নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asadali.ht

মোহাম্মদ আসাদ আলী

সাংবাদিক

মোহাম্মদ আসাদ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যরচনা- রাজনীতিতে ফরমালিন!

০৩ রা জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৫

ফরমালিনযুক্ত খাদ্যদ্রব্যের আতঙ্কে ভোগেন না এমন কোনো ব্যক্তি অন্তত বাংলাদেশে নেই। সাধারণত পচনজাত খাদ্য-দ্রব্যকে স্বাভাবিক পচনের হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে রাসায়নিকটি ব্যবহৃত হয়। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে এটা ব্যবহার করে। আর আমরা আম পাবলিক চোখ বন্ধ করে বাজারে গিয়ে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস আগের ফরমালিন মেশানো দুধ, ফলমূল বা মাছ-মাংস কিনে নিশ্চিন্ত মনে বাড়িতে ফিরি। অতঃপর ঘাম মুছতে মুছতে চিৎকার করি- ‘কই গেলা মন্টুর মা, টাটকা থাকতেই রান্না করো।’ শুধু তাই নয়, এক মাস আগের ফরমালিনযুক্ত টাটকা মাছ-মাংস খাওয়ার সাথে সাথে তার পুষ্টিগুণও হিসাব করি। প্রচুর পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছি মনে করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলি। কিন্তু কথায় বলে, পাপ ছাড়ে না বাপকে। ফলে দেখা যায় আজ গৃহকর্ত্রীর লিভারের সমস্যা, তো কাল মেয়ের কিডনির সমস্যা, পরশু নিজেরই ক্যান্সার। বোধহয় এজন্যই বিজ্ঞজনরা বলেন- আজকাল মানুষ খাবার খাচ্ছে না, আয়ু খাচ্ছে। স্বভাবসুলভ বলতে পারেন- একটু সচেতন হলেই এ থেকে বাঁচা সম্ভব। কিন্তু না, সম্ভব নয়। আলাদিনের চেরাগের দৈত্য নাকি সব কিছু অনায়াশেই করে ফেলতে পারতো। কিন্তু তাকে যদি আজকের যাত্রাবাড়ীর মাছের আড়তে এনে ফরমালিনযুক্ত আর ফরমালিনমুক্ত মাছগুলোকে পৃথক করতে বলা হয়, নিশ্চিতভাবেই সে ব্যাটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যাবে; আমরা তো সাধারণ মানুষ। কাজেই সচেতনতাই এখানে যথেষ্ট নয়।

প্রথমেই বলছি- ফরমালিন নিয়ে জনতাকে সচেতন করার মহৎ উদ্দেশ্যে এই লেখা নয়। ওসব নিয়ে বহু লেখা হয়েছে, ক্যাম্পেইন হয়েছে, এমনকি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমগুলোতে এই বিষয়ে আলাপ-আলোচনার ঝড় কম চলছে না। এগুলো মহৎ ব্যক্তিদের কাজ। আমার দ্বারা ওমন মহতী কাজ হবে না। কারণ আমি মহামানব নই। আমি বর্তমানে যে ফরমালিন নিয়ে চিন্তিত আছি সেটা খাদ্য-দ্রব্যের ফরমালিন নয়, রাজনীতির ফরমালিন। শুনে অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই, অবাক হবারই বিষয়। আমাদের দেশের রাজনীতি বেশ বৈচিত্রকর। গত কয়েকমাসের মধ্যে এদেশের রাজনীতি ট্রেনভ্রমণ, ট্রেনমিস, চুলাচুলি থেকে শুরু করে ইতিহাসের পাতা ঘুরে সর্বশেষ শাড়ি-ব্লাউজে এসে থেমেছে। আর সম্প্রতি তাতে যুক্ত হলো ফরমালিন। এই ফরমালিন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এসেছে খুব বেশি দিন হয়নি, তাতেই এত নাম-ডাক। আশ্চর্যের বিষয় হলো এর কোনো ক্ষতিকর দিক একখনও জানা যায় নি, অর্থাৎ নেতা-নেত্রীরা এখনও এর অপব্যবহারে আতœনিয়োগ করেন নি। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত এই ফরমালিন সরকারপক্ষের হাতেই আছে, বিরোধীশিবিরেও পৌঁছে নি। সরকার নাকি এটাকে বিরোধী পক্ষকে তাজা রাখতে ব্যবহার করছে। বিষয়টা যারা জানেন না তাদের জন্য বলছি-

