নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের অনেক হিন্দু কেন ‘ইন্ডিয়া’য় চলে যায়?

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:০৭



জসীম অসীম



বাংলাদেশের হিন্দুদের ধর্মীয় কারণে কোনো নিপীড়ন আছে-কী না-এই বিষয়ে প্রায়ই রাজনীতি হয়-রাজনৈতিক প্রসঙ্গ উঠে আসে। সব নিপীড়নের ঘটনাকে যেমন সাম্প্রদায়িক বলা যায়না-তেমনি কোনো ঘটনাই সাম্প্রদায়িক নয়-এটাও বলা যায় না। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও সেখানকার সংখ্যালঘু মুসলিম নিগ্রহ রয়েছে। কিন্তু সেখানকার কোনো মুসলিম বিতাড়িত হয়ে কিংবা নিরাপত্তাহীনতায় বাংলাদেশে আসে না। অথচ বাংলাদেশের অনেক হিন্দু নিরাপত্তাহীনতায় কিংবা আরও নানা কারণে ভারতে তথা ইন্ডিয়ায় চলে যায়। কুমিল্লার লেখক-সাহিত্যিক-অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক বলেন-যারা গিয়েছে তারা ভুল করেছে এবং তাদের ভুলের মাশুল দিচ্ছি আমরা- যারা বাংলাদেশে থেকে গিয়েছি-এমনকি কখনোই যাবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

‘আপনি কখনো ইন্ডিয়ায় চলে যাবেন?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে কেউ বলেননি-দেশ ছেড়ে যাবেন। তবু মাঝে মাঝে কেউ কেউ দেশ ছেড়ে যান-এমন নজির অনেক রয়েছে। কিন্তু কেন?

এমন প্রশ্ন কাউকে আসলে করা যায় না। তবু করেছি। উত্তরও এসেছে বিচিত্র। অনেকে বলেছেন-এটা কোনো লেখার বিষয় হতে পারে না। কেউ কেউ বলেছেন-এটা অবশ্যই লেখার বিষয়। কেউ কেউ এ বিষয়ে খুব বাজে মন্তব্যও করেছেন। সেসব মন্তব্য নাম উল্লেখ করে লেখার সাহস নেই। কেয়ামত শুরু হয়ে যাবে।

বাংলাদেশের যেসব হিন্দু ইন্ডিয়ায় চলে গিয়েছে-তাদের অনেকের অনেক উত্তরসূরিকে আমি প্রশ্ন করেছি-তারা আবার ইন্ডিয়ায় চলে যাবে কী না। এমন একজনও বলেনননি-ইন্ডিয়ায় চলে যাবেন। তবে অনেকে অনেক সমস্যার কথা বলেছেন। তাই বলে কেউ বলেননি ভুল করেও ইন্ডিয়ায় চলে যাবো। তারপরও কেউ হয়তো হঠাৎ করে উধাও হয়ে যান। কোথায় গেলেন? উত্তর আসে ইন্ডিয়ায়। কিন্তু কেন? বাংলাদেশের অনেক হিন্দু কেন ইন্ডিয়ায় চলে যায়?

আমার প্রথম সংসার যখন ভাঙে-তখন আমার লেখা অনেক বইয়ের পান্ডুলিপির সঙ্গে ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘু’ শীর্ষক একটি পান্ডুলিপিও হারায়। পান্ডুলিপিটি দুইটি পর্বে বিভক্ত ছিল-প্রথম অংশ : প্রবন্ধ-নিবন্ধ এবং দ্বিতীয় অংশ : স্মৃতিকথা-আমার দেখা অসংখ্য হিন্দু সংখ্যালঘু নিপীড়নের বিবরণ।

