নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

এদেশে এখন এত যে ভিক্ষুক তাদের অধিকাংশই আগে কৃষক ছিলেন

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০৫



জসীম অসীম

আজ বাংলার কৃষক সমাজ দেশের সকল শ্রেণীর মদদপুষ্ট পেশীশক্তির পীড়নে নিষ্পেষিত । ভিটেমাটি জমিজিরাত হারিয়ে তারা ক্রমাগত পথে এসে বসেছে । এদেশে এখন এত যে ভিক্ষুকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে , তাদের অধিকাংশই আগে কৃষক ছিলেন। তাদের মাথায় কখনো ঝুলে সার্টিফিকেট মামলার সমন , ব্যাংক ঋণের পরোয়ানা ও সুদখোর মহাজনদের লোলুপ রক্তচক্ষু। তারপর আবার প্রাকৃতিক রোষানল খরা-বন্যা-ঝড়ের করাল গ্রাসে কৃষকগণ আজ বিপর্যস্ত।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীর স্বাভাবিক গতি কোনো কারণে ব্যাহত হলে বাংলাদেশে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে , এটাই স্বাভাবিক । দেশের পদ্মা-মেঘনা-যমুনা নদীতে ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণে বিরূপ প্রভাব পড়ে শুষ্ক মৌসুমে । সেই প্রভাব সরাসরি পড়ে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রে।

আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য ১২ ডিসেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে ৩০ বছর মেয়াদের জন্য এক পানিবন্টন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। সেই চুক্তিতেও কৃষকের তেমন কোনো লাভ হয়নি। কারণ চুক্তি কাগজেকলমে হলেও বাংলাদেশ তার ন্যায্য পানি পায়নি । তাছাড়া সেই চুক্তির সময় তৃতীয় কোনো দেশকে রাখা গেলে হয়তো আরও ভালো হতো । তাছাড়া সেটি কোনো স্থায়ী চুক্তি না হলেও ফারাক্কা বাঁধে ভারত যদি অধিক পানি কেড়ে নেয় , বাংলাদেশ বুঝলেও সে বিষয়ে করার তেমন কিছুই নেই।

বাংলাদেশের সংসদের ভিতরে ও বাইরে কৃষকদের অধিকার নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু বাস্তবে সে অধিকার আদায়ে তেমন কর্মসূচি থাকে না। আমাদের কৃষকদের সমস্যা অনেক । রবি মৌসুমে শুরু হতে না হতেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সার সংকট দেখা দেয়। সংকট অধিকাংশ ক্ষেত্রে কৃত্রিম। আমদানি অথবা সরবরাহ স্বল্পতার সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু সার ব্যবসায়ী নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে সার বিক্রি করে প্রতিবছরই কৃষকদের ঠকায় । এসব পরিস্থিতিতে প্রকৃত রাজনৈতিক চেতনার অভাবে কৃষকদের ক্ষোভ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের দাবি আদায় করতে পারে না।

সার সংকট দেখা দিলে বাংলাদেশের কৃষকগণ যখন মিছিল-মিটিং করে , কৃষি অফিস ঘেরাও করে কিংবা প্রশাসনের প্রতি মারমুখো হয় , তখন একশ্রেণীর রাজনীতিবিদ কৃষকদের ব্যবহার করতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু তারপরই আর খবর থাকে না।

বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর অর্থনীতি। কিন্তু আজও বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষক মৃত্যুর মুখোমুখি প্রতিদিন বাস করে যায়। সর্বস্তরের কৃষক সমাজের ওপর চতুর্মুখী চাপ বিদ্যমান। ফলে দেশের জোতদার কৃষক থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র চাষী সকলেই এখন বেদিশা হয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কৃষক দিনদিন দিনমজুরে পরিণত হচ্ছে। কেননা আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশের কৃষক নিয়ন্ত্রিত হয় আজ আমেরিকার প্রেসক্রিপশান দ্বারা।

আজ বাংলার কৃষক সমাজ দেশের সকল শ্রেণীর মদদপুষ্ট পেশীশক্তির পীড়নে নিষ্পেষিত । ভিটেমাটি জমিজিরাত হারিয়ে তারা ক্রমাগত পথে এসে বসেছে । এদেশে এত যে ভিক্ষুকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে , তাদের অধিকাংশই আগে কৃষক ছিলেন। তাদের মাথায় কখনো ঝুলে সার্টিফিকেট মামলার সমন , ব্যাংক ঋণের পরোয়ানা ও সুদখোর মহাজনদের লোলুপ রক্তচক্ষু। তারপর আবার প্রাকৃতিক রোষানল খরা-বন্যা-ঝড়ের করাল গ্রাসে কৃষকগণ আজ বিপর্যস্ত । নদী ভাঙ্গনের মারাত্মক ছোবলের সর্বোচ্চ মাশুল দেয় কৃষক। বীজ সংকট, ডিজেল সংকট, কীটনাশকের দু®প্রাপ্যতা, সেচের জটিলতায় কৃষকগণ বিপন্ন। এ থেকে সহসা মুক্তি পাওয়ার কোনো পথ নেই । কেননা দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ হয়ে গেছে স্বার্থবাদী, অন্যদিকে কৃষকগ সংগঠিত হতে পারেনি তাদের স্বার্থ বিষয়ে । সুতরাং কৃষক মুক্তি বলতে এতদিন পর্যন্ত যা বলা হয়েছে , তা খুবই অসুস্থ । কী যে কৃষকের মুক্তির পথ , তা কেবল কৃষকগণই বলতে পারেন। কোনো রাজনৈতিক দল তাদের মুক্তি বিষয়ে যতই রাজপথ আর সংসদ মাতাক , সেই খবরে কৃষকের কিছু যায় আসে না।

রচনা : মার্চ , ১৯৯৯ , কুমিল্লা।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.