নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিনা পাসপোর্টে ভারত দর্শন আমার

০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২১

বিনা পাসপোর্ট-ভিসায় ভারতে ঢোকার একটি অভিজ্ঞতা অর্জনের কৌতূহল আমার দীর্ঘদিন থেকেই ছিলো। সে কৌতূহল কাজে লাগাতে ১৯৯১ সালে আমি আর আমার ছোটভাই জামাল উদ্দিন দামাল ভারত সীমান্তের ভিতর ঢুকে পড়ি। সারাদিন হেঁটে শেষে কুমিল্লার বড়জ্বলা সীমান্ত ফাঁড়ির কাছ দিয়েই ঢুকি। কিন্তু বেশিদূর এগোতে পারিনি আমরা। বি.এস.এফ-এর টহল চৌকি দেখে আবার ফিরে আসি। ভারতের প্রায় ২০০ গজ ভিতরে আমরা ঢুকে পড়েছিলাম।

১৯৯৬ সালে কুমিল্লার সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ এর তখনকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক বাকীন রাব্বী আমাকে পাসপোর্ট করে দেওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা নেন। কারণ আমার অনুরোধে তিনি আমাকে ভারতের পূর্বাঞ্চল দেখাবেন বলে কথা দিয়েছেন। তাই তখন তিনি আমার পাসপোর্ট সাইজ ছবিও তোললেন তার নিজের ক্যামেরায়। পাসপোর্ট করার ফরমও দিলেন। কিছুদিন পর আমি পাসপোর্টে যাওয়ার বিষয়ে কেন যে অনেকটা উদাসীন হয়ে গেলাম। ব্যস্ত হয়ে গেলাম অন্য কাজে।

পরে ১৯৯৭ সালে কুমিল্লা সাংবাদিক সমিতির বনভোজনের সময় আমরা বিনা পাসপোর্টে ভারতের ভিতরে ঢুকে পড়েছিলাম পর্যটনকেন্দ্র রাজেশপুর দিয়ে। সঙ্গে দৈনিক ‘সংবাদ’ এর সাংবাদিক কল্যাণ সাহাও ছিলেন।

আমরা তখন প্রায় ১০০ গজ ভিতরে ঢুকে ভারতের স্কুল ছাত্রছাত্রীদের বইপত্রও দেখি। কথা বলি বিভিন্ন বিষয়ে যে যার মতো। ওখানকার মানুষ কূপের পানি খায়। তবে কূপ ঢেকে রাখে না। এটাও আমরা দেখলাম এবং কথা বললাম।

আমার কৌতূহল আর মেটে না। পরিচিত এক ফেনসিডিল ব্যবসায়ী , তার বড়ি কুমিল্লা শহরের পাথুরিয়াপাড়ায়। তার সঙ্গে অভিজ্ঞতার জন্য ঢুকে যেতে চাইলাম। কিন্তু আমি বিভিন্ন পত্রিকায় চাকুরি করতাম বলে ভয়ে সে শেষ পর্যন্ত আমাকে নেয়নি।

১৯৯৮ সালে আমি একটি সাইকেল নিয়ে প্রায়ই কুমিল্লা অঞ্চলের সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলো ঘুরে দেখতে শুরু করলাম। কিন্তু এ নিয়ে কোনো রিপোর্ট করছি না কোনো কাগজে। কুমিল্লার বিবিরবাজার এলাকায় একদিন বর্ষার বৃষ্টির সময় কয়েকজন চোরাকারবারীকে ভারতীয় শাড়ি নিয়ে গোমতি নদী সাঁতার কেটে পার হয়ে দৌড়ে পালাতে দেখলাম। প্লাস্টিকের শক্ত প্যাকেটে বাঁধা ভারতীয় শাড়ির প্যাকেটে ভর দিয়ে নদী পার হতে সাঁতার কাটলেন তারা। অবিশ্বাস্য। কিন্তু সত্যি। চোরাকারবারীদের পালানোর পর পরই নদীর উত্তর পারে বিডিআর-এর একটি টহলদল এসে উপস্থিত হয়। যদিও তখন বর্ষাকাল , কিন্তু নদীতে পানি ছিলো অল্প।

