নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার জীবনে বাবার কথাই সত্য হয়েছে

০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:০৫

আমার জীবনে শেষ পর্যন্ত বাবার কথাই সত্য হয়েছিল। জীবনে অনেক কাজই করতে গিয়েছিলাম। অর্থাভাবে সফল হতে পারিনি।

আমার বাবা। কফিল উদ্দিন। শেষ বয়সে তার একমাত্র সঙ্গী ছিলো নিঃসঙ্গতা। ২০০৩ সালে বাবার মৃত্যুর পাঁচ বছর আগেই মা মারা গিয়েছিলেন। বাবা মারা গেলেন , নাকি একটা বিয়োগান্তক নাটকে অভিনয় করে গেলেন , বুঝলাম না। সে ঘটনা বারবার ভুলতে চেষ্টা করি। পারি না।

১৯৯২ সালে আমি যখন বাংলাদেশ টেলিভিশনে অভিনয় করার স্বপ্ন দেখছি , বড় ভাই সাহস দিলেন। মা বললেন , লেগে থাক। বাবা শোনালেন হতাশার সুর। বললেন , যাদের পেট নিয়ে পাগল থাকতে হয় , তাদের পক্ষে সৃষ্টিশীল কিছু করা খুব কঠিন। আমার জীবনে শেষ পর্যন্ত বাবার কথাই সত্য হয়েছিল। জীবনে অনেক কাজই করতে গিয়েছিলাম। অর্থাভাবে সফল হতে পারিনি।

আমার মায়ের সঙ্গে আমার তেমন কোনো ঝগড়াই বাঁধেনি। বাবার সঙ্গে প্রায়ই বাঁধতো লঙ্কাকান্ড। কারণ আমরা উভয়েই মুখে মুখে তর্ক বিতর্ক করতাম। ন্যায্য কথা বাবাই শিখিয়েছিলেন। কিন্তু একসময় আমার আর বাবার দেখার দৃষ্টিকোন দু’রকম হয়ে গেল। সুতরাং তর্ক নয়-কেবল হাতাহাতিই বাদ থাকতো। মা আমার চেয়ে বাবাকেই বেশি বকতো। আমাকে খুব আদর করতেন বলে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বড় মামা শহীদ হওয়ার পর মেজ মামাকে আমরা ‘বড় মামা’ ডাকতাম। একাত্তরের স্বাধীনতা বিষয়ে সেই মেজো মামা-অর্থাৎ বড় মামার কথাবার্তা আমার পছন্দই হতো না। তিনি হিন্দুদের অত্যাচারী রূপ আমার সামনে তুলে ধরতেন। আর আমি মুখে মুখে পাল্টা জবাব দিতাম। একসময় মাকে বললাম , তোমার বড় ভাই এ বাংলার লাল সবুজ পতাকার শত্র“। আমার বাবা আমার বিপক্ষে সায় দিতেন। বলতেন , তোর মামা কি রাজাকার ছিলেন নাকি?

: তা ছিলেন না। কিন্তু রাজাকারের অনেক চিন্তা তিনি লালন করেন। বাবা বলতেন , স্বাধীনতা যুদ্ধে তোমার মামার বড় ভাই শহীদ হয়েছিলেন। তুমি যদি তেমন একজন মায়ের পেটের ভাই হারিয়ে আজকের বাংলাদেশকে দেখতে পেতে , তাহলে তোমারও অনেক চিন্তা বদলে যেত।

: চিন্তা বদল কাকে বলে? তিনি তো দেশের বিপক্ষেও কথা বলেন? বাবা বলতেন , এটাকে বিপক্ষে যাওয়া বলে না। তোমার মামা দেশের সিস্টেম ভাঙ্গার কথা বলেন। এখন দেশ চলছে রোগীর মতো। দুর্নীতিবাজদের খপ্পরে পড়ে সারাটা দেশ ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। কেবল কিছু লোকই একতরফা উন্নতি করে চলছে।

আমার মা প্রায়ই এসব আলাপ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন। বাবার সঙ্গে আমার তর্কবিতর্ক চললেই মায়ের হৃৎস্পন্দন থেমে যেতে চাইতো।

১৯৯৯ সালের একদিন রাতে কুমিল্লার দৈনিক রূপসী বাংলা অফিস থেকে কাজ শেষে ফিরে দেখি বাবা টিভি দেখছেন। টিভি-তে ভারতের মুম্বাইয়ের হিন্দি ছবি। বিনোদন ছবি। আমরা ওসব বিনোদন ছবি দেখতাম না। পারতপক্ষে না। কখে না কখনো ছবির ভালো কাজ থাকলে দেখতাম। কিন্তু বাবা দেখতেন। সেদিনও বাবাকে বললাম , এসব ছবি কিভাবে দেখেন? বাণিজ্যিক ছবিকে তো আমরা বর্জন করেছি।

ঊাবা বলতেন , চোখ দিয়ে দেখি এসব। মন দিয়ে নয়।

: কী লাভ?

-সবকিছুকে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে কিভাবে দেখা হচ্ছে , তা বুঝতে পারা।

: ওসব ছবি তো বাবা মগজ নষ্ট করে।

-আমার মগজ নষ্ট হবে না। নষ্ট হলে তোমাদের হবে। যে বয়সের ছেলেমেয়েরা লুকিয়ে লুকিয়ে পয়সা দিয়েও এসব ছবি দেখে।

বাবার সঙ্গে কথা বললে বাবা প্রায়ই হঠাৎ থেমে যেতেন। আর যখন বাবাই রেগে থাকতেন , তখন তিনি আমার সকল কথারই শক্ত জবাব দিতেন।

বাবাকে একদিন বললাম , সারাটা জীবন চাকুরি করলেন। আমাদের শহরে একটি বাড়ি করেও দিতে পারলেন না। আপনার খারাপ লাগে না? বাবা বললেন , এদেশে হাজার হাজার মানুষ ছিন্নমূল। রাতের বেলা রেলষ্টেশনে গিয়ে দেখো কতো ভাসমান মানুষ। ওদের তো বাড়ি নেই। পৃথিবীতে তোমরাই কেবল বাড়ি ছাড়া মানুষ?

আমি বললাম , আমরা যে বাড়িতে ভাড়া থাকি , সে তো সাধারণ একটি চাকুরি করে। সে যদি জায়গা কিনে বিল্ডিং করতে পারে , তো আপনি সারাজীবনে পারেননি কেন? আপনি তো কতো কতো আমলার সঙ্গে কাজ করেছেন। বাবা তার সততার গল্প বলতেন। আমি বলতাম , আমি অসৎ হয়ে যাবো। এত কষ্ট করে বাঁচতে আর ভালো লাগে না। বাবা বলতেন , তুমি সৎ থাকবে না অসৎ থাকবে , তা তোমার নিজের বিষয়। তোমার বয়সী যুবকরা কেউ লাগেজ কাটে , কেউ ছিনতাই করে। আবার এমন কেউ অবশ্যই আছে , যে লাগেজ পেয়ে মালিককে খুঁজে আবার সেটা ফেরত দেয়।

:::চলবে:::





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.