নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asadali.ht

মোহাম্মদ আসাদ আলী

সাংবাদিক

মোহাম্মদ আসাদ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামবিদ্বেষের মই বেয়ে জঙ্গিবাদের উত্থান!

১৪ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:৫৪

ব্লগার হত্যাকাণ্ডের তালিকায় এবার যুক্ত হলো অনন্ত বিজয় দাশের নাম। গত মঙ্গলবার সিলেটে নিজ বাসার অদূরে চারজন মুখোশধারী যুবকের উপর্যুপরি চাপাতির কোপে তিনি মারা যান। এ নিয়ে গত প্রায় তিন মাসের মধ্যে তিনজন ব্লগারকে প্রায় একই কায়দায় হত্যা করা হলো। যদিও প্রাথমিকভাবে এ ঘটনাগুলোর দায় স্বীকার করে আসছিল ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’, ইদানীং আল কায়েদার দায় স্বীকার ও এই উপমহাদেশে সংগঠনটির কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করার খবরাখবরে পরিস্থিতি অনেকটা নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে সচেতন মহলের কপালে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী? আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দশকের পর দশক আল-কায়েদা, তালেবান ও তাদের প্র্যাক্টিক্যাল পরিচালক সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ইঁদুর-বেড়াল খেলার মধ্যেও শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের আবাসভূমি বাংলাদেশ অনেকাংশেই নিরাপদ ছিল, একেবারেই কিছু ঘটে নি তা নয়, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু দেশটিকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র বলার মতো সুযোগ তৈরি হয় নি কখনও। সেই বাংলাদেশ আজ ভয়াবহ খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে। সরকার আপ্রাণ প্রচেষ্ট চালাচ্ছে এ ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য। কারণ, এই প্রত্যেকটি ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করছে। রাজনীতিক কারণে কিছুদিন আগেও এ দেশে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে, আগুনে পুড়ে প্রাণ হারিয়েছে শতাধিক মানুষ, র‌্যাব-পুলিশের ক্রসফায়ারেও অনেকে প্রাণ হারিয়েছে যা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে বারবার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। বর্তমানে তেমন রাজনীতিক সহিংসতা না থাকলেও ক্রমাগত ব্লগার হত্যাকাণ্ড সরকারকে দুশ্চিন্তার মধ্যে নিপতিত করেছে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো সরকার আজও মূল সমস্যায় প্রবেশ করতে পারে নি। ফলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোনো সমাধান আসছে না।
সরকারকে বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবতে হবে। এই যে খুনগুলো হচ্ছে সেগুলোকে অন্য আর দশটা সাধারণ খুন ভাবলে চলবে না। এই হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে নিহিত বার্তাটি অনুধাবন করতে হবে। দুরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে। প্রত্যেকটি খুন হচ্ছে একই কায়দায়, খুব দক্ষ হাতে। হত্যাকারীদের পরিকল্পনা ও কর্মসূচিও অতি শক্তিশালী। প্রথমে বলা হলো হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটাচ্ছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। কিন্তু পরবর্তীতে খবর বের হলো- আলকায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশীয় শাখা ‘অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের’ দায় স্বীকার করেছে। খবরটি খুব আশঙ্কাজনক হলেও সরকারকে আমরা এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্বিগ্ন হতে দেখি নি। এই খবর শুনে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন যে, বাংলাদেশে নাকি আল কায়েদার অস্তিত্বের প্রমাণ নেই। তিনি কী ধরনের প্রমাণের আশায় বসে আছেন তা পরিষ্কার না হলেও এতটুকু বলা যায় যে, আল কায়েদা থাকার দরকার নেই, আল কায়েদার নেটওয়ার্ক থাকলেই যথেষ্ট। আর যদি ধরেও নেই যে, এই দেশে আল কায়েদার নেটওয়ার্ক নেই বা আল কায়েদাপন্থী কোনো সংগঠনও নেই, তবুও স্বস্তির কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশের পরপর তিনটি ব্লগার হত্যাকাণ্ডের দায়ভার আল কায়েদা নিজের ঘাড়ে নিয়েছে এটুকুই যথেষ্ট। এখনই যদি এই হত্যাকাণ্ডগুলো বন্ধ করা না হয় তাহলে এ দেশের ভবিষ্যৎ সুখকর হবে না।
প্রথমেই বলেছিলাম, সরকার সমস্যার গভীরে প্রবেশ করতে পারে নি। সেই মূল সমস্যাটা ব্যাখ্যা করা যাক। এটা সকলেই জানেন- রোগ এক জিনিস, লক্ষণ আরেক জিনিস। লক্ষণকে রোগ ভেবে যতই ওষুধ সেবন করা হোক তাতে রোগের উপশম তো ঘটেই না, বরং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে রোগবৃদ্ধি হবার সম্ভাবনা থাকে। ব্লগার হত্যাকাণ্ড, চাপাতির কোপ, আন্তর্জাতিক চাপ, মিডিয়ার সমালোচনা- কোনোটাই মূল সমস্যা নয়, সমস্যার লক্ষণ বা বহিঃপ্রকাশমাত্র। একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটি ঘটনার জন্ম হয়। প্রথমটি না ঘটলে হয়তো দ্বিতীয়টি ঘটতই না। যদি ইসলামবিদ্বেষী লেখালেখি না হতো, আল্লাহ-রসুলকে অশ্রাব্য-অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করে লেখা না হতো, কার্টুন প্রকাশ করা না হতো, কোটি কোটি মুসলমানের ভালোবাসাকে কটাক্ষ না করা হতো তাহলে তারা যত বড় নাস্তিক হোক, মুক্তমনা হোক, যুক্তিবাদী হোক, প্রগতিশীল হোক- আক্রমণের স্বীকার হতো না। তাদের বিরুদ্ধে মানুষের হৃদয়ে এত ক্ষোভের সঞ্চার হতো না। বলতে পারেন- সাধারণ মানুষ তো মারছে না, মারছে উগ্রবাদী কিছু ধর্মান্ধ। হ্যাঁ, সাধারণ মানুষ চাপাতি হাতে তুলে নেয় নি ঠিক, কিন্তু চাপাতির বিরুদ্ধে তো কোনো ধর্মভীরু মানুষকে মাঠে দেখাও যাচ্ছে না।