পরে এক মহিলার খোঁজ পেলাম আমি। কুমিল্লা শহরের পূর্বাঞ্চলে তার বাসা। ব্যবসা তার মাদকের। ভারতীয় বিয়ার-হুইস্কীর। এক সময় শাড়ীর ব্যবসাও করতেন। তবে ওই ব্যবসায় কম লাভ বলে ছেড়ে দিয়েছেন। তার ছবিও আমার কাছে রয়েছে। কিন্তু তার নাম বলা নিরাপদ নয়। সেই মহিলার কাছে প্রথম আমি গিয়েছিলাম এক হুইস্কির ক্রেতার সঙ্গে। তার চোরাকারবারের প্রথমদিকে তিনি বিডিআর-বিএসএফ-এর হাতে অনেকবার ধর্ষিত হয়েছেন বলেও বিনা সংকোচে জানান। তিনি তার ব্যবসায়িক লাভ থেকে একটি অংশ কোনো এক মাজারেও প্রতি মাসে দেন।

১৯৯৮ সালে কুমিল্লা শহরের উত্তরের ‘বাঁশমঙ্গল’ দিয়ে ‘জামবাড়ি’র বনাঞ্চল দেখতে যাই কয়েকবার। এ সময়ে কয়েকবার শশীদল রেলষ্টেশন দিয়েও ভারতে ঢুকতে চেষ্টা করি। কিন্তু ভরসা পাইনি। উদ্দেশ্য ছিল শুধু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা এবং তা নিয়ে বই লেখা। এ নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট করার কোনো ইচ্ছে কখনোই ছিলো না আমার। একবার শশীদল রেলষ্টেশনে চা খেতে খেতে এক মহিলার সঙ্গে পরিচয় হলো। দিনে তিনি ঘোরাঘুরি করেন। সন্ধ্যের দিকে ভারতে যান। চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। আগে ইন্ডিয়ান চিনির ব্যবসা করতেন। তিনি আমাকে ৫০০ টাকা দিলেই আগরতলা পর্যন্ত ঘুরিয়ে দেখানোর সুযোগ দিতে পারবেন বলে জানালেন। আমি ভরসা পেলাম না। বরং ভয় পেলাম। গোমতী নদীর উত্তরদিকে জামবাড়ির কয়েকজন ভারতীয় চিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ হলো আমার। সবাইকে ছাত্র পরিচয় দিলাম। ক্যামেরা দিয়ে ছবিও নিলাম। পত্রিকার সঙ্গে জড়িত বললাম না। বললাম , সাইকেলে বিশ্বভ্রমণের প্রস্তুতি নেই ঘুরে ঘুরে। তারা আমাকে সঙ্গে নিতে রাজি হলেন। কিন্তু নতুন সাইকেল নয় , পুরাতন সাইকেল নিয়ে। প্যান্ট-শার্ট-চশমা-বুট খুলে লুঙ্গি-শার্ট পরে। আমার তখনকার আর্মিছাট চুলটাও যাওয়ার ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হবে বলে জানালেন। সবশেষে বললেন , একেবারে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে হবে , যা আমি ইচ্ছে করলেও তখন খুব একটা পারি না। আর ক্যামেরাতো নেওয়াই যাবে না। আমি তাদের কয়েকদিনের যাওয়া দেখলাম। বন শেষ হয়ে সীমান্ত পিলার পার হয়ে ধীরে ধীরে ভারতের বনাঞ্চলে মিশে গেলেন তারা। বনের ভিতর দিয়ে ভারতে চলে গেছে সরু পথ। একা যান না তারা। কয়েকজন মিলে মিলে দল বেঁধে যান। বি.এস.এফ-এর ক্যাম্প রয়েছে দু’পাশেই। কেউ বাধাও দিলেন না।