১৯৯৭-১৯৯৮ সালের দিকে কুমিল্লার সাংবাদিক হাসানুল আলম [বাচ্চু] আমাকে সঙ্গে নিয়ে একটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র বের করতে চেষ্টা করেন। পত্রিকার নাম নির্ধারণ করেন ‘সংখ্যালঘু বার্তা’। কিন্তু কুমিল্লা জেলা প্রশাসন শেষে পত্রিকাটিকে এর রকম নামের কারণে ‘ডিক্লারেশন দেয়নি’। বর্তমানে হাসানুল আলম অন্য আরেকটি সাপ্তাহিক পত্রিকার ‘ডিক্লারেশন’ পেয়েছেন। সাপ্তাহিক ‘সৌহার্দ্য’।

সাপ্তাহিক ‘সংখ্যালঘু বার্তা’ ডিক্লারেশন না পেলে আমি আমার অনেক লেখা বিভিন্ন কাগজে ছাপাতে চেষ্টা করি। কিন্তু কোনো লেখাই কোনো পত্রিকা ছাপাচ্ছিল না। তখন আমি কুমিল্লার সাপ্তাহিক আমোদ-লাকসামবার্তা-নিরীক্ষণ ও দৈনিক রূপসী বাংলায় একইসঙ্গে কাজ করতাম। সন ১৯৯৯। কিন্তু কোনো কাগজেই সংখ্যালঘু বিষয়ে-বিশেষ করে হিন্দু সংখ্যালঘু বিষয়ে কোনো লেখা ছাপাচ্ছিল না। তারপরও একবার সাপ্তাহিক লাকসামবার্তার সম্পাদককে আগে থেকে না জানিয়ে ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও দুর্গাপূজা’ শীর্ষক একটি সম্পাদকীয় লিখেছিলাম-যা ১৩ অক্টোবর ১৯৯৯ তারিখে পত্রিকাটিতে ছাপা হয়। লেখাটিতে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ তথ্য ছিল। ছাপা হওয়ার পর সম্পাদক দেখেন সেই লেখা-ঝুঁকিমুক্ত লেখা লিখেও আমাকে ঝুঁকিযুক্ত এ বিষয়ে লেখার জন্য ধমক খেতে হয়। সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ এর সম্পাদক শামসুননাহার রাব্বী আমাকে বলেন-দুনিয়ার এত বিষয় থাকতে তুমি হিন্দু-মুসলমানের দ্বান্দ্বিক বিষয় নিয়ে লিখতে যাও কেন? এ বিষয়ে লিখতে গেলে আইনী সাবধানতা খুবই জরুরী।

তারও অনেকদিন পর আমি একদিন ছবি তুলতে কুমিল্লার চান্দিনা এলাকায় গেলাম। চান্দিনার মহিচাইল এলাকার রিপা রানী সরকার নামে এক মহিলার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। কথায় কথায় তিনি একটি হিন্দু মেয়ের করুণ গল্প বলেন। আমি গল্পটি লিখে একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদককে দিলে তিনি এমন ডকুমেন্টারী লেখা- বিশেষ করে হিন্দু বিষয়ে ছাপাতে রাজি হলেন না। আমি সেই ঘটনার সব চরিত্রের এবং স্থানের ছদ্মনাম দিয়ে ঘটনাটিকে একটি ‘সাহিত্যের গল্প’ হিসেবে রূপদান করে একই সম্পাদককে আবারও দিলাম। সম্পাদক বললেন-চরিত্র এবং স্থানের নাম বদল হলেও বিষয়তো আর বদল হলো না। সুতরাং গল্প হলেও এটি ঝুুঁকিপূর্ণ-এটা ছাপা যাবে না। এরই মধ্যে একদিন একজন হিন্দু লোক আমার সঙ্গে খুবই বাজে ব্যবহার করেন। লোকটি একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সব মুসলমানকে খুব বাজে একটি গাল দিলে আমার খুব কষ্ট হয়। আমি তার গালাগালের খুব প্রতিবাদ করি। লোকটির বাসা কুমিল্লা শহরের তালপুকুরপাড় এলাকায়। এই লোকের বাংলাদেশের মুসলিমদের প্রতি অসৎ মন্তব্য শুনে বুঝলাম-লোকটি হিন্দু সাম্প্রদায়িক। সে মূলত: হিন্দুরও শত্র“। মূলতঃ সাম্প্রদায়িক লোকদের কাছে কেউই নিরাপদ নয়।

