নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসাদুজ্জামান জুয়েল

আসাদুজ্জামান জুয়েল

রওশনারা বেগম ও আবদুর রশীদ খানের কনিষ্ঠ পুত্র আমি আসাদুজ্জামান জুয়েল। ১৯৭৮ সালের ০৫ জুন শরীয়তপুর জেলার পালং থানা পালং গ্রামের এক সাধারণ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। শিক্ষা জীবন শুরু মায়ের হাতে। তুলাসার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এস.এস.সি; শরীয়তপুর সরকারী মহাবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচ.এস.সি; জাজিরা ডিগ্রী কলেজে থেকে বাণিজ্য বিভাগ হতে বি.কম পাস করার পর প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন অনুষদ হতে এলএল.বি ও এলএল.এম সম্পন্ন করি। প্রতিটি ক্যাম্পাসেই কেটেছে মধুর দিনগুলো। ২০০৯ সালের ০৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভূক্ত হয়ে ২৩ ডিসেম্বর ২০০৯ ঢাকা বার এসোসিয়েশনে সদস্যভূক্ত হই। পরবর্তীতে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১০ শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যভূক্ত হয়ে আইন পেশার সাথে যুক্ত আছি। ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতি, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ও শরীয়তপুর জেলা ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশনের সদস্য হিসাবে আইন পেশায় নিয়োজিত আছি। সাংবাদিকতা ও লেখালিখি করি মনের টানে। একই সাথে আইন পেশা ও সাংবাদিকতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিরন্তন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কর্ম জীবন শুরু লেখালিখির মাধ্যমে। দৈনিক ভোরের কাগজ দিয়ে সাংবাদিকতার শুরু। এর পর দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক কালের কন্ঠ, দৈনিক গণমুক্তি সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কাজ করেছি। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬টি। প্রবাসীদের সুখ-দুঃখ নিয়ে লেখা আমার প্রথম উপন্যাস ‘যেমন আছি লন্ডনে’ প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের একুশে বই মেলায়। দীর্ঘ বিরতির পরে ২০১৯ এর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় ভ্রমণ কাহিনী ‘কলকাতা ভ্রমণঃ জীবনে প্রথম কিছু’; প্রবন্ধ সংকলন ‘সমকালীন ভাবনা’ ও প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘হৃদয়ের শব্দক্ষরণ’। ২০২০ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় প্রবন্ধ সংকল ‘সমকালীন ভাবনা-২’ ও দ্বিতীয় কাব্য গ্রন্থ ‘তুই থাকিস পরাণের গহীনে’। এছাড়াও বেশ কিছু বই প্রকাশের অপেক্ষায় আছি। লেখালিখি করি বিভিন্ন ব্লগে। আমার ওয়েবসাইটঃ www.asadjewel.com, নিজস্ব ব্লগঃ www.asadjewel.blogspot.com এছাড়া www.somewhereinblog.net এ নিয়মিত লেখালিখি করি। শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসাবে তিনবার ও লাইব্রেরী সম্পাদক হিসাবে দু্ইবার দায়িত্ব পালন করেছি। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, শরীয়তপুর জেলা ইউনিটের জীবন সদস্য। প্রগতি লেখক সংঘ, শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি হিসাবে দ্বায়িত্বে আছি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শরীয়তপুর, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শরীয়তপুর এর আইন উপদেষ্টা হিসাবেও কর্মরত আছি। গরীব-দুঃখীদের মামলা পরিচালনার জন্য জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা শরীয়তপুর জেলা শাখার প্যানেল আইনজীবী হিসাবে দুস্থ্যদের আইনগত সহায়তা প্রদান কাজে নিষ্ঠার সাথে জড়িত আছি। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), শরীয়তপুর জেলা শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষানিকেতন কর্ম কেন্দ্রীক পাঠাগার, শরীয়তপুরের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি দীর্ঘদিন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও অস্ট্রেলিয়ান বার এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ইনটেনসিভ ট্রায়েল এডভোকেসী ওয়ার্কশপ, ২০১০ সালে এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার এর উদ্যোগে হিউম্যান রাইটস এন্ড রুল অফ ‘ল’, ২০০২ ও ২০১০ সালে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট এর উদ্যোগে শিশু ও নারী বিষয়ক রিপোর্টিং কর্মশালা, ১৯৯৯ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর আয়োজিত কম্পিউটার ট্রেড প্রশিক্ষণ, ২০১০ সালে ইউএসএইড-প্রগতি-কালেরকন্ঠ আয়োজিত দুর্নীতি বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরী ও তথ্য অধিকার আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণসহ পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। লেখালিখি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে সমাজ সংস্কারে একজন কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। আমার অর্ধপ্রাণ কন্যা রওশন আসাদ প্রিয়ন্তী। সহধর্মীনি মুনমুন সুলতানা লুনা পেশায় শিক্ষিকা। দুই বোন রেহানা আক্তার রেখা এবং কহিনুর আক্তার শিখা এবং একমাত্র ভাই মোহাম্মদ রুহুল আমীন খান আজাদ একজন প্রবাসী। যোগাযোগের জন্য আমাকে মেইল করতে পারেনঃ [email protected]

আসাদুজ্জামান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

রামু বৌদ্ধ বিহার দর্শন, চুল্লবর্গ বিক্রয়ের নামে প্রতারনা!

