নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসাদুজ্জামান জুয়েল

আসাদুজ্জামান জুয়েল

রওশনারা বেগম ও আবদুর রশীদ খানের কনিষ্ঠ পুত্র আমি আসাদুজ্জামান জুয়েল। ১৯৭৮ সালের ০৫ জুন শরীয়তপুর জেলার পালং থানা পালং গ্রামের এক সাধারণ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। শিক্ষা জীবন শুরু মায়ের হাতে। তুলাসার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এস.এস.সি; শরীয়তপুর সরকারী মহাবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচ.এস.সি; জাজিরা ডিগ্রী কলেজে থেকে বাণিজ্য বিভাগ হতে বি.কম পাস করার পর প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন অনুষদ হতে এলএল.বি ও এলএল.এম সম্পন্ন করি। প্রতিটি ক্যাম্পাসেই কেটেছে মধুর দিনগুলো। ২০০৯ সালের ০৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভূক্ত হয়ে ২৩ ডিসেম্বর ২০০৯ ঢাকা বার এসোসিয়েশনে সদস্যভূক্ত হই। পরবর্তীতে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১০ শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যভূক্ত হয়ে আইন পেশার সাথে যুক্ত আছি। ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতি, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ও শরীয়তপুর জেলা ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশনের সদস্য হিসাবে আইন পেশায় নিয়োজিত আছি। সাংবাদিকতা ও লেখালিখি করি মনের টানে। একই সাথে আইন পেশা ও সাংবাদিকতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিরন্তন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কর্ম জীবন শুরু লেখালিখির মাধ্যমে। দৈনিক ভোরের কাগজ দিয়ে সাংবাদিকতার শুরু। এর পর দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক কালের কন্ঠ, দৈনিক গণমুক্তি সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কাজ করেছি। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬টি। প্রবাসীদের সুখ-দুঃখ নিয়ে লেখা আমার প্রথম উপন্যাস ‘যেমন আছি লন্ডনে’ প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের একুশে বই মেলায়। দীর্ঘ বিরতির পরে ২০১৯ এর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় ভ্রমণ কাহিনী ‘কলকাতা ভ্রমণঃ জীবনে প্রথম কিছু’; প্রবন্ধ সংকলন ‘সমকালীন ভাবনা’ ও প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘হৃদয়ের শব্দক্ষরণ’। ২০২০ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় প্রবন্ধ সংকল ‘সমকালীন ভাবনা-২’ ও দ্বিতীয় কাব্য গ্রন্থ ‘তুই থাকিস পরাণের গহীনে’। এছাড়াও বেশ কিছু বই প্রকাশের অপেক্ষায় আছি। লেখালিখি করি বিভিন্ন ব্লগে। আমার ওয়েবসাইটঃ www.asadjewel.com, নিজস্ব ব্লগঃ www.asadjewel.blogspot.com এছাড়া www.somewhereinblog.net এ নিয়মিত লেখালিখি করি। শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসাবে তিনবার ও লাইব্রেরী সম্পাদক হিসাবে দু্ইবার দায়িত্ব পালন করেছি। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, শরীয়তপুর জেলা ইউনিটের জীবন সদস্য। প্রগতি লেখক সংঘ, শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি হিসাবে দ্বায়িত্বে আছি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শরীয়তপুর, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শরীয়তপুর এর আইন উপদেষ্টা হিসাবেও কর্মরত আছি। গরীব-দুঃখীদের মামলা পরিচালনার জন্য জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা শরীয়তপুর জেলা শাখার প্যানেল আইনজীবী হিসাবে দুস্থ্যদের আইনগত সহায়তা প্রদান কাজে নিষ্ঠার সাথে জড়িত আছি। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), শরীয়তপুর জেলা শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষানিকেতন কর্ম কেন্দ্রীক পাঠাগার, শরীয়তপুরের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি দীর্ঘদিন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও অস্ট্রেলিয়ান বার এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ইনটেনসিভ ট্রায়েল এডভোকেসী ওয়ার্কশপ, ২০১০ সালে এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার এর উদ্যোগে হিউম্যান রাইটস এন্ড রুল অফ ‘ল’, ২০০২ ও ২০১০ সালে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট এর উদ্যোগে শিশু ও নারী বিষয়ক রিপোর্টিং কর্মশালা, ১৯৯৯ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর আয়োজিত কম্পিউটার ট্রেড প্রশিক্ষণ, ২০১০ সালে ইউএসএইড-প্রগতি-কালেরকন্ঠ আয়োজিত দুর্নীতি বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরী ও তথ্য অধিকার আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণসহ পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। লেখালিখি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে সমাজ সংস্কারে একজন কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। আমার অর্ধপ্রাণ কন্যা রওশন আসাদ প্রিয়ন্তী। সহধর্মীনি মুনমুন সুলতানা লুনা পেশায় শিক্ষিকা। দুই বোন রেহানা আক্তার রেখা এবং কহিনুর আক্তার শিখা এবং একমাত্র ভাই মোহাম্মদ রুহুল আমীন খান আজাদ একজন প্রবাসী। যোগাযোগের জন্য আমাকে মেইল করতে পারেনঃ [email protected]