একদিন কুমিল্লা সীমান্তবর্তী মতিনগর গ্রামে গিয়ে উপস্থিত হলাম। সেই গ্রামের অর্ধেক পড়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অর্ধেক ভারতে। একটি বাসায় আমার সাইকেল রেখে হেঁটে হেঁটে ভারতে ঢুকতে চেষ্টা করলাম। এক বৃদ্ধ খুব কড়া ধমক দিলেন। বললেন , মরার শখ হয়েছে না! বাড়িতে যা ব্যাটা। অনর্থক বিপদে পড়িস না। এখানে বিএসএফে-র সন্দেহে পড়বি-তো আমাদেরও সমস্যা হবে।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ হিন্দু। তারা সনাতন ধর্মের অনুসারী। দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশের অনেক হিন্দু ভারতে যান প্রতিমা দেখতে-পূজা দেখতে। কুমিল্লা সীমান্ত দিয়েও এভাবে পূজার সময়ে ভারতে যাওয়ার ঢল নামে। একবার আমার এক মেয়ে বন্ধুর সঙ্গে পূজা দেখতে আগরতলা যাবো সিদ্ধান্ত নিলাম। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই। কিন্তু সেই বন্ধু পরে আমাকে অজ্ঞাত কারণে ফেলে দিয়েই পূজা দেখতে চলে যায়। পরে সে আমাকে বলেছে , যদি ভারতে আমি বিনা পাসপোর্টে ধরা পড়ি এবং বাংলাদেশে আমি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ে , তাহলে তারও বিশেষ ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই নেয়নি।

ফেনীর বিলোনিয়া সীমান্তে যতবার সংঘর্ষ হয়েছে , কৌতূহল ছিলো , ছবি তুলতে যাবো। দেশের বহুল প্রচারিত পত্রিকায় কাজ করছি , এমন স্বীকৃতি ছিলো না বলে সুযোগ পাইনি প্রায়ই। তবে ফেনীর মুহূরী প্রজেক্ট এলাকা দিয়ে ঢোকার ইচ্ছে হয়নি। যদিও একবার চেষ্টা করেছিলাম। পরে বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্তের টেকনাফে যখন গেলাম , প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারে ঢুকে যাওয়ার নেশা জাগলো শরীরে ও মনে। কিন্তু নাফ নদীকে ভীষণ ভয় লাগলো আমার। তাই ফিরে এলাম। নাফ আর কর্ণফুলি নদীকে দেখলে এখনো আমার ভীষণ ভয় লাগে। তাছাড়া মায়ানমার খুব ভয়ংকর দেশ। সামরিক পান্ডারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের বছর বছর বাংলাদেশে বিতাড়িত করেছে। সুতরাং উল্টো পথে গেলাম না আর।

পরে সুযোগ এলো দিনাজপুর দিয়ে ভারতে ঢুকে যাওয়ার। সঙ্গে এক বন্ধুও ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সীমান্ত উত্তপ্ত হলো। বিএসএফ বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা করেছে। পরে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে অবস্থিত বড় পুকুরিয়া কয়লাখনি দেখেই ফিরে এলাম।

সীমান্ত এলাকার মানুষের জীবনযাপন কেমন হয় , তা দেখার আশায় একবার সিদ্ধান্ত নিলাম পায়ে হেঁটে যতটা পারি বিডিআর ফাঁড়ি ধরে ধরে অভিযান শুরু করবো। কিন্তু কিছু কাজের জন্য কখনোই তা করা হয়নি। ঘরোয়া কাজ। লেখাপড়ার কাজ। লেখালেখির কাজ।

বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে সেক্টর পর্যায়ে পতাকা বৈঠক দেখার ইচ্ছে ছিলো বহুদিনের। সুযোগ পাইনি। কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ সহ আরও বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সৃষ্ট সমস্যাকে কেন্দ্র করে এসব বৈঠক দেখার পরিপূর্ণভাবে দেখার কৌতূহল আমার অনেক দিনের। আমার মেয়ে বন্ধু স্বপ্না দেবনাথের মা একবার তার ভাইয়ের বাড়িতে গেলেন। ভারতের আগরতলায়। মাসিমাকে বললাম , আমাকে সঙ্গে নিয়ে যান। আমি কিছুদিন থাকবো। তিনি বিনা পাসপোর্টে যেতে বারন করলেন। আমি বিনা পাসপোর্টে যেতে চাইলাম। কারণ বেশি অভিজ্ঞতা যদি অর্জন করা যায়। তাছাড়া পাসপোর্ট-ভিসার প্রথাকে আমি মানবিক অধিকার হরণ করা মনে করি। যদিও এ মনে করায় কারো কিছু যায় আসে না। লেখালেখির প্রথম দিকে আমি ভারত ভাগের-বাংলাভাগের বিরুদ্ধে অনেক কবিতাও লিখেছিলাম।

