নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার ছাত্রশিবির করাকালীন ডায়েরি পড়–ন এবং মন্তব্য করুন::

১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:৫৪



জসীম উদ্দিন উদ্দিন:

ভূমিকা: আমি শৈশবে ছাত্রশিবির করেছিলাম। পরে তা ছেড়ে করেছিলাম ছাত্র ইউনিয়ন। এই ডানে-বামে ছাত্ররাজনীতি করতে গিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতাও হয়েছিল। বিশেষ করে আমি লক্ষ্য করেছিলাম , ছাত্রশিবির আমাদের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্নই করে রেখেছিল।

ছাত্র ইউনিয়ন করতে এসে প্রথম জানি কৃষকনেত্রী ইলামিত্র, কৃষকনেতা মনিসিংহের নাম। ছাত্র ইউনিয়নই বলে দিয়েছে জাহানারা ইমাম কে? এদেশে তার অবদান কতটুকু। কারা এখনও এদেশে নিয়াজির উত্তরসূরী। উদীচী করার সময় কবি মুকুন্দ দাস রচিত বৃটিশ বিরোধী সেই রণসংগীতটি প্রায়ই আমরা গাইতাম-‘ভয় কি মরণে...’। দু:খজনক , ছাত্রশিবির এসব সংগীতভান্ডার থেকে আমাদের বিচ্ছিন্নই করে দিয়েছিল। কোনোদিনও বুঝতে দেয়নি বাংলাদেশে সত্যেন সেন-এর কী অবদান আছে। সত্যি-ছাত্রশিবির আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। ছাত্রশিবির আমাদের মুগ্ধ রেখেছিল শুধু ছাত্রশিবিরের প্রতিই। শৈশবে রাখা আমার ছাত্রশিবিরের ডায়েরিই তা বলে দেয়। অবশ্য ১৯৮৭-১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আমার রাখা সেসব ডায়েরি আমি হারিয়ে ফেলেছি।

যুদ্ধে বা রাজনীতিতে , এমনকি অর্থনীতিতেও , সর্বশেষ প্রেমেও ‘স্ট্র্যাটেজি’ বলে একটি কথা আছে , যার বাংলা অর্থ হিসেবে অনেকটা কৌশলগত কারণ বা অবস্থানকেই বুঝায়। রাজনীতিতে রয়েছে এর চরম ব্যবহার। যখন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির করেছি আমি কিংবা পরে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন , তখন সেই উভয় বলয়েই এই কৌশলগত অবস্থানের ব্যবহার দেখেছি আমি। ছাত্রশিবির তেমনি একবার এক বিভাগীয় শিক্ষাশিবির আয়োজনে কৌশলগত অবস্থান নিয়েছিল । বিভাগীয় শিক্ষাশিবিরটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল কুমিল্লারই এক গ্রামে। সেই গ্রামে এসেছিলেন চট্টগ্রামসহ সারাদেশের অনেক নামকরা জামায়াত নেতা। বিষয়টিকে সরলীকরণ করে দেখার বিষয় মোটেও নেই। কারণ এখানে মস্তিষ্কের চূড়ান্ত ব্যবহার ছিল। আর এ বিষয়টি নিয়ে লেখার পেছনের কারণ , এটিও একটি বিশেষ ধরনের রিপোর্টিংই , তাই।

১৯৮৯ সালের কথা। আমি তখন এসএসসি ফলপ্রার্থী এবং তুঙ্গে ছাত্রশিবির করি। এ সংগঠনের একনিষ্ঠ একজন কর্মী হিসেবে তখনই একদিন কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলা থেকে আমার ডাক এলো একটি পরীক্ষায় অংশ নিতে ।

গেলাম সেখানে। গিয়ে দেখলাম আমার মতো আরও প্রায় একশত শিবিরকর্মী সেখানে উপস্থিত হয়েছে , যারা সদ্য এসএসসি কিংবা দাখিল পরীক্ষা দিয়েছে। স্থানটি ছিলো কুমিল্লার দেবিদ্বার সুজাত আলী কলেজের উত্তর পাশের বিজ্ঞান বিভাগের একটি কক্ষ। সেখানে ছাত্র শিবিরের সদস্য পদপ্রাপ্ত মোস্তফা এবং অন্যান্য সাথী পদপ্রাপ্তরা কয়েকটি সূরা পাঠ করে অর্থ ব্যাখ্যা করলেন। কয়েকজন কর্মী গজল শোনালেন। তারপর আমরা যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি , তাদের কাছ থেকে তারা ‘সাধারণ জ্ঞান , গণিত , ইংরেজি ও ইসলাম’ বিষয়ে একটি লিখিত পরীক্ষা নেন। পরীক্ষা শেষে ছাত্র শিবির কুমিল্লা জেলার সভাপতি আবুল বাশার মোটর সাইকেলে করে সেখানে এলেন। তার উপস্থিতিতে আমাদের খাতা দেখা হলো এবং ঘোষণা করা হলো লিখিত পরীক্ষার ফলাফল। একশত ছাত্রের প্রতিযোগিতায় আমি তৃতীয় হলাম এবং (১) ইসলামের হাকীকত, (২) আল্লাহর পথে জিহাদ ও (৩) এসো আলোর পথেসহ অনেক বইপত্র এবং ...পুরস্কার পেলাম। তারপর প্রায় একশতজন ছাত্র থেকে আমাদের ৩ জনকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় শিক্ষা শিবিরে যাওয়ার জন্য নির্বাচন করা হলো। কিন্তু শিক্ষা শিবিরে যাওয়ার দিন বিভিন্ন কারণে পরীক্ষায় ১ম ও ২য় হওয়া বাকি ২ জন ছাত্র যেতে পারলো না। শেষ পর্যন্ত আমি একাই উপজেলা ছাত্র শিবির সভাপতি মোস্তফার সঙ্গে শিক্ষা শিবিরে গেলাম।