আরও পরে কুমিল্লার সাংবাদিক নীতিশ সাহার দৈনিক শিরোনাম বাজারে আসে। কুমিল্লার সাংবাদিকদের অনেকে আমাকে বলেন-মূলত: নিজেদের সম্পত্তিটা রক্ষা করতেই নীতিশ সাহা শিরোনাম পত্রিকাকে দৈনিকে রূপান্তর করেছেন। নীতিশ সাহাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন-সম্পত্তি রক্ষার জন্য তাহলে তো সব হিন্দুই সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশুনা করতো এবং পত্রিকা বের করতে না পারুক-সাংবাদিকতার দিকেই হুমড়ি খেয়ে পড়তো। নীতিশ সাহা আমাকে আরও বলেন-যারা এসব কথা বলে-তুমি দেখবে তাদের কেউই দায়িত্বশীল নয়। তিনি আরও বলেন-একজন হিন্দু অনেক কারণেই নিপীড়নের শিকার হতে পারেন-তবে তার সব ঘটনাও আবার সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন নয়। বিষয়টি নিয়ে আমি অনেককেই প্রশ্ন করি। অনেক বছর আগে কুমিল্লার সাংবাদিক অধ্যাপক দীপক কুমার ভদ্রকে আমি বলি-বাংলাদেশে কি হিন্দু নিপীড়ন আছে? মন থেকে বলবেন-্ নিরপেক্ষভাবে বলবেন। মিথ্যে বলবেন না। দীপকভদ্র কথাটির উত্তর দেন ঘুরিয়ে। বলেন-শত্র“ বা অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ে কি তোমার পড়াশোনা করা আছে? আমি বললাম-আছে। তিনি বললেন-শত্র“ সম্পত্তি কিংবা অর্পিত সম্পত্তি আইনটিই একটি সাম্প্রদায়িক আইন। কোনো সরকার এই আইনকে কিভাবে লালন করে? তিনি সবশেষে “ইমপেক্ট অব ভাস্টেড প্রপার্টি এক্ট অব রুরাল বাংলাদেশ” বিষয়ে কথা বললেন। তিনি দি ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার কুমিল্লা প্রতিনিধি।

কুমিল্লার সাপ্তাহিক অভিবাদন পত্রিকার সম্পাদক আবুল হাসানাত বাবুলকে অনেক দিন আগে একদিন এ-রকম একাধিক প্রশ্ন করি আমি। তিনি ‘হিন্দু মাইনরিটিস ইন বাংলাদেশ’ এবং ‘লিভিং উইথ ভাস্টেড প্রপার্টি’ বিষয়ে অনেক কথা বলেন। তবে একটি কথা খুব কাব্যিক করে বলেন। তিনি বলেন-ইট ইজ ফলস দ্যাট আই অ্যাম এ নন কমিউনাল-নন ভায়োলেন্ট-বাট আই ডিড নট নো-আই ডোন্ট নো হোয়াট ইজ কমিউনালিজম।’ একদিন এ কথার প্রমাণও পেলাম। আবুল হাসানাত বাবুলের ছোট ছেলে সিয়াম তার পাশের কোন বাড়িতে খেলতে গিয়েছে। বাড়িটি হিন্দু কোনো এক লোকের। তাইতার বড় ছেলে ‘সরোজ’ সিয়াম কোথায় প্রশ্নের উত্তরে চিৎকার করে বলে পাশের হিন্দু বাড়িতে-‘সিয়াম’ হিন্দু বাড়িতে খেলতে গিয়েছে। এ কথা শুনে আবুল হাসানাত বাবুল বলেন-ঐ বাড়ির কারোর কোনো নাম কি নেই-হিন্দু বাড়ি কী? কেন তুমি এভাবে উত্তর দিলে? রাগে তিনি তার বড় ছেলে ‘সরোজকে’ ভীষণ বেত্রাঘাত করেন। ‘হিন্দু বাড়ি’-বলার অপরাধে নিজের সন্তানকে মারার ঘটনা আমি আর দেখিনি। ‘হিন্দুবাড়ি’ কথাটি ‘সরোজ’ সম্ভবত কোনো প্রতিবেশীর কাছে শিখেছিল। আমি মানুষের এসব ঘটনা নীরবে মনে রাখি এবং পর্যবেক্ষণ করি। তবে সব ঘটনা লেখা যায় না। লেখা সম্ভব নয়। বিষয় যেহেতু হিন্দু মাইনরিটি-সেহেতু সব মোটেও বলা যাবে না। যেমন বলা যাচ্ছে না কুমিল্লা শহরের ঠাকুরপাড়ার একটি যুবতী মেয়ের করুণ দুঃখের কথা। ইট"জ নট পসিবল।

