নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asadali.ht

মোহাম্মদ আসাদ আলী

সাংবাদিক

মোহাম্মদ আসাদ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কারা বেশি বর্বর? আইএস নাকি পশ্চিমারা?

২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৪

মধ্যপ্রাচ্যের আইএস নিয়ে বহিঃবিশ্বের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কোনো শেষ নেই। পশ্চিমা মিডিয়া তো বটেই, এমনকি বিভিন্ন আঞ্চলিক ও দেশীয় মিডিয়াতেও গত কয়েক মাসজুড়ে ব্যাপক সাড়া জাগানো খবরা-খবর প্রচারিত হচ্ছে এই আইএস নামক জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিয়ে। আইএস’কে চিত্রায়িত করা হচ্ছে ভয়ংকর বর্বর গোষ্ঠী হিসেবে, যার প্রমাণ হিসেবে হাজির করা হচ্ছে আইএসের বিভিন্ন নৃশংস কর্মকাণ্ড যেমন- ভিন্ন মতাবলম্বীদেরকে হত্যা, উচ্ছেদ, মার্কিন ও ব্রিটিশ নাগরিকের শিরোচ্ছেদ ইত্যাদি ঘটনাবলি। এ ঘটনাগুলো নেহায়েত মিথ্যা নয়। ধর্মান্ধ গোঁড়া প্রকৃতির কথিত ঐ ইসলামী জেহাদীদের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা বোকামী। অতীতেও এ ধরনের ঘটনা বিশ্ববাসী দেখেছে আল কায়েদা, তালেবান, বোকো হারামসহ অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীদের কর্মকাণ্ডে। এই বর্বর জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো হলো একই বৃক্ষের শাখা-প্রশাখার মতো। এই শাখা প্রশাখাগুলোকে পানি দিয়ে, খনিজ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখছে যে শেকড় তা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা ও প্রতারণার উপরে প্রতিষ্ঠিত। প্রকৃত ধর্মীয় আদর্শ এসব জঙ্গিগোষ্ঠীর ভাগ্যে আদৌ জোটে নি। এরা ধর্ম বলতে যা বোঝে, জেহাদ বলতে যা বোঝে- তার কোনোটাই সঠিক নয়, প্রকৃত ইসলামের সাথে এসবের দূরতম সম্পর্কও নেই। যাই হোক, এই আল-কায়েদা, তালেবান, আইএস ইত্যাদি জেহাদীরা যে নৃশংসতা ও বর্বরতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে তা অবশ্যই সুস্থ স্বাভাবিক মনে ক্ষতের সৃষ্টি করবে। যার মধ্যে এতটুকু মানবতাবোধ আছে সে কোনোভাবেই এমন বর্বরতা মেনে নিতে পারবে না। কাজেই এদের এমন মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডকে শুধু মিডিয়া নয়, বিশ্বের সকল দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ধিক্কার জানাবে- এটাই শ্রেয়।
কিন্তু এরপরও যে প্রশ্নটি থেকে যায় তা হলো- বিশ্বব্যাপী এসব জঙ্গিদল ও তাদের অপকর্মসমূহ নিয়ে যে হারে প্রচার-প্রচারণা ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হচ্ছে, ধিক্কার জানানো হচ্ছে, তার এক ভগ্নাংশও কি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইসরাইল, রাশিয়া ইত্যাদি সাম্রাজ্যবাদীদের শত শত মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো হয়েছে? না, হয় নি। পৃথিবীব্যাপী আধিপত্য বিস্তারের নগ্ন নেশায় মাতাল হয়ে পশ্চিমা জোট একের পর এক যে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড করেছে, নৃশংসভাবে ইরাক-আফগানিস্তানের লক্ষ লক্ষ নারী-শিশু-বৃদ্ধকে হত্যা করেছে, পঙ্গু করেছে, ঘর-বাড়ি ছাড়া করেছে, রাস্তাঘাট ধ্বংস-বিদ্ধস্ত করেছে, স্কুল-কলেজ মাটির সাথে গুড়িয়ে দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে কয়টি দেশ জোট গঠন করেছে (আজ যেমন আইএস-এর বিরুদ্ধে করা হচ্ছে)? কয়টি মিডিয়া গুরুত্ব দিয়ে সে নৃশংসতার-বীভৎসতার কথা প্রচার করেছে? কয়জন লেখক-সাহিত্যিক-সাংবাদিক সাম্রাজ্যবাদকে ধিক্কার জানিয়েছে? না, ধিক্কার জানানো তো পরের কথা, বরং সারা পৃথিবী সেই অমানবিক বর্বরতাকে সমর্থন করেছে, সম্ভব হলে নিজেরাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঐ ধ্বংসলীলার শরিক হয়েছে। তাহলে তখন এই মানবতাবোধ কোথায় ছিল? এই দ্বৈত নীতির কারণ কী?
