নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সেই ভালো সেই ভালো আমারে না হয় না জানো...

গুলশান কিবরীয়া

ফেসবুকে চারুলতা আরজু নামে পরিচিত।

গুলশান কিবরীয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈর্ষা

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৩:৫৭


মৃত মানুষের মুখ এর আগে কখনো আমি দেখিনি। আজই প্রথম। আমার প্রিয়তমার প্রাণহীন নিথর মুখটি অতিশয় সৌন্দর্যে দ্যুতি ছড়াচ্ছে চির বিদায়ের কালেও। গভীর নিদ্রারত রিমার ফর্সা মুখটি ধীরে ধীরে কালচে নীল বর্ণ ধারণ করছে। রিমার আত্মা কি এখনো এই ফ্ল্যাটেই ঘুরছে? হয়তো ঘুরছে। আমি ইচ্ছা করেই জানলা দরজা বন্ধ রেখেছি যাতে ওর আত্মা উড়ে না গিয়ে আমার সাথেই বসবাস করে। অতি যত্নের সংসার ছিল তার। পরম মমতায় এই ফ্ল্যাটটি সে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতো। নিজের রোজগারের পুরোটাই সে ঘর সাজাতে ব্যয় করতো। তার হাতের ছোঁয়া পুরো বাড়ি জুড়ে।

আমার মনে হচ্ছে রিমার আত্মা কোথাও যায়নি। ওর হাতের পরশে যে ইনডোর প্ল্যান্টগুলো বেড়ে উঠেছে , সেগুলোর কোন একটায় ভড় করেছে, কিংবা সবগুলো প্লান্টে ওর আত্মা মিলেমিশে গেছে। আত্মা তো সলিড কিংবা তরল কিছু নয়, বায়বীয় কিছু একটা হবে । প্রতিটি গাছের প্রাণের সাথে মিশে যেতেই পারে ঐ বায়বীয় পদার্থ । ঐ যে দেখুন, গাছগুলো কেমন গোল গোল করে তাকিয়ে আছে এদিকে। ঐ চোখ গুলো রিমার। সবগুলোই।

রিমা ছিল ভীষণ বন্ধু বৎসল। সবাই ওকে পছন্দ করতো। ওর মধ্যে কেন্দ্রবিন্দু হবার এক গভীরতম ঝোঁক ছিল। সব সময়ই মধ্যমণি হয়ে থাকতে চাইতো। আর সে কারণেই সবার সাথে মধুর ব্যবহার করতো। যেটা আমার পছন্দ ছিল না। কি দরকার এতো মানুষের ভালোবাসা ওর। আমিই তো ছিলাম ওর জন্য। ওকে আমার স্ত্রী হিসেবে পেয়ে মনে মনে পণ করেছিলাম, চিরজীবন গোলাম হয়ে থাকবো তার । কিন্তু রিমার তাতে পোষাল না। সে চায় সবার ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু হতে।

যে কোন পোশাকেই ওকে এতো মানিয়ে যেত যে, মনে হতো এই কাপড়টি ওর জন্যই তৈরি হয়েছে। ওর রিনরিনে হাসিতে পুরুষের হৃদয়ে পুলক জাগাতো। ঝাড়বাতির স্টোনে মৃদু বাতাস লাগলে যে পেলব টুংটাং শব্দ তুলে যে লঘু ঝংকার তোলে, সেরকম ঝংকার তুলে হাসতো রিমা । সব পুরুষের বুকের চিনচিনে ব্যথার কারণ ছিল রিমা। তখন আমার ইচ্ছা করতো ওর হাসিকে চিরতরে নিস্তব্ধ করে দিতে। আপনি হয়তো বলবেন আমি কি করে জানলাম যে সব পুরুষের বুকের ব্যথা রিমা । আমি সব জানি। আবার ভাববেন না যে আমিও ঐ সকল পুরুষদের মত, পরনারীকে বুকে ধারণ করি। আমার রিমাই তো আমার সব ছিল । আমার বুকের ব্যথা হতো অন্য কারণে। অতি সুন্দরী নারীর স্বামী হওয়া যে কত কষ্টের । সে আপনি বুঝবেন না।

রিমার কোন সম্পর্ক ছিল না কারো সাথে। এ ব্যপারে আমি নিশ্চিত। তবে একদিন একটি ব্যপারে খুব কষ্ট পেয়েছি আমি। ফেসবুকে সে আমার মন্তব্যের উত্তর দিতে গিয়ে দাঁড়ি কমা না ব্যবহার করে অগোছালো করে উত্তর দিয়েছিলো। অথচ অন্যান্য সবার উত্তরে দাঁড়ি কমার সঠিক ব্যবহার ছিল। সে আমার ব্যপারে কতটা উদাসীন ছিল, একটু ভাবুন।