আসাদুজ্জামান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মসজিদ পোড়ার প্রতিবাদে মন্দির রক্ষা করে দেখিয়ে দিন

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৬


ভারতের দিল্লিতে চলছে দাঙ্গা। শুধু দিল্লিতেই নয়, সেটা ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের রাজ্যগুলোর আনাচে কানাচে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ইস্যু নিয়ে প্রতিবাদ হলেও এখন তা দাড়িয়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়। এখন পরিস্থিতি মুসলমান বনাম উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের মধ্যে লড়াইয়ে পরিনত হয়েছে।বর্তমান হিন্দু অধ্যুসিত ভারতে দাঙ্গা হলে হিন্দুরাও তাদের ঘর রক্ষা করতে পারবে না। ‘গ্রামে আগুন লাগলে পীর সাহেবের ঘরও বাদ যায় না’ এই প্রবাদ আমরা সবাই জানি। দাঙ্গায় তাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মুসলিম-হিন্দুসহ অন্য ধর্মের সকলেই। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় গুজরাটের দাঙ্গার সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহ ছিলেন স্বরাস্ট্র প্রতিমন্ত্রী। আজ যখন দিল্লিতে দাঙ্গা শুরু হয়েছে তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে নরেন্দ্র মোদী আর স্বরাস্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। দাঙ্গা নিয়ে ভয়ের কারন এখানেই। সেদিনও যেমন তারা নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা না করে আগুনে ঘি ঢেলেছিলো আজও তার ব্যত্যয় ঘটাবে না। কারন কুকুরের ল্যাজ যে শত বছর ঘি মেখে চুঙ্গায় রাখলেও বের করার পরই কুকড়ে যায়! দিল্লির আগুনের হলকা যেন আমাদের সোনার বাংলায় উত্তাপ না ছড়ায় সেদিকে আমাদের সকলেরই খেয়াল রাখতে হবে। মসজিদ পোড়ানোর প্রতিবাদ মন্দির রক্ষা করে দেখিয়ে দিতে হবে। অপর রাষ্ট্রের সংঘটিত ঘটনার প্রতিবাদে ঘৃণা প্রকাশ করতে গিয়ে সম্প্রীতি নষ্ট না করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে দিল্লিতে টানা চার দিনের দাঙ্গার পর মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আহতের সংখ্যা দুইশ ছাড়িয়ে গেছে বলে খবর প্রকাশ করছে বিভিন্ন মিডিয়া। এই পরিসংখ্যান সরকারের। কিন্তু বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশি সেটা ধারনা করা যেতেই পারে। কারন মৃত্যু নিয়ে সরকারী পরিসংখ্যান কখনোই নির্ভরযোগ্য সত্য বলে অতীতেও বিবেচিত হয়নি, এখনও আমার কাছে হয় না। সংবাদ মাধ্যমে জাফরাবাদের এক বাসিন্দা বলেন, “ভেতরের মহল্লায় অশান্তি চলছে। কোথায় কত জনের দেহ পড়ে আছে কেউ জানে না। পুলিশ এখনও ঢুকতে পারেনি ভেতরে।” এতেই আচ করা যায় পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
দাঙ্গার হাতিয়ার হিসাবে ইট, পাথর, লাঠিই শুধু নয় আরেকটি বড় উদ্বেগজনক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে মুসলিমদের ওপর অ্যাসিড হামলা। মুস্তাফাবাদ এলাকায় বৃহস্পতিবার বেশ কিছু আহত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের অনেকের চোখে অ্যাসিড ঢালা হয়েছে। দৃষ্টি হারিয়েছেন চার জন। খুরশিদ নামে এক জনের দু’চোখই নষ্ট হয়েছে। দুই চোখ-সহ পুরো মুখ ঝলসে গেছে ওয়কিল নামের আরেকজনের। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা দিল্লি হাইকোর্টকে জানিয়েছেন, পুলিশকেও অ্যাসিড হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে। নিরীহ পুলিশ (যারা দাঙ্গা না থামিয়ে মসজিদে আগুন ধরাতে সহযোগীতা করেছে) তারাও রেহাই পাচ্ছে না। এযেনো গঙ্গাজল সিনেমার বাস্তব প্রয়োগ করছে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী গোড়ারা। এসিডকে গঙ্গাজল ভেবে ছিটিয়ে পবিত্র করছে ভারতকে। আমি একজন মানুষ হিসাবে তীব্র নিন্দা জানাই।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাস ভারতে নতুন নয়। বিশেষ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাঙ্গার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার কথা নিশ্চই আপনাদের মনে আছে। না থাকলেও সমস্যা নেই। মনে করিয়ে দিচ্ছি।
পুরনো ইতিহাস হাতরে পাওয়া যায় ভারতের গুজরাট রাজ্যের গোধরায় ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যাদের অধিকাংশই ছিল হিন্দু তীর্থযাত্রী। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ভারতের ইতিহাসের সবচাইতে গুরুতর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়েছিল, যাতে ১ হাজারেরও বেশি মতান্তরে দুই হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়- যারা প্রধানত মুসলিম।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সবরমতী এক্সপ্রেস নামের ওই ট্রেনটি হিন্দু তীর্থযাত্রীদের নিয়ে অযোধ্যা থেকে ফেরার সময় একদল মুসলিম তার ওপর আক্রমণে চালায় এবং ট্রেনটি জোর করে থামিয়ে একটি বগিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। কিন্তু পরে রাজ্য সরকারের একটি তদন্ত কমিশন ২০০৮ সালে এক রিপোর্টে বলে যে, ট্রেনে আগুন লাগানোর ঘটনা ছিল একটি ষড়যন্ত্র। সরকারি একটি রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ট্রেনের ভেতরের একটি দুর্ঘটনা থেকেই হয়তো আগুনের সূচনা হয়েছিল।
২০১৭ সালে আগুন লাগানোর মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১১ জন মুসলিম ব্যক্তির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে ভারতের একটি আদালত। ওই আদালত অন্য আরো ২০ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজা বহাল রেখেছে এবং অন্য ৬৩ জনকে খালাস দেয়ার রায় চ্যালেঞ্জ করে করা একটি আপিল খারিজ করে দিয়েছে। যাদেরকে ২০১১ সালে আদালত খালাস দিয়েছিল, তার মধ্যে চার ব্যক্তিকে ওই ঘটনার মূল অভিযুক্ত বলে বলা হয়। আদালত এ ছাড়াও গুজরাট রাজ্য সরকারকে গোধরা ট্রেন অগ্নিকান্ডের শিকার প্রতি পরিবারকে ১০ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেবার নির্দেশ দিয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়, রাজ্য এবং রেল কর্তৃপক্ষ আইন-শৃংখলা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
