিযাদুর ঝালর

অ রণ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুভি রিভিউ ।। স্কুপইয়াকজি পেরজা ১৯৬৭ ।। আলেকজান্দার পেত্রোভিচ

০৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৪৩

সম্ভবত, এই সিনেমাটি না দেখলে কখনোই আমার চলচ্চিত্রের প্রতি বিশেষ আগ্রহ জন্মাত না, কিংবা চলচ্চিত্র বিষয়ে পড়াশোনা বা লেখার কোনো ইচ্ছাই তৈরী হত না, এবং এই য়ুগোস্লাভিয়ান সিনেমাটিই মূলতঃ আমাকে বাধ্য করেছে জীবনে প্রথমবারের মতো কোনো চলচ্চিত্র নিয়ে লিখতে। শুধু তাই নয়, এই সিনেমাটি দেখার পরই শুরু হয় আমার বিশ্ব-সিনেমার যাত্রা, আর সেজন্য পেত্রোভিচকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ, এমন অবনবদ্য একটি সিনেমা আমাদের উপহার দেবার জন্য।



১৯২৯ সালের ১৪ই জানুয়ারী ফ্রান্সের প্যারিসে জন্ম গ্রহণ করা এই পরিচালক ১৯৪৭-৪৮ সালে প্রাগ-এর 'এ্যাকাদেমি অব পারফর্মিং আর্ট' এ চলচ্চিত্র পরিচালনার উপর পড়া-শোনা শুরু করেন, কিন্তু চেকোস্লাভিয়া ও য়ুগোস্লাভিয়ার মধ্যে রাজনৈতিক টানা-পোড়েন শুরুর কারণে শিক্ষা শেষ করতে পারেননি, ফলে তাকে স্বদেশে ফিরে আসতে হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে তিনি বেলগ্রেদে 'শিল্পের ইতিহাস' বিষয়ে গ্রাজ্যুয়েট করেন। বস্তুত, তিনি ছিলেন ৬০এর দশকে য়ুগোস্লাভিয়ান সিনেমায় প্রভাব বিস্তার করা 'নোভি ফিল্ম' (নিউ ফিল্ম) আন্দোলনের একজন প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সারির পথিকৃত। ১৬৯১ সালে তার নির্মিত 'টু' সিনেমাটি এই আন্দোলনের পথ পোক্ত করে, এবং ১৯৬৫ সালে নির্মিত 'থ্রি' সিনেমাটি পুরো আন্দোলনের সবচেয়ে পরিণত ও উচ্চমানের সিনেমা হিসেবে আমাদের সামনে হাজির হয়।



যদিও সে সময় নোভি ফিল্ম আন্দোলনের তেমন কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না, তবে একে ৬০ এর দশক জুড়ে য়ুগোস্লাভিয়ার সামাজিক পট পরিবর্তনের অবস্থান থেকে দেখা যেতে পারে, যেহেতু সমাজ তখন বৃহত্তর গণতন্ত্রায়ণ ও বিকেন্দ্রীকরণ একটি ধাপের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল,সেহেতু চলচ্চিত্র নির্মাতারাও শুরু করেছিলেন আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ থেকে পৃথক বৃহত্তর শৈল্পিক অভিব্যক্তি ও অধিক স্বাধীনতার অধিকার দাবি করতে। তারই সূত্র ধরে ১৯৬৭ সালে 'স্কুপইয়াকজি পেরজা' মুক্তি পায় এবং দ্রুত তা আন্তর্জাতিক মনোযোগ ও প্রশংসা অর্জনে সক্ষম হয়, যা পেত্রোভিচকে ইউরোপীয়ানদের মধ্যে প্রথম সারির পরিচালকে উন্নীত করে। মূলত এই সিনেমাটিকে বলা যায় 'য়ুগো-জিপসি' সিনেমার পথিকৃত, যার সূত্র ধরে পরবর্তীতে এসেছে এমির কুস্তোরিকার 'দ্য টাইম অব দ্য জিপসিস' ও ওরান পাক্সালেভিচের 'গার্ডিয়ান এঞ্জেল', অথচ দুটো সিনেমার কোনটিই সক্ষম হয়নি জিপসী জীবনধারার সেই নিপাট-নিভাঁজ সত্যতা বা বাস্তব অনুভূতি তুলে ধরতে, যা পেরেছে এই সিনেমাটি। সিনেমাটি ১৯৬৭ সালে বেস্ট ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম হিসেবে অস্কারের জন্য মনোনিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত তা জিততে না পারলেও, একই বছরে কানস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে জিতে নেয় স্পেশাল জুরি প্রাইজ।

