নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asadali.ht

মোহাম্মদ আসাদ আলী

সাংবাদিক

মোহাম্মদ আসাদ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পৃথিবীর ধর্ম-সঙ্কট ও আমাদের করণীয়

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২২

পৃথিবীর দিকে চেয়ে দেখুন- ধর্ম নামক ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে কী ভয়াবহ অস্থিরতা, নৈরাজ্য বাসা বেঁধেছে। হাহাকার আর কান্নার ধ্বনি পৃথিবীর আকাশ-বাতাসকে প্রকম্পিত করে তুলছে। এ কম্পন আজ আর ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, লেবানন, নাইজেরিয়া, লিবিয়া, মিশর ইত্যাদি হাতে গোনা কিছু দেশের মধ্যেই সীমিত নেই, ক্রমেই এ ব্যাধি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীময়। বাদ নেই আমাদের এ উপমহাদেশসহ ইউরোপ, আমেরিকার ধর্মনিরপেক্ষ দেশগুলোও। স্বজনহারানো মানুষের আর্তনাদে পৃথিবীর বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। কী নির্মম-নৃশংস ঘটনারই না অবতারণা ঘটছে এ ধরায়! কোথাও নিরাপরাধ ছেলের লাশ বাবাকে বইতে হচ্ছে, কোথাও বাবার লাশ ছেলেকে, কোথাও চোখের সামনে ভাসছে নির্যাতিতা বোনের ছবি, কোথাওবা গর্ভধারিণী মায়ের। এ কী উন্মাদনা? পৃথিবী আর কতদিন মানুষের এই পাপের বোঝা বহন করবে?
মানবজাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখি- অতীতে যখনই এই জগৎ সংসারের কোনো অংশে এহেন অন্যায়-অবিচার, অনাচার, নৈরাজ্য ও যুদ্ধ-রক্তপাত সৃষ্টি হয়েছে সেখানেই স্রষ্টা তাঁর পক্ষ থেকে ত্রাণকর্তা পাঠিয়েছেন, যাদেরকে আমরা নবী-রসুল-অবতার ইত্যাদি নামে জানি। তাঁরা ওইসব জাতিকে ধর্ম শিক্ষা প্রদান করেছেন। তাঁদের এমন শিক্ষায় সুশিক্ষিত করেছেন যাতে আগের পরিস্থিতির সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র অর্থাৎ শান্তি ও মানবতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ আর কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ড নয়, সমস্ত পৃথিবীতেই জ্বলছে অশান্তির আগুন, অন্যায়-অবিচারের একচ্ছত্র আগ্রাসন। এ থেকে পরিত্রাণ দেবে যে ধর্ম, সেই ধর্মই এখন প্রতারণা ও নির্যাতনের প্রধান কলে পরিণত হয়েছে।
এ বাস্তবতাকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, বর্তমান পৃথিবীর অধিকাংশ যুদ্ধ, রক্তপাত, হত্যা, অমানবিকতার অন্তর্নিহিত কারণসমূহের মধ্যে ধর্ম অন্যতম। মূলত ধর্মকে কেন্দ্র করেই হিংসা ও প্রতিহিংসার আগুন জ্বলছে পৃথিবীময়। আর সে আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলে-পুড়ে ছারখার হচ্ছে মানবতা নামক চির প্রত্যাশিত শান্তির শ্বেতকপোত।
আজ পৃথিবী নামে পরিচিত এই গ্রহে ‘প্রতারণা’ এক মহাব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতারণার কাজে কার্যকরি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে, আর নির্বিচারে প্রতারিত হচ্ছে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ। এমন বহু উদাহরণ ছড়িয়ে আছে পৃথিবীব্যাপী, যা অনুভব করার জন্য নিরপেক্ষ দৃষ্টিই যথেষ্ট। মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকান। দেখুন কীভাবে ধর্মকে স্বার্থ আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাকের মতো সমৃদ্ধ দেশগুলোকে মৃত্যুকুপে পরিণত করা হলো। কোটি কোটি মানুষের জীবনকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হলো। লাখো মানুষের রক্তে আজও রঞ্জিত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের ধূসর বালুরাশি। স্বজাতির মধ্যে শুরু হয়েছে ভয়াবহ অন্তর্কোন্দল। চলছে উন্মাদনা, চলছে হত্যাযজ্ঞের নির্মম প্রতিযোগিতা। সকলেই জানে- এ সবই প্রতারণার ফসল। পশ্চিমা বস্তুবাদী সভ্যতার আত্মা নেই। যদি থাকতো তাহলে নির্মম প্রতারণা করে মানুষের জীবন নিয়ে এত নোংরা খেলা করতে পারতো না।
ধর্মকে কীভাবে পশ্চিমারা তাদের স্বার্থ আদায় করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে তা কারও অজানা থাকার কথা নয়। তালেবান, আল কায়েদা, আইএস- এসব কারা কার স্বার্থে সৃষ্টি করেছে এবং কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে তা তো এখন পরিষ্কার। এসব বিষয়ে আলোচনাই অবান্তর। আবার ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্ম নিয়ে যা করছে, মানুষের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করে আখের গোছাচ্ছে তাও সীমা ছাড়িয়েছে বহু আগেই। আজকের পৃথিবীর প্রধান কয়েকটি সমস্যার কথা যদি বলা হয় তাহলে সবার আগে আসে জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় অন্ধত্ব বা গোঁড়ামী ইত্যাদি নামগুলো। অর্থাৎ পৃৃথিবীর প্রধান প্রধান সমস্যার কারণই যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে ধর্ম। কিন্তু কেন? ধর্ম তো অশান্তির কারণ হতে পারে না। তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, ধর্ম বলে আজ যেটাকে পালন করা হচ্ছে তা প্রকৃত ধর্ম নয়, বিকৃত।
আজ পৃথিবীর সম্মুখে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধর্ম সঙ্কট উপস্থিত। পৃথিবী থেকে ধর্ম মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে আজ পর্যন্ত বহু চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু মুছা তো যায়-ই নি; উপরন্তু ধর্মই এখন পৃথিবীর এক নাম্বার ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এ পরিস্থিতির বাইরে নেই বাংলাদেশও। বাইরের কোনো আক্রমণকারী শক্তি নয়, আমাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে আমাদেরই ধর্মবিশ্বাস। কারণ, এ ধর্মবিশ্বাস এমনই একটি ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে যা কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়।

