নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হারিয়ে যাই মাঝে সাঝে অচিনরে চেনার খোঁজে...
প্রেমের অনেক রঙ হয় । একেকটা প্রেমের একেকটা রঙ। একটা সময় ধারনা ছিলো প্রেম বুঝি একবারই হয় বা যাকে বলে প্রথমপ্রেম । কিন্তু আসলে প্রথম বা শেষপ্রেম বলে কিছু নেই । প্রত্যেকটা প্রেমই প্রথমপ্রেম আর প্রত্যেকটা প্রেমই জ্বলন্ত অগ্নিকণার তাপের মত পোড়ায় এবং আমরা পুড়ি ।পোড়াপুড়িতেই প্রেমের স্বার্থকতা । যখনই পোড়াপুড়ি বন্ধ হয়ে যায় প্রেমও হারিয়ে যায়। সেই প্রেমে কেউ শূণ্যতার মধ্যে হারিয়ে যায়, কেউ পূর্ণতার সংসার গড়ে । শূণ্যতায় হারিয়ে যাওয়ারা নতুন প্রেমের সন্ধানে থাকে … কেউ খুঁজে পায়, কেউ পায় না । আর পূর্ণতার সংসার পাতারাও প্রেমমুখি …তবে তাদের এক পায়ে শেকল বাঁধা থাকে দায়িত্ব ও সামাজিকতার চাবি দিয়ে ।তাই বেশিরভাগই তাদের জেগে ওঠা প্রেমকে মাটিচাপা দিতে বাধ্য হয় ।এ থেকে সবচেয়ে বেশি যা বুঝা যায় তা হল মানুষ মাত্রই প্রেমাকুল । আর মানুষটি যদি হন কাজী নজরুল ইসলাম তো শেকল পরার ছল করে কি আর অনুরাগের মধুবাষ্প আঁটকিয়ে রাখা যায় ? নাহ , তা যায়ওনি । নজরুলের প্রেমাসক্ত ব্যাকুল মনও প্রেমে পরেছে ।নজরুলের জীবনে প্রেম এসেছে বেশ ক’বারই । প্রথমেই যার নাম আসে তিনি হলেন সৈয়দা আসার খানম । নজরুল তাকে নাম দেন নার্গিস , ফার্সি ভাষায় যার অর্থ গুল্ম ।কুমিল্লার দৌলতপুরের নার্গিস নজরুলের বাঁশির সুরে হারিয়ে যান । তারপর রাগ অনুরাগের মেলা আর হারিয়ে যাওয়ার মিষ্ট অনুভুতি । যদি এভাবেই চলত তো ভালই হতো । কিন্তু এই বিচিত্র দুনিয়ায় প্রেমের স্থান কখনো মৌলিক হয় না । প্রেমকে পরিবার, সমাজ এবং এই সমাজের বিচিত্র মানুষদের পরাভূত করেই লক্ষ্যে পৌছাতে হয় । আসলে ঠিক বললাম কি ?? প্রেমের স্থায়িত্ব তো লক্ষ্যে পৌঁছানোতে নয় । বরঞ্চ লক্ষ্যে পৌঁছালেই প্রেমের ইতি ঘটে । প্রেম হচ্ছে এক অগ্নিঝড় , তাকে পুষে রাখতে হয় প্রেমকে পুষে রাখার জন্য । অর্জন আর প্রাপ্তিতে এর ক্ষয় !এই ভাবনাটা সবাই আপনমনে করে নিবেন । এখন আসি নজরুলের জীবনে প্রেমের অধ্যায়গুলো নিয়ে । নার্গিসের মামা ও নজরুলের বন্ধু আলি আকবর খান, মুলত যার আমন্ত্রনেই নজরুলের কুমিল্লায় আসা , সেই আলি আকবর খানের একের পর এক দুরাভিসন্ধিতা ও কূটচাল ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে সরল নজরুলকে । শেষমেষ বিয়ের দিন আকদ হয়ে যাওয়ার পর যখন কাবিনের শর্তস্বরুপ নজরুলকে ঘরজামাই হয়ে থাকার কথা বলা হয় তখন সহ্যের সী্মা ছিড়ে যাওয়া অন্তর্দহে কাওকে কিছু না বলেই নজরুল দৌলতপুর ত্যাগ করেন ।এবং আমার মনে হয় তাঁর প্রেম টিকে গেল সেখানেই , অনুরাগের মুহূর্তগুলো অক্ষয় হয়ে থাকল স্মৃতির পাতায়, কবিতার খাতায় । সরল , ভবঘুরে নজরুলের আত্মসম্মানবোধ ও পৌরোষ তাঁর প্রেমকে টিকিয়ে রাখল ! অদ্ভুত শোনালেও আমার ব্যাখ্যা এটাই । আরো একটা জিনিস বোঝা গেলো যে কাপুরুষরা প্রেম করতে পারে না , করলেও সেটা প্রেম না সন্ধি । অনেকদিন পর নার্গিসের এক চিঠির উত্তরে নজরুল একটি গান লিখে পাঠান… ,
