নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসীমের অনেক ছবিই সাপ্তাহিক নিরীক্ষণে ছাপা হয়েছিলো

১৪ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৪:০৬

কাজী ফাতেমা বেগম--------------------Painting:jashimashim

আমার স্বামী কুমিল্লার সাপ্তাহিক নিরীক্ষণ-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও ভাষা সৈনিক মরহুম মোহাম্মদ উল্লাহ জসীম উদ্দিন অসীমকে খুবই স্নেহ করতেন। অসীম যখন ২০০০ সালে সাপ্তাহিক নিরীক্ষণে সহকারি সম্পাদক হিসেবে যোগ দেয় , তখন মোহাম্মদ উল্লাহ এ সংবাদ সাপ্তাহিক নিরীক্ষণ-এ অসীমের ছবিসহ ছেপেছিলেন। সেই সংবাদে অসীম যে কুমিল্লা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ছিলো , তাও উল্লেখ করা হয়। কারণ তিনি ছাত্র ইউনিয়নের ছেলেমেয়েদের খুবই ভালোবাসতেন।

অসীমের অনেক লেখা ও ছবি সাপ্তাহিক নিরীক্ষণ-এ ছাপা হয়েছিলো , যা সে কুমিল্লার অন্য কোনো পত্রিকায় আগে ছাপাতে পারেনি। কারণ সাহসী লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে কুমিল্লার সাপ্তাহিক নিরীক্ষণ পত্রিকা একসময় প্রায় বিকল্পহীন ছিলো। আমি আমার দু’মেয়েকে নিয়েও অনেকবার অনেক বিপদে পড়েছি এই নিরীক্ষণে সাহসী রিপোর্ট ছাপার কারণে। একটি সাহসী লেখা ছাপা হলেই আমরা ভয়ে ভয়েই থাকতাম , কোনদিক দিয়ে আবার সন্ত্রাসীরা হানা দেয়। কুমিল্লার অনেক মানুষ এসব কথা জানেন।

১৯৯৯ সালের ৯ অক্টোবর মহান সমাজ বিজ্ঞানী ড. আখতার হামিদ খান মারা যান। ২০০০ সালে মরহুম মোহাম্মদ উল্লাহ ও জসীম উদ্দিন অসীম নিরীক্ষণ পত্রিকা প্রকাশের পাশাপাশি আখতার হামিদ খানের স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের কাজে খুব পরিশ্রম করে। কিন্তু বইটির একবার প্র“ফ দেখার পর অসীম আর মোহাম্মদ উল্লাহর মধ্যে প্রায়ই কথা কাটাকাটি হতো। কারণ ছিলো কম্পিউটার অপারেটরের ভুল কম্পোজ। দিনরাত দু’জনে মিলে সেই পান্ডুলিপি ঠিকঠাক করতে থাকে। একদিন অসীম আর রাগ করে কাজ করতে এলো না। তার বউ ঈশিতাকে দিয়ে আমাদের বাসায় বইয়ের প্র“ফগুলো পাঠিয়ে দেয়। আমার বাসার ঠিক দরজায় বসা ছিলো এক তরকারিওয়ালা। ঈশিতা বুড়ো তরকারিওয়ালার ঘাড়ের উপর দিয়ে লাফ দিয়ে আমাদের বাসায় প্রবেশ করে প্র“ফগুলো খাটে ছুঁড়ে মারে। আর আমাকে বলে অসীম আর মোহাম্মদ উল্লাহর পত্রিকায় কাজ করবে না। মোহাম্মদ উল্লাহ তখন বাসায় ছিলেন না। বাসায় ফেরার পর আমি সব ঘটনা খুলে বললে , তিনি অনেকটা ঈশিতার উপর ক্ষেপে গিয়েই অসীমের উপর শোধ নিলেন। ৯ অক্টোবর ২০০১ তারিখের সাপ্তাহিক নিরীক্ষণ-এ অসীমের বিরুদ্ধে একটি বিজ্ঞাপন ছেপে দিলেন। অপরাধ : কেন তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে প্র“ফগুলো পাঠানো হলো। অথচ অসীম তখনও পত্রিকার প্রিন্টার্স লাইনে সহকারি সম্পাদক।

সাপ্তাহিক নিরীক্ষণ পত্রিকায় নিজের বিরুদ্ধে বিজ্ঞাপন দেখে অসীম তেড়ে আসলো আমাদের কুমিল্লা শহরতলীর চানপুরের বাসায়। মোহাম্মদ উল্লাহ তখন ঘুমে। চিৎকার করে তাকে জাগিয়ে দিলো অসীম। শুরু করলো ধমক। গালিগালাজ। একবার ক্ষেপে গিয়ে গলাচিপা দিতেও চাইলো। মোহাম্মদ উল্লাহ অসীমের বিরুদ্ধে বিজ্ঞাপন ছেপে দিলেও অসীমকে খুবই আদর করতেন। তাই তখনও অসীমকে কিছুই বললেন না। তারপর অনেক মাস আবার অসীমের দেখা নেই। সেই সময়টায় অসীমের জন্য তিনি খুবই মন খারাপ করতেন। পরে অবশ্য দু’জনের সম্পর্ক আবারও ভালো হয়েছিলো। এক সময় সে তার শ্বাশুড়ির সাথে রাগ করে এক কাপড়ে বাসা থেকে চলে আসে। তখন সে প্রায়ই খাওয়া খেতে চলে আসতো আমাদের বাসায়। তখন সে কাজ করতো কুমিল্লার দৈনিক শিরোনামে। ছবি তোলা ও রিপোর্ট লেখার কাজ। কখনো কখনো রাত তিনটার সময়েও খেতে আসতো। মোহাম্মদ উল্লাহ রাত জেগে ভাত নিয়ে বসে থাকতেন অসীমের জন্য। আমার দুই মেয়ে পলি-মলি জোর করে অসীমকে সকালের নাস্তা খাওয়াতো। অসীমকে তখন আবারও আমরা নিরীক্ষণ-এ চলে আসার কথা বলেছিলাম। আসেনি অসীম। সে সময়ে অসীম খুব কষ্ট পেয়েছে , টাকা পয়সার কষ্ট। মোহাম্মদ উল্লাহর সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করেছেন। আমি নিশ্চিত , কুমিল্লার আর কোনো সম্পাদক অসীমকে এত আদর করেনি। আমার দু' মেয়ে পলি-মলি তো তাদের অসীম ভাইকে দেখলে পাগলই হয়ে যায়। তখন অসীমের অনেক লেখা ও ছবি সাপ্তাহিক নিরীক্ষণ-এ ছাপা হয়েছিলো , যা সে কুমিল্লার অন্য কোনো পত্রিকায় আগে ছাপাতে পারেনি। কারণ সাহসী লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে কুমিল্লার সাপ্তাহিক নিরীক্ষণ পত্রিকা একসময় প্রায় বিকল্পহীনই ছিলো।

রচনা : ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৪ । অনুলিখন : সাদিয়া খানম।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.