২০০২ সালে যে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়, সে সময় গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এবং বর্তমানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, তিনি সহিংসতা থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং হিন্দু দাঙ্গাকারীদের পরোক্ষভাবে উস্কানি দিয়েছিলেন। যদিও কমিশন এসব অভিযোগ খারিজ করে দেয়। আর সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কিভাবে কমিশন দ্বারা খারিজ করতে হয় তা আমরা ভালোভাবেই জানি।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল অভিযোগ করেছেন, গুজরাট দাঙ্গার সময় প্রশাসন সেনা নামাতে চব্বিশ ঘন্টারও বেশি দেরি করেছিল- যেটা না হলে হয়তো বহু প্রাণহানি ঠেকানো যেত। সেনাবাহিনীর সাবেক উপপ্রধান জমিরউদ্দিন শাহ গুজরাট দাঙ্গার মোকাবিলায় মোতায়েন করা সেনাদের নেতৃত্বে ছিলেন, তিনি তার সদ্যপ্রকাশিত বইতে দাঙ্গা ঠেকানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন, যা ১৪ অক্টোবর ২০১৮ বিবিসির এক রিপোর্টে ওঠে এসেছে। ‘দ্য সরকারি মুসলমান’ নামে তার ওই বইটি প্রকাশ করতে গিয়ে ভারতের সাবেক উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারিও দাঙ্গার সময় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ওই ভয়াবহ দাঙ্গার সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ভারতের এখনকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০০২ সালের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় গুজরাটে দুহাজারেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন মুসলিম। ‘দ্য সরকারি মুসলমান’ নামে তার বইতে সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জমিরউদ্দিন শাহ বর্ণনা করেছেন কীভাবে দাঙ্গাবিধ্বস্ত গুজরাটে পৌঁছানোর পরও তার বাহিনীকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, গুজরাটে দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর পরই আমি যোধপুরে তখনকার সেনাপ্রধান পদ্মনাভনের ফোন পেলাম। একটু অবাকই হয়েছিলাম, কারণ সেনাপ্রধান সরাসরি ডিভিশন কমান্ডারকে ফোন করে নির্দেশ দিতেন না। কিন্তু পাঞ্জাবে একসঙ্গে কাজ করার পুরনো পরিচয়ের সূত্র ধরে তিনি আমাকে ভাল করে চিনতেন, ডাকতেন ‘জুম’ বলে। আর্মি চিফ আমাকে বললেন, জুম- তোমার ট্রুপস নিয়ে এক্ষুনি গুজরাটে চলে যাও, দাঙ্গা ঠেকাও। আকাশপথে একটার পর একটা সর্টি দিয়ে ২০০২-র ২৮ শে ফেব্রুয়ারি আর ১লা মার্চের মধ্যবর্তী রাতেই যোধপুর থেকে গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদে পৌঁছে গিয়েছিল বিশাল সংখ্যক সেনা। কিন্তু সেই বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা জমিরউদ্দিন শাহ জানাচ্ছেন পুরো রাজ্য জুড়ে তখন চলছে ভয়াবহ দাঙ্গা, কিন্তু তাদের পুরো একটা দিনেরও বেশি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছিল। মধ্যরাতের পর তিনি মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে দেখা করতে গিয়েছিলেন- সেখানে তখন ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজও। কিন্তু তার পরেও সেনারা দাঙ্গা ঠেকানোর জন্য রাস্তায় নামতে পারেনি চব্বিশ ঘন্টারও বেশি সময়। সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জমিরউদ্দিন শাহ আরও জানাচ্ছেন, আমাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল গুজরাটে পৌঁছানোর পর বাহিনীকে গাড়ি, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ এসকর্ট, কমিউনিকেশন সিস্টেম আর শহরের নকশা দেওয়া হবে। কিন্তু পৌঁছে দেখলাম ওসব কিছুই নেই। একজন ব্রিগেডিয়ার শুধু এসেছিলেন দেখা করতে, তারও কোনও ধারণা ছিল না কেন কিছুই নেই। শুনলাম রাজ্যের মুখ্য সচিব বিদেশে। যিনি