নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asadali.ht

মোহাম্মদ আসাদ আলী

সাংবাদিক

মোহাম্মদ আসাদ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপির আন্দোলন, আওয়ামী লীগের আস্ফালন- সহিংসতার আশঙ্কায় সন্ত্রস্ত জনতা

০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৯

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির ঈদ পরবর্তী আন্দোলন এখন সর্বাধিক আলোচ্য বিষয়। গত মাসের ১৬ তারিখে বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে ঈদের পর কঠিন আন্দোলনের ঘোষণা আসার পর থেকেই এটা রাজনীতির মুখ্য আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ঈদ ইতোমধ্যেই শেষ। ঈদের আমেজও ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে। জনজীবন হয়ে উঠছে স্বাভাবিক। নাড়ির টানে ঘরে ফিরে যাওয়া মানুষগুলোও অনেকেই ফিরে এসেছে রাজধানীতে। তবে সবার মনেই দানা বাঁধছে এক গুপ্ত আশঙ্কা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন নিয়ে কম-বেশি সবাই চিন্তিত। বিশেষ করে যারা গত বছরের শেষ অবধি বিএনপি জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধ ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের কবলে পড়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা বিএনপির ঘোষিত এই আন্দোলনকে ছোট করে দেখতে নারাজ।

বিএনপি নেত্রীর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে বিচিত্র সব মন্তব্য করে চলেছেন রাজনীতিকরা। সরকারি দলের মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা বিএনপির গত বছরের আন্দোলনে ব্যর্থতার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন বিএনপিকে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যও করা হচ্ছে অনেক। তবে যদি সত্য সত্যই বিএনপি গত বছরের আন্দোলনের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন কৌশলে মাঠে নামে, তাহলে তা প্রতিরোধ করা আওয়ামী লীগের জন্য সহজ হবে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গত ১৬ জুলাই একটি অনুষ্ঠানে আন্দোলনের ঘোষণা দেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরদিনই তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি ইফতার মাহফিলে বলেন- তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করছেন না। তিনি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে চান। খালেদা জিয়ার এই ঘোষণার পর হতেই যেন নড়েচড়ে বসেছেন আওয়ামী লীগসহ সরকারের জোট নেতারা। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে তারা বক্তব্য দিচ্ছেন নানা ঘোষণা সহকারে। তবে সেসব বক্তব্য কতটুকু দলীয় মত প্রকাশ করছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। ঠিক একইভাবে বিএনপি নেতারাও আন্দোলনের কথা বলে মাঠ গরম করতে চাইছেন।