০৬ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:৫৪

শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয় প্রতি বছর। নতুন বছরের প্রথম মাসের শেষ সপ্তাহের শনিবার সাধারণত ভোট গ্রহণ করা হয়। এতটা সুন্দর ভাবে গণতন্ত্রের চর্চা অন্য কোন সমিতিতে দেখা যায় না যা দেখা যায় আইনজীবী সমিতিগুলোতে। সে মোতাবেক শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির ২০১৭ সালের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল জানুয়ারীর শেষ সপ্তাহে। ভোটার তালিকা নিয়ে একটু জটিলতার কারনে নির্বাচন পিছিয়ে যায় দুই দফা। শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের বছরের শেষ মিটিংয়ে আলোচনার ভিত্তিতে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং তাকে সহযোগীতার জন্য দুইজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে আলাপ আলোচনা হলো। যথারীতি একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ তিন জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগও করা হলো। কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী ভোটার তালিকা নিয়ে অভিযোগ তোলায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন স্থগিত করে পদত্যাগ করে বসলেন। শুরু হলো জটিলতা। সাধারণ সভা করে ভোটার তালিকা নিয়ে একটা সমাধানে গিয়ে পূর্বের প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ তিন কমিশনারকে আবার দায়িত্ব দেয়া হলো নির্বাচন করার জন্য। তফসিল অপরিবর্তিত রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতিকালে আবারও ভোটার তালিকা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলো। আবারও পদত্যাগ করে বসলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এবার দীর্ঘ আলাপ আলোচনা শেষে সিনিয়র কয়েকজন আইনজীবী সমস্যার সমাধান করলেন। এবার আর সেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার নয়। নতুন করে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়া হলো। এবার নির্বাচন কমিশনার বেশ কলিজাওয়ালা। তৃতীয় দফায় নির্বাচন কলিজা ওয়ালা প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ফলে নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। নির্বাচনে আমিও দাড়িয়ে ছিলাম কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য পদে। প্রত্যাশার চাইতে বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচনে পাস করলাম। চতুর্থ বারের মতে আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদে স্থান পেলাম। নির্বাচনে বন্ধুদের মধ্যে আরো পাস করল এডভোকেট জামাল ভূইয়া, এডভোকেট মোঃ আমিনুল ইসলাম পলাশ, এডভোকেট সরদার আজিজুল রহমান রোকন।
নির্বাচন শেষ, একটু রিক্রিয়েশন দরকার! যেই ভাবা সেই কাজ। ঘুরতে যাওয়া দরকার, তাই টিম গঠনের পালাা। একে একে টিমে যোগ হলো জামাল ভূইয়া, পলাশ, রোকন, তারা, মুরাদ, জাকির ভাই, রুহুল ভাই, জাহাঙ্গীর ভাই, এমদাদ ভাই। দশ জনের টিম, এগার জন হলে মাঠে নেমে পড়া যেত! রুহুল ভাইর কাধে পড়লো ট্যুর ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব। শরীয়তপুরে না পেয়ে মাদারীপুর থেকে একটা বড় এসি মাইক্রোবাস ভাড়া করা হলো। গুছিয়ে একদিন সকালে রওয়ানা দিলাম কক্সবাজারের পথে। মধু হই হই গাইতে গাইতে আমরা পৌছে গেলাম কক্সবাজার। সারা রাস্তায় আনন্দ আর আনন্দ। যখন মন চাইছে চা খেতে, দাড়িয়ে গেলাম গাড়ি নিয়ে। যখনই