দায়িত্বে ছিলেন তাকে যোগাযোগ করার বহু চেষ্টা করলাম- তিনি ফোনই ধরলেন না। এভাবে মূল্যবান সময়ের অপচয়ে সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় থাকতে বাধ্য হয়েছিল- আর তাতেই দাঙ্গায় প্রাণহানি অনেক বেড়ে যায় বলে বইতে লিখেছেন জমিরউদ্দিন শাহ। সেনাবাহিনীর সাবেক উপপ্রধান জমিরউদ্দিন শাহ এর বর্ণনায়ই বুঝাযায় নরেন্দ্র মোদীর প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে কিভাবে দাঙ্গা ছড়িয়েছিলো এবং এত বিশাল সংখ্যক মুসলিম-হিন্দু প্রাণ হারিয়েছেলো।
আমরা বাঙ্গালী। আর আমাদের বদনাম করে অনেকে বলেন ‘হুজুকে বাঙ্গালী’। অনেক সময় পরিবেশ পরিস্থিতি যথাযথ ভাবে বিবেচনা না করেই ঝাপিয়ে পড়ি। অন্য দেশে বৃষ্টি হলে আমরা ছাতা মেলে ধরি বলেও বদনাম আছে। দিল্লির দাঙ্গায় আমরা দেখতে পাচ্ছি ভারতের বহু মসজিদে আগুন ধরানো হয়েছে, আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরীফ পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে, মসজিদের ইমামের চোখে মুখে এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে, চিরতরে চোখ নষ্ট করে দিচ্ছে, রাস্তায় ফেলে নির্দয়ভাবে পেটাচ্ছে। কোথাও কোথাও পুলিশ নিষ্ক্রিয় অবস্থায় দাড়িয়ে সিনেমা দেখছে। সন্তানের লাসের কফিনের সামনে পিতাকে পুলিশ লাথি ঘুশি দিচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, কোন কোন জায়গায় পুলিশ নিজেরাই মসজিদে আগুন দিচ্ছে। এই খবরগুলো উড়ো খবর নয়, বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা রাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন মদদ ছাড়া হতে পারে বলে মনে করি না।
প্রখ্যাত বাঙ্গালী রাজনীতিক জ্যোতি বসু বলতেন-‘শাসক না চাইলে দাঙ্গা হয় না’ কথাটা বার বার প্রমানিত হয়েছে। নরেন্দ্র মোদী যে একজন সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি তা তার অতীত কর্মেও বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও এমন দাঙ্গা ভারতে দেখা যাবে বলেই মনে হয়। নরেন্দ্র মোদী চাইলেই গুজরাট দাঙ্গা ঠেকাতে পারতেন, নরেন্দ্র মোদী চাইলেই দিল্লির দাঙ্গাও ঠেকাতে পারতেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী একজন মুসলিম বিদ্বেষী অমানুষ হিসাবে বার বার নিজের পরিচয় দিয়েছেন, দিচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও দিবেন। ইতিহাস নরেন্দ্র মোদীকে মনে রাখবেন, অবশ্যই ঘৃণাভরে মনে রাখবেন। ইতিহাস মুছে যায় না।
তেয়াত্তর বছর বয়সী একটি পরিপক্ক রাষ্ট্র ভারত এখনও ধর্মান্ধতা থেকে বেরোতে পারছে না যা খুবই দুঃখজনক। ভারতের অভ্যন্তরিন বিষয় নিয়ে তারাই চিন্তা করবে। আমরা পারি তাদের হিংসাত্বক কাজের প্রতি ঘৃণা করতে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তাদের হিংসার আগুন আমাদের মনে পূষে আমরা যেন নিজেদের মধ্যে হানাহানিতে না জড়াই। আমরা আমাদের সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখতে চাই। একজন ভিন্ন ধর্মীয় মানুষও যেন বাংলার মুসলিম দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত না হয়, একটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও যেন মুসলিমদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। সম্প্রীতির জয় হোক, মানবতার জয় হোক।

