নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসাদুজ্জামান জুয়েল

আসাদুজ্জামান জুয়েল

রওশনারা বেগম ও আবদুর রশীদ খানের কনিষ্ঠ পুত্র আমি আসাদুজ্জামান জুয়েল। ১৯৭৮ সালের ০৫ জুন শরীয়তপুর জেলার পালং থানা পালং গ্রামের এক সাধারণ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। শিক্ষা জীবন শুরু মায়ের হাতে। তুলাসার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এস.এস.সি; শরীয়তপুর সরকারী মহাবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচ.এস.সি; জাজিরা ডিগ্রী কলেজে থেকে বাণিজ্য বিভাগ হতে বি.কম পাস করার পর প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন অনুষদ হতে এলএল.বি ও এলএল.এম সম্পন্ন করি। প্রতিটি ক্যাম্পাসেই কেটেছে মধুর দিনগুলো। ২০০৯ সালের ০৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভূক্ত হয়ে ২৩ ডিসেম্বর ২০০৯ ঢাকা বার এসোসিয়েশনে সদস্যভূক্ত হই। পরবর্তীতে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১০ শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যভূক্ত হয়ে আইন পেশার সাথে যুক্ত আছি। ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতি, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ও শরীয়তপুর জেলা ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশনের সদস্য হিসাবে আইন পেশায় নিয়োজিত আছি। সাংবাদিকতা ও লেখালিখি করি মনের টানে। একই সাথে আইন পেশা ও সাংবাদিকতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিরন্তন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কর্ম জীবন শুরু লেখালিখির মাধ্যমে। দৈনিক ভোরের কাগজ দিয়ে সাংবাদিকতার শুরু। এর পর দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক কালের কন্ঠ, দৈনিক গণমুক্তি সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কাজ করেছি। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬টি। প্রবাসীদের সুখ-দুঃখ নিয়ে লেখা আমার প্রথম উপন্যাস ‘যেমন আছি লন্ডনে’ প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের একুশে বই মেলায়। দীর্ঘ বিরতির পরে ২০১৯ এর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় ভ্রমণ কাহিনী ‘কলকাতা ভ্রমণঃ জীবনে প্রথম কিছু’; প্রবন্ধ সংকলন ‘সমকালীন ভাবনা’ ও প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘হৃদয়ের শব্দক্ষরণ’। ২০২০ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় প্রবন্ধ সংকল ‘সমকালীন ভাবনা-২’ ও দ্বিতীয় কাব্য গ্রন্থ ‘তুই থাকিস পরাণের গহীনে’। এছাড়াও বেশ কিছু বই প্রকাশের অপেক্ষায় আছি। লেখালিখি করি বিভিন্ন ব্লগে। আমার ওয়েবসাইটঃ www.asadjewel.com, নিজস্ব ব্লগঃ www.asadjewel.blogspot.com এছাড়া www.somewhereinblog.net এ নিয়মিত লেখালিখি করি। শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসাবে তিনবার ও লাইব্রেরী সম্পাদক হিসাবে দু্ইবার দায়িত্ব পালন করেছি। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, শরীয়তপুর জেলা ইউনিটের জীবন সদস্য। প্রগতি লেখক সংঘ, শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি হিসাবে দ্বায়িত্বে আছি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শরীয়তপুর, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শরীয়তপুর এর আইন উপদেষ্টা হিসাবেও কর্মরত আছি। গরীব-দুঃখীদের মামলা পরিচালনার জন্য জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা শরীয়তপুর জেলা শাখার প্যানেল আইনজীবী হিসাবে দুস্থ্যদের আইনগত সহায়তা প্রদান কাজে নিষ্ঠার সাথে জড়িত আছি। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), শরীয়তপুর জেলা শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষানিকেতন কর্ম কেন্দ্রীক পাঠাগার, শরীয়তপুরের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি দীর্ঘদিন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও অস্ট্রেলিয়ান বার এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ইনটেনসিভ ট্রায়েল এডভোকেসী ওয়ার্কশপ, ২০১০ সালে এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার এর উদ্যোগে হিউম্যান রাইটস এন্ড রুল অফ ‘ল’, ২০০২ ও ২০১০ সালে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট এর উদ্যোগে শিশু ও নারী বিষয়ক রিপোর্টিং কর্মশালা, ১৯৯৯ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর আয়োজিত কম্পিউটার ট্রেড প্রশিক্ষণ, ২০১০ সালে ইউএসএইড-প্রগতি-কালেরকন্ঠ আয়োজিত দুর্নীতি বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরী ও তথ্য অধিকার আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণসহ পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। লেখালিখি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে সমাজ সংস্কারে একজন কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। আমার অর্ধপ্রাণ কন্যা রওশন আসাদ প্রিয়ন্তী। সহধর্মীনি মুনমুন সুলতানা লুনা পেশায় শিক্ষিকা। দুই বোন রেহানা আক্তার রেখা এবং কহিনুর আক্তার শিখা এবং একমাত্র ভাই মোহাম্মদ রুহুল আমীন খান আজাদ একজন প্রবাসী। যোগাযোগের জন্য আমাকে মেইল করতে পারেনঃ [email protected]

আসাদুজ্জামান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাল ঋণ-মন্দ ঋণ ॥ ব্যাংকার ও আইনজীবীর দায়

১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:১৮

ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান পন্য হলো ঋণ। আপনি-আমি বিশ্বাসের সাথে টাকা জমা রাখি ব্যাংকে বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। আমাদের জমানো সেই আমানতের বিনিময়ে সুদ বা মুনাফা যে নামেই ডাকি না কেন পেয়ে থাকি। সেই সুদ বা মুনাফাটা দেয় কোথা থেকে? আমাদের আমানতের টাকা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে। বিনিয়োগ থেকে আসা লভ্যাংশ বা সুদ বা মুনাফার একটা অংশ আমাদের দেয়। আর বাকীটা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটায়। যেহেতু আমানতের টাকা বিনিয়োগ করে মানে ঋণ দেয় সেক্ষেত্রে ব্যাংক ঝুকি নেয়। এই ঝুকির প্রকৃয়ায় কে কে জড়িত, কার কতটুকু দায় সেটাই বিবেচ্য বিষয়।
ঋণের সাথে জড়িত জামানত, জামানত হিসাবে সবচেয়ে ভাল বস্তু জমি, জমির সঠিকতা যাচাইয়ে দরকার আইন জানা লোক মানে আইনজীবী, আর সেই কাজটা করেন ব্যাংকের মনোনিত প্যানেল আইনজীবী বা আইন উপদেষ্টা। আমি যেহেতু একজন আইনজীবী, সাথে বিভিন্ন ব্যাংকের মনোনিত প্যানেল আইনজীবী বা আইন উপদেষ্টা, তাই ভাল ঋণ-মন্দ ঋণের বিষয়ে আমার নিজস্ব কিছু মতামত সকলের সাথে শেয়ার করতে চাই।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পন্য ঋণ বা লোন। আর ঋণ বিক্রি অন্য সকল পন্য বিক্রির মত নয়। অন্য সকল পন্য ক্রেতাকে দিতে বা গছিয়ে দিতে পারলেই বিক্রেতার দায়িত্ব অনেকাংশে শেষ। কিন্তু ঋণ এমন পন্য যা বিক্রয়ের পরে বিক্রয়োত্তর সেবা-সুশ্রসা করতে হয়। ঋণ গ্রহীতা বা লোনের ক্রেতা ভাল থাকলে ঋণ ভাল। ঋণের ক্রেতা যদি ভাল না থাকে তবে ঋণ ভাল থাকবে না মন্দ ঋণে বা ক্লাসিফাইড লোন হয়ে যাবে।
