নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

না শিখে নয় বরং শিখেই সাংবাদিক হোন (৬)

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:০৭



জসীম অসীম



রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ আজকাল সাংবাদিকদের প্রকাশ্যে তৈলমর্দন বাড়িয়ে দিয়েছেন। কারণ সাংবাদিকদের বিপক্ষে আজকাল কেউ মুখ খুলতেই চায় না। আজকাল ব্যাঙের ছাতার মতো পত্রিকার সংখ্যা বেড়েছে-সম্পাদকের ও সাংবদিকের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পত্রিকার কিংবা সাংবাদিকতার মান বাড়েনি। এ লক্ষণ ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন সংবাদ মিডিয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এ লক্ষণ আমার বিবেচনায় শুভ নয়। রাগে ক্ষোভে প্রায়ই আমি অনেককে বলি-‘চলুন-সাংবাদিকতা না শিখেই, সাংবাদিকতা বিষয়ে না জেনেই বরং আমরা সম্পাদক হয়ে যাই কিংবা পত্রিকা বের করি। আবার সেটাও শুভ লক্ষণ ছিল না-যখন শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের আমলে ৪টি দৈনিকসহ কয়েকটি সংবাদপত্র সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন রেখে ২২২টি সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়া।

মানুষ এখন কেন সাংবাদিক হয়? কেন বের করে পত্রিকা? কেন বের করে সংবাদ চ্যানেল? ভারতীয় সংবাদপত্রের আদিপুরুষ জেমস অগাস্টাস হিকি বলেছিলেন-আমি শুধু আমার আত্মার স্বাধীনতা কিনবার জন্যই সংবাদপত্র প্রকাশে প্রবৃত্ত হয়েছি। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ সংবাদপত্র-রেডিও-টেলিভিশন... কেন বের হচ্ছে? কার জন্য বের করছে? এখন রেডিও-টেলিভিশনের মূল উদ্দেশ্য হয়েছে-মানুষের মনোরঞ্জন করে ব্যবসা হাতিয়ে নেয়া। কমিটমেন্ট কতোটা পূরণ করছে তারা? কারা বের করছে এসব পত্রিকা-খোঁজ নিন তো। চরিত্র বুঝে যাবেন। আমার নিজের কোনো পত্রিকা নেই বলে এখনও অনেক পত্রিকায় আমি লেখা পাঠাই। কিন্তু ছাপে না। কারণ আমি আমার মতো লিখি। কিন্তু তারা চান তাদের মতো লেখা। এ নিয়ে আমার অনেকবার কথা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েনের এক ঘনিষ্ঠ অধ্যাপক বন্ধুসহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার অধ্যাপকদের সঙ্গে। ভালো একটি লেখা আজও লিখতে কিংবা ছাপাতে পারিনি আমি-কোথাও-ই। এমনকি নিজের দায়িত্বে থাকা পত্রিকাটিতেও। এ প্রসঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কবি রানা চট্টোপাধ্যয়ের লেখার কথা মনে পড়ে: ‘অসম্ভব ভালো একটি কবিতা লেখার জন্য আমি পঁচিশ বছর কী না করেছি-তবু লিখতে পারিনি সেই অনিবার্য অমোঘ কবিতা...।’

আজকাল গণমাধ্যমগুলোর কোনটি কিভাবে চলছে, তার খোঁজ নিলেই এর চরিত্র বুঝতে কষ্ট হবে না। দৈনিক ইনকিলাব কিভাবে তার যাত্রা চালু করলো-মনে পড়ে? ১৯৮৬ সালের ৪ জুন পত্রিকাটি নিবন্ধিত হওয়ার পর এর প্রকাশনা শুরু হয়। তারপর এ পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের মামলাগুলো কিভাবে খারিজ হয়েছে? নেপথ্যের ঘটনাগুলো প্রকাশ পায় না প্রায়ই। যদি কোন রিপোর্ট কারো বিপক্ষে যায়, তাহলে সেটা কি তার সম্পাদিত পত্রিকায় ছাপা হওয়া সম্ভব? সবাইতো ‘পকেটবন্দী’ হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বলা যায় কতো কিছুই। কার টাকায় কে চলে-কার টাকায় কার পত্রিকা বা চ্যানেল চলে-কার আয়ের উৎস কী-এসব বিষয়ও এ প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত।