৯৪ মিনিটের এই সিনেমাটিকে একটি উৎকৃষ্ট মানের চলচ্চিত্রের যে কোনো বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে বলা যেতে পারে অনবদ্য নির্মাণ এবং পেত্রোভিচ আমাদের সামনে তা তুলে ধরেছেন সময়ের এমন এক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে, যেখানে সামাজিক বাস্তবতার সাথে সাথে উঠে এসেছে মানব জীবনের শাশ্বত কিছু টানাপোড়েন, আর্থ-সামাজিক বৈষম্য ও যাযাবর জীবনের সেই সব দিক, যার সাথে এভাবে পরিচয় ঘটেনি আগে। বস্তুত, সিনেমাটি কেবল অনবদ্যই নয়, বরং বলা যায় অনেক বেশি সাহসী, বিস্তারিত ও জীবন ঘেষা। কোনো সুনির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকেই এর কাহিনী আমাদের নিয়ে যায় না, কিন্তু এর কাহিনীর যে বয়ান, তা জীবনের চিরন্তন সব অনুষঙ্গকে আমাদের কাছে এত নিপাট-নিভাঁজ তুলে ধরে যে, আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি। সময়কে ছাড়িয়ে যাবার জন্য সময় ধারণ করার প্রয়োজন নেই, বরং সময়ের যে স্বাভাবিক ও সাদা-মাটা গতিপ্রবাহ তা স্বাভাবিক মাত্রায় প্রকাশ করার ফলেই হয়ে উঠে চিরন্তন, যা এই সিনেমাটির ক্ষেত্রে শতভাগ প্রযোজ্য এবং পেত্রোভিচ তা করতে পেরেছেন সফলভাবেই।

সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্র, বোরাকে (বেকিম ফেমিউ) আমরা সত্যিকার জিপসি হিসেবেই খুঁজে পাই এখানে। গোয়াড়, বেয়াড়া, বেহিসেবি, মাতাল, জুয়াড়ি, দুশ্চরিত্র ও সাহসী এক জিপসির প্রকৃত জীবন এই সিনেমায় কাদা-মাটির গন্ধ সমেত বর্তমান, আর দর্শক হিসেবে আমরা সিনেমাটি দেখতে দেখতে তা টের পাই ভালভাবেই। টের পাই এও, জীবনের এমন গতি প্রবাহ আমাদের একাত্ম করছে, যদিও তা আমাদের জীবনের অংশ নয়, কিন্তু এই প্রশ্ন থেকে আমরা সরে আসতে পারি না বিন্দুমাত্র, 'সর্বত্রই কি জীবন এমন নয়, সবখানেই কি জীবন এমন সংঘাত ও সংগ্রামপূর্ণ নয়, তাহলে আমরা কীভাবে এড়িয়ে যেতে পারি এমন উপস্থাপন'? ফলে সিনেমাটি খুব সহজেই হয়ে ওঠে আমাদেরও, এবং আমাদের একাত্ম বোধ রোমানিয়ান মানুষ বা বোরা নামের জিপসির জীবন থেকে ভিন্ন হয়ে উঠে না আর।



বোরার জীবনের বহুবিধ রূপকে খুব সাবলীলভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে এখানে, যার সাথে আমাদের সংযোগ ঘটতে দেরী হয় না, আবার সংযোগ ঘটে গেলে সিনেমাটি থেকে নিজেদের পৃথক করাও যায় না। এই সব সিনেমাগুলো আমাদের জন্য দলির স্বরুপ, যেখানে আমরা খুব স্পষ্টভাবে অবলোকন করি জীবনের বর্ণিল প্রবাহ, সামাজিক অবস্থান, পরিবেশ ও পরিস্থিতি। পেত্রোভিচ সম্ভবত সেই সব বিরল প্রজাতীর পরিচালকদের অন্যতম, যারা কেবল সিনেমা বানানোই জানেন না শুধু, বরং যাদের সিনেমা জ্ঞান রীতিমতো তাদের নিজস্ব জীবন বোধের সমান্তরাল, এবং তাঁরা খুব সহজেই ক্যামেরার মধ্যে দিয়ে এই সব বোধের বাস্তবিক চিত্রায়ণ করতে সক্ষম, ফলে আমরা যেমন চমকে উঠি, তেমন-ই বিস্ময়কর মুগ্ধতায় ভাষা হারিয়ে ফেলি প্রশংসার।