বিগত শতাব্দীতে যে দু’টি বিশ্বযুদ্ধ হয়েছে তা কি বর্বরতা ছিল না? সে যুদ্ধগুলোতে এমন কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ নেই যা করা হয়নি। কথিত সভ্য দুনিয়ার সবচেয়ে অসভ্য এই যুদ্ধগুলোতে প্রায় দশ কোটি আদম সন্তান প্রাণ হারায়। আহত, বিকলাঙ্গের সংখ্যা এই সংখ্যার বহুগুণ। তখন তো তালেবান, আল কায়েদা, আইএস ছিল না। আজকে যারা মানবতার প্রবক্তা সেজে মানবাধিকারকে ফেরি করে বেড়াচ্ছে তারাই এমন বীভৎস হত্যালীলার আয়োজন করেছিল। সভ্যতার ধ্বজাধারী যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত লাগলে সে যে কতটা ভয়ংকর রক্তপিপাসু রূপ ধারণ করতে পারে তার নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জাপানের নাগাসাকি-হিরোশিমা। তখন কোথায় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মানবতা? সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস কয়েকজন মার্কিন ও ব্রিটিশ নাগরিকের শিরোচ্ছেদ করেছে, ভিন্ন মতাবলম্বীদের হত্যা করেছে, এই অপরাধে যদি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র ইরাকে বিমান হামলা করতে হয় তাহলে হিরোশিমা-নাগাসাকির কয়েক লক্ষ নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধের নির্মম হত্যাযজ্ঞ যারা ঠাণ্ডা মাথায় অনুষ্ঠান করল তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত? সে ব্যবস্থা কি আদৌ নেওয়া হয়েছে? নাইন ইলেভেনের কথা বিশ্ববাসী ভোলে নি। এরকম একটি সন্ত্রাসী হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তারা অবশ্যই শাস্তি পাবার অধিকারী। কিন্তু নাইন ইলেভেনের তিন হাজার কর্মক্ষম প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ হত্যার অজুহাতে আফগানিস্তানে-ইরাকে যে হত্যাযজ্ঞ-ধ্বংসযজ্ঞ-বর্বরতা চালানো হয়েছে তা কি শাস্তি পাবার উপযোগী কর্ম নয়? তাহলে তালেবান ও আল কায়েদার সাথে কথিত মানবতাবাদী যুক্তরাষ্ট্র ও তার দোসরদের পার্থক্য রইল কোথায়?
অতি সুপরিকল্পিতভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যের বুকে ইসরাইল নামক বিষফোঁড়ার জন্ম দেওয়া হল। তখন কি একবারের জন্যও চিন্তা করা হয়েছিল এই ইসরাইল রাষ্ট্রটি ভবিষ্যৎ মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির পথে কতটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে? না, সে আশঙ্কা তখন করা হয় নি। বরং বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে যেন, এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র হিসেবেই ইসরাইলের জন্ম দেওয়া হয়েছিল। আজ যখন ইসরাইল নামক সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের বেপরোয়া সেনারা একের পর এক মানবতাবিরোধী নৃশংস কর্মকাণ্ড করে চলেছে, বুলেট দিয়ে ফিলিস্তিনের অবুঝ শিশুর বুক ঝাঝরা করছে তখন মানবতাওয়ালা পশ্চিমারা মুখে কুলুপ সেটে নীরবে দেখে যাচ্ছে, টু শব্দও তাদের মুখ থেকে উচ্চারিত হচ্ছে না। কিন্তু ঐ ইসরাইলের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে গিয়ে সেকেলে কিছু রকেট হামলা করার অপরাধে ফিলিস্তিনের জনপ্রিয় সংস্থা হামাস বনে যাচ্ছে সন্ত্রাসী-মানবতাবিরোধী-উগ্রপন্থী-বর্বর। এই দ্বৈতনীতির কী জবাব আছে পশ্চিমাদের কাছে?
পশ্চিমা প্রচারমাধ্যম ও শিক্ষাব্যবস্থার সার্থকতা এই যে, তা পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষকে এক প্রকার অন্ধ করে রাখতে সক্ষম হয়েছে। মানুষ পশ্চিমা বর্বরতা, নৃশংসতা দেখেও দেখছে না, বুঝেও বুঝছে না। কেবল পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যখন কোনো অমানবিক ঘটনার সৃষ্টি হয় সেটাই তাদেরকে দেখানো হয়, বোঝানো হয়। তাদের মনে পশ্চিমাবিরোধীদের সম্পর্কে ঘৃণার সৃষ্টি করা হয়। এভাবে বর্তমানে এমন একটি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, একমাত্র পশ্চিমারাই হলো আধুনিক, সুসভ্য। যারা পাশ্চাত্যের বিরোধীতা করবে, পাশ্চাত্য শিক্ষা-সংস্কৃতি-সভ্যতার বিরুদ্ধচারণ করবে তারা হলো সেকেলে, পশ্চাদপদ, মধ্যযুগীয়, বর্বর ইত্যাদি। অথচ মানবতার ধ্বজাধারী পশ্চিমা জোট আজ পর্যন্ত যত মানবতাবিরোধী, নৃশংস, বর্বর কর্মকাণ্ড করে এসেছে তার একটি ভগ্নাংশও কেউ করতে পারে নি। আমি জঙ্গিদের সাফাই গাইছি না। জঙ্গিদেরকে আপাত দৃষ্টে পাশ্চাত্যের বিরোধী মনে হলেও কার্যত তারাও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার- এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। জঙ্গিদের সীমাবদ্ধ বর্বরতাকে পুঁজি করেই পশ্চিমারা সীমাহীন বর্বরতা চালানোর সুযোগ লাভ করে। অর্থাৎ সন্ত্রাসবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী ও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ একই সুতোয় গাঁথা, একই অপরাধে অপরাধী। তারা উভয়েই পরিত্যাজ্য। পৃথবীবাসী এই সত্যটি যতদিন না বুঝতে সক্ষম হচ্ছে ততদিন তারা প্রতারিত হতেই থাকবে, আর কষ্ট পেতে থাকবে সাধারণ নিরাপরাধ মানুষগুলো।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩১