খুধা লেগেছে খুজে নিলাম হোটেল। এভাবেই চললো আমাদের যাত্রা। সময়ের কোন বালাই নেই। সময়টাকে থামিয়ে দিয়ে ইচ্ছা মত মজা করা আরকি। রুহুল ভাই আগেই হোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছিলো। ডলফিন মোড়েরর কাছেই হোটেল বেষ্ট ওয়েষ্টার্ণ প্লাস হেরিটেজে উঠলাম আমরা। হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম খাবারের সন্ধানে। খাওয়া দাওয়া শেষে বীচের কাছে গিয়ে দোকন থেকে কিছু প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে আবার হোটেল। শান্তির ঘুম চুমু দিলো সবার চোখে। সকালে ঘুম থেকে উঠে বীচে নেমে গোসল সেরে আবার হোটেলের সুইমিং পুলে চই ডুব খেলা! বেশ কাটছে আমাদের কক্সবাজার ভ্রমণ।
বিভিন্ন স্পট দেখার যে পরিকল্পনা করেছি তার মধ্যে রামু বৌদ্ধ বিহার অন্যতম তালিকায় রইল। এক দুপুরে আমরা গেলাম রামু বৌদ্ধ বিহার। বিশাল প্রাসাদপম বৌদ্ধ মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার সাথে সাথে একজন দৌরে এসে বললো, জুতা খুলে প্রবেশ করুন। আমরা জুতা খুলে এক পাশে রেখে ভিতরে প্রবেশ করলাম। ভিতরে বিশালাকায় বৌদ্ধ মূর্তি নিরবে বসে আসে। ঘুরে ঘুরে সরকারের অর্থানুকুল্যে নির্মিত নতুন কমপ্লেক্স দেখছি। দ্বিতীয় তলায় বিশাল হল রুমের ভিতর ছোট ছোট ছেলেরা মাথা ন্যাড়া অবস্থায় বসে বসে দুষ্টামি করছে। এ বয়সটাই দুষ্টামির! কিন্তু ধর্মীয় বিধি নিষেধের কারনে তাদের আটকে রেখেছে মনে হলো। রুমের দেয়াল ঘেষা বোর্ডে বিভিন্ন ছবি। আছে সেলফে সাজানো বইয়ের সমারহো। একটা বই দেখে আমার আর তারার নজর কারলো। বইটির নাম চুল্লবর্গ। একজন ভিক্ষুকে ডাক দিলাম। কাছে আসতেই জানতে চাইলাম বইগুলো কি বিক্রর জন্য। আমাদের সে জানালো হ্যা, এগুলো বিক্রির জন্য। দাম জানতে চাইলে বললো এর মূল্য দুইশত পঞ্চাশ টাকা। আমি আর তারা দুজনে দুটি বই নিলাম। বইয়ের মূল্য বাবদ পাঁচশত টাকার একটি কচকচে নোট ভদ্রলোককে ধরিয়ে দিলাম। এর পর ওখান থেকে নেমে আমরা বাইরে আসলে আরেক ব্যক্তি আমাদের পাশের কিছু পুরাতন বৌদ্ধ নিদর্শন দেখানোর জন্য নিয়ে গেল। আমন্ত্রনের ভাব দেখে মনে হলো খুবই আন্তরিক। আমাদের বললো, এত দুর থেকে এসেছেন, আদী নিদর্শনগুলো দেখে যাবেন না? লোকটি আমাদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বৌদ্ধের বিভিন্ন পুরাতন মুর্তি দেখালো। কোনটা কত সালের তা বলে দিচ্ছে আর একটা দেখা শেষ হলে আরেকটার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে দেখতে দেখতে যখন সব দেখা শেষ তখন আন্তরিক ব্যক্তিটির আসল রুপ বেরিয়ে পড়লো। সে এবার আমাদের কাছে বখশিস দাবী করলো। তার চাইতে লজ্জা না করলেও আমাদের লজ্জা লাগলো। আমরা তাকে বখশিস দিয়ে বের হয়ে এলাম। গেটের পাশেই আমাদের মাইক্রোবাস দাড়ানো ছিলো। স্বজতেœ বইটাকে নিয়ে আমরা গাড়িতে উঠে গেলাম। গাড়িতে উঠে বইটা নেড়ে চেরে দেখলাম, লেখা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে বিতরনের জন্য। লেখাটা দেখে একটু অবাক লাগলো! যে বইটি বিনা মূল্যে বিক্রয়ের জন্য সেই বইটির দাম আড়াইশো টাকা কি করে হয়? বুদ্ধিষ্ট ব্যক্তিটি আমাদের বলতে পারতো, বইটি বিনা মূল্যে বিতরনের জন্য, আপনারা খুশি হয়ে মন্দিরের জন্য যদি কিছু দান করতে চান তবে করতে পারেন। আমরা দুটি বই হাতে নিয়ে ধরেই নিয়েছি এর মূল্য পাঁচশত টাকার কম হওয়ার কথা নয়। আমাদের সত্যি কথাটা বললে অনায়াসেই দুটি বই নিয়ে এক হাজার টাকা তার হাতে তুলে দিতাম। আমাদের কাছে ঐ ব্যক্তিটিকে প্রতারক বলেই মনে হলো!