একদিন হঠাত গভীর রাতে আমার ঘুম ভাঙ্গে এক চরম দুঃস্বপ্ন দেখে। আমি স্বপ্নে দেখছিলাম আমার আর রিমার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড অয়ন রিমার সদ্য পোস্ট করা একটি ছবিতে জুম ইন করে ওর ঠোঁটে চুমু খাচ্ছে। সাথে সাথে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। উঠে বসে পুরো এক গ্লাস পানি পান করে রিমার দিকে তাকিয়ে দেখি ও বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। মুখের সামনে মোবাইলের টর্চটা ধরলাম। ইচ্ছা করছিল ঐ মুহূর্তেই ওকে গলা টিপে শেষ করে দেই। অথবা ওর সুন্দর মুখটি নষ্ট করে দেই। তাহলে আর কোন দিন ফেসবুকে ওর সুন্দর মুখখানা কাউকে দেখাতে পারবে না।

একবার এক শীতে আমি একটি হাঁস নিয়ে আসি বাড়িতে । রিমা বলল চালের আটার রুটি বানাবে। হাঁসের মাংস দিয়ে চালের রুটি বেশ যায়। সাথে সাথে আমার দুই বন্ধুকেও দাওয়াত দিয়ে দিল। আমি ভাবলাম কোথায় আমারা দুই টোনাটুনি হাঁসের মাংস খাবো আর প্রেমে ডুবে যাবো, তা না দুই উৎপাত এসে হাজির। আমি রিমাকে গভীর ভাবে একা পেতে চাই। আর সে বাড়িতে লোকজন ডেকে আমাদের সকল নির্জনতা নষ্ট করে দেয়। আমার ভাল্লাগে না এসব।

তবে রিমাকে আমি কোন কিছুতেই মানা করতাম না। আসলে ওর মুখটি এতোটা মায়া ভরা যে তাকে কোন কিছুতে না করলেও বুক ভেঙ্গে যায় আমার। দেখুন কতটা ভালোবাসি তাকে আমি।

আপনি বলছেন আমার ভালোবাসায় ঈর্ষার পরিমাণ বেশি।আর সেই বিষাক্ত ঈর্ষাই রিমার মৃত্যুর কারণ। মোটেই না। আমি তাকে ভালোবাসি। একে বলে চরম ভালোবাসা। তার মনে আমি আর আমার মনে থাকবে সে – আমি এরকম ভালোবাসা চেয়েছি। এটা কি অন্যায় বলুন? বিশ্বাস করুন একে বলে গভীর ভালোবাসা। ওকে কেউ আর দেখতে পারবে না, কেউ ভালবাসতে পারবে না, আমি ছাড়া। আমি তাকে চরম ভালোবাসি। আমি এখন ঐ গাছগুলোকে ভালোবেসে চিরজীবন কাটিয়ে দিতে পারবো, যেখানে আমার রিমার চোখ দেখা যায় । আর এটাকে আপনি ঈর্ষা বলছেন? এটা ঈর্ষা নয়, এ আমার গভীর ভালোবাসা রিমার প্রতি।


আমাকে নিয়ে যাবেন না প্লিজ। আমাকে এ বাড়িতে থাকতে দিন। আমাকে এই ফ্ল্যাটেই কয়েদ করে রাখুন, প্লিজ । আমার রিমার আত্মা তো এই ফ্ল্যাটেই আছে। আমি এখানেই রিমার সাথে থাকতে চাই।

আপনারাই বলুন, একে কি ঈর্ষা বলে, নাকি চরম ভালোবাসা?

**

ছবিঃ ইন্টারনেট






মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ ভোর ৫:৫৯

মিরোরডডল বলেছেন:




গুলশান আপু এতদিন পর এলো কি চমৎকার একটা গল্প নিয়ে ।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা ।

জীবনের গল্প । আছে এরকম কিছু পাগল, পজেসিভ ভালোবাসায় আসক্ত ।
পরিচিত এমন কিছু নারী পুরুষ চিনি যারা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পরিশেষে সম্পর্ক ধরে রাখতে পারেনি ।
এদের জীবনসঙ্গীদের চরম জ্বালা ।
তারা মনে করে এটা ভালোবাসারই আরেক রূপ ।
কিন্তু এটা একধরনের অসুস্থতা ।

এটা যে শুধু কাপলের মাঝেই হয় তা না ।
মোস্ট অভ দ্যা টাইম, ভালোবাসার মানুষটির জন্য হলেও মাঝে মাঝে বন্ধুদের মধ্যেও এমন পজেসিভনেস দেখা যায় ।

সন্দেহ আর হিংসা সবচেয়ে খারাপ ব্যাধি যার কোন চিকিৎসা নেই ।
কাউন্সিলিং একমাত্র ভরসা কিন্তু সেটাও সচরাচর হয় না, কারন তারা এই বিষয়টা নিজের মাঝে চেপে রাখে, ওপেন হয়না বা স্বীকার করেনা যে এটা একটা প্রবলেম ।

