নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অরূপ স্বরূপ

আমি মুক্ত, অবরুদ্ধ ,আমি কঠোর আবার কিছুই না ..

অরূপ স্বরূপ

হারিয়ে যাই মাঝে সাঝে অচিনরে চেনার খোঁজে...

অরূপ স্বরূপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নজরুলের রাজনৈতিক আদর্শ ও বাংলাদেশ ভাবনা

২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:২২

এটা হয়ত কিছু প্রশ্নের জন্ম দিবে যে নজরুলের রাজনৈতিক আদর্শ ও বাংলাদেশ ভাবনার মধ্যে যোগসূএতা কিভাবে সম্ভব ? কারন মোটাদাগে দেখলে নজরুলের রাজনৈতিক আদর্শ ও চেতনার মূলে মূ্লত তৎকালীন অখণ্ড ভারত থেকে ইংরেজ বিতারন এবং শোষন ও নিপীড়নমুক্ত শ্রেণীহীন সমাজের স্বপ্ন । সেসময়ের প্রেক্ষাপটে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের শোড়গোল তখন সর্বব্যাপী । বিশেষকরে ১৯১৭ সালের রুশবিপ্লব কবিমনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল ।কিন্তু যে বাংলাদেশের জন্মই তখন হয়নি সে বাংলাদেশ নিয়ে তার ভাবনার অবকাশই বা কি ? বা আদৌ এমন একটি ভূখণ্ডের কোন রুপকল্পনা কি তার মাথায় ছিলো ? তার সাহিত্যে কিন্তু বারবারই এই ভূখণ্ড এসেছে । তার বিচ্চুরন ঘটে নিম্নোক্ত পংক্তিমালায় ,



