নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেখ মুজিবকে হত্যার সঙ্গে জড়িত হওয়ার বিষয়ে মেজর ডালিমের কুমিল্লায় কাটানো দিনগুলোও প্রভাব ফেলেছে

১৪ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৩৬





জসীম উদ্দিন অসীম

শেখ মুজিবকে হত্যার সঙ্গে জড়িত হওয়ার বিষয়ে মেজর ডালিমের কুমিল্লায় কাটানো দিনগুলোও প্রভাব ফেলেছে। ছাত্রজীবনে মেজর ডালিম কুমিল্লার প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খানকে মনে করতেন তার চরমতম শত্র“। তাই ছাত্রজীবন থেকেই আফজল খানের সঙ্গে বিভিন্ন বিরোধ লেগেই ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী মেজর ডালিমের। মেজর ডালিম সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকার পরও আফজল খানকে দেখে নেয়ার সুযোগ খুঁজতেন। আর সেই সুযোগ একবার পেয়েও যান ১৯৭৪ সালে। সুযোগের মোক্ষম ব্যবহার করেন মেজর ডালিম। রাজনীতি করতে গিয়ে অধ্যক্ষ আফজল খানকে সেনাবাহিনীর নির্যাতন চরমভাবে সহ্য করতে হয়েছে। বিশেষত এ নির্যাতনকে সেনাবাহিনীর নির্যাতন না বলে বরং মেজর ডালিমেরই নির্যাতন বলা যায়। কিন্তু কি ছিল এ নেপথ্যের কারণ? তার উত্তর অনুসন্ধান করতে হলে ইতিহাসের একটু পেছন থেকেই ঘুরে আসতে হবে।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী বরখাস্ত মেজর শরীফুল হক ডালিমের বিষয়ে সারা বাংলাদেশের সঙ্গে কুমিল্লার মানুষেরও কৌতূহল রয়েছে। বিশেষ করে বলা যায় , কুমিল্লার মানুষ মেজর ডালিমের ব্যাপারে একটু বেশিই উৎসাহী। তার বিভিন্ন কারণও রয়েছে। কারণগুলোর মধ্যে মেজর ডালিমের কুমিল্লায় কাটানো দিনগুলোও জড়িত। তার বাড়ি কুমিল্লায় না হলেও তিনি কুমিল্লায় ছিলেন অনেকদিন। বিশেষ করে তার শৈশব , কৈশোর ও যৌবনের অসংখ্য দিন কেটেছে এই কুমিল্লায়। এমনকি সেনাবাহিনীর চাকুরিতে যোগদানের পরেও তিনি কুমিল্লা সেনানিবাসে অনেকদিন কর্মরত ছিলেন।

মেজর ডালিম বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের তীব্র কৌতূহল কাজ করা শুরু হয়েছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যাকান্ডের পরই। শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত হওয়ায় বিষয়ে মেজর ডালিমের কুমিল্লায় কাটানো দিনগুলোও প্রভাব ফেলেছে। একটি তথ্য থেকে জানা যায় , বর্তমানে কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগের প্রবীণ নেতা আফজল খানের সঙ্গে মেজর ডালিমের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে ছাত্রজীবনেই। মেজর ডালিমের পিতা কুমিল্লায় মৎস্য বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তারা তখন থাকতেন কুমিল্লা শহরের অশোকতলা চৌমুহনীর দোতলা একটি বাড়িতে। কুমিল্লায় থাকাকালে মেজর ডালিম কুমিল্লা জিলা স্কুল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজেও লেখাপড়া করেছেন। সে সময়ে তিনি তখনকার ছাত্রনেতা আফজল খানের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। বলা হয় , তখন ডালিম নাকি আফজল খানের হাতে বেদম মারও খেয়েছিলেন। কিন্তু এই অপমান ভুলতে পারেননি মেজর ডালিম। পরবর্তী জীবনে যখন তিনি বিমান বাহিনীর চাকুরিতে যোগদান করেন , তখনও তা মনে রেখেছেন। পরবর্তীকালের কর্মকান্ডই সেসবের প্রমাণ দেয়। ১৯৬৪ সালে মেজর ডালিম পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করলেও ১৯৬৫ সালে বাহিনী পরিবর্তন করে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন মেজর ডালিম। তখনও তার মনে অতীত ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার আগুন জ্বলছিল , যার প্রমাণ তিনি বিভিন্নভাবে দিয়েছেনও।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলেও পলিটিক্যালি বাংলাদেশ বিভিন্ন সূত্রে অস্থির ছিল। যুদ্ধাপরাধীরা তখন খুব বেশি তৎপর হতে না পারলেও গোপনে গোপনে অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল। তা ছাড়া দেশের বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠনগুলোর নেতৃবন্দের সঙ্গে তখনকার আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দেরও অনেক দ্বান্দ্বিক অবস্থা তৈরী হয়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ-এর সঙ্গের বিরোধ তো রীতিমত ইতিহাস। জাসদ নেতা সিরাজ শিকদারকে হত্যা করার বিষয়ে তখন অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল। অন্যদিকে যুদ্ধবিধস্ত এই স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল ভয়াবহ খারাপ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের স্বাধীনতার চরম বিরোধীতায় ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অথচ সেই যুক্তরাষ্ট্রই ছিল বড় মাপের খাদ্যদাতা রাষ্ট্র। যখন ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে চরম দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছিল , যখন হাজারে হাজারে মানুষ না খেয়ে মরছিল, তখন বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রই বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের কারণ বিশ্লেষণ করেছে , পর্যবেক্ষণ করেছে , বড় বড় কথা বলেছে , কিন্তু খাদ্য নিয়ে এগিয়ে আসেনি তেমনভাবে।

