নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিপোর্টারের ডায়েরি: আড্ডার বিষয় নিয়েও তৈরি হতো ‘আমোদ' পত্রিকার রিপোর্ট, বিষয়: বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:১৫



একদা আড্ডার বিষয় নিয়েও তৈরি হতো কুমিল্লার ‘আমোদ' পত্রিকার অনেক রিপোর্ট। বিষয়: বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেছে। আওয়ামীলীগ সরকারের ইচ্ছেতেই এই সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যায়। অথচ এই আওয়ামীলীগই ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে তৎকালীন বিএনপি সরকারকে বাধ্য করেছিল। তখন কতো চেষ্টাই না করেছিল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এই তত্ত্বাবধায়কের জন্য। অথচ আজ আবার আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মৃত্যু।

আমাদের দেশের রাজনীতিতে দেখা যায়, যে দলটি বিরোধী দলে থাকে, সে-ই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য চিৎকার করতে থাকে। যেমন একদা আওয়ামীলীগ বিরোধী দলে থেকে বিএনপি-কে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনে বাধ্য করেছিল, যেমন এখন বিএনপি বিরোধী দলে থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনে বাধ্য করতে চায়। বর্তমানের তত্ত্বাবধায়কহীন অবস্থায় যদি কোনোভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ তাদের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, তাহলে তারাও একদিন আবার এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের জন্য আন্দোলনে যেতে পারে। কারণ বিএনপি ক্ষমতাসীন হলে কখনোই বিএনপি-র অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে চাইবে না আওয়ামীলীগ। সুতরাং তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের এ সিদ্ধান্ত কোনো একদিন আওয়ামীলীগের জন্যও আত্মঘাতী হয়ে দেখা দিতে পারে।

দেশের গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো ইস্যু নিয়ে সারা দেশের পত্রিকার অফিসগুলোতে বেশ পুষ্ট আলোচনা জমে উঠে। এ আলোচনাকে যদিও তেমন লিখিত রূপ দেওয়া হয় না। তবে এ আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে শুধু বিষয়বস্তুকে অবলম্বন করেই একসময় কুমিল্লার ‘আমোদ' পত্রিকায়, ছাপা হতো বিভিন্ন রিপোর্ট।

আমি একই সময়ে কুমিল্লার সাপ্তাহিক ‘আমোদ' ও দৈনিক ‘রূপসী বাংলা' পত্রিকায় চাকরি করে দেখেছি পত্রিকার অফিসের কার কেমন ব্যস্ততা । সেটা অবশ্য ২০০০ সালের আগের কথা। সাপ্তাহিক ‘আমোদ' প্রতি বৃহপতিবার বের হতো বলে মূলত বুধবারেই থাকতো সেই পত্রিকা অফিসের সর্বোচ্চ ব্যস্ততা। অন্যদিকে দৈনিক ‘রূপসী বাংলা' অফিসের প্রতিটি দিনই ছিল ‘আমোদ'-এর বুধবারের মতো। তাই ‘রূপসী বাংলা' অফিসে আড্ডার সুযোগ ছিল তুলনামূলক কম। কারণ কাজ করে ‎হুশ থাকতো না। মোবাইল ইন্টারনেটের সহযোগিতা ছাড়া প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকা করা সে যুগে সত্যি কঠিন ছিল। তবে ‘আমোদ' পত্রিকা সাপ্তাহিক বলে ব্যস্ততা ছিল কম , কিন্তু কাজের আনন্দ কম ছিল না। কারণ ‘আমোদ'-এ আড্ডা হতো অনেক। আর সুযোগ ও সময়ও ছিল। আসতেনও অনেক গুণী ব্যক্তি। ‘আমোদ'-এর অফিস আর বাসা একই বিল্ডিংয়ে ছিল বলে চা-নাস্তা কিংবা বিভিন্ন খাবারের জন্য কাউকে পারতপক্ষে দোকানে পাঠানোর দরকার হতো না। বাসার ভিতর থেকেই আসতো সব খাবার।

