নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asadali.ht

মোহাম্মদ আসাদ আলী

সাংবাদিক

মোহাম্মদ আসাদ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কে মুসলমান? কে জান্নাতি?

০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ৮:১৫

সংখ্যায় ১৬০ কোটি। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা জাতিটি নিজেদের পরিচয় দেয় মুসলমান। তাদের বিশ্বাস- একমাত্র তারাই জান্নাতে যাবে, অন্য ধর্মের লোকেরা যাবে জাহান্নামে। কেন? কারণ তারা মুসলমান। কীভাবে মুসলমান? এই হিসেবে মুসলমান যে, তারা আল্লাহ ও রসুলকে বিশ্বাস করে এবং বিশ্বাস করে যে, কোর’আন আল্লাহর কেতাব। তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমযান মাসে রোজা রাখে, হজ্ব করে, জ্বিকির করে, তাবলীগ করে, ওয়াজ-নসিহত করে, অনেকে লেবাস-সুরতের ব্যাপারেও সতর্ক। টুপি, দাড়ি, পায়জামা, পাঞ্জাবি, জোব্বা, আলখেল্লা ইত্যাদিতে তাদের গভীর অনুরাগ। এসব কারণে তারা মুসলমান। মুসলমান না হলে কি কেউ এসব করে? আর এসব যারা করবে না তাদের আবার জান্নাত কীসের? এমনটাই ধারণা তাদের। কিন্তু পাঠক, আমার মত এ ক্ষেত্রে ভিন্ন। কয়েকটি প্রশ্নের মাধ্যমে আমার মতামত ব্যক্ত করব।
প্রথমত, মুসলমান আজ অখণ্ড কোনো জাতি নেই। মুসলমানের নামের আগে উচ্চারিত হয় তার ফেরকার নাম, মাজহাবের নাম, মতবাদের নাম। শিয়া মুসলমান, সুন্নি মুসলমান, মোহাম্মদী মুসলমান, আহলে হাদীস মুসলমান ইত্যাদি ইত্যাদি। শত শত ফেরকা-মাজহাব সৃষ্টি করে তারা ব্যস্ত নিজেদের মধ্যে তর্ক, বাহাস, মারামারি, রক্তারক্তি, যুদ্ধ, খুনাখুনি করতে। পৃথিবীব্যাপী ভিন্নজাতির দ্বারা আক্রান্ত হয়ে এদের যতজন প্রাণত্যাগ করছে, নিজেদের মধ্যে রক্তপাত করে প্রাণত্যাগের ঘটনা তার চেয়ে কম নয়। সে যাই হোক, মুসলমান জান্নাতে যাবে এই যদি তাদের বিশ্বাস হয় তাহলে প্রশ্ন হলো- কোন দল, কোন মত, কোন ফেরকা বা মাজহাবের মুসলমান জান্নাতে যাবে? আল্লাহ কিন্তু বলেছেন, এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই (সুরা হুজরাত ১০) এবং রসুলাল্লাহ বলেছেন, ভ্রাতৃঘাতী লড়াইয়ে নিহত উভয়ই জাহান্নামী (বুখারী ও মুসলিম)।
দ্বিতীয়ত, যে কোর’আনকে তারা এত সম্মান করছে, যতœ করছে, মুখস্থ করছে, নিয়মিত তেলাওয়াত করছে, তাফসীর করছে, ওয়াজ-মাহফিলে উদ্ধৃত করছে সেই কোর’আনের ব্যবহারিক অবস্থান কোথায়? আল্লাহ কোর’আন নাযেল করেছেন মুসলিমদের জীবন-বিধান হিসেবে। অথচ গত কয়েক শতাব্দী থেকে প্রায় পৃথিবীব্যাপী এই জাতির জাতীয় জীবন পরিচালিত হচ্ছে পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী জীবনদর্শন মোতাবেক। যারা ব্যবহারিক জীবন থেকে কোর’আনকে প্রত্যাখ্যান করে কেবল ব্যক্তিগত জীবনে তেলাওয়াত করার সংকীর্ণ পরিধিতে আবদ্ধ করে রেখেছে তারা নিজেদের যতই খাঁটি মুসলমান ভাবার চেষ্টা করুক, আল্লাহর চোখে তারা কি মুসলমান বলে বিবেচিত হবেন?
তৃতীয়ত, পৃথিবীর সিংহভাগ প্রাকৃতিক সম্পদ আজ এই জাতির হাতে। এদের রপ্তানিকৃত তেল গ্যাস পুড়িয়ে ইউরোপের কলকারখানা ও যানবাহনের চাকা ঘুরছে। আরবের প্রাকৃতিক সম্পদশালী মুসলিম রাষ্ট্রের নেতারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করছে শুধু তেল-গ্যাস-সোনা রপ্তানি করে। ফলে হাজার বছর যে আরবরা দারিদ্র্যের কষাঘাত সহ্য করে এসেছে, হঠাৎ তারা ধনে-সম্পত্তিতে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। তাদের বহু মূল্যবান বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ইমারত, যানবাহন অর্থাৎ জীবনমান আজ পশ্চিমাদেরকেও