মানুষের ইতিহাসে ধর্মবিশ্বাস ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। শত প্রতিকূল পরিবেশেও মানুষ ধর্মবিশ্বাস আঁকড়ে রেখেছে। এতে যেমন কল্যাণ এসেছে, ক্ষেত্রবিশেষে এসেছে অকল্যাণও। এখন চলছে অকল্যাণের ধারা। আজ না ধর্মবিশ্বাস মুছে ফেলা যাচ্ছে, না তাকে এভাবে অকল্যাণের ধারায় প্রবাহিত হতে দেওয়া যাচ্ছে। এখন পরিত্রাণ পেতে হলে সমাধান মাত্র একটিই- ‘মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করা। মানুষকে প্রকৃত ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করা। যুগে যুগে স্রষ্টা কেন ধর্ম পাঠিয়েছেন, কেন নবী-রসুল-অবতার এসেছেন, তার সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করা। সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসীদের ষড়যন্ত্রে ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধর্মের যে বিকৃত ব্যাখ্যা বা যুক্তি দিয়ে অকল্যাণকর কাজে আসক্ত করে তার প্রত্যুত্তরে ধর্মের সত্য আদর্শকে দাঁড় করানো।’

এ কাজ খুব সোজা নয়, আবার অসম্ভবও নয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এ ছাড়া অন্য কোনো পথও নেই। শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগ করে মানুষকে অবদমিত করা গেলেও মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে অবদমিত করা সম্ভব নয়। বহু বছর ওই চেষ্টা করা হয়েছে। কতটুকু সফলতা এসেছে তা সকলেরই জানা। বরং আদর্শের বিরুদ্ধে বিকল্প আদর্শ হাজির না করে শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগ করে মানুষের ধর্মবিশ্বাসের অকল্যাণের ধারা বন্ধ করতে গিয়ে পশ্চিমারা সমস্ত পৃথিবীকেই অকল্যাণের পথে ঠেলে দিয়েছে। সুতরাং সমাধান একটাই- উপযুক্ত যুক্তি, প্রমাণ, তথ্য, উপাত্ত ও আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে কল্যাণকর ধারায় প্রবাহিত করার মধ্য দিয়েই এ সঙ্কটকে মোকাবেলা করতে হবে। এমন পৃথিবী গঠন করতে হবে- যে পৃথিবীতে ধর্ম ও ধর্মবিশ্বাস সবই থাকবে, কিন্তু তা মানুষকে অকল্যাণের পথে চালিত না করে মানবতার কল্যাণের পথে চালিত করবে। স্রষ্টা এমন পৃথিবী গঠন করার উদ্দেশ্যেই ধর্ম পাঠিয়েছেন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৭

খেলাঘর বলেছেন:


ধর্মের প্রয়োজন শেষ হয়েছে।

২| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০৮

নিলু বলেছেন: ধর্ম নিয়ে মুসলমান দেশগুলিতেই দাংগা বেশী বলে মনে হয়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.