১৯৮৯ সালের আমার সেই শিক্ষা শিবিরের ডায়েরি এবার পড়–ন এবং পড়ে মন্তব্য করুন::::::::::::

‘‘ কুমিল্লার দেবিদ্বার থেকে উপজেলা ছাত্রশিবির সভাপতি মোস্তফা এবং আমি বাসে উঠলাম। আমি বাসভাড়া দেয়ার আগেই মোস্তফা ভাই আমাদের উভয়ের ভাড়াই দিয়ে দিলেন। বাসে করে আমরা প্রথমে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে গেলাম। তারপর সেখান থেকে বাস বদল করে আরেক বাসে চড়লাম ঢাকার পথে সৈয়দপুর যাবো বলে। জোহরের নামাজ দেবিদ্বারেই পড়া হয়েছিল। সৈয়দপুর নেমেই আছরের নামাজ পড়লাম। এবারও বাস ভাড়া দিলেন মোস্তফা ভাই। আমাকে তিনি ভাড়া দিতেই দিলেন না।

নামাজ শেষে আমরা সৈয়দপুর স্টেশন থেকে কালাকচুয়া মাদ্রাসায় গেলাম। পথে এক উঁচু মাপের শিবির নেতার সঙ্গে দেখা। মোস্তফা ভাই কথা বললেন এবং আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। নেতা বললেন , কুমিল্লা জেলার অবস্থান চট্টগ্রাম বিভাগের মাঝামাঝি বলেই বিভাগীয় শিক্ষা শিবির কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর অন্যান্য রাজনৈতিক দলের হামলা থেকে রক্ষার জন্যই শহর থেকে দূরের এই গ্রামেই বিভাগীয় সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এটি একটি কৌশলগত কারণ। কালাকচুয়া মাদ্রাসায় আমাদের শিক্ষাশিবির অনুষ্ঠিত হবে , এ কথা মোস্তফা ভাই আমাকে আসার আগ পর্যন্ত একবারের জন্যও বলেননি। বলেছেন , তার ওপর বিশ্বাস রেখে সামনে এগিয়ে যেতে। বলেছেন , এটিও একটি কৌশলগত কারণ। গ্রামের এক প্রাকৃতিক পরিবেশে এ মাদ্রাসা অবস্থিত। সেখানে আমরা ৩ দিনের প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম , সঙ্গে ছিল সংক্ষিপ্ত বেডিংপত্র।

সন্ধ্যা হতেই কালাকচুয়া মাদ্রাসায় আরও অসংখ্য ছাত্র উপস্থিত হলো। তাদের সবাই ছিল এসএসসি ও দাখিল ফলপ্রার্থী। রাত ১০টা পর্যন্ত সময়ে প্রায় ২৫০ জন ছাত্র উপস্থিত হলো গ্রামের সেই মাদ্রাসায়।

এ শিক্ষা শিবির বিভাগীয় শিক্ষাশিবির। তাই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-নোয়াখালী-ফেনী-লক্ষ্মীপুর-কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-চাঁদপুর-হবিগঞ্জ-মৌলবীবাজার-সিলেট থেকেও অনেক মেধাবী ছাত্র এসেছিল। রাতে মাদ্রাসার বিভিন্ন কক্ষে মাদুর বিছিয়ে , ছোট ছোট চার্জ লাইট জ্বেলে আমাদের ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। রাত ১১টায় আমাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। খাওয়া শেষে যার যার কক্ষে আমরা ঘুমোতে চলে গেলাম। পরদিন ভোর ৪টা ১৫ মিনিটে কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে আমাদের। ঘুম থেকে জেগে দেখি শিবিরের এক উচ্চপদস্থ নেতা হ্যান্ড কলিংবেল টিপছেন এবং আমাদের ঘুম থেকে জাগার জন্য বিনয়ীভাবে ডাকছেন। একে একে আমরা সবাই ঘুম থেকে জেগে উঠলাম।