বাংলাদেশের বিএনপি’র রাজনীতিতে মোসাদ্দেক আলী ফালু এক গুরুত্বপূর্ণ নাম ছিল। কারণ একসময় বিএনপি’র হাতে তেমন কোন নিজস্ব গণমাধ্যমই ছিল না। দৈনিক দিনকাল বিএনপি’র নিজস্ব পত্রিকা হলেও স্বয়ং বিএনপিওয়ালারাও অন্য পত্রিকা কিনে তাদের পাঠচাহিদা মেটায়। কিন্তু ফালু বিএনপি’র মিডিয়া সেক্টরকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিলেন। এটা বিএনপি’র জন্য সুখের হলেও বাস্তবে সেই ফালুর ব্যাকগ্রাউন্ড কী! অথচ এই ফালু একসময় হতে চাইলেন বাংলাদেশের ‘মিডিয়া মুঘল’-বলা চলে বিশ্বের মিডিয়া ইতিহাসের রূপার্ট মার্ডক এর বাংলাদেশী সংস্করণ। অথচ তার আয়ের উৎস কী ছিল? কোথায় পেলেন এত টাকা-এ নিয়ে কী মাথাব্যথা কারো ছিল? এনটিভি-আমার দেশ-আর টিভি-র পর ফালু ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সম্পাদিত ঢাকার মতিঝিলের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত তখনকার ইংরেজি দৈনিক সংবাদপত্র ‘অবজারভার’ও কিনতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশে অনেক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রয়েছেন। আরও রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অনেক অধ্যাপক। কিন্তু সেই তুলনায় ফালু মিডিয়া বিষয়ে তেমন সুদক্ষ কোনো ব্যক্তি ছিলেন না। সুতরাং ফালুর টিভি এবং তার পত্রিকার কাছে আপনি রাষ্ট্রীয় দায় কী কী আশা করতে পারবেন? ফালুর চ্যানেল কি ‘মালু’র চ্যানেলের মতে হবে? ফালুর মতোই হবে।

দৈনিক আমাদের সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান একবার বলেন-শুরুতে ‘আমাদের সময়’ পত্রিকার দাম ছিল ২টাকা। পত্রিকা তখন ছিল সাদাকালো। পাঠকের আগ্রহে এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে কিছুদিন পরই পত্রিকা চাররঙে ছাপা হতে থাকে। খরচ বৃদ্ধি নিয়ে বেসামাল অবস্থায় পড়ে গেলাম। তার কিছুদিন পরই নিউজপ্রিন্টের দাম বেড়ে গেল টনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে অর্থাৎ কেজিতে বেড়ে যায় ১০ টাকা করে। তখন পত্রিকা চালাতে পারবো কী না এ নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম...। অথচ পরে তো দেখা গেলো বাংলাদেশে কাগজ বিক্রেতা কোম্পানীগুলোরও কেউ কেউ [যেমন-বসুন্ধরা গ্র“পের দৈনিক কালের কন্ঠ] পত্রিকা বের করে বাজারে এসেছে। তাহলে প্রতিযোগিতা কি আরও তীব্র হয়ে গেল না?

মিডিয়ার নিরপেক্ষতার ওপর আমার কোনো আস্থা নেই। সবার কাগজ এবং টেলিভিশনই গোষ্ঠীবদ্ধ। কোন না কোন নেতাকে দেয়া তেলে তৈলাক্ত। এ থেকে যেন কারোরই মুক্তি নেই। কোথায় আজ নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা? কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের টিভি সাংবাদিক নঈম নিজাম যখন এটিএন বাংলার নিউজ এডিটর-তখন আমার এক আত্মীয়-ওই চ্যানেলে আমার জন্য একটি কাজের ব্যবস্থা করার কথা বললে-আমি বলি আমার দ্বারা আর সাংবাদিকতা হবে না। উপরেও না-নিচেও না। চ্যানেলেও না-পত্রিকায়ও না। কুমিল্লায়ও না-ঢাকায়ও না। কারণ সাংবাদিকদের ‘কেনা গোলাম’ হওয়ার চরিত্রটা আমার কাছে আর ভালো লাগে না। সুতরাং মিডিয়ায় আর চাকুরীরির চেষ্টা করবো না। তারপর আমার আরেক বন্ধু যখন বিটিভি-ছেড়ে ফালুর এনটিভি-তে যোগ দিলো-তখনও সে আমার জন্য চাকুরির ব্যবস্থা করে। তখন আমি কুমিল্লার দৈনিক শিরোনাম পত্রিকার চাকুরি ছেড়ে বেকার। কিন্তু আমি বলি আমি একজন অক্ষম লোক-মিডিয়ায় সক্ষম হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তার কিছুদিন পরই ২০০৩ সালের ৩ জুলাই হোটেল সোনারগাঁও-য়ে সুইচ অন করে এনটিভি-র স¤প্রচার উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশের তখনকার রাষ্ট্রপতি ড.ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ।