বিশ্লেষকদের ধারণা- বিএনপি আন্দোলন শুরু করার বহু পূর্ব থেকেই এত উচ্চ-বাচ্চ করে মূলত সরকারের উপর একটি পরোক্ষ চাপ সৃষ্টি করার প্রয়াস চালাচ্ছে। এতে সংলাপের দরজা খুললেও খুলতে পারে। তবে সে সম্ভাবনা যে খুব একটা নেই, সম্প্রতি তা নিশ্চিত করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লন্ডনে ভ্রমণরত অবস্থায় বিবিসি বাংলাকে দেয়া একটি সাক্ষাতকারে তিনি বলেন- বিএনপির সাথে আলোচনার কথা ঘুরে ফিরে কেন বলা হচ্ছে তা তার বোধগম্য নয়। তিনি বলেন- বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে যে ভুল করেছে তার মাশুল তাদেরকে দিতেই হবে।’ বিএনপি যতই হুমকি দিক না কেন, সরকার যে সেটাকে খুব একটা দাম দিতে ইচ্ছুক নয়, তার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যে। লন্ডন সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে পরবর্তী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘মাঠের খেলা মাঠেই হবে। ফুটবল মাঠে কে কয়টা গোল দেয়, সেটা সেখানেই দেখা যাবে। মাঠে নামুক না। মাঠে আওয়ামী লীগ আছে-যুবলীগ আছে। মানুষও আছে।’ এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই কথার জবাবে বিএনপির অপর একটি ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আন্দোলন মানে মারধর, জ্বালাও পোড়াও নয়। ঈদের পরে আমাদের আন্দোলন হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক। আমরা শুনতে পারছি, ঈদের পর আওয়ামী লীগও পাল্টা রাজপথে নামবে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, আপনারা রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভালো। তবে পুলিশ ও গুন্ডা বাহিনী নিয়ে অস্ত্র হাতে রাজপথে নামবেন না। এটা করা হলে পাল্টা জবাব দেয়া হবে। এর পরিণতি ভালো হবে না।’ বস্তুত বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছে যে, সরকার বিরোধী দলের আন্দোলনকে বান্চাল করতে অবৈধভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করেছে। তাদের ধারণা- বিগত বছরে সরকার যদি প্রশাসনকে তাদের দলীয় ক্যাডার বাহিনীর মতো ব্যবহার না করতো তাহলে বিএনপির আন্দোলন কখনোই ব্যর্থ হতো না। তবে এবার সব ধরনের আটঘাট বেঁধেই রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। সাথে রয়েছে স্বভাবজাত যুদ্ধংদেহী মনোভাব। সরকারকে হুঁশিয়ার করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ নির্বাচন আয়োজনে বিএনপির আহ্বানকে দুর্বলতা ভেবে অগ্রাহ্য করলে তাতে তুমুল যুদ্ধেরই পদধ্বনি শোনা যাবে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে হামলা-মামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, হরতাল-অবরোধ ইত্যাদি নতুন কোনো বিষয় নয়। এরশাদ পরবর্তী সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম হবার পর থেকে এদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। প্রধান দু’টি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে শক্তি প্রদর্শনের ধারা বহুদিনের। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের শেষ অবধি আন্দোলনের নামে হরতাল-অবরোধ, সহিংস কর্মসূচি পরিচালনা করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ১৮ দল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গত বছরের শেষ তিন মাস কাটে তুমুল অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। একদিকে চলে হরতাল-অবরোধের নামে জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, মানুষ খুন, চলন্ত যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা, আরেকদিকে চলে সরকারি বাহিনীর দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা, জেল-জরিমানা। এই তিন মাসের অধিকাংশ সময় রাজধানী ঢাকা শহর সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল। বহু-হতাহত, বহু প্রাণক্ষয় আর জাতীয় সম্পদের অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির উপর দিয়ে শেষ হয় বিএনপির ঐ সরকার বিরোধী আন্দোলন। বিএনপি এ আন্দোলনের সুফল ঘরে তুলতে ব্যর্থ হলেও সাধারণ মানুষ যে অশেষ ভোগান্তির শিকার হয়েছিল তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে আছে। তাই সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নতুন নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে যে আন্দোলনের ঘোষণা আসছে তাতে ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কায় কার্যত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে দেশের আপামর জনতা।

গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের শেষ অবধি ৫৫ দিনই কেটেছে তৎকালীন বিরোধী জোটের হরতাল বা অবরোধের মধ্যে। এর মধ্যে বছরের শেষ তিন মাসের আন্দোলন-সহিংসতার পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা গেছে যে, বছরের শেষে অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর- এই তিন মাসেই রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১৪৭ জন, আর আহত হয়েছেন প্রায় ১২,৬৪৬ জনের অধিক। এই সময়ের মধ্যে শুধুমাত্র আগুনে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৯৪ জন ব্যক্তি। ককটেলের বিস্ফোরণে নিহত হয় ৬ শিশু, আহত হয়ে অঙ্গ হারায় কমপক্ষে ২২ শিশু। শেষ তিন মাসের সহিংসতায় ১১ জন পুলিশ সদস্যও তাদের জীবন হারান। ৬৭৪ টি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। তখন নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংস ঘটনায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৩১৫টি মামলায় অন্তত ৬৩ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছিল। দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে পড়েছিল মারাত্মক প্রভাব। শুধুমাত্র এই তিন মাসের রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতি হয় ৪৯ হাজার ১৮ কোটি টাকা। এই ক্ষতির পরিমাণ মোট দেশজ আয়ের ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অতি দুর্যোগময় সময় অতিক্রম করেছে সাধারণ জনগণ। এত ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানী আর আতঙ্কের জন্ম দিয়েও বিএনপির আন্দোলন সফল হয় নি। তাই এবার সাফল্য পাওয়ার আশায় আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে- এমনটাই বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন। আর তা সাধারণ জনগণের ভাগ্যে যে অতি করুণ বার্তা বয়ে আনবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নতুনভাবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে জনজীবন সাংঘাতিকভাবে বিপর্যস্ত হবে। তেমন স্থিতি কারও কাম্য নয়। এমন সম্ভাবনা যেন কখনোই বাস্তবতার মুখ না দেখে- তেমনটাই আশা করছে আন্দোলনের ভারে ভীত-সন্ত্রস্ত আপামর জনতা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.