নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জড়তার কাব্য শুনি, ক্লীব লিঙ্গ বলিয়া কিছু নাই

অ রণ্য

পুলকে পুলক আর সাদা দুধ, সাদা ঘর, মেঘের দোসরযে তুমি ঘুমিয়ে আছো, যেন ঘর ছেড়ে উড়ে গেছোআরব সাগর আর যাদু-কাঠি-ঘ্রাণগাগল, পাগল আমি রাত-দিন বসে টানিযাদুর ঝালর

অ রণ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ম, উচ্চশব্দ, অত্যাচার ও ধর্মপশুতে রূপান্তর

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:২৬

সম্প্রতি ভারতের জনপ্রিয় শিল্পী সনু নিগমের আযান সম্পর্কিত একটি বক্তব্য নিয়ে বেশ তোলপাড় হবার পর আমি নতুন করে ভাবতে শুরু করলাম যে, এই ভাবনাটি আমাকে দীর্ঘ দিন ধরে তাড়িত করেছে এবং আশ্চর্যজনকভাবে আমি সনুকেই সমর্থন করলাম দ্বিধাহীন চিত্তে। ফলস্বরূপ আমার মধ্যে দীর্ঘ দিন যেসব প্রশ্নগুলো উত্তরহীন ছিল, তা পুনরায় সামনে এলো এভাবে—

১. মানুষ কেন ধর্মের রীতিনীতি এভাবে মরিয়া হয়ে পালন করবে?
২. মানুষ নিজেকে শিক্ষা-দীক্ষায় কেন জ্ঞানী ও অধিক বিবেকবান করে তুলবে না?
৩. মানুষ ধর্ম পালন করে কেবলমাত্র কি পরকালের অর্জনে লিপ্ত হবে? ইইহালে কি তার কোনো অর্জন থাকবে না?
৪. যে কোনো ধর্ম কি অপর মানুষ তথা জীবকে কষ্ট দেওয়া বা পীড়া দেওয়া সমর্থন করে?
৫. এমন কোনো ধর্ম আছে কি যা সুন্দর ও শান্তি সমর্থন করে না?
৬. নিজ ধর্ম মানেই কি তা সর্বোত্তম?
৭. সমাজে বিরাজমান অশান্তি, দুর্নীতি, খুন, ধর্ষণ, কুসংস্কার ইত্যাদির ক্ষেত্রে ধর্ম কি নিতান্তই নমনীয়? কেন এইসব বিষয়ে ধর্ম গোয়াড় ও অন্ধ নয়? (আর যদি হয়েই থাকে, তবে কেন সমাজে রোজ এসব ঘটতে থাকে এবং ধর্মভীরু মানুষরা তার বিপক্ষে অপরাপর বিষয়ের মতো জোট বেঁধে রাস্তায় নামে না?)
৮. ধর্ম বিষয়ে মানুষ যত মরিয়া, ধর্মের নির্দেশিত সুন্দরতম বা মহানতম চরিত্রে মানুষ তত মরিয়া নয় কেন?
৯. ধর্ম কি শুধুই আচার, যা চিরকাল পালন করা হবে, সুন্দরতম প্রত্যক্ষ প্রয়োগ ঘটবে না?
১০. ধর্ম কি তার প্রাগৈতিহাসিক অবস্থান থেকে বিচার-বুদ্ধি দ্বারা আধুনিকতম গ্রহণযোগ্য অবস্থানে সরে আসতে পারে না? (না পারলে আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতি বা সুফল কেন সকল ধর্মের রীতিনীতিতে সংযুক্ত হবে?)