বিস্মিত করে। অর্থব্যয় করার কত পন্থা আছে তা এরা জানে। সাগরের উপর বিশ্রামগৃহ নির্মাণ বা শত তলার ইমারতের উপর আকর্ষণীয় সুইমিং পুল তৈরি করাসহ অতল সম্পদের সাগরে হাবুডুবু খাওয়া এই আরবদের বিলাসিতা ক্ষেত্রবিশেষে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যা তাদের মানসিক ভারসাম্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। অথচ এই জাতিরই অপর অংশে দেখুন, কতই না করুণ পরিস্থিতি বিরাজমান। এদেরই মুসলিম ভাই পেটের ক্ষুধাবৃত্তি নিবারণ করার জন্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাবার প্রচেষ্টায় নৌকাডুবি-লঞ্চডুবিতে হাজারে হাজারে প্রাণ হারাচ্ছে। এছাড়াও দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া এবং আফ্রিকার অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে শুধু কর্মসংস্থানের অভাবে লাখো মানুষকে বুভুক্ষ থাকতে হচ্ছে। গরীব দেশগুলোর এই মুসলিম ভাইদের এতটুকু সাহায্য করতে পাশবিক ভোগ-বিলাসিতায় মত্ত আরবদের যদি আত্মসম্মানে বাধা লাগে, অন্তত ইউরোপ-আমেরিকার পরিবর্তে এই গরীব দেশগুলোয় ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ করে হলেও এবং ফলশ্র“তিতে কিছু কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে হলেও তো সাহায্য করতে পারে। এতটুকু জাতীয় চেতনা যাদের নেই, তারা কি মুসলিম? জাতির এক অংশ লিপ্ত কদর্য বিলাসিতায়, অন্য অংশ বুভুক্ষ কঙ্কালসার- এটা তো মুসলিম জাতির চিত্র নয়।
চতুর্থত, রাজনীতিক বিভক্তি। পাশ্চাত্যের ঔপনিবেশিক শক্তির কাছ থেকে রাজনীতিক সিস্টেম ধার করে এই জাতির ভেতরেও বিবিধ রাজনীতিক মতবাদকে কেন্দ্র করে সৃস্টি হয়েছে বিবিধ রাজনীতিক দল। জাতীয়তাবাদী, সাম্যবাদী, ইসলামিস্ট, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ইত্যাদি মতবাদভিত্তিক রাজনীতিক দলগুলোর মধ্যে সর্বদাই প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও আক্রমণাত্মক সম্পর্ক বিদ্যমান। শুধু রাজনীতিক মতবাদের ভিন্নতার দরুন একজন আরেকজনকে পেট্রল বোমায় জ্বালিয়ে দিচ্ছে, গুলি করে হত্যা করছে, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করছে। আল্লাহর রসুলের শিক্ষা হচ্ছে- এই জাতিতে কোনো মতভেদ বা অনৈক্য থাকতে পারবে না। মতভেদকে তিনি কুফর আখ্যায়িত করেছেন। অথচ আজ সেই মতভেদকে রাজনীতিক অঙ্গনে শুধু বৈধতাই দেওয়া হয় নি, অনুপ্রাণিত করা হয়। এটা কি প্রকৃত মুসলিম জাতির চিত্র?
কখনই না। বস্তুত এরা কেউই প্রকৃত মুসলিম নয়। বিশ্বের ১৬০ কোটি জনসংখ্যা, যারা বর্তমান পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা অবজ্ঞাত, উপেক্ষিত, অবহেলিত ও নির্যাতিত জনগোষ্ঠী, আল্লাহর হুকুম অমান্য করে এবং রসুলের শিক্ষাকে উপেক্ষা করার শাস্তিসরূপ যাদেরকে ইতোমধ্যেই ভিন্ন জাতির দাসত্বগ্রহণ করতে হয়েছে, তাদেরকে প্রকৃত ইসলামের অনুসারী প্রকৃত মুসলিম বলার অর্থই হলো রসুলাল্লাহর শিক্ষাকে অবমাননা করা। কারণ প্রকৃত মুসলিমরা অন্য জাতির দাসত্ব করতে পারে না, অনৈক্যকে প্রশ্রয় দিতে পারে না, আল্লাহ-রসুলের নির্দেশ অমান্য করে পাশ্চাত্যের ধর্মবর্জিত সিস্টেম গ্রহণ করতে পারে না, কদর্য বিলাসিতায় গা ভাসাতে পারে না। এরা মুসলিম নয়। এদের কোনো জান্নাত নাই। বহু আগেই এদের জান্নাতের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। এদের এই লোক দেখানো মেকি ধর্মকর্ম আল্লাহ আখেরাতে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবেন।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ৮:৩৮