ঘুম থেকে উঠে ওজু করতে যখন পুকুরে যাচ্ছি , তখন দেখলাম, কয়েকজন শিবিরকর্মী টুথ পাউডার এবং টুথপেস্ট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ কেউ কর্মীদের কাছ থেকে টুথপাউডার নিলেন। কিন্তু আমি টুথপেস্ট ও টুথব্রাশ নিয়েছিলাম।

ওজু করে ফজরের নামাজ আদায় করলাম। নামাজ শেষে নিজ কক্ষে যাওয়ার পথে দেখি শিবির নেতারা দৈনিক কর্মসূচি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রত্যেককে একটা করে কর্মসূচিপত্র বিতরণ করলেন। কর্মসূচিপত্রে চোখ রেখে খুব দ্রুত পেন্ট-শার্ট ও টুপি পরে এবং খাতা-কলম নিয়ে রীতিমত স্কুলের ছাত্রের মতো চলে গেলাম অডিটরিয়ামে। অডিটরিয়াম দেখে মন আনন্দে ভরে গেল। সারা মঞ্চেই নান্দনিক অসংখ্য কারুকাজ। মঞ্চের দিকে তাকিয়ে দেখি বড় বড় অক্ষরে খুব সুন্দর হস্তলিপিতে নিবিষ্ট একটি ব্যানার ঝুলানো হয়েছে। এতে লেখা রয়েছে , “ এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থীদের চট্টগ্রাম বিভাগীয় শিক্ষা শিবির: ১-২-৩ জুলাই , ১৯৮৯।। আয়োজক:বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।।”

সব ছাত্র খাতা-কলম নিয়ে অডিটরিয়ামে এলো। মঞ্চে বসে ছিলেন ৪ জন নেতা। সামনের টেবিল ছিল সাদা ক্লথে আচ্ছাদিত। সবুজ রঙের শিবির পরিচয়পত্র [বেইজ] ও একটি কৃত্রিম গোলাপও টেবিলে রাখা ছিল। গোলাপের গঠন এত সুক্ষ্ম যে , কৃত্রিম হলেও প্রথমবার দেখে বুঝতে পারা কঠিন।

শিক্ষা শিবিরের অনুষ্ঠান কোরআন তেলোয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়ার পর একজন একটি গজল গাইলেন। কোরআন তেলোয়াত ও গজলের সুরে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। তারা চর্চা করেছেন বটে। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করলেন শিবির পরিচালক।

৬.৪১ মিনিটে শুরু হলো দরসে কোরআন। পাঠ ও ব্যাখ্যা করলেন অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। তিনি বললেন , ‘পথের বুকে যদি কাঁটা থাকে , আর এ কাঁটা যদি দূরে কোথাও ফেলে না দেয়া হয় , তাহলে পথিক যেমন কাটাবিদ্ধ হবে , তেমনি কেউ যদি ঝগড়া বিবাদকে ঘৃণা না করে , তাহলে সেও তার শাস্তি ভোগ করবে।’ বক্তৃতার পর তার আলোচনার উপর আমরা অনেক প্রশ্ন করলাম। তিনি আমাদের সব প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিলেন।

৮.০১ মিনিট বাজতেই ১ ঘন্টা নাস্তার বিরতি পেলাম। নাস্তা খাওয়ার উদ্বোধন করলেন কুমিল্লা জেলা শিবির সভাপতি আবুল বাশার।

আবার কর্মসূচি অনুযায়ী অডিটোরিয়ামে গেলাম। এবারে বক্তৃতা করলেন চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি ফরিদ উদ্দিন খান। তার বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘দাওয়াতে দ্বীন’। তিনি আমাদের বললেন , (১) দাওয়াত-অর্থ আহবান করা-এর ইংরেজি :INFORMATION (২) দাওয়াত কেবল ব্যক্তির জন্য নয়, রাষ্ট্রের জন্যও ফরজ, (৩) দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিস্বভাব পরিশুদ্ধ হয়, (৪) দাওয়াতী কাজ সর্বোত্তম কাজ, (৫) রোগ দেখে যদি ডাক্তার পালায় , তাহলে রোগী কখনো সুস্থ হয় না। ঠিক তেমনি দাওয়াতী কাজ দেখে চলে গেলে ইসলামী জাতি ও ইসলামী সংগঠন স্থায়ী হবে না।

তার আলোচনা শেষে তাকে অনেকের মতো আমিও দু’টি বিশেষ প্রশ্ন করি। তিনি তার সুন্দর উত্তর দেন।

তারপর কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্রাম পেলাম ২০ মিনিট। সবাই চলে আসলাম যার যার কক্ষে। আমার কক্ষে আমন্ত্রিত ছিল কক্সবাজারের ২ জন শিবির নেতা। তাদের কাছ থেকে সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারের শিবিরের অবস্থান বিষয়ে অনেক অজানা কথা জানলাম।

