নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গঙ্গাবিধৌত পলিসমৃদ্ধ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে নিয়ে শুরু হয়েছে ভয়ংকর ষড়যন্ত্র। ধারাবাহিকভাবে এমন সব ঘটনা ঘটে চলেছে যা আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করছে। একের পর এক পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে, কেউ বলছেন জঙ্গি হামলা, কেউ বলছেন বিচ্ছিন্ন ঘটনা, কেউবা বলছেন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, কিন্তু যে ভাষ্যেই প্রকাশ করা হোক, সত্য হলো এই ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডগুলোর ‘ক্লু’ বের করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী খুব সামান্যই সফলতার পরিচয় দিতে পারছে। সময়ের সাথে নতুন নতুন পর্ব ভেদ করে বিপর্যয়ের গভীরে প্রবেশ করেছে মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
ব্লগার হত্যাকাণ্ড ঘটে আসছিল অনেক দিন ধরেই। এরই মধ্যে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে একই কায়দায় দুই বিদেশী হত্যাকাণ্ড, রাজধানীর জনবহুল এলাকা গাবতলীর এক চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যকে হত্যা, বাড্ডায় বাসার ভেতরে খিজির খান হত্যাকাণ্ড, পাবনায় গীর্জার ফাদারকে হত্যাচেষ্টা এবং সর্বশেষ গতকাল হোসনি দালানে বোমা হামলার ঘটনা বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আশঙ্কার বিষয় হলো- এ হত্যাকাণ্ডগুলোর সাথে কোনো না কোনোভাবে জঙ্গিবাদীদের যোগসাজস খুঁজে বের করা হচ্ছে, এবং অনেক ক্ষেত্রে নিশ্চিতও হওয়া গেছে যে, এ হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটাচ্ছে জঙ্গিরা। তবে বেশ কয়েকটি ঘটনার ব্যাপক তদন্ত করেও তেমন কোনো কূল-কিনারা বের করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন অনেকেই। পশ্চিমা মিডিয়া ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করতে। দফায় দফায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে এ দেশে বসবাসকারী পশ্চিমা নাগরিকদের উপর। আবার অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশে আইএস জঙ্গিরা বিদেশীদের হত্যা করছে বলে যে খবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন ইহুদি গুপ্তচরের মালিকানাধীন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওই খবর পরিবেশনের ভেতরে অনেক বিশ্লেষক ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। কিন্তু সত্য-মিথ্যা যাই হোক, বাস্তবে এসব হত্যাকাণ্ড ও আন্তর্জাতিক প্রচার-প্রচারণার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের শিল্প ও বাণিজ্য খাতে। আন্তর্জাতিক ক্রেতারা এখন বাংলাদেশে আসতে ভয় পাচ্ছেন।
সব লক্ষণ একত্র করলে যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে তা মোটেও সুখকর নয়। ধর্মীয় কোন্দল, শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব, ধর্মীয়ভাবে ভিন্ন মতাবলম্বীদের হত্যা করার অপচেষ্টা, এই চিত্র বাংলাদেশে অনেকাংশে নতুন। এই চিত্র হলো পাকিস্তান, ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও লিবিয়ার চিত্র। মসজিদে হামলা, গীর্জায় হামলা, শিয়ার মিছিলে সুন্নির বোমা হামলা, সুন্নির মিছিলে শিয়ার বোমা হামলা- এসব পাকিস্তানে হয়, ইরাকে হয়, আফগানিস্তানে হয়। আমরা এ ধরনের খবর কেবল পত্রিকার ‘আন্তর্জাতিক’ পাতাতেই পড়ে অভ্যস্ত। কিন্তু আজ আমাদের দেশে এ ঘটনাগুলো ক্রমাগতভাবে ঘটে চলেছে, আমাদেরই চোখের সামনে। এ আলামত বড়ই শঙ্কার, বড়ই চিন্তার। ভুলে গেলে চলবে না, ইরাক-সিরিয়াকে আমরা আজ যে অবস্থায় দেখছি তা রাতারাতি ঘটে নি। শুরুটা কিন্তু এভাবেই হয়েছিল। এখানে ওখানে বোমা হামলা হয়েছে, সংঘর্ষ হয়েছে, কিছু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, কিছু আহত হয়েছে। কিন্তু বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী এ ঘটনাগুলোর যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়ে এগুলোকে দেখেছেন বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে। তারা পত্রিকা পড়েছেন, টিভির খবর দেখেছেন। আহত-নিহতের হিসাব নিকাশ করেছেন। তারা কখনও এ আশঙ্কা করেন নি যে, সেদিনের ওই সিরিয়া, সেদিনের ওই ইরাক আজকের মতো যুদ্ধাবস্থায় পতিত হবে। কোটি কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হবে। কিন্তু সেই অদূরদর্শিতার পরিণতি কি তারা এড়াতে পারছেন? পারছেন না। আজ তাদের অনেককেই খোলা আকাশের নীচে উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। আমরাও কি তেমন পরিণতির জন্য অপেক্ষা করব? সবাইকে মনে রাখতে হবে- বাংলাদেশের গতিমুখ এখন পাকিস্তান, ইরাক, সিরিয়ার দিকে।
সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এ কথা ভাবা ভুল হবে যে, সব কিছু সরকারের ব্যর্থতার কারণেই হচ্ছে বা সরকার পরিবর্তন হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। একটি দেশে সরকারের পক্ষে ও বিপক্ষে মানুষ থাকবেই। প্রচলিত সিস্টেমে কোনো সরকারই সর্বজনগৃহীত হয় না। কিন্তু এখানে সমস্যাটি ভিন্ন, এটা ক্ষমতা দখল ও ক্ষমতায় টিকে থাকার কথিত রাজনৈতিক সঙ্কট নয়, এটা জাতীয় সঙ্কট। এর সমাধানে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এক কাতারে শামিল হতে হবে। যারা সরকার পরিবর্তনের আশায় বসে আছেন তাদের সম্পর্কে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, তারা পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। যেভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে চাপে ফেলার একটি অপচেষ্টা দৃশ্যমান হচ্ছে, তাতে সরকার পরিবর্তন হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি যে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? সুতরাং এই অপশক্তির বিরুদ্ধে এখনই ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। কোনো বিশেষ সময়ের আশায় বসে থাকার অবকাশ নেই।
রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা আজ শঙ্কিত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চিন্তিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আধুনিকায়ন, নিরাপত্তার কড়াকড়ি, ব্যাপক তল্লাশী সত্ত্বেও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো এড়ানো যাচ্ছে না, যা সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারকে বুঝতে হবে, কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে এ অশুভ শক্তিকে মোকাবেলা করে জাতির আশু বিপর্যয়কে ঠেকানো সম্ভব নয়। এ কাজে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা আবশ্যক। দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকে শুধু র্যাব-পুলিশ দিয়ে রুখে দেওয়া অসম্ভব, এ কাজ করতে পারে একমাত্র আপামর জনতা। তাই জনগণের শক্তিকে অবহেলা করার উপায় নেই। ১৬ কোটি মানুষকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে পারলে এমন কোনো শক্তি নেই যা বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
আমার প্রস্তাবনা:
মূলত দুইটি চেতনাকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব। এক- ধর্মবিশ্বাস, দুই- সামাজিক দায়িত্ব।
এ দেশের প্রায় ৯০% মানুষ আল্লাহ ও রসুলকে বিশ্বাস করে, পরকালকে বিশ্বাস করে, জান্নাতকে বিশ্বাস করে। তাদেরকে বোঝাতে হবে, তারা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে চায়, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের দায়িত্ব সমস্ত রকম সন্ত্রাস, সহিংসতা, জঙ্গিবাদ, অন্যায়, অশান্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে মানুষের শান্তিময় নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা। ধর্ম সম্পর্কে মানুষের ধারণা নামায, রোযা ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ধর্ম কী? প্রকৃত ধর্ম হচ্ছে মানবতা, মনুষ্যত্ব, দয়া। ইসলাম শব্দের অর্থই শান্তি, অর্থাৎ মানুষের শান্তির লক্ষ্যে কাজ করাই ইসলামের মূল কাজ, এটাই এবাদত। এই কাজই করে গেছেন আল্লাহর সকল নবী রসুল ও মো’মেনগণ। এই এবাদত না করলে হাশরের দিন জবাবদিহি করতে হবে। কাজেই এখন প্রত্যেকের এবাদত, ধর্মীয় কর্তব্য, ঈমানী দায়িত্ব হলো যাবতীয় অন্যায়, অবিচার ও অপশক্তি থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করা।
আবার অনেকে আছেন যারা ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের জন্য বিশ্বাসগতভাবে প্রস্তুত নয়। তাদেরকে বোঝাতে হবে, মানুষের নিরাপত্তাবিধানের জন্য এগিয়ে আসা এই মুহূর্তে সকলের সামাজিক কর্তব্য। আমরা এই সমাজে বাস করছি, এই সমাজ থেকে প্রতিনিয়ত হাজার সুবিধা ভোগ করছি। তাই এই সমাজের প্রতি, এ জাতি ও রাষ্ট্রের প্রতি আমরা আজন্ম ঋণে দায়বদ্ধ। আমরা এদেশের আলো বাতাসে, এই পদ্মা-মেঘনা-যমুনার অববাহিকায় বেড়ে উঠেছি। এদেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত হয়েছি, দেশ ও সমাজের সেই ঋণ পরিশোধের সময় এসেছে। আজকে দেশের সার্বভৌমত্ব যখন হুমকির মুখে, সমাজ যখন আক্রান্ত তখন তা থেকে সমাজের মানুষকে রক্ষা করা সকলের সামাজিক দায়িত্ব।
এভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝিয়ে যাবতীয় দেশবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। মূলত এ কাজের উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। কাজী নজরুল ইসলাম একদা লিখেছিলেন,
‘দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কাণ্ডারী হুঁশিয়ার!’
দেশের এই ক্রান্তিকালে জাতিকে শোচনীয় পরিণতি থেকে রক্ষা করতে আমাদের কাণ্ডারীরা কি প্রস্তুত?
২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:২৬
সজীব বলেছেন:
৩| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৫
ব্লগার মাসুদ বলেছেন:
৪| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৬
কিরমানী লিটন বলেছেন: আমাদের আগামিরা আমাদেরই গড়ার অপেক্ষায়
শুভকামনা জানবেন- অনেক ...
৫| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫০
ক্যান্সারযোদ্ধা বলেছেন: হুম। চিন্তার ব্যাপার!
৬| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:৫৫
বিপরীত বাক বলেছেন: কিছুই হবে না।। অত চিন্তা না করে বেশি করে ঘুমান।।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:১৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনিই কান্ডারী ও ভান্ডারী।