নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asadali.ht

মোহাম্মদ আসাদ আলী

সাংবাদিক

মোহাম্মদ আসাদ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পশ্চিমা সভ্যতা আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে!

১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:২৭

পৃথিবীর ইতিহাসকে না তলিয়ে শুধুমাত্র ভাসা ভাসা ভাবেও যারা পড়ে গেছেন তাদেরকে আলাদা করে বলার দরকার পড়ে না যে, পৃথিবীতে সুপার পাওয়ার তথা পরাশক্তি হিসেবে যে সকল জাতি আত্মপ্রকাশ করেছে তাদের আদর্শ, কর্মকাণ্ড ও অধিনস্থ ভূ-খণ্ডের অধিবাসীদের শান্তি শৃঙ্খলা এক রকম ছিল না। ইতিহাসের পাতায় গভীর দাগ সৃষ্টি করে রেখেছে এরকম মাত্র দুইটি পরাশক্তিই আমার দৃষ্টিগোচর হয়। এর একটি, গত প্রায় ৪৭৫ বছর ধরে চলে আসা ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতা যার মূল ভিত্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে ব্রিটেন এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। আর অপরটি হলো এখন থেকে ১৪০০ বছর আগে পৃথিবীতে আসা এসলামী সভ্যতা যার ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে প্রায় ১০০ বছর দায়িত্ব পালন করেছে আল্লাহর খেলাফত পালনকারী প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীরা। এসলামী সভ্যতা যখন অর্ধপৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা লাভ করে তখন খুব অল্প সময়েই মানবজাতি এর প্রতি ঝুঁকে পড়েছিল এবং দলে দলে তারা এসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। তখন কাউকে কোনো জোর-যুলুম, বা কোনো ধর্মীয় জাতিগোষ্ঠির আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হয়নি। মোসলেমরা যখন একের পর এক শত্র“কে পরাজিত করে চলেছে তখন তাদের জাতীয় কাজই ছিল যুদ্ধ করা। কিন্তু এত যুদ্ধ করার পরও কেউ এমন একটা ঘটনা উল্লেখ করতে পারবেন না যেখানে মোসলেমরা মানবতাবিরোধী বা যুদ্ধনীতি বহির্ভূত কোনো কর্মকাণ্ড করেছে। তাদের এসকল যুদ্ধের পেছনে একটাই উদ্দেশ্য ছিল আর তাহলো এসলামের আদর্শকে মানবজাতির সামনে উপস্থাপন করা। মানবজাতিকে এমন একটা পৃথিবী উপহার দেওয়া যে পৃথিবীতে অন্যায়, অবিচার, যুলুম, বৈষম্য, হানাহানি, রক্তারক্তি ইত্যাদি না থাকে। মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে। তাদের এই আত্মত্যাগে তাদের পার্থিব কোনো স্বার্থ ছিল না।

এবারে আসা যাক বর্তমান সুপার পাওয়ার প্রসঙ্গে। বর্তমান পৃথিবীতে একক পরাশক্তি হলো ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতা। সমস্ত পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করছে এই আত্মাহীন, বস্তুবাদী সভ্যতাটি। যার ভিত্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে পশ্চিমা বিশ্ব যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। পশ্চিমারা সমস্ত পৃথিবীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেছে কোনো কল্যাণকর আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। সমস্ত পৃথিবীতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাই হলো তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য একথা তারা অনেকবার স্বীকার করেছেন। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই গণতন্ত্র কিন্তু তাদের দেশগুলোতে প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র নয়। এগুলো হলো সেই গণতন্ত্র যেটাকে আমাদের মত রাষ্ট্র যখন প্রতিষ্ঠা করে থাকে তখন সেই দেশের একসময়ের একতাবদ্ধ জাতি খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে নিজেদের মধ্যে শতমুখী সংঘাতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এক সময়ের অসা¤প্রদায়িক জাতি সা¤প্রদায়িকতার কবলে পড়ে ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। যে গণতন্ত্রে মানুষের মূল্য একটা ব্যালট পেপারের সমান, যাদের প্রয়োজন পড়ে ৫ বছর পর পর।

মানুষের সামাজিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি হাজারো সঙ্কটের সমাধান করার জন্য যে গণতন্ত্রকে রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করা হয় দেখা যায় সেই সব সমস্যার সমাধান তো করা যায়ই না বরং উল্টো সেই গণতন্ত্রেরই ফলে শতশত রাজনৈতিক সঙ্কটের সৃষ্টি হয় যার ফলশ্র“তিতে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়। এমনই এক শাসনব্যবস্থাকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার টার্গেটে এগিয়ে চলছে বর্তমান পৃথিবীর পরাশক্তিরা। আর এই কাজের প্রক্রিয়া হিসেবে তারা বেছে নিয়েছে সামরিক শক্তি। পাশ্চাত্য সভ্যতা অপ্রতিরোধ্য সামরিক শক্তিবলে বলীয়ান হয়ে পৃথিবীবাসীকে আদেশ করছে তাদের আনুগত্য মেনে নিয়ে তাদের তৈরি জীবন ব্যবস্থা তথা গণতন্ত্রকে জাতীয় জীবনে গ্রহণ করে নেওয়ার জন্য। যেহেতু তাদের সামনে দাঁড়ানোর মত পৃথিবীতে কেউ নেই কাজেই দেখা যাচ্ছে প্রায় সমস্ত মানবজাতিই তাদের এই আদেশকে মাথা পেতে নিয়েছে। আর যারা কিছুটা সাহস দেখিয়ে তাদের আনুগত্য মানতে দ্বিধা করছে তাদেরকে প্রথমে বিভিন্ন রকমের অবরোধ, নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি আরোপের মাধ্যমে বশে আনার চেষ্টা করা হয়, অতঃপর এতেও যদি

