নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিছুদিন আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো ‘বাংলাদেশ-ভারত হাইকমিশনারদের সামিট’। এ সামিটে অংশগ্রহণ করে দেশ দু’টির সম্পর্ক আরও ঘনীভূত করার ব্যাপারে ঢাকা ও দিল্লিতে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করা কূটনীতিকরা তাদের স্ব স্ব অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন। সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা গেছে, উভয় দেশের এই কূটনীতিকরা বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুই দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস বাড়ানো জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। মনে রাখতে হবে, এই কূটনীতিকরা বিভিন্ন সময়ে দেশ দু’টির সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন এবং তাদের মতামত আন্দাজ বা অনুমাননির্ভর নয়, তারা যে মতামত দিয়েছেন তা তাদের অভিজ্ঞতাপ্রসূত। প্রকৃতপক্ষেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে শুধু রাজনৈতিক বিবেচনাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন উভয়দেশের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, উভয় দেশের জনগণের মধ্যে এই সুসম্পর্ক কিভাবে তৈরি হবে? এর উত্তরে প্রথমেই জানতে হবে, কোন কারণে দেশ দু’টির আপামর জনতার মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়েছে?
এক কথায় এর উত্তর হলো- ধর্ম বিশ্বাসের ভিন্নতা, আরও গভীরে গেলে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ বা সাম্প্রদায়িকতা। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মবিশ্বাসের কারণে এবং এক ধর্মকে অন্য ধর্মের মুখোমুখী দাঁড় করানোর কারণে দেশ দু’টির জনগণের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস, সম্প্রীতি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হচ্ছে না।
ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম ধর্মের মানুষের একত্র বসবাস শত শত বছরের। এই দীর্ঘ সময়ে উভয় ধর্মের মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণুতা, সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা, সহিংসতার নজির আমরা পাচ্ছি ব্রিটিশ আমলে এসে। ব্রিটিশরা আমাদের উপমহাদেশে আসার আগ পর্যন্ত এতদঞ্চলে বড় ধরনের কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে, এমন ইতিহাস মেলে না। ব্রিটিশরা জানতো, এখানকার মানুষ ধর্মপ্রাণ। কাজেই এদেরকে বিভ্রান্ত করতে হলে, অনৈক্য সৃষ্টি করতে হলে, তথা “ভাগ কর এবং শাসন কর” (উরারফব ধহফ জঁষব) নীতির প্রয়োগ করতে হলে ধর্মের মাধ্যমেই করতে হবে। এই চিন্তা থেকে তারা শিক্ষাব্যবস্থা, সাহিত্য, সংস্কৃতির মাধ্যমে এখানকার হিন্দু ও মুসলিম উভয় জাতিকেই প্রভাবিত করে একে অপরের শত্র“তে পরিণত হতে বাধ্য করল, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন স্থিমিত হয়ে পড়ল, সাম্রাজ্যবাদের শেকড় আরও দৃঢ় হলো। এই যে ব্রিটিশরা উপমহাদেশে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিষবাস্প ছড়ালো তারই একটি পরিণাম হচ্ছে আজকের মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশ ও হিন্দুপ্রধান ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি, বিশ্বাস, আস্থাহীনতা ও ঐক্যহীনতা।
ইচ্ছে হলেই মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে মুছে দেওয়া যায় না। মধ্যযুগে ইউরোপে চার্চ ও রাজাদের দ্বৈত শাসনব্যবস্থার যাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকলেও ইউরোপীয়ানরা ধর্মবিশ্বাসকে ছেড়ে দেয় নি। পরবর্তীতে ধর্মকে ব্যক্তিগত জীবনে নির্বাসন দেওয়া হয়েছে, কিন্তু মুছে ফেলা যায় নি। আমাদের এই উপমহাদেশেও প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ধর্ম এক নাম্বার ইস্যু, তা রাজনীতি, সমাজনীতি থেকে শুরু করে ব্যক্তি বা পরিবার, সবখানেই। কাজেই এখানেও ধর্মকে বাদ দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তার বাস্তবায়ন সহজ হবে না। এমতাবস্থায় একটিমাত্র পথই খোলা রয়েছে, এতদঞ্চলে যদি কোনোভাবে আন্তধর্মীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা যায়, তবেই উভয় দেশের জনগণের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার আশা করা যেতে পারে। তাই শুধু রাজনৈতিকভাবে উভয় দেশের সরকারের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করার মধ্যে তৃপ্তি খোঁজার কোনো সুযোগ নেই। রাজনৈতিক ঐক্যের সাথে সাথে আন্তধর্মীয় ঐক্যের পথরচনা করতে না পারলে এক সময় ধর্মবিশ্বাসের সুতোর টানে ওই ভঙ্গুর রাজনৈতিক ঐক্য বিনষ্ট হওয়া অস্বাভাবিক কিছু হবে না। যারা শুধুমাত্র রাজনৈতিক ঐক্য গঠনের মধ্যেই সমস্যার সমাধান খুঁজে পান তাদের খেয়াল করা উচিত যে, একই ভূ-খণ্ডে বসবাসরত, একই ভাষাভাষী ও একই রাষ্ট্র বাংলাদেশের নাগরিক মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে যে দূরত্ব রয়েছে, বিশ্বাস বা আস্থাহীনতা রয়েছে, তা মোটেও অপ্রতুল নয়। একইভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কথাই যদি ধরা হয়, সেখানে বসবাসরত বাঙালি মুসলিম ও বাঙালি হিন্দুর মধ্যে খুব ভালো সু-সম্পর্ক রয়েছে এমনটা বলা যায় না। অর্থাৎ ভূখণ্ড, ভাষা, জাতীয়তাবাদ একই হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র ধর্মের ভিন্নতা অনৈক্য ও আস্থাহীনতার জন্য যথেষ্ট। এটাকে মাথায় রেখেই ভবিষ্যৎ কর্মপদ্ধতি ঠিক করা উচিত।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩১
খেলাঘর বলেছেন:
সরকারী পর্যায়ে আন্তর্-বিবাহ চালু করলে সব সমস্যার সমাধান হবে।
ফালতু পোস্ট।