নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asadali.ht

মোহাম্মদ আসাদ আলী

সাংবাদিক

মোহাম্মদ আসাদ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মান্তরকরণের মধ্যে সার্থকতা নেই, সার্থকতা শান্তি প্রতিষ্ঠায়

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫১

বর্তমানে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়ানো বিষয়টি হচ্ছে ধর্মান্তরকরণ, যাকে ধর্মান্তরকারীরা নাম দিয়েছেন ‘ঘরওয়াপসি’। অতীতে যারা বা যাদের পূর্বপুরুষ হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম বা খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিল তাদেরকে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনাকেই বলা হচ্ছে ঘরওয়াপসি। ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘আরএসএস’ এর সহযোগী ‘জাতীয় হিন্দু পরিষদ’ নামক একটি সংগঠন প্রকাশ্যে এই কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থ-সম্পদ ও ক্ষমতার প্রলোভন দেখিয়ে বা ভয় দেখিয়ে চালানো হচ্ছে এ কার্যক্রম। স্বাভাবিকভাবেই বেছে বেছে দরিদ্র বস্তি এলাকার মুসলিম বা খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীদেরকেই এর আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। বেশ কিছু স্থানে সফলতাও এসেছে। উত্তর প্রদেশের আগ্রায় প্রায় দুইশ’র মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বীকে এক প্রকার প্রতারণা করে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করার ঘটনা তার মধ্যে একটি। সম্প্রতি গুজরাটেও প্রায় শ’ দুয়েক আদিবাসী খ্রিষ্টানকে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে বলে বিবিসি বাংলায় খবর প্রচারিত হয়েছে। এ কর্মসূচিকে ঘিরে ইতোমধ্যেই ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠেছে।
এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, এ ধরনের ব্যয়বহুল ও বিতর্কিত একটি কর্মসূচি কোনো বৃহৎ শক্তির সমর্থন ছাড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু কে তাদেরকে সমর্থন যোগাচ্ছে? অনেকের ধারণা- এ কাজে খোদ সরকারেরই সমর্থন রয়েছে। আরএসএস- এর সাথে বিজেপির ঐতিহাসিক সখ্যতাকেই এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে বেশি। আবার অনেকের ধারণা একটু ভিন্ন। তারা ধারণা করছেন- এ কর্মসূচির পক্ষে বিজেপির প্রত্যক্ষ সমর্থন নেই। কিন্তু তা বন্ধ করে দেবার মতো নৈতিক দৃঢ়তাও সরকার পাচ্ছে না। কারণ, বিজেপির ক্ষমতায় আসার পেছনে বিভিন্ন উদারপন্থী ধর্মীয় সংগঠনের সহায়তার পাশাপাশি আরএসএস- এর মতো উগ্রপন্থী সংগঠনেরও সমর্থন ও সহযোগিতা কাজ করেছে। কাজেই এখন ওদের কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলে সরকারের জন্য কঠিন সময় উপস্থিত হতে পারে। ঘটনা যাই হোক, লক্ষণীয় বিষয় হলো সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বিরোধিতার কথা শোনা গেলেও আজ পর্যন্ত সরকার এ কর্মসূচির বিরুদ্ধে কার্যত শক্ত অবস্থানে অবতীর্ণ হয় নি। এমনকি সংসদে বেশ কিছুদিন যাবৎ বিষয়টি উত্তাপ ছড়ানোর পরও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে মুখ খোলেন নি, যদিও বিরোধী দলের সাংসদরা বারবার উল্লিখিত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির আশা ব্যক্ত করছেন।
এ ব্যাপারে বিতর্কের অবকাশ নেই যে, ভারতের কোটি কোটি জনগণ বিগত নির্বাচনে তাদের ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট থেকেই বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। ধর্ম ও ধর্মনিরপেক্ষতা- এ দুইয়ের মধ্যে ভারতবাসী এবার বেছে নিয়েছে ধর্মকে। ধর্মনিরপেক্ষতা মানুষকে শান্তির সন্ধান দিতে পারবে না তা ইতিহাস দ্বারা প্রমাণিত। অশান্তি থেকে মুক্তি আসতে পারে একমাত্র ধর্মের অনুসরণ করে। এ কথা ভারতের মানুষ হয়তো কিছুটা হলেও বুঝেছে। যুগ যুগ ধরে ধর্মনিরপেক্ষতার ছদ্মাবরণে কার্যত ধর্মহীন সিস্টেম অনুসরণ করার ফলে জাতীয়, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে এবং মানুষের নৈতিক অধঃপতন ঘটেছে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে ভারতবাসীর এই মানসিক পরিবর্তন একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু এখানেও যে বিপদ নেই তা কিন্তু নয়। বরং ধর্মের প্রকৃত রূপ জানা না থাকলে, ধর্ম আগমনের উদ্দেশ্য অজানা থাকলে, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা নামক বিষবৃক্ষকে উপড়ে ফেলতে না পারলে এ ধর্মাশ্রয় কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। কল্যাণ তো হবেই না, বরং তা অকল্যাণের আধারে পরিণত হবে। বর্তমানে তারই কিছুটা আভাস পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এটা মানতে হবে বর্তমান অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি আসতে পারে একমাত্র ধর্মের ছত্রছায়াতেই। ধর্মগ্রন্থের পাতাতেই রয়েছে চির প্রত্যাশিত শান্তির চাবিকাঠি। কিন্তু সেটা কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ নয়, স্রষ্টা প্রেরিত সকল ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থই এই শান্তির চাবি বহন করে চলেছে। এর কোনোটা গ্রহণ করব আর কোনোটা প্রত্যাখ্যান করব তা মোটেও সমীচীন নয়। এভাবে শান্তি মিলবে না। বৈষম্য কেবল বিরোধই বাড়াতে পারে, মৈত্রী তৈরি করতে পারে না। আর এটা জানা কথা যে, মৈত্রী ছাড়া শান্তি অসম্ভব। যারা ধর্মান্তরকরণের মধ্যেই সার্থকতা খুঁজে পান তাদের বোঝা উচিত পৃথিবীতে ধর্ম এসেছে মানবজীবনে শান্তি আনয়নের উদ্দেশ্যে। যে কাজ করলে মানুষ শান্তি পায়, সমাজে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয় সেটাই ধর্মের কাজ, ধর্মবিহিত কাজ। অন্যদিকে যে কাজ সমাজকে অস্থিতিশীল করে, মানুষের অধিকার হরণ করে সেই কাজ কখনও ধর্মের কাজ হতে পারে। ওই কাজ করে স্বর্গলাভ হবে না। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান বলে কথা নয়, কে কতটা মানবতার কল্যাণ করতে পারল, সৃষ্টিজগতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার অবদান কত বেশি- এর উপর ভিত্তি করেই স্রষ্টা মানুষকে সম্মানিত করবেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে এ কথা বলাই যায় যে, ভারত সরকার উভয়সঙ্কটে পড়েছে। একদিকে হিন্দু সেন্টিমেন্ট, অন্যদিকে সংখ্যালঘু অহিন্দু জনগোষ্ঠীর অধিকার হরণের আশঙ্কা- এর মাঝেই গা বাঁচানো একটি অবস্থানে দাঁড়াতে চাচ্ছে সরকার। কিন্তু বিরোধী দল, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ সরকারের কাছে আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় পেতে চায়। এমতাবস্থায় নরেন্দ্র মোদীর সরকার কার্যত কোন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় সেটাই দেখার বিষয়। তবে বিজেপি সরকারের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে যদি তারা কোনোভাবে ধর্মীয় বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠিয়ে মানবতার কল্যাণে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করতে পারে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১১

