নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asadali.ht

মোহাম্মদ আসাদ আলী

সাংবাদিক

মোহাম্মদ আসাদ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

তবে জঙ্গিরা কী দোষ করেছিল?

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:০৭

আদালতে বোমা, হাটে-বাজারে বোমা, রাস্তায় বোমা, ব্রিজে বোমা, বাসে বোমা, ট্রেনে বোমা, টিভি সেন্টারে বোমা, শত শত স্বজন হারানো মানুষের নিরূপায় আহাজারি, ভয় আর আতঙ্কের মাঝে করুণ দিনাতিপাত- পাঠক, এই ছিল দেশে ২০০৪ সালের জেএমবি জঙ্গিদের সহিংস উত্থানলগ্নের সংক্ষিপ্ত বিবরণ। সে দিনগুলো ভুলে যাবার নয়। দেখা গেছে ওই সময় সারা দেশবাসী এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ফুঁসে উঠেছিল। সারা দেশের মিডিয়া একযোগে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছিল এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছিল। পিছিয়ে ছিল না বুদ্ধিজীবীরাও। তারা জাতির ওই দুর্যোগময় মুহূর্তে করণীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন একের পর এক সেমিনার, আলোচনা, কনফারেন্স বা বৈঠকের মাধ্যমে। ছিল আন্তর্জাতিক তৎপরতাও। লাখো মানুষের ক্ষোভ ঘৃণায় রূপান্তরিত হয়েছিল ওই সব মানুষের প্রতি যারা মানবতার কবর রচনা করে জনজীবনকে দুর্বিসহ ও বিপর্যস্ত করে তোলে, বিনা অপরাধে সাধারণ মানুষের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে। জঙ্গিদের অমন সন্ত্রাসী কার্যকলাপে দেশের অনেক আলেম-ওলামাকেও তখন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে ও জঙ্গিদের বিচারের শক্ত দাবি ওঠাতে দেখা গেছে। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সামনে সরকারের টনক নড়েছিল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ ও সচেতন হয়েছিল। প্রশাসন চাইলে কত বড় পরিস্থিতির সুষ্ঠু মোকাবেলা করতে পারে তার প্রমাণও আমরা তখন পেয়েছি। আমরা দেখেছি প্রশাসনের সার্বিক প্রচেষ্টায় কীভাবে একের পর এক জঙ্গি গ্রেফতার হয় এবং দ্রুত বিচারে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হয়। খুব অল্প দিনের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন জঙ্গিকে ফাঁসি দেওয়া হয়। হ্যাঁ, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যা করণীয় ছিল বাস্তবে আন্তরিকতার সাথে সেটাই করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে আমার প্রশ্ন নেই। আমার প্রশ্ন হলো- যে সন্ত্রাসী কাজ করার কারণে জেএমবি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সারাদেশ ফুঁসে উঠেছিল আজকের কথিত গণতান্ত্রিক দলের নেতাকর্মীরা আগাম ঘোষণা দিয়ে, দিন-তারিখ ঠিক করে প্রকাশ্য দিবালোকে ওই একই সন্ত্রাসী কাজগুলো করার পরও এদের বিরুদ্ধে সকলে নীরব কেন? ২০০৪ সালের জেএমবি সহিংসতার সাথে ২০১৩ সালের রাজনৈতিক সহিংসতার পার্থক্য কী ছিল? আবার আজ ২০১৪ সালের প্রথম থেকেই দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতাজনিত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তার সাথেই বা ২০০৪ সালের পার্থক্য কোথায়?
পত্রিকার পাতা খুলুন, দেখুন দেশব্যাপী কী ভয়ানক পরিস্থিতি বিরাজমান। ভয়াবহ সব সংবাদে খবরের পাতা আবৃত। আগাম ঘোষণা দিয়ে টান টান উত্তেজনা সৃষ্টি করে পরিকল্পিতভাবে জনজীবনকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে। পথে-ঘাটে হুটহাট বোমা ফুটছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামছে। নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে নিরীহ ঘুমন্ত পরিবহনকর্মীকে, বাসযাত্রীকে; নির্বিচারে ভেঙ্গে চুরমার করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার যানবাহন। বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে কিন্তু চেহারায় উচ্ছ্বাস নেই, আছে ভয় ও শঙ্কা। আগুনের ভয়, বোমার ভয়, ইট-পাটকেলের ভয়। অফিসগামীরা অফিস যাচ্ছে, কিন্তু মনে শঙ্কা- ঠিকঠাক ফিরে আসতে পারবে তো? কেউবা পরিস্থিতি বুঝে অফিস ছুটি নিয়ে গ্রামের পথে রওনা দিচ্ছে, যদিও জানে না কবে এ যুদ্ধাবস্থা পরিবর্তন হবে, শান্তি ও স্বাভাবিক স্থিতিশীলতা আদৌ ফিরে আসবে কি না। গ্রাম-গঞ্জের অবস্থাও কি ভালো? মোটেও নয়। আজকাল রাজনৈতিক দাঙ্গা-হাঙ্গামা থেকে মুক্ত নয় গ্রাম-গঞ্জের খেটে খাওয়া মানুষগুলোও।
