নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সেই ভালো সেই ভালো আমারে না হয় না জানো...

গুলশান কিবরীয়া

ফেসবুকে চারুলতা আরজু নামে পরিচিত।

গুলশান কিবরীয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাঠ প্রতিক্রিয়া

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:২৪


সম্পর্ক যত্ন সহকারে পরিচালনা করা জটিল একটি বিষয়। একে চাইলে এক নিমিষে উড়িয়ে দেয়া যায় , আবার সম্পর্কের জটিল অলি গলি পার করে দীর্ঘ দিন বাঁচিয়েও রাখা যায়। সুখী হওয়া কিংবা দুঃখী হওয়াটা একেক জনের কাছে একেক রকম। এজন্যই লিও তলস্তয় তার "এনা ক্যারেনিনা" বইয়ের শুরুতেই বলেছে, “Happy families are all alike; every unhappy family is unhappy in its own way.”

এই এপিক বই পড়ে শেষ করেছি ।পূর্বে কয়েকবার এই বই ধরেও ছেড়ে দিয়েছিলাম সময়ের অভাবে । কিন্তু এবারে লক্ষ্য স্থির করে, সময়নাশাক উপাদান গুলো সীমিত করে বই শেষ করলাম। যদিও কিছু কিছু অংশ চোখ বুলিয়ে সারসংক্ষেপ করেও পড়েছি। তবে বেশী কিছু মিস হয়নি। এই বই চোখ বুলিয়ে পড়া উচিৎ নয়, কারণ প্রতিটি লাইনে নিহিত রয়েছে সাহিত্য ও দর্শনের চমৎকার সব রসদ যেটা সাহিত্যপ্রেমীদের মনের খোঁড়াক যোগায় । একটা লাইন মিস হয়ে যাওয়া মানে অনেক কিছু মিস হয়ে যাওয়া। কিন্তু আমাদের জীবন তো যন্ত্রের মত দৌড়ায়, আমাদের এতো সময় কোথায়! তবুও এই বইয়ের জন্য সময় ব্যয় করলে সময় বিফল হয় না।

প্রাচুর্যময় সম্ভ্রান্ত রাশিয়ান সামাজের পটভূমিতে কিছু সম্পর্ক, অসম্পর্ক অর্থাৎ জীবন নিয়ে জীবনের এই অসামান্য গল্পের সম্মোহন এতোটাই শক্তিশালী যে পাঠক মুগ্ধ হয়ে এর সাহিত্য রস উপভোগ করবেই । আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি।জীবনের ক্ষুদ্রে থেকে ক্ষুদ্রতর মুহূর্তগুলোকে নানা রঙে স্তরে স্তরে রঙিন করে তুলেছে লেখক। এসেছে একের পর এক জীবন ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্ন মাত্রায়। সেখানে রয়েছে সম্পর্কের টানাপড়েন তথা হাসি, কান্না, আনন্দ, দুঃখ। চরিত্রগুলো জীবনের অন্তিম পরিণতির মধ্য দিয়ে গিয়ে পাঠকের সাথে একটি গভীর স্থায়ী সম্পর্ক তৈরি করতে সক্ষম।

"এনা ক্যারেনিনা" লিও তলস্তয়ের এক অসামান্য সৃষ্টি। এনা যেন জীবন্ত কেউ।কাল্পনিক এনা চরিত্রে লেখক এমন জীবন দান করেছে যে এনা যুগ যুগ বেঁচে থাকবে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে।লেখকের কতটুকু গাঢ় কল্পনা শক্তি থাকলে পরে এরকম অনবদ্য চরিত্রের জন্ম হয় সেটা নিয়েই ভাবনায় পরে গিয়েছিলাম । বইটি পড়তে পড়তে মনে হয়েছিলো আমি সময় যন্ত্রে চেপে উল্টো দিকে অতীতের রাশিয়ায় চলে গিয়েছি। এখনো ঘোর কাটেনি।

বইটির নাটকীয়তায় মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না । শেক্সপিয়রিয়ান ড্রামা হচ্ছে মেলো ড্রামায় ভরপুর যেটা হয়তো একটু বেশী বেশী মনে হতে পারে আমাদের এই আধুনিক যুগের পাঠকের কাছে ।কারণ তিনি লিখতেন স্টেইজ পারফর্মেন্সের জন্য যেখানে শব্দে, কাহিনীতে সুরের তরঙ্গ, ছন্দ আবশ্যক ছিল এবং অতিরঞ্জিত করা হতো অতিমাত্রায় নাটকীয়তা আনার নিমিত্তে ।সুরে সুরে অনুভূতিকে ইঞ্জেক্ট করা হতো অডিয়েন্সের মাঝে। তলস্তয়ের লেখার আধুনিক নাটকীয়তা ভীষণ ভাবে সুখপাঠ্য। আসলে সাহিত্যে শৈল্পিক অনুষঙ্গ না থাকলে সেখান থেকে সাহিত্য রস উপভোগ করা যায় না। অনুভূতিকে হৃদয়ঙ্গম করা যায় না। স্নায়ুতে ঝর উঠে নতুন জাগরণ আসে না।