এবার আমাদের যাত্রা রামুর একশ ফুট লাম্বা বৌদ্ধ মূর্তি প্রদর্শন। একশ ফুট লম্বা মূর্তি সম্পর্কে কিছু কথা নেট থেকে খুজে পেয়েছি। বন্ধুদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-
মহামানব গৌতম বুদ্ধ ধন্যবতীর রাজা চাঁদ সুরিয়ার সময় সেবক আনন্দকে নিয়ে আরাকানের রাজধানী ধন্যবতী আসেন। সেখানে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সেবক আনন্দকে উদ্দেশ্য করে বুদ্ধ বলেন, ‘হে আনন্দ ভবিষ্যতে পশ্চিম সমুদ্রের পূর্ব পার্শ্বে পাহাড়ের উপর আমার বক্ষাস্থি স্থাপিত হইবে। তখন উহার নাম হইবে ‘রাংউ’। ধন্যবতী রাজবংশ গ্রন্থে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, ভাষাতাত্ত্বিক প্রকৃয়ায় রাংউ থেকে রামু শব্দটি এসেছে। রাংউ বার্মিজ শব্দ। রাং অর্থ বক্ষ, উ অর্থ অস্থি অর্থাৎ রাংউ শব্দের অর্থ হচ্ছে বক্ষাস্থি। বর্তমানেও রামুতে রয়েছে অনেকগুলো প্রাচীন বৌদ্ধ ঐতিহ্য ও প্রতœতাত্তিক নিদর্শন।
এই রামুতে বৌদ্ধ সভ্যতা বা বৌদ্ধ স্থাপত্যের গোড়াপত্তন কখন থেকে তা সঠিকভাবে বলা মুশকিল। তবে আরাকানের প্রাচীন ইতিহাস ‘রাজোয়াং’ থেকে জানা যায়, ‘খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের দিকে অর্থাৎ ১৪৬ খ্রিস্টাব্দে মগধ রাজ্যের চন্দ্র সূর্য নামক জনৈক সামন্ত যুবক তাঁর বহু অনুগামী সৈন্যসামন্ত নিয়ে চট্টগ্রাম ও আরাকান দখল করেন। একটি অখন্ড রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং আরকানের ধন্যবতীতে রাজধানী স্থাপন করেন। রাজা চন্দ্র সূর্য এবং তাঁর সঙ্গে আগত সৈন্যদের অধিকাংশ ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। তারা চট্টগ্রাম ও আরকানে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে কার্যকর ভূমিকা রাখেন। তাই মগদাগত বৌদ্ধ এবং এতদঅঞ্চলের বৌদ্ধদের মধ্যে নিবিড় ধর্মীয় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফলে রাজকীয় প্রষ্ঠপোষকতায় চট্টগ্রাম ও আরকানে বৌদ্ধ ধর্মের দ্রুত বিস্তার ঘটে’।
বিভিন্ন সূত্রে আরো জানাযায়, প্রাচীনকাল থেকে রামু আরাকানী এবং এদেশীয় রাখাইন (রাকখাইন) বৌদ্ধদের পদভারে মুখর ছিল। আরাকানী শাসনামলে কক্সবাজার বা রামুতে রাখাইন সম্প্রদায় ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। ইংরেজদের আগমনের আগ পর্যন্ত এই সংখ্যাধিক্য অটুট ছিল। বর্তমানে রামুতে যে সকল বৌদ্ধ পূরাকীর্তি বা প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপত্য শিল্প রয়েছে, বিশেষ করে দৃষ্টিনন্দন শিল্পঐশ্বর্যে কাঠের তৈরি বিহারগুলো রাখাইনদের স্বর্ণোজ্জ্বল যুগের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে এসব পূরাকীর্তির মধ্যে কোনটি সবচেয়ে প্রাচীন? সঠিক দিনক্ষন এভাবে নিরুপন করা যায়নি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে (খ্রিস্টপূর্ব ৩০৮) রামকোটের পাহাড়ের উপর স¤্রাট অশোক রামকোট (রাংকুট) বনাশ্রম বৌদ্ধবিহারটি নির্মাণ করেন। এই বিহারের সংরক্ষিত বুড়া গোঁসাই মূর্তির মাঝেই গৌতম বুদ্ধের বক্ষাস্থি স্থাপিত হয়েছে। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ এর ভ্রমণকাহিনীতে উল্লেখ আছে, বিহার নির্মাণের পরর্বতী সময়ে সেখানে সাত’শ ভিক্ষু বসবাস করতেন। কালের পরিক্রমায় অনেক ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে। কিছু কিছু হারিয়ে যাওয়ার পথে। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সাম্প্রদায়িক হামলায় এরকম বেশ কয়েকটি প্রাচীন পুরাকীর্তি ধ্বংস করা হয়েছে। মুছে ফেলা হয়েছে ইতিহাসের পাতা থেকে।