একটি ঋণ বা লোন বিক্রয় করার পূর্বে ক্রেতা সম্পর্কে অর্থাৎ ঋণ গ্রহীতা সম্পর্কে ব্যাংকের ভাল ধারনা থাকতে হবে। ব্যাংক অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তি সম্পর্কে ভাল ভাবে খোজ নিয়ে একটা সুন্দর মধুর সম্পর্ক তৈরী করে। ঋণ নিতে আগ্রহী ব্যক্তির একটি হিসাব খুলে লেনদেন করতে বলা বা পূর্বের খোলা হিসাবের হিসাব বিবরণী (স্টেটমেন্ট) বা লেনদেন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা। আমার বন্ধু বিশিষ্ট ব্যাংকার মোঃ কামরুজ্জামান মিন্টু সবসময় বলতেন, একটি ভাল ঋণ হলো সুখি মানুষের জামার মত। সারা রাজ্য ঘুরে যেমন সহজে সুখি মানুষের জামা মেলে না। তেমনি ভাল ঋণ গ্রহীতাও মেলা ভার। বন্ধু সবসময় বলতো, লেনদেন প্রতিবেদন দেখে ব্যাংক সন্তুষ্ট হলে ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তির (৫ সি) ) (1) Character, (2) Capital, (3) Condition, (4) Collateral ও (5) Capacity অর্থাৎ ১) চরিত্র, ২) মূলধন, ৩) অবস্থা, ৪) জামানত ও ৫) সক্ষমতা এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা খুবই জরুরী। একটা মানুষ চরিত্রবান না হলে তার বাকী পাঁচটি গুণ থেকেও লাভ নেই। আর ঋণ গ্রহীতার মূলধন কেমন আছে, তার বর্তমান অবস্থা কেমন, ঋণ গ্রহণ করে সে তা সুদাসলে ফেরত দিতে পারবে কিনা, তার জামানত কেমন, তার সক্ষমতা আছে কিনা এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা শেষে যদি মনে হয় ভাল হবে তবেই ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে জামানত হিসাবে বন্ধক রাখার জন্য মূল্যবান জমির কাগজপত্র সংগ্রহ করে ব্যাংক মনোনিত একজন প্যানেল আইনজীবীকে দেন। প্যানেল আইনজীবী কাগজপত্র ভালভাবে দেখে চেইন ডকুমেন্টস (জেনোলজি) মিলিয়ে জমির মালিকানা স্বত্ব নির্ধারণ করে একটি আইনগত মতামত প্রস্তত করে ব্যাংক বরাবর প্রেরণ করেন। এ পর্যায়ে আইনজীবী সাহেবের প্রাথমিক কাজ শেষ। এর পর ব্যাংক আইনজীবী সাহেবের দেয়া মতামতের কাগজ নিয়ে নিজেরা এবং থার্ড পার্টি (কোন সার্ভে প্রতিষ্ঠান) দিয়ে জমির মূল্যায়ন (ভ্যালুয়েশন) করেন। অনেক ব্যাংক একজন প্রকৌশলী দ্বারা মূল্যায়ন করে থাকেন। জমির মূল্য নির্ধারন করে দুই ভাবে। একটি হলো জমির বাজার মূল্য ও জমির তৎক্ষণি বিক্রয় মূল্যমান (ফোর্স সেল ভ্যালু) নির্ধারণ করা। অর্থাৎ জমির স্বাভাবিক বাজার মূল্য কত এবং তাৎক্ষণিক ভাবে বিক্রি করতে চাইলে কত টাকা বিক্রি করা যাবে তা নির্ধারণ করা। তাৎক্ষণিক বিক্রয় মূল্যমান (ফোর্স সেল ভ্যালু) যা নির্ধারণ করা হয় তা থেকে অনেক কম অর্থাৎ নিরাপদ দুরত্বে থেকে ঋণ গ্রহনে আগ্রহী ব্যক্তিকে ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকেন।
গ্রাহক এর নিকট থেকে সংগৃহীত কাগজপত্র ব্যাংক আইনজীবীর কাছে সরবরাহ করে, সেই সরবরাহকৃত কাগজপত্র পর্যালোচনা করেই একজন আইনজীবী তার আইনগত মতামত দিয়ে থাকেন। গ্রাহক যে কাগজপত্র সরবরাহ করলো (যেমন-বিভিন্ন খতিয়ানের পর্চা, মূল দলিল, মূল দলিল না থাকলে সইমোহরকৃত দলিল, খাজনার দাখিলা, ডিসিআর এর কপি, নির্দায় সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর সনদ, জাতীয় পরিচয় পত্র, ওয়ারিশ সনদ ইত্যাদি) সেই কাগজপত্র সঠিক আছে কিনা বা জাল কিনা তা যাচাই-বাছাই করার