সিনেমাটি শ্যুটিং করা হয়েছে উত্তর সার্বিয়ার জাতিগত বৈচিত্র্যময় অঞ্চল 'ভজভোদিনা'য়, যেখানে সার্ব,হাঙ্গেরিয়ান,শ্লোভাকস, স্লোভানেস এবং অন্যান্যদের পাশাপাশি বসবাস, আর এই সব সম্প্রদায়ের প্রান্তীয় সীমায় বাস করে রোমা, যারা এই চলচ্চিত্রের মূল বিষয়। চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্র বোরা একজন পালক ক্রেতা। সে সম্বর শহরে (হাঙ্গেরী সীমান্তের কাছে) বাস করে এবং রাজহাসের পালকের ব্যাবসা করে। সে বিবাহিত এবং তার সন্তান রয়েছে, অথচ সে অধিকাংশ সময় মদ্যপান, অন্য নারীদের সাথে প্রেম, জুয়া খেলা ইত্যাদির মাধ্যমে সময় কাটায়। ঘটনাক্রমে সে মিত্রার (বার্তা জিভোজিনোভিচ) সতমেয়ে তিসার (গর্দানা জোভানোভিচ) প্রেমে পড়ে এবং সে তাকে যে কোনো মূল্যে পাবার জন্য মারিয়া হয়ে উঠে। পক্ষান্তরে মিত্রা তা ঘটতে দিতে নারাজ, কেন না সে নিজেও তিসাকে কামনা করে। ফলে সে তিসাকে ১২ বছরের একটি ছেলের সাথে বিয়ে দেয়, কিন্তু তিসা বিতৃষ্ণায় ছেলেটিকে বিছানা থেকে ফেলে দিলে মিত্রা তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তিসা সেখান পালিয়ে লেংকা বাড়িতে যায়। সেখানের গায়িকা তাকে বেলগ্রেদ যাওয়ার পরামর্শ দেয় এবং তার পুত্রের ঠিকানা দিয়ে বলে যে, সেখানে সে গান গায় এবং ভাল উপার্জন করে। যদিও তিসা তখন-ই বেলগ্রেদ যাবার জন্য মনস্থির করতে পারে না ফলে মিত্রার হাত থেকে বাঁচার জন্য সাময়িকভাবে নিজেকে গোপন করে, যেখানে বোরার সাথে তার পরিচয় ঘটে এবং তারা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

বোরা তিসাকে তার স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে নিয়ে আসে এবং সেখানে সে কিছু দিন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে বসবাস করে। এদিকে বোরার স্ত্রী, বোরার অনুপস্থিতে তিসাকে বেলগ্রেদ যাবার ব্যাপারে বোঝায় এবং গায়িকা হিসেবে অর্থ উপার্জন করার জন্য উৎসাহিত করে। তিসা অবশেষে বেলগ্রেদ যায় আর সেখানে গিয়ে ভিন্ন বাস্তবতার সন্মুখিন হয়, যেখানে সে গায়িকার ছেলেকে কেবল পঙ্গুই নয়, বরং ভিক্ষুক হিসেবেও আবিস্কার করে, যে বস্তিতে বাস করে ও জীবিকার জন্য গান গেয়ে ভিক্ষা করে। এমন বাস্তবতায় সে ভীষণভাবে আশাহত হয় এবং বাড়িতে ফেরার জন্য মনস্থির করে। পথে দুই হাঙ্গেরীয় লরি ড্রাইভার তাকে লরিতে তুলে নেয়, যাদের একজনের প্রস্তাবে তিসা রাজি না হলে তাকে প্রচন্ড মার-ধোর করে লরির পেছনে হিমায়িত কেবিনে রেখে দেয় এবং সম্বর এর কাছাকাছি কর্দমাক্ত জমিতে ফেলে যায়। সেখান থেকে এক রোমা তাকে পেয়ে মিত্রার কাছে ফিরিয়ে দেয়। বোরা নিজেও বেলগ্রেদ পর্যন্ত তিসাকে অনুসরণ করে, কিন্তু না পেয়ে ফিরে আসে এবং মিত্রার কাছে গিয়ে তিসাকে দাবী করে। ফলে দুই পুরুষের মধ্যে মারামারি শুরু হয় এবং বোরার হাতে মিত্রা খুন হয়। বোরা মিত্রার লাশ হিমায়িত হ্রদের বরফের নিচে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে লাশ পানির উপরে ভেসে উঠে এবং চলচ্চিত্রটি শেষ হয় পুলিশের ঘরে ঘরে তল্লাশি ও প্রতিটি রোমাকে বোরা ও তিসার অবস্থান সম্পর্কিত জিঞ্জাসাবাদের মধ্যে দিয়ে।