প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার লেখা। আরবরা খাওয়ার সময় যে খাদ্য নষ্ট করে সেই টাকা দিয়েও কয়েক কোটি লোক একবেলা খাবার খেতে পারে। তারা পাঁচতারা সাত তারা হোটেলে গিয়ে পঁচিশ ত্রিশ প্রকার খাবারের অর্ডার করে, সেখান থেকে একটু একটু করে অল্প কিছু খাবার খেয়ে বাকী সব ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। অথচ ঐ খাবারগুলো ঠিক মত পরিবেশন করলে কমপক্ষে আরো পনর বিশ জন লোক পেট ভরে খেতে পারতো। ধন্যবাদ

০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ৯:৫৪

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: এদের অহংকার এদেরকে এত নিচু স্থানে নামিয়ে ফেলেছে। এই অহংকারের পরিণতি তাদেরকে ভোগ করতে হচ্ছে প্রাকৃতিক কারণেই। সেদিনের অপেক্ষায় আছি। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ধর্মব্যবসায়ী এরাই। কারণ মোল্লারা ধর্মব্যবসা করে ব্যক্তিগতভাবে, এরা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে। ধিক্কার এদের মানসিকতাকে।
মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

২| ০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ৮:৪২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আল্লাহর হুকুম অমান্য করে এবং রসুলের শিক্ষাকে উপেক্ষা করার শাস্তিসরূপ যাদেরকে ইতোমধ্যেই ভিন্ন জাতির দাসত্বগ্রহণ করতে হয়েছে, তাদেরকে প্রকৃত ইসলামের অনুসারী প্রকৃত মুসলিম বলার অর্থই হলো রসুলাল্লাহর শিক্ষাকে অবমাননা করা। কারণ প্রকৃত মুসলিমরা অন্য জাতির দাসত্ব করতে পারে না, অনৈক্যকে প্রশ্রয় দিতে পারে না, আল্লাহ-রসুলের নির্দেশ অমান্য করে পাশ্চাত্যের ধর্মবর্জিত সিস্টেম গ্রহণ করতে পারে না, কদর্য বিলাসিতায় গা ভাসাতে পারে না। এরা মুসলিম নয়।

+++++++++

০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ৯:৫৫

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ৮:৫৩

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: এই মুহুর্তে মুসলিম নামধারী যারা আছে, এদের যদি বিচার করা হয় তাইলে আমার মনে হয় শতকরা হিসেবে জাহান্নামে যাওয়ার রেটে বিপুল বিক্রমে আগাইয়া থাকবে সৌদীরাই। অথবা আরবরাই। আমাদের দেশের মানুষ পাগড়ী আলখেল্লা বোরখা কিছু কমই পড়ুক, ওদের মতো ভন্ড অপদার্থ অন্তত না।

পোস্টে প্লাস।

০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ৯:৫৮

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: সহমত। আসলে বোরখা-আলখেল্লা ইসলামের অংশ নয়, আরবের অংশ। আরব আমাদের শান্তি দিতে পারে নি, পারবেও না। শান্তির জন্য ইসলাম। আমাদের অন্ধত্বের কারণেই আরবীয় সংস্কৃতি রুচি-অভিরুচি ইসলাম বলে বিবেচিত হয় এবং পরিণামে শান্তি বিনষ্টের কারণ হয়। ধন্যবাদ।