সে রাষ্ট্র গড়িমসি করে তাহলে সামরিকশক্তিবলে খুব সহজেই তাদেরকে পরাজিত করে অবাধ্য শাসককে সরিয়ে সেখানে তাদের একান্ত বাধ্যগত গণতান্ত্রিক সরকারকে বসিয়ে দিচ্ছে। তাদের ধারণা বিশ্বের অনুন্নত এবং পশ্চাৎপদ দেশগুলোর ওপর সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তির ছড়ি ঘুরানো ব্যতীত তাদেরকে যথাস্থানে রাখা এবং বিশ্ব ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত এ কাজ করতো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। ১৯৪৫ সালের পর এই দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং তারা ব্রিটেনের থেকে আরও কঠিন শৃঙ্খলে বিভিন্ন দেশকে নিয়ন্ত্রণে রেখে নিজেদের নীতি নির্ধারণ ও কার্যকর করছে। এই হলো একনজরে বর্তমানের সুপার পাওয়ারদের কাজের সিডিউল।

তবে পৃথিবীর বর্তমান প্রেক্ষাপট একথারই সত্যায়ন করছে যে এই পরাশক্তিগুলোর সময় আর বেশি নেই। তারা সমস্ত পৃথিবীজুড়ে যে অশান্তির রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে তা হয়তবা আর বেশিদিন টিকবেনা। ক্রমেই চারপাশ থেকে বিদ্রোহের গুনগুনানি আওয়াজ আসছে। পরাশক্তিরাও কার্যক্ষেত্রে তাদের উদ্দেশ্য অর্জনে সফল হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, তারা আর নিজেদেরও সামাল দিতে পারছে না। অকল্পনীয় ভোগ- বিলাস, সামরিক খাতে ব্যয়, পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ইত্যাদির কারণে নিজের দেশের নাগরিকদের বঞ্চিত করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলশ্র“তিতে শাসকদের উপর তাদের সাধারণ জনগণের ক্ষোভ আর অসন্তোষ ভয়াবহ আকার ধারন করছে। নিজ নিজ জাতীয় স্বার্থের তাগিদে তারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। বিশ্ব পরিস্থিতির মধ্যে এই যে পরিবর্তন এবং সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে যে ভাঙ্গন সৃষ্টি হচ্ছে তার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সাহেবের মনে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন শাসন তারা দুনিয়াজুড়ে কায়েম করে রেখেছিল তা এখন শিথিল হচ্ছে, ধ্বংস থেকে মোটেও দূরে নয়। সা¤প্রতিক সময়ে তার বিভিন্ন ভাষণগুলোকে পর্যালোচনা করলে অন্ততঃ এই কথাই প্রতীয়মান হয়। এই বিষয়টাকেই তিনি বিশ্ববাসীর জন্য বিপদ বলে উল্লেখ করেছেন যদিও এ বিপদ ষোল আনা হলো খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ও তার নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণকারীদের।

কথায় আছে, “আপনি বাঁচলে বাপের নাম”। তাই তারা এখন তাদের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই সদা সচেষ্ট। এখানে কে সন্ত্রাসী আর কে এক সময়ের প্রিয় মিত্র তা যেন আর বিবেচ্য বিষয় নয়। যে যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে মেরেছে আজ তারাই সেই সন্ত্রাসীদের হাতে হাত মেলাচ্ছে। যে ইরানকে দিনের পর দিন অবরোধ, নিষেধাজ্ঞার জালে আটকে রেখেছে, হামলার হুমকি দিয়ে এসেছে আজ তাদেরই সাথে ভক্তিসহকারে আলোচনা করা হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। কেন এই দ্বৈত নীতি? এটা কি তারা বাধ্য হয়ে করছে না? কাজেই একথা বলতে বেগ পেতে হবেনা যে পাশ্চাত্য পরাশক্তি এখন আর সেই পরাশক্তি নেই, তারা এখন নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে। আর যারা তাদেরকে আদর্শ হিসেবে নিয়ে প্রতি পদে পদে তাদের অনুসরণ করে আত্মতুষ্টিতে ভুগে থাকেন তাদেরও ভাববার সময় এসেছে যে তারাও তাদের প্রভুদের সাথে ধ্বংসের সাথী হবে কি না?

























মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.