আবার গেলাম অডিটোরিয়ামে । এবারে হলো গ্র“প আলোচনা। গ্র“প আলোচনায় আমরা কুমিল্লার ছাত্ররা একটি গ্র“পে বসলাম। একজন ‘সাথী’ এসে আত্মগঠন ও কর্মীগঠন বিষয়ে বুঝালেন। তারপর আবার বিশ্রামের পালা। বিশ্রামের পরে গোসলের পর্ব। লুঙ্গি-তোয়ালে নিয়ে গোসল করতে পুকুরে যাওয়ার পথে শিবিরের একজন সাথী আমাদের প্রত্যেকের হাতে হাতে সাবান বিতরন করলেন। সাবান নিয়ে মাদ্রাসার পূর্ব দিকের একটি পুকুরে আমরা গোসল করতে গেলাম। প্রায় আড়াইশ ছাত্র আমরা , যখন একসঙ্গে পুকুরে সাঁতার কাটতে লাগলাম , তখন পুকুরের পানিতে যেন জেহাদী জোশে সমুদ্রের তরঙ্গ সৃষ্টি হলো। তরঙ্গের আঘাতে পুকুরের পাড়ের কিছু কাঁচা অংশও ভেঙ্গে পড়ে গেল। দুই-আড়াইশ যুবককে এর আগে আমি কোনোদিন একসঙ্গে একটি পুকুরে গোসল করতে দেখিনি।

জোহরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করে মাদ্রাসার বারান্দায় খেতে বসলাম। মাদ্রাসার দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৮০ গজ। মেঝেতে মাদুর বিছানো হলো। দু’পাশে বসলাম আমরা। প্রতি লাইনে প্রায় ১২৫ জন করে নেতা-কর্মী বসেছিলাম। আমাদের মাঝখান দিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের খাওয়া নিয়ে হাঁটাচলারও পথ রাখা হলো।

খেতে আসার আগেই স্বেচ্ছাসেবক ভাইয়েরা প্রায় ৩০০ প্লেটে খাবার সাজিয়ে রেখেছিলেন। আমরা বসার সঙ্গে সঙ্গে তা বিতরণ করলেন। বসেছিলাম উত্তর-দক্ষিণে লাইন করে। উত্তর দিক থেকে প্লেট বিতরণ শুরু হলো। ১ম ব্যক্তি ২য় ব্যক্তির হাতে ২য় ব্যক্তি ৩য় ব্যক্তির হাতে ৩য় ব্যক্তি ৪র্থ ব্যক্তির হাতে দিতে দিতে খাবার পৌঁছে গেলো দক্ষিণ প্রান্তের শেষ ব্যক্তিটির হাতেও। এ দৃশ্য থেকেও শেখার বিষয় ছিল। সবাই খাওয়া পাওয়ার পর একজন শিবির নেতা খাওয়া উদ্বোধন করলেন। দু’সারির মধ্যবর্তী পথে স্বেচ্ছাসেবক ভাইয়েরা ভাত-তরকারি-ডাল-মরিচ-পানি ও লবণ নিয়ে আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিতরণ করলেন। খাওয়ার পর নিজ নিজ কক্ষে ফিরে এসে বিশ্রাম করলাম আমরা। তারপর খাতা-কলম নিয়ে আবার হলে অডিটোরিয়ামে গেলাম। আমরা বক্তাদের একটার পর একটা বক্তৃতা শুনে শুনে নোট করতে থাকলাম।

এবারে মঞ্চে এলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ভিপি ও কার্যকরী পরিষদের সদস্য রেজাউল করিম। তিনি আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। তাকে মঞ্চে দেখে গর্বে বুক ভরে গেল। তার বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘ইসলামী ছাত্র শিবির একটি স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’। সুন্দর এক বক্তৃতা তিনি আমাদের উপহার দিলেন। তার বক্তৃতা শেষে আমরা মসজিদে গিয়ে আছরের নামাজ পড়লাম। রেজাউল করিমের সঙ্গে তখন আবার ব্যক্তিগতভাবে কথা হলো আমার। তিনি বলেন , জীবন ব্যক্তিগত ভোগের জন্য নয়। মানুষের জন্য উৎসর্গের জন্যই জীবন।

নামাজ শেষে আবার অডিটোরিয়ামে এলাম। শুরু হলো উপস্থিত বক্তৃতা। এ পর্ব শেষ হলে আমরা আবার নিজ নিজ কক্ষে ফিরে এলাম। বিশ্রাম নিলাম। মাগরিবের নামাজ শেষে আবার অডিটোরিয়ামে এলাম। মঞ্চে এসে বক্তৃতা দিলেন দেলওয়ার হোসেন। বক্তৃতার বিষয় ছিলো ‘ইসলামী আন্দোলন দেশে দেশে’। তিনি বিশ্বের ইসলামী রাজনৈতিক রূপরেখা আমাদের সামনে তুলে ধরলেন এবং বিশ্বের অনেক দেশের ইসলামী সংগঠনের নাম জানিয়ে দিলেন। তার বক্তৃতার শেষে আমাদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন তিনি। তারপর এশার নামাজ শেষ করে ভাত খাই। রাত ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে যাই আবার।