আল-শাহ্‌রিয়ার বলেছেন: ভাই আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয় পশ্চিমারা । কারণ আইএসও পশ্চিমাদের সহযোগী একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।

২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩

খেলাঘর বলেছেন:

আইএসএসআই হলো আরবী, পাকিস্তানী, বাংগাদেশী সন্ত্রাসীদের প্রতিক; এদের কারণে, সিরিয়া, ইরাক ও আরব দেশ সমুহে সমস্ত সম্পদ বালিতে পরিণত হবে।

আপনিও এসব সন্ত্রাসীদের অংশ; রিক্রুট করার চেস্টা করছেন?

৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৯

টুম্পা মনি বলেছেন: আল-শাহ্‌রিয়ার বলেছেন: ভাই আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয় পশ্চিমারা । কারণ আইএসও পশ্চিমাদের সহযোগী একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।

একমত।

৪| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৪৪

তিক্তভাষী বলেছেন: আইএস জঙ্গিগোষ্ঠী বা পশ্চিমা সন্ত্রাসবাদ উভয়েই পরিত্যাজ্য। একমত।


খেলাঘর পুরো পোস্টটা পড়েছে বলে মনে হলো না। লাগামহীন উল্টাপাল্টা মন্তব্য করা তেনার স্বভাবজাত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.