তবে পুরাকীর্তি ও প্রতœতাত্তিক নিদর্শনের ঐতিহ্য বহন করে এখনো স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, এমন নিদর্শনের সংখ্যা রামুতে এখনো কম নয়।
শ্রীকুল গ্রামে কাঠের তৈরি শ্রীকুল রাখাইন বৌদ্ধ বিহার। এটি নির্মাণ করা হয়েছে ১৮৯৯ সালে। ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের লামার পাড়া গ্রামে অবস্থিত থোয়াইংগ্যা চৌধুরীর ক্যাং। তবে গ্রামের নামানুসারে এটি লামারপাড়া ক্যাং নামেই পরিচিত। ১৮০০ সালে তৎকালীন রাখাইন জমিদার উথোয়েন অংক্য রাখাইন এটি প্রতিষ্ঠা করেন। পাড়ার ভেতরের শান্ত নিথর কিছুটা পথ মাড়িয়ে এ ক্যাং-এ পৌঁছালে এখনো চোখে পড়ে, আশ্চর্য হবার মতো বড় বড় দুটি পিতলের ঘন্টা। পিতলের তৈরি এগুলো দেশের সবচেয়ে বড় ঘন্টা। এখানে আরও সংরক্ষিত আছে অষ্টধাতু নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি এবং প্রাচীন শিলালিপিসহ ঐতিহাসিক স্মৃতি চিহ্ন।
রেংগুনী কারুকাজে তৈরি প্রায় দুইশ বছরের প্রাচীন এ বিহারের নির্মাণ শৈলীও দারুন চমৎকার। কিন্তু উপযুক্ত পরিচর্যা এবং রক্ষণা-বেক্ষণের অভাবে বর্তমানে এ বিহারটির ভগ্নদশা।
১৮৯৯ সালে তৈরি চেরাংঘাটা উসাইসেন বৌদ্ধ বিহার। স্থানীয়ভাবে বড় ক্যাং নামে পরিচিত। এ বিহারের নির্মাণ শৈলীও দারুন। রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে কাঠের তৈরি বিহারগুলোর মধ্যে প্রায় দেড়’শ বছরের পুরনো হাজারীকুল রাখাইন বৌদ্ধ বিহার ও দক্ষিণ শ্রীকুল গ্রামে অবস্থিত লাহ-পেঁ-বাঙ-রঙ ক্যাং বা সাংগ্রীমা ক্যাং বর্তমানে ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়েছে।
রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের পাশ ঘেঁষে পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে বিশালাকার জাদী। এটি লাওয়ে জাদি নামে পরিচিত। এক সময় ওই জাদির সীমানা প্রাচীরের উপর দাঁড়ালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখা যেত। এখন পাহাড় ধ্বসের কারণে সেই সীমানা প্রাচীরও ভেঙ্গে গেছে।
রামুর পোড়া মাটিতে আধুনিক স্থাপত্য শিল্পঃ ইতিহাস প্রসিদ্ধ রামুতে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেবর কাল রাতে ঘটে গেছে এক অবিশ্বাস্য ধ্বংসযজ্ঞ। যে ধ্বংসযজ্ঞে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে রামুর প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী এরকম বারটি নিদর্শন। পুড়ে গেছে মহামূল্যবান বুদ্ধের ধাতু, তাল পাতার উপর বিভিন্ন ভাষায় লেখা ত্রিপিটক, অনেকগুলো বুদ্ধমূর্তিসহ প্রাচীন প্রতœতাত্তিক নিদর্শন। পাশাপাশি ওই একরাতেই পুড়েছে এখানকার হাজার বছরের গর্বের ধন-সম্প্রীতি।
তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় মাত্র এক বছরে বদলে গেছে রামুর দৃশ্যপট। সেই ধ্বংসস্তুপের উপর গড়ে তোলা হয় দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ বিহার। আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে তৈরি নব নির্মিত সেই বিহারগুলোই এখন নতুন ইতিহাস। একদিন এ ইতিহাসের বয়সও হবে হাজার বছর।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার, উত্তর মিঠাছড়ি বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র, রামু মৈত্রী বিহার, লাল চিং, সাদা চিং, অপর্ণাচরণ চিং, জাদী পাড়া আর্য্যবংশ বৌদ্ধ বিহার, উখিয়াঘোনা জেতবন বৌদ্ধ বিহার, উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বন বিহার, চাকমারকুল অজান্তা বৌদ্ধ বিহারসহ নব নির্মিত এসব বৌদ্ধ বিহার যেন এখন নতুন ইতিহাস। এসব বিহারের ঐতিহ্য নিয়ে আবার নতুন করে সমৃদ্ধ এই রামু।
অন্য রকম আলোয় আলোকিত বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রঃ উঁচু নিচু পাহাড় টিলায় সবুজের সমারোহ। এ সবুজের মাঝে গড়ে ওঠেছে মানুষের বসতি। শান্ত কোমল পরিবেশে এখানকার প্রাকৃতিক সৌর্ন্দর্য মানুষকে অবিরাম কাছে টানার মত জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের উত্তর মিঠাছড়ি গ্রাম। সেই অসাধারণ সৌন্দর্য্যে ঘেরা পাহাড় চূড়ায় এক টুকরো সবুজের মাঝে ছিল বাঁশের তৈরি বিমুক্তি বির্দশন ভাবনা কেন্দ্র। এর সামনেই ছিল উত্তর-দক্ষিণ কাত হয়ে শোয়া গৌতম বুদ্ধ মূর্তি। সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বিহারটি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মূর্তিটি প্রায় অক্ষত থেকে যায়। অন্যান্য বিহারগুলোর মত এটিও নতুনভাবে নির্মাণ করে সেনাবাহিনী।
তবে সেনাবাহিনী বারটি বিহার নির্মাণ করলেও সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ রূপ পেয়েছে এ বিহারটি। বর্তমানে যে কেউ বিহারটি দেখে অভিভূত হবেনই। বিহারের চমৎকার নির্মাণ শৈলীতো আছেই এ ছাড়াও বিহারের আঙ্গিনাকেও সাজানো দারুনভাবে। সেই অসাধারণ সৌন্দর্যের মাঝে নতুনভাবে শোভা পাচ্ছে একশ ফুট দীর্ঘ বিশালাকার আগের সেই মূর্তিটি। বর্তমানে এটি যেন অধারণের চেয়েও বেশি অসাধারণ। বলা যায়, রামুর বৌদ্ধ ঐতিহ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র।
‘অহিংসা, সাম্য ও মৈত্রীর বাণী নিয়ে বৌদ্ধ জাতিকে আলোর পথ দেখান মহামানব গৌতম বুদ্ধ। তিনি শান্তির প্রতীক, বৌদ্ধদের পথ প্রদর্শক। তাই এ মূর্তির নাম দেওয়া হয়েছে বিশ্বশান্তি সিংহশয্যা গৌতম বুদ্ধমূর্তি। বিহারকে নতুন করে সাজানোর পর এখন এ মূর্তিটিও নতুন রূপ পেয়েছে।
পাহাড় চূড়ায় নির্মিত বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার পাশাপাশি নতুন মাত্রা দিয়েছে এ মূর্তিটি। বর্তমানে এটিই দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি। মিয়ানমারের ইয়াংগুন থেকে কারিগর এনে এটি তৈরি করা হয়। মিয়ানমারের কারিগর থোয়াইংছি রাখাইন দীর্ঘ সাড়ে তিনবছর কাজ করে মূর্তিটি তৈরি করেন। ‘এ মূর্তির মডেলও সংগ্রহ করা হয়েছে মিয়ানমারের ইয়াংগুনের ধাম্মাদূত বৌদ্ধ বিহার থেকে। ওই মন্দিরে সংরক্ষিত গৌতম বুদ্ধের মূর্তির আদলে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ মূর্তির নির্মাণ শৈলী দেশী বিদেশী সকল মানুষকে আকৃষ্ট করছে যেমনটি আকৃষ্ট হয়েছি আমরা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.