মাসিমা আমাকে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভয় দেখালেন। বললেন , ভারতের পূর্বাঞ্চলের আসাম রাজ্যের প্রধান বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী উলফা’র (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম) মতো উৎপাত না থাকলেও উপদ্রব আছে। পাহাড়ি উপজাতিদের উপদ্রব। পরে মাসিমার সঙ্গে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিলাম।

বিনা পাসপোর্টে অনেকেই অহরহ ভারতে ঢুকে পড়ে। কিন্তু আমার বেলায় এত সমস্যা কেনো? একজন বন্ধু বললেন , ১৯৯৬ সাল থেকে আপনি পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাই করেছেন। মাঝে মাঝে চাকুরি ছেড়ে বেকার হয়ে গেলেও অন্য কোনো চাকুরি করেননি। পেশাগতভাবে আপনি সফল না হলেও আপনি বেকার সময়ে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা করেন। সুতরাং ভারতে একবার বিনা পাসপোর্ট-ভিসায় আটক হয়ে যদি প্রমাণ হয় আপনি সংবাদপত্রের লোক , তাহলে খুব হয়রানির শিকার হবেন। আপনাকে তারা বাংলাদেশের গোয়েন্দা ভেবেও কড়া মার দিতে পারে অথবা ব্যবহার করতে পারে। অবশেষে একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম নিজে নিজেই হাঁটতে হাঁটতে ভারতে ঢুকে যাবো। সাধারণভাবেই। বুকে সাহস নিলাম। দেখি কী হয়। চলে গেলাম কুমিল্লার বিবিরবাজার স্থলবন্দরে। তারপর আবার ফিরে এসে নদী পার হয়ে শাহপুর মাজারে গেলাম। প্রায় দীর্ঘ ১ ঘন্টা অপেক্ষা করে মাজারে বসে ড. পেয়ারা বাগদাদীর সঙ্গে দেখা করলাম। মাজার সম্পর্কে জেনে নিলাম অনেক অজানা তথ্য।

পরে নদীর উত্তরপার ধরে ভারতে ঢোকার জন্য হাঁটতে শুরু করলাম। বিডিআর বেশি এগোতে দিলো না। ফিরে আসছি বলে আরও সামনে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু বিএসএফ-এর ভয়ংকর অবস্থান দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন দালাল এসে জুটলো। বললো , ২০০ টাকা দিলেই সীমান্ত পার করে দেবো। আর ইন্ডিয়ান টাকা ভাঙ্গালেও বেশি লাভ করবো না। ওখানে আপনার আত্মীয় কোথায় থাকে? আমি দালালদের বললাম , আমি সীমান্ত পার হবো না। শুধু শুধু আমার পেছনে ঘুরে লাভ নেই। আমি নদীর পার থেকে উত্তরদিকের গ্রামে ঢুকে গেলাম। হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে ভারতের পাহাড় দেখতে পেলাম। ঢুকে যেতে মন চাইলো। কোথাও কোনো বিডিআর-বিএসএফ দেখা গেলো না। কিন্তু সাহস পেলাম না। হঠাৎ দেখলাম , একবাড়ির ২ যুবক পুকুরের পানি থেকে ১ বস্তা ফেনসিডিল তুলে এনেছে। প্লাস্টিকে বস্তায় মোড়ানো প্যাকেট থেকে ফেনসিডিল খোলার সময় আমার সঙ্গে ওদের চোখাচোখি হয়। আমি ওদের সাহায্য চাইলাম , কিভাবে ঢুকতে পারি। কেন ঢুকবেন , জানতে চাইলো। ইন্ডিয়ার সোনামুড়ায় একটু যাওয়া দরকার। ওরা একটি পথ দেখিয়ে দিলো। বললো , দুপুরে ১০-২০ মিনিট বিএসএফ থাকবে না এ পথে। তখনই ঢুকে যাবেন। আমি ঢুকেও গেলাম। এটা ২০০২ সালের ঘটনা। ঢোকার পর বিপদ মনে হলো , যখন দেখলাম অন্য আরেকজনকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢোকার সময় বিএসএফ দেখে ফেলেছে। সেই বিএসএফে’র কাঁধে অত্যাধুনিক রাইফেল। মোট ২ জন বিএসএফ হিন্দীতে সেই লোককে ‘জ্যারা’ও করছে। আমি হিন্দী বুঝি না। ভালো মানুষের মতো সাধারণভাবে ধীরপায়ে হেঁটে গেলাম। হাঁটতে হাঁটতে ভারতের অনেক দূর ভিতরে ঢুকে গেলাম। প্রতিটি পা ফেলতেই বুক কাঁপতে লাগলো তখন। মনে হলো আমি এক অপরাধীই যেন। ভারতকে মনে হলো এ যেন এক অচেনা দেশ। সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য খুব খারাপ লাগা শুরু হলো আমার। যদি আবার আটক হয়ে যাই!