জন্য ব্যাংকের লোনস এন্ড এডভান্স এর অফিসার ভেটিং ও সার্চিং এর কাজ সম্পন্ন করে। ভেটিং ও সার্চিংয়ের কাজ ব্যাংক নিজেই তার অফিসার দিয়ে বা কোন থার্ড পার্টি দিয়ে বা আইনজীবীর মাধ্যমে বা অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দিয়ে করতে পারেন বা করেন। সার্চিংয়ের কাজটি করার জন্য জেলা রেকর্ড শাখা, জেলা রেজিষ্ট্রার অফিস, সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস, স্থানীয় ভূমি অফিস, ইউনিয়ন বা পৌরসভা, আয়কর অফিস, নির্বাচন অফিস সহ সংশ্লিষ্ট অফিস সমূহে যোগাযোগ করে তল্লাশির মাধ্যমে নিজ চোখে দেখে মূল্যায়ন ও দলিলপত্রের সঠিকতা যাচাই করে থাকেন।
ব্যাংকে অনেকেই জাল টাকা নিয়ে আসেন, ব্যাংকাররা সেই জাল নোট অনেক সময় ধরতে পারেন না, দিন শেষে হয় টাকা বান্ডিলে ঢুকে গ্রাহকের কাছে চলে যায় আর ধরা পরলে জমা দিতে আসা ব্যক্তির কাধে বা পরে ধরা পরলে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তার ঘারে দায় চাপে। ঠিক তেমনি, দলিল সঠিক না জাল, মিউটেশন ঠিক আছে কি নাই, খতিয়ানের পর্চা সঠিক না টেম্পারিং করা, খাজনা দাখিলা, ডিসিআর কপি, নির্দায় সনদ, ওয়ারিশ সনদ ইত্যাদি ইত্যাদি কাগজপত্র যাচাই করার জন্য বেশিরভাগ সময়ই আইনজীবীর পক্ষে তহশিল অফিস, এসিল্যান্ড অফিস, জেলা রেজিষ্ট্রার অফিস বা সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস, ইউনিয়ন বা পৌরসভা কোথাও যাওয়া সম্ভব হয় না এবং যাওয়ার কথাও না।
একটা আইনগত মতামত এর জন্য আইনজীবীকে ব্যাংক (লোন গ্রহীতার কাছ থেকে নিয়ে) দুইশত টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকে। এই সামান্য টাকার বিনিময়ে আইনজীবীকে পাঁচ থেকে দশ পাতার (ক্ষেত্র বিশেষ আরো বেশি) একটি আইনগত মতামত দিতে হয়। এই সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আইনগত মতামতের সাথে সার্চিং ও ভেটিং কেউ আশা করে না এবং কেউ দেয়ও না। সার্চিং ও ভেটিং এর কাজ আইনগত মতামতের সাথে সংযুক্ত নয়। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
একটা ঋণের ক্ষেত্রে একজন গ্রাহক ব্যাংকে আসলো, কাগজপত্র দিল, আইনজীবী আইনগত মতামত দিয়ে দিল আর ব্যাংক গ্রাহককে শত কোটি টাকা ঋণ দিয়ে দিলো এমনটা নয়। ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তি ঐ ব্যাংকে হিসাব খোলেন, লেনদেন করেন, লেনদেনের মাধ্যমে তার বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ব্যাংক। তার নৈতিক চরিত্র, তার ব্যবহার, তার ব্যবসা, তার প্রয়োজন, তার লেনদেন তার ঋণ ধারণ ও পরিশোধের ক্ষমতা ইত্যাদী নানান বিষয় ব্যাংক পরীক্ষা করে তাকে ঋণ দেয়ার কথা চিন্তা করে গ্রাহকের নিকট থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করেন। দীর্ঘ লেনদেন করার পরেও যে ব্যাংকার প্রতারক গ্রাহককে চিনতে পারলো না সেই গ্রাহককে কয়েকটি কাগজ দিয়ে কিভাবে চিনবে আইনজীবী? একটি নকল দলিল তো আসল ষ্ট্যাম্পে তৈরী করে, একটা নকল মিউটেশন তো আসল সিল মোহর দিয়েই তৈরী করে। হাজার হাজার কর্মকর্তার স্বাক্ষর কি আইনজীবী সাহেবের চেনা? আর কাগজ জাল হোক আর আসল হোক উকিলের কাজ চেইন ডকুমেন্টস মিলিয়ে দেখা। কাগজের সঠিকতা প্রমান করবে যার উপর সার্চিং ও ভেটিং এর দায়িত্ব সেই কর্মকর্তার বা ব্যক্তির।