কথিত মুক্তমনা-প্রগতিশীল, যারা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ দেখেও না দেখার ভান করছেন, সেটাকে কোনো সমস্যা বলে মানতে যারা অপারগ তাদের মধ্যেও অনেকে অভিযোগ করছেন- একটি বিশাল সংখ্যার মানুষ নাকি এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করে কার্যত মৌন থাকছে, সমর্থন দিচ্ছে। তাদের অভিযোগ যদি সত্য হয় তাহলে তার কারণ আর কিছুই নয়, এই বিশাল সংখ্যক মানুষের অন্তরে জমা পড়া ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। ইসলামবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে কতখানি ক্ষোভ থাকলে এমন পাশবিক হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করা যায় চিন্তা করুন। যাদেরকে মারা হচ্ছে তারা সবাই ইসলামবিদ্বেষী কিনা সে ব্যাপারে খুব কম জনই ধারণা রাখে। বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ ধর্মভীরু মানুষের মনে গেঁথে গেছে যে, নাস্তিক মানেই ইসলামবিদ্বেষী, আল্লাহ-রসুলকে গালিগালাজকারী। সেই সাথে এই ধর্মভীরু মানুষগুলো সরকারকেও নাস্তিক সরকার মনে করে কারণ তাদের বিশ্বাস- সরকার ইসলামবিদ্বেষী প্রচারণার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয় নি। ইসলামবিদ্বেষীদের প্রতি ও সরকারের প্রতি এই মানুষগুলোর বহুদিনের লালিত ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে আনসারুল্লাহ (বা আল কায়েদা) এর মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে এক প্রকার নৈতিক ভিত্তি অর্জন করছে, যা ভয়াবহ অশনিসংকেত।
সরকারকে বুঝতে হবে সমস্যার সূত্রপাত হচ্ছে এক শ্রেণির ইসলামবিদ্বেষীদের হাতে, যার চূড়ান্ত পরিণতি রচিত হচ্ছে ধর্মান্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর হাত দিয়ে। যেহেতু জঙ্গিদের অবস্থান প্রকাশ্য এবং রক্তক্ষয়ী, কাজেই সেটাই বেশি আলোচিত হচ্ছে। শৃগাল মুরগী শিকার করবে, এটা তার ধর্ম। তার গ্রাস থেকে মুরগী রক্ষা করতে চাইলে শৃগালের ব্যাপারে যেমন সতর্ক থাকতে হবে তেমন মুগরীকেও আগলে রাখতে হবে। জঙ্গিরা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড করবে এতে অবাক হবার কি আছে? তাদের সেই অমানবিক কর্মকাণ্ড থেকে সমাজকে রক্ষা করার জন্য একদিকে যেমন সামাজিক ও ধর্মীয় সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার, শক্তি প্রয়োগ দরকার, অন্যদিকে তারা যেন কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সমর্থন লাভ করতে না পারে সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকা দরকার। কিন্তু বর্তমানে এক শ্রেণির ইসলামবিদ্বেষী লেখক ও ব্লগার জঙ্গিদের হাতে সাধারণ মানুষের সমর্থন লাভ করার জন্য এক মহামূল্যবান অস্ত্র তুলে দিচ্ছে।
সরকার হয়তো ভাবছে ইসলামবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে প্রচারিত হবে। আন্তর্জাতিকভাবে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে, গণমাধ্যমে সমালোচিত হতে হবে। কিন্তু তাদেরকে এটাও ভাবতে হবে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে। একটি সরকারের প্রধান বন্ধু হচ্ছে তার জনগণ। একটি শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে সেই জনগণের মনে অন্যায়ভাবে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে দেওয়া মোটেও সমীচীন হবে না। গত কয়েক বছরে এই আস্তিক-নাস্তিক ইস্যুতে সরকারের জনপ্রিয়তা কতটা কমেছে তা তো কারও অজানা নয়। ধর্মান্ধতা যদি অকল্যাণকর হয় ধর্মবিদ্বেষ কীভাবে কল্যাণকর হতে পারে? যুক্তি কী বলে? একজন কট্টর ধর্মান্ধ ও একজন কট্টর ইসলামবিদ্বেষীর মাঝে চরিত্রগত দিক দিয়ে কোনো পার্থক্য নেই, পার্থক্য শুধু এটাই যে, পশ্চিমা ধর্মবর্জিত শিক্ষাব্যবস্থা ও মিডিয়ার প্রচারণায় ধর্মবিদ্বেষীদের মনে করা হয় অতি আধুনিক, প্রগতিশীল, মুক্তমনা; আর ধর্মান্ধরা হচ্ছে পিছিয়ে পড়া অনুন্নত, মৌলবাদী জনগোষ্ঠী। যেটাই মনে করা হোক, বাংলাদেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকে এর কোনো এক দিকে ঝুঁকে পড়লে চলবে না, নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখতে হবে। সরকার অবশ্যই ধর্মান্ধতার সাথে আপস করবে না। ধর্ম নিয়ে যারা অপরাজনীতি করে তাদের সাথেও কোনো আপস নয়। বরং সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে সকল প্রকার ধর্মব্যবসায়ীদের হাত থেকে মুক্ত করে মানবতার কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু ঠিক এই একই কারণে ইসলামবিদ্বেষীদের সাথেও আপস করা বা তাদের অন্যায় কর্মকাণ্ডকে নীরব সমর্থন প্রদান করাও সরকারের নীতিতে বর্জনীয় হওয়া উচিত।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:৩২