কুমিল্লার অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিককে একবার আমি বললাম-বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় কোনো কারণে কি এখানকার হিন্দুদের নিপীড়ন হচ্ছে? তিনিও অধ্যাপক দীপক কুমার ভদ্রের মতো চলে গেলেন ১৯৬৫ এর পাক-ভারত যুদ্ধ প্রসঙ্গে। তিনি বলেন-পাকিস্তান আমলে বাংলাভাষী ব্যাপক হিন্দু গোষ্ঠীকে অনেক কায়দায় সম্পদচ্যুত-ভূমিচ্যুত ও দেশচ্যুত করা হয়েছে। পাশের দেশ হিন্দুস্তানকে বলা হয়েছে ‘শত্র“স্তান’ এবং এদেশ থেকেও যারা চলে গিয়েছিল-তাদের চিহ্নিত করা হয়েছিল শত্র“ হিসেবে-তাদের সম্পত্তি হয়ে গেল শত্র“ সম্পত্তি। অবস্থাটা তখন এমন-থাকলেও বিপদ-গেলেও বিপদ। এই যে শত্র“ আর হিন্দু-হিন্দু আর শত্র“ এক হয়ে গেল-এ কথাটি কেউ সাহস করে বলতে চায় না। শত্র“ সম্পত্তি-পরিত্যক্ত সম্পত্তি কিংবা অর্পিত সম্পত্তি কোনো লেবেল দিয়েই এখানকার হিন্দুদের সঙ্কটকে হ্রাস করা যায় না? বরং ১৯৬৫ সাল থেকে শত্র“ সম্পত্তি ও পরবর্তীকালে অর্পিত সম্পত্তি আইনের কারণে লাখ লাখ হিন্দুর যে ভোগান্তি হয়েছে-সে ইতিহাস নির্মম। তিনি খুব দুঃখ করে বলেন-যারা গেল তারাতো গেলই। কিন্তু যারা থাকলো-তাদের ভোগান্তির শেষ থাকলো না। এর দায় নেবে কে?

এ বিষয়ে একবার আমি কুমিল্লার নারী নেত্রী পাপড়ি বসুকে কিছু প্রশ্ন করলে তিনি বলেন-আমি তো কখনো ইন্ডিয়ায় চলে যাবো না। বড়জোর আমি ওখানে যাবো-তীর্থ ভ্রমণ করতে-চিকিৎসার জন্য কিংবা আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু আমি তো কখনো কোনো কারণেও ওখানে চিরতরে বসবাস করতে যাবো না। তবে হ্যাঁ-যারা এ পর্যন্ত চলে গিয়েছে-তাদের নিরাপত্তাসহ আরও অনেক জটিলতা ছিল-এটা তো আমি অস্বীকার করতে পারি না। শখ করে কেউ মাতৃভূমি ছাড়ে না। আমি নিরাপত্তাহীনতায় থাকি না-এর অর্থ এই নয় যে সবারই নিরাপত্তা আছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.