‘যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই
কেন মনে রাখ তারে
ভুলে যাও তারে ভুলে যাও একেবারে।
আমি গান গাহি আপনার দুখে,
তুমি কেন আসি দাড়াও সুমুখে,
আলেয়ার মত ডাকিও না আর
নিশীথ অন্ধকারে।
দয়া কর, মোরে দয়া কর, আর
আমারে লইয়া খেল না নিঠুর খেলা;
শত কাঁদিলেও ফিরিবে না সেই
শুভ লগনের বেলা।
আমি ফিরি পথে, তাহে কর ক্ষতি,
তব চোখে কেন সজল মিনতি,
আমি কি ভুলেও কোন দিন এসে দাঁড়িয়েছি তব দ্বারে।
ভুলে যাও মোরে ভুলে যাও একেবারে।‘
তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে বেশ কয়েকবছর পর । নার্গিস অধ্যায় শেষ হয়ে যায় কবির জীবনে । তারপর আসেন প্রমীলা সেনগুপ্ত , ডাকনাম দোলন । কুমিল্লার দৌলতপুর যাবার আগে পথিমধ্যে আলী আকবর খান নজরুলকে নিয়ে কুমিল্লায় তার বন্ধু বীরেন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের (বীরেন) বাসায় উঠেন। সেই বাড়িরই মেয়ে প্রমীলা । বিয়ের রাতেই নার্গিসকে দৌলতপুরে ফেলে নজরুল বীরেনকে সাথে নিয়ে দীর্ঘপথ পায়ে হেটে কুমিল্লায় বীরেনদের ঘরে উঠেন।দীর্ঘ পথ অতিক্রমের পরিশ্রম ও মানসিক কষ্টে নজরুল খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেন পরিবারের সবাই কবিকে সেবাযত্ন করে সারিয়ে তুলতে নেমে পড়েন।বাড়ির ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রমীলাই ছিলেন সবার বড় এবং নজরুলের সেবা যত্নের জন্য সেই পাশে থাকত সবসময় । কিশোরী দোলন ও তরূণ কবি নজরুলের প্রণয়ের সম্পর্ক তখনই গড়ে উঠে। রাগ অনুরাগের খেলা বুঝি এমনি । পদে পদে সেখানে বাঁধা । এরপর বেশ কয়েকবারই নজরুল কুমিল্লায় আসেন । ওদিকে প্রমীলা (দোলন)-নজরুলের সম্পর্কের কথা কুমিল্লা শহরের তরুণ সমাজে বেশ হিংসাত্বক আলোড়ন সৃষ্টি করে । মুসলমান নজরুলের হিন্দু বাসায় থাকা, সেই সাথে হিন্দু মেয়ে প্রমীলার সাথে প্রনয়ের ব্যাপারটি কেউ সহজে মেনে নেয় না। কিন্তু এই প্রেমটাই পরিনতি পেল শেষমেষ । প্রেম রুপ পেলো দায়িত্ব ও সুখ ভাগাভাগির পরিনয়ে । সেসময়ের সামাজিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে বেশ ঝড়ঝণ্ঝাট পেরিয়েই তাদের প্রনয় পরিনয়ে মেলে । নার্গিসকে উদ্দেশ্য করে লিখা, ‘হার-মানা-হার’ অবশেষে নজরুল পড়ালেন দুলীর গলায় ।
‘বিজয়িনী’ —–
হে মোর রানী ! তোমার কাছে হার মানি আজ শেষে।
আমার বিজয়-কেতন লুটায় তোমার চরণ-তলে এসে।
আমা সমর-জয়ী অমর তরবারী
দিনে দিনে ক্লান্তি আনে, হ’য়ে উঠে ভারী,
এখন এ ভার আমার তোমায় দিয়ে হারি
এই হার-মানা-হার পরাই তোমার কেশে।।
ওগো জীবন – দেবী!