এমন হাজারও প্রশ্ন যখন নতুন করে আমাকে অস্থির করে তুলল, তখন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতার মধ্যে এই নির্মম বস্তবতাটি আমাকে যথেষ্ট পীড়া দিল? আমি বিমূঢ় হলে ভাবতে থাকলাম সেটি নিয়ে।

আমার মা মাঝে মাঝেই খুব অসুস্থ থাকেন। তিনি নিতান্তই ধর্মপ্রাণ মানুষ। কখনও কখনও রাতে ফোন করলে তার বিরক্ত হওয়া অভিব্যক্তি ও যন্ত্রণাকাতর অভিযোগ শুনতে পাই। জানতে চাইলে বলে, সেই সন্ধ্যা থেকে শুরু করেছে ওয়াজ-নসিহত, একটানা ৮/১০টা মাইক লাগিয়ে তীব্রস্বরে পুরো এলাকা মাতিয়ে রেখেছে। কানে তুলা দিয়েও রক্ষা নেই। একটু যে সুস্থিরভাবে বসব, সে উপায়ও নেই। বুকটা ধড়ফড় করছে, কখন থামবে কে জানে। মায়ের এই কথাগুলো শুনে আমি বিমূঢ় হয়ে পড়ি। এই কথাগুলো তিনি যে শুধু রাতে বলেন তাও নয়, বরং প্রত্যেক শুক্রবার দুপুর থেকে জুম্মার নামাযের পূর্বের যে বয়ান, সারাবছর তাকে কষ্ট দেয়। বস্তুত, ওয়াজ-নসিহত তাকে কষ্ট দেয় না, কষ্ট দেয় উচ্চশব্দের মাইকের আওয়াজ ও বয়ানকারির গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে থাকার কর্কশ শব্দ, যা কেবল একটি নির্দিষ্ট এলাকা নয়, আশেপাশের সকল এলাকার একসাথে মিলিমিশে রীতিমতো শব্দ অত্যাচারের মতো তাকে অতিষ্ট করে তোলে। এর চেয়েও নির্মম যে কথাটি মা বলে—কে যে কী বলছে কিছুই বুঝতে পারছি না, কারটা শুনব আর কারবটা বুঝব? কারও মাথায় কি একটুও বুদ্ধি নেই, একটুও কি এই ভাবনা নেই, শব্দটা আরেকটু কমিয়ে শ্রুতিমধুর করে বললে শুনতে ভাল লাগে, আগ্রহ জাগে, মনোযোগ রাখা যায়, কিন্তু সকলেই এ কোন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, যেন একজন আরেকজনকে ছাপিয়ে নিজেরটাই জাহির করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। তারা কি সত্যিই আমাদের শোনাতে বা বোঝাতে চায়, নাকি কে কার চেয়ে বেশি জোরে বলতে পারছে, সেই চরম প্রতিযোগিতায় মরিয়া হয়ে উঠেছে?

এই কথাগুলো আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়, কারণ যিনি ইমাম বা ধর্ম সম্পর্কে সমূহ জ্ঞান রাখেন, তার কি একবারও মনে হয় না, একটি এলাকায় এক বা একাধিক অসুস্থ মানুষ থাকতে পারে, যাদের জন্য উচ্চশব্দ কষ্টের বা যন্ত্রণার। অনেক শিশু থাকতে পারে, যাদের জন্য এমন উচ্চশব্দ নিঃসন্দেহে ক্ষতিকর। এমন কি হাসপাতালের পাশের মসজিদটিও এই সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি বিবর্জিত যে, সেখানে অসুস্থ রোগি রয়েছে। তারা কি সুন্দরের, সহনীয় আচরণের চর্চা করতে জানে না বা ধর্মে কি এই বিষয়ের কোনো উল্লেখ নেই? ধর্ম কি তাদের এমন আচরণে লিপ্ত হতে নির্দেশ প্রদান করেছে? ধর্মে যদি পরিস্কারভাবে উল্লেখ না থাকে, কোন মাত্রার শব্দ ব্যবহার করা যাবে, তবে ধর্ম এ নির্দেশও প্রদান করে নি যে, উচ্চমাত্রার শব্দ দিয়ে ধর্মীয় আচরণ-আচরণের পালন করতে হবে। তাহলে ধর্মের দোহায় দিয়ে, ধর্মীয় আচারে এমন সংযোজন বা রীতির আগমণ ঘটলো কীভাবে?