‘আমোদ' পত্রিকা অফিসের আড্ডায় দেশ-সমাজ-রাষ্ট্রসহ বিভিন্ন বিষয় স্থান পেতো। একবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ভীষণ আড্ডা জমে উঠলো। সেটা ১৯৯৬ সালের ১ এপ্রিলের কথা। অবশ্য এর আগে ২৩ মার্চ ১৯৯৬ সালেই মিস্টার তত্ত্বাবধায়কের জš§ হয়েছিল এই বাংলাদেশে। আড্ডা শেষে ‘আমোদ'-এর তখনকার ব্যবস্থাপনা স¤পাদক বাকীন রাব্বী আমাকে বললেন , এই যে আড্ডায় উঠে এলো ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না’-এটাকে বিষয় করেই আগামীকাল একটি রিপোর্ট লিখে দিন। আমি বললাম , আপনার কাগজ তো আঞ্চলিক সাপ্তাহিক। এ কাগজে রাজনৈতিক রিপোর্ট ছাপাবেন? তিনি বললেন , যে বিষয়ে মানুষের পাঠচাহিদা রয়েছে, সে বিষয়ে লেখা ছাপালে ক্ষতি তো কিছু নেই। আমি তখন সাংবাদিকতা করলেও ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্র ইউনিয়ন’ও করি , মাথার ভিতর পুরোদমে সমাজতন্ত্র। তাই লিখলাম: ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি ভুয়া কনসেপ্ট’। বাকীন রাব্বী বললেন , আমার কাগজতো আপনার কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘একতা’ নয়-সুতরাং রিপোর্টটি অন্যভাবে লিখুন। তাছাড়া ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিলটি পাস হয়েছে। গঠিত হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বিচারপতি হাবিবুর রহমান। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য এতদিন আওয়ামীলীগ-জাতীয়পার্টি ও জামায়াত ইসলামী আন্দোলন করলো , আর আপনি লিখে দিলেন ‘ভুয়া কনসেপ্ট?

বাকীন রাব্বীর ব্রিফিং মোতাবেক একটি রিপোর্ট পরে দাঁড় করালাম , যা ৪ এপ্রিল ১৯৯৬ তারিখে ‘আমোদ’ এ ছাপাও হয়। রিপোর্টটিতে উল্লেখ ছিল ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জনগণের বিশেষ কী লাভ হবে’...ইত্যাদি। তাছাড়া পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনও তো নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হয়েছে। কিন্তু তাতে দেশ উদ্ধার হয়েছে কতটুকু? ইত্যাদি...।

আমোদ-অফিসের আড্ডায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গ শেষ হলো না। চলতেই থাকলো। তখন কুমিল্লার ওয়ার্কিং রিপোর্টারগণ প্রায়ই ‘আমোদ’ অফিসে যেতেন। আড্ডাতে তারাও শরীক হতেন। কখনো কখনো। ১৯৯৬ সালের ২০ মে রাতে ‘আমোদ’ অফিসে আবার সেই আড্ডা জমে উঠলো- ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশ চলছে কেমন’?

অনেকে বললেন , দেশের অস্থিরতা বন্ধ হয়েছে। কেউ বললেন , হরতাল বন্ধ , এটাই সুখের কথা। কেউ কেউ আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করেছেন , তার প্রশংসা করেন। আবার এমনও মতামত এসেছে যে একটি রাষ্ট্রের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা সামরিক সরকার কোনো শেষ কথা হতে পারে না। যখনই রাজনৈতিক সরকার ব্যর্থ হয় কিংবা জনগণের বিশ্বাস হারায়, তখনই এসব সরকার ব্যবস্থা দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হয়...ইত্যাদি। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশ যেমনই চলুক না কেন... এ সরকার দিয়ে দেশ চালানো কোনো সভ্য রাষ্ট্রের কাজ হতে পারে না। এসব আলাপের পরই আমি আবার লিখেছিলাম: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশ কেমন চলছে-প্রসঙ্গে। রিপোর্টটি আমোদে ছাপা হলে পড়ে অনেকেই ধন্যবাদ দিতেন। কারণ তখনও বাংলাদেশে দৈনিক প্রথম আলো-যুগান্তর-আমাদের সময়-সমকাল-কালের কণ্ঠের মতো অনেক ব্যয়ব‎হুল পত্রিকার জš§ হয়নি। আঞ্চলিক পত্রিকাও ছিল খুব অল্প। ফলে সেসব সময় কুমিল্লা শহরে যে পরিমাণ ‘আমোদ’ পত্রিকা মানুষের হাতে হাতে থাকতো , আজ তা বলে বিশ্বাস করানো কঠিন। সারাদেশের মতো কুমিল্লার পত্রিকার বাজারেও এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে প্রায়ই আমার মনে হয়-আড্ডার বিষয়বস্তু থেকে রিপোর্ট বানানোর এ তত্ত্বটির জন্য ‘আমোদ’ কর্তৃপক্ষ ধন্যবাদ পেতে পারেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ‘আমোদ’ অনেক লেখা ছেপে সে সময় এ এলাকার মানুষের চাহিদা পূরণ করেছিল। আজ দীর্ঘ এত বছর পরও বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এই তত্ত্বাবধায়কের প্রশ্নে খুবই অস্থির হয়েছে , যা ১৯৯৬ সালের আড্ডায় এবং তা নিয়ে লেখালেখিতেও উঠে এসেছিল। তখনকার আড্ডায় ও লেখালেখিতে এটাও উঠে এসেছিল যে, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনে যেমন এখন আন্দোলন হয়েছে , তেমনি একদিন এর বাতিলের জন্যও আন্দোলন হবে এবং আন্দোলন হবে এ ব্যবস্থা পুন:প্রবর্তনের জন্যও। একথা আজ বাংলাদেশে সত্যি সত্যিই সত্য হয়েছে।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:২১