পরদিনও প্রথম দিনের মতো খুব ভোরে কলিং বেল-এর শব্দ ঘুম ভাঙ্গলো আমাদের। উঠেই ওজু করে নামাজ পড়লাম। তারপর প্রত্যেকে দৈনিক কর্মসূচি পেলাম। সহীহ কোরআন তেলাওয়াত এর মধ্য দিয়ে দৈনিক কর্মসূচি শুরু হলো। তারপর সূরা ‘সফ’ এর অর্থসহ বিশ্লেষণ করলেন লক্ষ্মীপুর জেলার শিবির সভাপতি মোঃ আলাউদ্দিন।

এ পর্বের পর নাস্তা হলো বিরানী দিয়ে। কুমিল্লা জেলা সভাপতি হ্যান্ড মাইক দিয়ে বললেন , যাদের বিরানী খেতে অসুবিধা রয়েছে , তারা অফিসে চলে আসুন বিকল্প খাবারের জন্য। চিকিৎসা বিভাগ থেকে বিনামূল্যে ওষুধপত্র দেয়ারও ব্যবস্থা ছিল । আমরা প্রতিনিধি ফি দিয়েছিলাম জনপ্রতি ৪৫/- টাকা করে। বিনিময়ে সমস্ত খরচ বহন করছিলেন শিবির কর্তৃপক্ষই। বিশেষ করে ডাক্তার দেখে অবাকই হয়েছিলাম। নাস্তা শেষে গ্র“প আলোচনা হলো। তারপর আবার বিশ্রাম। বিশ্রাম শেষে আবার হলে গেলাম। বক্তৃতা দিলেন , অধ্যক্ষ মফিজুর রহমান। বিষয় ছিল-‘শাহাদাত ছিল কাম্য যাদের’। তার একদম সাধারণ চেহারা ও পোশাক দেখে ভাবিনি তিনি এত মেধাবী হবেন। তার কণ্ঠও ছিল মোহনীয়। তিনি এছাড়াও ‘মানবকূলের শেষ নিবাস জান্নাত বা জাহান্নাম’ বিষয়েও আলোচনা করেন। সেদিনের শেষ কর্মসূচি ছিল ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী। ‘আফগান জিহাদ’ বিষয়ক সিরিজ ভিডিও চিত্র দেখে বুঝলাম রাশিয়ার সৈনিকরা আফগানিস্তানের অসহায় মুসলমানদের উপর কী নির্মম নির্যাতনই না করেছে।

কর্মসূচির তৃতীয় দিনের মজার পর্ব ছিলো সাধারণ প্রশ্নোত্তরের পালা। এ পর্বে কেউ কেউ হাস্য রসাত্মক প্রশ্নও করেছিল। তারপরের একটি পর্বের নাম ছিল ‘এহতেছাব’। এ পর্র্বে নেতারা তাদের সীমিত ত্র“টিগুলোর জন্যই হাতজোড় করে কস্শা ভিক্ষে চাইলেন। আমিতো রীতিমত অবাক। এত সেবা দেয়ার পরও আরও সেবা না দিতে পারার জন্য ক্ষমা চাইলেন এবং একজন নেতা আত্মসমালোচনা করে নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেন , এমনকি কেঁদেও দিলেন। তার কান্না দেখে অনেকেই কেঁদে দিল। সবশেষে ছিলো গ্র“প ভ্রমণ। গ্র“প ভ্রমণে কুমিল্লার ক-K-ALI TRANSPORT'' এর কয়েকটি বাস বরাদ্ধ ছিলো। বাসে করে আমরা কুমিল্লা শহরের উপকণ্ঠের কোটবাড়িতে শালবন বিহার-জাদুঘর-টিচার্স ট্রেনিং স্কুল ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড) পরিদর্শন করি। তারপর বার্ডের হযরত আবদুল কাদের জিলানী মসজিদে আমরা আছরের নামাজ আদায় করি।

এরপর বিদায়। এত দুঃখের বিদায় , বর্ণনা করা কঠিন। যাদের সঙ্গে এত সম্পর্ক হয়েছে , এ জীবনে তাদের হয়তো আর কোনোদিনও দেখবো না , এই ভেবে মন খুবই খারাপ হয়।

কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে আমার এক জোড়া নতুন বাটা স্যান্ডেল হারানো গিয়েছিলো। কিন্তু আমি তা খোঁজ করার আগেই একজন শিবির নেতা হ্যান্ড মাইক দিয়ে এ তথ্য প্রচার করেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার স্যান্ডেল ফেরৎ পাই। এত চমৎকার ব্যবস্থাপনা আমি তার আগে আর কখনো। তিনদিনের এ শিক্ষা শিবিরে পাওয়া শিক্ষা আমার ভবিষ্যৎ জীবনে পাথেয় হয়ে থাকবে। শহীদী রক্তের সিঁড়ি বেয়ে ইসলামী বিপ্লবকে সফল করার আমার পবিত্র স্বপ্নকে বিফল হতে দেবোনা কোনোদিনও।