আমায় দেখে কখন তুমি ফেল্লে চোখের জল,
আজ বিশ্ব –জয়ীর বিপুল দেউল তাইতে টলমল!
আজ বিদ্রোহীর এই রক্ত রথের চূড়ে,
বিজয়ীনি! নীলাম্বরীর আঁচল তোমার উড়ে,
যত তুণ আমার আজ তোমার মালায় পুরে,
আমি বিজয়ী আজ নয়ন জলে ভেসে’।
কিন্তু প্রেমিক নজরুল তো হারিয়ে যায়নি । আর যায়নি বলেই হৃদয়ের ঘরে বারেবারেই নাড়া পরেছে । প্রেম এমনি এক অদ্ভুতুরে ছোঁয়াচে যার আঁচ কখন কার সাথে লাগে তা বোঝা বড় কঠিন । নজরুলের জীবনে প্রেমের সবচেয়ে জটিল পর্বটি হল বেগম ফজিলাতুন্নেসা । মাত্র তিনজন ব্যাক্তি এই ঘটনার সাথে জড়িত । এক,বেগম ফজিলাতুন্নেসা , দ্বিতীয়জন হচ্ছেন অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন এবং তৃতীয় জন স্বয়ং কাজী নজরুল ইসলাম। অন্যকেউ নজরুল-ফজিলতুন্নেসা সম্পর্কে জানতেন না। প্রমীলার সাথে নজরুলের বিয়ে হয় ১৯২৪ সালে আর ফজিলাতুন্নেসার সাথে নজরুলের দেখা ১৯২৮ সালে । স্থুলভাবে দেখলে নজরুলের সাথে ফজিলাতুন্নেসার সম্পর্ক ওতোটা জটিল না । নজরুল ফজিলতুন্নেসাকে প্রেম নিবেদন করে প্রত্যাখাত হন। দুই/তিন বছর নজরুলের অনুরাগ টিকেছিল ।এক পর্যায়ে নজরুলের জীবনে ফজিলতুন্নেসা পর্বের ইতি ঘটে । আবার ঘটনা এতটা সরলও নয় । এ সম্পর্কে কাজী মোতাহার হোসেন লেখেন,
‘ফজিলতের প্রতি নজরুলের অনুভূতির তীব্রতা দু’তিন বছরের সময়সীমায় নিঃশেষিত হয়ে যায়। সমান্তরাল আর একটি স্তবকে লক্ষ্য করা যায় কবি তার আকাঙ্খিত প্রেমকে সুন্দরতর আর এক জগতে খুঁজে ফিরেছেন যেখানে প্রেমে কোন নৈরাশ্য নেই, কোন বেদনা নেই। প্রেমের জন্য নারীর কাছ থেকে তিনি চেয়েছিলেন পূর্ণ আত্মসমর্পন কিন্তু কোথাও তিনি তা পান নি। ফলে ধীরে ধীরে তিনি খোদা ফ্রেমের দিকে ঝুঁকে পড়লেন’। আর তাই বোধকরি কবি গেয়ে ওঠেন,
‘পরজনমে দেখা হবে প্রিয়
ভুলিও মোরে হেথা ভুলিও।।
এ জনমে যাহা বলা হ’ল না,
আমি বলিব না, তুমিও বলো না।
জানাইলে প্রেম করিও ছলনা,
যদি আসি ফিরে, বেদনা দিও।।
হেথায় নিমেষে স্বপন ফুরায়
রাতের কুসুম প্রাতে ঝরে যায়,
ভালো না বাসিতে হৃদয় শুকায়,
বিষ-জ্বালা-ভরা হেথা অমিয়।।
হেথা হিয়া উঠে বিরহে আকুলি,
মিলনে হারাই দু’দিনেতে ভুলি,
হৃদয়ে যথায় প্রেম না শুকায়-
সেই অমরায় মোরে স্মরিও।‘