রাজনীতিতে কবে যে পচা-গলা শুরু হয়ে গেছে তা আমরা অনেকে টেরই পাই নি। ঘটনাটি সর্বপ্রথম নজরে আনেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেছিলেন, ‘সরকারে পচন ধরেছে। আরেকটু পচুক, গলুক, তারপরই আমরা নতুন কর্মসূচি দেবো।’ তাঁর এই কথার খাঁটি বাংলা করে বেশি কিছু না বুঝলেও এটা অন্তত বুঝেছিলাম যে, তিনি ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ দেবার মতো একটা কিছু চিন্তা করছেন। সম্ভবত ফরমালিনের ব্যাপারে তার কাছে কোনো তথ্য ছিল না। ফরমালিনের খবর সর্বপ্রথম ফাঁস করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেই পচে গেছেন। এখন তো সব জায়গায় ফরমালিন। আমরা ফরমালিন দিয়ে বিএনপিকে তাজা রাখার চেষ্টা করছি। আর সে কারণেই তিনি এত কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন।” বিষয়টি নিয়ে খানিকক্ষণ মাথা-ঝাড়াঝাড়ির পর যা বুঝলাম তাহলো, রাজনীতিবিদদের চরিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। কোনো এক অজানা কারণে তাদের মধ্যে পরোপকারিতা নামক গুণটির অনুপ্রবেশ ঘটছে, যা রীতিমত অকল্পনীয় বটে। যেখানে বিএনপি নেত্রী সরকারকে পচাতে চাচ্ছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী কিনা বিএনপিকে ফরমালিন দিয়ে পচা থেকে রক্ষা করে চলেছেন! ভাবা যায়? যারা বলে “এদেশের রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করেন না, দু’ভাগ হয়ে কাবাডি খেলেন” তাদের দেখে যাওয়া উচিত আমাদের রাজনীতিবিদদের পরোপকারিতা। কবি জসীম উদ্দীন বৃথা লেখেন নি- ‘আমার একূল ভাঙিয়াছে যেবা, আমি তার কূল বাঁধি’।



তবে এই ‘রাজনৈতিক ফরমালিন’ এর ব্যবহার কেবল বিরোধীপক্ষের উপর প্রয়োগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সর্বশেষ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন ‘সরকার সবকিছুতেই ফরমালিন দিয়েছে’। ভাবছি ব্যবসায়ীরা তো ফরমালিন মেশায় তাদের ব্যবসায়িক লাভে, কিন্তু সরকার কেন সবকিছুতে ফরমালিন দিতে যাবে? তাহলে কি সবকিছুই পচে যাবার উপক্রম হয়েছে? নাকি সরকার অসাধু ব্যবসায়ীদের মতো ফরমালিন ব্যবসা করবে? শুনলাম আগামী জুন মাসে নাকি দেশে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ হতে যাচ্ছে। তাহলে ঐ আইনেরই বা কী হবে? নাহ্, বাঙালির ঐ এক স্বভাব। কোনো জিনিসকেই তারা সোজা চোখে দেখতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং নিজে যে ফরমালিন ব্যবহার করছেন সেটা কি ক্ষতিকর হতে পারে? একে দিয়ে তিনি মরতে বসা দলগুলোকে তাজা করছেন মাত্র। কে জানে হয়ত এই ফরমালিনই চারিদিকের চাপে পড়ে চ্যাপ্টা হওয়া সরকারি দলকেও পচা-গলার হাত থেকে রক্ষা করছে। কাজেই প্রধানমন্ত্রী যদি সত্য সত্যই পচা-গলা থেকে রক্ষা করার মতো কাক্সিক্ষত কোনো ফরমালিন আবিষ্কার করে থাকেন তাহলে সমস্যা কী? তবে তাঁর কাছে জোর দাবি জানাই তার একটি অংশ আমাদের আমজনতার জন্যও বরাদ্দ করার।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! বিশ্বাস করুন। আমাদের কোনো মা-বাপ নেই, যতœ-পরিচর্যা নেই, আমাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার কেউ নেই। আমরা আম জনতারা পচে যাচ্ছি, গলে যাচ্ছি, নষ্ট-ভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছি। আমাদের জন্য কিছু করুন। আমাদেরকে পচা-গলা থেকে রক্ষা করুন। আমাদেরকে তো চাল-গম-আটা সবই দিলেন, এবার একটু ফরমালিন দিয়ে তাজা করুন।

[লেখাটি আজকের দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশদৈনিক দেশেরপত্র] পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.