১০ জুলাই ১৯৮৯ , খয়রাবাদ , গংগামন্ডল , দেবিদ্বার , কুমিল্লা। ’’

১৯৮৯ সালের সেই শিক্ষা শিবিরের ডায়েরিতো পড়লেন । এবার মন্তব্য করুন::::::::::::কারণ , কেন আমি শিবির ছেড়ে করেছিলাম ছাত্র ইউনিয়ন-যুব ইউনিয়ন-উদীচী...সেটা তো এখানে বলা হলো না। তাই এবার মন্তব্য করুন:::::::::::: তাই এখন সবকিছুকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করি না আমি। বলা চলে বিশ্বাসকেও আমি তদন্ত করে দেখি। শুধু তদন্তই নয় , বলা চলে ময়নাতদন্তই সেটা।



মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৪:১৯

মুদ্রা সংগ্রাহক বলেছেন: জুলাই মাসের আজ ১৮ তারিখ, এর মধ্যেই আপনি ৩৯ টা পোস্ট দিয়ে ফেলেছেন। গড়ে প্রতিদিন ২ টার বেশী পোস্ট।

আপনার ব্লগে ঢুকতেই চোখে পড়ল

"এটা আমার জন্য অনেক সুখকর যে, আমি এখন ব্লগ ও ফেইসবুক থেকে নিজেকে আসক্তিমুক্ত রাখতে পারছি।"


ভাগ্যিস আপনি ব্লগ আসক্তি থেকে মুক্ত তা না হলে তো সামুতে খালি আপনার পোস্ট ই পড়তে হত।

২| ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৫:৩৯

নিয়েল হিমু বলেছেন: হ্যা বলুন এবার সেই ঘটনা যেটার কারনে শিবির ছারলেন । পরে আরো প্রশ্ন করব ।

৩| ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৫:৩৫

াহো বলেছেন:

নিয়েল হিমু ---
বলেছেন: হ্যা বলুন এবার সেই ঘটনা যেটার কারনে শিবির ছারলেন । পরে আরো প্রশ্ন করব ।

৪| ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৮:২৬

ডাইরেক্ট টু দ্যা হার্ট বলেছেন: আপনার শিবির ছাড়ার ঘটনা বলুন তারপর মন্তব্য করবো,

১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৩৫

জসীম অসীম বলেছেন: সব মিলিয়ে আমার শিবির করাটা চোখে পড়ার মত নয়। এটি একটি আকস্মিক বা কার্যকারণহীন ঘটনা। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় ,তখন আমার জন্ম। মৌলবাদী শক্তির পতনের সঙ্গে সঙ্গেই দেশীয় মৌলবাদীরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন উদ্যমে কাজে নামছে। সব জায়গাতেই , বিশেষ করে গ্রামে নতুন করে তখন আবার মৌলবাদী হাওয়া বইছে। আর সেই হাওয়া কোনো কিশোরকে একটু নাড়া দেবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সময়ই আমাকে উদ্ধার করে এবং তার সাথে আমার মা। আমার মা
আমাকে প্রমাণ করে দেন-ছাত্রশিবিরে আমার যে লিডার ছিলেন , তার বাবা ছিলেন ১৯৭১ সালের কুখ্যাত রাজাকার এবং তাকে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করে মেরেছিল। তারপর মা দিলেন কিছু বই পড়তে এবং গভীর করে শোনালেন ১৯৭১ সালে শহীদ আমার আপন বড় মামার আত্মত্যাগের ইতিবৃত্ত। ধীরে ধীরে আমার সামনে অন্য এক রসায়ন উন্মুক্ত হলো মৌলবাদ সম্পর্কে । এই রসায়নের নাম জামাত-শিবির রসায়ন। শিবির ছেড়ে দেই ১৯৯০ সালে। সেটা তখন খুবই কঠিন ছিল এবং তার চেয়েও কঠিন ছিল শিবির ছেড়ে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন করা । সব মিলিয়ে আমাকে আরেকটি লেখা লিখতে হবে কারণ উপস্থাপনের জন্য----।

৫| ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:০৫

বালক বন্ধু বলেছেন: আপনি পুর ঘটনা যা বর্ণনা করলেন তাতে করে শিবির ছাড়ার কোন কারণ খুজে পাচ্ছি না। বরঞ্চ শিবিরের কর্মকাণ্ড কতটা সুন্দর গোছানো তাই বুঝতে পারলাম। যারা শিবির করিনি তারাও জেনে গেলাম।
আপনি কি কারণে শিবির ছাড়লেন তা বর্ণনা করলে বোঝা যাবে ঘটনা কী?