বস্তুত, সিনেমাটির এই সংক্ষিপ্ত বর্ণনা খুব সামান্যই পারে এর কাহিনী বা নির্মাণ সম্পর্কে যথার্থ বয়ান করতে। উদহারণস্বরুপ বলা যায় এর চরিত্রায়ণ, যেখানে পেত্রোভিচ বেকিম ফেমিউসহ মাত্র কয়েকজন পেশারদার অভিনেতাকে কাস্ট করেছেন, বাকি সবাইকেই নিয়েছেন ভজভোদিনার রোমা থেকে। ফলে সিনেমাটি দেখতে দেখতে অনেক সময় ডকুমেন্টরির মতো মনে হয়েছে, কিন্তু তারপরও এটি মূল গল্পকে কখনোই অতিরঞ্জিত করেনি, কিংবা সাধারণ জনগণের রীতিনীতি ও অভ্যাসের যে চিত্রায়ণ এখানে করতে চাওয়া হয়েছে, তা থেকে সরে আসেনি এতটুকু। ফেমিউ অভিনেতা হিসেবে সে সময় ছিলেন বেশ জনপ্রিয় এবং তার জনপ্রিয়তার মূল কারণ যে তার অভিনয় দক্ষতা, তার প্রমাণ তিনি ভালভাবেই দিয়েছেন বোরার সহিংস, বদমেজাজী, বেপরোয়া, নিষ্ঠুর ও উচ্ছশৃঙ্খল চরিত্রকে সফলভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে।

সিনেমাটিতে অনেকগুলো অনবদ্য দৃশ্য রয়েছে, তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দৃশ্য, যখন বোরা স্থানীয় পুরোহিতের কাছ থেকে রাজহংসীর পালক কিনে বস্তায় ভর্তি করে লরিতে করে নিয়ে আসতে থাকে, তখন ছুরি দিয়ে বস্তা ফুটো করে সে পালক উড়িয়ে দেয় এবং দেখতে থাকে পালকগুলোর উড়ে উড়ে রাস্তায় পড়তে থাকা। এই দৃশ্য দেখে সে এতটাই মুগ্ধ হয় যে, বস্তার পর বস্তা পালক সে উড়িয়ে দিতে থাকে উন্মাদের মতো এবং সমগ্র দৃশ্যপট ঢাকা পড়ে যায় রাজহংসীর সাদা পালকে। অথচ বোরা নিজে পালক ব্যবসার উপরেই সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল এবং কিছু দিন আগেই এক গরীব কৃষক পরিবারের কাছ থেকে রাজহংসী কেনার জন্য সে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছিল, অথচ সেই কী না বস্তার পর বস্তা কেনা পালক বাতাসে উড়িয়ে দেয় কোনো কারণ ছাড়াই। আমার কাছে তাই দৃশ্যটি হয়ে উঠেছে সিনেমাটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দৃশ্য, কেন না পেত্রোভিচ দৃশ্যটিকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন বিশেষ এক রুপকের মতো, যা হয়ত প্রকৃত যাযাবর জীবনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সিনেমাটির চরিত্রায়ণ-ই যে কেবল প্রশংসার দাবী রাখে তা নয়, বরং একদম শুরু থেকেই রোমানিয়ান সঙ্গীত ও গানের ব্যবহার সিনেমাটির সংলাপের মতোই গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সমস্ত সিনেমা জুড়ে। বিশেষ করে করে এতে রোমানিয়ান জাতীয় সংগীতের গান হিসেবে সংযোজন আমাকে আজও মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে এবং এর গায়িকা 'অলিভেরা ভুচো' যিনি নিচে লেংকা গায়িকা হিসেবে সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন (বাস্তব জীবনেও যিনি রোমানিয়ান সংগীত ও লোকগাঁথার প্রসিদ্ধ শিল্পী) তার উপস্থিতিও ছিল উজ্জ্বল ও সাবলীল। সিনেমার অন্যান্য গানগুলি সরাসরি রোমাদেরই গাওয়া এবং এ স্বীকার করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই, এই সব সংগীত ও গান ছাড়া এই সিনেমাটিকে যেন কল্পনা করাই অসম্ভব।