আমি যখনই পত্রিকাগুলোতে লেখা দিয়েছি-কর্তৃপক্ষ বলেছে আমি নাকি লেখা দিয়ে বিপ্লব করতে চাই। কেউ কেউ আমাকে কখনো ‘রিপোর্টার-ফটোগ্রাফার’ বলেও স্বীকার করতে চাননি। কোনো কোনো সম্পাদক লেখা ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছেন-কেউ কেউ আবার লেখা হারিয়ে ফেলেছি বলেও জবাব দিয়েছেন। কিছুদিন আগে কুমিল্লার আওয়ামী ধারার একটি স্থানীয় পত্রিকাকে একটি লেখা দিয়েছিলাম। লেখার শিরোনাম ছিল-‘মনিরুল হক সাক্কু, আর্মি নামলে কী কী কারণে আত্মগোপন করেন। লেখাটিতে অনেক তথ্যও ছিল। ছাপাও হয়নি-লেখাও ফেরৎ পাইনি। দু:খজনক-সম্পাদকের প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল বিধায় লেখাটির কোনো ফটোকপিও আমি রাখিনি।

আরেকবার একটি লেখা লিখলাম-‘কুমিল্লা টাউনহল সুপারমার্কেট কেমন করে মুখে মুখে বাহার মার্কেট হলো এবং কেন।’ এই লেখাটিও ছাপা হয়নি। সেই লেখায় আমি মার্কেটটির অনেক দোকান ও দোকানদারদের সমালোচনাও করেছিলাম। যেমন-ওই মার্কেটের দোতলার পশ্চিম লেনে একটি টেইলার্স ছিল- ‘এডোনিস টেইলার্স’। তাদের ব্যবসায়িক শ্লোগান ছিল- ‘গড মেইকস ম্যান-উই মেইক জেন্টলম্যান।’ অর্থাৎ আল্লাহ মানুষ কিংবা লোক বানায়, আর আমরা বানাই ভদ্রলোক।’ এ ব্যবসায়িক-বিজ্ঞাপনী শ্লোগানটিতে আল্লাহর নামও ব্যবহার করা হয়েছে এবং আল্লাহকে হেয় করা হয়েছে। বুঝানো হয়েছে আল্লাহ মানুষ বানায় কিন্তু মানুষকে ভদ্রলোক বানায় এই ‘এডোনিস টেইলাস’। প্রশ্ন হল শুধু পোশাক পরলেই কী মানুষ ভদ্রলোক হয়ে যায়? কিন্তু এসব প্রসঙ্গ উত্থাপন করে আমি যখন লেখাটি লিখলাম- কুমিল্লার একটি স্থানীয় পত্রিকায় পাঠাতে, তখন ওই পত্রিকার সম্পাদক বললেন-‘এডোনিস টেইলার্স’ ওমুক নেতার তমুক হোন। সুতরাং লেখাটি যাবে না। এই হলো আমার লেখার মূল্যায়ন। অবশ্য তাদের মুল্যায়নে আমার কিছু যায় আসে না। কারণ আমি তাদের ইচ্ছেয় লিখি না। আমার কাজ অন্যের মূল্যায়ন না পাক, তাতে কিছু যায় আসে না। কারণ জগতে কতো গুণি লোকের গুণের কদরই হয়নি, আর আমার মত নির্গুণ লোকের কাজের মূল্যায়ন আশা করা অবশ্যই অনুচিত। আজ আমরা ভারতের বিপ্লবী বলে সূর্যসেনসহ যাদের চিনি-তারা ব্রিটিশ দৃষ্টিতে ছিল সন্ত্রাসবাদী। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৩১-এ ব্রিটিশ জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ষ্টিভেন্সকে হত্যা করেছিলো কুমিল্লা ফয়জুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরী। তাদেরকে কি আজ আমরা সন্ত্রাসী বলি? সুতরাং আর ব্যাখ্যা দিয়ে কী লাভ? রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড রহিত করে অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন বলে যারা আজও চিৎকার করে-তারা কি জানেন রাষ্ট্রপতি জিয়া কর্ণেল তাহেরের মতো কতো মুক্তিযোদ্ধার প্রাণহরণ করেছিলেন? সুতরাং একতরফা মূল্যায়ন অশুভ। কুটির শিল্পে কুমিল্লার সাহসী নারী জাহানারা বেগমকে যেসব সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলতেন-যারা সর্বত্রই বলতেন-জাহানারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিল, আরও বলতেন জাহানারা তখন ময়নামতি সেনানিবাসে পাকিস্তানী সেনাদের বাঁশের কঞ্চি সরবরাহ করতেন-যা গেরিলা কায়দায় কোনো মুক্তিযোদ্ধা সেনানিবাসে প্রবেশ করতে চাইলে যেন বিদ্ধ হয়ে মরে, সেই সাংবাদিকরাই যখন আবার জাহানারার দান-সহায়তা নিয়ে চলতেন-তখন মনে প্রশ্ন জাগতো সাংবাদিকদের চরিত্র বলে কিছু আছে কী না! কেন ঘটলো সাংবাদিকদের এমন চরিত্রহানি?