আরজু মুন জারিন বলেছেন: অসীম ভাই আপনি তো দেখছি সময় নিয়ে কষ্টকর শ্রমসাধ্য পোস্ট করেন। অনেক সালাম শ্রদ্ধা আপনাকে। ওজনদার পোস্ট।
ধন্যবাদ পোস্ট টির জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
ভাল থাকবেন কেমন।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:১০

জসীম অসীম বলেছেন: দিদিমনি , এগুলো আমার ব্যক্তিগত ডায়েরির অংশ। তবু আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। কষ্ট করে পড়ে পজেটিভ মন্তব্য লিখে আমাকে প্রেরণা দিচ্ছেন, সেজন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তবে অনুরোধ করছি লেখার নেতিবাচক দিকগুলোও ধরিয়ে দেয়ার জন্য। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

২| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:৩১

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: আমোদের জনপ্রিয়তা সত্যিই আজকাল বিশ্বাস করানো কঠিন।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:১২

জসীম অসীম বলেছেন: জুলিয়ান ভাই , সালাম নেবেন। আপনার মতো গুণী লোক আমার তুচ্ছ লেখাও পড়ে মতামত দিচ্ছেন, সত্যিই আমি ভাগ্যবান। আপনি কখন ‘আমোদ’ পত্রিকায় কাজ করতেন, আমি সময়টা জানি না। জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো। আমি ১৯৯০ সাল থেকে ‘আমোদ’-এ লিখতাম। ১৯৯৫ সালের শেষের দিক থেকে শুরু করে ২০০০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সে পত্রিকায় ছিলাম। পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী স্মারকগ্রন্থের আমি সর্বকনিষ্ঠ সম্পাদক। গ্রন্থটি ১৯৯৯ সালে বের হয়েছিল। আপনাদের কাছে অনেক কিছুই শেখার আছে। এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।

৩| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৫

লেখোয়াড় বলেছেন:
ডিয়ার জসীম অসীম...... আমি লেখোয়ার নই, আমি "লেখোয়াড়"

আরজু মুন জারিনের ওখানে বললেন তো তাই শুধরে দিলাম।

তবে আপনাকে ধন্যবাদ।

৪| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:০১

আরজু মুন জারিন বলেছেন: আমাদের দেশের রাজনীতিতে দেখা যায়, যে দলটি বিরোধী দলে থাকে, সে-ই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য চিৎকার করতে থাকে। যেমন একদা আওয়ামীলীগ বিরোধী দলে থেকে বিএনপি-কে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনে বাধ্য করেছিল, যেমন এখন বিএনপি বিরোধী দলে থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনে বাধ্য করতে চায়।

++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++কোন ভূল খুজে পাইনি জসীম ভাই।ভাল লেগেছে লেখা।ভাল থাকুন কেমন।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:৪৩

জসীম অসীম বলেছেন: মুন , ধন্যবাদ। আমি ভীষণ আবেগপ্রবণ মানুষ। মাঝে মাঝে আমার লেখার কড়া সমালোচনা করবেন। যেন লেখায় আরও দৃঢ় হতে পারি। পজেটিভ মতামত পেলে তো অলস হয়ে যাবো। এমন সমালোচনা করবেন , যেন দু:খে কষ্টে কেঁদে অপমানে শ্রমসাধ্য-কষ্টসাধ্য অভিজ্ঞতালব্ধ লেখা লিখতে পারি । তা না হলে এমন একটি লেখাও সারা জীবনে লিখতে পারবো না , যে লেখাটির জন্য লেখা অমরত্বেও স্বাদ পেতে পারে। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.