১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:২৮

জসীম অসীম বলেছেন: সব মিলিয়ে আমার শিবির করাটা চোখে পড়ার মত নয়। এটি একটি আকস্মিক বা কার্যকারণহীন ঘটনা। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় ,তখন আমার জন্ম। মৌলবাদী শক্তির পতনের সঙ্গে সঙ্গেই দেশীয় মৌলবাদীরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন উদ্যমে কাজে নামছে। সব জায়গাতেই , বিশেষ করে গ্রামে নতুন করে তখন আবার মৌলবাদী হাওয়া বইছে। আর সেই হাওয়া কোনো কিশোরকে একটু নাড়া দেবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সময়ই আমাকে উদ্ধার করে এবং তার সাথে আমার মা। আমার মা
আমাকে প্রমাণ করে দেন-ছাত্রশিবিরে আমার যে লিডার ছিলেন , তার বাবা ছিলেন ১৯৭১ সালের কুখ্যাত রাজাকার এবং তাকে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করে মেরেছিল। তারপর মা দিলেন কিছু বই পড়তে এবং গভীর করে শোনালেন ১৯৭১ সালে শহীদ আমার আপন বড় মামার আত্মত্যাগের ইতিবৃত্ত। ধীরে ধীরে আমার সামনে অন্য এক রসায়ন উন্মুক্ত হলো মৌলবাদ সম্পর্কে । এই রসায়নের নাম জামাত-শিবির রসায়ন। শিবির ছেড়ে দেই ১৯৯০ সালে। সেটা তখন খুবই কঠিন ছিল এবং তার চেয়েও কঠিন ছিল শিবির ছেড়ে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন করা । সব মিলিয়ে আমাকে আরেকটি লেখা লিখতে হবে কারণ উপস্থাপনের জন্য----। আমার জীবনের স্বর্ণবছর বলা যায় ১৯৯২ সালকে। এই দাবি যথার্থ। সব মিলিয়ে সে বছরের কার্যক্রম আমার উল্লেখ করার মত। সেটি কোনো আকস্মিক বা কার্যকারণহীন ঘটনা ছিল না। এক ভুবনমোহিনী হাসিওয়ালীর প্রেমেও পড়লাম ঢাকায় এবং একজন শিবির নেতার ঠ্যাং ভাঙ্গলাম , তাও ঢাকায়। তারাও একদিন আবার পাল্টা হামলা করলো এবং আমি প্রাণ বাঁচালাম কবরস্থানে লুকিয়ে--। যে গোলাম আযমের বই মুখস্থ করতাম , তার মাথায় মারতে ইঁট নিয়েও ঢুকলাম এক সভায়। পরে অবশ্য মারতে পারিনি কোনো কারণে। অনেকেই তাদের প্রতিবাদকে স্মরণীয় করেছেন নিজের সংগ্রামী প্রতিভা দিয়ে। কিন্তু আমার নিজের সংগ্রাম অনেক সময় গড়পরতার চেয়েও নিম্নমানের ছিল। কারণ একাই আমি অনেক ঝুঁকি নিয়েছি , সাংগঠনিকভাবে না গিয়ে। নিজের প্রতিবাদ-প্রতিভা রয়েছে জেনেও সাংগঠনিকভাবে ঝুঁকি নেইনি , রাজনীতি নিয়ে বেশি নিরীক্ষাও করিনি। শিবিরের মোস্তফা এখন জামাতের বড় নেতা। তাদের উদীচী করার কারণ নেই । তখনকার বাকি নেতারা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক । আমি সততাকে বাঁচাতে গিয়ে এখনো দিন এনে দিন খাই। একবেলা কাজ না করলে ভাত জুটে না।

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১:২৭

জসীম অসীম বলেছেন: লেখক বলেছেন: সব মিলিয়ে আমার শিবির করাটা চোখে পড়ার মত নয়। এটি একটি আকস্মিক বা কার্যকারণহীন ঘটনা। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় ,তখন আমার জন্ম। মৌলবাদী শক্তির পতনের সঙ্গে সঙ্গেই দেশীয় মৌলবাদীরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন উদ্যমে কাজে নামছে। সব জায়গাতেই , বিশেষ করে গ্রামে নতুন করে তখন আবার মৌলবাদী হাওয়া বইছে। আর সেই হাওয়া কোনো কিশোরকে একটু নাড়া দেবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সময়ই আমাকে উদ্ধার করে এবং তার সাথে আমার মা। আমার মা
আমাকে প্রমাণ করে দেন-ছাত্রশিবিরে আমার যে লিডার ছিলেন , তার বাবা ছিলেন ১৯৭১ সালের কুখ্যাত রাজাকার এবং তাকে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করে মেরেছিল। তারপর মা দিলেন কিছু বই পড়তে এবং গভীর করে শোনালেন ১৯৭১ সালে শহীদ আমার আপন বড় মামার আত্মত্যাগের ইতিবৃত্ত। ধীরে ধীরে আমার সামনে অন্য এক রসায়ন উন্মুক্ত হলো মৌলবাদ সম্পর্কে । এই রসায়নের নাম জামাত-শিবির রসায়ন। শিবির ছেড়ে দেই ১৯৯০ সালে। সেটা তখন খুবই কঠিন ছিল এবং তার চেয়েও কঠিন ছিল শিবির ছেড়ে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন করা । সব মিলিয়ে আমাকে আরেকটি লেখা লিখতে হবে কারণ উপস্থাপনের জন্য----।

৬| ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:২৩

ভিটামিন সি বলেছেন: খুব করে থাপড়াইতে ইচ্ছা করে। আনলিমিটেড থাপড়ানো যারে বলে, শুরুই হবে শেষ হবে না।

৭| ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৭

মুদ্‌দাকির বলেছেন: আপনার অভিজ্ঞতা গুলো জানবার জন্য অপেক্ষায় থাকব।

প্রশ্নঃ

১)বাড়িতে না জানিয়ে তিনদিনের জন্য গায়েব হলেন কিভাবে ?? নাকি বাড়িতে জানত?