দুর্ভিক্ষে লাখো মানুষের মৃত্যুর পর স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তাও চরমভাবে হ্রাস পায়। তাছাড়া ১৯৭৩ সালের পর থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয় বলেও বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ। ১৯৭৪ সালের ২৮ এপ্রিল আইনশৃঙ্খলা পুন:প্রতিষ্ঠার এক অভিযানের সুযোগ নিয়ে কুমিল্লা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করে সমালোচিত হয়েছিলেন মেজর ডালিম। কুমিল্লায় ঐ বিতর্কিত অভিযানের কারণে পরে তাকে চাকুরি হারাতে হয়। সেটা শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের অল্পকিছুদিন আগে। মূলত ছাত্রজীবনের বিভিন্ন ঘটনার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মেজর ডালিম সেই অভিযানকে ব্যক্তিগত প্রতিশোধের পন্থায় রূপান্তরিত করেন। চাকুরিচ্যুত হয়ে মেজর ডালিম চরমভাবে সিদ্ধান্ত নেন শেখ মুজিব হত্যার। অথচ তিনি শেখ মুজিব পরিবারের সাথে অনেক ঘনিষ্ঠ একজন সামরিক অফিসার ছিলেন। এই বিষয়ে মেজর শরিফুল হক ডালিম তার ‘যা দেখেছি যা বুঝেছি, যা করেছি’ গ্রন্থে বিশদ বর্ণনাও দিয়েছেন। ১৯৭৪ সালের ২৮ এপ্রিল দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পুন:প্রতিষ্ঠা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে মেজর ডালিম ছিলেন কুমিল্লার দায়িত্বে। কুমিল্লা তাকে বারবার ডেকেছে। তিনিও বিভিন্নভাবে বারবার কুমিল্লায় এসেছেন। আর সেই উদ্ধার অভিযানে এসে সুযোগ পেয়ে মেজর ডালিম প্রথমেই কুমিল্লার শীর্ষনেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার ও নির্যাতন শুরু করেন। কুমিল্লার অনেক গণ্যমান্য আওয়ামী লিডারদের মধ্যে বর্তমানে প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা আফজল খানও ছিলেন। আরো ছিলেন আবদুল আজিজ খান, অধ্যক্ষ আবদুর রউফ, মাইনুল হুদা, কমান্ডার ইকবাল আহমেদ বাচ্চু, বদরুল হুদা জেনু, নাজমুল হাসান পাখিসহ আরো অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে তেমন কোন অভিযোগ না থাকলেও মেজর ডালিমের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তারা। এই সব নির্যাতনের সংবাদে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ও রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমান। তাই তিনি র্পবর্তীতে মেজর ডালিমকে ঢাকায় নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। মেজর ডালিমের সঙ্গে আরো অন্যান্য সেনাকর্মকর্তাও ছিলেন। মেজর ডালিম ও অন্যান্য বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে বসে এসব বিষয় নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমনকি তিনি এসব সেনাকর্মকর্তাদের চরম শাস্তি দেওয়ার কথা বলেন এবং গ্রেফতারকৃতদের ছেড়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেন। এতে করে মেজর ডালিম ও অন্যান্য সেনাকর্মকর্তাগণ শেখ মুজিবের প্রতিও চরম ক্ষুদ্ধ হন। তবে শেখ মুজিবের নির্দেশে গ্রেফতারকৃতদের অনেককে ছেড়ে দিলেও আফজল খানকে ছাড়ার কোনভাবেই পক্ষে ছিলেন না মেজর ডালিম। কারণ ছাত্রজীবনে মেজর ডালিম আফজল খানকে মনে করতেন চরমতম শত্র“। তাই অনেককে ছেড়ে দিলেও আফজল খানকে আটক রেখে জেল হাজতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এসব ঘটনার কিংবা জটিলতার চরম পর্যায়ে সেনাবাহিনীর চাকুরি থেকে আরো অনেক সেনাকর্মকর্তার সঙ্গে অব্যাহতি দেওয়া হয় মেজর ডালিমকেও। চাকুরি হারাবার পর মেজর ডালিম আরো ক্রুদ্ধ ও ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। তখন তাকে কুমিল্লায় আসতেও দেওয়া হয়নি। এমনকি তার স্ত্রীকেও সেনাপ্রধানের তত্ত্বাবধানে বিমানে করে ঢাকায় নেওয়া হয়। এসব ঘটনা একের পর এক নতুন ঘটনার জন্ম দিতে থাকে। সব ঘটনা পুঞ্জিভূত হয়েই ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ঘটনা ঘটে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.