নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘মানুষের বাচ্চারা যখন কুকুরের বাচ্চা হয়ে যায়’

২০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৪০

জসীম অসীম:

দিন বদল হয়েছে। এখনও বকে মাছ খায় , তবে মাছও সুযোগ পেলে বক-মাছরাঙাকে ছাড়ে না। পুলিশ ডাকাত ধরে কিন্তু ডাকাত কি সুযোগে পেলে পুলিশকে খুন করে না? বিষয়টি আগেও ছিল কিন্তু এখন তা আগের তুলনায় অধিক।

যুগটা এখন আগের জায়গায় নেই। ঠিক এ বিষয়ে একবার কথা হয় কুমিল্লার সাহিত্যিক শান্তুনু কায়সারের সঙ্গে তার তখনকার কুমিল্লা শহরের টমছমব্রীজের বাসা ‘প্রহর’-এ। তিনি উদাহরণ দিয়েছিলেন সাহিত্যিক অদ্বৈত মল্লবর্মনকে দিয়ে।

অদ্বৈত মল্লবর্মণের জীবনী লিখেছেন শান্তনু কায়সার। প্রকাশ করেছে তা বাংলা একাডেমী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক দরিদ্র জেলে পরিবারের সন্তান অদ্বৈত মল্লবর্মণকে কুমিল্লার কৃতি সন্তান ক্যাপ্টেন নরেন দত্ত কলকাতায় নিয়ে যান। অদ্বৈত কলকাতার বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা ‘দেশ’ পত্রিকায়ও চাকুরি করেন। তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘তিতাশ একটি নদীর নাম’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩৬৩ বাংলা সনে। এ উপন্যাস নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত বাঙালী চিত্রপরিচালক ঋত্বিক কুমার ঘটক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। কিন্তু আজ অদ্বৈতের মতো লেখক এবং ঋত্বিকের মতো ত্যাগী চিত্রপরিচালক পাওয়া যাবে কোথায়? সমালোচনার শেষে শান্তনু কায়সার প্রশ্ন রাখেন , আজকের সময়ে ক্যাপ্টেন নরেন দত্তগণ কোথায় , যারা অদ্বৈত মল্লবর্মণের মতো লোকদের চিনে যথাস্থানে নেবেন , বা পৃষ্ঠপোষকতা দেবেন?

এটা বাণিজ্যের কাল। সব কিছুতেই লাভের হিসেব করা হয়। তাই কুমিল্লা টাউনহলে বাণিজ্য মেলা এত দীর্ঘস্থায়ী হয় অথচ বইমেলা প্রায় অনুষ্ঠিতই হয় না। অবাক লাগে মানুষ এত নিচে নেমে চিন্তা করে কিভাবে? বলুনতো মাছে বক খায় , নাকি বকে মাছ খায়?

কিছুদিন আগের ঘটনা। একটি শিক্ষিত দজ্জাল যুবতীর প্রেমে পড়ে একটি ভদ্রঘরের ছেলে। মেয়েটি ছেলেটিকে একদিন বিকেলে কুমিল্লার বিবিরবাজার এলাকায় নিয়ে গিয়ে গোলাবাড়ি নদীরপাড় এলাকায় তরল খাইয়ে মাথা গরল করে দেয়। ঘটনাস্থলে মেয়েটির আরও বয়ফ্রেন্ড উপস্থিত ছিল। প্রেস্টিজের ব্যাপার। তারপর ঘটনা আরও এগিয়ে যায়। নেশাগ্রস্ত সেই প্রেমিকা মেয়েটিকে নেশার টাকা যোগাড় করে দেয় ছেলেটি এবং সে নিজেও নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। ছেলেটির মা ও বাবা উভয়েই স্কুল শিক্ষক। ভাবুন , কী অবস্থা তাদের। একদিন ছেলেটির মায়ের কান্না দেখে আমার খুবই খারাপ লাগে। মানহানির ভয়ে তারা খুব ধীরলয়ে গোপনে গোপনে সমস্যার সমাধান খোঁজ করছেন। বক মাছ খায় , নাকি মাছে বক খায় বলুন।