এন জে শাওন বলেছেন: হুম, ওয়াশিকুর বা অভিজিৎ এর ব্যাপারে এই কথাগুলো খাটলেও অনন্ত দাসের বেলায় বোধহয় না।কারন আমার জানা ও দেখা মতে তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করে কিছু লেখেন নি।

১৪ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:৩৭

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: এটাই তো বললাম যে, যাদেরকে মারা হচ্ছে তারা সবাই ইসলামবিদ্বেষী কিনা সে ব্যাপারে খুব কম জনই ধারণা রাখে। বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ ধর্মভীরু মানুষের মনে গেঁথে গেছে যে, নাস্তিক মানেই ইসলামবিদ্বেষী, আল্লাহ-রসুলকে গালিগালাজকারী।

২| ১৪ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:৪৮

প্রভাষ প্রদৌত বলেছেন: ঠিক বলেছেন ।

৩| ১৪ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:৫৭

লেখাজোকা শামীম বলেছেন: ধর্মবিদ্বেষী ও জঙ্গী - দু পক্ষকেই কঠোরভাবে দমন করতে হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া যাবে না।

৪| ১৫ ই মে, ২০১৫ রাত ২:০৯

উড়োজাহাজ বলেছেন: ইসলামবিদ্বেষের মই বেয়ে জঙ্গিবাদের উত্থান আর সাম্রাজ্যবাদীদের পোয়াবারো। মাঝদিক দিয়ে প্রথম বলির শিকার কথিত মুক্তমনারা। দ্বিতীয় তালিকায় থাকবে সেই উগ্রপন্থী জংগিরা। এই হচ্ছে ষড়যন্ত্রের ব্লু-প্রিন্ট। তাহলে দেশটাকে পাকিস্তান- আফগানিস্তান বানাচ্ছে কারা? এক কথায় যারা সেটার বিরোধিতা করে অর্থাত ধর্মবিদ্বেষীরাই। কিন্তু বিজ্ঞানমনস্কদের মাথায় সেটা কিছুতেই ঢুকছে না। তারা সাময়িক উত্তেজনায় আছে।

৫| ১৮ ই মে, ২০১৫ সকাল ৮:৪১

স্বপ্নাতুর পুরব বলেছেন: ভালো বলেছেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.