এনা এমনই একজন নারী যার শুধুই বাহ্যিক রূপ রয়েছে তা নয়। তার আত্মাটিও দারুন রূপসী অর্থাৎ সে ভিতরেও চমৎকার একজন মানুষ । সেই আত্মাটিই হয়তো বাহ্যিক রূপকে অতুলনীয় করে তোলে। রূপ গুণ সবই রয়েছে তার যেটা আকৃষ্ট করে যে কোন পুরুষকে। তার রূপের চেয়েও তার সাথে কথা বলার পরে যে কেউ মুগ্ধতায় ভেসে যায়। কিন্তু প্রায় কুঁড়ি বছরের মত বয়সে বড় স্বামীর সাথে তার কোন কিছুতেই মিল নেই। শুধুমাত্র স্বামী স্ত্রীর কর্তব্য পালনে সমাপ্ত হতো তাদের প্রতিটি দিন। তাই সত্যিকারের ভালোবাসাকে হাতের মুঠোয় পেয়ে ভালোবাসার দুঃখ সাগরে ঝাঁপ দিতে সে দ্বিধা বোধ করেনি। সে তার স্বামীর অগচরে কিছু করেনি। সে ছিল সাহসী নারী। সে তার সুখ শান্তির জীবন ত্যাগ করে প্রকৃত ভালোবাসায় নিজেকে সমর্পণ করে, যেটা তার জীবনের কঠিন পরিণতির জন্য দায়ী হয় পরবর্তীতে। এদিকে আরেকটি চরিত্র ডলি অর্থাৎ এনার ভাইয়ের পত্নী। তার দুঃখী দাম্পত্য জীবনটি আসে গল্পের শুরুতেই । তার দাম্পত্য জীবনে সুখ ছিলো না । ডলির স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক এবং সে সম্পর্কের কারনেই অসুখী দাম্পত্য জীবনে নিমজ্জিত ছিল ডলি । কিন্তু ডলি তার স্বামীকে ছেড়ে কোথাও যায়নি। জীবনের মানে খুঁজে নিয়েছে সংসার, সন্তানের মাঝে। ডলির ছোট বোন প্রিন্সেস কিটির জীবনেও নেমে আসে অসহনীয় দুর্ভোগ যখন ভ্রনস্কি নামের আকর্ষণীয় এক পুরুষ তার জীবন থেকে চলে যায় এনার জীবনে। ভ্রনস্কিকে হারিয়ে প্রিন্সেস কিটির জীবন যখন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে ঠিক তখনই লেভিন তার জীবনে আবার ফিরে আসে যার ভালোবাসা প্রথম দিকে কিটি প্রত্যাখ্যান করেছিলো। এরকম সম্পর্কের নাটকীয়তা চমৎকার ভাবে চিত্রিত হয়েছে এখানে।

এনার চাহনি, কথা বলার ভঙ্গীতে কি যেন এক মাদকতা রয়েছে যেটা গল্পের শেষে লেভিনের মত আদর্শবান পুরুষকেও ঘায়েল করেছিলো। এনার অকাল মৃত্যু না ঘটলে হয়তো প্রিন্সেস কিটির মন আরও একবার ভেঙে যেত, এনার কারনে।

এই এনা চরিত্রটিকে আসলে পাঠকের ঘৃণা করার কথা , কিন্তু তলস্তয় তাকে এমন রূপে রূপায়িত করেছে যে তাকে আসলে সচেতন পাঠক ঘৃণা করতে পারে না। রবীন্দ্রনাথের “চোখের বালি” গল্পের বিনোদিনীকে সাধারন ভাবে ঘৃণা করারই কথা, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তাকে যেভাবে এঁকেছে তাতে করে বিনোদিনীকে ঘৃণা করা সত্যিই কঠিন। এই জটিল চরিত্র গুলো নিয়ে লেখা এবং একে পাঠকের হৃদয়ের খুব কাছে পৌঁছে দেয়া সাধারন কাজ নয়, অসাধারণ দুঃসাহসিক কাজ। সেই কাজই করেছে লিও তলস্তয় তার “এনা ক্যরেনিনা” বইয়ে। এ বই সাহিত্য রস উপভোগের জন্য যেমন পড়া উচিৎ তেমনি যারা লেখালেখি করেন তাদেরও পড়া উচিৎ চরিত্রকে কীভাবে ধীরে ধীরে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া যায় সেটা শেখার জন্য।