হাঁটতে হাঁটতে এক মসজিদও খুঁজে পেলাম। তখন অনেক বছর ধরেই আমি ঈদের নামাজও পড়তাম না। তবু ঐ মসজিদে ঢুকে গেলাম এবং নামাজ আদায় করে মুসল্লিদের সঙ্গে বের হয়েও গেলাম। তারপর হাঁটতে হাঁটতে উপস্থিত হলাম ত্রিপুরা রাজ্যের সোনামুড়া বাজারে। কোনো নোটবুকও সঙ্গে নিলাম না। সাবধানে দেখে দেখে সামনে এগুতে থাকলাম। ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের কোনো এক মন্ত্রীকে দেখলাম ৪/৫জন সঙ্গীকে নিয়ে কথা বলতে বলতে হেঁটে যেতে। সবাই বললেন , বিল্লাল মন্ত্রী। ইচ্ছে ছিলো আগরতলায় যাওয়ার। কিন্তু সুযোগ নেই। কারণ নিরাপত্তার জন্য যাওয়ার সময় কোনো বাংলাদেশী টাকাও নেইনি। ভারতীয় টাকাও সঙ্গে নেই। বুঝতে পারলাম পাসপোর্ট ছাড়া যাওয়াতে কতো অসুবিধা হয়েছে। যারা অনায়াসে ভারতে ঢুকে যায় , তাদের গায়ে সচরাচর ভদ্র পোশাক থাকে না। ফলে বিপদে পড়লাম। সোনামুড়ায় একটি ভাস্কর্য দেখে স্থির দাঁড়িয়ে থাকলাম। আরও দেখলাম রঙঢঙ ছাড়া খুব কম খরচে করা দেয়ালে সাঁটা বিভিন্ন নান্দনিক পোষ্টার। এবারে ভারতের বাজার ঘুরে দেখতে লাগলাম। বাংলাদেশের কিছু চিপস দেখলাম এক দোকানে। দোকানে আর কোনো বিদেশী পণ্য নেই। আগরতলার সবচেয়ে বড় মার্কেট গোলবাজার দেখার ইচ্ছে ছিলো। সুযোগ হলোনা। সুযোগ নিতে গেলে ঝুঁকি বেড়ে যাবে। কারণ ওখানে আমার কোনো আত্মীয়ও নেই।

বাংলাদেশে বিদেশী পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের বরাবরই হিড়িক দেখেছি। এমনকি চীনের তৈরী পণ্য বিক্রির প্রতিযেগিতাতো চরমেই। কিন্তু ভারতের ওই মার্কেটে কোনো চীনা পণ্যও পেলাম না। দ্রব্যমূল্যের দাম মনে হলো স্থিতিশীল। দোকানীদের সঙ্গে কথা বলার সময় কমপক্ষে ৫ জন আমাকে প্রশ্ন করলেন , আপনি কি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন? আমি হ্যাঁ বলেছি। কারণ আমি ওদের কাছে পরিচয় লুকাতে পারিনি। নাম জিজ্ঞেস করাতে বলেছি , জসীম উদ্দিন অসীম। এ রকম নাম শুনে একজন বললেন দাদা , আপনার মা কি হিন্দু ছিলেন ? আমি ‘না’ বললাম। মনে মনে ভাবলাম , বাংলাদেশের তাহের উদ্দিন ঠাকুরের নাম শুনলেও সম্ভবত তারা এমন প্রশ্ন করতেন। তবে তারা কার বাসায় এসেছি , সেই পর্যন্ত জানতে চাইলেও আমি বিনা পাসপোর্টে ঢুকে পড়েছি কী না , তা জানতে চায়নি। দোকানীদের সঙ্গে আলাপ শেষে অন্য একটি রাস্তা ধরে চলে গেলাম। দেখলাম শাড়ি পরা অনেক কলেজপড়ুয়া তরুণী সাইকেল চালাতে চালাতে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর আবারও দেখলাম একদল সাইকেলিস্ট মেয়ে , যা বাংলাদেশের কুমিল্লা কেন ঢাকা শহরেও দেখিনি আমি। তবে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা সীমান্ত সংলগ্ন সড়ক ও ফুলবাড়ি উপজেলার রুদ্রানী সীমানা এলাকার সড়কগুলোতে মেয়েদের আমি সাইকেল চালিয়ে পথ চলতে দেখেছি।