সাধারণ মানুষের কথা থাক, যে বিচারালয়ে আইনের প্রয়োগ ঘটানো হয় মানুষের আস্থার প্রতীক সেই বিচারালয়েরই বইয়ের ভেতর থেকে যখন বোমা উদ্ধার করা হয়, বাথরুম থেকে গুলিসহ পিস্তল উদ্ধার করা হয় তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, ওই জাতির নিরাপত্তার খুঁটি কতটা নড়বড়ে। শোনা যাচ্ছে সারা দেশ থেকে জেলা প্রশাসকগণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিজিবি চেয়ে আবেদন করেছেন, তাতে সাড়া দিয়ে সরকার অনেক জেলাতে বিজিবি পাঠিয়েছেও। অবস্থাটা বিবেচনা করুন। সারা দেশ নিরাপত্তহীনতায়। খুব প্রয়োজন ছাড়া অনেকে বাড়ির বাইরে আসছেন না। হয় হরতাল-অবরোধ, নয়তো সমাবেশ, মিছিল, বিক্ষোভ, সংঘর্ষ- প্রতিদিনই দেশে কিছু না কিছু ঘটেই চলেছে। ঘটছে কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় নয়, সারা দেশজুড়েই, এক সাথে, এক দিনে। কিন্তু আশ্চর্য্যরে বিষয় হচ্ছে মানুষ নীরব, মিডিয়া নীরব, বুদ্ধিজীবী নীরব, আন্তর্জাতিক অঙ্গন নীরব। কেন নীরব? কারণ যা হচ্ছে তা ইসলামের নামে বা ধর্মের নামে হচ্ছে না, হচ্ছে গণতন্ত্রের নামে। এখানেই আসল বিষয়। ভাবখানা এমন যে, বোমা মারো, মানুষ মারো, জ্বালাও-পোড়াও করো, উগ্রবাদী মিছিল, হামলা, সংঘর্ষ, মারামারি-কাটাকাটি সবই করো, কিন্তু করো গণতন্ত্রের জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। তাহলেই কোনো সমস্যা হবে না, বাধা দেওয়া হবে না। বাধা তো আসবেই না, বরং মানুষের সমর্থন মিলবে, পশ্চিমাদের আশীর্বাদ মিলবে, মিডিয়া পক্ষে লিখবে। কিন্তু খবরদার। ভুলেও এসকল কাজ ধর্মের জন্য করো না। করলে মহাঅন্যায় হবে। মিডিয়া ব্যাপক-প্রচার প্রচারণা চালাবে, মাথার উপর পশ্চিমা যুদ্ধবিমান উড়বে, দেশের মানুষে একযোগে ফুঁসে উঠবে, আলেম-মোল্লারাও ক্রুদ্ধ হবে, তেড়ে আসবে, মারবে, জেলে দেবে, ফাঁসি দেবে।
আমি বলছি না যে, ধর্মান্ধতাকে পুঁজি করে যারা সন্ত্রাস করে তাদেরকে ফাঁসিতে ঝোলানো যাবে না। তারা অবশ্যই আইনানুগ শাস্তির যোগ্য। অন্যায় করলে তার শাস্তি তাকে পেতে হবে, তা যেই করুক না কেন, যে উদ্দেশ্যেই করুক না কেন। ধর্মের জন্য করেছে তাই সে জঙ্গি, উগ্রবাদী, আর গণতন্ত্র আনয়নের জন্য করেছে তাই সে উদারবাদী-সম্মানিত- তা তো হতে পারে না। উভয়ক্ষেত্রেই একই দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। আজ কি জেলায় জেলায় বোমা ফুটছে না? পুলিশ মরছে না? আদালতে, সম্মানিত ব্যক্তির বাসায় বোমা ফুটছে না? বাস-ট্রাক, ট্রেনে নাশকতা হচ্ছে না? জনমনে আতঙ্ক, ভয়, ভীতির উদ্রেগ হচ্ছে না? ছেলে-মেয়েদের শিক্ষায় বাধা আসছে না? ব্যবসা-বাণিজ্যে বিঘœ ঘটছে না? আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে না? এসব যদি ন্যায় হয়, উচিত কাজ হয় তাহলে তো জঙ্গিদেরও কোনো দোষ দেয়া যায় না। তারা তাহলে কী দোষ করেছিল? কোন দোষে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হলো? আর যদি এসব কাজকে অন্যায় ও সন্ত্রাস বলা হয় তাহলে যারা এসব করছে তাদেরকেও সন্ত্রাসী বা উগ্রপন্থী বলতে হবে। এদের বিরুদ্ধেও সারা দেশের ফুঁসে ওঠা উচিত।
শুধু আজ নয়, বছরের পর বছর ধরে আমাদের রাজনীতিক টাইমলাইনে এ ধরনের কর্মকাণ্ডেরই পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে। অতীতে হয়েছে, আজ হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে না তা বলা যাচ্ছে না। কোনো নির্দিষ্ট দল নয়, গণতন্ত্রের বুলি আওড়ানো প্রায় সব দলকেই আমরা কোনো না কোনো সময় এ ধরনের সন্ত্রাসী কাজ-কর্মে লিপ্ত হতে দেখেছি। কিন্তু তাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে ঘৃণার চোখে দেখা তো দূরের কথা মানুষ হাসিমুখে ভোট দিয়েছে, নির্বাচিত করেছে, প্রকারান্তরে আরেকটি যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টির পথ তৈরি করে দিয়েছে। কেন এ জনবিরোধী কাজ অনায়াসে চলে আসছে আর আমরা ষোল কোটি বাঙালি তা মাথা পেতে নিচ্ছি? গণতন্ত্রের নামে এ প্রতারণা আর কতকাল দেখব?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.