প্রশংসার দিক থেকে একই কথা সিনেমাটির চিত্রগ্রাহক 'তোমিস্লাব পিন্ত' এর বেলাতেও খাটে এবং তার চিত্রগ্রহণ সিনেমাটির বিশেষ মেজাজ তৈরীতে অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করেছে। প্রায় পুরো সিনেমাটিই মলিন ধূসর-হলুদ আলোয় চিত্রায়ণ করা হয়েছে, যার ব্যবহার আমার পুনরায় দেখতে পাই প্রায় দুই দশক পরে ক্রিস্তোফ কিওলস্কির 'এ শর্ট ফিল্ম এ্যাবাউট কিলিং' এ। বস্তত, আলোর এমন ব্যবহার পুরোপুরি মিলে যায় ভজভোদিনার ফ্ল্যাট, বর্ষাক্তান্ত ও কর্দমাক্ত ল্যান্ডসকেপের সাথে। শুধু কিছু কিছু সময় আমরা আলোর বর্ণিল ব্যবহার দেখতে পাই সিনেমাটিতে, যেমন গ্রামবাসীদের রাস্তায় নাচ, বিয়ের ভোজ বা অনুষ্ঠানে। মূলতঃ চিত্রগ্রহণের মুন্সিয়ানা সিনেমাটির অন্যান্য দিকগুলোর মতোই সমান প্রশংসা পাবার যোগ্য। আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক সিনেমাটির, তা হলো ভাষার ব্যবহার। চরিত্রগুলোকে একদিকে যেমন শুনি রোমানিয়ান ভাষায় কথা বলতে, তেমন-ই শুনি হাঙ্গেরিয়ান, সাইবেরিয়ান কিংবা স্লোভাক ভাষাতেও কথা বলতে, ফলে সিনামাটির সংগীতের মতোই এর ভাষার ব্যবহারও একে ঋদ্ধ করেছে এবং ভজভোদিনার জাতিগত বৈচিত্র্যতা আরও গভীরভাবে তুলে ধরেছে আমাদের সামনে।

পেত্রোভিচ এই সিনেমায় কোনোরূপ মহত্ব আরোপ বা রোমান্টিকতার সামান্যতম সংযোজন ছাড়াই আমাদের দেখিয়েছেন য়ুগোস্লাভ রোমার বাস্তব জীবন, এবং সম্ভবত, রোমা নিয়ে বানানো এখন পর্যন্ত এটাই সেরা সিনেমা, আর আমার কাছে, সত্যিকারের এক মাষ্টারপিস, যা আজীবন স্মরণ রাখার মতো। অথচ দুঃখের বিষয়, পেত্রোভিচের চলচ্চিত্রগুলো এখন বিস্মৃত প্রায় এবং তারচেয়েও দুঃখজনক, তাঁর সিনেমাগুলো সম্পর্কে যথাযথ তথ্য না পাওয়া কিংবা ভাল মানের রিভিউ না থাকা। অথচ স্কুপইয়াকজি পেরজা ও পেত্রোভিচ উভয়ই বিশ্ব-সিনেমায় আরও অধিক মনোযোগ ও সন্মান দাবী করে, কেবলমাত্র শিল্পের বিচারে নয়, বরং আমাদের চলচ্চিত্র ইতিহাসের অনন্য দলিল ও পথিকৃত হিসেবেও।


পরিচালকের অন্যান্য সিনেমা
ইট রেইনস ইন মাই ভিলেজ ১৯৬৮
দ্য মাস্টার এ্যান্ড মার্গারেট ১৯৭২
গ্রুপ পোর্টেট উইথ আ লেডি ১৯৭৭

সিনেমাটির ইউটিউব লিংকঃ
https://www.youtube.com/watch?v=PeFi4jcdhQM

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৪৮

ফকির ভাই বলেছেন: Thanks

০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:৩২

অ রণ্য বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:২৮

কোলড বলেছেন: Never knew about this director. I'll see if I can get it on netflix. Also, thanks for a brilliant review.

১০ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৩৯

অ রণ্য বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:৫৯

আমিই মিসির আলী বলেছেন: দেখতে হবে।
কি এমন সিনেমা যেটা এই বয়সে এই যুগে আপনার আগ্রহ জন্মাইলো।

১৩ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:১৬

অ রণ্য বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ০৪ ঠা জুন, ২০১৬ রাত ৮:১১

নীল বরফ বলেছেন: আপনার লেখা রিভিউগুলো অন্যান্য, দেখার মাঝেও যে কত কিছু অদেখা রয়ে যায় তা আপনার না লেখা পড়লে হয়তো কোনোদিন জানা হতো না। আপনার লেখাগুলো পড়ে মুভি নিয়ে আমাকে আবার সবকিছু নতুন করে ভাবতে হয়। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:১১

অ রণ্য বলেছেন: ধন্যবাদ নীল বরফ আপনার মন্তব্যের জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.