নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অরূপ স্বরূপ

আমি মুক্ত, অবরুদ্ধ ,আমি কঠোর আবার কিছুই না ..

অরূপ স্বরূপ

হারিয়ে যাই মাঝে সাঝে অচিনরে চেনার খোঁজে...

অরূপ স্বরূপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্যআলোকে নজরুল, লালন এবং অসাম্প্রদায়িকতা

২৭ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৩১

অনেকদিন ধরেই কাজী নজরুল বা তাকে নিয়ে যে বিষয়ের লেখাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তা একই সঙ্গে একটূ জটিল বা ব্যাপক কিংবা বলা চলে স্পর্শকাতরতাপূর্ণ ।খুব স্বাভাবিকভাবেই ভাবনাগুলো শুধুমাত্র কাজী নজরুলে সীমাবদ্ধ থাকেনি।আসলে জটিল কিংবা ব্যাপক সেকারনেই মনে হয়েছে কারন ভাবনাগুলো অদ্ভূত রকমভাবে ডালপালা ছড়িয়েছে । জোর করেও আমি তা নজরুলে সীমাবদ্ধ রেখে একটি সুখপাঠ্য, তথ্যদানকৃত কিংবা গতানুগতিক তৈলমারা লেখায় রাখতে পারছি না ।নিজেকে নিজে প্রশ্ন করছি, কখনো উত্তর পাচ্ছি কখনো পাচ্ছি না । কখনো ঘেন্না হচ্ছে নিজের উপর , কখনো স্বান্তনা খুঁজছি । যে প্রশ্নটি নিজেকে বারবার করেছি তা হচ্ছে , আমি কি সাম্প্রদায়িক বা সাম্প্রদায়িকতার বীজ কি বহন করি বা করছি ? উত্তর পাচ্ছি – হ্যাঁ !! অদ্ভূতরকমভাবে নিজেকে আয়নায় দেখে ভয় হচ্ছে বা পাচ্ছি।



নজরুলের আসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে লিখতে গিয়ে আমাকে সম্প্রদায়, সাম্প্রদায়িকতা , এর উৎপত্তি ও বিস্তার নিয়ে ভাবতে হলো । এবং আমি যে বিষয়গুলো পেলাম তা আশা করি চিন্তার খোরাক জোগাবে এবং এই বিষয়বস্তুর উপর নতুন করে আলোকপাত ঘটাবে ।আমাকে শিকড়ে টান দিতে হলো । আর আমার মনে হয় এটাই সত্য জানার শ্রেষ্ঠ উপায় । বাংলাদেশ নামক দেশটির সত্য জানতে যেমন ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ জানতে হয় কিংবা ৪৭ এর পাকিস্তান থেকে শুরু করতে হয় তেমনি মানবপ্রজাতির সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীভুক্ত হওয়ার ইতিহাস জানতে হলে সৃষ্টির শুরুতে ফিরতে হয় । একটা বিষয় বুঝলাম যে সৃষ্টির শুরু থেকে মানবপ্রজাতির সহাবস্থান ছিলো অস্তিত্ব রক্ষার জন্য । বন্য জীবনে মানুষের প্রতিপক্ষ ছিলো পশু , মানুষ নয় । এবং তাদের জীবনাচারন অসভ্যতার প্রতিক হলেও তাদের মধ্যে ছিল ঐক্য । মানুষে মানুষে তখনি ভেদাভেদ বাড়তে থাকলো যখন সমাজের উৎপত্তি হলো । সমাজ তৈরির পর মানুষের মধ্যে আত্মসম্মান, আত্মবোধ এর বিস্তার মনোজগতে আনল এক বড় পরিবর্তন । মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্ব ও আধিপত্য প্রমান করার এক মাতাল করা নেশা পেলো । শ্রেণীর জন্ম হতে থাকল । উঁচু নিচুতে ভাগ হয়ে গেলো মানুষ । ধর্মীয় গ্রন্থগুলো আমাদের জীবনে ডিসিপ্লিনের বাতিঘর হয়ে আসতে থাকল । এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই আমরা এর অপব্যবহার করলাম । যুগে যুগে এর অপব্যবহারের ফলে আমাদের ভিতর সাম্প্রদায়িকতা এবং উঁচূনিচুর এই বিষয়টা মজ্জাগত হয়ে যেতে থাকল । আমরা মানবকুলের এই বৈশিষ্ঠ্যটি উত্তরাধিকারসূত্রে বহন করে চলছি এবং এই চলা অব্যাহত এখনো ।