৪| ০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ৯:১৩

সহজপাঁচালি বলেছেন: দোষটা কেন আরব মুসলিম দেশগুলোকে দেয়া হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না। মূলত, মুসলমান ছাড়াও মানুষে মানুষে ভেদাভেদ এখনো পৃথিবীতে অগনিত মাত্রায় আছে। এক্ষেত্রে মানুষ তার স্বার্থবাদি চিন্তাকেই প্রাধান্য দেয়। অন্য দেশ তো দূরের কথা প্রতিবেশির দুর্দশার কথাই বা ক'জন ভাবে- অন্যকে দোষ দিয়েই বা কি হবে? আমিই কী ভাবি? আমার দেশের কত মানুষ আমার চেয়ে কত দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে আছে আমি নিজেই বা তার কতটা খবর রাখি বলুন। জাতিতে মুসলমান নাকি অন্য কিছু সেটা তো আর সব না। স্বার্থচিন্তা কতটা আচ্ছাদিত করে আছে সেটাই হয়ত দেখার বিষয়।

০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ১০:০৫

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: আপনার সাথে আমিও সহমত। আমি এই কথাটিই বলেছি। তবে মুসলিম দেশগুলোকে টানা হয়েছে তার কারণ হচ্ছে- ইসলাম স্বার্থবাদকে স্থান দেয় না। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে সমস্ত প্রকার স্বার্থকে কুরবান করে মানুষের কল্যাণে, মানবজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য জীবন-সম্পদ উৎসর্গ করা। এটা যেমন ব্যক্তিপরিসরে, তেমনই রাষ্ট্রীয় পরিসরেও। আমার লেখার মূল বিষয় হলো এটাই প্রমাণ করা যে, এই জাতি আর মুসলিম নেই, এরা ইসলামের শিক্ষাকে প্রত্যাখ্যান করে কার্যত কাফের-মোশরেকে পরিণত হয়েছে। আপনিই বলেছেন- আমরা আজ প্রতিবেশির খোজ-খবরও রাখি না। সত্যিই তো। আর সত্যি বলেই আমরা নিজেদের মুসলিম দাবি করতে পারি না। কারণ স্বার্থবাদ মুসলিমের চরিত্র নয়। মুসলিম নিজে না খেয়ে অন্যকে খাওয়াবে। মুসলমান ছাড়াও স্বার্থবাদ-ভেদাভেদবাদ পৃথিবীর অন্যান্য স্থানেও আছে, সেটা তো থাকবেই, থাকারই কথা। থাকার কথা নয় কেবল মুসলিমদের মধ্যে।

৫| ০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ১০:৩১

সহজপাঁচালি বলেছেন: ভাই আপনার সাথে আরেকটু কথা বলি। তবে তর্ক করার উদ্দেশ্যে নয়- ওরকম মনে হলে আর বলব না। তবে আপনার মূল লেখা থেকে এ কথাটা অন্যদিকে চলে যাবে বলে একটু দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছি, তবু বলি:
উপরে মন্তব্যের উত্তর দিতে গিয়ে আপনি বলেছেন :
"‍‌‌আসলে বোরখা-আলখেল্লা ইসলামের অংশ নয়, আরবের অংশ।"
এটি আপনার কাছে কেন মনে হল?
পর্দা প্রথা নিয়ে আগে তো ব্লগে অনেক তর্কবিতর্ক হত। তখন থেকেই আমার মনে হয়েছে, সমাজের পিছিয়ে থাকার পেছনে অন্যান্য অনেক ধর্মের মত ইসলামও দায়ী।
এটি একান্ত আমার নিজস্ব মত। আমি মনে করি না আমার মত কাউকে মানতেই হবে। তবে, ভিন্নমত পোষণ করলে অবশ্যই সে মতটি জানতে আমি আগ্রহী।

০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ১১:৩২

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: বোরখা-আলখেল্লা ইসলামের অংশ নয়, আরবের অংশ। আসুন একটু ভেতরে প্রবেশ করা যাক।