‘নম নম নম বাংলাদেশ মম ,

চির মনোরম চির মধুর ,

বুকে নিরবধি বহে শত নদী চরণে জলধির বাজে নূপুর

নম নম নম বাংলাদেশ মম ,

চির মনোরম চির মধুর ।

শিয়রে গিরিরাজ হিমালয় প্রহরী ,

আশীষ মেঘ বারি সদা তার পড়ে ঝরি ,

যেন উমার চেয়ে , আদরিনী মেয়ে ,

ওরে আকাশ ছেয়ে মেঘ চিকুর ।

নম নম নম বাংলাদেশ মম , চির মনোরম চির মধুর ।‘



অন্যদিকে তার রাজনৈতিক দর্শন কি বলে ? বাংলাদেশ ভাবনার সাথে তার অবস্থান কি ? বঙ্গবন্ধুর তাকে দেশে নিয়ে এসে নাগরিকত্ব প্রদান ও জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া কি এমনি এমনি ? এ বিষয়গুলো নিয়ে পরিষ্কার ধারনা পেতে হলে তার সামগ্রিক রাজনৈতিক চিন্তার উপর দৃষ্টিপাত দেয়া দরকার ।সৈনিকজীবন থেকে ফিরে আসার পরই তাঁর রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতার শুরু । সেসময় তিনি বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে বাস করছিলেন।তার সাথে ছিলেন মুজফ্ফর আহমদ । পরিচয়টা দেয়া খুব দরকার কারন উপমহাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠার অন্যতম অগ্রদূত হচ্ছেন মুজফ্ফর আহমদ ।১৯২১ সনের সেপ্টেম্বর মাসে মুজফ্ফর আহমদ ও নজরুল তালতলা লেনের যে বাসায় ছিলেন সে বাড়িতেই ভারতের প্রথম সমাজতান্ত্রিক দল গঠিত হয়েছিল । মুজফ্ফর আহমদ তার বন্ধু হলেও তিনি নিজে কখনো এই দলের সদস্য হননি। একবার নির্বাচনে অংশগ্রহন ছাড়া তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে তেমন জড়িত ছিলেন না যদিও তার সাহিত্যে রাজনৈতিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সবসময়ই । বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে থাকা অবস্থাতেই মূলত নজরুলের রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ শুরু । সমানতালে চলতে থাকে সাহিত্যরচনা এবং তাতে রাজনৈতিক আদর্শের জোড়ালো প্রভাব । ওইসময় মহাত্মা গান্ধির নেতৃ্ত্বে বৃটিশবিরোধী অসহযোগ আন্দোলন এবং মাওলানা মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলীর নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন চলছিলো । দুটি আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিলো ভিন্নভিন্ন । অসহযোগ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিলো শান্তিপূর্ণ উপায়ে ইংরেজদের বিতারণ । অন্যদিকে খিলাফত আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল তুরস্কে মধ্যযুগীয় সামন্তশাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা, কারণ সেসময়ের সুলতানী শাসন ব্যবস্থার প্রধান তথা তুরস্কের সুলতানকে প্রায় সকল মুসলমানরা মুসলিম বিশ্বের খলীফা জ্ঞান করতো । নজরুল এই দুটি আন্দোলনের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন না । তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে বিশ্বাসী ছিলেন যা গান্ধির দর্শনের বিপরীত। অন্যদিকে মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃ্ত্বে সামন্তশাসন এর উচ্ছেদ ও নতুন তুরস্ক গড়ার আন্দোলনে নজরুলের সমর্থন ছিলো ।কামাল পাশা তুরস্কে সামন্ততান্ত্রিক খিলাফত তথা সালতানাত উচ্ছেদ করে দেশটিকে একটি আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তুরস্কবাসীদের জীবন থেকে মৌলবাদ,গোড়ামী, রক্ষণশীলতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার দূর করেছিলেন । এই বিপ্লবটাই নজরুল চাইতেন উপমহাদেশে ঘটুক ।যদিও বৃহৎস্বার্থে গান্ধির অসহযোগ ও খেলাফত – এই দুটি আন্দোলনের সাথে নজরুল পরে যোগ দেন । কেননা এই আন্দোলন দুটি ভারতীয় হিন্দু-মুসলমানদের সমন্বিত সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল ।



আমাদের ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা যদি আমরা চিন্তা করি তবে দেখব আমাদেরকেও রক্তক্ষয়ী নয়মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে এদেশকে পেতে হয়েছে । অন্যায়ের বিরুদ্ধে নজরুলের সশস্ত্র চেতনা আর ৭১ এ পাকিস্তানি জান্তার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর সশস্ত্র যুদ্ধে নেমে পরার ডাকের মধ্যে সহজেই মিল খুঁজে পাওয়া যায় । আর নজরুলও তাই আমাদের কাছে আপন হয়ে ওঠে বারবার । আমাদের কবি হয়ে ওঠেন বারবার । কামাল পাশার আধুনিক তুরস্ক আর বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় তাই তফাত দেখি না । আধুনিক তুরস্কের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতার এই স্বপ্নগুলোই তো ৭২ এর সংবিধানের মধ্যেও আমরা পাই ।আর তাই বাংলাদেশ ভাবনায় নজরুলের রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় চেতনার এক উজ্জ্বল অবস্থান আমাদের চোখে প্রতিভাত হয় । বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায় নজরুলকে দেশে নিয়ে এসে নাগরিকত্ব প্রদান ও জাতীয় কবির মর্যাদা দেয়ার মধ্যে যারা ধর্মীয় কারন খুঁজে বেড়ান আর গোঁড়া ধার্মিকেরা যারা নজরুলকে শুধুমাত্র ইসলামের কবি বলে ধোঁয়া তুলেন … এরা দুই পক্ষই যে আহাম্মকের স্বর্গে বাস করে তাতে কোন সন্দেহ নাই । নজরুল তার সাহিত্যে যেমন এই বাংলাকে ধারণ করতেন তেমনি তার রাজনৈতিক ভাবনার সাথেও রয়েছে আমাদের জন্মযুদ্ধের সন্ধি ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:২২

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: অনেক বিষয় জানা হলো। আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.