উপমহাদেশে এটা বেশি কারন আমরা সম্প্রদায় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা সুরক্ষিত । আর পাশ্চাত্যে ধর্মের প্রভাবটা কম বিধায় বর্ণপ্রথা বা সাদাকালো বিভেদ টেনে মানুষরা বৈষ্যমের এই সুখঅসুখটা ভোগ করে । কিন্তু যুগে যুগে কিছু ক্ষেপা জন্ম নিয়েই ফেলে । তাদের কাজ হলো নিজের ভিতর বয়ে চলা এই লিগেসিটা কে নিয়ন্ত্রন করে একটা সহাবস্থানময় সমাজ, দেশ ও পৃথিবীর প্রত্যাশা করা । এবং তাদের প্রত্যাশা শুধু প্রত্যাশার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং তাদের কাজের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পরে । অসাম্প্রদায়িক নাম যদি কাউকে দিতেই হয় তবে এই ক্ষেপাদেরকেই দিতে হবে । এবং এই ক্ষেপাদের অসাম্প্রদায়িক হওয়ার তৃষ্ণাটাই বাংলাদেশ জন্মের সংবিধানে যোগ হয়েছিল ৭২ এ । আমাদের ৭২ এর সংবিধান কত স্বাতন্ত্রিক ও আধুনিক তা আর বোঝানোর প্রয়োজন পরে না । আর তার পরেই একটা হাহুতাশ … আমরা তা ধরে রাখতে পারলাম কই । আমাদের অজ্ঞতা, দৈন্যতায় যেনো লিগেসি/পাপটা বেরিয়েই আসে বারবার ।



যে বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে চাইছিলাম তা পারছি না । বিষয়বস্তু ছিল নজরুল আর লিখছি কী ?!! এবার তাহলে দৃষ্টিটা ক্ষেপাদের উপর ফেরানো যাক । আসলে এই ক্ষেপারাই যুগে যুগে সভ্যতার বাতিটা জ্বালিয়ে রাখবে, নিগৃহীত হবে, নিপীড়িত হবে । নজরুল ক্ষেপাদের দলের , লালনও তাই । ইনাদের নিয়ে বলতে গেলে ইনাদের ভিতর আলুপ্ত সাম্প্রদায়িতার চিত্রটাও দেখানো দরকার ।হ্যাঁ একটু অবাক হওয়ার মতই ব্যাপারটা । কিন্তু তারা যতই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী হোন না কেন তাদের অবচেতনে বা অলক্ষ্যে বয়ে বেড়ান মনুষ্যের পাপ , লিগেসির পাপ । আমার মনে হয় উনাদের মাহাত্ব তখনি আরো চোখে ভাসবে যখন তাদের গুনগান না করে সূক্ষ ভুল গুলো তুলে ধরা হবে । আসলে উনারাও তো কমবেশি সেই লিগেসি সেই পাপ বহন করে চলেছেন । ব্যতিক্রম এই যে উনাদের চেষ্ঠা ছিলো উত্তরনের, বেরিয়ে আসার । লালন তো লোকালয় ছেড়ে বনেই চলে গেলেন । আবার সেই বন , আবার সেই প্রাচীন মানুষ, সমাজের যখন জন্ম হয়নি ।তাই হয়ত এতো শুদ্ধভাবে অসাম্প্রদায়িকার কথা ভাবতে পেরেছিলেন । মানুষ যত বন্য তত অসাম্প্রদায়িক , যত সামাজিক ততই সাম্প্রদায়িক …… হুম, ভাবতে ভাবতে এই চিন্তাটাই হয়ত পরিনতি পাচ্ছে । লালনের ‘জাত গেল জাত গেল বলে…… ‘ গানটা যেনো ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া সত্য । সব সম্প্রদায়ের মিল ঘটিয়ে তিনি হিন্দু, মুসলমান, উঁচু নিচুর সম্মিলন ঘটালেন অভয়ারন্যে । সমাজের রক্তচক্ষু, নিপীড়ন এড়িয়ে গড়ে উঠল এক অসাম্প্রদায়িক আবহ , এক বিশ্বাস । জয়তু লালন । কিন্তু অলক্ষ্যে গড়ে উঠল নতুন এক সম্প্রদায় … ‘বাউল সম্প্রদায়’ ! হয়ত সে সমাজের প্রেক্ষাপটে এই সম্প্রদায় কোন মাথাব্যাথার কারন ছিলো না কারো কাছে , উল্টো নিজেরাই সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হয়েছেন বারংবার । মানবিকতার আর্দশ ধারন করে চলা লালনপ্রেমীরা যেনো এক সম্প্রদায়ের ভিতর অসাম্প্রদায়িক চেতনা । এখন কথা হলো চেতনার জায়গাটা ধরে রাখা কঠিন ।ইতিহাস আমাদের তাই বলে । সম্প্রদায় যেনো সাম্প্রদায়িকতায় ধাবিত হয় প্রাকৃতিকভাবেই । আজ যখন দেশের এক বিশিষ্ট শিল্পী অন্য এক বিশিষ্ট শিল্পীকে বাউল কি বাউল না – তা নির্ধারণ করে দেন ঔদ্ধত্যস্বরে তখন বোঝা যায় লালনের বাউলশ্রেণীর আজকের অবস্থানটা কতটা সাম্প্রদায়িক । আসলে এটা তিরস্কার অর্থে বলছি না বরং সত্যটা বলার চেষ্টা করছি । আমাদের লিগেসি বা পাপটা শেষমেষ আমাদের পিছু ছাড়েই না । তারপরও লালন কালের শ্রেষ্ঠ , সভ্যতার বিনির্মানের সেই ক্ষেপা সৈনিকদের একজন ।