২) আপনার মুস্তাফা ভাই এখন কি করেন? উনিও কি উদিচিতে যোগ দিলেন নাকি?

৩) আপনি খোঁজ করার আগেই, কিভাবে মাইকে সেন্ডেল হারানোর ঘোষনা আসল ?

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১:২৯

জসীম অসীম বলেছেন: সব মিলিয়ে আমার শিবির করাটা চোখে পড়ার মত নয়। এটি একটি আকস্মিক বা কার্যকারণহীন ঘটনা। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় ,তখন আমার জন্ম। মৌলবাদী শক্তির পতনের সঙ্গে সঙ্গেই দেশীয় মৌলবাদীরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন উদ্যমে কাজে নামছে। সব জায়গাতেই , বিশেষ করে গ্রামে নতুন করে তখন আবার মৌলবাদী হাওয়া বইছে। আর সেই হাওয়া কোনো কিশোরকে একটু নাড়া দেবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সময়ই আমাকে উদ্ধার করে এবং তার সাথে আমার মা। আমার মা
আমাকে প্রমাণ করে দেন-ছাত্রশিবিরে আমার যে লিডার ছিলেন , তার বাবা ছিলেন ১৯৭১ সালের কুখ্যাত রাজাকার এবং তাকে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করে মেরেছিল। তারপর মা দিলেন কিছু বই পড়তে এবং গভীর করে শোনালেন ১৯৭১ সালে শহীদ আমার আপন বড় মামার আত্মত্যাগের ইতিবৃত্ত। ধীরে ধীরে আমার সামনে অন্য এক রসায়ন উন্মুক্ত হলো মৌলবাদ সম্পর্কে । এই রসায়নের নাম জামাত-শিবির রসায়ন। শিবির ছেড়ে দেই ১৯৯০ সালে। সেটা তখন খুবই কঠিন ছিল এবং তার চেয়েও কঠিন ছিল শিবির ছেড়ে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন করা । সব মিলিয়ে আমাকে আরেকটি লেখা লিখতে হবে কারণ উপস্থাপনের জন্য----। আমার জীবনের স্বর্ণবছর বলা যায় ১৯৯২ সালকে। এই দাবি যথার্থ। সব মিলিয়ে সে বছরের কার্যক্রম আমার উল্লেখ করার মত। সেটি কোনো আকস্মিক বা কার্যকারণহীন ঘটনা ছিল না। এক ভুবনমোহিনী হাসিওয়ালীর প্রেমেও পড়লাম ঢাকায় এবং একজন শিবির নেতার ঠ্যাং ভাঙ্গলাম , তাও ঢাকায়। তারাও একদিন আবার পাল্টা হামলা করলো এবং আমি প্রাণ বাঁচালাম কবরস্থানে লুকিয়ে--। যে গোলাম আযমের বই মুখস্থ করতাম , তার মাথায় মারতে ইঁট নিয়েও ঢুকলাম এক সভায়। পরে অবশ্য মারতে পারিনি কোনো কারণে। অনেকেই তাদের প্রতিবাদকে স্মরণীয় করেছেন নিজের সংগ্রামী প্রতিভা দিয়ে। কিন্তু আমার নিজের সংগ্রাম অনেক সময় গড়পরতার চেয়েও নিম্নমানের ছিল। কারণ একাই আমি অনেক ঝুঁকি নিয়েছি , সাংগঠনিকভাবে না গিয়ে। নিজের প্রতিবাদ-প্রতিভা রয়েছে জেনেও সাংগঠনিকভাবে ঝুঁকি নেইনি , রাজনীতি নিয়ে বেশি নিরীক্ষাও করিনি। শিবিরের মোস্তফা এখন জামাতের বড় নেতা। তাদের উদীচী করার কারণ নেই । তখনকার বাকি নেতারা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক । আমি সততাকে বাঁচাতে গিয়ে এখনো দিন এনে দিন খাই। একবেলা কাজ না করলে ভাত জুটে না।

৮| ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৫২

মিতক্ষরা বলেছেন: মুস্তফা ভাইয়ের সম্পর্কে আমিও জানতে আগ্রহী। তিনি এখন কেমন আছেন?

৯| ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:১২

কালীদাস বলেছেন: আপনের পুস্টানোর পাওয়ার তো সেরকম দেখা যায় :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.