এবার বলি ঋণ কিভাবে খারাপ হয় সে বিষয়ে আমার ধারনা। আমার সামান্য অভিজ্ঞতায় দেখেছি গ্রহীতাকে ঋণ দিয়ে অনেক ব্যাংক আর কোন খবর রাখে না। ঋণ পাস হওয়ার পর সেই ঋণ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সে নিয়মিত লেনদেন করবে, কিন্তু অর্থঋণ মামলা করার সময় ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখেছি ঋণ পাস হওয়ার পর চেকের এক পাতা খরচ করে পুরো টাকা তুলে নিয়ে আর কোন যোগাযোগ করেনি এবং লেনদেনও করেনি। ঋণ দেয়ার পর ঋণের কোন পরিচর্যা করেনি। পরিচর্যা ছাড়া কোন কিছু কি ভাল হয়? পরিচর্যা ছাড়া কি কোন ভাল ফল পাওয়া যায়? পরিচর্যা ছাড়া বাগানে তো আগাছাই জন্মাবে তাই না? গ্রাহক কেন ব্যাংকে আসছে না, কেন লেনদেন করছে না, সেকি নিঃশেষ হয়ে গেছে? গেলে তাকে কিভাবে সহযোগীতা করে আবার দাড় করিয়ে টাকাটা আদায় করা যায়? সেই বিষয়ে ব্যাংকের অনেক দায়িত্ব আছে যা ব্যাংকারগণ করে না। তারাতো অনেক ক্ষেত্রে ঋণ দিয়েই খালাস!!! ফলে ঋণ আর আদায় হয় না, ব্যাংকের গুনতে হয় শতকোটি টাকার লোকসান।
অনেকে ব্যাংকের সেই লোকসানের দায় দিতে চান আইনজীবীর উপর যে কিনা মাত্র দুইশত পঞ্চাশ টাক থেকে তিন হাজার টাকার বিনিময়ে আইনগত মতামত দিয়েছেন। মাসে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে যে ব্যাংকারদের রাখা হয়েছে তদারকির জন্য তারা কি দায়ী নয় এই লোকসানের জন্য? কেন একজন বাজে লোককে ঋণ দেয়া হলো? কেন ঋণ দেয়ার পর তদারকি করা হলো না? ঋণের বন্ধকি দলিলে ও অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নী দলিলে তো লিখে নিলেন আইনজীবীর মাধ্যমে যে, যে কোন সময় তদারকির জন্য ব্যাংককে তার ব্যবসা বাণিজ্য, গোডাউন, প্রকল্প পরিদর্ন করতে দিতে বাধ্য থাকিবেন। আইনজীবী শত টাকার পারিশ্রমিক নিয়ে শত কোটি টাকার দায় কিভাবে নেবে? আসলে অন্যের ঘারে দায় চাপানোটা আমাদের অভ্যাষে পরিনত হয়ে গেছে।
আবার অনাদায়ী ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংক অর্থঋণ আদালতে মামলার মাধ্যমে পদক্ষেপ নেয়। অনেকে মনে করেন, আইনজীবী মামলায় সময় নিয়ে ঘুরায় এবং সময় ক্ষেপণ করেন। আসলে কথাটা সত্যি নয়। আমি বেশ কিছু মামলা পরিচালনা করেছি এবং এখনও করছি। আমার যে ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা হয়েছে তা থেকে বলছি, প্রত্যেক ব্যাংকই আইনজীবীকে ব্যাংকের নির্ধারিত সিডিউল দেখে বিল প্রদান করেন। একটা মামলার জন্য বিভিন্ন বিষয় মিলে একটা বিল হয়ে। উদাহরণ হিসাবে বলি, একটা মামলা পরিচালনার জন্য একশত টাকা বিল হলো। পচিশ টাকা মামলাটা দায়ের করার পর আইনজীবীকে দেয়া হবে। এর পর চুড়ান্ত শুনানীর আগে আরো পচিশ টাকা দিবে। বাকী পঞ্চাশ টাকা দিবে রায় পাওয়ার পর। এই মামলাটা যদি দশটা তারিখ ঘুরে নিষ্পত্তি হয় তাতে আইনজীবীকে ঐ একশত টাকাই দেবে দশটা টাকাও বেশি দেয়া হবে না আর যদি একশতটা তারিখ ঘুরে মামলাটি নিষ্পত্তি হয় তাতেও দশটা টাকা বাড়াবে বা কমাবে না। টাইম পিটিশন বা হাজিরার জন্য কোন ফি ধার্য নাই। মামলা দায়েরের সময়ই বিলের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়। দশ দিনে মামলা শেষ হলে ঐ একশত টাকা আবার দশ বছর ঘুরে নিস্পত্তি হলেও ঐ একশত টাকা। তাই মামলাটা ঘুরিয়ে আইনজীবীর কোন লাভ নাই বরং লস, দ্রুত নিস্পত্তি করতে পারলে পকেটে অবশিষ্ট টাকাটা আসবে, নিস্পত্তি যত দেরিতে বিল তত দেরিতে। আর নিষ্পত্তি হলে বরং জারি মোকদ্দমার উদ্ভব হবে, আইনজীবী আবার নির্ধারিত ফি পাবে, নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জারি মোকদ্দমার উদ্ভব হবে না। এবার বুঝুন এখানে আইনজীবীর কি কোন লাভ আছে? তাই অহেতুক দোষারোপ করে আইনজীবীকে হেয় করে কি লাভ?