তেমনি আসে নজরুলের কথা । তার তো নামই দেয়া হয়েছিলো বিদ্রোহী । কিন্তু যে পীড়ন , যে অবজ্ঞা , যে লাঞ্ছনা তাকে সইতে হয়েছে তাতে কে না ক্ষেপা হয় ? নজরুলকে সোজাসুজি আমি বলতে পারি তিনি সাম্প্রদায়িক ছিলেন ! কিন্তু তার সাম্প্রদায়িকতা ফুলের মতই নরম, শিশিরের মতই স্বচ্ছ , সূর্যের কিরণের মতই দ্বীপ্তিময় । মুসলিম হিসেবে তিনি ছিলেন গর্বিত এবং জ্যাতাভিমানী । কিন্তু তাতে তার অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি সৌহার্দ্য কিংবা সম্মানের ঘাটতি ছিলো না । বলতেই হচ্ছে তিনি সত্যিই অন্য ধাতুর তৈরি । যদিও তার সম্প্রদায় থেকে পাওয়া অহংকার চলে আসে যখন প্রমিলা দেবীর সাথে বিয়েতে বিপত্তি বাঁধে এই বলে যে কোন রীতিতে বিয়ে হবে । তিনি বলিষ্ঠভাবেই উচ্চারন করলেন যে তিনি মুসলমানের ছেলে …তাই বিয়ে মুসলিম রীতিতেই হবে । এ কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য তাকে কটাক্ষ্য করা নয় বরং তার শক্ত ব্যক্তিত্বকেই তুলে ধরা মাত্র । আর এই কারনেই হয়ত তাকে ভালো করে বোঝা হয়নি আমাদের । বরং ভুল করেই বুঝেছি বেশিরভাগ । তাকে যে ভুল বোঝা হচ্ছে তা নিয়ে তার কষ্ট ছিল। তার শেষ বক্তৃতায় তিনি বলেন ,



“কেউ বলেন আমার বাণী যবন, কেউ বলেন কাফের। আমি বলি, ও দু’টোর কোনটাই নয়। আমি কেবলমাত্র হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করাবার চেষ্টা করেছি; গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি। সে হাতে হাত মিলানো যদি হাতাহাতির চেয়ে অশোভনীয় হয়ে থাকে, তাহলে ওরা আপনি আলাদা হয়ে যাবে। ‘’



এই প্রচেষ্টাটাই হয়ত অসাম্প্রদায়িকতা বা এর চেতনা । আমরা সাম্প্রদায়িক হয়েও তাই অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করতে পারি । নাকি পারি না ?? ক্ষেপাদের তাই খুব দরকার আমাদের ভেতরের শুভ বুদ্ধিকে জাগিয়ে দেয়ার জন্য । নাকি সবই মুলো … শেষমেষ আমাদের পাপটাই বহন করে চলবো আজন্ম । সমাধান দিতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো । কিন্তু বারবার প্রশ্নই করে যাচ্ছি । আসলে সমাধানে উত্তর মিলে না … উত্তর মিলে প্রশ্ন করে । যেমনটি সক্রেটিস করতেন । আমার এই প্রশ্নবানে ঘূরপাক খেয়ে যদি কিছু ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হয় কিংবা কোন ক্ষেপা জন্ম নেয় তাতেই সভ্যতার সঞ্চয় কিংবা মুক্তি ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৭

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
প্রশ্নবাণে ঘুরপাক খেয়ে যে ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে তাতে সাধুবাদ জানাই।
শুভ কামনা, অরূপ স্বরূপ।

২৭ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৪১

অরূপ স্বরূপ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৭ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:২২

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: বিন্দুর সাথে সম্পূর্ণ একমত।

০৩ রা জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৩২

অরূপ স্বরূপ বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২৭ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:০১

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


অন্যমনস্ক শরৎ বলেছেন: বিন্দুর সাথে সম্পূর্ণ একমত।

০৩ রা জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৩২

অরূপ স্বরূপ বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২৭ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:০১

শেখ মফিজ বলেছেন: সাম্প্রদায়িকতার ভাবনাটা কত শতাব্দী পুরানো ?

০৩ রা জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৩০

অরূপ স্বরূপ বলেছেন: আমার বোধহয় ''সম্প্রদায়'' জন্ম নেয়ার সময় থেকে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.