সুদিনের বন্ধু-বসন্তের কোকিল-তাদের চেয়ে-বাহারের বর্ষার কাকগুলোও ভালো। কারণ কোকিল বিশ্বাসঘাতক , দুর্দিনে থাকেনা , কাক খুব সুকণ্ঠী পাখি না হলেও দুর্দিনেও কা-কা করে বিপদ সঙ্কেত দেয়। বসন্তের কোকিল যদি কারো কাছে বড় হয়ে যায় , তবেই আর বক মাছ খেতে পারে না , বরং চিরায়ত প্রথা ভেঙে মাছেই বরং বক গিলে ফেলে।

কারো কোনো পরকীয়া প্রেম সংক্রান্ত ঘটনা পেলেই সাংবাদিকগণ হুট করে লিখে ফেলেন। সেক্ষেত্রে যদি লেখার লোকটি হয় সিনেমার লোক , তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু সাংবাদিকদের কেউ কি পরকীয়া প্রেম করেন না? স্বকীয়া-আর পরকীয়া-সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে জায়েজ। রেফারীকে লালকার্ড দেখানোর লোকতো আসলে নেই। তাই মাছ দেখে বক খুশি হওয়ার কথা হলেও , মাছ দেখে বক পালিয়েও যায় এখন। কথাটা বিশ্বাস হয় না? ধরুন ২০ সদস্যের একটি ডাকাত দলের মুখোমুখি হলো ২ জন পুলিশ। তখন পুলিশ কী করবে? মরবে-নাকি আত্মসমর্পণ করবে , নাকি পালাবে? জ্বলন্ত কয়েলের উপর দিয়ে যে মশা উড়ে তা দেখেছেন? কয়েল শক্তিশালী নাকি মশা? অসৎ লোকের চাপে পড়লে একজন সৎলোকের এই দশা হয়।

মাছ কখন বক খায়? যখন স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি স্বাধীনতার পক্ষের লোককে জব্দ করে রাখে। যখন বিশ্বাসী পত্রিকাটিও শ্রদ্ধেয় [?] সাংবাদিকও টাকা খেয়ে মিথ্যে সংবাদ পরিবেশন করে-

মাছ বককে খাচ্ছে মানে যুগ চলছে উল্টো নিয়মে-কেউ কেউ কিছু টাকার মালিক হয়ে জীবদ্দশায় নিজের নামে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। আসলে বেঁচে থাকা অবস্থায় নিজের নামে নামকরণ যে কতো অশোভন, তা তাদের বুঝাবে কে? প্রতিষ্ঠানটি তো তারা তাদের মৃত-পিতামাতার নামেও করতে পারে। কিন্তু না। তারা তাদের বাবা-মায়ের চেয়ে নিজেদেরকেই বেশি ভালোবাসে-এই হলো বড় দুঃখের বিষয়।

মাছে কখন বক খায়? যখন সাংবাদিক অন্য আরও অসংখ্য পেশায় নিয়োজিত থাকে কিংবা অন্য আরও বিচিত্র পেশার লোকও নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেয় , যখন শিশুর গুড়ো দুধে ঘাতক মেলামাইন বোমা বা মাইন হয়ে মিশ্রিত থাকে , যখন বাঙালী হয়েও কেউ বলে আমি ভাত খেতে পারিনা , গাজরের জুস খেতে ভালোবাসি , যখন কোথাও বাথরুমের প্রতিটি দেয়াল মেয়েদের যৌনাঙ্গের কুরুচিপূর্ণ বিবরণে আচ্ছন্ন থাকে , অথচ এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের বছরের পর বছর কোনো হুশই থাকে না , যখন শত চেষ্টার পরও আমি পাঠকের হাতে একটি ব্যর্থ লেখা দিয়ে দেই , সফল লেখার যোগ্যতা আমার থাকে না , যখন পাঠকের সঙ্গে আমাদের অনেক দূরত্বের দেয়াল থাকে , যখন পত্রিকার অধিকাংশ পৃষ্ঠপোষকই লম্পট হয়-যখন কোনো সাংবাদিক কোনো এমপি-র চামচামি করে , যখন এক পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল হলে আরেক পত্রিকার সম্পাদক নিজের পাছায় হাত দিয়ে বারি মেরে তালি বাজায়। যখন কুমিল্লার কোনো সংবাদপত্র কখনো কখনো বাহারপত্র-ইয়াসিনপত্র-লোটাসপত্র কিংবা সাক্কুপত্র হয়ে যায় , যখন আখের রসে ঘি মিশিয়ে দাম্পত্য জীবনের কুস্তাই মারোয়ারী সালসা বলে চড়া দামে বিক্রি হয় , তখন বকে মাছ খায়না , মাছরাঙ্গায় মাছ খায় না বরং মাছেই বক আর মাছরাঙ্গা ধরে ধরে খায়।