নিলু বলেছেন: লিখে যান

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০৬

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: ইনশাআল্লাহ চালিয়ে যাবো। আপনাকে ধন্যবাদ।

২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৭

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:



অনেক সুন্দর কিছু কথা আছে এই পোস্টে.....

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০৬

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৭

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:

কথাগুলো ভাল লাগল।

শুভকামনা জানবেন ভাই।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০৭

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: শুভকামনা আপনার জন্যও।

৪| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১১

আলম দীপ্র বলেছেন: সুন্দর সঠিক কথা !

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০৭

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫২

নীল আকাশ ২০১৪ বলেছেন: লোভ দেখিয়ে বা ভয় দেখিয়ে কিছু দরিদ্র মুসলমানকে নিয়ে হিন্দু বানানোর উৎসব করা যায়, কিন্তু তাদেরকে ধর্মান্তরিত করা যায়না। ইসলাম মানুষকে যে ক্ষমতা দেখিয়েছে, আর কোন ধর্মের পক্ষে সম্ভপব নয় সেরকম কিছু করে দেখানো।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১৩

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: দেখুন, ইসলাম মানুষকে অসম্ভব ক্ষমতা দেখিয়েছে ঠিক- কিন্তু তা নিশ্চয়ই আজ নয়। আজ থেকে হাজার বছর আগে। আপনি যদি বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন অন্যান্য ধর্মগুলো যেমন মানুষকে শান্তি দিতে পারছে না, তেমন ইসলামও পারছে না। কারণ বর্তমানে সকল ধর্মই ধর্মব্যবসায়ীদের হাতে পড়ে বিকৃত হয়ে গেছে। ধর্মগুলো আজ মানুষের কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণের কাজে লাগানো হচ্ছে। মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে অকল্যাণকর কাজের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। তবে হ্যা, যদি কোনোভাবে এসব ধর্মের প্রকৃত রূপকে আবারও উদ্ভাসিত করা সম্ভব হয়, তাহলে মানুষ শান্তি পাবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.