যে মসজিদে নামাজ পড়লাম , সেখানে এসে একজনের সঙ্গে পরিচিতও হলাম। তার নাম হাসান মোহাম্মদ। মসজিদে এসেছিলেন তিনি নামাজ পড়তে। তিনিই আমাকে প্রশ্ন করলেন , আপনি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন?

‘হ্যাঁ’, বললাম আমি। কার এখানে এসেছেন ? আমি একজনের নাম-ঠিকানা বলে দিলাম , যার ঐ এলাকায় বাড়ি। হাসান মোহাম্মদ সম্ভবত বিশ্বাস করলেন না। আবারও প্রশ্ন করলেন , আপনি কি পাসপোর্ট করে এসেছেন ? এবার আমি সত্যি কথাটাই তাকে বলে দিলাম। বললাম , যার এখানে এসেছি বলেছি , তা ঠিক নয়। আমি এমনি এমনি ঘুরতে চলে এসেছি। চলে যাবো। এক্ষুনি চলে যাবো। হাসান মোহাম্মদ ভয় দেখালেন। বললেন , আপনি ধরা পড়ে যেতে পারেন। এই এক্ষুনি কয়েকজন বিএসএফ এদিকে এসেছেন। আমি বললাম , আপনি আমাকে আত্মীয় বলে বাঁচিয়ে দেবেন? আমি মুসলমান। হাসান মোহাম্মদ হাসি দিয়ে বললেন , মুসলমান কি মিথ্যে কথা বলে? তাছাড়া বাংলাদেশের মুসলমানরাতো দু’নম্বর। আমি তর্কে গেলাম না। ভয় পেয়ে গেলাম। মনে হলো হাসান মোহাম্মদ মুসলমানের অভিনয় করেও থাকতে পারেন। ভারতের আসাম রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিমরা খুবই নির্যাতনে আছে। ত্রিপুরার মুসলিমরা কেমন আছে , এ প্রশ্ন করতে গিয়েও আর করলাম না।

হাসান মোহাম্মদ আমাকে বললেন , আপনি কি জানেন না বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ভালো সম্পর্ক নেই?

আমি বললাম , ভালো সম্পর্কই আছে। হাসান বললেন , সেটা তো মুখে মুখে। কাগজে-কলমে। আপনাদের দেশে তো ইন্ডিয়ার শত্র“রাও থাকতে আশ্রয় পায়। আমি অস্বীকার করলাম। হাসান মোহাম্মদ হাসলেন। আমার কাছে তাকে পুলিশের লোকের মতো কোনো লোক মনে হলো। বললেন , সঙ্গে আপনার টাকা পয়সা আছে ? আমি ‘না’ বললাম। তিনি আমার দিকে ঘাড় বাকিয়ে বললেন , আপনি তো খুব চালাক লোক। কী করেন আপনি?

আমি বললাম , বেসরকারী স্কুল শিক্ষক। মিথ্যে কথা বললাম। বুঝলাম না হাসান মোহাম্মদ বিশ্বাস করলেন কী না।

-আপনাকে যদি পুলিশ অনুপ্রবেশকারী ভাবে? হাসান মোহাম্মদের এ কথায় ভয় পেয়ে আমি বললাম , আপনি আমাকে ফিরে যেতে সাহায্য করুন , প্লিজ।