আমি কিছু ব্যাংকের ঋণের বিষয় জানি। ব্যাংকিং ব্যবসায় প্রধান প্রোডাক্ট কি, সবাই জানে ঋণ বা লোন, যা আগেও আলোচনা করেছি। ব্যাংক লোন সেল করে। এক সময় কিছু ব্যাংকের লোন সেল করতো ব্যাংকটির একটি ব্রাঞ্চের সামনের কয়েকজন দোকানদার। কারো দুই লাখ টাকা ঋণ চাই, দোকানদার বললো, দুই লাখ নিবি কিরে! তোকে দশ লাখ তুলে দেই!! ব্যবসায়ী দুই লাখ খরচ করে দশ লাখ টাকা ব্যাংকের কাছ থেকে কিনে নিলো!! সেই যে গেল আর ফিরে এলো না!! ব্যবসায়ীর কথা, কে টাকা ফেরত দেব? আমিতো লোন কিনছি? কিন্তু তার ঐ অনৈতিক কথা কি আইন শুনবে? পরবর্তীতে কি হলো, সেই বিক্রয়কৃত ঋণের গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে মামলা হলো। অতঃপর জমি বিক্রয় করে, জেল খেটে বিভিন্ন ভাবে ঋণ পরিশোধ করলো, আবারও সহযোগীতা করলো সেই আইনজীবী!!
আইনজীবীদের কাজের উপর মহামান্য হাইকোর্ট বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আইনজীবীগণ যেহেতু প্রদত্ত কাগজের উপর মূল্যায়ন করেন তাই একজন আইন উপদেষ্টা তার আইনগত অভিমতের জন্য দায়ী নয়।
এ প্রসঙ্গে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হক এবং বিচারপতি মোঃ নুরুল ইসলাম কর্তৃক আব্দুস সামাদ বনাম রাষ্ট মামলার [BLC (1996) page 63] জাজমেন্টে বলেছেন, “A Legal Adviser cannot be made liable for the offence of forgery and criminal breach of trust for giving his legal opinion.”
অনেকতো বললাম, এবার বাস্তবতায় আসি। বাস্তবকে অস্বীকার করার ক্ষমতা কারো নেই, আমারতো নেই-ই। বাস্তব ঘটনা হলো ভালো মন্দ সব জায়গায়ই আছে। ভাল ব্যাংকার যেমন আছে তেমনি ভাল আইনজীবীও আছে। খারাপ ব্যাংকার যেমন আছে তেমনি খারাপ আইনজীবীও আছে। ভাল ঋণ গ্রহীতা যেমন আছে, তেমনি ঋণ গ্রহীতা খারাপও আছে। সবাই সমান নয়, ভাল মন্দ সবজায়গায়ই বিরাজমান। আইনগত মতামত দেয়ার ক্ষেত্রে, বন্ধকনামা দলিল, অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নী দলিলসহ বিভিন্ন দলিল পত্র মুসাবিদা ও প্রস্তুতের ক্ষেত্রে আইনজীবীকে সততার তপ্ত কড়াইয়ের উপর বসে বরফ শীতল ঠান্ডা মাথায় যেমন কাজ গুলো করা উচিত তেমনি ব্যাংকারদের উচিত সঠিক গ্রাহক বাছাই করা, গ্রাহককে যথাযথ পরিচর্যা করা, গ্রাহক কর্তৃক সরবরাহকৃত তথ্য, উপাত্ত, দলিল দস্তাবেজ ভালভাবে যাচাই বাছাই করা এবং সত্যিকারের ব্যবসায়ী-গ্রাহককে ঋণ দিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা ও দেশের অর্থনীতিকে সবল রাখা।
আমার এই লেখা কোন সাফাই গাওয়ার জন্য নয়। ব্যাংকার ও গ্রহকদের মনে কষ্ট দেয়ার জন্যও নয়। বাস্তবতার আলোকে আমার পর্যবেক্ষণ পাঠকের সাথে শেয়ার করলাম মাত্র। আমার লেখায় কেউ মনে কষ্ট পেলে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.