ইন্টারনেট জনপ্রিয় এখন ,সাইবার ক্যাফেতেও মানুষের ভীড় বাড়ছে ক্রমাগত। সরকার যখন মাঠ পর্যায়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে , যখন ডিভি লটারী পেতে মানুষ ইন্টারনেটের-সাইবার ক্যাফের মুখোমুখি হয় , তখন বকে মাছ খায়। কিন্তু যখন স্কুল পড়ুয়া উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা সাইবার ক্যাফের কবুতরের খোপে বসে সেক্স ফিল্ম কিংবা সেক্স ওয়েবসাইটে প্রবেশ কওে , তখন মাছে বক খায়। যখন স্বাধীনতা বিরোধীদের ভোট না দেয়ার আহবান জানিয়েও কোনো রাজনীতিক নিজেই স্বাধীনতা বিরোধীদের ভোট দেয় , আর অপরাধ বলতে সারা পৃথিবীতে শুধু যুদ্ধাপরাধীদেরকেই বুঝে , আর কোনো অপরাধকে অপরাধ বুঝে না , তখন মাছে বক খায়। ঢাকায় এক ছাত্রনেতা নামধারী গুন্ডাকে চিনতাম , যে কোনো এক ২১ ফেব্র“য়ারী রাতে একটি মেয়েকে তুলে এনে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ করে এবং রাতশেষে ২১শের সকালে ফুল নিয়ে দলবলসহ শহীদ মিনারেও যায়। আমরা তো আর ঈশ্বর-ভগবান নই , বুঝতে পারবো না কে ভালো কে মন্দ। শহীদ মিনারে গেলেই সব পাপ মুছে যায় না। আশ্চর্য হলো ঘটনার প্রায় এক যুগ পর সেই ছাত্রনেতা নামধারী লোকটি অজ্ঞাত এক লোকের গুলি খেয়েই মারাও যায়।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিক সুবিমল মিশ্র বলেছেন-‘মানুষের বাচ্চারা যখন কুকুরের বাচ্চা হয়ে যায় , তখন কুকুর তার লেজকে নয় বরং লেজই কুকুরকে নাড়াতে থাকে। সুবিমল মিশ্রের সেই উক্তিটি দিয়ে কোনো এক সংগঠন একবার একটি পোস্টার ছেপেছিল। একদা সেই পোস্টার আমাদের ড্রয়িংরুমে রেখে প্রতিদিনই কিছু না কিছু বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তাম। সত্যি মানুষের বাচ্চারা যখন কুকুরের বাচ্চা হয়ে যায় , তখন আর আপনি কোনো অঙ্কেরই ফলাফল মেলাতে পারবেন না। তখন পাঁচে পাঁচে দশ না হয়ে পাঁচও হতে পারে , বিশও হতে পারে এবং ঝাঁকে ঝাঁকে বক-মাছরাঙ্গাকে গিলে খেতে পারে মাছ। বুঝে নিন এবার সেই মাছ কী রকম মাছ? সত্যিই কি মাছের পর্যায়ে পড়ে , যাকে আমরা মাছ বলে জানি!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৪৯

ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৩৩

জসীম অসীম বলেছেন: লাভের লোভে নকলের সব স্বপ্ন নিয়ে পরীক্ষা চলছে এখন। তাই সবকিছুরই নকলরূপ এখন তুঙ্গে ...নকল এখন গুটিয়ে নেয়না নিজেকে। সাহস করে সামনে দাঁড়ায়। কী বাণিজ্যিক সময়। নকলেরও নকল হয় এখন। THANKS.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.