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৬

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: সম্প্রীতির জয় হোক, মানবতার জয় হোক।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৭

আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেছেন: আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য এবং মন্তব্য করে আমায় সমর্থন দেয়ার ও আরো লেখার উৎসাহ দেয়ার জন্য।

২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৪

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: এ সাম্প্রদায়িকতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
(লিখাটি দুইবার এসেছে, সংশোধন করে দিন)

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৩৭

আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি দুঃখিত যে দুইবার পেষ্ট করে ফেলেছিলাম। সংশোধন করেছি। ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা।

৩| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:১৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুচিন্তিতভাবে সুচারু মনোভাব প্রকাশ ।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৩৮

আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য এবং উৎসাহজনক মন্তব্যর জন্য।

৪| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৫৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: আসাদুজ্জামান জুয়েল,




যথেষ্ট ভালো হয়েছে লেখা। ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসক ও জনগোষ্ঠীর স্বরূপ উদঘাটন করেছেন।

তবুও বলি- সেখানে এবং সবখানেই সম্প্রীতির জয় হোক। জয় হোক মানবতার।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৪৮

আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেছেন: আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা লেখাটা পড়ার জন্য এবং আমাকে উৎসাহ দেয়ার জন্য। আমি চেষ্টা করবো আরো ভালো লেখার জন্য।

৫| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: যতবার ধর্ম নিয়ে লড়তে দেখেছি, ততবার নিজের ভেতরে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব মরে গেছে।তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তাকে জিইয়ে দিতে নিশান উড়াও, আর আমি ধীরে ধীরে নাস্তিক হই।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৩৭

আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেছেন: দারুন বলেছেন ভাই। ধর্মের গোড়ামী মানুষকে ধর্ম থেকে দূরে ঠেলে দেয়। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

৬| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:৪৪

শের শায়রী বলেছেন: লেখায় ভালো লাগা, সাধারনের মাঝে কিন্তু মানবতা আছে কিন্তু দেখুন সব দেশে রাজনীতিবিদরাই সব থেকে বড় সাম্প্রদায়িক অথচ মুখে সবার অসাম্প্রদায়িকতার বুলি। দোষ হয় সাধারনের।

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২৩

আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেছেন: রাজনীতিবিদরা অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে কিন্তু সাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনা নিজেদের মধ্যে ধারণ করে ফায়দা লোটে।

৭| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:৩৪

জাহিদুল ইসলাম ২৭ বলেছেন: যুদ্ধের ময়দান মানবতা দেখানোর জায়গা না।মানবতা দেখাতে হলে সেভাবে দেখানো উচিৎ যুদ্ধ যাতে না বাধে ।

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২২

আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেছেন: সেটাই নেতারা দেখান না! তারা ঘর পোড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে আলুপোড়া খাওয়ার অপেক্ষায় থাকে।

৮| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: আমার মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২১

আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। আমি সবসময় আমার লেখায় আপনার নির্দেশনামূলক ও পরামর্শমূলক মন্তব্যর অপেক্ষায় থাকি।

৯| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি কোন মন্দিরটি পোড়ানোর প্ল্যান করছেন, সেটা জানলে, উহা রক্ষা করা সহজ হতো!

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২০

আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেছেন: মন্দিরটি নয়, মন্দির মানে বাংলার মন্দির মানে সকল মন্দির বুঝাতে চেয়েছি!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.