হাসান মোহাম্মদ হেসে বললেন , বাংলাদেশ খুব গরিব দেশ। ইন্ডিয়ার চিনি না পেলে আপনারা মিষ্টি খেতে পারতেন না। শাড়ি না গেলে মহিলাদের কী অবস্থা হতো ? কুমিল্লার বড় বড় ওষুধের দোকানগুলো চলে আগরতলা থেকে যাওয়া ওষুধে। আমি বললাম , এখান থেকে তো মাদকদ্রব্যও যায়। হাসান মোহাম্মদ বললেন , আপনারা খান কেনো ? আমি আর তার জবাব দিলাম না। ফেরার বিষয়ে কোন পথ ধরলে ভালো হবে , সেই পরামর্শ চাইলাম। হাসান মোহাম্মদ যে পথে এসেছি , সে পথেই ফিরতে বললেন। আমি সালাম দিয়ে চলে এলাম। হাসান মোহাম্মদ সালামের জবাব দিলেন না। তার নাম হাসান মোহাম্মদ বললেও তাকে আমার মুসলিমও মনে হলো না। রহস্যময় এক লোক মনে হলো তাকে। আমার কাছে রহস্যময় এক লোকই ছিল সেই হাসান মোহাম্মদ।





মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৫

রূপংকর আমি বলেছেন: দাদা, purano smriti jagiye dilen. khub bhalo laaglo

০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৪

জসীম অসীম বলেছেন: পুরনো স্মৃতি যদি শেয়ার করতেন , আরও ভালো লাগতো। মতামতের জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ।

২| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৬

মাহফুজা সুলতানা বলেছেন: সুন্দর । Old is gold

০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৫

জসীম অসীম বলেছেন: ভালো থাকবেন ভাই। মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

৩| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:০১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভারতের লোকেদের মন মানসিকতা এরকমই।

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:০৫

জসীম অসীম বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। অনেক ভালো থাকবেন।

৪| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:১২

ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল লাগসে। আবার আপনার ছবি?

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:০৬

জসীম অসীম বলেছেন: প্রিয় ব্লগার ভাই , আজ থেকে আর যত্রতত্র ছবি ব্যবহার করবো না। এমন অনান্দনিক কাজের জন্য সত্যি লজ্জিত। ব্লগে এডিটিং এবং টোটাল ব্লগিংটা আমার আরও অনেক শেখার বাকি আছে ভাই। পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৫| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:১৭

রাজিব বলেছেন: ত্রিপুরার সঙ্গে লেনদেনের চিত্র অনেক বদলে গেছে এখন। তারা আমাদের অনেক পন্য নেয় আমরাও নেই অনেক কিছু। সম্প্রতি ত্রিপুরার ব্যবসায়ীরা দাবী করেছে ১০০ টি সীমান্ত হাট খোলার যাতে করে আমাদের সঙ্গে আরও বানিজ্য করতে পারে।
সুন্দর স্মৃতিচারন তবে আপনার ছবিটি অপ্রাসঙ্গিক মনে হল। এ ছবি না দিয়ে ত্রিপুরার কোন ছবি (নেট থেকে নিয়ে হলেও) দিতে পারতেন।

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:০৮

জসীম অসীম বলেছেন: প্রিয় ব্লগার ভাই , আপনার সুন্দর পরামর্শ পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আজ থেকে আর যত্রতত্র ছবি ব্যবহার করবো না। এমন অনান্দনিক কাজের জন্য সত্যি লজ্জিত। ব্লগে এডিটিং এবং টোটাল ব্লগিংটা আমার আরও অনেক শেখার বাকি আছে ভাই। পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। অনেক ভালো থাকবেন। আপনার আগেকার সকল পরামর্শও আমাকে অনেক উপকৃত করেছে। নতুন পরামর্শও পাথেয় হয়ে রইলো।

৬| ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৫১

লিখেছেন বলেছেন: ছবিটা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে আমার কাছে

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৬

জসীম অসীম বলেছেন: ভাই , লেখার সঙ্গে ছবিটা দিয়ে ব্লগার বন্ধুদের নেতিবাচক মতামত পেয়ে লজ্জায় মরে যাচ্ছিলাম। তাই পরের পোস্টটি দিলাম কোনো রকম ছবি ছাড়াই। তবে তাদের মতামতে নান্দনিক যুক্তি ছিল। আমি সেই যুক্তি থেকে আমার বোধকে আরও শাণিত করতে চেষ্টা করেছি। আপনার মতামত আমাকে অনেকদূর এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে। ভালো থাকবেন। অনেক ভালো। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.