ইসলাম হচ্ছে দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা যা আল্লাহ আদম (আ.) থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রত্যেক নবী-রসুলের মাধ্যমে মানবজাতিকে দান করে এসেছেন। এই দীনর ভিত্তি তওহীদ, বরাবরই এক থেকেছে। সেটা হলো আল্লাহ ছাড়া আর কারও সার্বভৌমত্ব না মানা। এই তওহীদের ভিত্তিতে আদম (আ.) থেকে মুহাম্মদ (সা.) এর আগ পর্যন্ত তিনি যত নবী-রসুল পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তারা কেউই পুর্ণাঙ্গ দীন বা জীবনব্যবস্থা নিয়ে আসেন নি। তারা একটি নির্দিষ্ট জাতির হেদায়াহর জন্য নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ডে নির্দিষ্ট কালের জন্য এসেছেন এবং ওই জাতিকে হেদায়াহ প্রদান করে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। এভাবে মানবসভ্যতা ক্রমেই যত বিকশিত হতে লাগল, মানুষ পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে লাগল, নবী-রসুল আসতে শুরু করলেন এবং একটু একটু করে দীনও পুর্ণাঙ্গ হবার পথে পা বাড়াল। এভাবে একটি পর্যায়ে, মানবজাতির একটি ক্রান্তিলগ্নে এসে যখন আল্লাহ দেখলেন যে, তার প্রিয় সৃষ্টি মানুষ এখন একটি পুর্ণাঙ্গ, শাশ্বত ও সার্বজনীন দীন গ্রহণ করার যোগ্যতা অর্জন করেছে তখন তিনি পাঠালেন সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল মোহাম্মদ (সা.) কে। তার উপাধী তিনি দিলেন রহমাতাল্লিল আলামিন, বিশ্বের জন্য রহমত। তার মাধ্যমে তিনি যে দীন প্রেরণ করলেন তা ইসলামের সর্বশেষ ও চূড়ান্ত সংস্করণ। এই দীনকে সমস্ত পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবীব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব দিলেন রসুলাল্লাহকে (সুরা ফাতাহ ২৮)। রসুল তার জীবদ্দশাতে সমস্ত আরব উপদ্বীপ এবং মৃতু্যর পর সমস্ত পৃথিবীময় এই দীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব অর্পন করে গেলেন তার উম্মাহ উম্মতে মোহাম্মদীকে। এ দায়িত্ব পূর্ণ করতে গিয়েই রসুলের আসহাবগণ বাড়ি ঘর ছেড়ে এমন বিপ্লব সম্পাদন করেছিলেন যে, তাদের সামনে রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্য ঝড়ের মুখে তুলোর মতো উড়ে গিয়েছিল। অর্ধপৃথিবীতে ইসলামের স্বর্ণযুগ, শান্তির যুগ, সমৃদ্ধির যুগ, জ্ঞান সাধনার যুগ, মানবতার যুগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

যাই হোক, প্রধান কথাটি হচ্ছে- ইসলাম অন্যান্য ধর্মের মতো নয়। ইসলাম হচ্ছে সার্বজনীন দ্বীন। সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা হবার হকদার। একটি সার্বজনীন দ্বীনে কোনো পোশাকের বাধ্যবাধকতা থাকতে পারে? পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন জাতিতে ভাষা, গায়ের রং, খাদ্যাভ্যাস, রুচি-অভিরুচি, সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচার ভিন্ন ভিন্ন। এসব এক দিনে গড়ে উঠে নি। এক দিনে ভেঙ্গে ফেলা্ও যায় না। আপনি একটা দেখতে পারেন যে, এই কৃষ্টি-কালচার, রুচি-অভিরুচিগুলো জাতির ঐক্যের জন্য, শান্তির জন্য ক্ষতির কারণ হয় কিনা। যদি ক্ষতির কারণ না হয় তাহলে কোন যুক্তিতে আপনি সেগুলোকে হারাম ফতোয়া দিতে পারেন? একটি জাতির নেতা ওই জাতিরই অংশ। তিনি তাই খাবেন, তাই পরবেন, যা ওই জাতি খায়-পরে। আল্রাহর রসুল আরবে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাই তিনি আরবের পোশাক পরেছেন, আরবের খাবার খেয়েছেন। তিনি যদি বাংলাদেশ জন্মগ্রহণ করতেন তাহলে আমরা যা খাই তিনি তাই খেতেন। আমরা যা পরি তিনি তাই পরিধান করতেন। এই খা্ওয়া-পরা, আচার-বিচার, কৃষ্টি-কালচার হচ্ছে একটি জাতির স্বতন্ত্র রুচি-অভিরুচির অংশ। এটা তো ইসলামের অংশ নয়। জোব্বা পাগড়ি, লেবাস ইত্যদি রসুলাল্লাহর আগমনের আগ্ওে আরবের মানুষ ব্যবহার করত, পর্ওে করেছে, এখন্ও করে। এর সাথে ইসলামের কী সম্পর্ক?
একবার চিন্তা করুন, রসুলাল্লাহর জন্ম যদি বাংলাদেশে হতো তাহলে কি আপনি সারা বিশ্বের মুসলমান মহিলাকে শাড়ি পরার বিধান আরোপ করতেন? কখনই নয়। আপনি দেখবেন যে, কেউ অশ্লীল পোশাক পরছে কিনা। যদি কেউ পরে তখন আপনি আপত্তি তুলবেন। কারণ ইসলাম অশ্লীলতাকে সমর্থন করে না। একইভাবে পুরুষদের আলখেল্লাটা্ও বিবেচনা করুন। পুরুষের সতর হচ্ছে নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা। তো এই সতর রক্ষা করার জন্য আমাকে পাঞ্জাবিই পরতে হবে এমন তো কথা নেই, আমি ধূতি পরল্ওে তো আমার সতর রক্ষা হয় তাই নয় কি? অথচ আমাদের ধারণা জন্মেছে যে, আরবী পোশাকই হচেছ মুসলিমদের পোশাক।