ছবি সূত্রঃ নিজে তোলা ছবি।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:০৩

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: বাংলা অনুবাদ পড়েছিলাম অনেক আগে। পূর্ণাঙ্গ স্বাদ পাইনি। হয়তো অনুবাদ ভালো হয়নি।
বুঝতে পারছি, ইংরেজিতে পড়লে বেশি রসাস্বাদন সম্ভব।
রিভিউ খুব সংক্ষিপ্ত।
তবুও ভালো লেগেছে।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:১১

গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমি ইংরিজি অনুবাদ পড়েছি, এবং সেটা ছিল অসাধারণ। আসলেই অনুবাদ করা বই ভালো খারাপ নির্ভর করে অনুবাদকের উপড়ে।

সংক্ষিপ্ত করেই লিখলাম, তাহলে পাঠক লেখাটি পড়ার অগ্রহ পাবে। আর না হলে রিভিউ পড়ে মুগ্ধ হয়ে পাঠে আর আগ্রহ থাকে না। স্পয়েল করতে চাইনি আসলে।
অনেক অনেক ভালো থাকবেন।

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:২৯

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: একটা অনুবাদ পড়তে নিয়েছিলাম, এত বিচ্ছিরি অনুবাদ দুই পাতা পড়েই মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল।
রিভিউ ভালো লেগেছে। আপনি কার অনুবাদ পড়েছেন???

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৫৬

গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: ছবিতে যে বইটি দেখছেন সেটাই পড়েছি, ওটাই আমার বই । Wordsworth classics এর। অনুবাদ করেছেন Louise এবং Aylmer Maude।

কোণ ভালো বাংলা অনুবাদ আমি এ যাবত কালে পড়িনি।

ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৩৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই উপন্যাস থেকে শিক্ষণীয় কি আছে বলে আপনি মনে করেন (যদি থাকে)? শিক্ষণীয় কিছু থাকতে হবে সেটাও জরুরী না। আমি পড়িনি, তাই এর চেয়ে বেশী কিছু বলা সম্ভব না। তবে উপন্যাসটা সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। সময়, সুযোগ পেলে আশা করি পড়বো।

০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:১৫

গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: শিক্ষণীয় বিষয়টি আমি প্রথম দু'লাইনেই বলে দিয়েছি। আমি সব চেয়ে বেশী ফোকাস করেছি সম্পর্কের জটিল বিষয়টিতে। আসলে এখানে আছে সম্পর্কের সমস্যা , সে সমস্যাকে কয়েকটি প্রধান চরিত্রের মাধ্যমে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখানো হয়েছে, সেটা আমি সংক্ষিপ্ত আঁকারে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক অবস্থান রয়েছে। কিছু কর্ম রয়েছে এবং রয়েছে কর্মফল । কর্মফলটি একেক সমাজ একেক ভাবে দেখে।সেই যুগে এনার এই দুঃসাহসিক প্রেম, এবং কঠিন একটি ডিসিশন নেয়াটাকে আমার কাছে কখনো বোকামি মনে হয়েছে। আবার এই যুগের কথা চিন্তা করে মনে হয়েছে ঠিকি আছে। এখানে আছে নানা রকম সামাজিক সমস্যা। এই সামাজিক সমস্যা গুলোই অনেকাংশে দায়ি এনার জীবনের অন্তিম পরিণতির জন্য। আজকের এই সময় থেকে যখন আমি পড়ছি এই বইটি তখন মনে হচ্ছে সেই যুগের নারীরা কতটা অসহায় ছিল সামাজিক ভাবে, অর্থনৈতিক ভাবে। আসলে এই বইটি একটি বিশাল বই এক হাজার পৃষ্ঠার, এখানে কেউ যদি সত্যিকারে ডুব দেয় তাহলে গুপ্তধন খুঁজে পাওয়ার মত একটি বই এটা। তবে , এটাও সত্য একেক জনের আনন্দ উপভোগ করার বিষয়বস্তু তো একেক রকমই হয় ।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৪| ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:০২

রাজীব নুর বলেছেন: 'গির্জা ও রাষ্ট্রের শত্রু'
তলস্তয়ের কবর খুঁড়লেন তাঁর প্রিয় অনুগামীরা. ...
রেললাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করলে সেই ঘটনাকে নিয়ে লিখলেন বিখ্যাত উপন্যাস 'আনা কারেনিনা'।

০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:২০

গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: এই বিষয়টি আমি আমার রিভিউ এ আনতে চাইনি, তাহলে পড়ার আনন্দটি নষ্ট হয়ে যায়। রিভিউ লেখার একটি নিয়ম আছে আমি সেটা অনুসরণ করার চেষ্টা করেছি , স্পয়েল না করে।

ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.