নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্নিগ্ধাও শেষে সাংবাদিকতা করেনি

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:৩০



জসীম অসীম:

যে মেয়েটি মেধাবী , ব্যক্তিত্বসম্পন্না , সে মেয়েটিরই বরং সাংবাদিক হওয়া দরকার। আমার এমনই মনে হয়। কারণ এ পেশার সঙ্গে যেমন সমাজ-রাষ্ট্র জড়িত , তেমনি এ পেশাও দাবি করে জাতির সবচেয়ে সেরা সেরা মানুষদেরকে কাছে পেতে। ব্যক্তিগতভাবে আমি যে মেয়েকেই মেধাবী কিংবা কমিটেড মনে করেছি , চেষ্টা করেছি তাদের সাংবাদিকতার জগতে এগিয়ে আনতে। কিন্তু বাঙালি মেয়েদের ভয় বড়ই বেশি। ঝুঁকি নিতে চায় না। আর সাংবাদিকতা ঝুঁকিমুক্ত কোনো পেশা নয়তো বটেই।

একজন ভালো মেয়ের গল্প বলি , যাকে আমি সাংবাদিক বানাতে চেষ্টা করেছি অনেক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারিনি।কারণ ওই যে বললাম , বাঙালি মেয়েদের ভয় বড়ই বেশি। ঝুঁকি নিতে চায় না। সে রকমই। আমার মোবাইল-এ একটি ম্যাসেজ আসলো একবার। ‘হ্যাপি হ্যাপি হ্যাপি হ্যাপি হ্যাপি হ্যাপি হ্যাপি হ্যাপি হ্যাপি হ্যাপি হ্যাপি হ্যাপি হ্যাপি হ্যাপি হ্যাপি হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ অসীমদা’...মন্টি , তারিখ : ০৬-১২-২০০৫, সময় : ০০ : ১১। মোবাইল নম্বর : <+৮৮০১৮৮-২৯০৪৬৫>

কে এই মন্টি? হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরের সাতবর্গের প্রদীপ রায়ের বড় মেয়ে স্নিগ্ধা রায়। প্রদীপ রায় চাকুরীজীবি। সন্তানদের বড় করেছেন পরিকল্পিতভাবেই। এই সাতবর্গের প্রদীপ রায়ের বড় মেয়ে স্নিগ্ধা রায়ের অনেক গল্প আমার ডায়েরিতে রয়েছে।

২০০৩ সালের ২৬মে স্নিগ্ধা আমার বাসায় এসে আমার দেখা না পেয়ে ছোট্ট একটি চিরকুট লিখে দিয়ে যায়। আমি স্নিগ্ধার চিরকুটটাকেও যতœ করে রাখি। কিন্তু কেন? তারও কারণ আছে , সেটা পরে বলা যাবে।

স্নিগ্ধা রায় যদি আমাকে তার কোনো কবিতা পত্রিকার সাহিত্য পাতায় ছাপাতে দিতো , বারবার বলতো , ‘আমাকে ভালো লাগা আর আমার কবিতা ভালো লাগা এক কথা নয়। তাই আমার কবিতার মান না থাকলে যদি ছাপেন , তবে অবশ্যই দায়ি থাকবেন।’ আমার পরিচিত মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো কবিতা লিখতো এই স্নিগ্ধা রায়ই। তারপরও খুব বিনয়ের সঙ্গে সে তার কবিতা ছাপতে দিতো। এ বিনয় সে সম্ভবত তার পরিবার থেকেই পেয়েছিল।

কুমিল্লার স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে আমি ধীরে ধীরে স্নিগ্ধার কবিতা দিতে শুরু করি। সাপ্তাহিক অভিবাদন ২১ নভেম্বর ২০০৩ এ ছাপে স্নিগ্ধার ‘তুমি কি আমাকে সাজাতে পারো প্রকৃতির মতো করে?’ কবিতাটি। স্নিগ্ধার এ কবিতাটি দৈনিক শিরোনাম-এর সাংবাদিক ও কবি সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজ-এরও একটি পছন্দের কবিতা। স্নিগ্ধার উচ্চারণে এ কবিতা তিনি শিরোনাম অফিসে অনেকবারই শুনেছেন।