আপনার আলোচনা করার আগ্রহ দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার মত আপনার পছন্দ না্ও হতে পারে। আপনি খোলামেলাভাবে আপনার আপত্তি তুলে ধরতে পারেন। ধন্যবাদ।

৬| ০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ১০:৪৩

বংশী নদীর পাড়ে বলেছেন: অসাধারন, অসাধারন খোলা বক্তব্য। আমার চোখ দুটিতেও হয়তো আপনার মতো ভিন্ন কিছু দেখতে পাই। আমার দৃষ্টিতে আমি মুসলমান খুজে পাচ্ছিনা। আমি খুজে ফিরছি একজন মুসলমান, যার ঈমান আছে, যিনি মুমিন।

গেয়ে বেড়াচ্ছি এই গান--

মুসলমানের নাম রাখিয়া মুসলমানের কাম করিনা
আমি কেমনে মুসলমান হইলাম কেমনে মুসলমান
পড়লাম না নামাজ আমি শুনে মসজিদের আজান।।

কান আমার বধির হলো
চক্ষু আছে নাই যে আলো
মন্দ কাজ লাগে ভালো
ঘরে শুধু সাজিয়ে রাখলাম হাদিস আর কুরান।।

গো মাংশ দিলে পেটে
মুসলমান কি হয় বটে
ঈমান আমল খটখটে
শুধু খতনা কেটে নাম রাখিলাম মোহাম্মদ কুরবান।।

পৈত্রিক সূত্রে মুসলমান
যেনো তহসিল-ক্ষতিয়ান
চাষ হয়না এই দেহখান
আমি মুসলমান আমার বাবা আর দাদার অবদান।।

আইসা ভবে হাইসা খাবে
এইভাবে মন হয় কিভাবে
খোদার কাছে কি জব দিবে
রহমান নাম ছাড়িয়া যেদিন হইবেন নিদয়াবান।।

০৪ ঠা মে, ২০১৫ দুপুর ২:১৩

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: আপনার আপত্তি না থাকলে ফেসবুকে আসবেন। আরও আলাপ করা যাবে।

৭| ০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ১০:৪৯

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: যেইখানে ধর্ম নাজিল হইছে ওইখানের মানুষের দুরবস্থা দেইখা মায়াও হয়না, করুনা হয়। অবশ্য ঐতিহাসিকভাবে আরব খুব একটা ভালো জায়গা ছিলোনা। জাস্ট এইটাই মনে রাইখেন, ওই সময়ে দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি অনাচারের জায়গা ছিলো আরব, তাই মহানবী সাঃ ওইখানেই আসছিলেন। নাইলে এই বাংলা খারাপ হইলে বাংলায়ই আসছেন নিশ্চিত। ওদের রক্তে মজ্জাগত খারাপ ব্যাপারগুলা এই জমানায় আরো স্পস্ট হইতেছে।

০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ১১:৫৭

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: সহমত

৮| ০৪ ঠা মে, ২০১৫ রাত ২:৫৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


মানুষ লজিক্যালী ভাবে।

০৪ ঠা মে, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: কী বোঝাতে চাচ্ছেন আরেকটু স্পষ্ট করলে সুবিধা হতো। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.