এই যে সাংবাদিকগণ বিভিন্ন লোকের ‘পকেটের লোক’ হয়ে গেল-এর সমাধান কী! এর দায় কি শুধু সাংবাদিকদের ঘাড়েই বর্তায়? ছোট পকেট-বড় পকেট-স্থানীয় পকেট-জাতীয় পকেট-আন্তর্জাতিক পকেট... পকেটের শেষ নেই। এই পকেটে না ঢুকে সাংবাদিকগণ করবেন কী! কারো পকেটে না ঢুকলে সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়ে রাষ্ট্র কি কোন দায়িত্ব নিচ্ছে? ভেবে দেখবেন যাদের পকেট আছে-মূলত: তারাই বিজ্ঞাপনওয়ালা। কারো পকেটে না ঢুকে আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে অনেক ভোগান্তি গেছে এখনও যাচ্ছে। সদ্য জেল থেকে বের হওয়া মানুষের পকেটে যেমন ফুটো পয়সাও থাকে না-তেমনি করে অনেকদিন কেটেছে আমার। যদি কারো পকেটের লোক হতে পারতাম-তাহলে নিজের পকেট এমন ফাঁকা থাকে না। কিন্তু সবাই কি আমার মতো আর্থিক এমন ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকবে? কেন থাকবে? অস্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে তো টেকা যায় না। সাংবাদিকদের আর্থিক কিংবা পেশীশক্তির দিক থেকে নিরাপত্তা নেই। তার একমাত্র হাতিয়ার কলম কিংবা ক্যামেরা কিংবা বাচিক অস্ত্র। এসব দিয়ে বন্দুকের সঙ্গে-বুলেটের সঙ্গে, হেলিকপ্টার কিংবা গানশিপের সঙ্গে লড়াই করা চলে না? ইরাক যুদ্ধের সময় আলজাজিরা টেলিভিশনের সাংবাদিক মারতে মার্কিন বাহিনী অনেকবারই হেলিকপ্টার থেকে গানশিপের গুলি নিক্ষেপ করেছিল এবং পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে এসে সাংবাদিকরা সেদিন মার্কিন বাহিনীর হাতে বলিও হয়েছিল। আজ আমি যদি কোনো রাজনৈতিক নেতার [?] যাবতীয় অপর্কম কোনো ইনভেষ্টিগেশন রিপোর্টে তুলে ধরি-কাল আমার হাত কেটে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। আমার হাত কাটা গেলে আমারই ক্ষতি হবে। কারো কিছুই হবে না। দেশ উদ্ধারের দায়িত্ব কি শুধু সাংবাদিকদের একার? যশোরের ‘রানার’ পত্রিকার সম্পাদক কিংবা দৈনিক ‘জনকণ্ঠের’ বিশেষ সংবাদদাতা শামসুর রহমান হত্যার বিচার যেখানে যথাযথ হয় না-আর আমার মতো তুচ্ছ সংবাদকর্মীর জীবন গেলে কোনো সাড়াশব্দ কি হবে? খুলনার সাংবাদিক মানিক সাহার হত্যার বিচারের জন্য আমরা অনেকবার মানব বন্ধন-র‌্যালী করেছিলাম-ফায়দা হয়েছে কতটুকু? এতকিছুর পরও সবাই কিন্তু পকেটের সাংবাদিক নয়। যারা পকেটের সাংবাদিক হয়ে আছেন, তারা ভোগের প্রশ্নে-কিংবা অস্তিত্বের প্রশ্নে হয়তো হয়ে আছেন। কী করবেন-দুর্নীতির প্রতিবাদে অংশ নিলেই স্বার্থ হাসিল হয় না। আর দুর্নীতির বিপক্ষে সত্যি সত্যি আছে ক’জন লোক? দুর্নীতির রক্ত এখন সর্বত্র প্রবাহিত। দুর্নীতি না করলে যেন মানুষ এখন মারাই যাবে। ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে সামরিক বাহিনীর একদল সদস্যের হাতে নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালে ৩০ মে বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। ১৫ নভেম্বর ১৯৮১ তে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্বাচিতও হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি প্রেসিডেন্ট হয়ে কী দেখলেন? দেখলেন অনেক মন্ত্রী রীতিমত চুরিতে লিপ্ত রয়েছেন। কিছুদিন পর অর্থাৎ ১৯৮২ সালের ১১ ফেব্র“য়ারী প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে তিনি প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মন্ত্রীসভা