নজরুলের জীবনে এমন করেই একেক সময় প্রেমের একেক রঙ ভেসেছে , খেলেছে আপনমনে। তার বিচ্চুরণ ঘটেছে কবিতা, গল্প, সাহিত্যে ও সামগ্রিক ক্রিয়াকর্মে। নজরুল প্রেম পেয়েছিলেন , প্রেমে পড়েছিলেন এবং পুড়েছিলেন । তাঁর এই আমৃত্যু পোড়াই প্রেমিক হিসেবে তাঁকে সার্থক করেছে । অন্তত আমার যুক্তিতে তিনি স্বার্থক । কারন ঐযে বলেছিলাম, পোড়াপুড়িতেই প্রেমের স্বার্থকতা ! আকাঙ্খিত প্রেমকে খুঁজে ফেরাই আমাদেরকে আরো বেশি প্রেমিক করে তুলে ।
২৫ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:২৬
অরূপ স্বরূপ বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ২৫ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৫
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।
২৭ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:২৯
অরূপ স্বরূপ বলেছেন: উৎসাহ পেলাম ... ধন্যবাদ
৩| ২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:৩৩
ফা হিম বলেছেন:
ভালো পোস্ট
২৭ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:২৮
অরূপ স্বরূপ বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ২৬ শে মে, ২০১৪ ভোর ৫:৩২
আরজু মুন জারিন বলেছেন: প্রেমের অনেক রঙ হয় । একেকটা প্রেমের একেকটা রঙ। একটা সময় ধারনা ছিলো প্রেম বুঝি একবারই হয় বা যাকে বলে প্রথমপ্রেম । কিন্তু আসলে প্রথম বা শেষপ্রেম বলে কিছু নেই । প্রত্যেকটা প্রেমই প্রথমপ্রেম আর প্রত্যেকটা প্রেমই জ্বলন্ত অগ্নিকণার তাপের মত পোড়ায় এবং আমরা পুড়ি ।পোড়াপুড়িতেই প্রেমের স্বার্থকতা । যখনই পোড়াপুড়ি বন্ধ হয়ে যায় প্রেমও হারিয়ে যায়। সেই প্রেমে কেউ শূণ্যতার মধ্যে হারিয়ে যায়, কেউ পূর্ণতার সংসার গড়ে । শূণ্যতায় হারিয়ে যাওয়ারা নতুন প্রেমের সন্ধানে থাকে … কেউ খুঁজে পায়, কেউ পায় না
অসাধারণ একটি পোস্ট। ধন্যবাদ লেখককে। অনেক শুভকামনা রইলো।
২৭ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:২৭
অরূপ স্বরূপ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:২৪
আমারে তুমি অশেষ করেছ বলেছেন: কবিকে নিয়ে আজকের দিনের জন্য একটি অনন্য পোস্ট। প্রিয়তে নিয়ে নিলাম। কবির প্রতি রইল শ্রদ্ধাঞ্জলী।