নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

এত শত ছবি তুললেও শ্রাবন্তীর একটি ছবিও তোলা সম্ভব হয়নি

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:২৬



জসীম উদ্দিন অসীম

ছোটবেলায় একবার আমার সিনেমায় অভিনয় করার গভীর ইচ্ছা হলো। তখনও আমি কিশোর। ‘ছায়াছন্দ’ পত্রিকার এক সাংবাদিক তখন সিনেমায় আমার অভিনয় করার ইচ্ছেকে খুব বেশী গুরুত্ব দিলেন। কিন্তু আমার বাবা আমাকে তখন সিনেমায় অভিনয় করার ব্যাপারে কোনো উৎসাহই দিলেন না। পরে আমার নেশা চলে গেল সিনেমা তৈরী করার দিকে।

১৯৯১ সাল। আমি তখন ঢাকায় অনার্সে ভর্তি হয়েছি। বাংলা বিভাগে তখন আমাদের সাথে পড়তো একটি মেয়ে। শ্রাবন্তী। শ্রাবন্তী রায়। তাকে দেখে আমার খুবই ইচ্ছে হলো তার মুখের শত শত ছবি তুলে ফেলতে।

আমার সে ইচ্ছেকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্য তখন একটি ফিক্সড ল্যান্স ক্যামেরা বইয়ের ব্যাগের মধ্যে নিয়ে নিয়মিত ক্লাসে যেতে লাগলাম। এমনকি শ্রাবন্তীর সঙ্গে পাশাপাশি বসেও ক্লাস করতে লাগলাশ। কিন্তু শ্রাবন্তীর যে একটি ছবি আমি তুলতে চাই , সে কথাটি তাকে বলতে পারেনি কখনো।

১৯৯২ সাল। আমি তখন থিয়েটার করলেও সিনেমা নির্মাণের ভয়ানক নেশায় পেয়েছে। সারাদিন পাবলিক লাইব্রেরী,জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র পাঠাগারে অনেক বইয়ের মধ্যে অধিকাংশই সিনেমা বিষয়ক বইপত্র পড়ছি।

তখনই একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম ছবি তুলতে সিলেট যাবো। একদিন রাতে কমলাপুর থেকে ট্রেনে করে পরদিন সকালে সিলেট পৌঁছলাম। শাহজালাল ও শাহপরানের মাজারের ছবি থেকে শুরু করে সুরমা ব্রীজ। সুরমা ব্রীজে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভরা সুরমার ছবি তুলি। কুমিল্লা ফেরার আগে এক ছিনতাইকারীর মুখোমুখি হই। চতুর এক ক্যামেরা ছিনতাইকারী। আমার কিছু বুদ্ধি ও সিলেটের এক পরিবহন শ্রমিকের সহায়তায় তখন আমি সঙ্গের ক্যামেরাটি রক্ষা করি। শুধু রক্ষা নয়। খুব শক্ত করে ক্যামেরাটিকে আমি তখন আমার শরীরের সঙ্গে বেঁেধ ফেলি। তার পরদিন কুমিল্লায় ফিরে এসে ক্যামেরাটির সেই বাধঁন খুলি। ১৯৯৬ সাল থেকে আমি নিয়মিতভাবে কুমিল্লায় থাকতে শুরু করি। সে বছরই আমি কুমিল্লার সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ এ মাসিক বেতন ভিত্তিতে সাংবাদিকতার কাজ শুরু করি।

১৯৯৭ সাল। ‘আমোদ’ অফসেটে ছাপা হবে। খুবই ভালো লাগলো বেশি ছবি ছাপানোর সুযোগ বেশি পাবো বলে। ‘আমোদ’-এর প্রথম সংখ্যার জন্য ছবি তুলতে গেলাম চকবাজারে। তখন চকবাজারে দীর্ঘদিন যাবৎ একটি কালভার্ট নির্মাণাধীন থাকার কারণে যানজট তীব্র হতো। জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছিল। সেই কালভার্টের সংবাদ সংগ্রহের জন্য প্রথমে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লাতে যাই। তারপর চকবাজারের সেই কালভার্টের ছবি তোলার সিদ্ধান্ত নেই। বাহন ছিল আমার প্রিয় সেই লাল সাইকেলটি , যা এখন আর নেই।

সেই কালভার্টের ছবি তুলতে গিয়ে কয়েকটি বিল্ডিংয়ের ছাদে ওঠেও ভালো কোন সুযোগ না পেয়ে হতাশ হলাম। যদিও আমার সঙ্গে ছিল একটি সিঙ্গেল ল্যান্স রিফ্লেন্স ক্যামেরা ও তার সঙ্গে ৮০-২০০ মি.মি.-এর জুম ল্যান্স। পরে এক সময় অন্য আরেকটি বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে ছবি তোলার ভাল সুযোগ পেলাম। কিন্তু ছবি তুলতে গিয়ে অল্পের জন্য বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যাইনি। খুব বড় একটি বিপদের সামনে থেকে সেদিন আমি রক্ষা পেয়েছিলাম।