বাতিলও করলেন। পরেরদিন তুলনামূলক সৎ লোকদের দিয়ে মন্ত্রীসভা পুনর্গঠন করলেন। কিন্তু তিনি কি তার দুর্নীতি বিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে পেরেছিলেন? না-কারণ তার একমাস পার হতেই ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাবাহিনী প্রধান এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। ভাবা যায়-দুর্নীতির শিকড়বাকড় কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল? সেই দুর্নীতি এখন আরও বিস্তৃত হয়েছে। তাই সাংবাদিকরাও আজ আর আগের জায়গায় নেই। থাকবে কিভাবে? ‘নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়?’ লিখেছিলেন মধ্যযুগের কবি ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর। শহর পুড়ে গেলে মন্দিরও পুড়তে বাকি থাকে না। সব পেশায় যখন অপরাধ ঢুকে পড়েছে-তখন সাংবাদিকতা পেশায় ঢুকবে না-এটা আশা করা অসম্ভব। পুলিশ যখন ঘুষ খায়-শিক্ষক যখন ভর্তি বাণিজ্যের ব্যবস্য করে কিংবা তার কন্যাসম ছাত্রী ধর্ষণে বেপরোয়া হয়-তখন সাংবাদিক তো আর দেবতা বা ফেরেশতার আসনে থাকবে না। কারণ রাজনীতিবিদগণ হলেন একটি দেশের মাথা। সেই মাথাতেই যখন পঁচন ধরে-তখন আর অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পঁচনের বিষয়টির সমাধান কী? যে দেশের রাজনীতি নষ্ট-রাজনীতিক ভন্ড-সে দেশের শুধু সাংবাদিকতা আর সাংবাদিকই নয়-সবই নষ্ট হতে বাধ্য। কারণ রাজনীতিই গণমাধ্যমের অস্তিত্ব নিয়ন্ত্রণ করে। কী ডিক্লারেশন দিয়ে-কিংবা বন্ধ করে-বিভিন্নভাবে। আর পৃষ্ঠপোষকতার নামে বিজ্ঞাপন সে তো অনেক পরের কথা। সাংবাদিকতার অস্তিত্ব বিলীন করে কি কেউ সত্য লিখে বা বলে যাবে? কতোদিন? কিভাবে? সুতরাং ঐ যে -‘পকেট সাংবাদিকতা’-তা যেমন চলছে-চলবেও অনেকদিন। ক্রমাগত। বন্ধ হওয়ার কোনো শুভ লক্ষণ দেখাও যাচ্ছে না। কারণ সারা পৃথিবীর অধিকাংশ গণমাধ্যমই এখন পক্ষপাতদুষ্ট। তাই ১৯৯৭ সালের পর থেকে কঙ্গোতে প্রায় ৪০ লাখ লোক সহিংসতায় নিহত হলেও আন্তর্জাতিক মহলে তেমন উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু ২০০৬ সালের গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে হারিকেন ‘ক্যাটরিনা’ শত শত লোককে অস্থায়ীভাবে গৃহচ্যুত করলেই তা বিশ্বব্যাপী প্রায় সব টেলিভিশন কিংবা পত্রিকার-ওয়েবসাইটের বিশাল দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের দড়ি এসব মিডিয়াওয়ালাদের কোমরে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে বাঁধা আছে। সুতরাং সাংবাদিকদের হাত বেঁধে-চোখ বেঁধে-কোমরে দড়ি লাগিয়ে সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতা আশা করা বৃথা। সাংবাদিকদের তেমন কোনো স্বাধীনতা নেই। না আর্থিক-না সামরিক। সুতরাং বোকামী করে সে তার বাঁচার স্বাধীনতা হারাবে কেন? সাহসের-সততার কোনো পুরস্কারই সে আর ব্যক্তি কিংবা রাষ্ট্র থেকে পাচ্ছে না বলেই আজকাল এমন ‘পকেট সাংবাদিকতা’র নজির সৃষ্টি হয়েছে। আর সেটা গোটা বিশ্বেই। আলজাজিরা টেলিভিশনের সাংবাদিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সৈনিক যেভাবে হামলা চালায়-সেভাবে তো সে বিবিসি টেলিভিশনের সাংবাদিকদের হামলা করে না। কারণটা কী? আশা করি এ ব্যাখ্যা আর দেয়ার প্রয়োজন নেই।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.