থ্যাংকস আপু ।
গুড টু সি ইউ ।

১২ ই নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:৪০

গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: অনেক সুন্দর বলেছেন আপু।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:২৯

শেরজা তপন বলেছেন: ভাল লাগল!
মেয়েরা 'ছেলেদের আবেগ' ধরে কিভাবে গল্প লিখে সেটা আমার মাথায় ঢোকেনা!!
আমি সেটা পারিনা বলে ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং মনে হয়।

১২ ই নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:৪০

গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: এই প্রথম চেষ্টা করলাম। আমিও সেভাবে পারি না।

ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:০১

কামাল৮০ বলেছেন: কুসংস্কার টুকু বাদ দিলে একটি চমৎকার গল্প।

১২ ই নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:৪১

গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

৪| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:১৯

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: কী সুন্দর গল্প

ছেলেটা মেরেই ফেললো অথচ সেতো ভালো জানতো তারপরও ঈর্ষা :(

১২ ই নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:৪১

গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: জি আপু, কত মানুষের কত সমস্যা থাকে।

অনেক ধন্যবাদ

৫| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৪৭

বিটপি বলেছেন: শেরজা তপন, একজন নারীর মাঝে পুরুষ ও নারী দুইটি সত্ত্বাই থাকে। সে পুরুষের মতও চিন্তা করতে পারে। বিশেষ করে ছেলে সন্তানের মায়েরা পুরুষের চিন্তা ভাবনা ধারণে আরো বেশি দক্ষ হয়। কিন্তু একজন পুরুষের পক্ষে নারীর মত চিন্তা করা খুব কঠিন। তার মন ও মনোযোগের অর্ধেকটাই কর্মক্ষেত্রে পড়ে থাকে বলে অন্য কোন চরিত্রের ভেতর ঢোকা বা তার মত চিন্তা করা তার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনা।

১২ ই নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:৪৩

গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: বাহ , চমৎকার বলেছেন।

আসলেই তাই,

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৬| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৪৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন লাগলো :)

এই রকম ক্রেজি লাভ নিয়ে নানা পাটেকরের একটা মুভি দেখেছিলাম মনে পড়ছে। নামটা যদিও মনে আসছে না।
মেয়েটার জীবনকে অতি ভালবাসায় রীতিমতো তছনছ করে দিতো।
অথচ তার বিশ্বাস, অনুভব ছিল গল্পের নায়কের মতোই।

++++

১২ ই নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:৪৪

গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: মুভিটি দেখেছি কিনা মনে পড়ছে না।

আসলেই, অতিরিক্ত ভালোবাসাও বিষাক্ত।

অনেক ধন্যবাদ

৭| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: গুলশান কিবরীয়া,




অনেকদিন পরে এলেন, তা ও আবার প্রশ্ন চিহ্নযুক্ত একটা গল্প নিয়ে !
ভালোবাসা যখন তীব্র হয় তখন জন্ম হয় ঈর্ষার। ভালোবাসার বস্তুটি হারিয়ে ফেলার ভয় থেকেই এরকম ঈর্ষারা ডালপালা মেলে। চরম-তীব্র ভালোবাসা একসময় সেই ঈর্ষার বলি হয়ে যায়!

সুন্দর লিখেছেন গল্পটি।

১২ ই নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:৪৫

গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।

জি , এলাম বেশ কিছু দিন পরে।

আপনি ঠিকি বলেছেন।

৮| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৩৬

মুক্তা নীল বলেছেন:
একজন সাইকো টাইপের মানুষের কাছে ভালোবাসা বলতে কিছুই নাই । এদের সবকিছুই নাকি আপ - ডাউন করে । ইদানিংকালে এ ধরনের দুর্ঘটনা অনেক ঘটছে । ভালোবাসার অপর পৃষ্ঠে এতো হিংস্রতা থাকতে পারে ?
আপনার গল্পটি সুন্দর হয়েছে।

১২ ই নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:৪৬

গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি পড়ার জন্য।

ভালো থাকবেন।

৯| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১:১২

অপ্‌সরা বলেছেন: বাপরে!!
কি ভয়ানক সাইকো লোকটা!!!


এখন থাকুক জেইলের মাঝে ......

১২ ই নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:৪৭

গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: হা হা , থাকুক জেলে।

১০| ১২ ই নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৬:৫৮

রানার ব্লগ বলেছেন: চিন্তায় ফেলে দিলেন, ইর্ষা না ভালোবাসা এটা বুঝতে পারা কঠিন লাগছে। তবে এটাও ঠিক অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। না ইর্ষা না ভালোবাসা।

১২ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৫৯

গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: জি একদম ঠিক। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.