১৯৯৬ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সময়ে আমি ‘আমোদ’ ছাড়া সাপ্তাহিক ‘লাকসামবার্তা’ , ‘নিরীক্ষণ’ ও দৈনিক ‘রূপসী বাংলা’য় কাজ করি। ১৯৯৯ সালে ঢাকার পত্রিকা দৈনিক ‘আল-আমিন’-এ আমি সংবাদ ও ছবি পাঠাতে শুরু করি। দৈনিক ‘আল-আমিন’ আমার সংবাদ ছবি ছাপালেও কোনো আর্থিক সম্মানী দিত না। এ বিষয়ে একদিন আমি সেই পত্রিকার বার্তা সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আর্থিক সম্মানী প্রদানের বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে দৈনিক ‘আল আমীনে ’ সংবাদ ও ছবি পাঠানোর বিষয়ে আমার আর তেমন ইচ্ছে কাজ করেনি। ২০০০ সালে সেই পত্রিকার সার্কুলেশন ম্যানেজার কুমিল্লায় আমার বাসায় এসে সংবাদ-ছবি পাঠানোর বিষয়ে অনুরোধ করেন। কিন্তু আমি শৌখিন সাংবাদিকতা করতে কখনোই ইচ্ছুক ছিলাম না। ২০০০ সালে কুমিল্লার সাপ্তাহিক ‘নিরীক্ষণ’ পত্রিকায় আমি সহকারি সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করি। এ কাগজটিতেও আমার অনেক লেখা ও ছবি ছাপা হয়। এখন আমি দৈনিক ‘শিরোনামে’র জন্য ছবি তোলার কাজ করি। ২০০১ সালে এসে আমার মনে পড়ে বিগত দিনের অনেক কথাই। যে শ্রাবন্তুী রায়ের ছবি তোলার জন্য আমি একসময় এত পাগল ছিলাম , সে আমি বিগত বছরগুলোতে এত শত ছবি তুললেও শ্রাবন্তীর একটি ছবি আজও তোলা সম্ভব হয়নি। এমনকি গোমতি নদীর পাড়ের একটি মেয়েকে পেয়ে আমি সেই উর্বশী শ্রাবন্তীর কথা দিব্যি ভুলে গেছি। গোমতিবতী সে মেয়ের নাম ঈশিতা। ফারজানা কবির ঈশিতা। আমার জীবনসঙ্গিনী। আমি একটু আনমনা হলেই ঈশিতা আমাকে ক্ষ্যাপানোর জন্য বলে , কী রিমঝিমের বাবা , তোমার কি সেই শ্রাবন্তীর কথা মনে পড়েছে ? উল্লেখ্য যে , আমরা এখনও সন্তান না নিলেও সন্তানদের নাম বিয়ের পরপরই রেখে ফেলেছি। সেই সূত্রে আমার ছেলের নাম স্বপ্ন এবং মেয়ের নাম রিমঝিম।

রচনা : অক্টোবর , ২০০১ , কুমিল্লা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৩২

লেখোয়াড় বলেছেন:
শ্রাবন্তীর ছবি না তুলে ভালই করেছেন।
না হলে তাকে এতদিন ভুলেই যেতেন।

ধন্যবাদ।

২| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৩৭

সুমন কর বলেছেন: আপনার স্মৃতিচারণ ভাল লাগল।

৩| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:২১

শায়মা বলেছেন: থাক আর শ্রাবন্তীর কথা ভেবে কাজ নেই ভাইয়া। ঈষিতা নামটা শ্রাবন্তীর চাইতে অনেক বেশি সুন্দর!!!

৪| ১৬ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৬:১০

জসীম অসীম বলেছেন: কিন্তু ঈশিতা এখন নেই। একদিন সে গ্যালাক্সি আবিষ্কারের মতো করেই আবিষ্কার করলো ---, --- হলে স্বর্গ কিনতে , স্বর্গ গড়তে পারা যায়। বুঝতে পারলো এ পৃথিবীর সবচেয়ে দামী বস্তু--। কিন্তু আমার--- ছিল না। শারদীয় পূর্ণিমা দেখে তখন আমি পাগলই হয়ে যেতাম। একদিন এসবে ঈশিও সাড়া দিতো। কিন্তু একদিন সে গ্যালাক্সি আবিষ্কারের মতো করেই আবিষ্কার করলো...--------- ঈশিতা এখন নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.