তাছাড়া আযানের সময় একটি এলাকার ১০/১২টা মসজিদের মাইক যখন একসাথে আযান দেবার বেজে উঠে, কোন আযানটি শুনব, সেটাও ভেবে পাই না, কারণ এতগুলো শব্দ বিভিন্ন তাল, সুর ও শব্দে একসাথে বাজতে গিয়ে জগাখিচুড়ি বাঁধিয়ে ফেলে এবং সকলেই শব্দটির মাত্রা এত বেশি রাখে যে, সাধারণ সহ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যায়। তাছাড়া অধিকাংশ আযানই বেসুরোভাবে দেওয়া হয়। কিছু কিছু মোয়াজ্জিন আছে, যারা আযান দেওয়াটাও শেখেন নি, যখন আযানের চেয়ে সুললিত বিষয় খুব কমই আছে। কেন তাদের কঠোরভাবে বলা হয় না, আযানের মতো এমন একটি জিনিস তুমি আরও সুন্দর ও সুললিত করে দাও, কিংবা তুমি না পারলে শিখে নাও, নতুবা যারা পারে তাদেরকে ছেড়ে দাও। কিন্তু তা করা হয় না, বরং বছরের পর বছর, শতাব্দীর পর শতাব্দী এভাবেই চলতে আছে। কবে আমরা তবে সুন্দরের প্রকৃত চর্চা করব, যার সর্ম্পকে ধর্মই আমাদের শিখিয়েছে ও কঠোরভাবে নির্দেশ প্রদান করেছে, অথচ ধর্মের দোহাই দিয়েই আমরা নির্লজ্জভাবে তা থেকে সরে এসেছি বা বিরূপ আচরণে মগ্ন হয়েছি।

এটা যে কেবল ইসলাম ধর্মে বর্তমান তা নয়। অপরাপর সকল ধর্মই উচ্চশব্দকে ধর্মের অংশ হিসেবে গণ্য করে আমাদেরকে তার সাথে চরমভাবে অভ্যস্ত করেছে, যখন সেই ধর্মের শুরুতে বিষয়টি এমন ছিল না মোটেও। জানি না কবে মানুষ ধর্মের মধ্যে থেকেই ধর্মের সুন্দতম দিকগুলোর চর্চা করবে এবং মানুষের প্রতি অধিক শ্রদ্ধাশীল ও মানবিক হয়ে উঠবে। ধর্ম আমাদেরকে এতটাই অন্ধ করে তুলেছে যে, তার প্রচলিত যে কোনো কিছু সম্পর্কে বলতে গেলেই তারা কেবল অভিযুক্ত করে না, বরং রীতিমতো তার বিপক্ষে দল বেঁধে নেমে পড়ে। মানব সভ্যতার সবচেয়ে কলংকিত বিষয়, ধর্মের নামে মানুষ অপর মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে এবং অনুশোচনা বোধ থেকে সরে আসে। তারপর তাকে পরলৌকিক অর্জনের তকমায় আখ্যায়িত করে। কী অদ্ভুত এই বোধ, ভাবলেও গা শিউরে ওঠে!

ধর্ম পরলৌকিক বিষয়—এই চিরকালীন ভাবনাই মানুষকে ধার্মিক পশুতে রূপান্তরিত করার পথ ত্বরান্বিত করেছে। মোদ্দা কথা, ধর্ম যদি ই্হলোকিক মুক্তি ও শান্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তবে সেই ধর্ম কোনো লোকেই কোনো প্রকার শান্তি বা মুক্তি দিতে সক্ষম নয়। এই কথাটি ধর্মপশুতে রূপান্তির হবার পর আর বোঝার ক্ষমতা থাকে না, তাই রূপান্তরিত হবার পূর্বেই বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করলে এই পৃথিবী ধর্মসহই অনেক বেশি সুন্দর ও শান্তির হয়ে উঠবে, নিঃসন্দেহে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:০৯

আলআমিন১২৩ বলেছেন: তবে সেই ধর্ম কোনো লোকেই কোনো প্রকার শান্তি বা মুক্তি দিতে সক্ষম নয়। এই কথাটি ধর্মপশুতে রূপান্তির হবার পর আর বোঝার ক্ষমতা থাকে না, তাই রূপান্তরিত হবার পূর্বেই বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করলে এই পৃথিবী ধর্মসহই অনেক বেশি সুন্দর ও শান্তির হয়ে উঠবে, নিঃসন্দেহে।

নি[সন্ধেহে সঠিক।ধম খারাপ নয়। ধমপশু খারাপ।[

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৭

অ রণ্য বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.