স্নিগ্ধা রায়কে ভুলে যাওয়ার কোনো উপায়ই ছিলো না। উৎসবে-পার্বণে-ঈদে-পূজায়-বাংলা ইংরেজি নববর্ষে-জন্মদিনে --- স্নিগ্ধার কমপক্ষে একটি কার্ড আমার জন্য থাকতোই। এতটা সচেতন মেয়ে আমি জীবনে খুব কমই দেখেছি। স্নিগ্ধার ছোট্ট একটি চিরকুটেও ছড়িয়ে থাকতো কবিতার উপকরণ। আমারতো থাকার নির্ধারিত জায়গা নেই। জীবনে কাগজপত্রও হারিয়েছি প্রচুর। তাই অনেক কাগজপত্র রাখতাম দৈনিক শিরোনাম অফিসে সম্পাদক নীতিশ সাহার টেবিলের নিচের সেলফে , যেন ওখানে গিয়ে কেউ হাত না দেয়। একবার দু’তিনদিনের অঝোর বৃষ্টিতে কুমিল্লার দৈনিক শিরোনাম অফিসে উঠল হাঁটুজল। টেবিলের নিচের দিকে আমার সব কাগজপত্র ভিজে পঁচে যায়। ওখানেই ছিল স্নিগ্ধার চিরকুটগুলো। কারণ ওখানে যে পানি উঠবে , তা আমি ভাবিনি। বৃৃষ্টির ৪-৫ দিন পরে একটি কাগজের খোঁজে গিয়ে দেখি শুধু সাদা সাদা ফাংগাসের স্তুপ। দুঃখ পেলাম , কিন্তু দুঃখের কথা কাউকেই বলতে পারলাম না। একদিন বিনা ঘোষণায় হঠাৎ করে আমার গ্রামীণ ফোনের সিমটাও গেলো নষ্ট হয়ে। দৌঁড়ে গেলাম কুমিল্লা শহরের টেকনি ডট কম্পিউটার , কান্দিরপাড়ের আবদুল বাতেন বাবু ভাইয়ের কাছে। বাবু ভাই সাংবাদিক ইয়াসমিন রীমার ছোট ভাই। সময়ে সময়ে আমার খুব উপকার করেছেন। সিমটা দেখে বললেন , ভাই এটা নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন সিম তুলতে হবে ১০০ টাকা খরচ করে। পুরনো সিম-এর কোনো তথ্যই পাবেন না। হায় ! হারিয়ে গেল আমাকে পাঠানো স্নিগ্ধা রায়, নাহিদা নিঝুম, সুলতানা শেলী, স্বপ্না দেবনাথসহ আরও অনেকের অসংখ্য ম্যাসেজ। আর প্রায় দু’শত মোবাইল নম্বরতো গেলোই।

আমি বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে ইংরেজি কিছু লেখা লিখেছিলাম কবিতার মতো করে। ২০০৩ সালে এসে একদিন এগুলোকে খুঁজে একত্র করে স্নিগ্ধাকে দিলাম ফ্রেশ করে ক্যাপিটাল লেটার-এ একটি সাদা ডায়েরিতে কপি করে দিতে। স্নিগ্ধা দিনরাত কষ্ট করে সেসব লেখা কপি করে দিলে ওসব কম্পোজে দেই। অবশ্য আগেও কিছু কম্পোজে দিয়েছিলাম। কম্পোজ করে দিয়েছিল কিছু সাপ্তাহিক কুমিল্লার কাগজ-এর গ্রাফিক্সম্যান ও কবি জহির শান্তও। স্নিগ্ধার লেখা শেষ হলে পর সব কম্পোজে দেই। তারপর প্রিন্ট এবং আমার জলরঙের কাজ। শেষে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমীতে প্রদর্শনী। প্রদর্শনী উদ্বোধন করেছিলেন দৈনিক শিরোনাম সম্পাদক নীতিশ সাহা। প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন স্বপ্না দেবনাথও। কিন্তু তখন কোনো কারণে স্নিগ্ধা আসতেই পারেনি , অথচ সে আমার প্রদর্শনীর বিষয়ে এত ভূমিকা রেখেছে। এসব লেখার বিনিময়ে স্নিগ্ধাকে আমি কিছুই দিতে পারিনি। সম্ভবত এ ঋণ স্বীকারের জন্যই আজ স্নিগ্ধাকে নিয়ে এ লেখাটি হচ্ছে।

স্নিগ্ধা চমৎকার গানও গায়। তার হারমোনিয়াম বাজিয়ে গাওয়া ‘জলে ভাসা পদ্ম আমার শুধুই ছলনা’ গানটি এখনও যেন কানে লেগে আছে। ২০০২ সালের শেষের দিকে স্বপ্না দেবনাথের দাদা প্রদীপ দেবনাথের বরযাত্রায় যাওয়ার সময় ‘গীতবিতান’ সঙ্গে নিয়েছিলাম। দাদার শ্বশুরবাড়ি ছিলো কিশোরগঞ্জে। ইঞ্জিনবোটের ছাদে বসে যেতে যেতে এবং আসতে আসতে সারাপথে আমি আর স্নিগ্ধা রায় রবীন্দ্র সংগীত গাইতে গাইতে পথ চলেছিলাম। আমি চেয়েছিলাম স্নিগ্ধা উঠে আসুক। লিখুক। পড়–ক। আঁকুক। গেয়ে যাক এ দেশের শত শত গান। কিন্তু বাঙালি নারীর ভয় বেশি। তাই তাকে সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণে আমি বারবার পাঠালেও শেষ পর্যন্ত সাংবাদিক হবে , এমন ত্যাগী সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি স্নিগ্ধা । রিপোর্টিং বিষয়ে স্নিগ্ধা একাধিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিল । প্রথম তাকে পাঠিয়েছিলাম বিসিডিজেসি-র ‘বেসিক জার্নালিজম ট্রেনিং ফর ওমেন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণে। ২১ থেকে ২৫ মার্চ ২০০৪-এ , এ প্রশিক্ষণ কুমিল্লা রোটারী ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই কর্মশালার প্রায় ৩০জন অংশগ্রহণকারী মেয়ের মধ্যে আমার পাঠানো মেয়েই ছিল ১৮জন এবং তাদের অধিকাংশই হিন্দু পরিবারের মেয়ে।

কুমিল্লা শহর থেকে প্রকাশিত অখাদ্য-কুখাদ্য প্রকাশনাসহ প্রায় সবই স্নিগ্ধাকে পড়তে দিতাম। চিত্রকলা-যৌনবিজ্ঞান-হুমায়ুন আজাদের নারী-তসলিমা নাসরিনের ‘ক’---ইত্যাদি সব। সে তখন চাওয়ার পরও সংগ্রহ করে দিতে পারিনি হুমায়ুন আজাদের ‘পাক-সার-জমিন-সাদ-বাদ’ গ্রন্থটি। বইটির জন্য সে বহুবার আমার কাছে এসেছিল। স্নিগ্ধা পড়েছে সমাজকল্যাণে। তাই সব বিষয়ে তাকে পড়তে বলেছি। একটি বিষয় পড়ে তো আর বেশি এগোনো যাবে না। স্নিগ্ধা রায় সত্যি অপূর্ব মেয়ে। যার একটুখানি কাব্যাসক্তি আছে , সেই কাব্যনেশাকারীর স্নিগ্ধাকে না ভালো লেগেও উপায় থাকবে না। চায়ের দোকান না হলে যেমন আড্ডা জমেনা এবং হয় না পরচর্চাও ।

স্নিগ্ধার মতো বিশুদ্ধ নারীর হৃদয়স্পর্শ না করে কবিতা লিখলে মনে হয় কবিতা সব অশুদ্ধ হয়ে যাবে। কাব্যমাদকতায় ভরপুর তার চোখ। এমন মেয়েটি সাংবাদিক হতে চাইলো না বলে খুবই দুঃখ পেয়েছিলাম। বাঙালী নারীরা কেন এত ভয় পায়? আসলে এখন সাংবাদিকতার বড়ই দুঃসময়। কেননা এ পেশার নিশ্চয়তা এখনো নেই। তবে এটা নিশ্চিত , এ দুঃসময়ে সুন্দর মনের উচ্চশিক্ষিতা মেয়েরা সাংবাদিকতায় এগিয়ে এলে সাংবাদিকতাও অনেকদূর এগিয়ে যাবে। কেটে যাবে এ পেশার এমন অনিশ্চয়তাও। আমারতো এমনটাই মনে হয়। বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও তো সে কথা অনেকটা প্রমাণ করেই দিয়েছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.